সোশ্যাল মিডিয়ার ভালো দিক এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতিকর দিক গুলো জানুন

সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে আমরা যেমন নিজেদেরকে স্মার্ট এবং ডিজিটাল হিসেবে গড়ে তুলেছি। ঠিক তেমনি স্মার্ট পৃথিবীতে বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া খুব মুশকিল। যদিও আমরা সকলেই সোশ্যাল মিডিয়া গুলো স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করে থাকি কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতিকর দিক গুলো সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই। চলুন তাহলে আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতিকর যে সকল বিষয়গুলো রয়েছে। 
সোশ্যাল-মিডিয়ার-ক্ষতিকর-দিক
সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক। আজকের আর্টিকেলে সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানার পাশাপাশি আরও যে সকল বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন সেগুলো হল সোশ্যাল মিডিয়ার ভালো দিক এবং সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার সম্পর্কে। পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সকল বিষয়বস্তু জানার জন্য অবশ্যই আর্টিকেলের শেষ পর্যন্ত বহাল থাকুন।
পোস্ট সূচীপত্র

সোশ্যাল মিডিয়া

ইংরেজিতে (Social Media) বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাধারণত আন্তঃক্রিয়ামূলক তথ্যপ্রযুক্তি গত বিষয়গুলোকে বুঝিয়ে থাকে। তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তথ্য আদান প্রদান, ধারণা, আগ্রহ এবং অন্যান্য ধরনের অভিব্যক্তি, ইন্টারনেট ভিত্তিক বিষয়বস্তু সৃষ্টি ও ভাগাভাগি করে নেওয়ার সুবিধা প্রদান করার যেই প্রক্রিয়া সেটি মূলত সোশ্যাল মিডিয়া। 
বর্তমান সময়ে লভ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সেবার বৈচিত্র্যের কারণে এগুলো সংজ্ঞা এককভাবে প্রদান করা খুবই কঠিন ব্যাপার। এরপরও আমরা সোশ্যাল মিডিয়ার কিছু সংজ্ঞা পয়েন্ট আকারে নিচে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।
  • সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলি আন্তক্রিয়া মূলক web 2.0 আন্তর্জাল ভিত্তিক এপ্লিকেশন এর সমন্বয়।
  • ব্যবহারকারী উৎপাদিত বিষয়বস্তু যেমন প্রকাশিত ডিজিটাল চিত্র বা ভিডিও এ সকল ধরনের আন্তক্রিয়ার ফলে উৎপাদিত উপাত্ত গুলি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জীবনশক্তি বলা হয়ে থাকে।
  • ব্যবহারকারীরা নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট অথবা ভ্রাম্যমান দূর আলাপনের অ্যাপের ক্ষেত্রে প্রতিটি সেবার জন্য সংক্ষিপ্ত আত্মবিবরণী বা প্রোফাইল সৃষ্টি করে থাকে। আর সেগুলোই মূলত সোশ্যাল মিডিয়ার ধারক এবং বাহক।
  • সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে কোন ব্যবহারকারীর লাইফ স্টাইল এবং আত্মবিবরণীর অংশবিশেষ। অন্যান্য ব্যক্তি যারাও উক্ত প্লাটফর্মে মজুদ রয়েছে, তাদের মধ্যে একটি আন্তর্জাল ভিত্তিক সামাজিক জাল ব্যবস্থার বিকাশ ঘটিয়ে থাকে।
সাধারণত সোশ্যাল মিডিয়ার সংজ্ঞা এভাবেই পরিলক্ষিত করা হয়ে থাকে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার যেমন ভালো দিক রয়েছে ঠিক তেমনি সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতিকর দিক ও রয়েছে। এ বিষয়ে তিনিই বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করা হবে।

সোশ্যাল মিডিয়ার ভালো দিক

বর্তমান সময়ে আমরা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যতীত এক ধাপ চলতে পারব না এটাই বাস্তব। সকালে ঘুম থেকে উঠে নিউজ দেখা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে নাটক অথবা সিনেমা দেখার ক্ষেত্রেও আমরা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে যাচ্ছি। সাম্প্রতিক সময়ে সকল ধরনের যেকোনো রকম ঘটনা খুব সহজেই আমরা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে রিচ করতে পারি। তবে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে মুদ্রার যেমন এপিঠ ওপিঠ রয়েছে ঠিক তেমনি সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রেও ভালো এবং খারাপের দুটি গুণে গুণান্বিত রয়েছে। চলুন তাহলে সোশ্যাল মিডিয়ার ভালো দিকগুলো কি কি হতে পারে সেগুলো পর্যায়ক্রমে জেনে নেওয়া যাক।

যোগাযোগের মাধ্যম

পূর্বে আমরা যদি লক্ষ্য করি যোগাযোগের মাধ্যম অনেকটাই দুষ্কর ছিল। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার বিপ্লবের পর থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা যেন খুবই সহজ হয়ে গেছে। যেখানে আগে কোনরকম বার্তা পাঠাতে হলে অনেকদিন আগে চিঠি লেখে সেটি পোস্ট করতে হতো। কিন্তু এখন মুহূর্তে আপনি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে আপনার যেকোনো বন্ধু বান্ধব অথবা আত্মীয় স্বজনদের সাথে যোগাযোগ কার্য সম্পন্ন করতে পারছেন। সোশ্যাল মিডিয়ার আবির্ভাবের হলেই হয়েছে। বিশেষ করে যখন থেকে সকলের হাতে হাতে স্মার্টফোন চলে এসেছে।

ঠিক তখনই সোশ্যাল মিডিয়া পুরো মার্কেট দখল করে ফেলেছে। অর্থাৎ আপনি এটি মোবাইল ফোন কিনলে সেখানে আপনি সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাপসগুলো ইন্সটল করতে বাধ্য। আর বাধ্য হবেন না কেন, শুধুমাত্র ইন্টারনেটের সংযোগ থাকলে আপনি সোশ্যাল মিডিয়াকে বানিয়ে ফেলছেন একটি অন্যতম যোগাযোগের মাধ্যম। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে খুব সহজ হওয়ার কারণে অবৈধ কাজকর্মগুলো সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতিকর দিকগুলো প্রভাবিত করছে।

ব্যবসায়িক প্লাটফর্ম

আমরা সকলেই কমবেশি জানি সোশ্যাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্মটি এখন ব্যবসায়িক সেক্টরে পরিণত হয়েছে। আমরা সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন হোমপেজে যখন ঘোরাঘুরি করি তখন অটোমেটিক আমাদের পেইজে কিছু প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিসের বিজ্ঞাপন চলে আসে। তবে এই বিজ্ঞাপন গুলো প্রচার প্রচার করার কাজ একজন ফ্রিল্যান্সার বা ডিজিটাল মার্কেটার পড়ে থাকে। আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

একটি হিসাব অনুযায়ী দেখা গেছে বিশ্বে প্রায় বিলিয়ন মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে যুক্ত রয়েছে। আর এজন্যই অনলাইন ব্যবসায়ীরা সোশ্যাল মিডিয়াকে টার্গেট করে তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপনের প্রচার প্রচারণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আর এতে ফলাফলটা ও কোন অংশে কম নয়। পণ্যের অথবা কোন সার্ভিসের সঠিক অডিয়েন্স খোঁজার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটির তুলনা হয় না। তাহলে বলা যেতেই পারে ব্যবসায়িক প্লাটফর্ম হিসেবে এটি একটি সোশ্যাল মিডিয়ার ভালো দিক।

এন্টারটেইনমেন্ট এর মাধ্যম

বর্তমান সময়ে অনেকে রয়েছে যারা টিভি দেখার চাইতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোরাঘুরি করা খুব বেশি পছন্দ করেন। যদি কারো ফেসবুকে একটি প্রোফাইল থাকে। তাহলে খুব সহজেই সেখান থেকে বিভিন্ন রকম খবর, টিকটক ভিডিও, রিলস ভিডিও, ফানি ভিডিও সহ অন্যান্য সকল ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা দেখতে পারি। যা একটি উপভোগের মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করা যায়। এখানে একটি বিষয় বলতে চাই সেটি হল সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতিকর দিক হিসেবে এন্টারটেইনমেন্ট এর মাধ্যম অনেকাংশে লিমিট ক্রস করে ফেলে।

কিছু সেক্সুয়াল কনটেন্ট এ ধরনের প্লাটফর্মে দেখা যায় যা কিশোর-কিশোরীদের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। এছাড়া কেউ যদি কোন গুরুত্বপূর্ণ খবর পৌঁছাতে চায় সেক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ার কোন তুলনা হয় না। ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ অথবা ইমুতে কল করে যে কোন সময় যোগাযোগ করা যায় এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদান প্রদান করা সম্ভব হয়। তবে বিষয়টিকে আমরা যদি যোগাযোগ এবং এন্টারটেইনমেন্ট এর মাধ্যমে হিসেবে গ্রহণ করি তাহলে অন্য কোনো রকম ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

লাইফ স্টাইল শেয়ার

সোশ্যাল মিডিয়াতে আমরা বিভিন্ন সময় আমাদের চলাফেরা অর্থাৎ মুভমেন্ট শেয়ার করে থাকি। বর্তমানে আমি কোথায় যাচ্ছি, কি করছি, কি খাচ্ছি এই বিষয়গুলো শেয়ার করার মাধ্যমে বন্ধুদের সাথে সবসময় কানেক্ট থাকা যায়। বিষয়গুলো আমরা যখন ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করি তখন অটোমেটিক ভাবে আমাদের বন্ধুদের ওয়ালে সেটি দেখা যায়। বন্ধুরা সে বিষয়টিকে আমলে নিয়ে কমেন্ট এবং শেয়ার করতে পারে। একজন সেলিব্রিটি তার লাইফস্টাইল কিভাবে লিড করে। 

সেটি যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে তখন তার ফ্যান বেজ কমিউনিটি ভালোভাবে উপভোগ করতে পারে। পাশাপাশি এ ধরনের শেয়ার এবং হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারে কথোপকথনের মাধ্যমে একটি সামাজিক সম্পর্ক খুব সহজেই গড়ে তোলা যায়। আর এজন্যই হয়তো বা এটির নাম দেওয়া হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া।

সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতিকর দিক

আমরা এতক্ষণ পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়ার ভালো দিক গুলো সম্পর্কে আলোচনা করলাম। আমরা প্রথমেই বলেছিলাম একটি মুদ্রা যেমন এপিঠ ওপিঠ থাকে ঠিক তেমনি সোশ্যাল মিডিয়ারও ভালো দিক এবং খারাপ দিক দুটোই রয়েছে। পূর্বে আমরা শৈশবকালে বিকেলবেলা মাঠে খেলতে যেতাম। কিন্তু বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া আসার পরে ছেলেমেয়েরা মাঠে তো খেলতে যায় না বরং তারা মোবাইল গেমে আসক্ত হয়ে পড়ে। তাহলে বলা যেতে পারে দুরন্ত শৈশবকে একপ্রকার গ্রাস করে নিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। 
 
আমরা শৈশবে সোনালী দিনগুলোতে দুরন্তপোনায় মেতেছে যা এখন স্মৃতির পাতায় ভেসে চলেছে। কিন্তু সেই কৈশোরের সৌন্দর্য উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এখনকার ছেলেমেয়েরা শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়া এর জন্য। তরুন তাহলে এবার সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতিকর দিক গুলো কি কি হতে পারে সেটিও জেনে নেওয়া যাক।

FOMO

Fear of missing out (FOMO) মূলত এটি ইংরেজি একটি বাক্য যাকে বলা হয়ে থাকে হারিয়ে যাওয়ার ভয়। গবেষণায় উঠে এসেছে যারা নিয়মিত ফেসবুক টুইটার, ইনস্টাগ্রাম অর্থাৎ সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছেন বা মাত্রারিক্ত ব্যবহার করছেন। তাদের এ ধরনের ভয় বা রোগ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সমস্যা হলে সেই সকল ব্যক্তির মনে হয় যেন তারা কোন কিছু ভুলে যাচ্ছেন বা মিস করছেন। প্রাথমিক অবস্থায় এরকম মনে হলেও পরবর্তীতে এটি উদ্বেগের সৃষ্টি করে এবং এ থেকে স্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে।

ডাক্তাররা বলেছেন যখন এ ধরনের সমস্যা নিয়ে রোগী আসে তারা দাবি করেছেন FOMO হওয়ার পর থেকে তারা আরও বেশি সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছেন। তাহলে বুঝতে পারছেন সোশ্যাল মিডিয়া কতটা পেয়ে বসেছে আমাদেরকে। আরো একটি লক্ষণ হল ঘন ঘন মোবাইল চেক করা এবং মোবাইল কাছে না পেলে অসস্তি, উদ্বেগ এমনকি স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা চলে আসে।

একাকীত্ব বৃদ্ধি করা

যদিও আমরা বলছি সোশ্যাল মিডিয়া যোগাযোগের মাধ্যম এবং একে অপরের সাথে কানেক্টেড থাকার বড় উপায়। কিন্তু ভয়ের ব্যাপার হল গবেষণা বলছে অন্য একটি কথা। একটি সার্ভেতে উঠে এসেছে যদি চারজনের একটি ফ্যামিলি বা টিম কোন রেস্টুরেন্ট বা যে কোন জায়গায় ঘুরতে বা খেতে যায়। সেক্ষেত্রে একে অপরের সাথে মৌখিক কোনো কথা না বলে যে যার মত সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত থাকে। যা খুবই ক্ষতিকর বলে ধরা হয়। এতে পারস্পরিক ভাতৃত্ববোধ ক্ষুন্ন হওয়ার পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে সেতুবন্ধন বিষয়টি আর থাকে না। 
গবেষকরা আরও জানিয়েছেন যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকে তারা ধীরে ধীরে আরো একা হয়ে পড়ে। ব্যক্তিগত সম্পর্কের থেকে যদি কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্পর্কের বিষয়টি বেশি প্রাধান্য দেয় এক্ষেত্রে বাস্তবিক সম্পর্ক তার কাছে হেয় মনে হয় এবং ধীরে ধীরে সে একাকিত্বের দিকে ধাবিত হয়। আর এই বিষয়টিকে সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতিকর দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।

মানসিক অবসাদ

"আমেরিকান জার্নাল অফ প্রিভেন্টিভ মেডিসিন" এর একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল যারা দিনে 6 ঘণ্টার বেশি সোশ্যাল মিডিয়ার সাইট গুলোতে একটিভ থাকে তাদের মধ্যে ৩ শতাংশ বেশি লোক কিছুদিনের মধ্যে মানসিক অবসাদ বা পাগল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর মূল কারণ হলো আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢুকলে বা ভিজিট করলে খুব সহজেই বিভিন্ন বিষয় জানতে পারছেন, পোস্ট করতে পারছেন, সেটির মন্তব্য করতে পারছেন। 

আর এ ধরনের বিভিন্ন নেতিবাচক খবর এবং পোস্ট করাকে ঘিরে, সহজে অন্যের প্রতি রাগ, ক্ষোভ এবং নেতিবাচক ধারণা ব্যক্ত করে নিজেকে মানসিক অবসাদে ভুগতে বাধ্য করছেন। আর এ বিষয়টিকে বলা হয় "দ্রুত জাজমেন্টাল পারসন"।

সোশ্যাল মিডিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আমরা ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ার ভালো দিক এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতিকর দিকগুলো কি কি হতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা করলাম। সেখানে অনেকগুলো বিষয়ে উঠে এসেছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর বিষয় হলো সোশ্যাল মিডিয়ার সকল বিষয়কে সত্য হিসেবে ধরে নেওয়া। বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা যা দেখি তার বেশিরভাগই এডিট করে ভিউ পাওয়ার জন্য মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি রাজনৈতিক বিষয়গুলো ইনক্লুড হওয়ার জন্য আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ার প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন হয়ে উঠেছে। চলুন তাহলে এবার সোশ্যাল মিডিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো কি কি হতে পারে সেগুলো পয়েন্ট আকারে জেনে নেওয়া যাক।

উপকারিতা

  • সোশ্যাল মিডিয়ার প্রথম যে সুবিধা বা উপকারের কথা বলতে হবে সেটি হল যোগাযোগ বা কানেক্টিভিটি। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে মানুষ বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে খুব সহজেই যোগাযোগ করতে পারছে যা অকল্পনীয় ব্যাপার ছিল।
  • সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষ ক্ষেত্রে শিক্ষা ব্যবস্থাকেও খুব সহজ করে তুলেছে। যেমন শিক্ষক এবং ছাত্র সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে খুব সহজেই পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে।
  • যেকোনো ব্যক্তি তার সমস্যা এর কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও আকারে সেটি সকলের মাধ্যমে প্রচার করে খুব সহজে সাহায্য গ্রহণ করতে পারছে। উদাহরণস্বরূপ বন্যা এলাকায় যে সকল বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। সে সকল বাড়ি ঘর মেরামত বা সে সকল ব্যাক্তিদের উপকারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে টাকা কালেক্ট করা হয়ে থাকে।
  • সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে সবসময়ই সাম্প্রতিক সময়ের খবর পাওয়ার পাশাপাশি নিজেকে সম্পূর্ণভাবে আপডেট রাখা যায়। সাম্প্রতিক সময়ের দাঙ্গা হামলা বিষয়ে টিভি চ্যানেলগুলো সরাসরি প্রচার না করলেও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে এ ধরনের খবর খুব সহজেই পাওয়া।
  • সোশ্যাল মিডিয়ার ভালো দিক গুলোর মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করলে নিজে যেমন সচেতন হওয়া যায় অন্য কেউ সব ধরনের বিষয়ে সচেতন করা সম্ভব হয়।
  • সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মের মাধ্যমে সরকার এবং নিরাপত্তা এজেন্সি বিভিন্ন অপকর্মের বিষয়ে খুব সহজেই নজরদারি করতে পারে।
  • সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে বর্তমান সময়ে ব্যবসায়ীরা অনলাইনে তাদের পণ্যের বিক্রি এবং প্রচার প্রচারণা খুব সহজে করতে পারছে।

অপকারিতা

  • সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতিকর দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দিক হলো সাইবার বুলিং। অনেক কিশোর কিশোরী রয়েছে যারা সোশ্যাল মিডিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সাইবার বুলিং এর শিকার হচ্ছে।
  • অনেক সময় কারো সোশ্যাল মিডিয়ার আইডি হ্যাক করে হ্যাকাররা বিভিন্ন মুক্তি পন দাবি করার পাশাপাশি যদি সঠিকভাবে টাকাগুলো না পায়। সেক্ষেত্রে তার উক্ত অ্যাকাউন্ট থেকে বিভিন্ন আপত্তিকর ছবি পোস্ট করে থাকে।
  • সোশ্যাল মিডিয়া অনেকটা রক্তের সাথে মিশে যাওয়ার মত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে সোশ্যাল মিডিয়াকে আসক্তি হিসেবে গ্রহণ করার ফলে জীবনযাপন খুব বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
  • সোশ্যাল মিডিয়া যেমন ব্যবসায়িক কেন্দ্র হিসেবে তৈরি হয়েছে। ঠিক তেমনি এর উল্টোদিকে কিছু প্রতারক চক্র পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখিয়ে কে তার কাছ থেকে অন্য না দিয়েই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
  • অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করলে স্বাস্থ্য বিষয়ক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। চোখের ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি দেহকে অলস করে তোলা এমনকি ব্রেন, এবং হৃদপিন্ডের সমস্যা হতে পারে।
  • অনেকেই বিভিন্ন ধরনের স্টান্ট ভিডিও এবং গেমিং এর আসক্তিতে সে সকল ভিডিও ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করার নেশাতে এক্সিডেন্টে মারা যাচ্ছে যা খুবই দুঃখজনক।
  • অনেক রিচ ফ্যামিলি বিলং করে এরকম ব্যক্তিবর্গ তাদের অ্যালকোহল পানির ভিডিও থেকে শুরু করে আরো অনেক স্পর্শকাতর ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে। পরবর্তীতে তাদেরকে আইডল মেনে সেসব পথে তরুণরাও ধাবিত হচ্ছে।

সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার

সোশ্যাল মিডিয়ার ভালো দিক গুলো জানার পাশাপাশি আমাদেরকে সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার সম্পর্কেও জানতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতিকর দিক গুলো বর্ণনা করতে হলে যে বিষয়গুলো সামনে এসেছে সেগুলোর মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার বিষয়টি সামনে এসেছে। আমরা যদি সোশ্যাল মিডিয়াকে যোগাযোগের মাধ্যম এবং ভালো কাজে ব্যবহার করি তাহলে এটি কখনোই আমাদের ক্ষতিকর হিসেবে পরিলক্ষিত হবে না। যদিও সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো আমাদেরকে আধুনিক এবং দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে এনেছে। 
কিন্তু পক্ষান্তরে বিভিন্ন সমস্যায় অক্টোপাসের মত জড়িয়ে ধরে রেখেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলো ব্যবহার করার ফলে পরিবাররা একে অপরের সাথে দিন দিন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে এবং পারিবারিক কলহ সহ ডিভোর্সের মত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে চলেছে। এসব কারণে পরিবারের আপন জনদের বহুদিনের বিশ্বাস ও নির্ভরতায় ফাটল ধরছে একমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ার প্রেক্ষাপটে। আসুন এবার তাহলে সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার কোন কোন ক্ষেত্রে হচ্ছে সেগুলো জেনে নেওয়া যাক।
  • সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ক্ষতিকর দিকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারাত্মক এবং হুমকি স্বরূপ বিষয়টি হলো প্রকৃত পরিচয়টি লুকিয়ে অন্যের ছবি দিয়ে ফেক আইডি খুলে বিভিন্ন মানুষের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং পরবর্তীতে ক্ষতি সাধন করা।
  • কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ রয়েছে যারা ভুল এবং মিথ্যা খবর অপপ্রচার করে, সত্যকে মিথ্যা, মিথ্যাকে সত্য হিসেবে তুলে ধরে। যার ফলে সামাজিক দাঙ্গা হামলা থেকে শুরু করে বিশৃঙ্খলা ঘটে থাকে।
  • সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরকীয়া প্রেমের বিষয়টি বারবার উঠে এসেছে। বিশেষ করে বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে একমাত্র সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার বা এটির অপব্যবহার কারণ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
  • সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের মানবিক গুণাবলী কে প্রভাবিত করার পাশাপাশি মানি লন্ডারিং, আক্রমণাত্মক পোস্ট, ধর্ষণের মতো অপরাধও একমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহারের ফলে হচ্ছে।

মিডিয়ার নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় আমাদের করণীয়

সোশ্যাল মিডিয়ার নেতিবাচক প্রভাব গুলো মোকাবিলা করার জন্য সর্বপ্রথমে আমাদেরকে সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতিকর দিকগুলো চিহ্নিত করার মাধ্যমে সে সকল বিষয়ে সচেতন হতে হবে। আমরা ইতিমধ্যে উপরে যেসকল ক্ষতিকর দিকগুলো উল্লেখ করেছি সে সকল বিষয়ে নিজেরাই যদি আমরা সচেতন হই তাহলে খুব সহজেই এ ধরনের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। সোশ্যাল মিডিয়া যেহেতু একটি যোগাযোগের মাধ্যম এবং পাশাপাশি একটি ব্যবসায়ী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দিন দিন প্রসার পাচ্ছে। 
 
এ বিষয়টিকে মোকাবেলা করার জন্য আমাদেরকে সর্বপ্রথম নেতিবাচক বিষয়গুলোকে পরিহার করে ইতিবাচক অর্থাৎ সোশ্যাল মিডিয়ার ভালো দিক গুলোকে গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে সন্তানদের সুস্থ এবং স্বাভাবিক পরিবেশে বেড়ে ওঠার সুযোগ তৈরি করা। নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা সহ আরো অন্যান্য সকল বিষয় তদারকি করা আমাদের একমাত্র দায়িত্ব। সন্তানদের সোশ্যাল মিডিয়া এবং মোবাইল ব্যবহারে উৎসাহ না দিয়ে তাদের সাথে পর্যাপ্ত সময় ইস্পেন্ড করা এবং বন্ধুসুলভ আচরণ করা।

যদি তারা কোন রকম সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার বা অপব্যবহার করার চেষ্টা করে সেক্ষেত্রে তাদেরকে বুঝিয়ে বলা। সবচেয়ে বেশি ভালো হবে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত একজন কিশোর অথবা কিশোরীকে স্মার্টফোন হাতে তুলে না দেওয়া। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে যতগুলো অ্যাপস রয়েছে, সেগুলোর অপব্যবহার না করে সঠিক পথে ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়াকে উপভোগের বিষয়বস্তু হিসেবে গণ্য করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

লেখকের শেষকথা

বন্ধুগণ আমরা আজকে এই আর্টিকেলে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারলাম। সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতিকর দিক গুলো যদি আমরা চিহ্নিত করতে পারি তাহলে সোশ্যাল মিডিয়ার নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় আমাদের খুব একটা সমস্যা সৃষ্টি হবে না। পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ার ভালো দিক গুলো যদি আমরা সকলের কাছে প্রচার করতে পারি তাহলে তারাও নেতিবাচক বিষয়গুলোকে পরিহার করতে উৎসাহ পাবে। আপনাদেরকে অশেষ অশেষ ধন্যবাদ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য। 

আমরা সবসময়ই চেষ্টা করি আমাদের ওয়েবসাইটে তথ্যবহুল আর্টিকেলগুলো পাবলিশ করার জন্য। আপনি চাইলে অনলাইন ইনকাম সহ তথ্যপ্রযুক্তি গত সকল বিষয়ে আমাদের ওয়েবসাইট থেকে জ্ঞান আহরণ করতে পারবেন। যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়ার বিষয়টি অনেকটাই সেনসিটিভ। তাই আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়দের উপকারের লক্ষ্যে অবশ্যই আজকের এই পোস্টটি শেয়ার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url