ডিজিটাল মার্কেটিং কি কি শেখানো হয় বিস্তারিত জানুন

আমরা বিভিন্ন সময় সোশ্যাল মিডিয়াতে ডিজিটাল মার্কেটিং করে অনেক কেই কোটিপতি বনে যেতে দেখে থাকি। কিন্তু ডিজিটাল মার্কেটিং আসলে বিষয়টা কি এবং ডিজিটাল মার্কেটিং কি কি শেখানো হয় এ বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই। ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে বর্তমান সময়ে ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যাপক চাহিদা সম্পন্ন একটি প্লাটফর্মে পরিণত হয়েছে। তাই কেউ যদি ফ্রিল্যান্সিং জগতে এসে ডিজিটাল মার্কেটিং কি কি শেখানো হয় বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে অবগত হতে পারে তাহলে ভবিষ্যতে তার ক্যারিয়ার উজ্জ্বল হিসেবে বিবেচিত হবে। 
ডিজিটাল-মার্কেটিং-কি-কি-শেখানো-হয়
চলুন তাহলে আজকে এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে উক্ত বিষয়টি জানার পাশাপাশি ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে কত দিন লাগে এবং ডিজিটাল মার্কেটিং করতে কি কি লাগে বিষয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। অবশ্যই ডিজিটাল মার্কেটিং কি কি শেখানো হয় বিষয়টি জানার জন্য আপনাকে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়তে হবে।
পোস্ট সূচীপত্র

ডিজিটাল মার্কেটিং বলতে কি বুঝায়

ডিজিটাল মার্কেটিং হল অনলাইনে পণ্য বা সার্ভিসের বিজ্ঞাপন প্রচার প্রচারণা কে ইঙ্গিত করে। সেটা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অথবা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এর মাধ্যমে হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ডিজিটাল মার্কেটিং ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমেও সংঘটিত হয়। আমরা টিভিতে যে সকল বিজ্ঞাপন দেখে থাকি সেই প্রচার প্রচারণাটাও ডিজিটাল মার্কেটিং এর আওতায় পরে। এছাড়াও মোবাইলে ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এর মাধ্যমে পণ্যের প্রচারণা এমনকি ইলেকট্রনিক বিলবোর্ড বিষয়টিকেও ডিজিটাল মার্কেটিং বলে আখ্যায়িত করা হয়। 
তাহলে একটি বিষয় পরিষ্কার হলো যে আধুনিক বিশ্বে নিজেকে ও নিজের ব্যবসার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য হলেও ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার গুরুত্ব অপরিসীম। যেহেতু ডিজিটাল মার্কেটিং বিভিন্ন পদ্ধতি বা ধাপ অনুসারে নির্ধারিত হয়ে থাকে এবং ডিজিটাল মার্কেটাররা বিভিন্ন প্লাটফর্মে ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়টি পরিচালনা করে থাকেন। সে ক্ষেত্রে আমাদেরকে ডিজিটাল মার্কেটিং কি কি শেখানো হয় এই বিষয়টি জানতে হলে অবশ্যই ডিজিটাল মার্কেটিং এর ধাপসমূহ কি কি সেটা জানা প্রয়োজন। নিচে ডিজিটাল মার্কেটিং এর ধাপসমূহ তুলে ধরা হলো।
  • সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (SMM)
  • এফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate Marketing)
  • ইমেইল মার্কেটিং (Email Marketing)
  • এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO)
  • এসইএম বা সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং (SEM)
  • কন্টেন্ট মার্কেটিং (Content Marketing)
  • ই-কমার্স প্রোডাক্ট মার্কেটিং (E-Commerce Product Marketing)
  • সিপিএ মার্কেটিং (CPA marketing)

ডিজিটাল মার্কেটিং কি কি শেখানো হয়

আমরা ইতিমধ্যে ডিজিটাল মার্কেটিং বলতে কি বুঝায় এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এর ধাপসমূহ জানতে পারলাম। মূলত ডিজিটাল মার্কেটিং এর যে ধাপগুলো বর্ণনা করা হয়েছে এগুলোই ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টরে শেখানো হয়ে থাকে। যেহেতু বর্তমান সময়ে ডিজিটাল মার্কেটিং অনলাইন বিজনেসের ক্ষেত্রে একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে। সেহেতু একজন বিজনেসম্যানের যেমন ডিজিটাল মার্কেটার প্রয়োজন, ঠিক তেমনি কেউ যদি ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার মাধ্যমে কাজের খোঁজ করে সে ক্ষেত্রে কাজ পাওয়ার বিষয়টা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। 

কেননা বর্তমান সময়ে অনলাইনে কেনাকাটা করতে পছন্দ করেন না এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া খুব মুশকিল। আমরা ফেসবুকে স্ক্রল করার সময় হঠাৎই একটি পণ্যের বিজ্ঞাপন সামনে চলে আসে এবং আমাদের যদি পণ্যটি আকর্ষণ বোধ করে তাহলে আমরা অর্ডার করে ফেলি। আর এই বিষয়টি পরিচালনা করে থাকে একজন ডিজিটাল মার্কেটার। আমাদের আজকের আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয় ছিল ডিজিটাল মার্কেটিং কি কি শেখানো হয় বিষয়টি নিয়ে। 

আমরা ইতিমধ্যে অবগত হতে পেরেছি যে ডিজিটাল মার্কেটিং এর কিছু ধাপ রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে ডিজিটাল মার্কেটাররা পণ্য সেল করার বিষয়টি সম্পূর্ণ করে থাকেন। চলুন তাহলে এবার একজন ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে কি কি শিখলে মার্কেটপ্লেস এবং মার্কেটপ্লেস এর বাইরে থেকে বিভিন্ন কাজের অর্ডার পাওয়া সম্ভব সেগুলো পর্যায়ক্রমে জানার চেষ্টা করব।

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (SMM)

ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং একটি অন্যতম সেক্টর হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে। এর কারণ হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি অডিয়েন্সের কথা উল্লেখ করা যায়। অর্থাৎ একজন ডিজিটাল মার্কেটার পণ্য বিক্রি করার জন্য যদি সোশ্যাল মিডিয়াগুলো বেছে নেয় সেক্ষেত্রে পণ্যের ক্রেতা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। যদি সার্চ ইঞ্জিন এর সাথে সোশ্যাল মিডিয়ার তুলনা করা হয় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সোশ্যাল মিডিয়াতে কাস্টমার বেশি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা ও বেশি থাকে। 

আমরা অনেক সময় ফেসবুকে হঠাৎ করেই t-shirt শাড়ি অথবা নিত্য প্রয়োজনীয় যেকোনো পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখি। মূলত ফেসবুক পেজের “sponsored” নাম দিয়ে বিজ্ঞাপন গুলো সকলের হোমপেজে প্রচার প্রচারণা করানো হয়ে থাকে। মূলত একজন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেট আর ডিজিটাল মার্কেটার অ্যাড ক্যাম্পেইন এর মাধ্যমে এ ধরনের বিজ্ঞাপন সকলের কাছে পৌঁছে দেয়। 

সুতরাং কেউ যদি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটার হতে চায় সেক্ষেত্রে অবশ্যই এড ক্যাম্পেইন পরিচালনা থেকে শুরু করে ডিজিটাল মার্কেটিং করতে কি কি লাগে এই বিষয়ে একজন এক্সপার্ট অ্যাড ক্যাম্পার হওয়ার মাধ্যমেই কেবলমাত্র মার্কেট প্লেস থেকে বিভিন্ন ক্লায়েন্টের অর্ডার পাওয়া সম্ভব।

এফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate Marketing)

এফিলিয়েট নামটি শুনলে সর্বপ্রথম আপনাদের মনে কমিশন এর প্রশ্নটা আসতে পারে। হ্যাঁ বিষয়টি ঠিকই ধরেছেন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং মূলত এমন একটি মার্কেটিং পদ্ধতি যেখানে নিজের কোন পণ্য থাকবে না কিন্তু অন্য আরেকজনের পন্য ফেল করার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন লাভ করা যায়। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং মূলত প্যাসিভ ইনকাম হিসেবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। প্যাসিভ ইনকাম হল আপনি সবসময় একটিভ না থেকে একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন পোস্ট করে রেখেছেন। 

পরবর্তীতে যে সকল ব্যক্তি আপনার প্রদত্ত বিজ্ঞাপন বা লিংক থেকে প্রোডাক্ট ক্রয় করবে সেখান থেকে আপনি কমিশন পেতেই থাকবেন। বিষয়টি আরো একটু সহজ করে বোঝার চেষ্টা করা যাক। ধরুন একজন লোকের যেকোনো ধরনের একটি প্রোডাক্টের ব্যবসা রয়েছে। সে চাচ্ছে তার প্রোডাক্টগুলো অন্য কেউ যেকোনো উপায়ে বিক্রি করুক এবং তার পরিবর্তে ওই লোকটি একটি কমিশন দেবে। আর এই কমিশনের বিষয়টি নিয়ে যারা কাজ করে থাকে তারাই মূলত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার। আমরা amazon এর নাম সকলেই শুনেছি। 

মূলত এমাজন থেকে কেউ যদি অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম গ্রহণ করে এবং সেই লিংকের মাধ্যমে কেউ যদি প্রোডাক্ট ক্রয় করে সেক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট কমিশন প্রাপ্ত হয়। তাই কেউ যদি ডিজিটাল মার্কেটিং কি কি শেখানো হয় এই বিষয়টিতে এফিলিয়েট মার্কেটিং শিখে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চায় তাহলে অবশ্যই সেটি একটি ভালো উদ্যোগ।

ইমেইল মার্কেটিং (Email Marketing)

ইমেইল মার্কেটিং ডিজিটাল মার্কেটিং এর আরো একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইমেইল মার্কেটিং কে যদি সহজ ভাবে বলা হয় তাহলে ই-মেইলের মাধ্যমে যেসকল মার্কেটিং পরিচালনা করা হয়ে থাকে সেটি মূলত ইমেইল মার্কেটিং। আমরা যখন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে লগইন বা সাইনআপ করার জন্য আমাদের ইমেইল প্রদান করি তখন ওয়েবসাইটের কর্তৃপক্ষ ইমেইল গুলো জমা করে রাখে। আর এই জমা করার উদ্দেশ্য হলো পরবর্তীতে তাদের প্রোডাক্ট সম্পর্কে প্রচারণার জন্য ইমেইলগুলো ব্যবহার করা হয়।

আপনি লক্ষ্য করলে দেখবেন আপনার যদি কোন একটি প্রফেশনাল মানের ইমেইল থাকে এবং আপনি বিভিন্ন জায়গায় সেই ইমেইল দিয়ে লগইন করে থাকেন। তাহলে মাঝে মাঝেই বিভিন্ন প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস বিষয়ে আপনার ইমেইলে মেইল আসে। আর এই বিষয়টি করে থাকে সাধারণত ইমেইল মার্কেটাররা। যদিও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইমেইল চেক করার প্রবণতা অনেকটাই কম। তবে বাংলাদেশ ব্যতীত ফরেন কান্ট্রি গুলোতে তারা প্রতিনিয়ত ইমেইল চেক করে থাকে। 

আর তাদেরকে টার্গেট করে ইমেইল পাঠানোর কাজ করে থাকে ইমেইল মার্কেটাররা। যেমন আমরা সকালে ঘুম থেকে উঠেই মেসেঞ্জার, whatsapp এর মেসেজগুলো চেক করি। ঠিক তেমনি বাইরের দেশের লোক তারা সকালে ঘুম থেকে উঠেই তাদের ইমেইল গুলো চেক করে। তাই কেউ যদি ডিজিটাল মার্কেটিং করতে কি কি লাগে এই প্রশ্ন অনুযায়ী ইমেইল মার্কেটিং এর কাজ শিখে তাহলে মার্কেটপ্লেস থেকে অনেক কাজের অর্ডার পাওয়া সম্ভব।

সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO)

ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ার মার্কেটিং কে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হলেও সবচেয়ে বেশি ট্রাফিক এবং লিগাল কাস্টমার খুঁজতে সাহায্য করে একমাত্র সার্চ ইঞ্জিন। আর ডিজিটাল মার্কেটাররা সার্চ ইঞ্জিন নিয়ে স্ট্রাটিজি করার মাধ্যমে যে সকল কাজ সম্পাদন করে থাকে সেগুলোই মূলত সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা SEO এর অংশ। যদি সরাসরি বিষয়টিকে বলতে হয় তাহলে এসিও হল এমন একটি পদ্ধতি যেই পদ্ধতি অনুসারে ওয়েবসাইট কি এমনভাবে সাজানো হয় যা সার্চ ইঞ্জিনে খুব সহজেই তালিকার সামনে চলে আসে। 
বিশেষ করে On Page SEO করার মাধ্যমে কিওয়ার্ডগুলো সার্চের সাথে ম্যাচ হয়ে যায়। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি গুগল সার্চ বারে গিয়ে লিখে Best T-shirt in BD। তাহলে কারো যদি টি-শার্টের বিজনেস করে এরকম ওয়েবসাইট থাকে এবং সেখানে উক্ত কিওয়ার্ড গুলি যুক্ত করা থাকে সেক্ষেত্রে সার্চ করার পর সেই ব্যক্তির ওয়েবসাইটটি সামনে চলে আসা সম্ভাবনা বেশি। তবে বিষয়টিকে সহজ ভাবে বললেও এতটাও সহজ না। 

যারা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন নিয়ে কাজ করে তারা বিভিন্ন রিসার্চ এবং পদ্ধতি অনুসারে কিওয়ার্ডগুলোকে এমনভাবে সাজায় যেন সার্চ করলে সেই ওয়েবসাইটটি সামনে আসতে বাধ্য হয়।সুতরাং কেউ যদি ডিজিটাল মার্কেটিং কি কি শেখানো হয় এই প্রশ্নতে শুধুমাত্র SEO নিয়ে কাজ করে এবং এ বিষয়টিতে দক্ষ হতে পারে তাহলে ভবিষ্যতে কোন কাজের অভাব হবে না।

সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং (SEM)

সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং অনেকটা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এর মতই কাজ করে। কিন্তু এখানে পার্থক্য হল SEO করার মাধ্যমে একটি ওয়েবসাইট কে রেংক করাতে হলে নির্দিষ্ট পরিমাণ রিসার্চ, কিওয়ার এবং সময়ের প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ একটি ওয়েবসাইট কে তালিকার সামনে নিয়ে আসার জন্য অবশ্যই কমপক্ষে ৬ মাস ব্যাকলিংক এবং কিওয়ার্ড রিসার্চ এর কাজ করতে হয়। এরপরে কেবলমাত্র ওয়েবসাইট গুলো র‍্যাঙ্ক করে। 

কিন্তু সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং এর মাধ্যমে খুব সহজেই ট্রাফিক নিয়ে আসা সম্ভব এতে কোনরকম সময়ের প্রয়োজন করবে না। তবে এক্ষেত্রে অ্যাড ক্যাম্পেইন এর সাহায্য নিতে হবে। সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং করতে হলে অবশ্যই পেইড পদ্ধতিতে অ্যাড রান করাতে হবে যেন গুগল সব সময় তার ওয়েবসাইট থেকে প্রথম সারিতে রেঙ্ক করায়। আমরা অনেক সময় গুগলে কোন একটি বিষয় সার্চ করলে, যে বিষয়টি নিয়ে সার্চ করেছি সেই টাইটেল এর নিচে ছোট্ট করে ad লেখা থাকে। 

বিষয়টি হলো ওই ওয়েবসাইটটি একজন সার্ক ইঞ্জিন মার্কেটারকে দিয়ে ক্যাম্পেইন রানিং করানো হয়েছে। যার ফলে গুগল সেই ওয়েবসাইটটিকে সর্বপ্রথম শো করাচ্ছে। সুতরাং ডিজিটাল মার্কেটিং করতে কি কি লাগে এ বিষয়টিতে যদি কেউ SEO নিয়ে কাজ করে তাহলে একটি অ্যাড রান করতে যেগুলো বিষয়ে জানা প্রয়োজন সেটি সঠিকভাবে জানতে হবে।

কন্টেন্ট মার্কেটিং (Content Marketing)

ডিজিটাল মার্কেটিং এর আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কন্টেন্ট মার্কেটিং এ ধরা হয়। অনেকে কনটেন্ট মার্কেটিং বিষয়টিকে ব্লক পোস্টের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন। তবে ব্যাপারটি সম্পূর্ণ এমন নয়। অনেকে রিভিউ বা গল্প বলার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রোডাক্টের কথা আমাদের সামনে তুলে ধরেন। যারা এ ধরনের রিভিউ এর কাজ করে থাকে তাদেরকে কনটেন্ট মার্কেটার বলা হয়। মূলত স্টোরি টেলিং এর মাধ্যমে প্রোডাক্টের প্রচার-প্রচারণা বা বিক্রি নিশ্চিত করায় কন্টেন্ট মার্কেটিং এর মূল উদ্দেশ্য। 

আমরা ফেসবুকের রিলস অথবা ইউটিউব এর শর্ট ভিডিওতে হঠাৎ করেই কোন পণ্যের বিষয়ে রিভিউ এর ভিডিও দেখে থাকি। মূলত তারাই একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর যারা বিভিন্ন কোম্পানির প্রোডাক্ট স্টোরি টেলিং, ভিডিও বা কনটেন্ট তৈরি করে আমাদের সামনে নিয়ে আসছে। আর সেক্ষেত্রে যদি কারো প্রোডাক্টটি পছন্দ হয় তাহলে অর্ডার করে ফেলছে। আর এটি মূলত কন্টেন্ট মার্কেটিং এর মূল উদ্দেশ্য। 

তবে একজন কনটেন্ট মার্কেটার হওয়ার জন্য ভিডিও এডিটিং থেকে শুরু করে রিভিউ এবং উপস্থাপনা করার দক্ষতা অর্জন করতে হয়। এমন অনেক প্রোডাক্ট রয়েছে যেগুলো শুধুমাত্র উপস্থাপন এবং ভালো মানের ভিডিও এডিটিং করার মাধ্যমে বিক্রির নিশ্চয়তা অনেকাংশেই বৃদ্ধি পায়। তাহলে এখানে আরো একটি বিষয় সামনে আসলো সেটি হল ডিজিটাল মার্কেটিং কি কি শেখানো হয় এ বিষয়টিতে ভিডিও এডিটিং সম্পর্কেও মোটামুটি ধারণা রাখতে হবে।

ই-কমার্স প্রোডাক্ট মার্কেটিং (E-Commerce Product Marketing)

ই-কমার্স প্রোডাক্ট মার্কেটিং অনেকটা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সাথে তুলনা করা যায়। বর্তমানে অনলাইনে ই-কমার্স ব্যবসা করে অনেকেই ভালো একটি মুনাফা ক্রিয়েট করছে। তবে সেই সকল ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন মার্কেট আর নিয়োগ করে যারা তাদের উক্ত প্রোডাক্টগুলো বিভিন্ন পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে সেল করে থাকে। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ যেমন একটি কোম্পানি এফিলিয়েট প্রোগ্রাম প্রদান করার মাধ্যমে একটি লিংক দিয়ে দেয়। 

ঠিক তেমনি ই-কমার্স প্রোডাক্ট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠানগুলো একটি নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করে যেখান থেকে প্রোডাক্ট সেল হওয়ার পর নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন উক্ত একাউন্টটিতে জমতে শুরু করে। তবে কমিশনটি তৎক্ষণাৎ উইথড্র করা সম্ভব হয় না। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা হওয়ার পর তবে কেবলমাত্র ইকমার্স প্রোডাক্টাররা টাকাগুলো পেয়ে যায়। তবে কেউ যদি ই-কমার্স প্রোডাক্ট মার্কেটিং শিখতে চাই তাহলে অবশ্যই প্রোডাক্ট সম্পর্কে নলেজ থাকতে হবে। 

পাশাপাশি সেই সকল প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন সঠিক কাস্টমারের কাছে পৌঁছানোর যে ক্রাইটেরিয়াগুলো রয়েছে সে সম্বন্ধে জানতে হবে। উদাহরণস্বরূপ কারো যদি এই মুহূর্তে একটি বাস্কেটবল প্রয়োজন হয়,কিন্তু কোন মার্কেট আর যদি তার সামনে টেনিস বলের বিজ্ঞাপন নিয়ে যায় তাহলে অর্ডার পাওয়ার আশা একদম জিরো। সুতরাং ডিজিটাল মার্কেটিং করতে কি কি লাগে এ বিষয়টিতে ই-কমার্স প্রোডাক্ট মার্কেটিং করে ভালো একটি আয় রোজগার করা সম্ভব।

সিপিএ মার্কেটিং (CPA marketing)

সিপিএ মার্কেটিং হল ডিজিটাল মার্কেটিংয় বা অফিলিয়েট মার্কেটিং এর একটি অংশ। তবে এখানে একটু ভিন্নতা রয়েছে। প্রোডাক্টের বদলে এখানে বিভিন্ন রকম সার্ভিসের মার্কেটিং করা হয়ে থাকে। আমরা সোশ্যাল মিডিয়া বা বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে ঘোরাঘুরি করলে অনেক সময় বিভিন্ন apps এর বিজ্ঞাপন চলে আসে। সেই অ্যাপসগুলো মূলত একজন সিপিএ মার্কেটার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে দর্শকদের সামনে নিয়ে আসে। বিজ্ঞাপন গুলোতে ক্লিক করে যদি কেউ অ্যাপস ইনস্টল করে সেক্ষেত্রে ওই সিপিএ মার্কেটার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন প্রাপ্ত হবে।

সিপিএ মার্কেটিং এর মধ্যে আরও কিছু ছোট ছোট কাজ রয়েছে যেগুলো করার মাধ্যমে টাকা ইনকাম করা সম্ভব। সিপিএ এর অর্থ হল কস্ট পার অ্যাকশন। অর্থাৎ কোন একশন কমপ্লিট করতে পারলেই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ এমন কালেক্ট করা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ একজন ইউজারকে দিয়ে ফরম পূরণ করানো, ভিডিও দেখানো, বিজ্ঞাপন শো করানো, একাউন্ট খোলা সহ ছোট ছোট কাজ সিপিএ মার্কেটিংয়ের আওতায় পড়ে। তবে বলা যায় ডিজিটাল মার্কেটিং এর এই বিষয়টি অনেকটাই অবহেলিত। 
কেননা এ ধরনের কাজ করে খুব একটা টাকা আয় করা সম্ভব নয়। পাশাপাশি এ ধরনের কাজে কোন ক্রিয়েটিভিটি অথবা দক্ষতার প্রয়োজন পড়ে না। তাই আমাদের পরামর্শ থাকবে সিপিএ মার্কেটিং না করে ডিজিটাল মার্কেটিং কি কি শেখানো হয় এবং ডিজিটাল মার্কেটিং করতে কি কি লাগে এ বিষয়ে আলোকে অন্য যেগুলো মার্কেটিং পদ্ধতি আলোচনা করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে যেকোনো একটিতে যদি এক্সপার্ট হওয়া যায় সেক্ষেত্রে মার্কেটপ্লেস এবং মার্কেটপ্লেসের বাইরে ব্যাপক কাজের সুযোগ পাওয়া যাবে।

ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে কতদিন লাগে

ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে কত দিন লাগে এ বিষয়টি একুরেট ভাবে বলা সম্ভব নয়। বিষয়টি নির্ভর করে অনেকটা প্রাথমিক জ্ঞান, শিখার সময় এবং প্র্যাকটিসের উপর। কারো যদি কম্পিউটার চালনা সম্পর্কে বেসিক নলেজ থাকে তাহলে সময় একটু বেশি লাগতে পারে। আর কম্পিউটার সম্বন্ধে যদি পূর্ব থেকেই অ্যাডভান্স লেভেলে ধারণা থাকে তাহলে ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে খুব একটা বেশি সময় লাগার কথা নয়। যাদের পূর্ব থেকেই ব্যবসায়িক ধারণা রয়েছে তাদের ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে খুব একটা বেশি সময় লাগবে না। তবে সাধারণভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে অবশ্যই কমপক্ষে ৬ মাস সময় নিয়ে আসা উচিত।

ডিজিটাল মার্কেটিং করতে কি কি লাগে

অন্যান্য প্রশ্নের পাশাপাশি ডিজিটাল মার্কেটিং করতে কি কি লাগে এটি একটি বহুল আলোচিত প্রশ্ন। ফ্রিল্যান্সিং জগতে পা রাখার পূর্বেই অথবা ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার শুরুতেই প্রথম প্রশ্ন সামনে আসে সেটি হল ডিজিটাল মার্কেটিং করার ক্ষেত্রে কি কি লাগে বা কি কি জিনিসের প্রয়োজন পড়ে। ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে অবশ্যই ধৈর্য, পরিশ্রম এবং দক্ষতার প্রয়োজন আছে। যদি কেউ ধৈর্য সহকারে কাজ করতে আগ্রহী না হয় সে ক্ষেত্রে মাঝপথ থেকেই তাকে বিদায় নিতে হবে।
সুতরাং শুধুমাত্র ডিজিটাল মার্কেটিং নয় ফ্রিল্যান্সিং জগতের প্রত্যেকটি কাজ করার জন্য অবশ্যই ধৈর্য সহকারে আসা উচিত। এগুলো ব্যতীত আরো কিছু জিনিস প্রয়োজন পড়বে ফ্রিল্যান্সিং বা ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার ক্ষেত্রে। নিচে ডিজিটাল মার্কেটিং করতে কি কি লাগে সেই বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলো।
  • সময় নিয়ে পরিশ্রম এবং অধ্যাবসায় করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
  • অবশ্যই ফ্রিল্যান্সিং অথবা ডিজিটাল মার্কেটিং যেটাই করা হোক না কেন সে ক্ষেত্রে ভাল কমিউনিকেশন স্কিল থাকা জরুরী।
  • ডিজিটাল মার্কেটিং করতে মোটামুটি কনফিগারেশন ডেস্কটপ কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ থাকলেই হবে। তবে কনফিগারেশন বলতে কমপক্ষে Ram ২ স্লটে মোট ৮ জিবি এবং প্রসেসর কমপক্ষে Core i3 হতে হবে।
  • ইন্টারনেট সংযোগ থাকা বাধ্যতামূল। কেননা ডিজিটাল মার্কেটিং একটি অনলাইন সেক্টর, তাই ইন্টারনেট সংযোগ থাকা অপরিহার্য একটি বিষয়।
  • যদি কারো ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে প্রথমিক ধারণা থাকে সেক্ষেত্রে এক্সট্রা বেনিফিট পাওয়া যাবে।

ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে কত টাকা লাগে

আমরা ইতিমধ্যে ডিজিটাল মার্কেটিং কি কি শেখানো হয় এবং ডিজিটাল মার্কেটিং করতে কি কি লাগে এ বিষয়টি সম্পর্কে খুব ভালো একটি ধারণা পেয়েছি। এই প্রশ্নগুলোর পাশাপাশি সকলের মনে আরও একটি প্রশ্ন আছে সেটি হল ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে কত টাকা লাগে। আমাদের মতে বেসিক ধারণা নেওয়ার জন্য সর্বপ্রথমে টাকা ইনভেস্ট না করে ইউটিউব এর বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক টিউটোরিয়াল দেখা প্রয়োজন। কেননা ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার পূর্বে অবশ্যই ফ্রিল্যান্সিং কি এবং এটি কিভাবে পরিচালিত হয় সেটি জানা প্রয়োজন। 

তবে আমাদের ওয়েবসাইটে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক অনেক আর্টিকেল পাবলিশ করা আছে আপনি চাইলে দেখে আসতে পারেন। এখন প্রশ্ন হল ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে কত টাকা লাগে। ইউটিউবে বেসিক ধারণা নেওয়ার পর অবশ্যই আপনাকে কোন গাইডলাইনের আওতায় যেতে হবে। আর গাইডলাইনের বিষয়টি সাধারণত আইটি সেক্টর এর মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়। বিভিন্ন আইটি ইনস্টিটিউট রয়েছে যারা ফ্রিল্যান্সিং এর কোর্স করিয়ে থাকে। 

সেক্ষেত্রে আইটি সেন্টারগুলোর ডিমান্ড এবং কোর্সের উপর নির্ভর করে কত টাকা লাগবে। তবে বিভিন্ন আইটি সেন্টারের সাথে যোগাযোগের পরে আমরা একটি তথ্য পেয়েছি সেটি হল মোটামুটি সকল আইটি সেন্টার ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স করাতে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা চার্জ করে।

শেষের কথা

বন্ধুগণ আমরা আজকে ফ্রিল্যান্সিং এবং ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ক আর্টিকেলের একদম শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। পরিশেষে একটি কথাই ব্যক্ত করতে চাই সেটি হল আপনারা ফ্রিল্যান্সিং এর ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে যদি কাজ করতে চান অবশ্যই সময় বেঁধে পরিশ্রমের সাথে কাজ করার চেষ্টা করবেন। আমরা এখানে ডিজিটাল মার্কেটিং কি কি শেখানো হয় এবং ডিজিটাল মার্কেটিং করতে কি কি লাগে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিতভাবে জানানোর চেষ্টা করেছি। 

এরপরও যদি আপনাদের ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ে জানার ক্ষেত্রে কোনরকম সমস্যা হয় তাহলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আপনার বন্ধুবান্ধবদের ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে জানানোর জন্য অবশ্যই আজকের পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url