ইউটিউবে ইনকাম করার নিয়ম-ইউটিউব থেকে আয় করার ৫টি উপায়

ইউটিউবে ইনকাম করার নিয়ম সংক্রান্ত বিষয়গুলো সহজ হলেও টাকা ইনকাম করা খুব একটা সহজ নয়। তবে কেউ যদি সঠিক পদ্ধতি গুলো বা উপায়গুলো অনুসরণ করে তাহলে খুব সহজেই ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করা সম্ভব। যাদের ক্রিয়েটিভিটি লেভেল অনেক হাই এবং ভিডিও তৈরি করার ক্ষেত্রে আগ্রহ রয়েছে তাদের জন্যই আজকের এই আর্টিকেল। 
ইউটিউবে-ইনকাম-করার-নিয়ম
আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে সেই সকল ক্রিয়েটিভ ব্যক্তিবর্গ ইউটিউবে ইনকাম করার নিয়ম সংক্রান্ত বিষয়ে খুব ভালোভাবে জানতে পারবেন। উক্ত বিষয় বাদেও আরো যে সকল বিষয় সম্পর্কে জানতে চলেছেন সেগুলো হল ইউটিউব থেকে আয় করার ৫টি উপায়, ইউটিউব থেকে মাসে কত টাকা ইনকাম করা যায় এবং ইউটিউব কত ভিউতে কত টাকা প্রদান করে। সুতরাং ইউটিউবে ইনকাম করার নিয়ম সংক্রান্ত সকল বিষয়বস্তুগুলো বিস্তারিতভাবে জানার জন্য অবশ্যই আর্টিকেলের শেষ পর্যন্ত অরুণ পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্র

ইউটিউবে ইনকাম করার নিয়ম

বর্তমান সময়ে বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশেই স্মার্টফোনের ব্যাপকতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। আর প্রত্যেকটি স্মার্টফোনে রয়েছে ইউটিউব অ্যাপ্লিকেশন। ইউটিউব কোম্পানি স্মার্ট ফোন কোম্পানিদের সাথে কোলাবারেশন করার মাধ্যমে একটি নতুন স্মার্টফোন ইউজারের ডিভাইসে অলরেডি ইউটিউব প্লাটফর্মটি ইনস্টল হিসেবে থাকছে। প্রতিদিন ইউটিউব প্লাটফর্মে কি পরিমান ভিডিও আপলোড করা হয় তা আমাদের ধারণার বাহিরে। একটি হিসেব অনুযায়ী বিবৃতিতে বলা হয়েছে প্রতি মিনিটে ইউটিউবে ৫০০ ঘন্টার বেশি ভিডিও আপলোড করা হয়ে থাকে। 

বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশে ইউটিউবে জনপ্রিয়তা পাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশেও youtube এর জনপ্রিয়তা নেহাত কম নয়। আর তাই কেউ যদি নিজেকে একজন কন্টেন্ট ক্রিউটর হিসেবে নিযুক্ত করে ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে তাহলে সেখান থেকে মাসে ভালো একটি অ্যামাউন্ট ইনকাম করা সম্ভব। এমনও অনেক কন্টেন্ট ক্রিয়েটর রয়েছে যাদের আয় এর একমাত্র অবলম্বন হলো ইউটিউব এবং তারা সফলতার সাথে youtube এ ইনকাম করার নিয়ম অনুযায়ী কাজ করে প্রতি মাসে হাজার হাজার ডলার তাদের একাউন্টে যুক্ত হচ্ছে। তবে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করতে হলে অবশ্যই একজন ভালো মানের কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হতে হবে। 
ভিডিওর কোয়ালিটি থেকে শুরু করে উপস্থাপন, ভিডিও এডিটিং সবকিছুই ভালো মানের না হলে সেখানে কোন ভিউ হবে না। আর যদি ইউটিউব চ্যানেলের মালিকের ভিডিওগুলোতে ভিউ না আসে তাহলে সেখান থেকে টাকা ইনকাম করা সম্ভব নয়। ইউটিউবে ইনকাম করার নিয়ম বিষয়গুলো বলতে গেলে অনেকগুলো পদ্ধতি রয়েছে যার মাধ্যমে youtube থেকে টাকা ইনকাম করা সম্ভব। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নতুন একজন ইউটিউবারের ইনকাম চোর থাকে এডসেন্সের মাধ্যমে। একটি নির্দিষ্ট ক্রাইটেরিয়া ফিলাপ করার পর এডসেন্সের জন্য অ্যাপ্লিকেশন করতে হয়। 

এডসেন্স অ্যাপ্লিকেশন এপ্রুভ হলে, পরবর্তীতে ভিউয়ের ভিত্তিতে এবং গুগল থেকে এড শো করার মাধ্যমে এডসেন্স একাউন্টে ধীরে ধীরে ডলার যুক্ত হতে থাকে। আমরা আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে ইউটিউব থেকে আয় করার ৫টি উপায় সম্বন্ধে জেনে নিব।

ইউটিউব থেকে আয় করার ৫টি উপায়

অনেকেই বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ইউটিউব চ্যানেল খুলে ভিডিও বানানো শুরু করে দেয়। কিছুদিন ভিডিও বানানোর পর সেটা আর কন্টিনিউ করেনা। তার একমাত্র কারণ হলো ভিউ না আশা। এজন্য ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করতে হলে প্রফেশনালি ভাবে ইউটিউব চ্যানেল খোলার পাশাপাশি ভিডিও আপলোড করার সময় সঠিকভাবে SEO এর কাজ গুলো করতে হয়। সঠিকভাবে যদি একটি ভিডিওতে SEO না করা থাকে তাহলে কখনোই সেখানে ভিউ হবে না। আবার যদি ভিডিও গুলোতে সঠিকভাবে SEO করা থাকে কিন্তু ভিডিও কোয়ালিটি খারাপ হয় তাহলে Impression কমে যায় যার ফলে ভিউজও কমে যায়। 

সুতরাং ইউটিউবিং শুরু করার পূর্বে অবশ্যই ভিডিও এডিটিং এবং SEO সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। SEO মূলত Search Engine Optimization. ভিডিওর ট্যাগ সেকশনে সঠিক ভাবে উপযুক্ত ট্যাগ এবং যে কিওয়ার্ডগুলো রেঙ্কে আসার সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলো ভিডিও আপলোডিং সেকশনে ব্যবহার করতে হবে। যদি ভিডিওর কোয়ালিটি, এডিটিং এবং SEO সঠিকভাবে করা হয় তাহলে অবশ্যই সেই ভিডিওতে ভিউজ আসবে। যদি দর্শকদের কাছে ভিডিওটি ভালো লাগে তাহলে তারা চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে দিবে। 

সাবস্ক্রাইব করলে পরবর্তীতে নতুন ভিডিও বানানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই সকল সাবস্ক্রাইবারদের কাছে অটোমেটিক নোটিফিকেশন চলে যাবে। যার ফলে পরবর্তী ভিডিওগুলোতে ভিউজ আসার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। আর তাই ইউটিউবে ইনকাম করার নিয়ম গুলোর মধ্যে অবশ্যই SEO বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে জানতে হবে। চলুন তাহলে এবার ইউটিউব থেকে আয় করার ৫টি উপায় সম্বন্ধে জেনে নেওয়া যাক।

এডসেন্স থেকে ইনকাম

প্রথম পর্যায়ে যারা বিগিনার হিসেবে ইউটিউবে প্রবেশ করে তাদের জন্য ইনকামের প্রথম সোর্স হিসেবে গুগল এডসেন্সকে ধরা হয়। তবে হিসেব করলে দেখা যায় বেশিরভাগ ইউটিউবাররা এডসেন্সের মাধ্যমে ইনকাম করে থাকে। তবে পরবর্তীতে যারা অনেক পপুলার বা যাদের ভিডিওতে ব্যাপক ভিউ আসে তারা অন্য আরও উপায়ে ইনকাম করে থাকেন যা আমরা একটু পরে জানব। আমরা youtube এ ভিডিও দেখার সময় অনেক সময় ভিডিওর শুরুতে, মাঝখানে অথবা শেষে অ্যাড চলে আসে। মূলত এই অ্যাডগুলো শো করার মাধ্যমে ক্রিয়টরদের টাকা প্রদান করা হয়। 

এখানে আরও একটি বিষয় যে একটি ভিডিও যদি চ্যানেল থেকে ভাইরাল হয় যতদিন পর্যন্ত সেখানে ভিউ হবে গুগল এডসেন্সে ডলার যুক্ত হতে থাকবে। তবে এডসেন্স এপ্রুভ হওয়ার বিষয়টি এতটাও সহজ জার্নি হবে না। সেজন্য কমপক্ষে তিন থেকে চার মাস নিয়মিত ভালো কোয়ালিটি সম্পন্ন ভিডিও আপলোড করতে হবে। ইউটিউব থেকে প্রদত্ত ক্রাইটেরিয়া যদি সম্পূর্ণ করা হয় তবেই অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভ হবে। ইউটিউব কর্তৃপক্ষ যে ক্রাইটেরিয়া দিয়েছে সেখানে ১ বছরের মধ্যে ১ হাজার সাবস্ক্রাইব হতে হবে এবং ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম পূরণ থাকতে হবে। তাহলেই এডসেন্স এর জন্য এপ্লাই করার অনুমতি পাওয়া যাবে।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং

আমরা যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়মিত থাকি তারা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর কথা কম বেশি শুনেছি। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হল একটি কোম্পানি থেকে অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামিং গ্রহণ করার মাধ্যমে প্রোডাক্ট সেল করতে হয়। প্রোডাক্ট সেল করার মাধ্যমে উক্ত কোম্পানি সেলারকে একটি বিশেষ কমিশন প্রদান করে থাকে। আর প্রোডাক্ট সেল করার জন্য অন্যতম একটি প্ল্যাটফর্ম হল youtube। তাই ইউটিউবে ইনকাম করার নিয়ম গুলোর মধ্যে এফিলিয়েট মার্কেটিং অন্যতম একটি পদ্ধতি। এক্ষেত্রে এডসেন্স অ্যাপ্রুভ এর কোন ঝামেলা থাকছে না। তবে আপনার ভিডিওতে থাকতে হবে প্রচুর পরিমাণে সঠিক অডিয়েন্স। 

অর্থাৎ যে প্রোডাক্ট আপনি সেল করতে চাচ্ছেন আপনার ভিডিওতে সেই ধরনের দর্শক থাকতে হবে। উদাহরণস্বরূপ আপনি amazon অ্যাফিলেট প্রোগ্রামিং থেকে একটি হেডফোন সেল করার প্রোগ্রাম গ্রহন করেছেন। এরপর আপনার ইউটিউব চ্যানেলে হেডফোন রিভিউ সংক্রান্ত একটি ভিডিও পাবলিশ করেছেন। কিন্তু সেই ভিডিওটি সেই সকল ব্যক্তিদের হোমপেজে এগিয়ে শো হচ্ছে যারা কিনা হেডফোনটি ক্রয় করতে ইচ্ছুক নয়। সে ক্ষেত্রে আপনার প্রোডাক্টটি সেল হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। 
এজন্য সঠিকভাবে SEO করার মাধ্যমে যদি ভিডিও আপলোড করা হয় তাহলে সেই প্রোডাক্টের সঠিক কাস্টমারের হোমপেজে গিয়ে রিভিউ সংক্রান্ত ভিডিওটি শো হবে। যদি আপনার ভিডিও ক্যাটাগরি এবং উপস্থাপন ভঙ্গি ভালো হয় তাহলে ওই কাস্টমার প্রোডাক্টের একটি অর্ডার করে ফেলবে। প্রোডাক্টের অর্ডার কমপ্লিট হলে সেখান থেকে নির্দিষ্ট একটি কমিশন আপনাকে দেওয়া হবে।

ডোনেট এর মাধ্যমে আয়

বর্তমানে ডোনেশন এর মাধ্যমে আয় করার বিষয়টি একটু বিলুপ্ত হওয়ার পথে। সঠিকভাবে পদ্ধতিগুলো যদি অবলম্বন করা হয় তাহলে অবশ্যই এখান থেকেও টাকা ইনকাম সম্ভব। একজন ইউটিউব চ্যানেলের মালিক সে যদি লাইভ স্ট্রিম করার মাধ্যমে অডিয়েন্স এর কাছ থেকে ডোনেশন হিসেবে কিছু কিছু অর্থ দাবি করে। সে ক্ষেত্রে তার ফ্যান অথবা দর্শকরা ডোনেশনের ভিত্তিতে অর্থ দিয়ে থাকে। বিশেষ করে যারা গেমিং ইউটিউব চ্যানেল চালায় এবং প্রতিনিয়ত লাইভ স্ট্রিম করে তারা এ ধরনের আয় করে থাকে। 

বলাবাহুল্য যে ইউটিউব থেকে আয় করার ৫টি উপায় বা ইউটিউবে ইনকাম করার নিয়ম গুলোর মধ্যে ডোনেট-এর মাধ্যমে আয় করা একটু কঠিন এবং যেটা আয় হয় খুবই যথা সামান্য। ডোনেশনের মাধ্যমে অধিক অর্থ আয় করা সম্ভব নয় তবে কিছু অর্থ আয় করা যায় যা দিয়ে হাত খরচ বা চ্যানেলটি চালানো সম্ভব। তবে আমাদের রিকমেন্ডেশন থাকবে ডোনেশনের মাধ্যমে আয় করা থেকে বিরত থাকা।

প্রোডাক্ট বিক্রয় করে আয়

একটু আগে আমরা amazon এফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে আলোচনা করলাম। সেখানে আমরা উল্লেখ করেছিলাম যে একজন ব্যক্তি যার কিনা ইউটিউব চ্যানেল আছে এবং সেখানে ভিউয়ের পরিমাণ অনেক ভালো আছে। সেই ব্যক্তি অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামিং গ্রহণের মাধ্যমে প্রোডাক্ট সেল করে ভালো একটি অ্যামাউন্ট আর্নিং করতে পারবে। কোন অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামিং গ্রহণ না করেও প্রোডাক্ট সরাসরি বিক্রয় করেও আয় করা সম্ভব। অর্থাৎ আপনার যদি সঠিক অডিয়েন্স থাকে তাহলে আপনি ব্যবসা করার মাধ্যমে অর্থাৎ প্রোডাক্ট ক্রয় করে সেটি নিজে আবার সেল করে ভালো একটি মুনাফা তুলতে পারেন। 

তবে এক্ষেত্রেও আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। প্রোডাক্টটি অডিয়েন্স এর কাছে প্রযোজ্য বা পছন্দ হবে সে বিষয়টি জানতে হবে। প্রোডাক্ট এর কোয়ালিটি যদি খারাপ হয় এবং অডিয়েন্স একবার নিয়ে যদি পছন্দ না করে তাহলে আপনার ব্যবসা আর চলবে না। অনলাইনে ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টি শার্ট, চাবি রিং, ব্যাগ এ জাতীয় প্রোডাক্ট সেল হয়।

স্পন্সরশীপ এর মাধ্যমে আয়

স্পন্সরশীপ এর মাধ্যমে আয় করার বিষয়টি অনেকটা ভিউয়ের উপর নির্ভর করে। বিষয়টি হল যার একটি ইউটিউব চ্যানেল আছে সেখানে হিইউজ পরিমান ভিউ পাওয়া যায়। বিভিন্ন কোম্পানি আছে যারা তাদের প্রোডাক্টের প্রমোশনের জন্য ইউটিউব চ্যানেলের মালিকের কাছে নগদ অর্থ প্রদান করে। সেই সকল ইউটিউব চ্যানেলের মালিক কে সেই প্রোডাক্টের ভালো একটি পজেটিভ রিভিউ দিতে হয়। ভিডিওর রিভিউতে কোম্পানির গুনোগান বলার পাশাপাশি প্রোডাক্টটি ক্রয় করার কথা বলা হয়। 

আর একটি ভাল ইউটিউব চ্যানেলের মালিকের মাধ্যমে যদি প্রোডাক্ট এর রিভিউ নেওয়া হয় সেক্ষেত্রে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেল হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বৃদ্ধি পায়। আর এজন্যই কোম্পানিরা ইউটিউব চ্যানেলের মালিকদের স্পন্সর হিসেবে ভালো এমাউন্ট প্রদান করে থাকে।

উপরে উল্লেখিত ইউটিউব থেকে আয় করার ৫টি উপায় গুলোর মধ্যে যেকোনো একটি বিষয় থেকে অনেক অনেক টাকা ইনকাম করা সম্ভব। তবে দিনশেষে একটি বিষয় সামনে আসে সেটি হল চ্যানেলের ভিউ। যদি একটি চ্যানেলে ভালো পরিমাণ ভিউ আসে এবং সেটা কন্টিনিউ আসতেই থাকে তাহলে সেই ইউটিউব চ্যানেলের মালিক উপরের পাঁচটির যেকোনো পদ্ধতিতে বা অনেক সময় পাঁচটি পদ্ধতিতেই টাকা ইনকাম করতে পারবে। সুতরাং প্রফেশনালি যদি কেউ ইউটিউব কন্টেন্ট ক্রিকেটার হিসেবে তার ক্যারিয়ার বেছে নাই তাহলে খুব একটা খারাপ হয় না। 

তবে সেখানে অবশ্যই নিজের সর্বোচ্চ ক্রিয়েটিভিটির পরিচয় রাখতে হবে, পাশাপাশি ইউটিউবে ইনকাম করার নিয়ম সংক্রান্ত সকল বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে তাহলেই এডসেন্সের এপ্রুভও পাওয়া সম্ভব।

ইউটিউব থেকে মাসে কত টাকা ইনকাম করা যায়

সকলের বহুল জিজ্ঞাসিত একটি প্রশ্ন হচ্ছে youtube থেকে মাসে কত টাকা ইনকাম করা যায়। সাধারণত প্রথম অবস্থায় ইউটিউবাররা গুগল এডসেন্স থেকে টাকা ইনকাম করে। youtube এ নির্দিষ্ট ক্রাইটেরিয়া পূরণের মাধ্যমে এডসেন্সের অ্যাপ্রুভ পাওয়ার পর সেখানে ধীরে ধীরে ডলার জমতে শুরু করে। অনেকে মনে করেন ইউটিউবে ভিডিও আপলোড দিলে সঙ্গে সঙ্গেই ইনকাম শুরু হয়ে যাবে। সেই সূত্র ধরে তড়িঘড়ি করে ইউটিউব চ্যানেল খোলার পর সেখানে আর সেই পরিমাণ ভিউ হয় না। আবার অনেকে মনে করেন ইউটিউব থেকে ভিউ আসলেই মনে হয় লাখ লাখ ডলার চলে আসে। 

বিষয়টি আসলে তেমনও নয়। আমরা যখন ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখি তখন আমাদের সামনে অনেক এড শো হয়। আর এই অ্যাড শো আর মাধ্যমেই এডসেন্সে ডলার যুক্ত হয়। মূলত এড কোম্পানি তাদের এড প্রচারণার জন্য গুগলকে একটি নির্দিষ্ট অর্থ প্রদান করে। পরবর্তীতে ওই কনটেন্ট ক্রিকেটারের ভিডিওতে যদি এড শো হয়, সেই এড এর ভিত্তিতে ওই ক্রিয়েটারকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন দেওয়া হয়ে থাকে। আর এই কমিশনটি ইউটিউব চ্যানেলের মালিকের মাসিক ইনকামে এসে দাঁড়ায়। তবে বিজ্ঞাপনের ভিত্তিতে ঠিক কত টাকা ইউটিউব প্রদান করে বা করবে সেটা তারা তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে। 

তাই এটি ইউটিউব আর মাসে কত টাকা ইনকাম করবে সেটা বলা খুবই মুশকিল। আসন বিষয়টা আমরা একটু হিসেব করে মিলিয়ে নিই। ইউটিউবে কত ভিউতে কত টাকা আসলে প্রদান করা হবে সেটা কখনোই একুরেট ভাবে বলা সম্ভব নয়। তবুও আমরা বিভিন্ন কনটেন্ট ক্রিয়েটরের ইনকাম অনুযায়ী ভিউজের একটি হিসাব করেছি। নিচে আমরা ১ লক্ষ্য ভিউয়ের হিসাব অনুসারে কত টাকা মাসিক ইনকাম আসবে সেটা জানব।

100k ভিউতে ইউটিউব কত টাকা দেয়

অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন ইউটিউবে কত ভিউতে কত টাকা অথবা যদি কোন ভিডিওতে ১০০০ ভিউ হয় তাহলে কত ডলার আসবে। আমরা এখানে 100k ভিউতে কত টাকা আসবে সে হিসাব করব। হিসেবটা মূলত ভিডিও আপলোড এর ভিত্তিতে এবং ভিউস এর ভিত্তিতে আলোকপাত করা সম্ভব। যদি ইউটিউব থেকে আয় করার ৫টি উপায় গুলোর মধ্যে একটি উপায় যেমন এডসেন্স এপ্রুভ পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে যদি একটি চ্যানেলে সপ্তাহে একটি করে ভিডিও আপলোড করা হয় তাহলে ভিডিওর পরিমাণ মাসে দাঁড়ায় ৪ টি। একটি গড় হিসেবে অনুযায়ী প্রতি ৫ হাজার ভিউ হলে ১ ডলার আসে বলে উল্লেখ করা হয়। আরোও পড়ুনঃ প্রতি সপ্তাহে 4000 টাকা পর্যন্ত আয় করুন ১৫টি উপায়ে
তাহলে প্রত্যেকটি ভিডিওতে যদি গড়ে ২৫০০০ করে ভিউ আসে, তাহলে মাসে ৪টি ভিডিওর পরিপ্রেক্ষিতে ভিউয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে 100k বা ১ লক্ষ। প্রতি ৫ হাজার ভিউতে যদি এক ডলার আসে তাহলে ২৫ হাজার ভিউতে আসবে ৫ ডলার। অর্থাৎ একটি ভিডিওর বিপরীতে আসলো ৫ ডলার। তাহলে মাসে যদি একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ৪ টি ভিডিও আপলোড করে তাহলে মাসে দাঁড়াবে ২০ ডলার। আমরা এখানে হিসেবের জন্য ৪ টি ভিডিওর কথা বলেছি। ভিডিও আপলোড এর পরিমাণ যত বেশি হবে এবং ভিউ যত বেশি আসবে ইনকামের পরিমাণ তত বেশি হবে। 

তাহলে ইউটিউবে ইনকাম করার নিয়ম অনুযায়ী কেউ যদি গুগল এডসেন্স অ্যাপ্রুভ পায় সে ক্ষেত্রে বলা যায় 100k বা ১ লক্ষ ভিউতে ইউটিউব ২০ ডলার দেয়, যা বাংলা টাকায় কনভার্ট করলে দাঁড়াবে ২১০০ টাকা এর মত। এখানে আমরা একটা আইডিয়া অনুযায়ী হিসেব করার চেষ্টা করেছি। আয়ের পরিমাণ এর থেকে কম অথবা বেশি হতে পারে।

ইউটিউব কমিউনিটি গাইডলাইন

ইউটিউব কমিউনিটি গাইডলাইন মূলত একটি নির্দেশিকা যা ইউটিউব ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইউটিউব চ্যানেল মালিকদের মেনে চলতে হয়। google এডসেন্স পেতে হলে অবশ্যই ইউটিউব কমিউনিটি গাইডলাইন এর সকল নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। যদি একটি চ্যানেলের মালিক অন্য আরেকটি চ্যানেল থেকে ভিডিও ডাউনলোড করে তার নিজের চ্যানেলে আপলোড করে তাহলে ইউটিউব কমিউনিটির গাইডলাইন এর নিয়ম ভঙ্গ করা হয়। আর কপিরাইট ইস্যুতে সেই চ্যানেলে একটি কপিরাইট স্ট্রাইক চলে আসে। বলা হয় কমিউনিটি গাইডলাইন স্ট্রাইক। উদাহরণস্বরূপ যদি বলা হয় একটি সমিতিতে ৫০ হাজার লোক রয়েছে। 

সেই সমিতির একটি নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন রয়েছে, যদি সেই ৫০ হাজার ব্যক্তির মধ্যে কোন এক বা একাধিক ব্যক্তি সমিতির নিয়ম কানুন না মানে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই তার একটি শাস্তির বিধান রয়েছে। ঠিক তেমনি youtube প্লাটফর্মের ক্ষেত্রেও কমিউনিটির গাইডলাইন একটি সমিতির মতো। কনটেন্ট ক্রিয়েটররা বিভিন্ন নিয়ম কানুন যদি মেনে না চলে তাহলে তাদের চ্যানেলে বিভিন্ন রকম স্ট্রাইক দেওয়া হয় যার প্রেক্ষিতে চ্যানেল সাসপেন্ড বা বাদ হয়ে যায়। নিচে যে প্রধান ৭ টি কারণে কমিউনিটি গাইডলাইন স্ট্রাইক বিভিন্ন চ্যানেলে দেওয়া হয়ে থাকে সেটি তুলে ধরা হলো।
  • Sexual content
  • Dangerous and harmful content
  • Graphic content with violent
  • Copyright issue
  • Hateful content
  • Threats
  • Spam
  • Misleading metadata
  • Scams

ইউটিউব থেকে আয় কি হালাল

ইউটিউবে ইনকাম করার নিয়ম গুলো জানার পাশাপাশি অনেকেই ইসলামের রীতিনীতি অনুযায়ী ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করা বিষয়টি হালাল নাকি হারাম সেগুলি জানারও আগ্রহ প্রকাশ করেন। ইসলামের রীতিনীতি অনুযায়ী হালাল ইনকাম বলতে অবৈধ পথে ইনকাম করার বিষয়টিকে বেশি বোঝানো হয়েছে। আমানতের খেয়ানত, জুয়া খেলা, চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি, ডাকাতি ,মাদকদ্রব্য বিক্রির মাধ্যমে ইনকাম, টাকা মেরে দেওয়া ইত্যাদি বিষয়কে হারাম হিসেবে গণ্য করা হয়। ইউটিউবে যদি ভালো উপদেশ মূলক যেটা মানুষের উপকারে আসবে সেই সকল বিষয় নিয়ে ভিডিও তৈরি করা হয় এবং সেখান থেকে ইনকাম করা হয় তাহলে সেই টাকাটি অবশ্যই হালাল হিসেবে গণ্য হবে। 

বিষয়টি আরো একটু পরিষ্কার হওয়ার জন্য একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। ইউটিউবে আমরা অবশ্যই বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলের ভিডিও দেখেছি। তাহলে যে মাওলানা মুফতি ব্যক্তিটি সমাজের সংস্কারের উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদান করছেন সেটি লোকমধ্যমে ইউটিউবের বদৌলতে প্রচার করা হচ্ছে। যে ব্যক্তিটি মাওলানার বক্তব্যটি youtube এর মাধ্যমে প্রচার করছেন তার সওয়াব হওয়ার পাশাপাশি ইনকাম ও হচ্ছে। তাহলে youtube থেকে টাকা ইনকাম বিষয়টি যদি হারাম হত তাহলে সেই সকল মাওলানা বা ইসলাম ধর্ম বিশেষজ্ঞরা এই ধরনের ভিডিও করতে দিতেন না পাশাপাশি ইউটিউবে আপলোড করতে দিতেন না। 

তাহলে আমরা ধরে নিতেই পারি ইউটিউব থেকে টাকা আয় বিষয়টি সম্পূর্ণ হালাল হিসেবে বিবেচিত। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে ইউটিউবে শুধুমাত্র ভালো কনটেন্ট তৈরি করে, অর্থাৎ যে ভিডিওগুলোর মাধ্যমে মানুষের উপকার হবে সেই ভিডিও থেকে যদি টাকা ইনকাম করা হয় তবেই কেবলমাত্র সেটি হালাল হিসেবে ধরা হবে। অন্যথায় অনেক ইউটিউব চ্যানেল বেটিং সাইট, পর্ন সাইট ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য সাইটকে প্রমোশন করে এবং সেখান থেকে টাকা ইনকাম করে। এই সকল কন্টেন্ট ক্রিয়েটর যারা এ ধরনের সাইট প্রকাশ করে তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই সেই ইনকামকৃত টাকাটি হালাল হিসেবে গণ্য হবে না।

উপসংহার

আমরা আর্টিকেলের একদম শেষ পর্যায়ে এসে একটি বিষয় উপলব্ধি করতে পারলাম ইউটিউবে ইনকাম করার নিয়ম গুলো সহজ মনে হলেও আসলে youtube থেকে টাকা ইনকাম করা অতটাও সহজ নয়। তবে ইউটিউব থেকে আয় করার ৫টি উপায় এর মধ্যে একটি উপায় যদি ভালোভাবে অবলম্বন করা হয় বা পাওয়া যায় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ইনকাম করা সম্ভব। তবে ভিডিও আপলোড এর ক্ষেত্রে অবশ্যই সচেতন হতে হবে এবং সমাজের ভালো হবে এ ধরনের ভিডিও আপলোড করার চেষ্টা করতে হবে। আপনাদেরকে অশেষ অশেষ ধন্যবাদ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য। 

এরকম তথ্যবহুল আর্টিকেলগুলো করার জন্য আমাদের ওয়েবসাইট থেকে ঘুরে আসতে পারেন। পাশাপাশি আপনার বন্ধুবান্ধবদের উদ্দেশ্যে আজকের এই ইউটিউব সংক্রান্ত আর্টিকেলটি শেয়ার করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url