উদ্যোক্তা লোন কিভাবে পাওয়া যায় বিস্তারিত জানুন

সকলেই চায় একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে। কিন্তু অনেক সময় ইচ্ছা থাকলেও অর্থের অভাবে সেই ইচ্ছাটা অপূরণ হিসেবেই থেকে যায়। আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে সেই সকল উদ্যোক্তা ভাই এবং বোনদের কথা সামনে রেখে, কিভাবে খুব সহজেই লোন পাওয়া যায় অর্থাৎ উদ্যোক্তা লোন কিভাবে পাওয়া যায় বিষয়টি গুরুত্বসহকারে পর্যালোচনা করা হবে। 
উদ্যোক্তা-লোন-কিভাবে-পাওয়া-যায়
আলোচ্য বিষয়টি জানার পাশাপাশি আপনারা আরও যে সকল বিষয় সম্বন্ধে জানতে পারবেন সেগুলো হলো উদ্যোক্তা ঋণ কি, ইসলামী ব্যাংক উদ্যোক্তা লোন এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লোন কিভাবে পাওয়া যায়। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ করব উদ্যোক্তা লোন কিভাবে পাওয়া যায় বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে জানার জন্য অবশ্যই আর্টিকেলের শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্র

উদ্যোক্তা ঋণ কি

উদ্যোক্তা মূলত সে সকল ব্যক্তিদের কে বোঝানো হচ্ছে যারা তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কোন ব্যবসায়িক কাজে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছেন। পাশাপাশি বৈধভাবে সেই সকল ব্যবসা ক্ষেত্র থেকে মুনাফা অর্জন করার জন্য বিভিন্ন সময় তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থ বিনিয়োগ করে থাকেন। আবার উদ্যোক্তা ঋণ সে বিষয়টিকেই বোঝানো হয়ে থাকে। যা একটি নির্দিষ্ট সময়ের ক্ষেত্র বিশেষে ঋণের পরিমাণ এবং সুদ পরিশোধের চুক্তির সমন্বয়ে একটি কোম্পানির ক্রিয়াকলাপ সম্প্রসারণ বা অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রয়োজনের তাগিদে অর্থায়নের জন্য ব্যাংক অথবা ঋণদাতার কাছ থেকে ধার করা অর্থের সমষ্টিকে 

বোঝায়। যারা নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে অধিষ্ঠিত করতে চায় তারা নতুন ব্যবসার ক্ষেত্রে অর্থায়ন অর্থাৎ বিনিয়োগের নানান উপায় রয়েছে। উদ্যোক্তারা কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি অথবা বিভিন্ন তহবিল থেকে ঋণ সংগ্রহ করতে পারেন। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যাংক এবং এনজিও প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা হর হামেশাই, খুবই সহজ শর্তে উদ্যোক্তারীন প্রদান করে থাকে। বিশেষ করে বেকার যুবকরা বিভিন্ন সময় উদ্যোক্তা লোন কিভাবে পাওয়া যায় বিষয়টি জানার জন্য সে সকল এনজিও এবং ব্যাংক প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে থাকেন। 

তবে যুবকরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক তথ্য বা উপযোগী সাহায্য সহযোগিতার অভাবের ফলে ঋণ প্রাপ্তি লাভ করতে পারেন না। বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সময় বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান বা উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ব্যাপকভাবে কর্মসূচি পালন করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু অজানা কারণবশত সেসকল কর্মসূচি খুব একটা ফলপ্রসূ ভাবে বাস্তবায়িত হয়নি।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লোন

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উদ্যোক্তারা সর্ব প্রথমে ক্ষুদ্র ব্যবসায় বিনিয়োগ করার মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করার পরিকল্পনা করে থাকেন। আবার ইতিমধ্যে যারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হিসেবে তাদের ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। কিন্তু আরো কিছু অর্থ বিনিয়োগ করার মাধ্যমে ব্যবসার পরিধি বিস্তার করতে চান কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে সেটা হয়ে উঠছে না। তাদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন এনজিও এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষ “ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লোন” সিস্টেম চালু করে রেখেছে। কিন্তু সঠিক তথ্য এবং গাইডলাইনের অভাবে কখনোই তারা সেই সকল ব্যাংক অথবা এনজিওর কাছ থেকে লোন গ্রহণ করতে পারেন না বা বিভিন্ন 

হেনস্থার শিকার হয়ে থাকেন। কোন কোন প্রতিষ্ঠান জামানতের ভিত্তিতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লোন প্রদান করে, তাই সঠিক জামানত প্রদান করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণবশত অনেকে লোন প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হয়ে থাকেন। আর এ সকল বিষয়টিকে বিশাল বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশের অন্যতম খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ব্যাংক সর্বপ্রথম “দ্রুতি” নামে একটি “ট্যালি লোন” চালু করে থাকে যা কিনা একটি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লোন হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। বলাবাহুল্য যে এই লোন সিস্টেমটি সকলকে সাহায্য করার জন্য একটি অভিনব উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত। 
তাই উদ্যোক্তা লোন কিভাবে পাওয়া যায় প্রশ্নে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লোন হিসেবে ব্র্যাক ব্যাংক থেকে অল্প কিছু তথ্য উপাত্ত প্রদান এর মাধ্যমে খুব সহজেই লোন প্রাপ্তি সম্ভব। একটি প্রেস কনফারেন্সে ব্র্যাক ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বৃন্দ জানিয়েছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্রতিদিনের হিসাবের জন্য সাধারণত ট্যালি খাতা ব্যবহার করেন। আর প্রচলিত এই ট্যালি খাতার উপর ভিত্তি করেই ব্র্যাক ব্যাংক ট্যালি লোন বাস্তবায়ন করেছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লোন এর আওতায় ট্যালি লোন নেওয়ার জন্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের লেনদেন এবং ঋণ যোগ্যতার প্রমাণ হিসেবে উক্ত ট্যালি খাতা দাখিল করতে হয়। 

আর ট্যালি লোন “দ্রুতি” লোন সিস্টেমের আওতায় ন্যূনতম দুই বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পুরুষ উদ্যোক্তা এবং এক বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নারী উদ্যোক্তা কোন রকমের জামানত ছাড়াই সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়ার সুবিধা ভোগ করতে পারেন।

নারী উদ্যোক্তা লোন

আপনারা ইতিমধ্যে অবগত হতে পেরেছেন যে উদ্যোক্তা ঋণ কি এবং কিভাবে একজন ব্যক্তির ক্ষুদ্র ঋণের আওতায় ব্যবসার পরিধি বিস্তার থেকে শুরু করে নতুন অবস্থায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। বর্তমান সময়ে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা ও কোন অংশে পিছিয়ে নেই। যেকোনো রকম কাজকর্ম, চাকরি এমনকি ব্যবসার ক্ষেত্রেও পুরুষের পাশাপাশি নারীরা সমানতালে এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশ সরকার সব সময় নারীদের কথা বিবেচনার মাধ্যমে তাদেরকে সুযোগ সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করে থাকে। বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি দেশের শীর্ষস্থানীয় কিছু কোম্পানিও তাদের 

লোন সিস্টেমের মধ্যে নারী উদ্যোক্তা লোন এর জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি চালু করে রেখেছে। দেশের স্বনামধন্য এবং শীর্ষস্থানে অবস্থিত বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে একটি ব্যাংক হল এমটিবি বা মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। ভবিষ্যতের মহিলা উদ্যোক্তাদের কথা বিশেষভাবে বিবেচনার মাধ্যমে এমটিবি কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন কার্যক্রম বিশেষ করে মহিলাদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য ২০১৪ সালে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এসএমই ফাউন্ডেশন এর পক্ষ থেকে “উইমেন এন্ট্রেপ্রেনিউর ফ্রেন্ডলি ব্যাঙ্ক অফ দা ইয়ার” 

সম্মাননা লাভ করেছিল। মহিলা উদ্যোক্তাদের জন্য দুটি পদ্ধতি এমটিবি কর্তৃপক্ষ চালু করে রেখেছে। লোন সিস্টেম দুটির নাম হলো এমটিবি-ভাগ্যবতী এবং এমটিবি-গুণবতী। কিভাবে একজন নারী উদ্যোক্তা উল্লেখিত ঋণ দুটির মাধ্যমে তাদের ব্যবসা শুরু করতে পারবেন এ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। অর্থাৎ ঋণ গ্রহণের জন্য কোন পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করতে হবে সে সম্পর্কে এবার জানা যাক।

নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ পাবেন যেভাবে

কোন নারী উদ্যোক্তা যদি উদ্যোক্তা লোন কিভাবে পাওয়া যায় বিষয়টি জানার জন্য নিকটস্থ মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের শাখায় গিয়ে উপস্থিত হয় তাহলে কর্তৃপক্ষ এমটিবি-ভাগ্যবতী ঋণ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা দিবে। পাশাপাশি উদ্যোক্তা ঋণ কি এবং কিভাবে বাস্তবায়ন করলে মুনাফা পাওয়া সম্ভব সে সম্পর্কেও কর্তৃপক্ষ একটি কমপ্লিট ধারণা দিয়ে দিবে। এমটিবি ভাগ্যবতী ঋ ণ শুধুমাত্র নারী উদ্যোক্তাদের মালিকানাধীন এসএমই গুলোর জন্য প্রযোজ্য রয়েছে। এ ধরনের ঋণ মূলত ১ লক্ষ টাকা থেকে ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রদান করা হয়। ঋণ গ্রহণের পর থেকে মেয়াদ দেওয়া হয় তিন বছর পর্যন্ত। 

তবে নারী উদ্যোক্তাদের এমটিবি ভাগ্যবতী ঋণ নেওয়ার জন্য সর্বনিম্ন এক বছরের ব্যবসায়ী অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। অভিজ্ঞতা বিহীন ব্যক্তিকে ঋণ প্রদান করা হয় না। এমটিবি ভাগ্যবতী ঋণের পাশাপাশি আরও একটি ঋণ প্রকল্প চালু আছে সেটি হল এমটিবি গুণবতী। সাধারণত উৎপাদন ও সেবাশিল্পের সাথে জড়িত মহিলাদের জন্য “এমটিবি গুণবতী” ঋণ প্রদান করা হয়। বহু বছর ধরেই এক অংকের ইন্টারেস্ট নিয়ে নারীদের মাঝে তুমুল জনপ্রিয় এ ঋণ সিস্টেমটি কর্তৃপক্ষ চালু করে রেখেছে। নারী উদ্যোক্তা ঋণের মধ্যে “এমটিভি গুণবতী লোন সিস্টেম” এমটিভি এবং এস এম ই ফাউন্ডেশন এর মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি 
চুক্তির মাধ্যমে ১০০% প্রি ফাইন্যান্স সুবিধা সম্বলিত একটি পদ্ধতি হিসেবে গণ্য করা হয়। এমটিবি গুণবতী ঋণের পরিমাণ সাধারণত ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। ঋনের মেয়াদ দেওয়া হয়ে থাকে ৩ বছর এবং সর্বনিম্ন ১ বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হতে হয়। লোন দুইটি পাওয়ার জন্য নারী উদ্যোক্তাদের কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন পড়ে। আসুন তাহলে কোন কাগজপত্রের প্রেক্ষিতে নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ পাশ হবে সে বিষয়ে সম্পর্কে জানা যাক।
  • ঋণ প্রাপ্তির জন্য সর্বপ্রথম মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক শাখায় উপস্থিত হয়ে কর্তৃপক্ষের নিকট হতে একটি আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হয় এবং সঠিকভাবে আবেদন পত্রটি পূরণ করতে হয়।
  • সর্বশেষ এবং আপডেটের ট্রেড লাইসেন্সের কপি
  • নেট ওর্থ স্টেটমেন্ট অথবা আইটি ১০ বি
  • তিন সার্টিফিকেট এবং ভ্যাট সার্টিফিকেট দাখিল করতে হবে। তবে ভ্যাট সার্টিফিকেট শুধুমাত্র বিশেষ প্রয়োজনে লাগবে।
  • ব্যবসার প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন অনুমতি পত্র।
  • গ্রাহকের এক কপি এন আইডি কার্ডের ফটোকপি এবং গ্যারান্টার এর এনআইডি কার্ডের ফটোকপি।
  • সিআইবি আন্ডারটেকিং
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট যদি থাকে তাহলে।
এখানে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখতে হবে সেটি হল। উদ্যোক্তা লোন কিভাবে পাওয়া যায় এই প্রশ্ন উত্তরে যদি নারী উদ্যোক্তারা উপরে বর্ণিত দুইটি লোনের মধ্যে একটি লোনের জন্য আবেদন করতে চায় তাহলে অবশ্যই ন্যূনতম এক বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হতে হবে। অভিজ্ঞতা ব্যতীত কর্তৃপক্ষ ঋণ প্রদানে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করবে।

উদ্যোক্তা লোন কিভাবে পাওয়া যায়

সকল উদ্যোক্তাই চাই তার ব্যবসা গুছিয়ে প্রতিষ্ঠানকে একটি বড় মাপের তৈরি করতে। আর সে ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রয়োজন একটি বড় অঙ্কের বিনিয়োগ। বিগত কয়েক বছর ধরে তরুণদের মাঝে স্টার্টআপ বা নতুন ব্যবসায়িক উদ্যোগের একটি ধারণা বা চল তৈরি হয়েছে। এরফলে অনেকেই তাদের পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন রকম ব্যবসা অর্থাৎ নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর তাদের এই ইচ্ছাকে আরও একধাপ এগিয়ে নিতে দেশের বিভিন্ন এনজিও এবং ব্যাংক প্রতিষ্ঠান গুলো সহজ শর্তে লোন প্রদানের মাধ্যমে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। 

তবে অনেকেই উদ্যোক্তা ঋণ কি এবং লোনগুলো কিভাবে পাওয়া যায় সে সম্পর্কে ধারণা রাখেনা। উদ্যোক্তাদের প্রথম পছন্দ হিসেবে রয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো সকল ধরনের ব্যবসার ক্ষেত্রেই বিভিন্ন শর্তের ঋণ প্রদান করে থাকে। বর্তমান সময়ে এসএমই ফাউন্ডেশন এর আওতায় তিনটি ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। ব্যাংকগুলো তাদের নিজেদের নিয়ম কানুন এর পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম নীতি কে ফলোআপ করার মাধ্যমে বিভিন্ন খাতে ঋণ প্রদান করছে। আইডিএলসি কর্তৃপক্ষ স্টার্টআপ লোন হিসেবে ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান করে। 

দিনের মেয়াদ দেওয়া হয় ৫ বছর অর্থাৎ ৫ বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে হয়। এছাড়াও বিনা জামানাতে কর্মসংস্থান ব্যাংকের আওতায় ২ লাখ টাকা পর্যন্ত গ্রহণ করা যায়। উদ্ভাবন লোন হিসেবে স্মরণীয় ৫ লাখ, আনসিকিউরড লোন ২৫ লাখ, আংশিক সিকিউরড লোন সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা পর্যন্ত দিয়ে থাকে আইডিএলসি ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্ট। সর্বনিম্ন ১৩ মাস থেকে সর্বোচ্চ ৬০ মাস পর্যন্ত এ ঋণের মেয়াদ বহাল থাকে। যারা বেসিসের সদস্য হিসেবে গণ্য তারা এই ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা প্রাপ্ত হন। তবে ঋণ গুলো পাওয়ার জন্য অবশ্যই পুরুষ উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যবসায়ী অভিজ্ঞতা থাকতে 

হবে কমপক্ষে ২ বছরের। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অভিজ্ঞতা হতে হবে ১ বছরের। অন্যদিকে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক বিজনেস লোন হিসেবে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রদান করে থাকে। এর মধ্যে যদি কেউ ৫ লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করে সে ক্ষেত্রে কোন রকম জামানতের প্রয়োজন হয় না। ঋণ পরিষদের সময় দেওয়া হয় ৫ বছর তবে ব্যবসার সময় কাল কমপক্ষে ১ বছর হতে হয়। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন উদ্যোক্তা ঋণ কি এবং উদ্যোক্তা লোন কিভাবে পাওয়া যায়। আসুন তাহলে এবার জেনে নেওয়া যাক 

লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে কোন কাগজপত্র গুলো এবং কোন নিয়মের পরিপ্রেক্ষিতে লোন গ্রান্টেড হয় সে বিষয়ে গুলো সম্পর্কে। লোন পাওয়ার যোগ্যতা এবং কোন কাগজপত্র গুলো মাধ্যমে লোন পাওয়া যাবে সেগুলো পয়েন্ট আকারে নিচে তুলে ধরা হলো।
  • বাংলাদেশের একজন নাগরিক হতে হবে।
  • লোন গ্রহীতা এবং গ্যারেন্টারের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
  • আবেদনকারী অর্থাৎ লোন গ্রহীতা এবং গ্যারেন্টারের সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজ রঙিন ছবি।
  • ব্যাংকের নিজস্ব ফর্ম সংগ্রহ করতে হবে ও যথাযথ ভাবে পূরণ করতে হবে।
  • সর্বশেষ এবং আপডেটেড ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি।
  • ব্যবসায়ের তিন নম্বর থাকতে হবে
  • ইউটিলিটি বিল সেটা হতে পারে গ্যাস বিল, ইলেকট্রিক বিল, টেলিফোন বিল এর ফটোকপি।
  • ট্যাক্স, ভ্যাট ও কোয়ালিটি সার্টিফিকেশন থাকতে হবে।
  • ঋণগ্রহীতার সম্পত্তির ভালুয়েশন ও সম্পত্তি নেয়া হলে তার বৈধ চুক্তি নামা দাখিল করতে হবে।
  • ব্যাংকের হিসাব নম্বর এবং জামানত স্থিতি থাকা জরুরী।
  • পৌরসভার বাসিন্দা হলে কমিশনারের সনদ এবং ইউনিয়নের বাসিন্দা হলে চেয়ারম্যানের নাগরিকত্ব সনদ লাগবে।
উপরে শর্তগুলো এবং সকল কাগজপত্র দাখিল করার পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সকল কিছু বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে ঋণগ্রহীদাকে ঋণ প্রদান করবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঋণগ্রহীতা কে উক্ত শাখায় উপস্থিত হয়ে অর্থ গ্রহণ করতে হবে।

ইসলামী ব্যাংক উদ্যোক্তা লোন

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইসলামী ব্যাংক ব্যাপক ভূমিকা পালন। আর বিভিন্ন ব্যবসার ক্ষেত্রে লোন প্রদানের জন্য ইসলামী ব্যাংক অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত। তাই কোন উদ্যোক্তা যদি তার ব্যবসা শুরু করার পরিকল্পনা করছে বা ছোট ব্যবসাকে বড় ব্যবসাতে রূপান্তরিত করার জন্য লোনের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক অথবা এনজিও তে খোঁজাখুজি করছে। সে ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করা হতে পারে তার জন্য একটি মুখ্যম উপায়। তবে ব্যাংকের কিছু শর্ত এবং নীতিমালা মেনে কেবলমাত্র ইসলামী ব্যাংক লোনের জন্য আবেদন করা যায়। 

তাই সে সকল ব্যাক্তিদের উদ্যোক্তা ঋণ কি এবং ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য অবশ্যই আবেদনকারীর বয়সসীমা ১৮ বছরের বেশি হতে হবে। আবেদনকারী কে বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার পাশাপাশি অবশ্যই ইসলামী ব্যাংকে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে। লোন গ্রহণের জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র সহ, আরো অন্যান্য ডকুমেন্টস যেমন শিক্ষা সনদ, চাকরির ডকুমেন্টস, ব্যবসা কাগজ বা জমির দলিল এগুলো প্রয়োজন হবে। অবশ্যই কাগজপত্র গুলো একজন বিসিএস ক্যাডার দ্বারা সত্যায়িত হতে হবে। তাই উদ্যোক্তা হিসেবে উদ্যোক্তা লোন কিভাবে পাওয়া যায় ক্ষেত্রে অবশ্যই উক্ত 
কাগজপত্রগুলো প্রদান করার মাধ্যমে লোন প্রাপ্তি লাভ হবে। চাকরির উপর নির্ভরশীল না হয়ে যেহেতু আজকাল অনেকেই নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়তে চাচ্ছে। আর সেই চাওয়াটা কে আরো উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ উদ্যোক্ত লোন প্রদান করে থাকে। উপরে বর্ণিত ডকুমেন্ট বাদে আরো কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। সেই সকল কাগজপত্র এবং আরও যে সকল শর্ত রয়েছে সে অনুযায়ী ইসলামী ব্যাংক উদ্যোক্তা লোন পাওয়া খুবই সহজ একটি বিষয়। নিচে আরও যেগুলো ডকুমেন্ট প্রয়োজন সেগুলো তুলে ধরা হলো।
  • জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা পাসপোর্ট এর ফটোকপি
  • আয়ের উৎসের প্রমাণপত্র অর্থাৎ যদি চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা শুরু করতে চায় সেক্ষেত্রে চাকরি থেকে কত টাকা ইনকাম হচ্ছে সেটার প্রমাণ পত্র। যদি চাকরি না করে সেক্ষেত্রে অন্য কোন উপায়ে টাকা ইনকাম করছে সেটার প্রমাণ পত্র।
  • ঋণগ্রহীতার সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
  • ব্যবসার আপডেটের ট্রেড লাইসেন্স ও ব্যবসার হিসাব।
যদি ব্যবসা না থাকে সেক্ষেত্রে ব্যবসার পরিকল্পনা ও সম্ভাব্য বাজেটের বিস্তারিত বর্ণনা সহিতএকটি প্রমাণ পত্র। আশা করি উপরে বর্ণিত সকল কাগজপত্র যদি ইসলামী ব্যাংকে দাখিল করা হয়। তাহলে কর্তৃপক্ষ বিচার বিশ্লেষণ এর মাধ্যমে যদি সব কিছু সঠিক হয়। ঋণগ্রহীতাকে অবশ্যই ঋণ প্রদান করবে।

প্রধানমন্ত্রী ব্যবসা লোন বাংলাদেশ

“প্রধানমন্ত্রী ব্যবসা লোন” হলো মূলত ছোট পরিসরের ব্যবসা এবং নিয়োজিত ঋণ প্রদানের একটি প্রকল্প। এই ঋনের মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের বেকার যুব সমাজকে উৎপাদনমুখী এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নিয়োজিত করা। অনেক বেকার যুবক আছেন যারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ঋণের খোঁজাখুঁজি করে থাকেন। তাদের কথা মাথায় রেখে আমাদের সরকার “প্রধানমন্ত্রী লোন” বাংলাদেশ এর আওতায় একটি প্রকল্প “প্রধানমন্ত্রী ব্যবসা লোন বাংলাদেশ” বাস্তবায়ন করেছে। 

প্রধানমন্ত্রী ব্যবসা লোন বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর লোন প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। উক্ত ঋণের মাধ্যমে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে সুবিধা গ্রহণ করা যায়। প্রধানমন্ত্রী ব্যবসা লোন বাংলাদেশ একটি প্রাসঙ্গিক ঋণ হিসেবে প্রদান করা হয় যা পরবর্তীতে উৎপাদন মুখী নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত করা হয়। তবে প্রধানমন্ত্রী ব্যবসা লোন বাংলাদেশ এর আওতায় উদ্যোক্তা লোন কিভাবে পাওয়া যায় প্রশ্নে অবশ্যই কিছু শর্ত এবং যোগ্যতার কথা উঠে আসে। নিচে সেই সকল যোগ্যতা গুলো তুলে ধরা হলো।
  • ঋণগ্রহীতাকে অবশ্যই একজন বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
  • যে কাজের জন্য লোন গ্রহণ করা হচ্ছে সেই কাজে যদি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত না হয় সে ক্ষেত্রে লোন প্রদান করা হবে না।
  • প্রার্থীকে অবশ্যই বেকার হতে হবে। কোন কর্মে নিয়োজিত থাকলে ঋণ গ্রহণযোগ্য হবে না।
  • আবেদনকারীর বয়স অবশ্যই ১৮ থেকে ৩৪ এর মধ্যে হতে হবে।
  • যে প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে যাচ্ছেন সেটি পরিচালনা করার মত যোগ্যতা থাকতে হবে।
  • আবেদনকারী যদি অন্য কোথাও থেকে লোন গ্রহণ করে থাকে এবং সেটি যদি ঠিকমতো পরিশোধ না করে। তাহলে প্রধানমন্ত্রী ব্যবসা লোন গ্রান্টেড বলে গণ্য হবে না।
  • অবশ্যই একজন জামানতদার যার জমি জমা রয়েছে এরকম ব্যক্তি প্রয়োজন পড়বে। পাশাপাশি জামানতদারের অবশ্যই ঋণ পরিশোধ করার মতো ক্ষমতা থাকতে হবে।

শেষকথা

প্রিয় পাঠক বৃন্দ আজকে আমাদের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের মাঝে একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো। আশা করি আপনারা উদ্যোক্তা ঋণ কি সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পেয়েছেন। ভবিষ্যতে কেউ যদি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখে থাকেন তাহলে আমাদের আর্টিকেলের তথ্য অনুযায়ী উদ্যোক্তা লোন কিভাবে পাওয়া যায় বিষয়টিকে ভালোভাবে বিশ্লেষণ করে কোন কোন প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্যোক্তা লোন গ্রহণ করা যায় সে বিষয়টি আমলে নিতে পারবেন। আপনাদেরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি আর্টিকেলে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য। 

এরকম আরো তথ্যবহুল আর্টিকেল পড়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন। আপনার নিকটস্থ বন্ধু অথবা আত্মীয় যে কিনা উদ্যোক্তা হতে চায় কিন্তু সঠিক গাইডলাইনের অভাবে লোনের আবেদন করতে পারছে না তার উপকারের লক্ষ্যে আজকের এই পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url