ইউরিক এসিড কমানোর সবচেয়ে সহজ ঘরোয়া উপায়

ইউরিক এসিড কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো জানার জন্য আপনি যদি বিশেষভাবে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে থাকেন, তাহলে আপনি সঠিক জায়গাতেই এসেছেন। আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা শারীরিক সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা সেটি হল ইউরিক এসিড কমানোর বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে জানার চেষ্টা করব। বর্তমান সময়ে অনেকের মধ্যেই ইউরিক এসিড সংক্রান্ত সমস্যাগুলো পরিলক্ষিত হচ্ছে। 
ইউরিক-এসিড-কমানোর-ঘরোয়া-উপায়
তাই যারা উক্ত সমস্যাটিতে ভুগছেন তাদের জন্য আজকের এই পোস্টটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং ইউরিক এসিড কমানোর ঘরোয়া উপায় সংক্রান্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানার জন্য সেই সকল ভুক্তভোগীদের আজকের আর্টিকেলের শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য অনুরোধ জ্ঞাপন করছি। উক্ত বিষয় বাদেও আরো যে সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন সেগুলো হল ইউরিক এসিড বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ এবং বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে, ইউরিক এসিডের ডায়েট চার্ট এবং কোন 

খাবারে ইউরিক এসিড বাড়ে সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানানো হবে। আমরা আর্টিকেলের শেষ পর্যায়ে ইউরিক এসিড টেস্ট বাবদ কত টাকা খরচ হতে পারে সে বিষয়ে একটি প্রাথমিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।
পোস্ট সূচিপত্র

ইউরিক এসিড বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ

আমরা ইউরিক এসিড কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো সম্পর্কে অবশ্যই বিস্তারিতভাবে জানবো। কিন্তু তার আগে ইউরিক এসিড এর মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে কিনা অর্থাৎ কোন লক্ষণ গুলো দেখলে বোঝা যাবে যে মানব শরীরে ইউরিক এসিড বৃদ্ধি পেয়েছে সে বিষয়টি প্রথমে জেনে নেওয়া যাক। মানব শরীর পরিচালনার জন্য অন্যতম একটি উপাদান হলো রক্ত। রক্ত ব্যতীত কোন প্রাণী বেঁচে থাকতে পারবে না এটা স্বাভাবিক। রক্তে যখন ইউরিক এসিড বেড়ে যায় তখন আমাদের বিভিন্ন রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। মূলত আমাদের অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এবং বিশৃঙ্খল জীবন যাপনের কারণেই আমরা এ ধরনের রোগ বালাই দ্বারা আক্রান্ত হই। 

ডাক্তাররা আরও একটি বিষয় আমাদের সামনে এনেছেন সেটি হল ব্যাপক পরিমাণে প্রোটিন যুক্ত খাবার অর্থাৎ মাছ-মাংস অত্যাধিক পরিমাণে খাওয়ার ফলে রক্তে ইউরিক অ্যাসিড পরিমাণ বেড়ে যায়। আবার অনেক সময় যারা মদ্যপানে অভ্যস্ত তাদের ক্ষেত্রেও ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে মূলত এটি হাড় এবং কিডনির মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। অনেকে ধারণা করে থাকেন শরীরের গিরায় গিরায় ব্যথা বা শরীরের অভ্যন্তরে কামড়ানো ইউরিক অ্যাসিড বাড়ার লক্ষণ। কিন্তু মূলত সেই লক্ষণগুলো অন্য কোন কারণেও হতে পারে। 

যদি বুঝতে পারেন আপনার শরীরে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে তাহলে অবশ্যই ইউরিক এসিড কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো ভালোভাবে এপ্লাই করা খুবই জরুরী। ঘরোয়া উপায় গুলো সাধারণত ঔষধ এর ব্যতীত প্রাকৃতিক উপায়ে সমাধান করার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। কোন লক্ষণ গুলো দ্বারা ইউরিক এসিডের লক্ষণ গুলো প্রতিফলিত হয় সেগুলো নিচে দেওয়া হল।
  • মানব শরীরের যদি ইউরিক এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তাহলে বারবার প্রস্রাব পাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। রক্তে যখন ইউরিক এসিডের পরিমাণ বা মাত্রা বৃদ্ধি পায় তখন কিডনি চায় শরীর থেকে অতিরিক্ত ইউরিক এসিড গুলো অপসারণ করে দিতে। এই কারণবশতই ঘন ঘন প্রস্রাব পেয়ে থাকে।
  • অতিরিক্ত ইউরিক এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বের হতে পারে। আমার ইউরিক এসিড বৃদ্ধির কারণে ইউটিআই বা ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন হতে পারে। এ ধরনের ইনফেকশন তৈরি হয় তাহলে বুঝতে হবে আমাদের রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে।
  • ইউরিক এসিড বৃদ্ধির ফলে প্রস্রাব ঘন ঘন হওয়ার পাশাপাশি অনেকেরই প্রস্রাবের নালী প্রচুর পরিমাণে জ্বালাপোড়া করে। মাঝে মাঝে এতটাই জ্বালাপোড়া করে যে প্রস্রাব আসলেও মানুষ প্রস্রাব করতে ভয় পেয়ে যায়। ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির ফলে কিডনিতে পাথর পর্যন্ত তৈরি হয়ে থাকে। সুতরাং ইউরিক এসিড বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ গুলো প্রতিফলিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া খুবই প্রয়োজন।

ইউরিক এসিড কমানোর ঘরোয়া উপায়

যেহেতু ইউরিক অ্যাসিড একটি গুরুতর অসুখ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই এই রোগটিকে কোনভাবেই ইগনোর বা হেলাফেলা করার সুযোগ নেই। গবেষণায় আরো উঠে এসেছে পূর্বের তুলনায় বর্তমানে এবং ভবিষ্যতেও ইউরিক অ্যাসিডে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে। তাই ইউরিক এসিড কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো সম্পর্কে সকলেরই ধারণা রাখতে হবে এবং সে অনুযায়ী যদি তারা তাদের জীবন অতিবাহিত করে তাহলে অনেকাংশেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব। ঘরোয়া উপায় গুলো এপ্লাই করার জন্য অবশ্যই ইউরিক এসিড বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ গুলো সম্পর্কে 
সবসময় সচেতন থাকতে হবে। যদি আমরা প্রতিনিয়ত খেয়াল করি আমাদের সাথে অর্থাৎ আমাদের শরীরের সাথে কি হচ্ছে তাহলে আমরা ফলাফল পেয়ে যাব। আর সে অনুযায়ী আমাদের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির ফলে গাউট আর্থাইটিস হয়। এর ফলে পায়ের ছোট ছোট গিটে প্রচন্ড জ্বালা যন্ত্রণা সৃষ্টি হয়। অনেক সময় পুরো শরীরেও ব্যথা হতে পারে তবে মনে রাখতে হবে শরীরে ব্যথা হলেই যে ইউরিক এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাপারটা ঠিক তেমন নয়। উপরে বর্ণিত আরও যে সকল লক্ষণ রয়েছে সে অনুযায়ী যদি আপনার শরীরের কন্ডিশন মিলে যায় তাহলে বুঝে 

নিতে হবে হয়তো বা আপনার ইউরিক অ্যাসিড এর মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। সমস্যা উদঘাটনের পর প্রথমেই যদি আমরা কড়া কড়া মানের ওষুধ সেবন করি, সেক্ষেত্রে রোগ বালাই দূর হওয়ার পরিবর্তে আমরা বিভিন্ন রকম ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দ্বারা আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়বো। আর এজন্যই প্রথমে প্রাকৃতিক উপায়ে ইউরিক অ্যাসিড কমিয়ে ফেলার চেষ্টা করাই বুদ্ধিমানের কাজ। দৈনন্দিন জীবনে আমরা খাবার ছাড়া কোনভাবে বেঁচে থাকতে পারবো না, আর প্রতিনিধ খাবার গ্রহণ এর ফলে শরীরে সবসময় বিপাক প্রক্রিয়া চলমান রাখতে হয়। আর এর ফলে শরীরের তৈরি হয় ইউরিক অ্যাসিড। 

যেহেতু খাবার ছাড়া আমরা অচল তাই আমাদের খাবার খেতে হবে। কিছু খাবারে পিওরির নামক একটি উপাদান বেশি পরিমাণে থাকে, আর সেই খাবার খেলেই সমস্যার সৃষ্টি হয়। পিউরিন গুলো ভেঙ্গেই মূলত তৈরি হয় ইউরিক অ্যাসিড। আসুন তাহলে ইউরিক এসিড কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো কি কি হতে পারে সে সম্পর্কে পর্যায়ক্রমে জেনে নেওয়া যাক।

খাদ্যাভ্যাস এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ

আমরা প্রতিনিয়ত যে খাবারগুলো গ্রহণ করে থাকি সেটি দ্বারা আমাদের শরীর পরিচালিত হয়ে থাকে। এখন শরীরের অভ্যন্তরে যদি আমরা খারাপ কিছু প্রবেশ করাই তাহলে এর পরিণাম যে খুব একটা ভালো হবে না সেটা সকলেরই জানা। সুষম এবং সুস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ না করে যদি কেউ বাহিরের অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করে, পাশাপাশি বিশৃংখল জীবন যাপন করতে অভ্যস্ত হয় তাহলে সে শুধুমাত্র ইউরিক অ্যাসিড দ্বারা আক্রান্ত নয় এটি ব্যতীত অন্যান্য সকল ধরনের রোগ বাধায় যারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের অর্থাৎ নিয়মিত সঠিক সুষম খাবার গ্রহণের পাশাপাশি অবশ্যই 

নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বয়স এবং হাইটের তুলনায় যদি কারো ওজন বেশি হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম রোগবালাই দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাহিরের অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং তেল চর্বিযুক্ত খাবারগুলো সব সময় গ্রহণ করার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ হজম প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হতে থাকে। বিপাক প্রক্রিয়া যদি ঠিক না হয় সেক্ষেত্রে যেমন ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে ঠিক তেমনি অন্যান্য শারীরিক সমস্যা ও ধীরে ধীরে দেখা দিবে। তাই আমাদের সকলের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখা খুবই জরুরী। 

তাহলে ইউরিক এসিড কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলোর মধ্যে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা অতীব জরুরী। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন বলতে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে যেমন সবুজ শাকসবজি খাওয়া, সিজনাল ফল এবং ঘরে তৈরি কৃত খাবার খেতে অভ্যস্ত হওয়া। আর ওজন নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে আমাদের সকলের বিএমআই রাখতে হবে ১৮ থেকে ২৫ এর ভিতরে।

নিয়মিত পানি পান

স্বাস্থ্য সচেতনতার ক্ষেত্রে অধিক জরুরি একটি বিষয় হলো নিয়মিত পানি পান করা। যদি কোন ব্যক্তি ইউরিক এসিড বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ গুলো ভালোভাবে ধরতে পারেন তাহলে সর্বপ্রথম তার উচিত হবে নিয়মিত পানি পান করা। আমরা অনেকেই আমাদের কর্ম ব্যস্ত জীবনে পানি পান করাকে খুব একটা গুরুত্ব দেই না। অনেক সময় কাজের চাপে বা আগ্রহ না থাকার ফলে পানি পান করা খুব একটা হয়ে ওঠে না। অনেকের ধারণা নিয়মিত পানি পান না করলে তাদের খুব একটা শারীরিক সমস্যা হয় না। কিন্তু বাহিরে সমস্যা প্রতিফলিত না হলেও অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে তৈরি হতে থাকে এ বিষয়টি 

সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। ইতিমধ্যেই আমরা অবগত হয়েছি যে ইউরিক অ্যাসিডকে কিডনি প্রতিনিয়ত বাহিরে বের করার জন্য পরিচালিত হতে থাকে। যদি কোন ব্যক্তি সে ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পানি পান না করে তাহলে কিডনি তার সঠিক কার্যক্ষমতা হারাবে আর ইউরিক অ্যাসিড সহ আরো অন্যান্য বজ্র পদার্থ শরীরের বাহিরে বের করে দিতে ব্যর্থ হবে। ভারতসহ আমাদের দেশ যেহেতু গ্রীষ্মকালীন দেশ হিসেবে গণ্য তাই একজন অন্য বয়স্ক ব্যক্তির দিনে ৩ থেকে ৪ লিটার পানি পান করা খুবই জরুরী। 
বিশেষ করে যারা গরমের ভেতরে অথবা রোদে কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রে পানি পানির বিষয়টির কোন নির্দিষ্ট সীমা নেই। অর্থাৎ তাদের আরো বেশি পানি পানের প্রয়োজন হতে পারে।

ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খাওয়া

ইউরিক এসিড কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলোর মধ্যে আরো অন্যতম একটি উপা হিসেবে গণ্য করা হয় ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খাওয়া কে। প্রতিদিন যদি কেউ নিয়ম করে ভিটামিন সি যুদ্ধ খাবার খায় তাহলে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা অটোমেটিক কমে যাবে। আর এর ফলে একটি মারাত্মক সমস্যা থেকে মুক্ত পাওয়া সম্ভব। ভিটামিন-সি যেহেতু একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ইমিউনিটি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি ইউরিক অ্যাসিড শরীর থেকে কমিয়ে আনতে ভিটামিন-সি এর গুরুত্ব অপরিসীম। তাই ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে প্রতিদিন খাবার তালিকাতে 

ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার অবশ্যই রাখা জরুরি। ভিটামিন-সি যুক্ত খাবারের চাহিদা পূরণ করার জন্য হাতের কাছে সবসময় পাওয়া যায় এবং সহজলভ্য খাবার হল লেবু জাতীয় ফল। তাই ইউরিক অ্যাসিড কমানোর ক্ষেত্রে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার এর ঘাটতি পূরণ করার জন্য বাতাবি লেবু, পাতি লেবু এগুলো সরাসরি অথবা ভাতের সাথে খেতে পারেন। এছাড়াও আপেল, পেয়ারা, আমলকি, কমলা এগুলোতেও ভিটামিন-সি এর উৎস রয়েছে সেগুলো খাওয়ার মাধ্যমেও আমরা এই চাহিদাটি পূরণ করতে পারি। আসুন তাহলে এবার কোন খাবারগুলোতে মূলত ইউরিক অ্যাসিড এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায় সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

ইউরিক এসিড বাড়ে কোন খাবারে

আমরা ইতিমধ্যে আরও একটি বিষয় সম্বন্ধে জানতে পেরেছি সেটি হলো পিউরিনযুক্ত খাবারগুলো গ্রহণের মাধ্যমে ইউরিক অ্যাসিডের উৎপাদন বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে। আর এই কারণেই পিউরিন যুক্ত খাবারগুলো পরিহার করে চলতে হবে। আর এজন্যই ইউরিক এসিড কমানোর ঘরোয়া উপায় এর তালিকাতে পিউরনযুক্ত খাবার পরিহার করার কথা বলা হয়েছে। পিইউরিন যুক্ত খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যালকোহল জাতীয় খাবার যেমন মদ, বিয়ার ইত্যাদি। প্রক্রিয়াজাতকৃত মাংস সহ নরমাল মাছ-মাংস খাওয়া কমাতে হবে। বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি খাবার এবং কোল্ড ড্রিংকস ও পরিহার করে চলতে হবে। 

এছাড়াও আচার, চানাচুর, নোনা মাছ ইত্যাদি খাবার কোন খাওয়া বন্ধ করতে হবে কেননা এগুলো খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। আরো যে খাবারগুলো খেলে ইউরিক এসিড বাড়ে সেগুলো হলো পালংশাক বিনস, বরবটি, রাজমা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পুইশাক, মসুর ডাল, মাটন সমুদ্রের মাছ এগুলো পরিহার করার পাশাপাশি সিম কড়াইশুঁটি, ঢেরস, টমেটো এগুলো খাওয়া যাবে এতে কোন সমস্যা নেই। তাহলে কেউ যদি ইউরিক এসিড বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ গুলো বুঝতে পারে তাহলে উপরে বর্ণিত খাবার গুলো এড়িয়ে চলতে হবে।

ইউরিক এসিড কমানোর খাবার

ইউরিক অ্যাসিড যদি শরীরে বৃদ্ধি পায় সেক্ষেত্রে ডায়াবেটিস এবং জীবনধারার আরও যে সকল রোগ রয়েছে সেগুলো বিশেষভাবে প্রতিফলিত এবং ত্বরান্বিত হতে থাকে। আর তাই সেসময় শরীর থেকে ইউরিক অ্যাসিড কমানোর ক্ষেত্রে ওষুধ সেবনের দিকে আমরা বেশি ঝুঁকে পড়ি। কিন্তু প্রাকৃতিক উপায় গুলো এপ্লাই করার মাধ্যমে অর্থাৎ ইউরিক এসিড কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো যদি আমরা সঠিকভাবে পালন করি তাহলে অবশ্যই আমাদের শরীর থেকে ইউরিক এসিডের মাত্রা কমে যাবে এবং আমরা উক্ত সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ করব। 

যেহেতু কিডনি সবসময় চাই শরীরের বর্জ্য পদার্থ গুলো বাহিরে অপসারণ করতে। আর এক্ষেত্রেও ইউরিক এসিড যদি শরীরে বৃদ্ধি পায় ঠিক তখনও কিডনি শরীর থেকে ইউরিক এসিডের পরিমাণ কমানোর জন্য ভালোভাবে পরিচালিত হতে থাকে। কিন্তু সেখানে যদি নিয়মিত পানি পান করা না হয় সে ক্ষেত্রে কিডনি তার কার্যক্ষমতা হারায় এবং ইউরিক এসিডের মাত্রা কোনভাবেই আর কমে না। সুতরাং ইউরিক এসিড কমানোর খাবার হিসেবে সর্বপ্রথম আমাদের নিয়মিত একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ হিসেবে দিনে ৩ থেকে ৪ লিটার পানি পান করতে হবে। 
আবার প্রতিদিন খাদ্য তালিকাতে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রাখাও অতীব জরুরী। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে সবুজ শাকসবজি যেমন পাটশাক, লালশাক, পুঁইশাক, ঢেঁড়স ইত্যাদি। আসুন আপনাদের সুবিধার্থে ইউরিক এসিড কমানোর ক্ষেত্রে কোন ধরনের ডায়েট চার্ট ফলো করা প্রয়োজন সে বিষয়ে জেনে নিব।

ইউরিক এসিডের ডায়েট চার্ট

ইতিমধ্যে আমরা অবগত হতে পেরেছি যে একমাত্র খাবার গ্রহণ এবং সুষম খাবার গ্রহণ করার মাধ্যমে কেবল ইউরিক অ্যাসিড এর পরিমাণ কমানো সম্ভব। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কোন ডায়েট চার্ট ফলো করার মাধ্যমে ইউরিক এসিড কমানো সম্ভব সে সম্পর্কে এখন জেনে নিব। এখানে আমরা ৩ দিনের একটি ডায়েট চার্ট দিয়ে দিচ্ছি।

ডায়েট চার্ট DAY 1 - DAY 3

সকালের খাবার

দুপুরের খাবার

বিকালের হালকা নাস্তা

রাতের খাবার 




DAY - 1

এক গ্লাস পানিতে ভেজানো ইসুবগুলের ভুষি। 

ভাত এক কাপ ভাতের সাথে পরিমাণ মতো শাকসবজি। 

আদার রস দিয়ে লাল চা অথবা গ্রিন টি খাওয়া যেতে পারে। 

একটি আটার রুটির সাথে পরিমাণমতো সবজি। 


DAY - 2

এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। 


একা ভাত সাথে সবজি অথবা ছোট মাছের ঝোল। 

ভেজানো কাঁচা ছোলা সাথে কিসমিস ও খেজুর

ভাত অথবা রুটির সঙ্গে পরিমাণ মতো সবজি এবং ডাল।

এক টুকরো মাছ অথবা ডিম



DAY - 3

এক গ্লাস কমলা লেবুর জুস অথবা শসার জুস। 

অল্প পরিমাণে ভাত সঙ্গে সবজি অথবা পালং শাক এবং টমেটো দিয়ে কম তেলে রান্না করা সবজি। 

সিজনাল ফল বিশেষ করে কমলালেবু, আপেল, মালটা, আঙ্গুর ইত্যাদির জুস। 

রোস্ট এর সবজি অথবা কুইন ওয়্যার বেকড কড দিয়ে ডিনার করা যেতে পারে।  

ইউরিক এসিড টেস্ট খরচ

কেউ যদি ইউরিক এসিড বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ গুলো ভালোভাবে পরিলক্ষন করতে পারে এবং ইউরিক এসিড কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো এপ্লাই করার পর ও যদি সেরকম কোন উন্নতি লক্ষ্য না হয় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আর চিকিৎসকের নিকট গেলে অবশ্যই একটি ইউরিক এসিড টেস্ট করতে বলবে। বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার উক্ত টেস্টের জন্য আলাদা ভাবে টেস্ট এর চার্জ করে থাকে। আমরা একটি ডায়গনস্টিকের রিসিপশনিস্ট এর সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি, 

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উক্ত টেস্টের জন্য ৩৫০ টাকা চার্জ করা হয়ে থাকে। মূল্যটি যেকোনো সময় পরিবর্তন হতে পারে তাই আপনি যদি টেস্ট করতে চান তাহলে ডায়গনস্টিকের কর্মকর্তার সাথে কথা বলে নিতে পারেন।

লেখকের শেষকথা

প্রিয় পাঠক বৃন্দ আমরা আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে অবগত হতে পারলাম। আশা করি আপনারা ইউরিক এসিড বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ এবং ইউরিক এসিড কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন। পরবর্তীতে আপনি যদি এ ধরনের সমস্যায় পড়েন তাহলে উপরে বর্ণিত পদ্ধতি গুলো অবলম্বনের মাধ্যমে অবশ্যই সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন এটাই আমাদের কামনা। আপনাদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য। 

আজকের এই পোস্ট সংক্রান্ত যদি আপনাদের কোন মন্তব্য থাকে তাহলে আমাদের কমেন্ট বক্সে সেটি জানাতে পারেন। এরকম আরো তথ্যবহুল আর্টিকেল পড়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন, পাশাপাশি আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সকলকে জানানো লক্ষ্যে একটি শেয়ার করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url