সরকারি চাকরিজীবীদের লোন সুবিধা এবং পার্সোনাল লোন
সরকারি চাকরিজীবীদের লোন সুবিধা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আওতায় যে সকল অধিদপ্তর রয়েছে সেখানে কর্মরত কর্মচারীরা সহজ শর্তে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে লোনের আবেদন করতে পারবে। আমরা আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কিভাবে একজন সরকারি চাকরিজীবীদের লোন সুবিধা প্রদান করা হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
পাশাপাশি আরো যে বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারব সেগুলো হল ইসলামী ব্যাংক সরকারি চাকরিজীবীদের লোন, সরকারি চাকরিজীবীদের পার্সোনাল লোন, অগ্রণী ব্যাংক সরকারি চাকরিজীবী লোন এবং হাউজ বিল্ডিং লোন সম্পর্কে। তাহলে চলুন সরকারি চাকরিজীবীদের লোন সুবিধা গুলো কোন কোন বিষয়ের উপর বা শর্তের উপর নির্ভর করে সেগুলো জেনে নেওয়া যাক।
পোস্ট সূচিপত্র
সরকারি চাকরিজীবীদের লোন সুবিধা
বাংলাদেশ সরকারের আওতাধীন যতগুলো অধিদপ্তর, বিভাগ, মন্ত্রণালয় রয়েছে, সেখানে নিযুক্ত কর্মচারীগণ তাদের প্রয়োজনে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে খুব সহজেই লোন সুবিধা গ্রহণ করতে পারে। আবার বেসামরিক প্রশাসনের কর্মরত অবস্থায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি মৃত্যুবরণ বা আহত হয়। সেক্ষেত্রে সরকার উক্ত ব্যক্তির অক্ষমতাকে বিচার বিবেচনার মাধ্যমে আর্থিক অনুদান প্রদান করে যা ইএফটির মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সরবরাহ করা হয়। আবার কোন সরকারি কর্মকর্তা যদি গৃহ নির্মাণ করতে চায় সেক্ষেত্রেও কিছু শর্তসাপেক্ষে ২৫ লক্ষ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যাংক
থেকে ঋণ নেওয়া সম্ভব। সরকারি চাকরিজীবীদের লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে আরো একটি বড় সুবিধা হল সুদের হার অত্যন্ত কম রাখার বিষয়টি। একজন সরকারি কর্মকর্তা যদি ঋণ গ্রহণ করে সে ক্ষেত্রে ঋণ পরিষদের সময় ৮ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশ হারে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। যা অন্যান্য সাধারণ ব্যক্তিদের থেকে অনেকটাই কম। ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই একটি নীতিমালা জারি করা হয়েছিল এবং সেখানে উল্লেখ করা ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের সাথে চুক্তি করে চাকরিজীবীদের বিভিন্ন খাতে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা
হবে। বর্তমানে সেই বিষয়টি নিয়ে যদি আলোকপাত করা হয়। তাহলে নীতিমালা অনুযায়ী সকল বিষয় কার্যকর না হলেও (বিশেষ করে সুদের হার) অন্যান্য যে বিষয়গুলো রয়েছে যেমন দ্রুত ঋণ পাওয়া থেকে শুরু করে জামানত বিহীন ঋণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সরকারি চাকরিজীবীদেরকে প্রদান করে যাচ্ছে। সরকারি চাকরিজীবীদের লোন সুবিধা গুলোর মধ্যে আরও একটি সুবিধা হচ্ছে ঋণ গ্রহণ করার পর দীর্ঘমেয়াদী সময় থাকে ঋণ পরিশোধের জন্য। যেখানে সাধারণ ব্যক্তি ঋণ গ্রহণ করার পর নামমাত্র সময় পেলেও একজন সরকারি চাকরিজীবী ২০ বছর পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের সুযোগ পায়।
ঋণগ্রহীতা পিআরএল পর্যন্ত প্রতি মাসে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঋণ পরিশোধ করতে পারবে। অর্থাৎ তার একাউন্ট থেকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রতি মাসে কিস্তির টাকা অটোমেটিক কেটে নেবে। তবে এক্ষেত্রে ঋণ নেওয়ার প্রথমেই যে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করবে সেখানে ইএফটি করার মাধ্যমে ঋণ নেওয়ার বিষয়টি সম্পন্ন করতে হয়।
সরকারি চাকরিজীবীদের পার্সোনাল লোন
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সর্বপরিমাণ সুদে গৃহ নির্মাণ করার ঋণ পাওয়ার পাশাপাশি কর্মকর্তারা পার্সোনাল লোনের জন্য ব্যাংকের নিকট আবেদন পত্র দাখিল করতে পারবে। সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক সহ বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন এর আওতায় গৃহ নির্মাণ সহ পার্সোনাল লোনের জন্য আবেদন করার নিয়ম চালু আছে। একজন সরকারি কর্মচারী যদি নিজের অথবা পরিবারের সদস্যের শিক্ষা, চিকিৎসা অথবা অন্য কোন বিষয়ের খরচ মেটানোর জন্য কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে লোন নেওয়ার চিন্তা করে।
তাহলে খুব সহজেই যেকোনো ব্যাংক থেকে এ ধরনের লোন গ্রহণ করতে পারবে। আর এই ধরনের লোনগুলো পারসোনাল লোনের আওতায় পড়ে থাকে। তবে সব বিষয়েরই একটি প্রসেসিং পদক্ষেপ রয়েছে। এক্ষেত্রেও সরকারি চাকরিজীবীরা ব্যক্তিগত লোন নেওয়ার জন্য কিছু যোগ্যতা থাকার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করার মাধ্যমে কেবলমাত্র পার্সোনাল লোন বা ব্যক্তিগত লোন গ্রহণ করতে পারে। যদি কোন সরকারি চাকরিজীবী নিজস্ব প্রয়োজন মেটানো অথবা বিনিয়োগ করার চিন্তা করে থাকে সেক্ষেত্রেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নিকট সরকারি চাকরিজীবীদের পার্সোনাল লোন এর
জন্য আবেদন করতে পারবে। দ্রুত লোন পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের যে সকল সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংক রয়েছে, সবগুলো ব্যাংক থেকে দ্রুততার সঙ্গে ঋণ নেওয়া যাবে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই যোগ্যতা এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করা বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা সরকারি চাকরিজীবীদের লোন সুবিধা গ্রহণ করতে হলে অবশ্যই সঠিক যোগ্য বিবেচিত হওয়ার পাশাপাশি সঠিক এবং সত্য কাগজপত্র জমা দিতে হয়। আসুন তাহলে এবার সরকারি চাকরিজীবীরা পার্সোনাল লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে কি কি যোগ্যতা এবং কাগজপত্র প্রয়োজন পড়বে।
প্রয়োজনীয় যোগ্যতা
- শুধুমাত্র গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আওতায় যেসকল মন্ত্রী পরিষদ, মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর এবং বিভাগের আওতায় নিযুক্ত কর্মচারীগণ লোনের আবেদন করতে পারবে।
- আবেদনকারীর বয়স ৬৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।
- সরকারি চাকরিজীবীর চাকরির প্রমাণপত্র এবং স্যালারি সিট প্রদান করতে হবে।
- বেসিক বেতন অবশ্যই কমপক্ষে ১৮ হাজার টাকা হতে হবে।
- শুধুমাত্র বারো তম গ্রেড এবং তার উপরে বেতন গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
- যে ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করতে ইচ্ছুক সেই ব্যাংকের শাখায় একাউন্ট থাকার পাশাপাশি অবশ্যই কমপক্ষে ছয় মাস লেনদেন হওয়া আবশ্যক। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে অনেক ব্যাংক শুধুমাত্র ব্যাংকে একাউন্ট থাকার ভিত্তিতেই লোন পাস করে থাকে।
- সরকারি চাকরিজীবীরা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই চাকরির বয়স ১ বছর হতে হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- ব্যাংক থেকে প্রদত্ত লোনের আবেদন পত্রটি সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।
- ঋণগ্রহীতার এবং গ্যারান্টার এর এনআইডি কার্ডের ফটোকপি লাগবে।
- ঋণগ্রহীতা এবং গ্যারান্টার এর সদ্য তোলা রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি প্রয়োজন হবে।
- ই টিন সার্টিফিকেট এর কপি দাখিল করতে হবে।
- স্যালারি সিটের প্রমাণপত্র বা স্যালারি সার্টিফিকেট এলওআই দেখাতে হবে।
- গত ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর কাগজ জমা দিতে হবে।
- বিদ্যুৎ বিলের ফটোকপি জমা দেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য বিলের ফটোকপি গ্রহণযোগ্য হবে। সেগুলো হল ওয়াসা বিল, গ্যাস বিল, ল্যান্ড ফোন বিল ইত্যাদি।
সরকারি কর্মচারীদের হাউজ বিল্ডিং লোন
সরকারি চাকরিজীবীদের পার্সোনাল লোন দেওয়ার পাশাপাশি হাউজ বিল্ডিং লোন ও প্রদান করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন সরকারি চাকরিজীবীদের লোন সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে অধিক অগ্রসর। যেহেতু সরকারি চাকরিজীবীদের লোন প্রদান করলে মাসিক কিস্তি তোলার সেরকম কোন আর ঝামেলা থাকে না। কেননা, ইএফটি এর মাধ্যমে প্রতিমাসে অটোমেটিক ভাবে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন থেকে মাসিক কিস্তি কর্তন করা হয়। তাই হাউজ বিল্ডিং কর্পোরেশন সহ সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠান সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে লোন প্রদানের বিষয়টি বেশি আগ্রহের চোখে
দেখে। কেউ যদি তার নিজস্ব বাড়ি নির্মাণ করতে চাই অথবা ফ্ল্যাট ক্রয় করে সেখানে থাকতে চায় সে ক্ষেত্রে হাউজ বিল্ডিং কর্পোরেশন থেকে লোন নিতে পারবে। আবার কোন ব্যক্তি যদি সরকারি চাকরিজীবী জীবন থেকে রিটার্নমেন্ট নিয়েছে এবং বর্তমান সময়ে পেনশনের আওতায় আছে সে ক্ষেত্রেও এ ধরনের ঋণ খুব সহজেই নেওয়া সম্ভব। আবাসন ঋণের খাতে গৃহ নির্মাণ বা ফ্ল্যাট ক্রয় করার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদান করে থাকে উত্তর প্রতিষ্ঠান। সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদের হারে ঋণ পাওয়া এবং ২০ বছর ঋণ পরিশোধের মেয়াদ অনুযায়ী বাংলাদেশের যোগ্যতা সম্পন্ন সুনগরিক ব্যক্তি হাউজ
বিল্ডিং কর্পোরেশন থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারবে। অর্থাৎ ঋণ গ্রহণের পর ঋণ গ্রহীতাকে ৯ পার্সেন্ট সুদের হারে অর্থাৎ প্রতি মাসে লাখে ৯০০ টাকা সুদ প্রদান করতে হবে। এবার অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে হাউজ লোন কিভাবে পাব বা এর শর্তগুলো কি কি। চলুন তাহলে এবার জেনে নেওয়া যাক কোন কোন বিষয়ের ভিত্তিতে একজন ব্যক্তি হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন লোন থেকে গৃহ নির্মাণ ঋণ পেতে পারে।
- অবশ্যই বাংলাদেশের একজন সুনাগরিক হতে হবে।
- বয়স ১৮ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে রয়েছে এরকম ব্যক্তিরাই আবেদনের সুযোগ পাবে।
- আবাসন ঋণের ক্ষেত্রে অবশ্যই জমির পজিশন এর প্রমাণপত্র জমা দেওয়ার পাশাপাশি জমির দলিল, খতিয়ান নং ইত্যাদি কাগজপত্র দাখিল করতে হবে।
- যে স্থানে বাড়ি নির্মাণ হবে সেখানকার জায়গা যদি ডিমান্ডেবল না হয় সে ক্ষেত্রে ঋণের পরিমাণ কমে আসতে পারে আবার অনেক সময় ঋণ বাতিল বলে গণ্য হতে পারে।
- কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে ২৪ মাস পর্যন্ত বকেয়া কিস্তি দেওয়ার সুযোগ থাকে।
এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, জামিনদারের আইডি ফটোকপি এবং উভয়ের সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি। অন্যান্য যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন সেগুলো বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং কর্পোরেশন এর যে কোন শাখায় বা যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাউজ বিল্ডিং লোন নেওয়া হবে সেখানে গিয়ে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাবে।
অগ্রণী ব্যাংক সরকারি চাকরিজীবী লোন
বাংলাদেশের সরকার এর আওতাধীন সকল অধিদপ্তরে নিযুক্ত চাকরিজীবীরা বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী অগ্রণী ব্যাংক থেকে সরকারি চাকরিজীবীদের লোন সুবিধা গুলো খুব সহজেই লুফে নিতে পারে। সেক্ষেত্রে বিশেষ কোন জামানত রাখার প্রয়োজন হয় না। শুধুমাত্র কিছু কাগজপত্র এবং তার সঙ্গে কাজে নিযুক্ত কলিগকে জামিনদার হিসেবে রাখার ভিত্তিতে লোন পাস হয়। অগ্রণী ব্যাংক সব সময় সরকারি চাকরিজীবীদের লোন দেওয়ার ক্ষেত্রে এবং আর্থিক সাহায্য করার জন্য বদ্ধপরিকর ভূমিকা পালন করে।
এই লোনের আওতায় সরকারি চাকুরিজীবীরা বাসা বাড়ি তৈরি অথবা সরকারি চাকরিজীবীদের পার্সোনাল লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা প্রাপ্ত হয়। তবে লোন নেওয়ার জন্য অবশ্যই কিছু পদ্ধতি অর্থাৎ বিশেষ কিছু পদক্ষেপ অনুসরণ করার মাধ্যমেই কেবল মাত্র ঋণের আওতায় যাওয়া সম্ভব। অগ্রণী ব্যাংক লোন পদ্ধতি অনুযায়ী ব্যক্তিটি অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারের অধীনে যে কোন দপ্তরে পার্মানেন্টভাবে নিযুক্ত হতে হয়। লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে আরও যে বিষয়গুলো অর্থাৎ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো দাখিল করতে হয় সেগুলোর নিচে দেওয়া হল।
- সর্বপ্রথম শাখায় গিয়ে কর্মকর্তার নিকট হতে একটি আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে হবে। আবেদন ফরমটিতে যেগুলো তথ্য দিতে বলেছে সঠিকভাবে সেগুলো পূরণ করতে হবে।
- আবেদন ফরমের সাথে প্রয়োজন পড়বে জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি এবং দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
- আবেদন করার জন্য সঙ্গে দিতে হবে স্ট্যাটাস প্রুফ অর্থাৎ সরকারি চাকরির সনদ বা সরকারের আধিকারিক নোটিশ।
- যে কারণে লোন নিচ্ছেন সে বিষয়টির প্রমাণপত্র প্রয়োজন পড়বে।
- সেলারি শীট অর্থাৎ মাসিক যে বেতন পায় সেই সংক্রান্ত একটি মাসিক বেতনের প্রমাণপত্র দাখিল করতে হবে।
উপরে বর্ণিত কাগজপত্রের সহিত আবেদন পত্রটি নির্দিষ্ট কর্মকর্তার নিকট জমা দিতে হবে। পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষ বিচার বিশ্লেষণ এর মাধ্যমে প্রার্থীকে লোন দেওয়া হবে কিনা সেটা জানানো হয়।
সরকারি কর্মচারীদের গৃহ নির্মাণ ঋণ সোনালী ব্যাংক
সোনালী ব্যাংক হচ্ছে বাংলাদেশের সকল ব্যাংকের মধ্যে অন্যতম একটি ব্যাংক। সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সরকারি চাকরিজীবীদের লোন সুবিধা প্রদান করার ক্ষেত্রে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। অনেকেই চাকরিরত অবস্থায় অথবা চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর একটি গৃহ নির্মাণ করার পরিকল্পনা করে থাকে। কিন্তু অর্থের সংকটে সেই শখের বাড়িটি আর তৈরি করা হয় না। কিন্তু সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গৃহ নির্মাণের জন্য ব্যাপক পরিমাণ ব্যবস্থা করেছে। তাই কোন ব্যক্তি যদি ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ অথবা ফ্ল্যাট ক্রয় করতে চায় সেক্ষেত্রে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নিকট হতে ২৫
লক্ষ হতে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত দিনের সুবিধা পেতে পারে। নীতিমালা অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীরা ৯০% পর্যন্ত ঋণ সুবিধা ভোগ করার পাশাপাশি অত্যন্ত কম সুদের হারের বিনিময়ে, মাত্র ৮%-৯% সুদের হারে ঋণ পরিশোধের সুবিধা পেয়ে থাকে। আবার ঋণ পরিশোধের মেয়াদের ক্ষেত্রেও বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হয়। একজন সরকারি কর্মচারী তার চাকরির বয়সের উপর ভিত্তি করে ২০ বছর পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের সুযোগ পেয়ে থাকেন। তবে অবশ্যই কিছু যোগ্যতা এবং কাগজপত্র প্রদানের মাধ্যমে সরকারি চাকরিজীবীরা সোনালী ব্যাংক থেকে গৃহ নির্মাণ ঋণ পেতে পারে। চলুন তাহলে এবার সেই সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং যোগ্যতা সম্বন্ধে জেনে নেওয়া যাক।
- অবশ্যই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অধীনে যে সকল অধিদপ্তর রয়েছে সেখানে পারমানেন্টভাবে কর্মরত হতে হবে।
- ঋণ গ্রহিত আর বয়স ৬৫ বছরের বেশি হওয়া যাবে না।
- চাকরির প্রমাণপত্র এবং এর সঙ্গে স্যালারি সিটের প্রমাণপত্র দাখিল করতে হবে।
- বেসিক স্যালারি অবশ্যই ১৮০০০ টাকার উপরে হতে হবে।
- যদি ফ্ল্যাট ক্রয় করতে চায় তাহলে ডেভলপার বা ফ্ল্যাট বিক্রেতার সাথে চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
- ফ্ল্যাট ক্রয়ের বায়না নামা বা চুক্তিপত্রের মূল কপি। পাশাপাশি মূল দলিল, নামজারি খতিয়ান, নকশা ইত্যাদি প্রয়োজন পড়বে।
- জেলা বা সাব রেজিস্টার কর্তৃক ১২ বছরের তল্লাশি সহ নির্দয় সনদ (এনইসি) এবং সরকার হতে বরাদ্দ পাওয়া জমির ক্ষেত্রে মূল বরাদ্দপত্র দাখিল করতে হবে।
- সোনালী ব্যাংকের যে শাখা হতে ঋণ নেওয়া হবে সেই শাখায় অবশ্যই একটি হিসাব একাউন্ট খোলা রাখতে হবে।
- পূর্বে যদি কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে খারাপ রেকর্ড পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে ঋণ বাতিল বলে গণ্য হবে।
উপরে বর্ণিত যোগ্যতা যদি বলবৎ থাকে সেক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি তার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি এবং গারান্টারের জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি, উভয়ের সদ্য তোলা রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি, নাগরিকত্ব সনদ, মোবাইল নম্বর এবং আরও অন্যান্য সকল ডকুমেন্টস এর সহিত সোনালী ব্যাংকের নিকটস্থ শাখায় গিয়ে আবেদন পত্র পূরণ করার মাধ্যমে লোন গ্রহণের জন্য আবেদন করতে পারবে।
আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে ঋণ নিতে ইচ্ছুক ব্যক্তিটিকে ঋণ দেওয়া যাবে কিনা সে বিষয়টি সম্পর্কে এসএমএসের মাধ্যমে জানাবে। যদি সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সব সময় সরকারি চাকরিজীবীদের লোন সুবিধা প্রদান করার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো সত্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমেই ঋণ দিয়ে থাকে।
ইসলামী ব্যাংক সরকারি চাকরিজীবীদের লোন
ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সরকারি চাকরিজীবীদের পার্সোনাল লোন এবং অন্যান্য লোনের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা প্রদান করে থাকে। আমরা একটি বিষয় সম্পর্কে খুব ভালোভাবে অবগত হতে পেরেছি যে সরকারি চাকরিজীবীরা যদি লোন নিতে চায় তাহলে অবশ্যই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আওতাধীন কোন মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা অধিদপ্তর নিযুক্ত রয়েছে এমন হতে হবে। শুধুমাত্র সেখানে স্থায়ী পদে নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মচারীবৃন্দরাই এ ধরনের লোনের সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করতে পারে। আর এক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও সরকারি চাকুরিজীবীদেরকে সরকারি চাকরিজীবীদের লোন সুবিধা প্রদান
করে যাচ্ছে। সরকারি চাকরিজীবীদের লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে মূল সুবিধা গুলো হলো বিশেষ কোনো জামানতের প্রয়োজন পড়ে না। আবার এখানে সুদের হার তুলনামূলকভাবে কম রাখা হয়। তবে ক্ষেত্র বিশেষে অফিসে কর্মরত কলিগদের জামিনদার হিসেবে রাখতে হয়। অর্থাৎ যে ব্যক্তি যে অধিদপ্তরে নিযুক্ত রয়েছে সেই অধিদপ্তরের তার সাথের কলিগকে সরকারি লোনের ক্ষেত্রে জামিন না রাখতে হয়। আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক ইসলামী ব্যাংকের আওতায় সরকারি লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে কোন কোন যোগ্যতা থাকলে লোন পাস হয়।
- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আওতায় যে সকল মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তর রয়েছে সেখানে স্থায়ী পদে কর্মরত থাকতে হবে।
- ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ঋণগ্রহিতার বয়স ৫৬ বছরের বেশি হওয়া যাবে না।
- আবেদনকারীর মাসিক বেতন অবশ্যই অনলাইন অথবা ইএফটি (Online/EFT) পদ্ধতির আওতায় আসতে হবে।
- পূর্বে কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে লোন গ্রহণ করে থাকলে লোন পরিশোধের রেকর্ড অবশ্যই ভালো হতে হবে। সকল বিষয় যদি সঠিক হয় তাহলে সরকারি লোন কিভাবে পাওয়া যাবে এই প্রশ্নে আর কোন কনফিউশন থাকে না। আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক সরকারি চাকরি হলেও কারা ইসলামী ব্যাংকের অধীনে এরকম দিনের জন্য আবেদন করতে পারবেন না বা আবেদন করলেও লোনের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।
- রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্ত শাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় মালিকাধীন কোম্পানিতে নিযুক্ত কর্মচারীগণ এ ধরনের ঋণ পাবেন না। একমাত্র গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আওতায় যেগুলো দপ্তর রয়েছে তারাই শুধুমাত্র এ ধরনের ঋণের আওতাভুক্ত হবেন।
- যেকোনো চুক্তিভিত্তিক, খন্ডকালীন ও অস্থায়ী ভিত্তিতে নিযুক্ত যদি কর্মচারী সরকারি দপ্তরে নিযুক্ত থাকে তারাও সরকারি লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না।
লেখকের শেষকথা
প্রিয় বন্ধুগণ আমরা আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে অবগত হতে পারলাম। আশা করি আপনারা সরকারি চাকরিজীবীদের লোন সুবিধা সম্পর্কিত সকল বিষয়ে জানার পাশাপাশি সরকারি চাকরিজীবীদের পার্সোনাল লোন সংক্রান্ত সকল তথ্যগুলো ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছেন। এরপরেও যদি আপনাদের সরকারি চাকরিজীবীদের ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আর হ্যাঁ অবশ্যই এরকম
তথ্যবহুল আর্টিকেল পড়তে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন। অন্যদেরকেও আজকের এই পোস্টের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো জানানোর উদ্দেশ্যে আর্টিকেলটি শেয়ার করতে পারেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url