শরীর জ্বালা পোড়ার কারন ও প্রতিকার বিস্তারিত জানুন

শরীর জ্বালাপোড়া করার কারণে অনেকের রাতে ঘুম আসে না। আসলে বিভিন্ন কারণবশত শরীর জ্বালাপোড়া করতে পারে। ক্ষেত্রে যদি স্নায়ুজনিত সমস্যা অথবা ডায়াবেটিস এর মত রোগ থাকে তাহলে শরীর জ্বালাপোড়া করা একটি স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু একজন সুস্থ মানুষের যদি হঠাৎ করে শরীর জ্বালাপোড়া করা শুরু করে সেক্ষেত্রে শরীর জ্বালা পোড়ার কারন ও প্রতিকার হিসেবে অবশ্যই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। 
শরীর-জ্বালা-পোড়ার-কারন-ও-প্রতিকার
তাই চলুন আজকে আর্টিকেলের মাধ্যমে উক্ত বিষয়টি সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। আলোচ্য বিষয়টি বাদে আরো যে সকল বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন সেগুলো হলো শরীর হাত পা জ্বালা পোড়ার কারণ ও প্রতিকার এবং শরীর জ্বালা পোড়ার কারন কি। সুতরাং শরীর জ্বালা পোড়ার কারন ও প্রতিকার এবং জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তির ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য আর্টিকেলের শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্র

শরীর জ্বালা পোড়ার কারন কি

আমরা কোন কিছুর প্রতিকার করার পূর্বে অবশ্যই সেটির কারণ খুঁজে বের করতে হয়। কোন রোগের চিকিৎসা করতে হলে অবশ্যই উক্ত রোগের কারণগুলো দর্শানোর পরে কেবলমাত্র উপযুক্ত চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। ঠিক তেমনি শরীর জ্বালা করার কারণ হিসেবে অনেকগুলো বিষয় আমাদের সামনে আসতে চলেছে। ডায়াবেটিস কিংবা স্নায়ুজনিত কারো যদি রোগ থাকে তাহলে তাদের শরীর জ্বালাপোড়া করতে পারে। তবে এগুলো ছাড়াও সুস্থ ব্যক্তির বিভিন্ন কারণবশত শরীর জ্বালাপোড়া এর মত সমস্যা সৃষ্টি হয়। শরীর জ্বালাপোড়া করার অন্যতম একটি কারণ হিসেবে বিভিন্ন ঔষধ সেবনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াকে 

দায়ী করা হয়েছে। আমরা অনেক সময় বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে কড়া করা ওষুধ সেবন করে থাকি। বিশেষ করে যদি এন্টিবায়োটিক এর মত ওষুধ সেবন করা হয় সে ক্ষেত্রে এ ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বেশি লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও শরীরে যদি ভিটামিনের ঘাটতি পরিলক্ষিত হয় সেক্ষেত্রেও শরীর, হাত পা জ্বালা করতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস থাকার কারণে এবং ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়লে শরীর জ্বালাপোড়া করে। আবার ডায়াবেটিসের ওষুধ যেমন মেটফরমিন দীর্ঘদিন যাবত যদি সেবন করা হয় সেক্ষেত্রে শরীরে ভিটামিন বি ১২ এর ঘাটতি তৈরি হয়ে যায়। 

আর ভিটামিন বি ১২ এর ঘাটতি শরীরে যদি দেখা দেয় সেক্ষেত্রে শরীর মারাত্মকভাবে জ্বালাপোড়া করে। তবে এ ধরনের সমস্যা অর্থাৎ ভিটামিনের ঘাটতি যদি দেখা দেয় তাহলে সে ক্ষেত্রে শরীর জ্বালা পোড়ার কারন ও প্রতিকার হিসেবে অবশ্যই বেশি বেশি ভিটামিন যুক্ত খাবার গুলো সেবন করতে হবে। প্রয়োজন হলে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী একটি ভিটামিন খাদ্য সম্বলিত খাদ্য তালিকা বা চার্ট তৈরি করে নিতে হবে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে যেমন কারো যদি যক্ষা রোগ হয় সে ক্ষেত্রে যদি যক্ষা 
রোগের ওষুধ সেবন করা হয়। তাহলে শরীরের নিউরোপ্যাথি হওয়ার মতো সমস্যা সৃষ্টি হয়, আগেই পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পাইরিডক্সিন শরীরে দেওয়া হয়ে থাকে। ফলে শরীর জ্বালাপোড়া করে।

শরীর হাত পা জ্বালাপোড়া করে কেন

শরীর হাত পা জ্বালা করার আরো অনেকগুলো কারণ বা কি কারণে এ ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়, সেগুলো সম্পর্কে আমাদের সম্পূর্ণ ধারণা রাখা উচিত। কেননা কোন এক সময় যদি আমরা এ ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়ি তাহলে আজকের এই তথ্যগুলো আমাদের অবশ্যই কাজে আসবে। শরীর হাত পা জ্বালা করার পেছনে থাকতে পারে অনেক লোকও রোগ। এজন্য অবশ্যই কোন কোন ভিটামিনের ঘাটতি হলে শরীরের জ্বালাপোড়া করে সে বিষয়ে আমাদের সঠিকভাবে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আবার কারো যদি স্নায়ুজনিত রোগ থাকে সেক্ষেত্রে কড়া কড়া ওষুধ না খেয়ে প্রাথমিকভাবে কিভাবে রোগ থেকে মুক্তি 

পাওয়া যায় সেসকল বিষয় ও জানা খুবই জরুরী। মূলত যাদের বিপাক প্রক্রিয়া অর্থাৎ হজমে সমস্যা থাকে তাদের ক্ষেত্রে সকল ধরনের ভিটামিন এর অভাব পরিলক্ষিত হয়। কেননা খাবারের মাধ্যমে আমরা যখন ভিটামিন গ্রহণ করি সেক্ষেত্রে হজম প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই আমাদের শরীরে ভিটামিনের উপাদানগুলি শোষিত হয়। তাই বিভাগ প্রক্রিয়া সঠিকভাবে হওয়া শরীরের জন্য খুবই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোন ভাইরাস জনিত কারণে যদি শরীরে পানিভর্তি ফুসকুড়ি দেখা দেয় সে ক্ষেত্রে ও শরীর জ্বালাপোড়া করতে পারে। ফুসকুড়ি গুলো সেরে যাওয়ার পরও আক্রান্ত স্থানে ব্যথা চুলকানি বা 

জ্বালাপোড়া হওয়ার মত সমস্যা হতে পারে। তাই এ ধরনের কারণবশত যদি শরীর জ্বালাপোড়া করে তাহলে কয়েকদিন দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। সুতরাং শরীর জ্বালা পোড়ার কারন কি, এ বিষয়টি নিয়ে চিন্তার কোন বিষয় নেই। এই পর্যায়ে কি বলা হয় পোস্ট ভাইরাল নিউরালজিয়া। মূলত এ ধরনের সমস্যা মানবদেহের বুক, পেট, পিঠ জাতীয় স্থানে দৃশ্যমান হয়। কারো যদি এলার্জি বা ভাইরাসজনিত সংক্রমণের কারণে চুলকানি বা শরীর, হাত পা জ্বালাপোড়া করে সে ক্ষেত্রে শরীর জ্বালা পোড়ার কারন 

ও প্রতিকার অনুযায়ী অবশ্যই সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করার মাধ্যমে রোগমুক্তি সম্ভব। বিশেষ ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে কারো যদি বাতের সমস্যা যেমন রিউমাটয়েড আর্থাইটিস হয়ে থাকে সেক্ষেত্রেও শরীর জ্বালাপোড়া বা নিউরোপ্যাথির মতো সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।

শরীর জ্বালা পোড়ার কারন ও প্রতিকার

শরীর জ্বালাপোড়ার কারণ হিসেবে ডায়াবেটিস এবং স্নায়ুতন্ত্র জনিত সমস্যাকে দায়ী করা হলেও আরো কিছু সমস্যা এর কারণে হাত-পা এবং শরীর জ্বালাপোড়া করতে পারে। ওয়েস্টোজেন হরমোনের অভাবের কারণে শরীর জ্বালাপোড়া করার মতো সমস্যা তৈরি হয়। বলতো এটি মানুষের ব্রেন বা মস্তিষ্কের সাথে যোগ সংযোগ রয়েছে। সাধারণত তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটলে শরীর উক্ত তাপমাত্রার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। কিন্তু যখন ওয়েস্ট্রোজেন এর মত সমস্যা তৈরি অর্থাৎ হরমনের মাত্রা কমে যায়। 

সেক্ষেত্রে মানব দেহ থার্মোস্ট্যেট বা তাপমাত্রা রোধের বিষয়টি গুলিয়ে ফেলে বা নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতিটি দুর্বল হয়ে যায়। তখন আমাদের ব্রেনে এক ধরনের সিগন্যাল পাঠানো হয় যে আমাদের শরীর জ্বালাপোড়া বা অতিরিক্ত গরম লাগার মত অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছে। এ ধরনের বৈজ্ঞানিক কারণ ছাড়াও আরো কিছু শারীরিক সমস্যার জনিত কারণ উল্লেখ করা হয়েছে যার কারণে আমাদের শরীর, হাত পা জ্বালাপোড়া করতে পারে। তাহলে বিষয়গুলো কিসের ভিত্তিতে হয়ে থাকে সেগুলো এবার জানা যাক।
  • যদি কারো কিডনি অথবা থাইরয়েড জনিত সমস্যা থাকে তাহলে শরীর জ্বালাপোড়া করে।
  • শরীরে ভিটামিনের অভাব বা ঘাটতি পরিলক্ষিত হলে, বিশেষ করে ভিটামিন বি১২ এর অভাব যদি শরীরে দেখা দেয় সেক্ষেত্রে মারাত্মকভাবে শরীর এবং হাত পা জ্বালাপোড়া করে।
  • রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এর মত রোগ যদি দেখা দেয় তাহলে শরীর জ্বালাপোড়া করা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়।
  • অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস এবং ডায়াবেটিসের কারণে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ সেবন শরীর জ্বালাপোড়া করার অন্যতম কারণ।
  • যক্ষা রোগের নির্মূলের ক্ষেত্রে আইসোনিয়াজিড, হৃদরোগের জন্য অ্যামিওড্যারন এবং কেমোথেরাপি এর কারণবশত শরীর জ্বালাপোড়া করে।
  • কারো যদি রক্ত চলাচলে সমস্যা অর্থাৎ রক্তনালী ব্লক হয়ে যাওয়া বা ভিটামিনের ঘাটতিজনিত কারণে যদি রক্ত চলাচল সঠিকভাবে সম্পাদনা হয় সেক্ষেত্রেও শরীর জ্বালাপোড়া করে থাকে
  • অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ সৃষ্টির কারণে প্রথমে মাথা ব্যথা এবং পরবর্তীতে পুরো শরীর জ্বালাপোড়া করার মত সমস্যা সৃষ্টি হয়।
মদ্যপান বা নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণের মাধ্যমে শরীরকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সময় শরীর এবং হাত-পা প্রচুর পরিমাণে জ্বালাপোড়া করে থাকে। আর এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অর্থাৎ শরীর জ্বালা পোড়ার কারন ও প্রতিকার হিসেবে পুরোপুরি ভাবে মদ্যপান এবং এলকোহল জাতীয় দ্রব্য থেকে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে দূরে রাখতে হবে। এছাড়া প্রতিকার হিসেবে ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করা খুবই জরুরী। একজন পূর্ণবয়স্ক হিসেবে নিজেকে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লিটার পানি পানে অভ্যস্ত রাখতে হবে। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা খুবই জরুরি একটি বিষয়। 
তাহলে আমাদের মনে যদি প্রশ্ন আসে যে, শরীর জ্বালা পোড়ার কারন কি। তাহলে বাহিরের অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করাও একটি কারণ হিসেবে উল্লেখিত হয়। আর বাহিরের অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের শারীরিক বিভিন্ন রোগ বালাই সংঘটিত হয় যার কারণে, শরীর জ্বালাপোড়া করার মত এ ধরনের রোগ হয় হরহামেশাই দেখা যায়।

শরীর হাত পা জ্বালা পোড়ার কারন ও প্রতিকার

শরীর হাত পা জ্বালাপোড়া করার কারণ হিসেবে উপরে উল্লেখিত রোগ বাধিত অন্যান্য কিছু কারণ রয়েছে। যেমন সর্বপ্রথমে আমরা একটি বিষয় উল্লেখ করেছিলাম সেটি হল, ভিটামিনের ঘাটতি এর কারণে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ত্বরান্বিত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। স্নায়ুজনিত কারণে মূলত পায়ের পাতা থেকে শুরু করে জ্বালাপোড়া ধীরে ধীরে পায়ের আঙ্গুল গোড়ালি এবং উপরের দিকে ছড়িয়ে যায়। এই সময় শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মারাত্মকভাবে জ্বালাপোড়া শিকার হয়। 

তবে জ্বালাপোড়ার মাত্রা যদি অত্যাধিক হয় সেক্ষেত্রে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। যাদের বয়স পঞ্চাশের বেশি হয়ে গেছে বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা বেশি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানের ঘাটতির কারণে মূলত শরীর জ্বালাপোড়া বা হাত-পা জ্বালাপোড়ার মতো সমস্যা তৈরি হয়। অনেক সময় শরীর মারাত্মক পরিমাণের যদি দুর্বল হয়ে যায় সে ক্ষেত্রেও জ্বালাপোড়া করতে পারে। আসুন ভিটামিনের ঘাটতি অনুযায়ী কিভাবে একজন ব্যক্তির এ ধরনের সমস্যা সংঘটিত হয় সে বিষয়টি সম্পর্কে জানা যাক।

ভিটামিন বি ১২: চিকিৎসা বিজ্ঞান এর গবেষণায় দেখা গেছে যে, শরীরে ভিটামিন বি ১২ এর ঘাটতি যদি দেখা দেয় তাহলে পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথিক অবস্থার সৃষ্টি হয়, যা থেকে হাত-পা জ্বালাপোড়ার মত সমস্যা তৈরি হতে থাকে। আর বিশেষ করে ভিটামিন বি ১২ এর ঘাটতি যদি দেখা দেয় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই শরীর জ্বালা পোড়ার কারন ও প্রতিকার হিসেবে ঘরোয়া পদক্ষেপগুলো প্রাথমিকভাবে এপ্লাই করা প্রয়োজন।

ভিটামিন বি ৬: ভিটামিন বি ৬ এর অভাব জনিত কারণে মানবদেহে “পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি” নামক স্নায়ুতন্ত্রের রোগ হতে পারে। উক্ত সমস্যার লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে হাত-পায়ে জ্বালাপোড়া, অবশতা, সুঁই ঝিনঝিনানি, ব্যথা, এবং দুর্বলতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ভিটামিন ডি: সাধারণত ভিটামিন ডি শরীরের ক্যালসিয়ামের তাপমাত্রা বজায় রাখে। কোনো কারণে শরীরে যদি ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পড়ে যায় সে ক্ষেত্রে অস্টিওম্যালাসিয়া রোগ হয়ে থাকে। আর এ জন্য হাত-পায়ে জ্বালাপোড়া হয়।

ভিটামিন বি: ডাক্তারদের মতে, ভিটামিন বি এর অভাবে মূলত “বেরিবেরি” রোগ হয়ে থাকে। আর এই বেরিবেরি রোগের কারণে পুরো শরীর বিশেষ করে হাত এবং পায়ের তালু প্রচুর পরিমাণে জ্বালাপোড়া করে।
ভিটামিন সি: ভিটামিন সি এই পুষ্টি উপাদানটির সাথে আমরা কমবেশি সকলে পরিচিত। বিশেষ করে টক জাতীয় ফল যেমন লেবু কমলা আপেল আঙ্গুর ইত্যাদি ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। ভিটামিন সি যুক্ত ফলে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের ত্বককে উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত করে তোলে। অভাবে ত্বক বিশেষ করে মুখমন্ডল হাতের তালু এবং পায়ের তালু জ্বালাপোড়া করতে পারে।
ভিটামিন বি ৩: ভিটামিন বি৩ বা নায়াসিনের অভাবে “পেলেগ্রা” নামক রোগ হয়ে থাকে। এর প্রধান লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে হাত-পায়ে জ্বালাপোড়া সহ ত্বকের লালভাব, ডায়রিয়া, এবং মানসিক বিভ্রান্তি তৈরি করা।
ভিটামিন ই: শরীর জ্বালা পোড়ার কারন কি এই প্রশ্নে ভিটামিন ই এর কথা আসবে না তা কি করে হয়। মানবদেহের অন্যতম একটি উপাদান হলো ভিটামিন ই। আর ভিটামিন ই এর অভাবে “স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি” নামক স্নায়ুতন্ত্রের রোগ সৃষ্টি হয়। এই সমস্যাটির লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে হাত পা জ্বালা করা এবং হাত-পায়ে দুর্বলতা, পেশীর ক্ষয়, এবং হাঁটতে অসুবিধা হওয়া।

পাঠক বৃন্দ আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে শুধুমাত্র উপরে বর্ণনাকৃত সমস্যাগুলোর কারণেই অর্থাৎ কোন ভিটামিনের অভাবে হাত পা জ্বালা পোড়া করে বিষয়টি তা নয়। শারীরিক অন্য কোন সমস্যার হাত-পা জ্বালাপোড়া করতে পারে। এ ধরনের সমস্যা খুব বেশি কন্টিনিউ ভাবে হতে থাকে তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আসুন তাহলে এবার শরীর জ্বালা পোড়ার কারন ও প্রতিকার এর কোন বিষয়গুলো ফলোআপ করার মাধ্যমে রোগ মুক্তি বা প্রতিকার করা সম্ভব হবে সে বিষয়টি জেনে নেওয়া যাক। নিচে পয়েন্ট আকারের কিছু বিষয়ে উল্লেখ করা হলো যার মাধ্যমে উক্ত সমস্যাটির প্রতিকার করা সম্ভব।
  • যেহেতু শরীর বা হাত-পা জ্বালাপোড়া মূলত রাতে বেশিরভাগ দেখা দিয়ে থাকে। তাই বিছানায় যাওয়ার পূর্বে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করে নিলে অনেকটাই আরামবোধ হয়।
  • গোসল করার সময় অবশ্যই ঠান্ডা পানি যদি সমস্যা মনে হয় তাহলে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করলেও সমস্যা নেই।
  • গোসল শেষে অলিভ অয়েল জাতীয় তেল গায়ে মাখতে পারেন এতে করে শরীর ঠান্ডা হয়ে যাবে।
  • সবসময় খেয়াল রাখতে হবে শরীর যেন ড্রাই না হয়ে যায়। শরীর ড্রাই হয়ে গেলে জ্বালাপোড়া হওয়ার পাশাপাশি অনেক সময় চুলকানি এর মত সমস্যাও দেখা দেয়।
  • শরীরে জ্বালাপোড়া কমানোর জন্য মশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। এক্ষেত্রে ওয়েল বেজ লোশন খুব ভালো কাজ করে তাই লোশনটি ব্যবহার করে শরীরে জ্বালাপোড়া থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাছাড়া ফার্মেসির দোকানগুলোতে আরো অনেক ধরনের লোশন রয়েছে যেগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে জ্বালাপোড়ার মতো সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়া যায়।
  • স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের পাশাপাশি প্রতিদিন ত্বক জাতীয় ফল বা ফলের রস খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। টক জাতীয় ফল খেলে শরীর এসিড মুক্ত থাকে যার ফলে শরীর জ্বালাপোড়া করার আর সুযোগ থাকে না।
  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। দৈনিক ৩ থেকে ৪ লিটার পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। বেশি বেশি পানি পান করলে শরীর কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্ত হওয়ার পাশাপাশি শরীরের জ্বালাপোড়ার মাত্রা কমে যাবে।

সারা শরীর জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তির উপায়

আপনাদের জ্ঞাতার্থে আরো একটি বিষয় উল্লেখ করছি যে মূলত প্রাথমিক পর্যায়ে যদি শরীর জ্বালা পোড়ার কারন কি বিষয়টি জানা যায় এবং কারো এ ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। তাহলেই কেবলমাত্র ঘরোয়া চিকিৎসা গুলো এপ্লাই করবেন। যদি শরীর জ্বালা পোড়ার কারন ও প্রতিকার অনুযায়ী ট্রিটমেন্ট নেওয়ার পর ও উন্নতি পরিলক্ষিত না হয় এবং ধৈর্যসীমার বাহিরে চলে যায়। তাহলে এ ধরনের ঘরোয়া চিকিৎসা গুলো আর কাজে আসবে না। এক্ষেত্রে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে 
হবে। মনে রাখতে হবে যদি খুব বেশি পরিমাণে হাত শরীর এবং হাত-পা জ্বালাপোড়া করে তাহলে অবশ্যই কোন বড় ধরনের অসুখের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। তাই দেরি না করে অবশ্যই নিকটস্থ হাসপাতালে যাওয়া খুবই জরুরী। নিচে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি পর্যায়ক্রমে দেওয়া হল।
  • ঠান্ডা সেঁক: প্রথমে একটি পরিষ্কার কাপড় ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে ১০-১৫ মিনিটের জন্য আক্রান্ত স্থানে অর্থাৎ মুখমণ্ডল, হাতে এবং পায়ে রাখুন। ধীরে ধীরে ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করবে।
  • অ্যালোভেরা জেল: অনেকের মতে অ্যালোভেরা জেলে প্রদাহ কমানোর শক্তি এবং ব্যথানাশক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যার ফলে জ্বালাপোড়া উপশম করতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করতে পারে।
  • নারকেল তেল: আমাদের সকলের ঘরে এবং হাতের কাছে পাওয়া যায় নারকেল তেল। ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করার ক্ষেত্রে নারিকেল তেলের ভূমিকা নেই। পাশাপাশি জ্বালাপোড়া সারাতেও সাহায্য করে থাকে।
  • হলুদ: হলুদ একটি অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে বহু কাল ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। হলুদের প্রদাহ-বিরোধী অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যার কারণে জ্বালাপোড়া সারাতে সাহায্য করতে পারে। হলুদের গুঁড়া দিয়ে কাঁচা হলুদের তৈরি পেস্ট আক্রান্ত স্থানে লাগান, দেখবেন নিমিষেই জ্বালাপোড়া বন্ধ হয়ে গেছে।
  • চা পাতা: চা পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা জ্বালাপোড়া নিরসনে সাহায্য করে। ঠান্ডা করা কালো চা পাতা আক্রান্ত স্থানে লাগান, দেখবেন অনেকটাই আরাম বোধ করছেন। 
এ সকল ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করার পাশাপাশি খাদ্য তালিকায় আনতে হবে আমূল পরিবর্তন। জানতে হবে কোন ভিটামিনের অভাবে হাত পা জ্বালা পোড়া করে, সে অনুযায়ী প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিনযুক্ত সকল খাবার রাখা অতীব জরুরী।

হাত পা জ্বালাপোড়া ঔষধ

আমরা ইতিমধ্যে শরীর জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছি। অনেকে যদি মনে করেন ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করতে চান না বা শরীর জ্বালাপোড়া এর পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই শরীর জ্বালা পোড়ার কারন ও প্রতিকার হিসেবে ঔষধ গ্রহণ করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। তবে ঔষধ সেবনের থেকে ঘরোয়া পদ্ধতি অনুযায়ী সেবা গ্রহণ করলে অনেকটা আরাম বোধ হয়। তবে সেভাবে বাজারে প্রচলিতভাবে হাত-পা জ্বালাপোড়া করার ঔষধ পাওয়া যায় না। কিছু মলম রয়েছে যেগুলো লাগালে সাময়িকভাবে হাত পা জ্বালাপোড়া কমে। 

যাদের অ্যালার্জি গত সমস্যা রয়েছে তাদের মলম না লাগানোই ভালো। এখানে কিছু কোম্পানির শরীর এবং হাত পা জ্বালাপোড়া করার ঔষধ দেওয়া হল। ওষুধ খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে।

ঔষধের নাম (Tablet)-কোম্পানির নাম

  • Miotrol (2.5 mg)-Drug International Ltd.
  • Nomi (2.5 mg)-Square Pharmaceuticals Ltd.
  • Nomiten (2.5 mg)-Rephco Pharmaceuticals Ltd.
  • Zolmit (2.5 mg)-Beximco Pharmaceuticals Ltd.
  • Zomitan (2.5 mg)-Incepta Pharmaceuticals Ltd.

লেখকের শেষকথা

প্রিয় পাঠক বৃন্দ আমরা আশা ব্যক্ত করছি যে আপনারা ইতিমধ্যে শরীর জ্বালা পোড়ার কারন কি এবং শরীর জ্বালা পোড়ার কারন ও প্রতিকার গুলো সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে ধারণা নিতে পেরেছেন। যদি ভবিষ্যতে আপনারা কেউ এ ধরনের সমস্যায় পড়েন তাহলে আমাদের আর্টিকেলের বিষয়বস্তুগুলো ফলো করার পাশাপাশি অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন। আপনাদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি আর্টিকেলটি সম্পন্নভাবে করার। 

আমরা সবসময় আমাদের ওয়েবসাইটে এরকম তথ্যবহুল আর্টিকেল পাবলিশ করে থাকি। আপনি চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন। পাশাপাশি আপনার আত্মীয় বা বন্ধু-বান্ধবের উপকারের লক্ষ্যে আজকের পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url