নিমিষেই মাথা যন্ত্রণা কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো জানুন
মাথা যন্ত্রণা কমানোর ঘরোয়া উপায় বিস্তারিতভাবে জেনে রাখা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কেননা আমাদের সকলেরই কমবেশি মাথাব্যথা বা মাথা যন্ত্রণা উপশম ঘটে থাকে। হঠাৎ ঘুম থেকে ওঠার পর মাথার বাম পাশে অথবা ডান পাশে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হয়ে যায় এবং যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা আছে তাদের বমি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ ধরনের শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা বিভিন্ন রকম পরামর্শ অবলম্বন করে থাকি।
কিন্তু সঠিক পরামর্শ এর অভাবে আমরা কখনোই চির মুক্তি লাভ করি না। তাহলে চলুন আজকে মাথা যন্ত্রণা কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জ্ঞান অর্জন করা যাক। আজকে এই আর্টিকেলে আলোচ্য বিষয়টি জানার পাশাপাশি আরো যে সকল বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন সেগুলো হলো ঘন ঘন মাথা ব্যথার কারণ কি এবং মাথা ব্যাথা কোন রোগের লক্ষণ সম্পর্কে। পাশাপাশি আরো জানতে পারবেন মাথা ব্যথা হলে কি করা উচিত এবং মাথা ব্যথার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে
জানতে পারবেন। আর্টিকেলের একদম শেষ পর্যায়ে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা মাথাব্যথা কমানোর ১০ টি ওষুধের নাম বিস্তারিতভাবে লিখে দেবো। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে মাথা যন্ত্রণা কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে এবং আরো অন্যান্য সকল বিষয় সম্পর্কে জানার জন্য আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্র
ভূমিকা
মাথাব্যথা (HEADACHE) খুব সাধারণ একটি সমস্যা যা আমাদের সকলের কম বেশি কোন না কোন সময় দেখা দিয়ে থাকে। জীবনে কোন এক সময় যদি মাথা ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে মাথা যন্ত্রণার যে কতটা কষ্ট দাও তা উপলব্ধি অবশ্যই করতে পেরেছেন। তবে ডাক্তারদের মতে মাথাব্যথা কোন রোগ নয়। এটি একটি উপসর্গ মাত্র। তবে মাথা ব্যথার বিভিন্ন রকম ভেদ রয়েছে যেমন মাইগ্রেন, টেনশন টাইপ মাথাব্যথা, ক্লাস্টার মাথাব্যথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ঘন ঘন মাথা ব্যথা যদি শুরু হয় তাহলে প্রাত্যহিক কর্মজীবনকে বিষাদময় করে তোলেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তীব্র মাথাব্যথা ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায় যার ফলে বড় রকমের অশোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মাইগ্রেন ব্যতীত সাধারণ মাথাব্যথা বিভিন্ন ওষুধের প্রতিক্রিয়া, সর্দি অথবা সাইনোসাইটিস এর প্রভাবে হতে পারে। স্বাভাবিকভাবে সাধারণ মাথা ব্যথা যদি শুরু হয় তাহলে মাথা যন্ত্রণা কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো এপ্লাই করার মাধ্যমে অনেকটাই ব্যথা অবসান করা সম্ভব।
ঘন ঘন মাথা ব্যথার কারণ কি
মাথা ব্যথার কারণ সম্পর্কে জানার আগে আমরা মাথা ব্যথার প্রধান দুটি প্রকার সম্পর্কে জেনে নিব। মাথা ব্যথার প্রকারভেদ বলতে দুটি বিষয় সামনে এসেছে সেগুলো হলো মাইগ্রেন এবং টেনসন। ডাক্তারদের ভাষ্যমতে বেশিরভাগ মাথা ব্যথার অর্থাৎ ৭০% টেনশন টাইপ মাথা ব্যথা বা হেডেক বলে গণ্য হয়ে থাকে। তারা আরো দাবী করেছেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধূমপান, মদ্যপান, মাদকাসক্তি, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব, অতিরিক্ত ঘুমের ঔষধ সেবন, গরম আবহাওয়ায় কাজ করা, শারীরিক এবং মানসিক পরিশ্রম অতিরিক্ত হয়ে গেলে, ক্ষুদার্থ থাকলে এবং মানসিক চাপে থাকলে মাথা ব্যথার উপশম ঘটে।
তাহলে আমরা একটা বিষয় ধারণা করতে পারি যে ঘন ঘন মাথা ব্যথার কারণ হিসেবে উপরে উল্লেখিত বিষয় সর্বপ্রথম দায়ী। সুতরাং মাথাব্যথা যদি কেউ কমাতে চায় তাহলে উপরের বর্ণিত কাজগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে এবং পাশাপাশি মাথা যন্ত্রণা কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো উপলব্ধি করতে হবে যার ফলে খুব সহজেই মাথা ব্যাথা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। মাথাব্যথা যখন শুরু হয় প্রধানত ডান পাশে এবং বাম পাশে দেখা দেয়। অনেক সময় মাথার পেছন সাইডে ও প্রচন্ড পরিমাণে ব্যথা হতে পারে। মাথার পেছনে ব্যথা শুরু হওয়ার পর আস্তে আস্তে ঘাড়ে ব্যথা ছড়াতে থাকে।
ব্যথা যখন তীব্র আকার ধারণ করে তখন রোগী আর স্থির থাকতে পারে না। বিশেষজ্ঞদের মতে মাথার পিছনে ব্যথা সবচেয়ে বড় কারণ হলো টেনশন। কোনরকম টেনশন বা দুশ্চিন্তা যদি করা হয় তাহলে মাথার পিছনে ব্যথা শুরু হয়ে যায়। এমনকি সেই ব্যথা কপাল পর্যন্ত আসে এবং এর স্থায়িত্ব হয় ৩০ মিনিট থেকে ৭ দিন পর্যন্ত। টেনশনের পাশাপাশি অবসাদ, ঘুমের অভাব এমনকি অপর্যাপ্ত পানি পানের জন্য মাথাব্যথা হতে পারে। তাহলে ঘনঘন মাথা ব্যথার কারণ হিসেবে অপর্যাপ্ত পানি পান করাও একটি কারণ হিসেবে দর্শানো যায়।
মাথা ব্যাথা হলে কি করা উচিত
আমরা ইতিমধ্যে মাথাব্যথা কি কারনে হয় সে বিষয়গুলো সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেয়েছি। ঘনঘন মাথা ব্যথার কারণ হিসেবে অবসাদ এবং টেনশন কে দায়ী করা হয়েছে। আবার অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণেও যেহেতু মাথা ব্যথা হয় তাহলে আমাদের অবশ্যই ঘুমের ঘাটতি পূরণ করতে হবে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। সুতরাং অবশ্যই মাথা ব্যথা উপশম করার জন্য একজন ব্যক্তিকে মিনিমাম ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। পাশাপাশি ধূমপান, মদ্যপান, মাদকাসক্তি থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে। দৈনন্দিন জীবনে যদি কোন রকম টেনশন জনিত বিষয় ঘটে থাকে তাহলে নিজেকে শান্ত
রাখার চেষ্টা করতে হবে। এর কর্মজীবনে অনেক সময় বিভিন্ন কাজের চাপে আমাদের মানসিক টেনশন বেড়ে যায়। তাহলে কাজের সময় মানসিক চাপ কমিয়ে মনোযোগ সহকারে কাজ করলে অনেকটাই টেনশন কমে যাবে আর তার সঙ্গে যদি আপনার মাথা ব্যথার উপশম থাকে টেনশনের সাথে সাথে মাথা ব্যথা ও ভ্যানিশ হয়ে যাবে। আবার মাথা যন্ত্রণা কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে সে অনুযায়ী যদি সবকিছু মেইনটেইন করা যায় তাহলেও মাথাব্যথা থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। অনেক সময় মাথা মেসাজ করলেও মাথা ব্যথা থেকে উপশম পাওয়া সম্ভব।
সেটি সাময়িক আপনাকে আরাম দিতে পারে কিন্তু চিরতরে মুক্তি দিবে না। যদি মাথার ডানে অথবা বামে ব্যথা শুরু হয় তাহলে নারিকেল তেল হাতে নিয়ে আলতো করে মাথা ম্যাসাজ করলেও অনেকটা আরাম বোধ হয়। যেহেতু ডাক্তারদের মতে অপর্যাপ্ত পানি পানির অভাবেও মাথা ব্যথা হতে পারে সেজন্য প্রতিদিন মিনিমাম ৪ লিটার পানি পান করতে হবে। পানি পান শুধু মাথা ব্যথার জন্য নয় শরীরের সকল রোগ বালাই দূর করার জন্য বেশি বেশি পানি পান করা সকলেরই উচিত। আসুন তাহলে এবার মাথা যন্ত্রণা কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো কি কি হতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা করা যাক।
মাথা যন্ত্রণা কমানোর ঘরোয়া উপায়
আমরা যেহেতু ইতিমধ্যে ঘন ঘন মাথা ব্যথার কারণ কি এবং সে সময় কি করা উচিত সে সম্পর্কে জানতে পেরেছি। মাথা যন্ত্রণা কমানোর ক্ষেত্রে ঘরোয়া উপায় গুলো কি কি হতে পারে সে বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের জানা উচিত। যেহেতু মাথাব্যথা বা মাথা যন্ত্রণা একটি স্বাভাবিক সমস্যা এটি বড় ধরনের কোন রোগ নয়। ভাই ঘরোয়া পদ্ধতিতে যদি এর উপশম হয় তাহলে খারাপ কি। কেননা ওষুধ সেবনের পরিবর্তে যদি আমরা এই সমস্যা থেকে পরিত্রান পাই তাহলে কোন রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই উক্ত রোগ থেকে মুক্তি লাভ করছি এটা অনেকটাই খুশির সংবাদ।
আমরা আরো কতগুলো বিষয় সম্পর্কে অবগত হতে পেরেছি সেগুলো হল অপর্যাপ্ত ঘুম, সময় মতো খাবার না খাওয়া, পানি কম খাওয়া, দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপের কারণে মাথাব্যথা তৈরি হয়। চলুন তাহলে এবার পর্যায়ক্রমে মাথা যন্ত্রণা কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো কি কি হতে পারে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক।
স্বাস্থ্য সম্মত খাবার এবং পর্যাপ্ত ঘুম
আমাদের সকল রোগের কারণ হলো অস্বাস্থ্য খাবার গ্রহণ এবং বিশৃঙ্খল জীবন যাপন। অনেকটা শুনতে অবাক লাগতে পারে যে খাবারের সাথে মাথা ব্যথার কি সম্পর্ক। আপনি যদি বাহিরের অস্বাস্থ্যকর খাবার খান তাহলে আপনার সর্বপ্রথম গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি হবে। ডাক্তারদের মতে গ্যাসের কারণেও মাথা ব্যথা হতে পারে। অতিরিক্ত চা পান এর কারণে ঘুমের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে। আর অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে মাথা ব্যাথা শুরু হবে এটাই স্বাভাবিক বিষয়। সুতরাং আপনার যদি চায়ের নেশা থাকে তাহলে সেটা কমিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি মদ্যপান, ধূমপান নেশা জাতীয় দ্রব্য সম্পূর্ণ পরিহার করে চলতে হবে।
রাত আটটা থেকে নয়টা এর মধ্যে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ঘুমাতে যেতে হবে। তারপর খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে এক ঘন্টা এক্সারসাইজ করে যদি কেউ তার দিন শুরু করে তাহলে সারাদিন যেমন স্বাচ্ছন্দে কাটবে ঠিক তেমনি রাতে খুব সুন্দর ঘুম হবে। তাহলে সঠিক খাদ্যাভাস পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুমানোর ফলে স্বাভাবিকভাবে কোনরকম ওষুধপত্র ছাড়াই মাথাব্যথা দূর করা সম্ভব।
বিশ্রাম নেওয়া
মাথা যন্ত্রণা কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলোর মধ্যে আরও একটি অন্যতম বিষয় হলো সঠিক সময়ে বিশ্রাম গ্রহণ করা। আপনি যদি প্রচন্ড তাপমাত্রাতে গরমের ভিতরে কাজ করেন তাহলে পরিশ্রমের পাশাপাশি অবশ্যই সঠিক সময়ে বিশ্রাম গ্রহণ করতে হবে। অধিক পরিশ্রম করার পর হঠাৎ করে যখন আপনার মাথা ব্যথা শুরু হয় কখন আপনি প্রশ্ন করেন ঘন ঘন মাথা ব্যাথার কারণ কি। কিন্তু প্রশ্ন এর উত্তর আপনার কাছেই। পরিশ্রম করার পাশাপাশি আপনাকে অবশ্যই সময়মতো খাদ্য গ্রহণ করতে হবে এবং বিশ্রাম নিতে হবে।
আরোও পড়ুনঃ মাথা ব্যাথা ঔষধের নাম-মাথা ব্যাথার মলমের নাম
আবার কোন সময় যদি হঠাৎ করেই মাথাব্যথা দেখা দেয় তাহলে প্রথমে ঠান্ডা কোন জায়গায় বসে পড়ুন দরকার হলে মাথায় পানি ঢালুন এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম গ্রহণ করুন। দেখবেন কিছুক্ষণ পর অনেকটা স্বস্তি অনুভব করছেন। কিন্তু কারো যদি মাইগ্রেনজনিত সমস্যা হয় তাহলে খুব দ্রুত এর সমাধান পাওয়া যায় না। তবে সেক্ষেত্র ও বিশ্রাম গ্রহণ করা অতীব ও জরুরি একটি বিষয়। দুপুরে খাওয়া দাওয়া করার পর অবশ্যই এক ঘন্টা বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। শুধুমাত্র মাথা ব্যাথা উপশমণ করার জন্য নয় ক্লান্তি দূর করার জন্য বিভিন্ন সময় ডাক্তারগণ বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
এমনকি হাদিসে বর্ণিত রয়েছে আমাদের রাসূল (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে আপনারা খাওয়ার পর দুপুরে বিশ্রাম গ্রহণ করুন। আশা করি আপনারা দুপুরে খাওয়ার পর বা এমনিতেও বিশ্রাম নেওয়ার তাৎপর্য সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন।
পর্যাপ্ত পানি পান
মাথা যন্ত্রণা কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলোর মধ্যে আরও একটি বিষয় ইতিমধ্যে সামনে এসেছিল সেটি হল পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করা। ঘনঘন মাথা ব্যথার কারণ কি এ বিষয়টির ক্ষেত্রে বলাই যায় যে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করা। সকলে যেহেতু জানি পৃথিবীর কোন প্রাণী পানি ব্যতীত বাঁচতে পারেনা। ডাক্তাররা সবসময় মানব শরীরের বিভিন্ন রোগ বালাই দূরীকরণে বেশি বেশি পানি পানের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ডিহাইড্রেশন বা পানি শূন্যতা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে অবশ্যই একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক ৩ থেকে ৪ লিটার পানি পান করা উচিত।
তবে বিভিন্ন কর্মব্যস্থার কারণে আমরা নিয়মিত পানি পান করতে ভুলে যাই। তাই লক্ষ্য রাখতে হবে দিনে আমরা কত লিটার পানি পান করছি সে বিষয়টি। আবার কারো যদি হঠাৎ করে মাথা ব্যথা শুরু হয় তাহলে দুই গ্লাস ঠান্ডা পানি পান করে যদি বিশ্রাম গ্রহণ করা হয় তাহলে অবশ্যই সাময়িক ভাবে উপশম সম্ভব।
কোল্ড কমপ্রেস পদ্ধতি
হঠাৎ মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গেলে আমরা ভীষণ কষ্টের মধ্যে পড়ে যাই। তখন আর এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য একটি পদ্ধতি রয়েছে সেটিকে বলা হয় কোল্ড কম্প্রেস পদ্ধতি। এ পদ্ধতিটি এপ্লাই করার জন্য আপনার কপাল বা মাথার সামনে ঠান্ডা জাতীয় কিছু চেপে ধরে রাখুন। ঠান্ডা জাতীয় জিনিস বলতে বরফ টুকরো হাতে নিয়ে আপনার কপালে চেপে ধরে রাখুন। কিছুক্ষণ পর দেখবেন অনেকটাই ব্যথা উপশম হয়ে গেছে। আবার ঠান্ডা পানি দিয়ে মাথা ধৌতো করতে পারেন।
মাথা ধোয়ার পরে গামছা অথবা তোয়ালা দিয়ে মাথা মুছে নিন তারপর ঘন্টাখানেক বিশ্রাম গ্রহণ করুন। দেখবেন অটোমেটিক মাথাব্যথা গায়েব হয়ে গেছে। মাথা যন্ত্রণা কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলোর মধ্যে কোল কমপ্রেস পদ্ধতি একটি অন্যতম পদ্ধতি হিসেবে গণ্য করা হয়।
হিট থেরাপি পদ্ধতি
হিট থেরাপি পদ্ধতি হল কোল্ড কম্প্রেস পদ্ধতির ঠিক উল্টোটা। এখানে ঠান্ডা এর পরিবর্তে হালকা কুসুম গরম পানিতে পরিষ্কার কাপড় ভিজিয়ে তার চিপে চিপে কপালে এবং চোখের উপরে ধরে রাখতে হবে। আবার কুসুম গরম পানিতে গোসল করে নিলেও মাথা ব্যথা কমতে পারে। যেহেতু মাথাব্যথা সাধারণত টেনশন বা অবসাদের কারণে হয়ে থাকে তাই ঠান্ডা পানি অথবা হালকা কুসুম গরম পানিতে গোসল করলে অবশ্যই মাথা ব্যাথা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
আ্যরোমাথেরাপি
প্রধানত ল্যাভেন্ডার, পেপার মিন্ট, ইউক্যালিপটাস ইত্যাদি মত তেল ব্যবহার করলে মাথা ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যদি সম্ভব হয় তাহলে উক্ত তেলগুলো আপনার মাথাতে এপ্লাই করতে পারেন। গুলো বাজারের দোকানগুলোতে খুব সহজে হাতের নাগালে পাওয়া সম্ভব। তেল হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে করে মাথায় ম্যাসাজ করে লাগাতে হবে আর এই পদ্ধতিটি কে বলা হয় অ্যারোমাথেরাপি। মাথা যন্ত্রণা কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলোর মধ্যে উক্ত পদ্ধতিটি অনেকটাই কার্যকর।
আদা চা
যদিও আমরা উপরে জেনেছি যে অতিরিক্ত চা পান করলে ঘুমের ক্ষতি হয় আর অপদার্থ ঘুমের কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। কিন্তু আপনার যদি হঠাৎ করে মাথা ব্যথা শুরু হয় তাহলে আদা চা পান করার মাধ্যমেও পরিত্রান পাওয়া সম্ভব। চা পান করার পর আপনার শরীর অনেকটা উষ্ণ হয়ে ওঠে। যার ফলে মাথা ব্যথা খুব সহজেই দূর হয়ে যায়। তাই ঘুম থেকে উঠে যদি দেখেন আপনার প্রচন্ড মাথা ব্যথা হচ্ছে তাহলে এক কাপ চায়ে আদার রস অথবা আদা দিয়ে চা খেতে পারেন। তবে আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে এরকম ভাবে যদি প্রতিনিয়ত আপনার মাথা ব্যথা জনিত সমস্যা হচ্ছে তাহলে অবশ্যই
একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী যদি চিকিৎসা গ্রহণ করেন তাহলে অবশ্যই আপনি উক্ত সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ করতে পারবেন। তবে ঘরোয়া উপায় গুলো মূলত সাময়িক সুস্থতা আপনাকে দেবে। এমনকি যদি আপনি এভাবে সকল পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করতে থাকেন তাহলে এক সময় দেখবেন মাথা ব্যথা থেকে আপনি চির মুক্তি লাভ করেছেন।
মাথা ব্যথার কারণ ও প্রতিকার
আপনার ইতিমধ্যে অবগত হতে পেরেছেন যে মাথা ব্যথা কোন কোন বিষয়ের কারণে হয়ে থাকে এবং ঘন ঘন মাথা ব্যথার কারণ কি সেই সম্পর্কে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রধান যে সমস্যার কারণে মাথাব্যথা হতে পারে সেটি হল খাদ্যাভ্যাস এবং অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে। বিভিন্ন টেনশন সেটা হতে পারে মানসিক অথবা কর্মজীবনের টেনশনের কারণে রাতে পর্যাপ্ত ঘুম হয় না। যার ফলস্বরূপ সকালে উঠে তীব্র মাথা ব্যথায় ভুগতে হয়। আর এই মাথাটার কারণে কর্ম ক্ষেত্রে গিয়েও কাজে মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। আরো যে কারণগুলো আমরা জানতে পেরেছি সেগুলো হল ধূমপান,
মদ্যপান এবং নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করা। আবার অনেকে দিনে কাপের পর কাপ চা পান করে। যেহেতু চায়ে প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেইন পাওয়া যায় আর ক্যাফেইন মূলত ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে সাহায্য করে। সুতরাং মাথা যন্ত্রণা কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো এপ্লাই করার পাশাপাশি চা পানের পরিমাণ কমাতে হবে। সুতরা ঘনঘন মাথা ব্যথার কারণ কি এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু নিয়ম নীতি পরিবর্তন করা অতি আবশ্যক। মাথা ব্যথার কারণ যেহেতু দর্শানো গিয়েছে সেহেতু এর প্রতিকার বলতে ঠিক সে বিষয়গুলোকে এড়িয়ে চলা বা পরিহার করাই প্রতিকার
হিসেবে গণ্য হবে। মাথাব্যথা কমানোর জন্য সর্বপ্রথম খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। তেল জাতীয় খাবার গ্রহণ করা যাবে না পাশাপাশি বাহিরের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া যাবে না। বেশি বেশি শাকসবজি এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, নেশাজাতীয় কোন দ্রব্য গ্রহণ করা যাবে না। নিজেকে সবসময় টেনশন মুক্ত রাখতে হবে, কর্মজীবন বা পারিবারিক কোন বিষয় নিয়ে যদি চিন্তিত হয়ে থাকেন তাহলে নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করুন, শান্ত থাকুন পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিশ্রাম গ্রহণ করুন তাহলে দেখবেন আপনি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
মাথা ব্যাথা কোন রোগের লক্ষণ
আজকের এই আর্টিকেলের শুরুর অংশে আমরা মাথা ব্যথা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করার সময় যে বিষয়টি সামনে এসেছে সেটি হল মাথা ব্যথা কোন রোগ নয়। এটি সকলেরই একটি স্বাভাবিক সমস্যা। তবে হৃদরোগ উচ্চ রক্তচাপ এবং উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা এর কারণে রোগীর হঠাৎ করে তীব্র মাথাব্যথা শুরু হতে পারে। ডাক্তারদের মতে মাথাব্যথা যদিও কোন রোগ নয় কিন্তু অন্য বড় ধরনের রোগের উপসম মাত্র। তারা আরো বলেছেন তীব্র মাথাব্যথা এর কারণে স্ট্রোক বা সাব আ্যরাকনয়েড হেমারেজ হতে পারে। নিচে মাথাব্যথা কোন রোগের খারাপ লক্ষণ গুলো চিহ্নিত করে সে বিষয়গুলো পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হলো।
- সাধারণভাবে মাথাব্যথা যদি ৫০ বছর বয়সে বা তার বেশিতে গিয়ে দেখা দেয় তাহলে খুব খারাপ একটি লক্ষণ।
- সময়ের সঙ্গে যদি মাথাব্যথা এর পরিমাণ বাড়তে থাকে তাহলে খারাপ কোন রোগের ইঙ্গিত করে। ডাক্তারদের ভাষ্যমতে মাথাব্যথা এর পরিমাণ যদি তীব্র আকার ধারণ করে এবং সেটা দিনে দিনে বাড়তে থাকে তাহলে ব্রেন টিউমার পর্যন্ত রোগ গড়াতে পারে।
- হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা রক্তনালি সমস্যা আছে এ ধরনের রোগীর যদি হঠাৎ করে মাথা ব্যথা শুরু হয় তাহলে স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- তীব্র মাথাব্যথা সঙ্গে জ্বর, গায়ে ফুসকুড়ি দেখা দিলে পাশাপাশি প্রচন্ড দুর্বলতা যদি অনুভব করে তাহলেও রোগীকে দ্রুত ডাক্তারের নিকট নিয়ে যাওয়া উচিত।
অনেক সময় মাথাব্যথা এর আকার যদি তীব্র ধারণ করে তাহলে কথাবার্তায় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় এবং রোগী হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে পড়ে সেক্ষেত্রেও দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে নিতে হবে। উপরে বর্ণিত লক্ষণগুলো যদি প্রতিফলিত হয় তাহলে মাথা যন্ত্রণা কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো খুব একটা কাজে দিবে না সে ক্ষেত্রে অবশ্যই রোগীকে ভালো একটি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
মাথা ব্যথা কমানোর ১০টি ঔষধের নাম
আপনাদের সুবিধার্থে আমরা একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মাথা ব্যথার কিছু ঔষধের নাম দিয়ে দিব বলেছিলাম। ওষুধগুলো যদিও আমরা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এখানে ইনক্লুড করছি কিন্তু আমাদের পরামর্শ হবে একজন ভালো অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত ঔষধ গুলো গ্রহণ না করা। তবে একদম ইমারজেন্সি টাইমে আপনি ওষুধগুলো গ্রহণ করতে পারেন। ওষুধ গুলোর নাম তুলে ধরা হলো।
ঘন ঘন মাথা ব্যথার কারণ কি এ বিষয়টি সম্পর্কে যেহেতু আমরা খুব ভালোভাবে ধারণা নিতে পেরেছি তাহলে মাথা যন্ত্রণা কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো এপ্লাই করার পাশাপাশি উপরে বর্ণিত ঔষধ গুলো সেবন করতে পারি। আশা করা যায় উপরে বর্ণিত ঔষধ সেবনের মাধ্যমে আপনি মাথা ব্যথা থেকে অবশ্যই উপশম লাভ করবেন। পাশাপাশি উপরে বর্ণিত ঘরোয়া উপায় গুলো অবশ্যই আপনার তাৎক্ষণিক মাথাব্যথা অবসনে কাজে আসবে।
লেখকের শেষকথা
প্রিয় পাঠক বৃন্দ আশা করি আপনারা আজকের আলোচ্য বিষয় মাথা যন্ত্রণা কমানোর ঘরোয়া উপায় এবং ঘন ঘন মাথা ব্যথার কারণ কি এই সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা লাভ করতে পেরেছেন। মাথা যন্ত্রণা সংক্রান্ত সকল বিষয়াদি জানার পাশাপাশি যদি আপনারা সঠিকভাবে পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করেন তাহলে অবশ্যই মাথা ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আপনাদের জ্ঞাতার্থে আরও একটি বিষয় আবারও বলছি সেটি হল মাথা যন্ত্রণা কমানোর ঘরোয়া উপায় এপ্লাই করার পাশাপাশি যদি আপনি মনে করেন মাথা ব্যথা থেকে আপনি সেরকম কোন উন্নতি লক্ষ্য করছেন না তাহলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ
ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। ইমারজেন্সি সময়ে যদি আপনার ঔষধ সেবনের প্রয়োজন হয় তাহলে উপরে বর্ণিত ১০ টি ঔষধের মধ্যে যেকোনো একটি ঔষধ গ্রহণ করবেন। আপনাদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে করার জন্য। মাথা যন্ত্রণা সংক্রান্ত যদি আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। এরকম তথ্যবহুল আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন। আপনার পরিচিত আত্মীয়দের উপকারের লক্ষ্যে আজকের এই পোষ্টটি শেয়ার করতে পারেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url