কিডনি পরিষ্কার করে এই ৯ খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
কিডনি পরিষ্কার করে এই ৯ খাবার গুলো সম্পর্কে বর্তমানে ধারণা রাখাটা এতটাই জরুরী হয়ে পড়েছে যে সেটা অনেকটাই বলাবাহুল্য। কেননা বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা ব্যাপক পরিমাণে কিডনি রোগীর অধিকতা লক্ষ্য করছি। পূর্বে কিডনি রোগীর পরিমাণ কম থাকলেও সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে কিডনি রোগীর পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডাক্তারদের মতে কিডনি রোগের মূল কারণ হিসেবে খাদ্য এবং খাদ্যাভ্যাসকে দায়ী করা হয়েছে। তাই নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজন একটি সঠিক খাদ্য তালিকা।
তাহলে চলুন আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কিডনি পরিষ্কার করে এই ৯ খাবার সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক। শুধুমাত্র আলোচ্য বিষয়ক নয়, পাশাপাশি আরো যে বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যাবে সেগুলো হল কিডনি রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানা এবং লিভার ও কিডনি ভালো রাখার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জ্ঞান অর্জন করা। আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়, কিডনি রোগী কি কি ফল খেতে পারবে সে সম্পর্কে জানতে এবং কিডনি পরিষ্কার করে এই ৯ খাবার সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানার জন্য অবশ্যই আর্টিকেলের শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্র
ভূমিকা
“কিডনি” বা “বৃক্ক” যেটাই বলি না কেন এটি যে শরীরের একটি অন্যতম অঙ্গ সে বিষয়ে আমরা সকলেরই কমবেশি ধারণা রয়েছে। প্রাণীদেহের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হওয়ার পাশাপাশি দেহের রেচনতন্ত্রের একটি প্রধান অংশ হিসেবে “কিডনি” কাজ করে থাকে। মূলত কিডনির প্রধান কাজ রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ যেমন ইউরিয়া পৃথক করা পাশাপাশি মূত্র উৎপাদন করা। গবেষণামতে মানবদেহের সমুদয় রক্ত দিনে প্রায় ৪০ বার বৃক্কের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। এই কাজ বাদেও দেহে পানি ও তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ বা ইলেক্ট্রোলাইট যেমন সোডিয়াম,
পটাশিয়াম ইত্যাদির ভারসাম্য রক্ষা করাতে কিডনির অন্যতম ভূমিকায় রয়েছে। আবার দেহের অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে হরমোন নিঃসরণ করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করাও কিডনির আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাই দেহের এতগুলো কাজ যেহেতু কিডনি দ্বারা পরিচালিত হয় তাই কিডনির যত্ন নেওয়া বা নিজে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি কিডনি পরিষ্কার করে এই ৯ খাবার এবং কিডনি রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার মাধ্যমে উক্ত খাবারগুলো গ্রহণ করে কিডনি ভালো রাখা অতীব জরুরি একটি বিষয়।
কিডনি রোগীর খাবার তালিকা
আমরা ইতিমধ্যে একটি বিষয় সম্পর্কে অবগত হয়েছি সেটি হলো পূর্বের তুলনায় বর্তমানে কিডনি রোগে ভুগছেন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতেই আছে। গবেষণায় আরো একটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে সেটি হল ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ কিডনির সমস্যার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখিত। ডাক্তাররা সবসময় কিডনি রোগীদের সতর্ক থাকার জন্য আহবান করে থাকেন। কিডনি রোগে মূলত লবণ ও পানির ভারসাম্য বিনষ্ট হয় রক্তে এসিড ও ক্রিয়েটিনিন এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে। খাবারের এসব পরিবর্তন সাধারনত একে অপরের সঙ্গে সম্পূরক।
কিডনি রোগ থেকে মুক্ত পাওয়ার জন্য সরাসরি ঔষধ সেবনের মাধ্যমে কোনভাবেই রোগ মুক্তি সম্ভব নয়। তাই ওষুধ হিসেবে কিডনি রোগীর খাবার তালিকা অনুযায়ী প্রতিনিয়ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। এজন্য কোন খাবার খাওয়া উচিত এবং কোনটি পরিহার করা উচিত এ সম্পর্কেও জ্ঞান রাখা অনেক জরুরী। ডাক্তারগণ কিডনি রোগীদের টক জাতীয় কিছু ফল যেমন কমলা, তেতুল এগুলো খেতে নিষেধ করেন। আবার লেবু, মাল্টা, আমলকি যতটা পারা যায় কম খাওয়া উচিত। ফলের মধ্যে আপেল, পেয়ারা এগুলো খাওয়া যাবে।
আরো পড়ুনঃ ওজন কমানোর জন্য খাবার তালিকা অনুসরণ করুন
আমরা খাবার তালিকা সম্পর্কে জানবো পাশাপাশি কোন কোন খাবারগুলো খাওয়া যাবেনা সে সম্পর্কেও জানার চেষ্টা করব। কিডনি রোগীর খাবার সম্পর্কে জানার জন্য অবশ্যই কোন খাবারগুলো খাওয়ার মাধ্যমে কিডনি পরিষ্কার হয় সে সম্পর্কে জানা উচিত। আসুন তাহলে এবার কিডনি পরিষ্কার করে এই ৯ খাবার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
কিডনি পরিষ্কার করে এই ৯ খাবার
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা যেটাই খাই না কেন সেটাই আমাদের স্বাস্থ্যের মধ্যে প্রতিফলিত হতে থাকে। অর্থাৎ কোন খাবার গ্রহণের মাধ্যমে যদি স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে সেটিও আমাদের বিশেষ অঙ্গ গুলোকে অকেজো করে তোলে। কিডনি যেহেতু আমাদের শরীরের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ তাই কোন খাবারগুলো খাওয়ার মাধ্যমে কিডনিকে সুরক্ষিত রাখা যায় সে সম্পর্কে জানা অনেক জরুরী। অনেকে আমরা শুধুমাত্র হার্ট বা হৃদপিন্ডের জন্য শংকিত থাকি। মনে করি তেলজাতীয় খাবার পরিহার করে চললেই আমাদের হৃদপিণ্ড ভালো থাকবে তাহলেই আমরা সুস্থ থাকব।
এখানে বিষয়টি একদমই আলাদা আমাদের শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং এ সকল খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের অঙ্গহানি হতে পারে সেই খাবারগুলো চিহ্নিত করতে হবে এবং সেগুলো পরিহার করে চলতে হবে। আর কোন খাবারগুলো গ্রহণ করলে আমাদের অঙ্গ সঠিকভাবে পরিচালনা হতে সক্ষম হবে সে সম্পর্কেও ধারণা লাভ করতে হবে। যেহেতু আমাদের আর্টিকেলের আজকের মূল বিষয়বস্তু কিডনি সম্পর্কে তাই আমরা কিডনি ভালো রাখার জন্য যে সকল খাবার প্রয়োজন সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানবো।
কিডনি ক্ষতিকর টক্সিন এবং দেহের বর্জ্য পদার্থ মূত্রনালীর মাধ্যমে প্রস্রাবের মাধ্যমে বাহিরে বের করে দেয়। দেহের ইলেকট্রোলাইসিস এবং অন্যান্য তরলের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য কিডনির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কারো শরীর থেকে যদি কিডনি ড্যামেজ বা অপসারণ করতে হয় তাহলে সেটা কতটা যে অর্থ এবং কষ্টের বিষয় যে এই রোগের মধ্যে পড়েছে একমাত্র সেই জানে। তাই চলুন কিডনি রোগীর খাবার তালিকা এবং কিডনি পরিষ্কার করে এই ৯ খাবার সম্পর্কে পর্যায়ক্রমে জেনে নেওয়া যাক।
নিয়মিত পানি পান
আমরা আরো একটি বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পেরেছি সেটি হল কিডনি আমাদের দেহ থেকে বর্জ্য পদার্থ প্রস্রাবের মাধ্যমে নিঃসরণ করে। তাহলে আমরা যদি দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করি তাহলে আমাদের দেহ থেকে বিপুল পরিমাণে বর্জ্য পদার্থ নিঃসরণ হবে। পাশাপাশি কিডনি খুব ভালো একটি অবস্থানে অবস্থান করবে। ডাক্তাররা কিডনি পরিষ্কার রাখার জন্য এবং ডিটক্সিফাই করার ক্ষেত্রে সকলকে প্রচুর পরিমাণে পানিপানের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। শরীরকে হাইডেটে ট রাখার জন্য এবং টক্সিন ও বর্জ্য পদার্থ বের করার জন্য একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির দিনে ৩ থেকে ৪ লিটার পানি পান করা অনেক জরুরী।
শাক সবজি এবং ফাইবার যুক্ত খাবার
শুধুমাত্র কিডনি রোগীর ক্ষেত্রে নয়, আমরা যারা ইতিমধ্যে সুস্থ জীবন যাপন করছি সকলেরই মাছ-মাংস কম করে খাওয়ার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসবজি খেতে হবে। শাক-সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনির যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো যেমন কিডনি এবং হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষিত রাখে। আমাদের সিজনাল অনেক সবুজ শাকসবজি উৎপাদিত হয় যেমন কচুশাক, লালশাক, পুঁইশাক, ডাঁটাশাক, কলমিশাক, হেলেঞ্চাশাক, ঢেঁকিশাক, পাটশাক ইত্যাদি ভাবে উল্লেখযোগ্য।
আবার সবুজ শাকসবজি খাওয়ার পাশাপাশি ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার কোনগুলো সে সম্পর্কেও জানা উচিত। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারগুলো খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের যেমন হজম প্রক্রিয়া ভালোভাবে সংঘটিত হবে পাশাপাশি কিডনিতে কোনরকম চাপ পড়বে না যার ফলে কিডনি সুরক্ষিত থাকবে। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে সিজনাল ফল এবং সবজির মধ্যে রয়েছে পাটশাক, ঢেঁড়স, পুঁইশাক, লাউ, মিষ্টি কুমড়া বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
সামুদ্রিক মাছ
কিডনি পরিষ্কার করে এই ৯ খাবার গুলোর মধ্যে অন্যতম আরেকটি খাবার হল সামুদ্রিক মাছ। সামুদ্রিক মাছ শুধুমাত্র কিডনি রোগের জন্য নয় আমাদের সকলেরই খনিজ লবণ এবং অন্যান্য ভিটামিন ঘাটতি পূরণ করার জন্য নিয়মিত খাওয়া প্রয়োজন। ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশন একটি গবেষণায় ভালোভাবে সকলকে জানানোর চেষ্টা করেছে সেটি হল Omega 3 চর্বি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, রক্তের চর্বি মাত্রা কমাতে এবং রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে নিয়মিত সামুদ্রিক মাছ খাওয়া অনেক জরুরী। যেহেতু উচ্চ রক্তচাপ কিডনি রোগের ঝুঁকির কারণ হিসেবে উল্লেখযোগ্য।
আমাদের সবসময় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অবশ্যই কিডনি রোগীর খাবার তালিকাতে অবশ্যই সামুদ্রিক মাছ রাখতে হবে। সামুদ্রিক মাছের ভেতরে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়। তাই আমাদের প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে কিডনিকে সুরক্ষিত রাখার জন্য এই খাবারটির তুলনা নেই।
ক্র্যান বেরি
ক্র্যানবেরিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইটোনিউট্রিয়েন্স নামক এ-টাইপ প্রঅ্যান্থোসায়ানিডিনস, আ্যন্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের প্রস্রাবে ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা কমিয়ে মূত্রনালী এবং কিডনি সংক্রমণ জাতীয় সকল রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। এছাড়াও এই ফলটিতে পটাশিয়াম, ফসফরাস এবং সোডিয়াম মাত্রা কম থাকার ফলে কিডনিতে খুব একটা চাপ পড়বে না তাই এই ফল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সবসময় কিডনি রোগীদের ক্র্যানবেরি এবং ক্র্যানবেরির জুস
খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন এর কারণ হলো মূত্রনালী সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং মুত্রাশায় ও কিডনিতে যেন কোনরকম চাপ সৃষ্টি না হয় তাই নিয়মিত ক্র্যানবেরির জুস খাওয়া প্রয়োজন। তাই কিডনি রোগীর খাবার তালিকাতে এবং কিডনি পরিষ্কার করে এই ৯ খাবার এরমধ্যে ক্র্যানবেরি এবং ক্র্যানবেরির জুস রাখতে হবে।
মাশরুম
মাশরুম আমাদের অতি পরিচিত একটি খাদ্য। যা আমরা মাশরুমের চপ বা সবজি হিসেবে খেয়ে থাকি। ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য মাশরুমের প্রচুর তাৎপর্য রয়েছে। আর যেহেতু আমাদের কিডনি রোগীর জন্য উচ্চ রক্তচাপ একটি খুবই খারাপ বিষয় তাই উচ্চ রক্তচাপ কমাতে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মাশরুম রাখতে হবে। এছাড়া মাশরুম একটি সুস্বাদু খাদ্য হওয়ার জন্য আপনি এটিকে উদ্ভিদভিত্তিক মাংস হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। ভিটামিন বি, তামা, ম্যাঙ্গানিজ এবং সিলোনিয়ামের একটি দুর্দান্ত কম্বিনেশন রয়েছে মাশরুমে। তাই খাদ্য তালিকা তে অবশ্যই ভিটামিনের ভান্ডার হিসেবে খ্যাত মাশরুকে রাখা অনেক জরুরী।
আদা
আপনি কে কার্যকর করার ক্ষেত্রে এবং সুরক্ষা প্রদান করার ক্ষেত্রে প্রাচীনকাল থেকেই আদা বিশেষভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। আদা রক্ত চলাচল করার ক্ষেত্রে সহায়তার প্রদান থেকে শুরু করে কিডনিকে সচল এবং সুরক্ষা প্রদান করার ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তাই আমাদের কিডনির কার্যকমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতিদিন নিয়মিত কাঁচা আদা, আদার গুড়া, কিংবা আদার রস খাওয়া যেতে পারে। চায়ের সঙ্গে আদার রস মিশিয়ে আমরা প্রতিনিত খেতে পারি। আর এভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে কিডনির বিভিন্ন রোগ থেকে আমরা পরিত্রান পেতে পারি।
রসুন
কিডনি পরিষ্কার করে এই ৯ খাবার এর তালিকাতে রসুনকে স্থান দেওয়ার অন্যতম কারণ হলো, এমন একটি খাবার যা আমরা সবজিতে ব্যবহার করি যার ফলে সবজির স্বাদ পরিবর্তন হয়। এছাড়াও রসুনের রয়েছে অনেক ঔষধি গুন। রসুন ইনফিল্মেটরি এবং কোলেস্টেরল কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকার ফলে দেহের প্রদাহ দূর করা থেকে শুরু করে বর্জ্য পদার্থ অপসারণ করার জন্য আমাদের নিয়মিত রসুন খাওয়া প্রয়োজন।
সবজিতে রসুন খাওয়ার পাশাপাশি আমরা ভাতের সঙ্গে সালাদ হিসেবে সরাসরি রসুন খেতে পারি এবং খালি পেটে সকালে রসুন খাওয়া কিডনি এবং হৃদপিন্ডের জন্য খুবই উপকারী একটি খাবার।
হলুদ
অ্যালার্জি থেকে ত্বকে রক্ষা করার জন্য আমরা অনেক সময় কাঁচা হলুদ বেটে শরীরে লাগাই। আমাদের অ্যালার্জি থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে। অ্যালার্জি এর পাশাপাশি কিডনি রক্ষা করার জন্য আমরা হলুদ সবজিতে খাওয়ার পাশাপাশি কাঁচা হলুদ ও খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা আবশ্যক। হলুদ খাওয়ার সঙ্গে কিডনি পরিষ্কার হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে এবং কারকুমিনে আন্টিইনফ্লামেটরি উপাদান কিডনি রোগ ও পাথর জমতে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
অলিভ অয়েল
আমরা অনেকেই তরকারিতে তেল কম করে ব্যবহার করি কেননা হৃদপিণ্ড এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গ ভালো রাখার জন্য সবসময় কম তেলে রান্না করার কথা ডাক্তাররা সবসময় বলে থাকেন। আর এজন্য তরকারিতে আমরা অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারি। একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে প্রতিদিনের রান্নায় অন্যান্য তেলের চেয়ে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা বেশি স্বাস্থ্যকর। অলিভয়েলে অলিক অ্যাসিড এবং আন্টিইনফ্লামেটরি ফ্যাটি এসিড রয়েছে যা কিডনি সুস্থ রাখার পাশাপাশি ক্যান্সার পর্যন্ত প্রতিরোধ করে থাকে।
আর এজন্য কিডনি এবং শরীরে অন্যান্য অঙ্গ ভালো রাখার ক্ষেত্রে উপরে বর্ণিত কিডনি পরিষ্কার করে এই ৯ খাবার গুলো অবশ্যই আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। কিডনি রোগ থেকে মুক্তি লাভের জন্য ঔষধ সেবনের দিকে ঝুঁকি না দিয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে কিডনি রোগীর খাবার তালিকা গুলো ভালোভাবে ফলোআপ করার মাধ্যমে অবশ্যই কিডনি রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়
আমরা এতক্ষণ পর্যন্ত কিডনি ভালো রাখার ক্ষেত্রে কোন খাবারগুলো খাওয়া প্রয়োজন সে সম্পর্কে জানলাম আসন তাহলে এবার জেনে নিব কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়গুলো কি কি হতে পারে। ডাক্তারের কাছে না গিয়ে আমরা ঘরে বসে কোন কোন উপায়ে বুঝতে পারি যে এই মুহূর্তে আমাদের কিডনি ভালো আছে। কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার জন্য আমাদের প্রথম যে বিষয় সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে সেটি হল প্রসাব করার সময় জ্বালাপোড়া হচ্ছে কিনা, ঘন ঘন প্রস্রাব এবং প্রস্রাব লাল হওয়া।
পাশাপাশি আরো যে বিষয়গুলো তারা বুঝতে পারি আমাদের কিডনিতে সমস্যা হয়েছে সেগুলো হল প্রস্রাবে প্রচুর পরিমাণে দুর্গন্ধ কোমরে দুইপাশে এবং তলপেটে প্রচুর পরিমাণে ব্যথা শরীর এর বিভিন্ন অঙ্গ বিশেষ করে মুখমন্ডল ফুলে যাওয়া কিডনি রোগের সংকেত হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তবে কোমরে বিশেষভাবে পেছনের অংশে যদি হঠাৎ করে ব্যথা হয় সেটা কিডনি রোগ ব্যতীত অন্য কোন সমস্যার জন্য হতে পারে। ভাই ঘাবড়ে না গিয়ে আপনি অন্যান্য লক্ষণগুলো ভালোভাবে পর্যালোচনা করুন।
যদি সবগুলো বিষয় আপনার শরীরের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে তাহলে অবশ্যই আপনাকে কিডনি পরিষ্কার করে এই ৯ খাবারগুলো নিয়মিত খেতে হবে পাশাপাশি অবশ্যই কিডনি রোগীর খাবার তালিকা অনুযায়ী স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গুলো নিয়মিত খেতে হবে। তারপরও যদি আপনার সমস্যা গুলো ত্বরান্বিত হতে থাকে তাহলে দেরি না করে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
কিডনি পরিষ্কার করার ঘরোয়া উপায়
উপরের লক্ষণগুলো দ্বারা যদি আপনি বুঝতে পারেন আপনি কিডনি রোগে আক্রান্ত হতে চলেছেন তাহলে অবশ্যই নিজেকে সচেতন হিসেবে গড়ে তোলা আবশ্যক। খাদ্যাভ্যাস এবং দৈনন্দিন জীবন বিশৃংখল থেকে সুশৃংখলে নিয়ে আসতে হবে। মদ্যপান অথবা নেশা জাতীয় দ্রব্য পানের যদি অভ্যাস থাকে তাহলে অবশ্যই সেটি পরিত্যাগ করা উচিত। বিশেষ করে অ্যালকোহল দ্বারা পান করে তাদের কিডনি ড্যামেজ হওয়ার শঙ্কা বেশি থাকে। অ্যালকোহল পান থেকে বিরত থাকা বুদ্ধিমানের কাজ। কিডনি পরিষ্কার করার ঘরোয়া উপায় গুলো বলতে এখানে খাদ্যাভ্যাস কে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরা
হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা উপরে বর্ণনা করেছি কোন খাবারগুলো কিডনি রোগীর খাওয়া উচিত অথবা সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত খাওয়া প্রয়োজন। কিডনিতে সমস্যা ধরা পড়ে তাহলে অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে কিডনি পরিষ্কার করে এ খাবারে তালিকায় সর্বপ্রথম যেটি এসেছে সেটি হল পানি এবং সিজনাল ফল। খেয়াল রাখতে হবে টক জাতীয় ফল যা কিডনির ক্ষতি করে সে সকল ফল না খাওয়া। বিশেষ করে ক্যানবেরি এবং ক্যানবেরি জুস কিডনির রোগের জন্য মহা ঔষধ হিসেবে গণ্য। উক্ত ফলের জুসটি খাওয়ার মাধ্যমে আমরা কিডনি রোগ থেকে অনেকটাই পরিত্রাণ পেতে পারি।
লিভার ও কিডনি ভালো রাখার উপায়
আমরা আজকের আর্টিকেলের প্রথমে যে বিষয়টি আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করেছি সেটি হল আমরা দৈনন্দিন জীবনে যে খাদ্য গ্রহণ করি সেটি আমাদের স্বাস্থ্যের প্রতিফলিত হয়। অর্থাৎ আমাদের নিত্যদিনে যে সকল খাবার গ্রহণ করি সেটির মাধ্যমে আমাদের রোগ বালাই দূর করা সম্ভব। যদি কেউ অস্বাস্থ্যকর খাবার খায় তাহলে কোনদিনই সে কোন ধরনের রোগ থেকেই মুক্তি লাভ করতে পারবে না। একটি সুষম খাবার চার্ট সুস্থ থাকার জন্য যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটি একটি ডাক্তারের কাছে গেলে জানা যায়। লিভার ও কিডনি ভালো রাখার উপায় হিসেবে সব সময় কিডনি রোগীর খাবার তালিকায় এমন
খাবার রাখতে হবে যা লিভার ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে। উপরে বর্ণনাকৃত কিডনি পরিষ্কার করে এই ৯ খাবার গুলো অবশ্যই আমাদের খাদ্য তালিকায় নিয়মিত রাখতে হবে। আপনি যদি একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে লিভার ও কিডনি ভালো রাখার উপায় সম্বন্ধে জানতে যান তাহলে তারাও আপনাকে লিভার এবং কিডনি সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি এবং পানি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকবে। পাশাপাশি মদ্যপান, ধূমপান এবং নেশা জাতীয় দ্রব্য থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ দূরে রাখতে হবে। স্বাস্থ্যকর লিভার ফাংশন করার জন্য অবশ্যই অল্প পরিমাণে প্রোটিন খাওয়া এবং ফাইবার সমৃদ্ধ
খাবারগুলো চিহ্নিত করে খাওয়ার মাধ্যমে লিভার ডিটক্স করা সম্ভব। লিভার ভালো রাখার ক্ষেত্রে কমলালেবু, মুসাম্বি, বাতাবি ও পাতি লেবু খাওয়া যেতে পারে। এ ধরনের ফলে মূলত ভিটামিন সি এর পরিমাণ বেশি থাকে এবং ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকার কারণে লিভার ভালো রাখে। সুতরাং লিভার ও কিডনি ভালো রাখার উপায় হিসেবে ওষুধ সেবন না করে আমাদের নিজেদেরকে খাদ্য গ্রহণের সময় সচেতন থাকা একটি জরুরী বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কেননা ওষুধ সেবন করার মাধ্যমে রোগ মুক্তির চেয়ে বিভিন্ন রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তাই প্রাকৃতিক উপায়ে আমাদের উচিত বিভিন্ন রকম রোগ বালাই থেকে পরিত্রাণ পাওয়া।
কিডনি রোগী কি কি ফল খেতে পারবে
ডাক্তাররা কিডনি রোগীকে সব রকম সিজনাল ফল খাওয়ার উপদেশ দিয়ে থাকলেও, বেশি পরিমাণে টক রয়েছে এ জাতীয় ফল খেতে নিষেধ করেন। যেমন তেঁতুল, আমলকি এগুলো খাওয়া উচিত নয়। বেরি জাতীয় ফল যেমন স্ট্রবেরি, চেরি, ক্যানবেরি ইত্যাদি ফল খাওয়া কিডনি রোগীর জন্য অনেক উপকার। ফল গুলোতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ, ফোলেট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যার ফলে কিডনি সুরক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আবার ফলগুলোতে পটাশিয়াম ও ফসফরাস এর পরিমাণ অল্প
থাকার ফলে কিডনির জন্য খুবই স্বাস্থ্যকর এবং উপকারী হিসেবে গণ্য। এছাড়াও আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল মোটামুটি সকল সিজনাল ফল কিডনি রোগীর খাবার তালিকাতে রাখা যাবে এতে কোন সমস্যা নেই।
শেষকথা
প্রিয় পাঠক বৃন্দ আজকে আমরা আমাদের একটি অতি বিষাদময় কিডনি রোগ সম্পর্কে এবং সেই রোগ থেকে কিভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে পরিত্রাণ পাওয়া যায় সে সম্পর্কে জানতে পারলাম। আশা করি আমরা কিডনি পরিষ্কার করে এই ৯ খাবার এবং কিডনি রোগীর খাবার তালিকা হিসেবে কোন খাবারগুলো আমাদের নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে সে সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। এই আর্টিকেল সম্পর্কে আপনাদের যদি কোন মন্তব্য থাকে সেটি আমাদের মন্তব্য বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্বলিত পোস্ট আমাদের ওয়েবসাইটে পাবলিশ করে থাকি। আপনি চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন। আপনার বন্ধুবান্ধব অথবা আত্মীয়দের কিডনি রোগ সম্পর্কে সচেতন এবং সেই রোগে আক্রান্ত রোগীর খাবার গুলো কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়টি জানানোর লক্ষ্যে আজকের এই পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন। পরিশেষে সকলের সুস্থতাই আমাদের একমাত্র কাম্য।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url