ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম জানুন
বাংলাদেশের একটি বড় সংখ্যার জনগোষ্ঠী রয়েছে যারা বেকার হিসেবে দিন যাপন করছে। আর সেসকল বেকার এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষে দিচ্ছে ব্যবসায়িক ঋণ। তবে ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম সংক্রান্ত বিষয়গুলো অনেকেরই অজানা রয়েছে। তাই কেউ যদি ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার জন্য আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের সকল
বিষয়বস্তু ভালোভাবে অনুধাবন করে তাহলে তার পক্ষে লোন সংক্রান্ত বিষয়টি অনেকটাই সহজতর হয়ে যাবে। আলোচ্য বিষয় ব্যতীত আরো যে সকল বিষয় সম্পর্কে আজকে জানতে পারবেন সেগুলো হল ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতি, ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন পদ্ধতি এবং হোম লোন পদ্ধতি সম্পর্কে। ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম সংক্রান্ত সকল বিষয় বিস্তারিতভাবে জানার জন্য অবশ্যই আর্টিকেলের শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পোস্ট সূচীপত্র
ভূমিকা
“ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি” বাংলাদেশের একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। ব্যাংকটি ইসলামী শরিয়া মোতাবেক দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম ইসলামী ব্যাংক হিসেবে পরিচালিত হয়েছে। ব্যাংকটি ১৯৮৩ সালের ১৩ই মার্চ কোম্পানি আইন-১৯১৩ এর অধীনে একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে ৩৬.৯১% স্থানীয় এবং বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রয়েছে ৬৩.০৯%। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ৬২৩টি শাখা নিয়ে এই ব্যাংকটির দেশে সরকারি, বেসরকারি খাতের ব্যাংক গুলোর
মধ্যে সর্ববৃহৎ ব্যাংক হিসেবে স্থান পেয়েছে। ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্নভাবে জনগণের সেবার খাতিরে লোন পদ্ধতি সহ আরো অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালিত করে আসছে। বিশেষ করে তাদের সেলফিন, এটিএম সেবা, আই ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মূলত ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন এর সামাজিক কল্যাণমূলক কার্যক্রমের একটি প্রতিষ্ঠান হল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি। গ্রাহকদের সুবিধার ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সবসময় চেষ্টা করে থাকে ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম বিষয়ে যেন গ্রাহকরা সর্বোচ্চ সুবিধা পেয়ে থাকে।
ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতি
বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে বহুকাল ধরে প্রচলিত ঋণ প্রথার সংস্করণ রূপ হচ্ছে ব্যাংক লোন পদ্ধতি। প্রতিটি ব্যাংকই তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকে গ্রাহকদের বিভিন্নভাবে লোন সুবিধা দেওয়ার জন্য। তবে ক্ষেত্র বিশেষে গ্রাহকদের কিছু গাফিলতি এবং কাগজপত্র সঠিক না দেওয়ার জন্য লোনের আবেদনটি মঞ্জুর হয় না। যেহেতু ব্যাংকিং লোন পদ্ধতি সেবাটি মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় এবং সচ্ছলতার চাবিকাঠি হিসেবে রূপ পেয়েছে। তাই উদ্যোক্তা ভাইদের স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক সব সময় এক ধাপ এগিয়ে কাজ করার চেষ্টা করে থাকে।
গ্রাহকদের স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে এবং দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নয়নের জন্য ইসলামী ব্যাংক শুরু থেকে ব্যাপক পরিমাণে কাজ করে যাচ্ছে। ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন লোন পদ্ধতি গ্রাহকদের জন্য চালু করে রেখেছে। আসুন তাহলে এবার লোন গ্রহণ হওয়ার নিয়ম জানার পূর্বে কর্তৃপক্ষ কতগুলো ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতি তাদের সিস্টেম অনুযায়ী গ্রাহকদের প্রদান করে থাকে সেগুলো জেনে নিব। মূলত বাংলাদেশ ব্যাংক সকল ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ৬ ধরনের লোন সুবিধা প্রদান করার আগাদা দিয়ে থাকে। প্রত্যেকটি ব্যাংকেই ৬ ধরনের লোন সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। নিচে উক্ত ৬ ধরনের লোন সুবিধা সংক্রান্ত বিষয়গুলো পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হলো
ইসলামী ব্যাংক হোম লোন পদ্ধতি (House Loan)
প্রত্যেকটি মানুষই তার জীবনের কোন এক পর্যায়ে নিজস্ব বাড়ি ঘর করার স্বপ্ন বুনে থাকেন। একটি আপন ঠিকানা গড়তে চান যেখানে সে তার প্রিয়জনদের নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। মানুষ স্বপ্ন দেখতে পছন্দ করে কিন্তু স্বপ্ন অনুযায়ী যদি সাধ্য না থাকে সেক্ষেত্রে আর স্বপ্নটি বাস্তবায়িত হওয়ার প্রয়াস পায় না। সেই সকল স্বপ্নবাজ মানুষদের কথা চিন্তা করে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ হোম লোন পদ্ধতি চালু করেছে। যদিও প্রত্যেকটি ব্যাংকেই হোম লোন এর সুবিধা রয়েছে তবে ইসলামী ব্যাংক তাদের শরিয়া মোতাবেক লোন পদ্ধতি এবং সেই অনুযায়ী সুদের হার নির্ধারণ করে থাকে।
ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম অনুযায়ী কেউ যদি সকল ডকুমেন্টস দাখিল করে তাহলে অবশ্যই একজন ব্যক্তি হোম লোন নিতে পারবে। ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যে জায়গায় আপনি বাড়ি করতে ইচ্ছুক সেই জায়গার ডিমান্ডের ভিত্তিতে আপনাকে ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন সুবিধা প্রদান করে থাকবে। আর আরো একটি স্কিম অনুযায়ী কেউ যদি তার পুরাতন বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি করতে চাই সে ক্ষেত্রেও দশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা গ্রহণ করা যাবে।
ইসলামী ব্যাংক ব্যবসায়িক লোন পদ্ধতি (Business Loan)
দেশকে উন্নতির শিখরে পৌঁছানোর জন্য পাশাপাশি বেকার জনগোষ্ঠী যেন তাদের ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য মূলধন পায়। আবার যারা ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনা করছে তারা যেন তাদের ব্যবসার পরিধি আরো বিস্তার লাভ করাতে পারে সে ক্ষেত্রে ও ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়িক লোন প্রদান করে থাকে। বড় বড় বিশেষজ্ঞ এবং শিল্পপতিদের মতে একমাত্র ব্যবসা-খাত একটি দেশকে উন্নতের দিকে এগিয়ে নিতে পারে। তাই বেকার জনগোষ্ঠী যেন দেশের বোঝা না হয়ে আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করতে পারে সে বিষয়টিকে আমলে নিয়ে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ
ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতি অনুযায়ী ব্যবসায়িক লোন প্রদান করে আসছে। তবে অবশ্যই উদ্যোক্তা ব্যক্তিটিকে তার কিছু কাগজপত্র যেমন দোকানের ট্রেড লাইসেন্স এবং দোকানের পজিশনের প্রমাণপত্র দাখিল করতে হবে। দোকানে পজিশনের উপর ভিত্তি করে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিবে যে কত টাকা লোন প্রদান করা যাবে। ব্যবসায়িক লোনকে অনেক সময় পার্সোনাল লোন হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। ইসলামী ব্যাংক ছোট ব্যবসার জন্য ২ লক্ষ্য টাকা এবং বড় ব্যবসার ক্ষেত্রে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ
প্রদান করে থাকে। ইনভেস্টমেন্টের ওপর ভিত্তি করে ১২ শতাংশ পর্যন্ত রিটার্ন চার্জ প্রযোজ্য হয়ে থাকে। উক্ত ইনভেস্টমেন্ট অনুযায়ী অবশ্যই গ্রাহকদেরকে সর্বনিম্ন ১ বছর থেকে ২ বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে বলা হয়ে থাকে।
ইসলামী ব্যাংক কৃষি লোন পদ্ধতি (Ferming Loan)
ব্যবসায়িক উন্নতির পাশাপাশি একটি দেশের আরও একটি বিষয় দেশকে এগিয়ে নিতে পারে সেটি হল কৃষি খাত। আর বাংলাদেশের কথা যখন আসে তখন কৃষি নির্ভরশীল দেশ হিসেবে অনেকটাই প্রথম সারিতে বাংলাদেশকে দেখা যায়। আর কৃষি খাতকে উন্নত করতে হলে অবশ্যই কৃষকদের প্রয়োজন চাষের জন্য যথেষ্ট অর্থ। বেশিরভাগ গ্রামের দরিদ্র কৃষকরা অর্থের জন্য অনেক সময় ভালোভাবে চাষবাস করতে পারে না। তাই ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সহজ কিছু ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম অনুযায়ী কৃষকদেরকে সংখ্যা ভেদে লোন প্রদান করে থাকে।
অর্থাৎ জমির পরিমাণ এবং আরো কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর হয়েই কেবলমাত্র লোনের অর্থ নির্ধারণ করা হয়। ইসলামী ব্যাংক কৃষি খাতে যেন নতুন নতুন প্রযুক্তির সাথে কৃষকদের পরিচয় হয় সেই স্বার্থ অনুযায়ী এ ধরনের লোন প্রদান করে যাচ্ছে। কৃষি জমি চাষ বাস করার পাশাপাশি বিভিন্ন কৃষি প্রযুক্তি সরঞ্জাম যেন তারা ক্রয় করতে পারে সেজন্য ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতি অনুযায়ী এ ধরনের কৃষি লোনের ব্যবস্থা করে রেখেছে।
ইসলামী ব্যাংক শিক্ষা লোন পদ্ধতি (Education Loan)
ছোটবেলায় আমরা অনেকেই পড়েছিলাম শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। আর এই মেরুদন্ডকে শক্ত করার জন্য ইসলামী ব্যাংক শিক্ষা লোনের ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশে অনেক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে যারা অর্থের অভাবে তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া অথবা কমপ্লিট করতে ব্যর্থ হয়। তাই ইসলামী ব্যাংক সেই সকল ছাত্র-ছাত্রীদের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য এ ধরনের লোন পদ্ধতি চালু করেছে। লোন গ্রহনের পর শিক্ষার্থীরা পর্যায়ক্রমে লোনের অর্থ পরিশোধ করতে পারবে। আবার এমন কি চাকরি ক্ষেত্রে প্রবেশ করার পরেও এ ধরনের লোন পরিশোধ করার মতো সুবিধা রয়েছে। ইসলামী ব্যাংক শিক্ষা লোন ১৮
বছরের বেশি বয়স্ক শিক্ষার্থী এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে তাদের অভিভাবক লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। শিক্ষা সামগ্রী ক্রয় বাবদ এইচএসসি বাতাস রহমান পর্যন্ত যদি পড়াশোনা করে থাকে তাহলে একজন শিক্ষার্থী ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন গ্রহণ করতে পারবে। স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফি ও অন্যান্য ফি বাবদ ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন গ্রহণ করতে পারবে। ভার্সিটি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করছে এরকম শিক্ষার্থীরা ভর্তি, সেমিস্টার ফি এবং অন্যান্য খরচ বাবদ ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতি অনুযায়ী লোন পাবে।
ইসলামী ব্যাংক রিয়েল এস্টেট লোন পদ্ধতি (Real Estate Loan)
বহির্বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশেও রিয়েল এস্টেট হাতে ব্যাপকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। কেউ যদি মনে করে রিয়েল এস্টেট সাথে বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক কিন্তু যথাসাধ্য সামর্থ্য নেই। তাহলে সেই চিন্তার দিন শেষ, বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক রিয়েল এস্টেট লোন ব্যবস্থা করেছে যেন ব্যবসায়ীরা উক্ত খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে তাদের নিজেদের উন্নয়নের পাশাপাশি যেন দেশকেও উন্নত করতে পারে। তবে রিয়েল এস্টেট লোন নেওয়ার জন্য অবশ্যই ঠিকাদার হতে হবে এবং লাইসেন্সধারী হওয়ার পাশাপাশি সঠিক সনদ দাখিল করতে হবে।
অপেশাদার যদি কোন ব্যক্তি এ ধরনের লোনের জন্য আবেদন করেন তাহলে কোনভাবেই লোন গ্রহণযোগ্য হবে না। ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম অনুসারে অবশ্যই এ বিষয়টি সে সকল ব্যবসায়ী ভাইদের মাথায় রাখতে হবে।
ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন পদ্ধতি (Emigrant Loan)
বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে প্রবাসীরাও দিনরাত এক করে আমাদের দেশে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন। আর রেমিটেন্স এর ভিত্তিতে বাংলাদেশে ঢুকছে কোটি কোটি ডলার। কিন্তু বেশিরভাগ জনগোষ্ঠী দেশের বাইরে গিয়ে কাজ করার জন্য ভিসা প্রসেসিং এর খরচ বাবদ যে সকল টাকা প্রয়োজন সেটার যোগান করা অনেকটাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রবাসীদের জন্য প্রবাসী লোন ব্যবস্থা করেছে। এক্ষেত্রে যারা ইতিমধ্যে প্রবাসের অবস্থান করছে তারাও ইসলামী ব্যাংক থেকে বিভিন্ন ভাবে লোনের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে।
তবে কর্তৃপক্ষ সবসময় একটি কথা নির্দেশ দিয়েছে সেটি হল প্রবাসী লোনের জন্য অবশ্যই যে ব্যক্তি বিদেশে গিয়ে কাজ করতে ইচ্ছুক এবং অলরেডি বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে তারাই কেবলমাত্র প্রবাসী লোনের জন্য আবেদন এর যোগ্য হিসেবে গণ্য হবে। ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতি এর আওতায় প্রবাসী লোন থেকে একজন ব্যক্তি ৫০ হাজার ঢাকা থেকে শুরু করে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন গ্রহন করতে পারবে।
ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম
আমরা এ পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করলাম। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটি কত ধরনের লোন প্রদান করে থাকে তার মধ্যে ৬ ধরনের লোনের কথা পর্যালোচনা করা হলো। উক্ত লোন পদ্ধতি ব্যতীত আরো কিছু লোনের সিস্টেম থাকতে পারে। যদি অন্যান্য কোন লোনের প্রয়োজন হয় তাহলে অবশ্যই আপনি আপনার নিগ্রস্ত ইসলামী ব্যাংক এর শাখায় গিয়ে কর্মকর্তা সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। উপরে বর্ণিত ৬ ধরনের লোন পদ্ধতি অনুযায়ী আপনি ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবেন। প্রত্যেকটি লোনের আলাদা আলাদা কিছু নিয়ম-কানুন এবং আলাদা ভিত্তিতে ডকুমেন্টস
রয়েছে। আমরা পর্যায়ক্রমে অবশ্যই প্রত্যেকটি লোনের কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন সেগুলো জানার চেষ্টা করব। আসুন প্রথমে ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার ক্ষেত্রে কি কি যোগ্যতা প্রয়োজন সে বিষয়টি জেনে নিব। এক্ষেত্রে বলাবাহুল্য যে প্রত্যেকটি লোনের জন্যই যোগ্যতা একই রকম থাকবে। শুধুমাত্র কাগজপত্র বা অন্যান্য ডকুমেন্টসের বিষয়টি আলাদা হিসেবে প্রণয়ন করা হবে। নিচে পয়েন্ট আকারে ইসলামী ব্যাংক লোন নেওয়ার জন্য যে সকল যোগ্যতা প্রয়োজন সেগুলো তুলে ধরা হলো।
- আবেদনকারী অবশ্যই একজন বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে।
- ঋণ নিতে ইচ্ছুক ব্যক্তির বয়স অবশ্যই ১৮ এর বেশি হতে হবে।
- লোনের জন্য আবেদনকারীর অবশ্যই ইসলামী ব্যাংকের আওতাধীন একটি ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে।
- লোনের আবেদন করার জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র, শিক্ষা সনদ সহ আরো অন্যান্য সকল কাগজপত্র সাথে রাখতে হবে।
- লোনের জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে এ সকল কাগজপত্র দাখিল হবে সবগুলোই সত্যায়িত হতে হবে।
মূলত এ সকল যোগ্যতা সকল লোন পদ্ধতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে উপরে বর্ণিত যে সকল লোন পদ্ধতি আলোচনা করা হয়েছে স্থান, পাত্র এবং কালভেদে সবগুলো লোনের কাগজপত্র এবং নিয়ম কানুন আলাদা রয়েছে। তাই কেউ যদি ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম বিষয়টি ভালোভাবে জানতে চাই তাহলে প্রত্যেকটি লোনের উপর ভিত্তি করে যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন সবগুলোই তাহলে বিস্তারিতভাবে জানতে হবে। নিচে পর্যায়ক্রমে প্রত্যেকটি ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতি অনুযায়ী যে সকল নিয়ম কানুন এবং কাগজপত্র প্রয়োজন সেগুলো পর্যায়ক্রমে বর্ণনা করা হলো।
হোম লোনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নিয়ম এবং কাগজপত্র
- বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার পাশাপাশি অবশ্যই ব্যক্তির বয়স সর্বনিম্ন ২১ বছর এবং সর্বোচ্চ ৬৫ বছর হতে পারবে।
- গ্রাহকের অবশ্যই ইসলামী ব্যাংকের আওতায় ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে।
- জাতীয় পরিচয় পত্র এর ফটোকপি, পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি প্রয়োজন পড়বে।
- এনওসি, জমির দলিল, খতিয়ান নামধারী রশিদ দাখিল করতে হবে।
- লোনের জন্য আবেদন করতে হলে গ্রাহকের অবশ্যই বেতনভুক্ত কর্মচারী হতে হবে।
- বন্ধক দিতে পারবে এরকম সম্পদ থাকতে হবে।
- ইসলামী ব্যাংকের গৃহীত শাখায় গিয়ে আবেদন পত্র সংগ্রহ করে সেগুলো যথাযথভাবে পূরণ করে উক্ত শাখায় জমা দিতে হবে।
- ইসলামী ব্যাংক থেকে হাউসিং ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ গ্রহণ করা যাবে।
ব্যবসায়িক লোনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নিয়ম এবং কাগজপত্র
- জাতীয় পরিচয় পত্র এর ফটোকপি
- সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি দুই কপি।
- সর্বশেষ আপডেটের ট্রেড লাইসেন্স এর মূল কপি শো করতে হবে এবং জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে ফটোকপি দিতে হবে।
- মাসিক আয়ের হিসাব জমা দিতে হবে।
- যদি চাকুরীজীবী হয় সেক্ষেত্রে যে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হয়েছে সেখানকার মাসিক বেতনের প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে।
- ব্যবসায়ী কাগজপত্র এবং দোকানে কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
- দোকানে পজিশন প্রমাণ করার জন্য দোকানের ফ্রন্ট এর ছবির প্রয়োজন পড়বে।
কৃষি লোনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নিয়ম এবং কাগজপত্র
- অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম অনুসারে একজন ফুল টাইম কৃষক হতে হবে।
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি এবং সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি রঙিন ছবি।
- লোন এর আবেদন করার জন্য অবশ্যই জমির দলিল প্রয়োজন পড়বে।
- লোন গ্রহণের পর কি ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে অর্থাৎ প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে কিভাবে কৃষিকাজকে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত করা যায় সেই বিষয়ের পরিকল্পনা দাখিল করতে হবে।লোন গ্রহীতার বর্তমানে আয়ের উৎস কি এবং কি পরিমান মাসিক আয় হয় সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
শিক্ষা লোনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নিয়ম এবং কাগজপত্র
- বাংলাদেশের যেকোনো প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত শিক্ষার্থী হতে হবে
- ১৮ বছর বয়স হলে জাতীয় পরিচয় পত্র এর ফটোকপি প্রয়োজন।
- শিক্ষালোনের জন্য শিক্ষার্থী এর বয়স যদি ১৮ এর কম হয় সে ক্ষেত্রে অভিভাবক লোন গ্রহণ করতে পারবেন সেক্ষেত্রে অভিভাবকের পরিচয় পত্রর ফটোকপি লাগবে।
- শিক্ষা লোন যদি শর্তসাপেক্ষে করা না হয় সেক্ষেত্রে ৫ বছরের মধ্যে লোন পরিশোধ করতে হবে।
- এইচএসসি বা তার সমমানের শিক্ষার্থীরা এক লক্ষ টাকা, অনার্স, ভার্সিটি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ১০ লক্ষ থেকে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে।
রিয়েল এস্টেট লোনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নিয়ম এবং কাগজপত্র
- রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীরা ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম অনুযায়ী লোন নিতে হলে অবশ্যই লাইসেন্সধারী ঠিকাদার হতে হবে।
- বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি জমা দিতে হবে।
- জামানত হিসেবে জমি জমার দলিল দাখিল করতে হবে।
- স্থাবর এবং অস্থাবর সকল সম্পত্তির বিবরণ সহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সাবমিট করতে হবে।
- আবেদনকারীর ব্যাংক ডকুমেন্টস অবশ্যই কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করতে হবে।
প্রবাসী লোনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নিয়ম এবং কাগজপত্র
- জাতীয় পরিচয় পত্র এর ফটোকপি এবং পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতি অনুযায়ী প্রবাসীদের লোন নিতে হলে অবশ্যই বিদেশ যেতে ইচ্ছুক এরকম ব্যক্তি হতে হবে।
- বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে সকল কাগজপত্র যেমন পাসপোর্ট এবং ভিসা অথবা ভিসা প্রসেসিংয়ের প্রমাণপত্র দাখিল করতে হবে।
- যদি কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হয় সেখানকার বেতনের প্রমাণপত্র।
- দুইজন জামানতদার প্রয়োজন পড়বে। অবশ্যই জামিনদারকে সম্পদশালী বা টাকা পয়সার মালিক হতে হবে যেন পরবর্তীতে জামিনদার ঋণ পরিশোধ করতে সামর্থ্যবান হয়।
উপরে বর্ণিত সকল লোন পদ্ধতি এর আওতায় সকল ক্ষেত্রেই জাতীয় পরিচয় পত্র এবং পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি প্রয়োজন পড়বে। এছাড়া বিবরণ কৃত সকল কাগজপত্র লোন ভেদে জমা করতে হবে। তাই কোন ব্যক্তি যদি লোন নিতে ইচ্ছুক হন তাহলে উপরে বর্ণিত লোন পদ্ধতি অনুযায়ী সকল কাগজপত্র নিয়ে নিকটস্থ ইসলামী ব্যাংক শাখায় উপস্থিত হতে হবে। শাখায় গিয়ে নিয়োগকৃত কর্মচারীর সাথে কথা বলে লোনের আবেদন ফরম সঠিকভাবে পূরণ করে সাথে নিয়ে যাওয়া কাগজপত্র গুলো সহকারে আবেদন কপি কর্মচারী নিকট জমা দিতে হবে।
পরবর্তীতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাই এর মাধ্যমে গ্রহীতা লোনের জন্য যোগ্য কিনা পর্যালোচনা করে জানিয়ে দেবে। যদি সবকিছু সঠিক হয় তাহলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম অনুযায়ী লোনের প্রাপ্ত টাকা ইসলামী ব্যাংকের শাখা থেকে উত্তোলন করা সম্ভব হবে।
লেখকের শেষকথা
প্রিয় পাঠক বৃন্দ আমরা আজকের এই আর্টিকেলে একদম শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। আশা করি কোন ব্যক্তিবর্গ যদি ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলের সকল তথ্যই তার অনেক কাজে আসবে। সুতরাং আপনার যদি কোন বন্ধু-বান্ধব অথবা আত্মীয় ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম জানার পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে ধারণা নিতে পারে, তাই তাদের সাথে আজকের এই বিষয়টি শেয়ার করতে পারেন।
ইসলামী ব্যাংক লোন সম্পর্কিত আপনার যদি কোন মন্তব্য থাকে তাহলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা সবসময় আমাদের ওয়েবসাইটে সকল রকম তথ্যবহুল পোস্ট পাবলিশ করে থাকি। আপনি চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটি ঘুরে আসতে পারেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url