দারিদ্র বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা গুলো কি জানুন

দারিদ্র বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা কিভাবে দরিদ্র মানুষদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে পারে এবং তাদের জীবনের উন্নতি ঘটায় এই সম্পর্কে জানুন আমাদের আজকের এই পোস্টে। দারিদ্র বিমোচন করার জন্য যত ধরনের ঋণ আছে তার মধ্যে ক্ষুদ্র ঋণ অন্যতম। দারিদ্র বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা অপরিসীম। 
দারিদ্র-বিমোচনে-ক্ষুদ্র-ঋণের-ভূমিকা
শুধুমাত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নে নয় বরং দারিদ্রদের সামাজিক পরিবর্তনেও ক্ষুদ্র ঋণ বিশেষ অবদান রাখছে। ক্ষুদ্র ঋণ কিভাবে আমাদের দেশের দরিদ্র মানুষদের জীবনযাত্রার মানকে উন্নত করে তাদেরকে স্বনির্ভর হতে সহায়তা করছে তা নিয়েই থাকবে আমাদের আজকের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু।

ভূমিকা

দারিদ্র বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করার পূর্বে ক্ষুদ্র ঋণ কি এই বিষয়ে বেসিক ধারণা রাখা জরুরী। ক্ষুদ্র ঋণ হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে স্বল্প পরিমাণে দারিদ্র জনগোষ্ঠীকে আর্থিক ঋণ দেওয়া হয়। ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়ার মূল লক্ষ্য হচ্ছে দারিদ্র জনগোষ্ঠীরা যাতে নিজেদের ব্যবসা শুরু করে ছোট আকারে হলেও অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালু করতে পারে। এই ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষ গুলো আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পায় যার ফলে তাদের জীবনযাত্রার মান-পূর্বের তুলনায় অনেকটা পরিবর্তন হয়। 

এই সকল ক্ষুদ্রঋণ পরিশোধ করার সময় স্বল্প সুদে পরিষদের সুযোগ আছে অনেক সময় বিনা সুদেও ঋণ পরিশোধ করা যায়। সারা বিশ্বব্যাপী এই ক্ষুদ্র ঋণের ধারণাটিকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে যে ব্যক্তিটি সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন তিনি হচ্ছেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস। দারিদ্র বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।কারণ এই ক্ষুদ্র ঋণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করতে এবং সেটি পরিচালনা করতেও বিশেষভাবে সহায়তা করে যাতে করে তাদের আয় বৃদ্ধি পায়। 

এই ক্ষুদ্র ঋণের কারণে হাজার হাজার ব্যক্তিরা কর্মসংস্থানে যোগদানের সুযোগ পায়। যার ফলে বেকারত্বের হাত থেকে রক্ষা পায়। এমনকি ক্ষুদ্র ঋণের সহায়তায় দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা পর্যাপ্ত শিক্ষা অর্জনের সুযোগ লাভ করে এবং যে সকল পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার সামর্থ্য নেই তাদেরকেও চিকিৎসা সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

নারীর ক্ষমতায়নে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা

দারিদ্র বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা এর পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নেও ক্ষুদ্র ঋণের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে ক্ষুদ্র ঋণ বিশাল হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে যেটি নারীর অর্থনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনে দিতে পারে। নারীর ক্ষমতায়নে ক্ষুদ্র ঋণের সবচেয়ে বড় ভূমিকা হলো নারীরা ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণ করে বিভিন্ন ব্যবসা করার উদ্যোগ শুরু করতে পারে। যেমন- হস্তশিল্প, কৃষি শিল্প, ছোট ব্যবসা ইত্যাদি। এতে করে নিজেদের আয় করা উপায় বৃদ্ধি পায় এবং অর্থনৈতিকভাবে নারীরা স্বাবলম্বী হতে পারে। 
নারীরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারলে পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে পারে যার ফলে পরিবারের অর্থনৈতিক সমস্যা অনেকটা দূর করা সম্ভব। ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে নারীরা নিজেদের কর্মসংস্থান নিজেরাই তৈরি করে নিতে পারে। এমনকি তাদের কর্মসংস্থানে যদি অন্য কোনো ব্যক্তিরা কাজ করার সুযোগ পায় তাহলে তারাও আর্থিকভাবে সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। আমাদের দেশে অনেক নারীরা আছেন যারা পরিবারের অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান থেকে তারা ঋণ গ্রহণ করে শিক্ষার সুযোগ লাভ করতে পারবে। 

এতে করে তারা পেশাগত জীবনে আরও উন্নতি লাভ করবে। নারীদের জীবনের সামাজিক পরিবর্তনে ও সামাজিক ক্ষমতায়নে ক্ষুদ্র ঋণের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। এর ফলে তারা সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে সমাজকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। অর্থনৈতিক সাফল্যের কারণে নারীদের মধ্যে অন্যরকম একটি আত্মবিশ্বাস তৈরি হয় যার ফলে তারা সঠিকভাবে দক্ষতা কাজে লাগিয়ে জীবনে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে যেতে পারে। ক্ষুদ্র ঋণ নারীদের নেতৃত্বের বিকাশে খুবই সহায়ক। 

ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে নারীরা অর্থনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সমস্যার সমাধান করার অভিজ্ঞতা অর্জন করে। এর ফলে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করা আরও সহজ হয়ে যায়।

আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা pdf

অনেকে মনে করেন দারিদ্র বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা আছে ব্যাপারটি একদমই তা নয়। বরং ক্ষুদ্র ঋণ আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বিশাল অবদান রাখছে। ক্ষুদ্রঋণ এমন ভাবে সমাজের দরিদ্র ও গরিব জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করে যাচ্ছে যার ফলে গরিবরা পূর্বের অবস্থা থেকে ফিরে দাঁড়াতে পারে। অনলাইনের বিভিন্ন ওয়েবসাইট গুলোতে আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ক্ষুদ্রঋণের ভূমিকা সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের পিডিএফ লিংক রয়েছে যেখান থেকে তোমরা জানতে পারবে কিভাবে ক্ষুদ্র ঋণ সামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখেই চলছে।

দারিদ্র বিমোচনে এনজিওর ভূমিকা

দারিদ্র বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা সম্পর্কে তো অনেক কিছুই জানা হলো। চলুন এখন তাহলে দারিদ্র্য বিমোচনে এনজিওর ভূমিকা কি কি এই সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। এনজিও হচ্ছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা যেটি দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ও দারিদ্রতা দূরীকরণে কাজ করে যাচ্ছে। দারিদ্রতা বিমোচন এনজিওর এমন কিছু অবদান রয়েছে যেগুলো অনেকেরই হয়ত অজানা সেগুলো হলো- এনজিওরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা করে থাকে যাতে করে তারা স্কুল, পাঠশালা যাওয়ার সুযোগ সুবিধা পায় এবং ভবিষ্যতে নিজেকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পারে। 

যে সকল অঞ্চলে ব্যক্তিরা চিকিৎসার অভাবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং হসপিটালে যাওয়ার সামর্থ্য নেই তাদের জন্য এনজিও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, ফ্রিতে টিকা দান, বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মসূচি ক্যাম্প তৈরি করে থাকে। যাতে করে তারা ফ্রিতে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ পায়। এতে করে গরীবরা স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হতে পারবে এবং সুস্থ থাকলে তারা সুন্দর ভবিষ্যৎ পাবে। এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল লক্ষ্য হচ্ছে দারিদ্র বিমোচনে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ব্যক্তি গুলোর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা যাতে করে তারা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ক্ষুদ্রঋণ 

নিয়ে ছেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করতে পারে এবং সমাজ থেকে বেকারত্ব দূর হয়। নারীর ক্ষমতায়নে এনজিওরা ভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে যাতে করে নারীরা বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে কর্মসংস্থানের সুযোগ পায় ও আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হতে পারে। দেশে এমন কিছু জায়গা আছে যেখানে সর্বদা প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে দরিদ্ররা বাসস্থানের অভাবে রাস্তাঘাটে অথবা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করে যেটি জীবনের জন্য খুবই হুমকিস্বরূপ। এই সকল দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় এনজিওরা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেয় যাতে করে গরিব ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীরা 
ভালোভাবে বসবাসের সুযোগ পায়। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তায় এনজিওরা কাজ করে যাচ্ছে। দরিদ্ররা পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করছে। তাই এনজিওরা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য পুষ্টিকর খাদ্যের যোগান দিয়ে থাকে। এছাড়াও যে সকল স্থানে স্যানিটেশন ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই সে সকল স্থানে স্বাস্থ্যসম্মত ওয়াশরুম নির্মাণ করা, বিশুদ্ধ পানির ট্যাংক সরবরাহ করা কাজটিও এনজিও সংস্থা করে থাকে যাতে করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন করতে পারে। 

আমাদের দেশে এমন অনেক এলাকা আছে যেখানে শিশুরা সমান অধিকার পায়না যার ফলে তারা শিশু নির্যাতন শিশুশ্রম এর শিকার হয়ে থাকে। শিশুরা যদি বর্তমানে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে তারা ভবিষ্যতে সুষ্ঠুভাবে গড়ে উঠতে পারবে না। তাই এনজিও সংস্থাগুলো শিশু অধিকার রক্ষায় প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।

দারিদ্র বিমোচনে গ্রামীণ ব্যাংকের ভূমিকা

দারিদ্র বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা যেমন রয়েছে তেমনি দারিদ্র্য বিমোচনে গ্রামীণ ব্যাংকেরও ভূমিকা আছে। গ্রামীণ ব্যাংক এমন একটি ব্যাংক যেটি আমাদের দেশের সেরা ব্যাংক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশের যতগুলো ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানের ব্যাংক রয়েছে তার মধ্যে গ্রামীণ ব্যাংক অন্যতম। দারিদ্রতা বিমোচনে গ্রামীণ ব্যাংক দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে থাকে। এই ঋণের সহায়তায় তারা আত্মকর্মসংস্থান তৈরি করতে পারে যেমন- এই ঋণ দিয়ে অনেকে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, কৃষিকাজ শুরু করা, পশু পালন থেকে শুরু করে আরো বিভিন্ন ধরনের কাজের সুযোগ পায়। 

গ্রামীণ ব্যাংক সর্বদা গ্রাহকদেরকে সঞ্চয় করার জন্য উৎসাহ দিয়ে থাকে। কারণ বর্তমানে সঞ্চয় করা অর্থ ভবিষ্যতে বিভিন্ন কাজে লাগতে পারে। ঋণ গ্রহণের পাশাপাশি গ্রাহক যদি কিছু অর্থ সঞ্চয় করে রাখে তাহলে ভবিষ্যতে প্রয়োজনের সময় তারা এই অর্থ কর্মসংস্থানে বিনিয়োগ করতে পারবে এবং আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। গ্রামীণ ব্যাংক বর্তমানে নতুন ধরনের ঋণ প্রদান পদ্ধতি চালু করেছে যেটি প্রচলিত ব্যাংকিং সিস্টেমের বাইরে। এতে করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীরা সহজেই ঋণ গ্রহণ করতে পারে এবং কোন প্রকার জামানত ছাড়াই এখানে ঋণ প্রদান করা হয় যেটি গরিব ও দরিদ্র মানুষের জন্য খুবই উপকারী।

কৃষি উৎপাদনে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা

আমাদের দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড হচ্ছে কৃষিকাজ। দেশের অধিকাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষি কাজের সাথে জড়িয়ে আছে। কিন্তু এমন অনেক কৃষক আছে যারা পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে কৃষি উৎপাদনে পিছিয়ে আছে। তাই তাদের জন্য সুষ্ঠু সমাধান হলো কৃষি উৎপাদনে ক্ষুদ্র ঋণ নেওয়া। এতক্ষণ যাবৎ আমরা জেনেছি দারিদ্র বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা কিভাবে একজন দারিদ্র ব্যক্তিকে স্বাবলম্বী করে তুলতে পারে। এখন আমরা জানবো ক্ষুদ্র ঋণের প্রভাবে কিভাবে একজন কৃষক তার কৃষি কাজে উন্নয়ন আনতে পারে। 

বর্তমান যুগে কৃষির কাজের জন্য এমন কিছু যন্ত্রপাতির আবিষ্কার হয়েছে যেগুলো ব্যবহার করে কৃষকরা সহজেই তাদের কৃষির উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারে। কিন্তু কিছু কৃষকরা সামর্থের অভাবে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, হাইব্রিড বীজ, সার, কীটনাশক কিনতে পারেনা। তাই তাদের জন্য সঠিক সমাধান হচ্ছে ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণ করে এই সকল যন্ত্রপাতি ক্রয় করার মাধ্যমে জমির উৎপাদনশীলতা বাড়ানো। এতে করে তারা কৃষিকাজে লাভবান হতে পারবে। সেচের অভাবে অনেক সময় দেখা যায় কৃষি উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে। ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে কৃষকরা জমির সেচের জন্য প্রয়োজনীয় পাম্প, টিউবওয়েল ও অন্যান্য সেচ 

সরঞ্জাম ক্রয় করতে পারবে। এতে করে জমিতে দ্রুত ফসল উৎপাদন হবে। কৃষি কাজের অন্যতম উপাদান হচ্ছে বীজ ও সার। যেকোনো কৃষি কাজ বীজ ও সার ছাড়া সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। ক্ষুদ্রঋণ নেওয়ার মাধ্যমে কৃষকরা বীজ ও সার ক্রয় করতে পারবে এর ফলে তাদের কৃষি উৎপাদন ভালো হবে। ক্ষুদ্র ঋণ নেয়ার মাধ্যমে কৃষকরা বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করতে উৎসাহী হয়ে ওঠে। এতে করে তারা সাধারণ চাষাবাদের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের নতুন ফসল উৎপাদনে মনোনিবেশ করতে থাকে। এর ফলে তাদের আয় বৃদ্ধি পায়।

দারিদ্র্য বিমোচনে ব্র্যাকের ভূমিকা

প্রিয় পাঠক বৃন্দ দারিদ্র্য বিমচনে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা সম্পর্কে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। এখন যারা জানতে চেয়েছিলেন দারিদ্র বিমোচনে ব্র্যাকের কি কি ভূমিকা রয়েছে সেটি নিয়ে কথা বলব। ব্র্যাক একটি প্রভাবশালী উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান যা ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ব্র্যাক আমাদের দেশের একটি উন্নয়নমূলক বেসরকারি সংস্থা যা দরিদ্র জনগনের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে অনেক বছর যাবত কাজ করে আসছে। দারিদ্রতা বিমোচনে ব্র্যাক বিভিন্ন কার্যক্রম ও উদ্যোগ গ্রহণ করে মানুষের জীবনে পরিবর্তন এনেছে। দারিদ্র্য বিমোচনে ব্র্যাকের প্রধান ৫টি ভূমিকা গুলো হলো:
  • দারিদ্রতা বিমোচনে ব্র্যাক মাইক্রো ফাইনান্স প্রোগ্রাম চালু করেছে যার ফলে দরিদ্ররা তাদের প্রয়োজনমতো ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে ছোট কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারে। এতে করে তারা বেকারত্বের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
  • দেশের প্রতিটি শিশুকে সুশিক্ষায় গড়ার লক্ষ্যে ব্র্যাক বিভিন্ন জায়গায় মানসম্মত শিক্ষা প্রদান করার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে যাতে করে দরিদ্র পরিবারের শিশুরাও শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়।
  • বেশিরভাগ দরিদ্র মানুষেরা আর্থিক সমস্যার কারণে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়। তাই ব্র্যাকের স্বাস্থ্যকর্মীরা বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দারিদ্রদেরকে ফ্রি চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করে। যাতে করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীরা সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে।
  • প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় গরিব দরিদ্রদের পুনর্বাসন তৈরিতে ব্র্যাকের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। দুর্যোগ প্রবণ এলাকায় গরিবদের আগাম সতর্কবার্তা পৌঁছানো থেকে শুরু করে গরিবদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করার কাজে ব্র্যাক সর্বদা প্রস্তুত ।
  • দেশের অনেক দরিদ্র জনগোষ্ঠীরা আছে যারা সুষ্ঠু প্রশিক্ষণের অভাবে কর্মসংস্থানে অংশগ্রহণ করতে পারছে না। সে সকল ব্যক্তিদের জন্য ব্র্যাক দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে যাতে করে দরিদ্ররা কাজ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে।

ক্ষুদ্র ঋণের সুবিধা

ইতিমধ্যে আমরা দারিদ্র বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেছি। এখন আমরা ক্ষুদ্র ঋণের কয়েকটি সুবিধা নিয়ে আলোচনা করব। সাধারণত ক্ষুদ্র ঋণ এমন কিছু ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে যারা ব্যাংকিং সুবিধা থেকে বঞ্চিত। যেহেতু দরিদ্র ব্যক্তিরা ব্যাংকিং অর্থনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবে না তাই তাদের জন্য ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করা হয়। ক্ষুদ্র ঋণ নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বিরাট একটি সুযোগ। ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে ছোট ব্যবসা শুরু করে তারা আয়ের পথ বেছে নেয়। বর্তমান যুগে নারীদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে ক্ষুদ্র ঋণ এর ভূমিকা রয়েছে। 
এতে করে নারীরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে যার ফলে তারা সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ পায়। ক্ষুদ্র ঋণের প্রভাবে সামাজিক উন্নয়ন দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে মানুষকে একত্রিত করে একটি সামাজিক সমন্বয় তৈরি হয়। এ সকল সুবিধাগুলোর জন্যই ক্ষুদ্র ঋণকে কার্যকরী উন্নয়নমূলক সামাজিক প্রক্রিয়া হিসেবে ধরা হয় যেটি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন এনে দিতে পারবে।

লেখকের শেষকথা

প্রিয় দর্শকগণ, আমাদের দেশে যারা দরিদ্র জনগোষ্ঠী আছেন তাদের জন্য আমাদের আজকের এই পোস্ট দারিদ্র বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যারা দরিদ্র পরিবারে অর্থনৈতিক সমস্যায় আছেন তাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে আমার আজকের পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য। আমাদের দেশের ক্ষুদ্র ঋণের প্রকল্প গুলো যদি সঠিকভাবে পরিচালিত হয় তাহলে দেশ থেকে দ্রুত দারিদ্রতা বিমোচন করা খুবই সহজ হয়ে যাবে এবং সকলেই বেকারত্বের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে স্বনির্ভর হতে পারবে। 

আপনাদের মধ্যে কেউ যদি দরিদ্র আত্মীয়-স্বজন থাকে যারা কর্মসংস্থানের অভাবে ভুগছে কিন্তু কোথা থেকে ঋণ নেবে সে সম্পর্কে ধারণা নেই তাদের সাথে আমাদের আজকের এই ব্লক পোস্টটি শেয়ার করে দিতে পারো। তাহলে তারা ক্ষুদ্র ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক উপকৃত হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url