ক্রেডিট কার্ড কি? ক্রেডিট কার্ড এর সুবিধা ও অসুবিধা

বর্তমান সময়ে আমাদের অনেকেরই ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা রয়েছে। ক্রেডিট কার্ড থাকলে খুব সহজেই শপিং করা থেকে শুরু করে ইমার্জেন্সি টাইমে টাকা উত্তোলন করা সম্ভব। তাই আমরা অনেক সময় মনে মনে চিন্তা করি যদি আমাদের একটা ক্রেডিট কার্ড থাকত তাহলে কতই না সুবিধা হতো। প্রত্যেকটি জিনিসের যেমন সুবিধা রয়েছে ঠিক তেমনি কিছু অসুবিধা রয়েছে। 
ক্রেডিট-কার্ড-এর-সুবিধা-ও-অসুবিধা
আর সেই সকল ক্রেডিট কার্ড এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কিত তথ্য নিয়েই আমাদের আজকের এই আর্টিকেল। আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে জানার পাশাপাশি আজকে আরো যে সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন সেগুলো হলো ক্রেডিট কার্ড কি এবং এর ইন্টারেস্ট সম্পর্কে। ক্রেডিট কার্ড লিমিট এবং ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম জানার পাশাপাশি ক্রেডিট কার্ড এর সুবিধা ও অসুবিধা জানার জন্য অবশ্যই আর্টিকেলের শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্র

ক্রেডিট কার্ড কি

ক্রেডিট কার্ড হলো একটি বিশেষ ধরনের পরিশোধ ব্যবস্থা যার অংশ হিসেবে ব্যবহৃত প্লাস্টিক কার্ড যা ওই পরিশোধ ব্যবস্থা ব্যবহারকারীদেরকে ইস্যু করা হয়। মূলত ক্রেডিট কার্ডের ধারক এবং বাহক, পণ্য ও সেবা ক্রয় করার জন্য মূল্য পরিশোধের প্রতিশ্রুতি প্রদান করে থাকে। অর্থাৎ কোনরকম অর্থ ছাড়াই যেকোনো পণ্য ক্রয় করার ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে তা পরিশোধ করা সম্ভব। সাধারণত স্থানীয় ব্যাংক অথবা ক্রেডিট ইউনিয়ন ভোক্তাদের নিকট এ ধরনের কার্ডগুলো ইস্যু করে থাকে। ক্রেডিট কার্ডগুলোর আকার আকৃতি আইএসও এবং আইইসি ৭৮১০ আইডি-১ আদর্শ মেনে চলে। 

অনেকে চার্জ কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ডকে গুলিয়ে ফেলেন। কার দুটি সিস্টেম এক হলেও চার্জ কার্ড প্রতিমাসে বা প্রত্যেক চক্রের শেষে পুনরায় টাকা ভরতে হয় যা ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে ভরতে হয় না। আবার ক্রেডিট কার্ডে ব্যবহারকারীদের ঋণ নেওয়ার সুবিধা দেওয়া থাকে অবশ্য তা সুদসহ ফেরত দিতে হয়। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি ঋণ গ্রহণ করতে চায়, সেক্ষেত্রেও ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তোলার নিয়ম ফলোআপ করার মাধ্যমে ঋণ গ্রহণ করতে পারবে। ক্রেডিট কার্ড ক্যাশ কার্ডের চেয়েও ভিন্ন কেননা ক্যাশ কার্ডের মত এখানে টাকা বা অর্থের বিনিময়ে ব্যবহার করা হয় না। 

ক্রেডিট কার্ডে তৃতীয় পক্ষ কাজ করে যারা বিক্রেতাদের অর্থ দেয় এবং ক্রেতাদের অর্থ পরিশোধ করে। ক্রেডিট কার্ড এর সুবিধা ও অসুবিধা অবশ্যই রয়েছে। এরপরেও পরিসংখ্যান বলছে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১.১১২ বিলিয়ন কার্ডের প্রচলন ছিল। বর্তমানে ক্রেডিট কার্ডের পরিমাণ আরো বেশি পরিমাণ হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

ক্রেডিট কার্ড এর কাজ

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন সময় ইমারজেন্সি টাকার প্রয়োজন বা পণ্য ক্রয় করা লাগতে পারে। সে ক্ষেত্রে ক্রেডিট কাজ আমাদের অনেকটাই কাজে আসে। কারো কাছে যদি ক্রেডিট কার্ড থাকে কিন্তু পকেটে কোন টাকা না থাকে কিন্তু ইমারজেন্সি টাকার প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা উত্তোলন সম্ভব। ক্রেডিট কার্ড গুলো এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন কার্ডটি ক্রেডিটের সঙ্গে সঙ্গে ডেবিট কার্ড হিসেবেও যেন কাজ করতে পারে। অর্থাৎ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে যেকোনো এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন সম্ভব। এক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি গ্রাহককে ধার হিসেবে টাকা প্রদান করে 

থাকে। পরবর্তীতে সুদসহ টাকা পরিশোধ করতে হয়। দ্রুত লেনদেন করার ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড অন্যতম একটি উপায় হিসেবে গণ্য করা হয়। অন্য কারো কাছ থেকে টাকা ধার না নিয়েই ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা উত্তোলন করা পাশাপাশি কেনাকাটা করার সুবিধা রয়েছে। ক্রেডিট কার্ড মূলত তৃতীয় পক্ষ হিসেবে কাজ করে থাকে, অর্থাৎ একজন ক্রেডিট কার্ড গ্রাহক হলো প্রথম পক্ষ এবং যেখান থেকে পণ্য ক্রয় করছেন অর্থাৎ দোকানদার হলো দ্বিতীয় পক্ষ। প্রথম পক্ষ অর্থাৎ ক্রেতার কাছে যদি পর্যাপ্ত ক্রয় ক্ষমতা সমেত টাকা না থাকে সেক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষ অর্থাৎ ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি এসে দোকানদার 
অর্থাৎ দ্বিতীয় পক্ষকে ধার হিসেবে টাকা প্রদান করবে। অবশ্যই ক্রেডিট কার্ড ক্রেতা কোম্পানির কাছে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ থাকবে যেন সুদ সমেত টাকা ফেরত দেয়। তাই প্রত্যেকটি ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি কর্তৃপক্ষ গ্রাহকে ক্রেডিট কার্ড গ্রহণের পূর্বে ক্রেডিট কার্ড এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে ধারণা দেওয়া উচিত। কেননা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের মধ্যবর্তী সময়ে যদি গ্রাহক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম সংক্রান্ত বিষয়গুলো যেমন হিডেন চার্জ সহ অন্যান্য বিলম্ব ফি সময় মত পরিশোধ না করে। তাহলে পরবর্তীতে ডবল চার্জ পরিশোধ করতে হয়।

ক্রেডিট কার্ড এর সুবিধা ও অসুবিধা

যুগে সাথে তাল মিলিয়ে প্রত্যেকটি দেশ সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এই দিক থেকে বাংলাদেশেও পিছিয়ে নেই। দ্রুত এবং আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে হিসেবে ক্রেডিট কার্ডের ব্যাপক পরিমাণ জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বড় কোন ধরনের কেনাকাটাসহ সঙ্গে থাকা ক্রেডিট কার্ডটি অনেকটাই সহজ করে দেয় জীবন যাপন। তবে অনেকে ক্রেডিট কার্ড কে ভয়ের একটি কারণ হিসেবে ধরে থাকেন। অনেকে বিশ্বাস করে এটা এক ধরনের ফাঁদ যেখানে পা দিলে আর বেরোনোর কোন রাস্তা নেই। প্রত্যেকটি ক্ষেত্র বিশেষে সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। ঠিক তেমনি ক্রেডিট কার্ড এর সুবিধা ও অসুবিধা গুলোও রয়েছে। 

কেউ যদি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম সংক্রান্ত বিষয়গুলো জেনে বুঝে সঠিকভাবে কার্ডের ব্যবহার করে তাহলে অসুবিধার থেকে সুবিধার পরিমাণই বেশি। আসুন তাহলে এবার ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

দ্রুত লেনদেন এর সুবিধা

ক্রেডিট কার্ড বর্তমান সময়ে জনপ্রিয় হওয়ার একমাত্র কারণ হলো এর দ্রুত লেনদেনের সিস্টেম। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য ক্রেডিট কার্ড একটি যুগোপযোগী মাধ্যম হিসেবে ধরা হয়। আবার ইমার্জেন্সি টাইমে কারো কাছ থেকে টাকা ধার করা বাদেই যেকোনো সময় ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা উত্তোলন করা সম্ভব। মনে করুন কেউ একজন দামী কোন একটা জিনিস কিনতে চাইছে। এই মুহূর্তে তার কাছে সেই পরিমাণ টাকা নেই। তার কাছে যদি একটি ক্রেডিট কার্ড থাকে তাহলে খুব সহজেই পণ্যটি কিনে ফেলতে পারে। পরবর্তীতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মূল্য পরিশোধ করার 

সুযোগ তো রয়েছেই। তাই একসঙ্গে কেউ যদি টাকা জোগাড় করতে না পারে তাহলে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে খুব সহজেই তার শখের জিনিস অথবা ইমারজেন্সি টাইমে টাকাগুলো কাজে লাগাতে পারে। মনে রাখতে হবে ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে ব্যাংক যে ধার হিসেবে টাকা প্রদান করবে সেগুলোর সুদের হার সব সময় একটু বেশি থাকবে। এছাড়া বুদ্ধি বিবেচনাকে কাজে লাগিয়ে বিশেষ করে বিলম্ব ফি বা অন্যান্য ফি সবসময়ই পরিশোধ করে রাখতে হবে। কোম্পানির কর্তৃপক্ষদের সাথে সবসময় যোগাযোগ মাধ্যমে রেওয়ার্ড এবং অফারের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে।

ঋণের ক্ষেত্রে সুবিধা

বিদেশে কিছু ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি রয়েছে যারা শূন্য শতাংশ সুদে ঋণ প্রদান করে থাকে। তবে বাংলাদেশে তেমনটি হয় না। শূন্য শতাংশে ঋণ প্রদান না করলেও বাংলাদেশের ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি বা ব্যাংকের মাধ্যমে যে সকল ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ করা হয় সেগুলোতে মোটামুটি সুদের আওতায় ঋণ পরিশোধ করলেই হয়। ক্রেডিট কার্ড এর সুবিধা ও অসুবিধা গুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো একটি সুবিধা হল মাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ মূল্য পরিশোধ করার পাশাপাশি মোটামুটি একটি সময় নির্ধারণ করা 

থাকে যার ভেতরে ঋণ পরিশোধ করার সুযোগ থাকে। কোন কোন ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি তাদের সুদের পরিমাণ বেশি রাখে। তাই ক্রেডিট কার্ড গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে কার্ড গ্রহণ করা উচিত।

সেফটি সুবিধা

বলাবাহুল্য যে নগদ, ডেবিট কার্ড ও চেক ব্যবহারের থেকে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি নিরাপদ এবং সুরক্ষা সংবলিত। কোনক্রমে যদি কারো ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি হয় বা চুরি হয় সেক্ষেত্রে অর্থ ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা রয়েছে। যা ডেবিট কার্ডে থাকে না। জালিয়াতি করে কেউ যদি টাকা তুলে নেয় সে ক্ষেত্রে অভিযোগের ভিত্তিতে কাঠ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান পুরো অর্থ ফেরত দিতে বাধ্য থাকে। সে ক্ষেত্রে গ্রাহককে অবশ্যই যথাযথ প্রমাণ সমেত উক্ত প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে পূর্বে আসলেই সে ক্রেডিট 

কার্ড ব্যবহারের নিয়ম মেনে সবসময়ই ঋণ পরিশোধের পাশাপাশি সঠিক কার্ডের হোল্ডার কিনা সেটা প্রমাণ করতে হবে। পাশাপাশি কার্ডের যে মালিক তাকে সতর্কতার সহিত কার্ডের পিন নাম্বার মনে রাখতে হবে। এজন্য আপনার মোবাইলে অথবা ডাইরিতে পিন নাম্বারটি লিখে রাখতে পারেন।

ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের সুবিধা

ক্রেডিট কার্ডে সব সময় বিভিন্ন রকম অফার এবং রেওয়ার্ড প্রদান করা হয়ে থাকে। অফার গুলোর মধ্যে ক্যাশব্যাক অফার স্পেশাল ডিসকাউন্ট উল্লেখযোগ্য। এজন্য সবসময়ই কোম্পানির কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে অফারের বিষয়গুলো জেনে রাখতে হবে। আবার দেশের বাইরে বেড়াতে গেলে হোটেলে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারে অনেক সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে মূল্য ছাড় পাওয়া যায়। প্লেনের টিকিট কাটার ক্ষেত্রেও যদি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা হয় সেখানে রয়েছে বিশেষ ছাড়। ঘন ঘন ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে কার্ডে স্কোর যোগ হয় পাশাপাশি যোগ হয় রেওয়ার্ড। 
রেওয়ার্ডগুলোর মধ্যেও থাকে ক্যাশব্যাক এবং অন্যান্য অফার। যেহেতু আপনি ক্রেডিট কার্ড বেশি ব্যবহারের করলেই কেবলমাত্র এ ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারেন। তাই এই সুবিধাটিকে বলা হয়েছে ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের সুবিধা।

ক্রেডিট কার্ডের অসুবিধা

প্রত্যেকটি বিষয়ের সুবিধা থাকার পাশাপাশি অসুবিধা থাকবে এটা একটি খুবই স্বাভাবিক বিষয়। এক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড ও এর বাহিরে নয়। দ্রুত লেনদেনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বহাল থাকলে ক্রেডিট কার্ডের কিছু লুকায়িত অসুবিধা রয়েছে। আপনি যদি একজন ক্রেডিট কার্ড হোল্ডার হন তাহলে আপনার বিভিন্ন রকম কাজকর্মে সহায়তা হয়ে থাকবে। তবে কিছু অসুবিধা থাকবে যেগুলো ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম গুলো যদি ভালোভাবে অনুসরণ করা হয় তাহলে অসুবিধা গুলো আর থাকেনা। তারপরও আপনাদের জ্ঞাতার্থে ক্রেডিট কার্ডের অসুবিধা গুলো নিচে পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হলো।

ঋণের ফাঁদ

অনেকেই ক্রেডিট কার্ডকে একটি ঋণের ফাঁদ হিসেবে গণ্য করে থাকে। বিষয়টি আসলে সেরকম নয়। আপনার ইমারজেন্সি সময়ে ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি যখন ধার হিসেবে আপনাকে টাকা প্রদান করে, সে ক্ষেত্রে সুদের হার বেশি ধরে থাকে যা ঋণের ফাঁদ হিসেবে ধরা হয়। কেননা ঠিক একই পরিমাণ অর্থ যদি সাধারন ভাবে কোন ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া হয় তাহলে সুদের পরিমাণ এতটা আসে না। তাই ক্রেডিট কার্ড এর সুবিধা ও অসুবিধা গুলোর মধ্যে ঋণের এই বিষয়টা বেশি অসুবিধা হিসেবে ধরা হয়।

পরিবর্তন করার অসুবিধা

একজন ক্রেডিট কার্ড হোল্ডার যদি মনে করে আর এই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে যোগ্য হিসেবে গণ্য নয়। তাই সে আর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে ইচ্ছুক নয়। তাহলে কার্ড বাতিল করার জন্য তাকে মূল শাখায় যেতে হয়। সেখানে যাওয়ার পর আরো অনেক কিছু কাগজপত্র এবং প্রমাণ দাখিল করার পরে কেবলমাত্র ক্রেডিট কার্ড বাতিল করা সম্ভব। আবার কেউ যদি ক্রেডিট কার্ড পরিবর্তন করতে চায় সেক্ষেত্র একটি জটিল প্রসেসের মাধ্যমে কার্ড পরিবর্তন করা হয়ে থাকে। আর এ সকল কার্যসম্পাদনের জন্য অবশ্যই একটি চার্জ রয়েছে যা বাড়তি অর্থ নষ্ট হয়ে থাকে। আর এগুলো ক্রেডিট কার্ডের অসুবিধার মধ্যেই পড়ে।

হিডেন চার্জ

যদিও ক্রেডিট কার্ড কোম্পানিগুলো গ্রাহককে ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত সকল তথ্য প্রদান করে। তবে কিছু হিডেন চার্জ রয়েছে যেগুলো কর্তৃপক্ষ সবসময়ই গ্রাহককে জানায় না। আর এই হিডেন চার্জগুলো পরবর্তীতে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীকে বিষময় করে তোলে। একমাত্র সুদের হার পরিশোধ করলেই মুক্তি পাওয়া যাবে বিষয়টি এমন টাও নয়। সময় মত যদি মাসিক মূল্য পরিশোধ না করা হয় সে ক্ষেত্রেও গ্রাহকে জরিমানা গুনতে হয়। আবার ক্রেডিট কার্ডে যে লিমিট থাকে সেই লিমিট ক্রস করলেও নির্দিষ্ট 

পরিমাণ জরিমানা রয়েছে। সুতরাং কারো যদি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম এবং সময় জ্ঞান সংক্রান্ত বিষয়ে সচেতন না হয় তাহলে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা খুবই বিপদজনক।

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম

ক্রেডিট কার্ড এর সুবিধা ও অসুবিধা জানার পাশাপাশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার কিভাবে করতে হয় সেগুলো জানাও খুব জরুরী। কেননা ব্যবহার সংক্রান্ত বিষয়গুলো যদি না জানা থাকে তাহলে নিজের অজান্তেই আমাদেরকে অনেক অনেক বেশি ফি দিতে হয়। যেহেতু প্রত্যেকটি বিষয়ের একটি নিয়ম-কানুন রয়েছে তাই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারেও অনেক নিয়ম কানুন বেঁধে দেওয়া আছে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে হলে যে সকল নিয়ম-কানুন অনুযায়ী আপনাকে চলতে হবে নিচের সেগুলো পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হলো।
  • প্রতি মাসেই কার্ডের অর্থ পরিশোধ করতে হবে এবং যদি লোন নেওয়া হয় সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই লোন পরিশোধ করতে হবে।
  • ইচ্ছা অনুসারে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে এবং একমাত্র ইমারজেন্সি প্রয়োজনের ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা উচিত।
  • জরুরি অবস্থায় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে এতে করে প্রয়োজন মিটানোর পাশাপাশি ঋণের ফাঁদে পড়া সম্ভাবনা থাকে না।
  • কখনোই বিল পরিশোধ এড়ানো চলবে না। অর্থাৎ ক্রেডিট কার্ড এর সুবিধা ও অসুবিধা বিশ্লেষণ করলে ক্রেডিট কার্ডের যেগুলো বিল যেমন হিডেন চার্জ, বিলম্ব ফি, জরিমানা সুদ থাকে সেগুলো অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। না হলে পরবর্তীতে সেগুলোর চার্জ ডাবল হিসেবে দিতে হয়। আবার বিলম্বফি ঠিক টাইমে পরিষদ না করলে সেগুলো ক্রেডিট স্কোরে খারাপ প্রভাব ফেলে।
  • বাজেট সহায়ক টুল হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করতে হবে। যদি কোন গ্রাহক আত্মবিশ্বাসী হয় যেন প্রতি মাসেই নিয়মিত বিল পরিশোধ করার ক্ষমতা থাকে তাহলে কেবলমাত্র ক্রেডিট কার্ড ক্রয় করা উচিত।
  • ক্রেডিট কার্ডের ব্যয় নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেন না যায়। সেজন্য এক মাস চলার জন্য ব্যাংকের একাউন্টে যে পরিমাণ অর্থ আছে তার চেয়ে বেশি খরচ করা যাবে না।
  • ক্রেডিট কার্ডের রিওয়ার্ড পয়েন্ট এর সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এসফল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের ক্রেডিট কার্ডে রিওয়ার্ডের ব্যবস্থা করে লিখেছে তাদের ক্রেডিট কার্ড বাছাই করা জরুরী। নিয়মিত বিল পরিশোধ করলে সুদ ছাড়াই যেমন কার্ডের সুবিধা নিতে পারছেন। আবার রিওয়ার্ড পয়েন্ট এর মাধ্যমে বাড়তি সুবিধা গুলো গ্রহণ করা যায়।
  • ক্রেডিট লিমিটের ৩০ শতাংশের মধ্যে ব্যয় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। অতিরিক্ত ব্যয় নিয়ন্ত্রণে এবং ঋণের ফা দেয়াতে ক্রেডিট কার্ডের লিমিটেড ৩০% পর্যন্ত ব্যয় করতে হবে।
  • বিল পরিষদের ক্ষেত্রে শেষ তারিখের জন্য অপেক্ষা করা উচিত হবে না। যদিও প্রত্যেকটি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম হল ৫০ দিনের মধ্যে বিল পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু আমাদের উচিত বিল পরিশোধের জন্য সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের মধ্যে বিল পরিশোধ করা। এতে করে সুদ বিহীন সুবিধা পাওয়া সম্ভব। কেননা অনেক সময় আমরা বিভিন্ন কাজকর্মে বিষয়টি ভুলে যায় আর যদি ভুলে যায় সেক্ষেত্রে আমাদের বাড়তি ফি পরিশোধ করতে হবে। ৫০ দিনের জায়গায় আমরা ৪৫ দিন হিসাব করে বিল পরিশোধ করার চেষ্টা করব।
  • বিভিন্ন ফি এবং চার্জের বিষয়ে নিজেকে আপডেট রাখতে হবে। কেননা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ফি এবং হিডেন চার্জ রয়েছে। তাই সেই সকল চার্জের বিষয়ে খোঁজখবর রাখার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
বড় অংকের অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের ক্রেডিট কার্ডে বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে কম সুদে হিসাব করে থাকে। তাই সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে নেওয়া উচিত। আশা করি আপনারা ক্রেডিট কার্ড এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে জানার পাশাপাশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম সংক্রান্ত সকল বিষয় সম্পর্কে অবগত হতে পেরেছেন। ভবিষ্যতে যদি কারো ক্রেডিট কার্ড নিতে ইচ্ছা হয় তাহলে উপরে বর্ণিত সকল তথ্যগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করার মাধ্যমেই কেবলমাত্র ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ করা উচিত।

ক্রেডিট কার্ড লিমিট

ক্রেডিট কার্ড লিমিট বা ক্রেডিট সীমা বলতে সাধারণত ক্রেডিট ইস্যুকারী একজন ঋণগ্রহীতাকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনুমতি দেবে এমন সর্বোচ্চ পরিমাণ ক্রেডিট হিসেবে নির্ধারণ করা। মূলত এটি একাধিক বিষয়ের উপর নির্ভর করে যেমন আয় এবং আর্থিক অবস্থার উপরে ক্রেডিট কার্ড নির্ভর করে। ক্রেডিট ইস্যু কারী ক্রেডিট সীমা বা ক্রেডিট কার্ডের লাইন প্রসারিত করার ক্ষমতা রাখে। উদাহরণস্বরূপ একজন ক্রেডিট কার্ড হোল্ডার একজন ব্যক্তির জন্য একটি ক্রেডিট কার্ড অনুমোদন প্রাপ্ত হওয়ার পর ঋণ গ্রহণকারী ব্যক্তি কতটা ব্যয় করার ক্ষমতা রাখে তার একটি নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করা থাকে। 

আর এই সীমা টাকেই বলা হয় ক্রেডিট কার্ড লিমিট। ক্রেডিট কার্ড হোল্ডার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সময়ে যদি ক্রেডিট কার্ড লিমিটে পৌঁছে যায়। সে ক্ষেত্রে কিছু ব্যালেন্স অর্থ প্রদান করা না হলে ওই ব্যক্তিটি আর ক্রেডিট কার্ডটি ব্যবহার করতে পারে না। আবার কোন কোন ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্রেডিট কার্ড লিমিট ক্রস করার পরেও শিথিল করে রাখে। কিন্তু অতিরিক্ত সীমা পার করার পর অবশ্যই পেনাল্টি ফি চার্জ করা হয়ে থাকে। আসুন ক্রেডিট কার্ড লিমিট কিভাবে কাজ করে বিষয়টি আরো ভালোভাবে জানার চেষ্টা করা যাক। 
যদি একজন ক্রেডিট কার্ড প্রদানকারী ক্রেডি টিস্যু করে ৫০০০ টাকা। তাহলে উক্ত টাকাটি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী একটি খরচ করতে পারবেন। পরবর্তীতে একই পরিমাণ চার্জ ধরা হবে। কিন্তু ওই ব্যক্তিটি যদি ৪৫০০ টাকা খরচ করে তাহলে বাকি ব্যালেন্স অর্থাৎ ৫০০ টাকা হবে ক্রেডিট। তাহলে ওই ব্যক্তি এখন ব্যয় করতে পারে উপলব্ধি পরিমাণ টাকা। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্রেডিট সীমা সেট করা হলে সুদের চার্জ ও অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে। তাহলে যদি একজন ব্যক্তির উপলব্ধ পরিমাণের উপর ১০% চার্জ করা হয় তবে তারা এখন উপলব্ধ পরিমাণ থেকে টাকার পরিমান গিয়ে দাঁড়াবে ৪৫০। 

বিষয়গুলো বোঝার জন্য অর্থাৎ ক্রেডিট কার্ড এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কিত তথ্যগুলো অবশ্যই নিয়োগকৃত কর্মচারীর সাথে আলোচনা মাধ্যমে আরো বিস্তারিতভাবে জানা সম্ভব।

ক্রেডিট কার্ড এর ইন্টারেস্ট

আমরা এতক্ষণ পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারলাম। ক্রেডিট কার্ড থেকে ইমারজেন্সি টাইমে ঋণ গ্রহণ করে সে টাকা নির্দিষ্ট একটি সময়ের মধ্যে পরিষদ করার সুযোগ রয়েছে। মূলত যেই তারিখে ঋণ গ্রহণ করা হলো অর্থাৎ ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা উত্তোলন করা হলো সেই দিনের তারিখ থেকে ৫০ দিনের মধ্যে উত্তোলনকৃত টাকার সাথে নির্দিষ্ট পরিমাণ ইন্টারেস্ট যোগ করে সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা দিয়েছিল ক্রেডিট কার্ডের সুদ অন্যরিনের সুদের চেয়ে ৫% এর বেশি হবে না ফলে ব্যাংকগুলো ১৪% পর্যন্ত সুদ আদায় করতে সক্ষম 

হতো। অনেক ব্যাংক বিভিন্নভাবে এর চেয়ে ও বেশি টাকা আদায় করেছে। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্রেডিট কার্ড এর ইন্টারেস্ট ব্যবস্থা করে দিয়েছে। বর্তমানে ক্রেডিট কার্ড কোম্পানিগুলো ২০ শতাংশ হারে ঋণ প্রদানের পর গ্রাহকের কাছ থেকে সুদসহ ঋণের টাকা আদায় করতে পারবে। বলাবাহুল্য যে অন্যান্য ব্যাংক অথবা এনজিও তুলনায় ক্রেডিট কার্ডের সুদের পরিমাণ অনেকটাই বেশি। কারো যদি ইমারজেন্সি প্রয়োজন না পড়ে তাহলে কোন ভাবে ক্রেডিট কার্ড থেকে লোন নেওয়া উচিত নয়। 

ক্রেডিট কার্ডে রয়েছে বিভিন্ন রকম হিডেন চার্জ যা একজন মধ্যবিত্ত ব্যক্তির পক্ষে চালানো সম্ভব নয়। কেউ যদি একবার ক্রেডিট কার্ড নিয়ে ফেলে তাহলে অবশ্যই জেনে বুঝে কার্ডটি ব্যবহার করা উচিত। যদি কেউ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম গুলো ভালোভাবে ফলোআপ না করে এবং ইচ্ছামত ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে। তাহলে পরবর্তী সময়ে সুদ আমের টাকা দেওয়া অনেকটাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে।

লেখকের শেষকথা

আমরা আজকের এই আর্টিকেলের একদম শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। আপনারা ইতিমধ্যে অবগত হতে পেরেছেন যে ক্রেডিট কার্ড কি এবং ক্রেডিট কার্ড এর সুবিধা ও অসুবিধা গুলো কি কি রয়েছে। আমাদের আর্টিকেলের তথ্য গুলো জানার পাশাপাশি যদি আপনাদের ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে আরও বিস্তারিত কোন কিছু জানতে হয় তাহলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার পূর্বে অবশ্যই জেনে বুঝে সঠিক সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করবেন। 

আপনার বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম সংক্রান্ত বিষয়গুলো জানানোর জন্য অবশ্যই আজকের এই পোস্টটি শেয়ার করবেন। আমরা সবসময়ই আমাদের ওয়েবসাইটে সকল রকম তথ্যবহুল পোস্ট পাবলিশ করে থাকি। আপনি চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url