ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তোলার নিয়ম জানুন

ডিজিটাল যুগের সাথে তাল মিলাতে আমাদের প্রয়োজন নিজেকে আরও স্মার্ট করে গড়ে তোলা। বর্তমানে পকেটে টাকা না নিয়ে গেলেও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে শপিং এমনকি টাকা উত্তোলন করা যায়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে আমাদের খুব একটা ভালো ধারণা নেই। চলুন আজকে ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তোলার নিয়ম সংক্রান্ত বিষয়গুলো ভালোভাবে জেনে নেওয়া যায়। 
ক্রেডিট-কার্ড-থেকে-টাকা-তোলার-নিয়ম
আজকেরে আর্টিকেলের মাধ্যমে উক্ত বিষয় ব্যতীত আরও যে সকল বিষয় সম্পর্কে জানতে চলেছেন সেগুলো হল ক্রেডিট কার্ড কি এবং ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম। পাশাপাশি অবশ্যই ক্রেডিট কার্ডে টাকা পরিশোধের নিয়ম এবং ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তোলার নিয়ম বিষয়গুলো জানার জন্য আর্টিকেলের শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্র

ক্রেডিট কার্ড কি

সাধারণত ক্রেডিট কার্ড মানে কি এ বিষয়টি আমাদেরকে বারবার ভাবিয়ে তোলে। ক্রেডিট কার্ড হলো একটি বিশেষ ধরনের পরিশোধ ব্যবস্থা যার অংশ হিসেবে ব্যবহৃত প্লাস্টিক কার্ড যা ওই পরিশোধ ব্যবস্থা ব্যবহারকারীদেরকে ইস্যু করা হয়। ক্রেডিট কার্ডের বাহক পণ্য ও সেবা ক্রয় করার জন্য মূল্য পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ কোনরকম টাকা পয়সা ব্যতীত যেকোনো পণ্য ক্রয় করার ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে তা পরিশোধ করা যায়। সাধারণত স্থানীয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বা ক্রেডিট ইউনিয়ন ভোক্তাদের কাছে এ ধরনের কার্ডগুলো ইস্যু করে থাকে। 

ক্রেডিট কার্ডগুলোর আকার আকৃতি আইএসও এবং আইইসি ৭৮১০ আইডি-১ আদর্শ মেনে চলে। অনেকে চার্জ কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ডকে গুলিয়ে ফেলেন। কার দুটি সিস্টেম এক হলেও চার্জ কার্ড প্রতিমাসে বা প্রত্যেক চক্রের শেষে পুনরায় টাকা ভরতে হয় যা ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে ভরতে হয় না। আবার ক্রেডিট কার্ডে ব্যবহারকারীদের ঋণ নেওয়ার সুবিধা দেওয়া থাকে অবশ্য তা সুদসহ ফেরত দিতে হয়। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি ঋণ গ্রহণ করতে চায়, সেক্ষেত্রেও ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তোলার নিয়ম ফলোআপ করার মাধ্যমে ঋণ গ্রহণ করতে পারবে। 

ক্রেডিট কার্ড ক্যাশ কার্ডের চেয়েও ভিন্ন কেননা ক্যাশ কার্ডের মত এখানে টাকা বা অর্থের বিনিময়ে ব্যবহার করা হয় না। ক্রেডিট কার্ডে তৃতীয় পক্ষ কাজ করে যারা বিক্রেতাদের অর্থ দেয় এবং ক্রেতাদের অর্থ পরিশোধ করে। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১.১১২ বিলিয়ন কার্ডের প্রচলন ছিল। বর্তমানে ক্রেডিট কার্ডের পরিমাণ আরো বেশি পরিমাণ হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তোলার নিয়ম

ক্রেডিট কার্ড লাগজারির প্রতীক হওয়ার পাশাপাশি ভীষণ দরকারি একটি জিনিস বলে উল্লেখ করা হয়। এটি ব্যবহারের ফলে কেনাকাটা করা বা পেমেন্ট করার সময় সব থেকে একটি সহজ উপায় হিসেবে গণ্য করা হয়। ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি সুবিধা হল ৫০ দিন পর্যন্ত ইন্টারেস্ট ফ্রি পিরিয়ড এবং ইএমআই নো কস্ট, ক্যাশব্যাক রিওয়ার্ড পাওয়ার মত বিভিন্ন সুযোগ পাওয়া যায়। আবার পেমেন্টের জন্য ব্যবহার করা হলেও এর বাহিরে আরো একটি সুবিধা রয়েছে সেটা হল ডেবিট কার্ডের মত ব্যবহার করা যায়। অর্থাৎ যে কোন মুহূর্তে ডেবিট কার্ডের মত ইনস্ট্যান্ট ক্যাশ যে কোন 
এটিএম বুথ থেকে গ্রাহক তুলতে পারবে। তবে ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তোলার অবশ্যই নিয়ম বা কিছু ধাপ রয়েছে। এগুলো ভালোভাবে সম্পূর্ণ করতে পারলেই যে কোন ব্যক্তি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারবে এতে কোন সন্দেহ নেই। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার জন্য অবশ্যই কিছু যোগ্যতা এবং কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে। তবে এখানে ঘাবরানোর কিছু নেই। সহজ কিছু শর্তসাপেক্ষে এবং সাথে কিছু ডকুমেন্ট সাবমিট করলে যেকোনো ব্যাংকের যারা ক্রেডিট কার্ড হোল্ডার হিসেবে কাজ করছে তাদের কাছ থেকে ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ করা যাবে। আসুন তাহলে এবার জেনে নেওয়া যাক ক্রেডিট কার্ড পেতে হলে কোন বিষয়গুলো এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস লাগবে।
  • ক্রেডিট কার্ড পেতে হলে যে ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড সংগ্রহ করবেন সেই ব্যাংকের শাখায় একাউন্ট থাকতে হবে।
  • একাউন্ট খোলার পর অবশ্যই অ্যাকাউন্টে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখতে হবে।
  • ক্রেডিট কার্ডের জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন পত্র দাখিল করতে হবে।
  • আপনার আয়ের উৎস দেখে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে দিবে।
  • সকল কাগজপত্র জমা হয়ে গেলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তোলার নিয়ম অনুযায়ী আপনাকে ক্রেডিট কার্ড প্রদান করবে।
  • ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম অনুযায়ী এরপরে কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হবে যেটা আবেদনপত্র করার সময় এটাচ করতে হয়। যদিও যেকোনো পেশার মানুষ ক্রেডিট কার্ড নিতে পারে। তবে অবশ্যই গ্রাহকের আয় বৈধ এবং টিআইএন থাকতে হবে। এগুলো ব্যতীত আরও যে অতিরিক্ত কিছু ডকুমেন্ট প্রয়োজন সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো।
  • গ্রাহকের জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
  • সদ্য তোলা রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • টিআইএন সার্টিফিকেট অরজিনাল এবং ফটোকপি দুটোই লাগবে।
  • যারা কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন অর্থাৎ চাকুরিজীবীদের ক্ষেত্রে এপয়েন্টমেন্ট লেটার স্যালারি সার্টিফিকেট ও তিন মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রয়োজন হবে।
  • ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন সার্টিফিকেট এবং তিন মাসের ব্যাংক ট্রানজেকশন স্টেটমেন্ট লাগবে।
এগুলো ব্যতীত যদি আরো কিছু অতিরিক্ত কাগজপত্র লাগে সেক্ষেত্রে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপনাকে অবগত করবেন। আশা করি উক্ত কাগজপত্র গুলো জমা দেওয়ার পর ক্রেডিট কার্ডের আবেদন করলে ৩ থেকে ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত ক্রেডিট কার্ডটি পেয়ে যাবেন। ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার পর কিভাবে টাকা তোলা যায় অর্থাৎ কোন কোন পদ্ধতি অবলম্বন এর মাধ্যমে টাকা তোলা সম্ভব সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো।

এটিএম বুথ

ইনস্ট্যান্ট ক্যাশ পাওয়ার জন্য ক্রেডিট কার্ড ডেবিট কার্ড হিসেবে ও ব্যবহার করা যায়। আর এটি হল ক্রেডিট কার্ডের অন্যতম একটি সুবিধা। যে ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ডটি ইস্যু করা হয়েছে উক্ত ব্যাংকের অথবা পার্টনার ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে সরাসরি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে টাকা তোলার সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে অবশ্যই জেনে নিতে হবে যে ব্যাংকের আপনি ক্রেডিট কার্ড হোল্ডার সেই ব্যাংকের সাথে কোন কোন ব্যাংকের কোলাবরেশন রয়েছে। যেসব ব্যাংক পার্টনার হিসেবে কাজ করছে শুধুমাত্র সেই সকল ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে উক্ত টাকা তোলা সম্ভব। 

তবে আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে এটিএম বুথ থেকে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে যদি টাকা উত্তোলন করেন সেক্ষেত্রে সুদের পরিমাণ বেশি এবং আরো অনেক হিডেন চার্জ থাকতে পারে। তাই একমাত্র ইমারজেন্সি না হলে এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন না করাই ভালো। এর কারণ হলো ক্রেডিট কার্ড এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলছেন এর মানে ব্যাংক থেকে আপনি ঋণ বা ধার নিচ্ছেন। আর এক্ষেত্রে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অনেক বেশি চার্জ করে থাকে সাধারণ ডেভিড কার্ডের চাইতে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে যদি এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলা হয় তাহলে খরচ অনেক বেশি আসে। 

আর এ ধরনের কাজগুলো আমাদের নিজেদের অজান্তেই হয়ে যায়। তাই ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তোলার নিয়ম এবং ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম গুলো আমাদের অবশ্যই ভালোভাবে জানা উচিত। কেননা ভুলবশত যদি এটিএম বুথ থেকে টাকা ধার করা হয় পরবর্তীতে নিজের অজান্তেই অনেক অনেক বেশি ফি দিতে হয়। এছাড়া এটিএম বুথ থেকে টাকা উইথ ড্র করলে ক্রেডিট স্কোর খারাপ হয়ে থাকে। আর ক্রেডিট স্কোর খারাপ হলে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে মাসিক পেমেন্টের অ্যামাউন্ট বেড়ে যেতে পারে। তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকা খুবই জরুরী।

চেক

ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে চেক ব্যবহার করে যেভাবে কেনাকাটা সম্পন্ন করা যায় ঠিক একইভাবে ক্রেডিট কার্ড চেক ব্যবহার করেও ক্রেডিট কার্ডে থাকা অর্থ ব্যবহারের সুবিধা ভোগ করা সম্ভব। ফ্লিপকার্টের চেক ব্যবহার করে বিল পে করা ছাড়াও আউটস্ট্যান্ডিং ব্যালেন্সের বাকিও পরিশোধ করা সম্ভব। তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে কোন তারিখে চেক ব্যবহার করবেন ওইদিন থেকে ইন্টারেস্ট পরিশোধ করতে হবে। এখানে বলা বাহুল্য যে ক্রেডিট কার্ড চেকের ইন্টারেস্টের সাধারণ কেনাকাটার চেয়ে বেশি হয়ে থাকবে। 
কে কার্ড চেক লিংক থাকে ক্রেডিট কার্ডের সাথে কোন পণ্য বা সেবা ক্রয় করার ক্ষেত্রে চেক ব্যবহার করলে তা ক্রেডিট কার্ড স্টেটমেন্ট এ দেখা যায়। কোন স্পেশাল অফারের অংশ হিসেবে অনুযায়ী ক্রেডিট কার্ড চেক ব্যবহার করতে চাইলে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সকল শর্তাবলী পড়ে নিতে হবে। আবার কোন ক্রেডিট কার্ড চেকঅভাবিত অবস্থায় থেকে গেলে, যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা উচিত। যাতে চেক ব্যবহার করে কেউ প্রতারণা করতে না পারে।

মোবাইল ওয়ালেট

ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডে এমন একটি সুবিধা দিয়ে রেখেছে যা বিকাশ ও নগদ এর মত মোবাইল ওয়ালেট সেবা ব্যবহার করে ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তোলা সম্ভব। একজন ক্রেডিট কার্ড গ্রাহক ক্রেডিট কার্ড থেকে মোবাইল ব্যাংকিং ওয়ালেটে টাকা এনে যদি খরচ করতে চায়, সে ক্ষেত্রে ব্যাংক ভেদে শুধুমাত্র ট্রান্সফার চার্জ দিয়ে টাকা তুলতে পারবে। এখানে বলে রাখা ভালো উক্ত চার্জ ব্যাংক ভেদে আলাদাভাবে হিসাব করা হয়। যদি কেউ ট্রান্সফার করা অর্থ ক্যাশ আউট করতে চায় সেক্ষেত্রে আবার ক্যাশ আউট ফি প্রদান করতে হয়।

আশা করি উপরে উল্লেখিত তিনটি উপায়ের মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। আশা করি একটি বিষয় আপনাদের মাঝে পরিষ্কার হলো যে ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তোলা খুব একটা লাভজনক নয়। বরং বিভিন্ন রকম হিডেন চার্জের জালে আপনি অজান্তেই ফেঁসে যেতে পারেন। তাই আপনাদেরকে বলছি শুধুমাত্র এমার্জেন্সি ছাড়া ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার না করাই ভালো। তবে আপনি আপনার লাইফস্টাইলকে অন্য লেভেলে নিয়ে যেতে চাইলে অবশ্যই ক্রেডিট কার্ড হোল্ডার হতে পারবেন। 

তবে এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম সংক্রান্ত সকল বিষয়গুলো জানতে হবে। আসুন তাহলে এবার কোন নিয়মগুলো সঠিকভাবে পালন করলে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার খুব একটা আর জটিল থাকে না।

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম

ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তোলার নিয়ম জানার পাশাপাশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার কিভাবে করতে হয় সেগুলো জানাও খুব জরুরী। কেননা ব্যবহার সংক্রান্ত বিষয়গুলো যদি না জানা থাকে তাহলে নিজের অজান্তেই আমাদেরকে অনেক অনেক বেশি ফি দিতে হয়। যেহেতু প্রত্যেকটি বিষয়ের একটি নিয়ম-কানুন রয়েছে তাই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারেও অনেক নিয়ম কানুন বেঁধে দেওয়া আছে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে হলে যে সকল নিয়ম-কানুন অনুযায়ী আপনাকে চলতে হবে নিচের সেগুলো পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হলো।
  • প্রতি মাসেই কার্ডের অর্থ পরিশোধ করতে হবে এবং যদি লোন নেওয়া হয় সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই লোন পরিশোধ করতে হবে।
  • ইচ্ছা অনুসারে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে এবং একমাত্র ইমারজেন্সি প্রয়োজনের ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা উচিত।
  • জরুরি অবস্থায় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে এতে করে প্রয়োজন মিটানোর পাশাপাশি ঋণের ফাঁদে পড়া সম্ভাবনা থাকে না।
  • কখনোই বিল পরিশোধ এড়ানো চলবে না। অর্থাৎ ক্রেডিট কার্ডের যেগুলো বিল যেমন হিডেন চার্জ, বিলম্ব ফি, জরিমানা সুদ থাকে সেগুলো অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। না হলে পরবর্তীতে সেগুলোর চার্জ ডাবল হিসেবে দিতে হয়। আবার বিলম্বফি ঠিক টাইমে পরিষদ না করলে সেগুলো ক্রেডিট স্কোরে খারাপ প্রভাব ফেলে।
  • বাজেট সহায়ক টুল হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করতে হবে। যদি কোন গ্রাহক আত্মবিশ্বাসী হয় যেন প্রতি মাসেই নিয়মিত বিল পরিশোধ করার ক্ষমতা থাকে তাহলে কেবলমাত্র ক্রেডিট কার্ড ক্রয় করা উচিত।
  • ক্রেডিট কার্ডের ব্যয় নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেন না যায়। সেজন্য এক মাস চলার জন্য ব্যাংকের একাউন্টে যে পরিমাণ অর্থ আছে তার চেয়ে বেশি খরচ করা যাবে না।
  • ক্রেডিট কার্ডের রিওয়ার্ড পয়েন্ট এর সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এসফল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের ক্রেডিট কার্ডে রিওয়ার্ডের ব্যবস্থা করে লিখেছে তাদের ক্রেডিট কার্ড বাছাই করা জরুরী। নিয়মিত বিল পরিশোধ করলে সুদ ছাড়াই যেমন কার্ডের সুবিধা নিতে পারছেন। আবার রিওয়ার্ড পয়েন্ট এর মাধ্যমে বাড়তি সুবিধা গুলো গ্রহণ করা যায়।
  • ক্রেডিট লিমিটের ৩০ শতাংশের মধ্যে ব্যয় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। অতিরিক্ত ব্যয় নিয়ন্ত্রণে এবং ঋণের ফা দেয়াতে ক্রেডিট কার্ডের লিমিটেড ৩০% পর্যন্ত ব্যয় করতে হবে।
  • বিল পরিষদের ক্ষেত্রে শেষ তারিখের জন্য অপেক্ষা করা উচিত হবে না। যদিও প্রত্যেকটি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম হল ৫০ দিনের মধ্যে বিল পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু আমাদের উচিত বিল পরিশোধের জন্য সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের মধ্যে বিল পরিশোধ করা। এতে করে সুদ বিহীন সুবিধা পাওয়া সম্ভব। কেননা অনেক সময় আমরা বিভিন্ন কাজকর্মে বিষয়টি ভুলে যায় আর যদি ভুলে যায় সেক্ষেত্রে আমাদের বাড়তি ফি পরিশোধ করতে হবে। ৫০ দিনের জায়গায় আমরা ৪৫ দিন হিসাব করে বিল পরিশোধ করার চেষ্টা করব।
  • বিভিন্ন ফি এবং চার্জের বিষয়ে নিজেকে আপডেট রাখতে হবে। কেননা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ফি এবং হিডেন চার্জ রয়েছে। তাই সেই সকল চার্জের বিষয়ে খোঁজখবর রাখার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
  • বড় অংকের অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের ক্রেডিট কার্ডে বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে কম সুদে হিসাব করে থাকে। তাই সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে নেওয়া উচিত।

ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা

একজন ক্রেডিট কার্ডের অধিকারী যদি ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তোলার নিয়ম অনুযায়ী টাকা উত্তোলন করে সেক্ষেত্রে অনেক সুবিধাই পেয়ে থাকে। ইমারজেন্সি টাইমে যেকোনো এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলা সম্ভব। যদি কার্ডে টাকা নাও থাকে সে ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ধার হিসেবে টাকা প্রদান করছে যা ইমারজেন্সি সময়ে অনেকটাই কাজে আসে। ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে কেননা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যে টাকা ধার হিসেবে দিচ্ছে সেটার সুদ অনেকটাই বেশি এবং আরো অন্যান্য হিডেন চার্জ সংবলিত করা হয়ে থাকে। 
এটা মানতেই হবে যে ইমারজেন্সি সময়ে সপ্তাহের যেকোনো দিনে হাতে ক্যাশ পাওয়ার মতো ভালো উপায় ক্রেডিট কার্ড ব্যতীত আর কোথাও নেই। এছাড়া রিওয়ার্ড পয়েন্ট এর ব্যবস্থা করা হয়েছে এরকম ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা হলে সুদের পরিমাণ কমিয়ে আনা সহ আরো অনেক বাড়তি সুবিধা গ্রহণ করা যায়। তবে এক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড হোল্ডারদের অবশ্যই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম অনুযায়ী সকল বিষয় পরিলক্ষিত করে চলতে হবে। ক্রেডিট কার্ড এমন একটি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল যদি কেউ নিয়ম গুলো ফলো না করে তাহলে কখনোই সে ক্রেডিট কার্ড চালাতে পারবেনা। 

বরং বিভিন্ন রকম ঝামেলার মধ্যে পড়ে যাবে। তাই ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা গুলো ভোগ করতে হলে অবশ্যই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম সংক্রান্ত সকল বিষয়গুলো ভালোভাবে জেনে রাখতে হবে।

ক্রেডিট কার্ডের অসুবিধা

প্রত্যেকটি জিনিসের সুবিধা থাকার পাশাপাশি অসুবিধা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে ক্রেডিট কার্ড যেহেতু আমাদের ইমারজেন্সি সময়ে অনেকটাই কাজে আসে তাই এটাকে এড়ানো একেবারে সম্ভব নয়। যদিও কিছু অসুবিধা রয়েছে সেগুলো যদি আমরা ভালোভাবে নিয়মমাফিক ফলো করি তাহলে অসুবিধা গুলো আর থাকে না। তবে আপনাদের জ্ঞাতার্থে ক্রেডিট কার্ডের অসুবিধা গুলো নিচে বর্ণনা করা হলো।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে, ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তোলার নিয়ম অনুসারে অর্থ উত্তোলন প্রতিটি লেনদেনের ফি আলাদাভাবে হিসাব করা হয়।
  • প্রতিটি ট্রানজেকশনের জন্য আপনাকে পরিমাণ এর উপর সুদ প্রদান করতে হবে যা অনেকটাই বিশাল।
  • ক্রেডিট কার্ড থেকে নগর তোলার জন্য যদি কেউ বিল পরিশোধ না করে বা আংশিকভাবে পরিশোধ করে, সেক্ষেত্রে মোট ক্রেডিট কার্ডের বিলের উপর সুদ নেওয়া হবে, শুধুমাত্র নগদ তোলার উপর নয়।
  • আবার কোন গ্রাহক যদি ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে নগদ অগ্রিমের জন্য বেছে নেয়, সেক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি দেওয়া কোন রকম রিওয়ার্ড গ্রান্টেড হবে না।
  • ক্রেডিট কার্ড থেকে অর্থ উত্তোলন ক্রেডিট রেটিং স্কোরকে প্রভাবিত করে না। কেউ যদি ঋণ পরিষদের ডিফল্ট করে সেক্ষেত্রে স্কোরের উপর একটি প্রভাব রয়েছে।
  • এটিএম থেকে টাকা উইথড্র বা ধার নিলে বড় আকারের সুদ প্রদান করতে হয়।
  • ইচ্ছামতো যদি ক্রেডিট কার্ড অপব্যবহার করা হয় সে ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ডের বিলের বোঝা আয়ত্বের বাহিরে চলে যায় যা পরবর্তীতে আর পরিশোধ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। তাই এ বিষয়ে অবশ্যই আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে।

ক্রেডিট কার্ডের টাকা পরিশোধের নিয়ম

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম জানার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেডিট কার্ডে টাকা পরিশোধের নিয়ম জানাটাও খুবই জরুরি একটি বিষয়। কেননা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই আপনাকে নিয়মিত বিল পরিশোধ সহ অন্যান্য সকল কিছু নিয়ম অনুযায়ী পরিশোধ করতে হবে। যদি একবার কেউ ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ করে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সময়মতো পেমেন্ট পরিশোধ করা। বিলম্ব ফি গুলো সঠিক সময় পরিশোধ না করলে ক্রেডিট স্কোর খারাপ হয় যা পরবর্তীতে আপনার কার্ডে বিভিন্ন সুবিধা বঞ্চিত হয়ে পরে। 

মূলত ক্রেডিট কার্ডের টাকা পরিশোধের নিয়ম হল যে তারিখে টাকা নিচ্ছেন বা কোন পণ্য ক্রয় করছেন সে তারিখ থেকে হিসাব করতে হবে। ধরুন কেউ যদি ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কোন মাসের এক তারিখ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত টাকা খরচ করে। তবে তাকে পরের মাসের ১৪ তারিখ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে সেই দিন পরিশোধ করতে হবে। কেউ যদি মাসের এক তারিখের মধ্যে সকল টাকা ব্যয় করে ফেলে সেক্ষেত্রে ৪৫ থেকে ৫০ দিন পর্যন্ত সময় পাবে সেই ঋণ পরিশোধ করার ক্ষেত্রে।

ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ড

ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ড (WBBCCS) স্কিম বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করে যার মধ্যে বিভিন্ন বেকার যুবকদের সতম স্থানের সুযোগ তৈরি করার, পাশাপাশি কেউ যদি ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করতে যায় সে ক্ষেত্রে প্রকল্পটি সবাইকে সাহায্য করে থাকে। মূলত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের Department of Micro Small and Medium Enterprises and Textile 2023 প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। নিজস্ব স্বাধীন কর্মসংস্থান এবং ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তোলার নিয়ম সংক্রান্ত সকল বিষয়গুলো মেনে আর্থিক সাহায্য সকলে পাবে, এটাই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। 

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দারা তাদের নিজস্ব ব্যবসার উন্নতির ক্ষেত্রে এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করলে তাকে ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ড প্রদান করা হবে। যদিও বাংলাদেশে এরকম কোন প্রকল্প বা প্রজেক্ট চালু হয়নি। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ এর অধিবাসী যারা রয়েছেন তারা ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ড প্রকল্পের অধীনে সরকারের ব্যবসায় স্থাপন ও সম্প্রসারণ এর ভর্তুকি হিসেবে ২৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে স্থানভেদে আরো অনেক টাকা অনুদান হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে। এতে সরকারের ভর্তুকি থাকবে ১০% এবং প্রকল্প থেকে জামানতবিহীন লোন সুবিধা খুব সহজেই গ্রহণ করা যাবে।

শেষকথা

প্রিয় পাঠক বৃন্দ যদি আপনারা কেউ ক্রেডিট কার্ড নিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন তাহলে অবশ্যই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম এবং ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তোলার নিয়ম সংক্রান্ত সকল বিষয় ভালোভাবে জেনে বুঝে তবে কেবলমাত্র ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ করবেন। যেহেতু ক্রেডিট কার্ডের বিভিন্ন হিডেন চার্জ রয়েছে তাই মধ্যবিত্ত লোকের পক্ষে সে সকল অজানাফি পরিশোধ করা সম্ভব নয়। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ করব অবশ্যই ক্রেডিট কার্ড গ্রহণে পূর্বে সঠিক সিদ্ধান্তটি নেবেন। এরপরেও ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। 

ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা এবং অসুবিধা গুলো অন্য সবাইকে জানানোর জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি শেয়ার করতে পারেন। আমরা সবসময়ই চেষ্টা করি আমাদের ওয়েবসাইটে তথ্যবহুল আর্টিকেল পাবলিশ করার জন্য। আপনি চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটি ঘুরে আসতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url