সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা জেনে এপ্লাই করুন

সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কি সুবিধা পাবেন, সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ডের চার্জ কত এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন ও জানুন। বর্তমান যুগে ব্যাংকের গ্রাহকদের ক্রেডিট কার্ডের প্রয়োজনীয়তা অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। ক্রেডিট কার্ড শুধু আমাদের জন্য পেমেন্টের সহজ মাধ্যম নয় বরং এটি অর্থনৈতিকভাবে খুবই নিরাপদ ও সুবিধাজনক। 
সিটি-ব্যাংক-ক্রেডিট-কার্ড-পাওয়ার-যোগ্যতা
আপনারা অনেকেই ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে খুঁজে বেড়াচ্ছেন সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা কি? আপনাদের জানার সুবিধার্থে আমি আজকে এই পোস্টটি নিয়ে হাজির হলাম। সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার জন্য আপনাদেরকে কি কি যোগ্যতা অর্জন করতে হবে, সিটি ব্যাংকের ডেবিট কার্ড চার্জ কত, সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কি কি সুবিধা ও অফার প্রদান করে, সিটি ব্যাংক আমেরিকান এক্সপ্রেস কার্ডের সুবিধা কি কি এই সংক্রান্ত সমস্ত বিষয় নিয়ে আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করব।
পোস্ট সূচিপত্র

ভূমিকা

সিটি ব্যাংক অনেক পুরনো একটি বেসরকারি ব্যাংক যেটি ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।এটি বাণিজ্যিক ব্যাংকিং খাতে অন্যতম ব্যাংক হিসেবে পরিচিতি লাভ পেয়েছে। সিটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। সিটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর কর্পোরেট, রিটেল, এসএমই, ট্রেড ব্যাংকিং খাতে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রথম আমেরিকান এক্সপ্রেস ক্রেডিট কার্ড যে ব্যাংক চালু করে সে ব্যাংকটি হচ্ছে সিটি ব্যাংক। সিটি ব্যাংক আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রাহকদের উন্নত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। 

সিটি ব্যাংকের যে সকল গ্রাহকরা ক্রেডিট কার্ড নিবেন ভাবছেন তাদের সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে জানা খুবই জরুরী। সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে যে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে সেটি হচ্ছে আপনার বয়স ২০ অথবা ২১ এর বেশি হতে হবে। দ্বিতীয়ত আপনি যদি ব্যবসায়ী হন তাহলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আয়ের সমস্ত প্রমাণপত্র থাকতে হবে এবং আপনি যদি চাকরিজীবী হন তাহলে যে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন সেখানের বেতন স্লিপ, কত বছর যাবত চাকরি করছেন যাবতীয় সমস্ত ডিটেলস প্রমাণপত্র আকারে জমা দিতে হবে। 
সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে ক্রেডিট রিপোর্ট ও ক্রেডিট স্কোর ভালো থাকা খুবই জরুরী। সিটি ব্যাংক যদি আপনার ক্রেডিট স্কোর পরীক্ষা করে দেখে আগের তুলনায় বেশি আছে তাহলে ক্রেডিট কার্ড পাওয়া অনেকটা সহজ হয়ে যায়।

সিটি ব্যাংক ডেবিট কার্ড চার্জ

অনেক গ্রাহকরা আছেন যারা সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করার পর সিটি ব্যাংকের ডেবিট কার্ড পেতে চান। সিটি ব্যাংকের ডেবিট কার্ড নেওয়ার পূর্বে আপনি যদি ডেবিট কার্ড চার্জ সম্পর্কে সাধারন ধারণা রাখেন তাহলে ডেবিট কার্ড ব্যবহারে আপনার সহায়তা হবে। সিটি ব্যাংক ডেবিট কার্ড চার্জ এবং ফ্রি সংক্রান্ত তথ্যগুলো সময়ের সাথে সাথে যে কোনো সময় পরিবর্তন হতে পারে। তাই আমি আপনাদেরকে সিটি ব্যাংক ডেবিট কার্ড চার্জ সংক্রান্ত সাধারণ একটি ধারণা দিচ্ছি।

সেবার ধরন চার্জ

  • ডেবিট কার্ড ইস্যু ফি ৩০০ টাকা
  • বার্ষিক ফি ৩০০-৫০০ টাকা
  • পিন রিসেট ফি ১০০ টাকা
  • কার্ড রিপ্লেসমেন্ট ফি ৩০০-৫০০ টাকা
  • আন্তর্জাতিক এটিএম উত্তোলন ২০০-৩০০ টাকা
  • অ্যাডিশনাল কার্ড ফি ৩০০-৫০০ টাকা

সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সুবিধা

যে সকল ব্যক্তিরা সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন তারা সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অনেক ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। নিম্নে কয়েকটি সুবিধার কথা তুলে ধরা হলো-

সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে যেটি আপনি সব দেশে ব্যবহার করতে পারবেন। আপনি যদি বিদেশে ভ্রমণ করেন তাহলে বাইরের দেশ থেকে কেনাকাটা করার সময় এই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন। সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড নির্দিষ্ট কিছু ব্র্যান্ডের দোকানে গ্রাহকদের জন্য ক্যাশব্যাক সুবিধা প্রদান করে। যেমন- গ্রোসারি শপিং, রেস্টুরেন্ট, বিভিন্ন বড় শপিংমলে নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের উপর অফার পাওয়া যায় এর ফলে গ্রাহকরা আশ্রয়ী ভাবে অনেক কিছু ক্রয় করতে পারে। 

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বড় এমাউন্টের কেনাকাটা করলে ইএমআই সুবিধা পাওয়া যায়। এতে করে সম্পূর্ণ টাকা মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করার সুযোগ আছে যার ফলে আর্থিক চাপ কম হয়। যারা সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন তারা নিশ্চয়ই হয়তো জানেন যদি প্রতি মাসের বিল সময়মতো পরিশোধ করেন তাহলে কোনো ধরনের সুদ বা ইন্টারেস্ট দিতে হবে না। সাধারণত সিটি ব্যাংক ৪০ থেকে ৫০ দিনের ইন্টারেস্ট ফ্রি পিরিয়ড অফার করে যা গ্রাহকদের জন্য বিশাল সুবিধা বলা চলে। 

নির্দিষ্ট কোন শর্ত পূরণ করার ফলে সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের ক্রেডিট কার্ডের বার্ষিক রিনিউয়াল ফি কিছুটা মওকুফ করে দেয়। এই সার্ভিসটি পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ খরচ করতে হবে অথবা কার্ডটি নিয়মিত ব্যবহার হতে হবে। সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ডের প্রিমিয়াম গ্রাহকরা দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন এয়ারপোর্টের ভিআইপি লাউঞ্জে ফ্রিতে প্রবেশ করার ফ্যাসিলিটি পেয়ে থাকেন। যেটি ভ্রমণকালীন সময়ে একটি আরামদায়ক ও বিনোদনমূলক পরিবেশের সুযোগ দেয়।

সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড অফার বাংলাদেশ

আপনাদের মধ্যে কেউ যদি সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে থাকেন তাহলে সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড আপনাকে এমন কিছু অফার দিবে যে অফার গুলো আপনি অন্যান্য কার্ডে নাও পেতে পারেন। এর ফলে আপনি আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সাথে সাশ্রয়ী ভাবে ব্যয় করার সুযোগ পাবেন। সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড অফার বাংলাদেশ থেকে আপনি কি কি ধরনের আকর্ষণীয় অফার পাবেন সেগুলো নিম্নে ব্যাখ্যা করা হলো-

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড অফার ব্যবহার করার মাধ্যমে বিভিন্ন নামিদামি রেস্তোরায় বিশেষ কিছু অফার পাওয়া যায়। এ সকল অফারের কারণে গ্রাহকদের ফুল বিল পেমেন্ট করতে হয় না এবং বিভিন্ন ধরনের রেস্তোরায় যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড অফারের মধ্যে অন্যতম অফার হচ্ছে এটি দিয়ে অনেক সময় মোবাইল রিচার্জ বিল ও অন্যান্য সেবার বিল সহজে পরিশোধ করা যায়। সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু সেবার মধ্যে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশ ব্যাক রয়েছে। 

সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড রেফার প্রোগ্রাম চালু করেছে যেখানে আপনি আপনার বন্ধুকে বা প্রিয়জনকে ক্রেডিট কার্ডের জন্য রেফার করলে বিশেষ বোনাস বা পয়েন্ট পাবেন। নতুন গ্রাহক হিসেবে সাইন আপ করলে এবং কার্ড একটিভ করতে পারলে নির্দিষ্ট পরিমাণ বোনাস বা ফ্রি পয়েন্টসও পেতে পারেন যেটি পরবর্তী কেনাকাটার সময় ব্যবহার করা সম্ভব।

সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ডে ফ্লেক্সিবল পেমেন্ট করার সুবিধা আছে যেখানে গ্রাহকরা তাদের বিলের একটি অংশ পরিশোধ করার পর বাকি অংশ কিস্তিতে পরিশোধ করতে পারবে। এতে করে গ্রাহকদের মাসিক খরচের চাপ অনেকটা কমে যায় এবং সহজেই বিল পরিশোধ করার সুযোগ পাবে।

সিটি ব্যাংক আমেরিকান এক্সপ্রেস কার্ড

সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করার জন্য কি কি শর্তাবলী অনুসরণ করতে হবে এই নিয়ে সমস্ত তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। আশা করি এই নিয়ে আপনাদের কোনো কনফিউশন নেই। সিটি ব্যাংক আমেরিকান এক্সপ্রেস কার্ড সম্পর্কে আপনারা অনেকেই হয়তো শুনেছেন। চলুন আপনাদের সাথে আমেরিকান এক্সপ্রেস এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস শেয়ার করা যাক। আমেরিকান এক্সপ্রেস যেটি ১৮৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। শুরুর দিকে একটি এক্সপ্রেস মেইল কোম্পানি ছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে এটি আর্থিক পরিষেবা দেওয়ার কথা চিন্তা করে। 
এরপর প্রথমবারের মতো ১৯৫৮ সালে তাদের কার্ড চালু হয় যেটি পরবর্তীতে ক্রেডিট কার্ডে রূপান্তরিত হয়। বাংলাদেশে সিটিব্যাংক ও আমেরিকান এক্সপ্রেস এর যৌথভাবে অংশীদারিত্ব শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালের দিকে। এটিই ছিলো বাংলাদেশের সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক ব্যান্ডের ক্রেডিট কার্ড যেটি সিটি ব্যাংক এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে লাভ করেছিল। কয়েক বছরের মধ্যে আমেরিকান এক্সপ্রেস ক্রেডিট কার্ড আমাদের দেশে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। আমেরিকান এক্সপ্রেস কার্ডটি বাংলাদেশের প্রিমিয়াম গ্রাহকদেরকে টার্গেট করে চালু করা হয়েছিল। 

সিটি ব্যাংকের লক্ষ্য ছিল উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের জন্য এমন একটি কার্ড সর্ববরাহ করা যে কার্ডটি শুধুমাত্র আর্থিক লেনদেন নয় এটি প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ভ্রমণ, লাইফ স্টাইল, বিনোদনের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা প্রদান করবে। ২০১০ সালের পর থেকে বাংলাদেশে সিটিব্যাংক আমেরিকান এক্সপ্রেস কার্ডের মাধ্যমে উচ্চ আয়ের গ্রাহকরা বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন সেবা ও অফারের সাথে পরিচিতি লাভ করছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের জন্য ট্রাভেলিং ইন্সুরেন্স, VIP lounge এক্সসেস সুবিধা, EMI সার্ভিস, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রোডাক্ট এর উপর ডিসকাউন্ট পাওয়ার মাধ্যমে প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট কেনার সুবিধা লাভ করছে।

শেষকথা

প্রিয় পাঠকবৃন্দ অন্যান্য ব্যাংকের গ্রাহকরা মনে করে থাকেন সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা খুবই কঠিন কাজ। তবে আমি আপনাদেরকে বলতে চাই এটি একদমই ভুল ধারণা। অন্যান্য ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা থেকে সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা তুলনামূলকভাবে সহজ। সিটি ব্যাংকের পক্ষ থেকে যে সকল শর্তাবলী প্রদান করা হবে সেগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করলেই যত দ্রুত সম্ভব ক্রেডিট কার্ড পেয়ে যাবেন। 

আপনাদের পরিচিত ব্যক্তিগণ অথবা পরিবারের সদস্যদের কেউ যদি সিটি ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড পেতে চায় তাহলে আমাদের আজকের পোস্টটি তাদের সাথে শেয়ার করে দিবেন এবং আপনি চাইলে আপনার ব্যক্তিগত সোশ্যাল মিডিয়া সাইটেও শেয়ার করতে পারেন। সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত যতগুলো তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি সেগুলো যেকোনো সময় সিটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী পরিবর্তন হতে পারে। তাই সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত আপডেট তথ্য পেতে তাদের ওয়েব সাইটে অথবা সরাসরি অফিসে ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url