খেলাপি ঋণ কি ও খেলাপি ঋণ আদায়ের কৌশল জানুন

খেলাপি ঋণ আদায়ের কৌশল হিসেবে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু ঋণ খেলাপিদের কাছ থেকে ঋণ আদায় করা এবং সেই অনুযায়ী তাদের শাস্তি প্রদান করা খুবই একটি জটিল বিষয়। যে সকল ব্যক্তি কোন প্রতিষ্ঠান থেকে একটি মোটা অংকের ঋণ নেওয়ার পর বিদেশে পালিয়ে যায় তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে ঋণ আদায় করা সরকারের পক্ষে খুবই কষ্টসাধ্য। আপনারা আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ আদায়ের কৌশল 
খেলাপি-ঋণ-আদায়ের-কৌশল
গুলো কি কি হতে পারে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন। আলোচ্য বিষয়ের পাশাপাশি আরও যে সকল বিষয়ে জানতে পারবেন সেগুলো হলো খেলাপি ঋণ কি এবং বকেয়া আদায়ের কৌশল, এনজিও খেলাপি ঋণ আদায়ের কৌশল,ঋণ খেলাপি কমানোর উপায়, ঋণ খেলাপি র শাস্তি এবং কিভাবে আদায় করা যায় সে সকল সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে পারবেন। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য।
পোস্ট সূচীপত্র

খেলাপি শব্দের অর্থ কি

“খেলাপি” শব্দের সংজ্ঞা বলতে গেলে যে বিষয়টি প্রথমে আসে সেটি হল চুক্তির শর্ত অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট সময় পর যদি ঋণগ্রহীতা ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করে এবং উক্ত ঋন পরিশোধ না করার লক্ষ্যে সবসময় তার জায়গা পরিবর্তন করে সে বিষয়টিকে “ঋণ খেলাপি” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সাধারণত বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এত পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে যে ২০১৫ সাল থেকে ঋণ খেলাপি ব্যক্তিরা আইনের বিভিন্ন ফাঁকফোকর দিয়ে প্রতিষ্ঠানের উক্ত ঋণ পরিশোধ না করেই দিব্যি ঘুরে 

বেড়াচ্ছে। আর পাশাপাশি বিভিন্ন রকম সুযোগ-সুবিধা থাকার উছিলাতে সরকারও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ গ্রহণ এবং খেলাপি ঋণ আদায়ের কৌশল অবলম্বন করেছে কিন্তু হিতে বিপরীতে কোন কিছুই সফল হয়নি। তাই চলুন আজকে আমরা খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত সকল জটিলতা নিদর্শন এর লক্ষ্যে আলোচ্য বিষয় পাশাপাশি সকল বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জানার চেষ্টা করি।

খেলাপি ঋণ কি

আমরা ইতিমধ্যে অবলোকন করতে পেরেছি যে খেলাপি ঋণ বিষয় আসলে কি। বিশেষ করে দেখা গিয়েছে বাংলাদেশের ব্যাংকের খাত গুলোতে খেলাপি ঋণের হার সব থেকে বেশি। পরিসংখ্যান বলছে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত খেলাপিদিনের মাত্রা ছিল ১ লক্ষ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকার মত। ২০২২ সালে যার পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি। মোট এক বছরের হিসেব করলে দেখা যায় যে খেলাপি ঋণ এর পরিমাণ শতাংশের হিসেবে বৃদ্ধি পেয়েছে ২০ শতাংশ। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম ঋণ খেলাপি করে চলেছেন বিভিন্ন পর্যায়ের হর্তা কর্তারা। 

খেলাপি ঋণ আদায়ের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময় নতুন আকারে ঋণ আদায় নীতিমালা ঘোষনা করেছে। কিন্তু বাস্তব অর্থে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি বা বিত্তশালী ব্যক্তি যখন কোন প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যাংকের আওতায় মোটা অংকের ঋণ গ্রহণ করে অবশ্যই উক্ত ব্যক্তি গ্রহনকৃত ঋণ কোন বাণিজ্যিক খাতে বিনিয়োগ করে। পরবর্তীতে ব্যবসা ক্ষেত্রে যদি উক্ত ব্যক্তিটি লাভ লসের শিকার হয় তখন সে আর ব্যাংকের ঋণ যোগাতে সক্ষম থাকে না। 
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী সেই সকল ব্যক্তি ব্যক্তিগত অথবা সামাজিক ভাবে যে পর্যায়েই থাকুক না কেন তারা ব্যাংকের কাছে ঋণ পরিশোধ করতে সব সময় বাধ্য এবং তারা যখন ঋণ পরিশোধ করতে আর কোন সক্ষমতা প্রকাশ করে না তখন তারা খেলাপি ঋণের আওতায় পড়ে যায়।

খেলাপি ঋণ আদায়ের কৌশল

বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমান সময়ে ব্যাংক অথবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খাতে খেলাপি ঋণসমূহ কমানোর লক্ষ্যে কিছু নীতিমালা যোগ করেছে। নীতিমালা গুলো বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন মাধ্যমে জনগণের মাঝে ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণা করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ খেলাপি কমানোর উপায় পাশাপাশি খেলাপি ঋণ আদায়ের কৌশল হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আওতায় যে নীতিমালা প্রকাশ করেছিল তার মধ্যে সর্বপ্রথম যে প্রণীত বিষয় উঠে এসেছে সেটি হল “রোড ম্যাপ”, যা কিনা ২০২৬ সালের শেষ পর্যায়ে গিয়ে বাস্তবায়ন হিসেবে তার লক্ষ্যপূরণে সফল হবে। 

বাংলাদেশ ব্যাংক একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে তারা ২০২৬ সালের মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনবে। আর উক্ত বিষয়টি সফল করার লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষ কিছু শর্ত প্রদান করেছে, যার মধ্যে প্রথম শর্ত হচ্ছে এখন থেকে কোন বাণিজ্যিক ভিত্তিক ব্যাংকের মন্দ ঋণ পরিশোধের সময়সীমা কমানো হবে। সেখানে আরো বলা হয়েছে মন্দ ও ক্ষতিজনক অর্থাৎ খেলাপি ঋণ একটানা দুই বছর পর অবলোপণ এর প্রেক্ষিতে স্থানান্তর করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ইতিপূর্বে ব্যাংকের ঋণমন্দ ও ক্ষতি জনক থাকলেও একটানা ৩ বছর পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে অবলোপন হিসেবে দেখত। 

কিন্তু বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, ঋণগ্রহীতা ব্যক্তিবর্গ ২ বছরের বেশি সময় পাচ্ছেন না। এখানে শুধু সময় কমানোর বিষয়টি প্রকৃতপক্ষে খুব সহজ মনে হলেও এখানেই রয়েছে পরিকল্পনামাফিক খেলাপি ঋণ আদায়ের কৌশল। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, শুধুমাত্র ঋণ অবলোপনের সময়সীমা নির্ধারণের মাধ্যমে যে সকল খাতে খেলাপি ঋণ রয়েছে সেটির মাত্রা ২ শতাংশ কমে যাবে। যদি হিসেব করা হয় তাহলে ২ শতাংশ মাত্রা কমার প্রেক্ষিতে টাকার অঙ্কে যা দাঁড়াবে ৪৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। 

তাহলে এখন বলাই যায় ঋণ অবলোপন বা পরিশোধ এর সময়সীমা নির্ধারণের প্রেক্ষাপট হিসেবে সময়সীমা তিন বছর থাকাকালীন অবস্থাতে কোন ব্যাংকের খেলাপি অথবা ঋণের হার যদি ১০ শতাংশ হয়, সময়সীমা কমানোর পর অর্থাৎ দুই বছরে হিসেব অনুযায়ী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার দাঁড়াবে ৮ শতাংশ। তাহলে প্রকৃতপক্ষে কোনরকম জটিল প্রচেষ্টা ব্যতীত ব্যাংক তাদের ঋণ খেলাপি কমানোর উপায় হিসেবে উপরে বর্ণিত পদ্ধতি অবলম্বন করতেই পারে।

খেলাপি ঋণ সমস্যা ও প্রতিকার

খেলাপি ঋণ বিষয়টি বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গলায় কাঁটা আটকানোর বিষয়ের সাথে তুলনা করা যায়। একজন ব্যক্তির গলায় যদি কাঁটা আটকে যায় তাহলে সেই ব্যক্তি যেমন কাঁটা বের করতে পারেনা আবার গিলতেও পারে না। ঠিক তেমনি খেলাপি ঋণ সমস্যা সময়ের পরিবর্তনে ধীরে ধীরে জটিল আকার ধারণ করেছে। আর সেই লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন সময় খেলাপি ঋণ আদায়ের কৌশল হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতায় নতুন নতুন নীতিমালা ঘোষণা করেছে। খেলাপি ঋণ সমস্যা এবং খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কিছু কড়াকড়ি বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছে যার মাধ্যমে 

খেলাপি ঋণ সমস্যা ও প্রতিকার করা সম্ভব। আসুন তাহলে সেই বিষয়গুলোতে আলোকপাত করা যাক। নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিকার হিসেবে প্রথম যে বিষয়টি সামনে আসে সেটি হল প্রত্যেকটি বাণিজ্যিক ব্যাংক তাদের খেলাপি ঋণ আদায় এর লক্ষ্যে নিজ নিজ ব্যাংকের আওতায় এমডি অর্থাৎ উক্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের উপস্থিতিতে একটি ইউনিট গঠন করবে যা হবে “অবলোপনকৃত ঋণ আদায় ইউনিট”। নীতিমালায় বলা হয়েছে গঠনকৃত ইউনিটের বিষয়াদি পরিলক্ষণের মাধ্যমে অর্থাৎ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পারফরম্যান্স অথবা দক্ষতার ভিত্তিতে যেকোনো রকম নিয়োগ অথবা পুনরায় নিয়োগের 

বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। আরো বলা হয়েছে ব্যাংকের কর্তৃপক্ষের প্রধানের যে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে সেটি সুস্পষ্ট ভাবে সকলের কাছে প্রচার করা। আবার পরের যে বিষয়টি সামনে এসেছে সেটি হলো অবলোপনকৃত ঋণ আদায়কিত অংশ হিসেবে অথবা এককালীন আয় হিসেবে দেখাতে পারবে। সংস্কৃত ব্যাংক কর্মকর্তারা উক্ত বিষয়টির ভিত্তিতে ৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা পেয়ে থাকবেন। ঋণ খেলাপি কমানোর উপায় হিসেবে আরো একটি বিষয় বাংলাদেশ ব্যাংক উল্লেখ করেছে সেটি হল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ 

পরিমাপ অনুযায়ী ছোট আকারের মন্দ ঋণ আদালতে মামলা ছাড়াই খেলাপি ঋণ হিসেবে অবলোপন করতে পারবে। পরবর্তীতে মামলা সংক্রান্ত বিষয় থেকে বেরিয়ে নির্দেশনার প্রেক্ষিতে ৫ লাখ টাকা বা তার কম অংকের মন্দ ঋণ গুলো অবলোপনের নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংক ব্যবস্থাপনার অবস্থানটি আরো শক্তি শালী করে তোলে। আর এই বিষয়টিকে খেলাপি ঋণ আদায়ের কৌশল হিসেবে অবশ্যই পরিলক্ষিত করা যায়।

এনজিও খেলাপি ঋণ আদায়ের কৌশল

বর্তমান সময়ে ব্যাংকের পাশাপাশি এনজিও থেকে বিভিন্ন রকম ঋণ প্রদান করা হয়ে থাকে। আর ওই সকল এনজিও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বড় অথবা ছোট অংকের ঋণ গ্রহণের পর ঋণগ্রহীতা বিভিন্ন সময় ঋণ খেলাপের চেষ্টা করে থাকে। যেহেতু বর্তমান সময়ে ঋণ খেলাপি এর মাত্রা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মারাত্মকভাবে ক্ষতির প্রভাব বয়ে আনছে। আমরা ইতিমধ্যে ব্যাংকের খাতের খেলাপি ঋণ সম্পর্কে পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণখেলাপি কমানোর লক্ষ্যে যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন সে সম্পর্কে জানতে পারলাম। 
আসুন তাহলে এবার এনজিও খেলাপি ঋণ আদায়ের কৌশল গুলো সম্পর্কে জেনে নিই। নিচে সেই সকল পদক্ষেপ গুলো পয়েন্ট আকারে বর্ণনা করা হলো।
  • প্রথমত যে বিষয়টি সামনে আসে সেটি হল ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ এনজিও প্রতিষ্ঠানটি শক্তিশালী ঋণ আদায় ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। একবার একাধিক ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে ঋণগ্রহীতার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা অথবা জরিমানা নিশ্চিত করা।
  • ঋণ প্রদানের সময় উক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে ঋণ গ্রহিতা ব্যক্তিকে ঋণ গ্রহণের যোগ্যতা ঝুঁকি এবং অন্যান্য বিষয়ে সম্পর্কে ব্যক্তিকে বিস্তারিতভাবে জানানো একটি নৈতিক কর্তব্য। এতে করে ঋণের অযোগ্য ব্যক্তিরা ঋণ গ্রহণের আওতায় আসবেনা আর সেক্ষেত্রে ঋণ খেলাপের আর কোন প্রশ্নই আসে না।
  • ঋণ খেলাপি কমানোর উপায় হিসেবে আরেকটি বিষয় করা যেতে পারে সেটি হল ঋণ গ্রহীতার কাছ থেকে ঋণের সমপরিমাণ সম্পত্তি বন্ধক রাখা এতে করে গ্রহীতা ব্যক্তিটি ঋণ খেলাপি করার সাহস করবে না।
  • কর্তৃপক্ষের ঋণ আদায় লক্ষ্যে আধুনিক সকল প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
  • ঋণ খেলাপি কমানোর লক্ষ্যে সব সময় আইনের আশ্রয় নেওয়া অর্থাৎ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সকল ঋণ খেলাপি বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি করা।
  • পরিশেষে এনজিও অথবা যেকোনো ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিয়োগ কৃত কর্মকর্তার বিষয়গুলি ভালোভাবে নিশ্চিত করা। একটি প্রতিষ্ঠানে দক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগের মাধ্যমে সঠিক ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া সম্ভব এতে করে অনেকাংশেই ঋণ খেলাপি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

খেলাপি ঋণ আদায়ের নোটিশ

উপরে বর্ণিত ঋণ আদায়ের কৌশল গুলোর মধ্যে যে সকল বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, সবগুলো বিষয়ে অনুসরণের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠান তার ব্যাপক পরিমাণ খেলাপি ঋণ এর হার কমাতে সক্ষম হবে। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কমানো সম্ভব। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ খেলাপি ঋণ আদায়ের কৌশল হিসেবে একজন প্রতিষ্ঠানকে প্রথম যে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলে সেটি হল খেলাপি ঋণ আদায়ের নোটিশ প্রেরণ করা। অর্থাৎ যে ব্যক্তি ঋণের আওতায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সেই ব্যক্তিটিকে সর্বপ্রথম খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত বিষয়টি 

বোঝানোর পরিপ্রেক্ষিতে তার বাড়িতে নোটিশ প্রেরণ করা। যদি কোন প্রতিষ্ঠানের আওতায় ঋণ খেলাফি হয় সে ক্ষেত্রে ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে এবং উক্ত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধের ব্যর্থতার পরিপ্রেক্ষিতে যে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সেই নোটিশটি উক্ত ব্যক্তির বাড়িতে প্রেরণ করা হয়ে থাকে। তবে এটিকে বিশ্লেষকরা ঋণ খেলাপি কমানোর উপায় এবং ঋণ আদায়ের লক্ষ্য হিসেবে প্রথম পদক্ষেপ বলে গণ্য করে থাকেন।

ঋণ খেলাপি কমানোর উপায়

আপনারা ইতিমধ্যে ঋণ খেলাপি বিষয়টি এবং কিভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের খেলাপি ঋণ কমাতে সক্ষম হবে পাশাপাশি ভবিষ্যতে যেন কোন গ্রহীতা ঋণ খেলাপি না করতে পারে সে বিষয়ে গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। খেলাপি ঋণ কমানোর লক্ষ্যে আমরা প্রথম যে বিষয় সম্পর্কে জানতে পেরেছি সেটি হল বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রণয়নকৃত সকল নীতিমালা সম্পর্কে ধারণা রাখা। প্রকৃতপক্ষে একজন ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি ঋণ পরিশোধের বিষয়ে বিমুখিতার বিশেষ কারণগুলো প্রতিষ্ঠানের যাচাই-বাছাই এর মাধ্যমে ঋণ প্রদান করা। 

অর্থাৎ কোন ব্যক্তির যদি আর্থিক সমস্যা থাকে তাহলে সেই ব্যক্তিকে ঋণ প্রদান করার বিষয়ে উক্ত প্রতিষ্ঠানকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। সুতরাং বিবৃতি অনুযায়ী ব্যাংক অথবা সকল রকম ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদানের সময়েই বিশেষ সচেতন থাকার কথা বলা হয়েছে। পরিসংখ্যান আরো একটি রিপোর্ট প্রদান করেছে সেখানে বলা আছে ৭৫ শতাংশই ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি ঝুঁকি নিয়ে ঋণ গ্রহণ করে থাকেন। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটি একজন ব্যক্তিকে ঋণ প্রদানের সময় ৭৫% ঝুঁকি নিয়ে ঋণ প্রদান করে যাচ্ছে। 

তাই বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সরকার সকল প্রতিষ্ঠানকে খেলাপি ঋণ আদায়ের কৌশল অবলম্বনের জন্য সব সময় আহ্বান করে আসছে। প্রতিষ্ঠান গুলোকে অবশ্যই বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে অর্থাৎ ঋণ গ্রহীতার ঋণ গ্রহণের যোগ্যতা আছে কিনা, সেই ব্যক্তির ইনকাম সম্পর্কে ধারণা রেখে পাশাপাশি জামানতের ভিত্তিতে ঋণ প্রদান করার কথা সব সময় বলা হয়েছে।

ঋণ আদায়ের কৌশল কি

ঋণ আদায়ের কৌশল কি, এক কথায় যদি এ বিষয়ে সম্পর্কে বলতে হয় তাহলে সর্বপ্রথম ব্যাংক অথবা বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠান প্রথম যে কর্তব্যটি সামনে আসে সেটি হল আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ঋণ আদায় এর কৌশল সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন রকম পদ্ধতি জেনেছি। ঋণ খেলাপি কমানোর উপায় অথবা কৌশল গুলো বলতে গেলে প্রতিষ্ঠানের নিয়োগকৃত কর্মচারীদের দক্ষতা এবং ঋণ গ্রহিতার জামানতের বিষয়টি চলে আসে। প্রতিষ্ঠানগুলো যদি জামানত ছাড়া ঋণ প্রদান করে সেই ক্ষেত্রে ঋণ খেলাপির মাত্রা অনেকাংশেই বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। 
আর জামানাতে সহিত ঋণ প্রদান করলে ঋণগ্রহীতা ব্যক্তিটি ঋণ পরিশোধ করতে সব সময় বদ্ধপরিকর। সুতরাং আমরা এই অংশে যদি এক কথায় বলতে চাই ঋণ আদায়ের কৌশল কি তাহলে প্রথম যে বিষয় আসবে সেটি হল জামানত ছাড়া ঋণ প্রদান না করা এবং যদি কোন প্রতিষ্ঠান ঋণ দিয়ে ফেলে পাশাপাশি ঋণ খেলাপির শিকার হয় তাহলে অবশ্যই প্রতিষ্ঠানকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ঋণ গ্রহীতা থেকে কিভাবে টাকা আদায় করা যায়

ব্যক্তিগতভাবে অথবা প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ প্রদান করাটা একটি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু অনেক সময় ঋণ প্রদানের পর উক্ত ব্যক্তি ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থতা প্রকাশ করে। তখন সেই সকল ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠানের প্রথম যে চিন্তার বিষয় এসে দাঁড়ায় সেটি হল ঋণ আদায় কিভাবে করব। কেউ যদি কারো কাছ থেকে টাকা আদায় করতে চায় তাহলে প্রথমত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। আইনের আওতায় দেওয়ানি মামলা দায়ের করার মাধ্যমে এবং ঋণ পুনরুদ্ধার ট্রাইবুনাল এর অধীনে যোগাযোগ করার মাধ্যমে ঋণ আদায় করা সম্ভব। আবার ঋণ আদায় করার লক্ষ্যে একজন আইনজীবী নিয়োগ 

করা বুদ্ধিমানের কাজ। তাছাড়া ঋণ পুনরুদ্ধারের জন্য বিভিন্ন রকম এজেন্টের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। তবে একজন ব্যক্তি যদি কারো কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে থাকে তাহলে কেন সে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে বিষয়টি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করার সুযোগ তাকে দিতে হবে। পাশাপাশি ঋণ খেলাপি কমানোর উপায় অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করতে হবে। ঋণগ্রহীতা ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঋণ প্রদান করার জন্য বলতে হবে এবং এরপরেও যদি তার কোন রকম রেসপন্স না থাকে সেক্ষেত্রে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

ঋণ খেলাপির শাস্তি

আমরা এ পর্যন্ত ঋণখেলাপি সম্পর্কে এবং খেলাপি ঋণ আদায়ের কৌশল গুলো কি কি হতে পারে সে বিষয়ে সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আসুন তাহলে এবার ঋণ খেলাপির শাস্তি সম্পর্কে জেনে নিই। আইনজীবীরা বিভিন্ন রকম বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ঋণ খেলাপি আইন অনুযায়ী ৬ মাস পর্যন্ত সশ্রম অথবা বিনাশ্রম কারাদণ্ডের বিধান প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে ঋণ খেলাপির শাস্তি এর বিধান বড় কোন শাস্তির নজির নেই। যার ফলেই সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের হর্তা কর্তারা দেশের বড় 

বড় প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ করে ঋণ খেলাপি এর তালিকায় থেকে যায় কিন্তু সেই অনুযায়ী বড় কোন শাস্তি হয় না। এ বিষয়টি নিরসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সময় পদক্ষেপ গ্রহণ করার পাশাপাশি নীতিমালা পরিবর্তন করতে অটুট। অর্থ ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠান গুলো বিভিন্ন পর্যায়ে আদালতের আইন অনুযায়ী ব্যাংক কোম্পানি আইন এবং দেউলিয়া আইনের আওতায় বিভিন্ন রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। সেই আইনের আওতায় ঋণ খেলাপি ব্যক্তির ৬ মাস বা তার বেশি কারা ভোগ হতে পারে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক বৃন্দ আশা করি আপনারা আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জানতে পারলেন। উপরে বর্ণিত সকল বিষয়ের প্রেক্ষিতে একজন ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠান খেলাপি ঋণ আদায়ের কৌশল গুলো অবলম্বনের মাধ্যমে ঋণ আদায় করতে সক্ষম হবে। আপনাদেরকে অশেষ অশেষ ধন্যবাদ আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য। খেলাপির ঋণ সংক্রান্ত কোন বিষয় যদি আপনার জানার থাকে তাহলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। 

আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে সকল তথ্যবহুল আর্টিকেল পাবলিশ করে থাকি। আপনি যদি ব্যক্তিগত এবং দেশের সকল তথ্য সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করেন তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন। আজকের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার কাছে উপযুক্ত মনে হয় এবং ঋণ খেলাপি কমানোর উপায় গুলো সম্পর্কে আপনার বন্ধু-বান্ধবদের জানালার উদ্দেশ্যে আজকের এই পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url