উত্তরাধিকার সূত্রে ওয়ারিশ সম্পদ বন্টনের আইন সম্পর্কে জানুন

ওয়ারিশ সম্পদ বন্টনের আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা থাকার কারণে আমরা অনেক সময় বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে যাই। কারণ আমাদের বংশের কেউ মারা গেলে তার থেকে প্রাপ্ত সম্পদের হকদার যদি আমরা হই তাহলে আমরা সঠিক আইন অনুযায়ী সম্পদের ভাগ পেলাম কিনা সেটা নিয়ে দোটানার মধ্যে থাকি। আবার সম্পদের ভাগ বন্টন নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝামেলা এমনকি মারামারি পর্যন্ত হয়ে যায়। তাই আমরা যদি ওয়ারিশ সম্পদ বন্টনের আইন গুলো সম্পর্কে জেনে নিই তাহলে কিন্তু খুব সহজেই সম্পদ গুলো বন্টন হয়ে যায়। কোনরকম ঝামেলা সৃষ্টি হয় না। 
ওয়ারিশ সম্পদ বন্টনের আইন
আমরা আমাদের বাবার কাছ থেকে সম্পদ বন্টনের সময় অনেক সময় ভাইয়ের কাছ থেকে প্রতারিত হই। তাই আমরা যদি আইন সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পাই তাহলে সম্পদ বন্টন নিয়ে কেউ আমাদের ঠকাতে পারবে না। তাই চলুন পাঠক বৃন্দ আজকে আমরা ওয়ারিশ সম্পদ বণ্টনের আইন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করি এবং এর পাশাপাশি বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম, মুসলিম আইনে সম্পত্তির বন্টন, বাবার সম্পত্তি বন্টন আইন, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বন্টন, ওয়ারিশ সম্পত্তি বন্টন, মৃত ভাইয়ের সম্পত্তি বন্টন ও সম্পত্তি বন্টন ক্যালকুলেটর এবং বাবার সম্পত্তি বন্টন আইন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই আপনি যদি ওয়ারিশ সম্পদ বন্টনের আইন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পোস্ট সূচীপত্র

ভূমিকা

ওয়ারিশ সাধারণত একটি আরবি শব্দ। ওয়ারিশ হল একজন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিশেষ অধিকার বা অধিকার এর বলে উক্ত মৃত ব্যক্তির সম্পদের মালিক বা উত্তরাধিকার। ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকার ধর্ম ভেদে ওয়ারিশ সম্পদ বন্টনের আইন গুলো ভিন্ন হয়ে থাকে। আবার বিভিন্ন সমাজের মধ্যে উত্তরাধিকারের নিয়ম গুলো ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে বর্তমান সময়ে উত্তরাধিকারের নিয়ম গুলো সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়েছে। যদি কোন ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বে তার সম্পদগুলো কারো নামে উইল করে না যায় তাহলে তার মৃত্যুর পর তার ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী এবং আরো অনেক কে উত্তরাধিকার হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। 

তবে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ওয়ারীশ সম্পদ বন্টনের আইন অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির ছেলে-মেয়ে এবং স্ত্রী এবং আরো ওয়ারিশগণ যারা আছেন তারা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে সম্পদ গুলোর ওয়ারিশ হিসেবে গণ্য হয়। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আজকে আমরা জানতে পারবো আইন অনুযায়ী ওয়ারিশগণ কতটুকু করে সম্পদের মালিক হতে পারবেন পাশাপাশি মৃত ভাইয়ের সম্পদ এর বন্টন কিভাবে হয় বাবার সম্পত্তি মুসলিম আইনে ছেলে কতটুকু মালিক হয় সবগুলো বিষয় আজকে আলোচনা করা হবে।

ওয়ারিশ এর প্রকারভেদ

আমাদের মুসলিম সমাজে সাধারণত তিন শ্রেণীর ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারী আছে। সেগুলো হল অংশীদার, অবশিষ্টাংশ ভোগী এবং দূরের আত্মীয়-স্বজন।

অংশীদার

আমাদের মুসলিম সমাজের নিয়ম অনুযায়ী ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারের অংশটি কুরআনে নির্দিষ্ট করে তুলে ধরা হয়েছে। সম্পদের নির্দিষ্ট অংশের মালিক কে অংশীদার হিসেবে গণ্য করা হয়। পবিত্র আল কুরআনে উল্লেখ আছে যে সম্পদের ওয়ারিশ বা অংশীদার সর্বমোট 12 জন তাদের মধ্যে ৪ জন পুরুষ ও ৮ জন নারী আর এরাই মূলত অংশীদার।

অবশিষ্টাংশ ভোগী

ওয়ারিশ সম্পদ বন্টনের আইন এবং আল কোরআনের ভিত্তিতে কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার রক্তের সাথে যাদের সম্পর্ক রয়েছে তারাই হলো অবশিষ্টাংশ ভোগী। উদাহরণস্বরূপ কোন ব্যক্তির যদি ১০ শতাংশ সম্পদ থাকে তাহলে তার অংশীদার গুলো প্রথমে তাদের ভাগ অনুযায়ী সম্পদের মালিক হবে। বাকি যদি কোন সম্পদ থাকে সেগুলোর মালিক হবে অবশিষ্টাংশ ভোগী। কারণ অবশিষ্ট সম্পদ গুলোতে একমাত্র তাদেরই হক থাকে।

দূরের আত্মীয়-স্বজন

মৃত ব্যক্তির সাথে রক্তের সম্পর্ক রয়েছে কিন্তু তারা কোন অংশীদার নয় বা অবশিষ্টাংশ ভোগী ও নয়। কিন্তু উক্ত ব্যক্তির মৃত্যুর পর আর যদি কোন ওয়ারিশগণ অর্থাৎ অংশীদার বা অবশিষ্টাংশ ভোগী কেউ না থাকে তাহলে তার মালিক দূরে আত্মীয়-স্বজন হবে।

ওয়ারিশ সম্পদ বন্টনের আইন

আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন ওয়ারিশ বিষয়টা কি এবং একজন ব্যক্তি মৃত্যুর পর কারা কারা ওয়ারিস হিসেবে গণ্য হন। আসুন এবার ওয়ারিশ সম্পদ বন্টনের আইন অনুযায়ী মোট কতজন অংশীদার আছেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই। ওয়ারিশ সম্পদ বন্টন আইনে সর্বমোট ১২ জন ওয়ারিশ বা অংশীদার অভিভুক্ত রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪ জন পুরুষ এবং বাকি ৮ জন নারী। নিচে অংশীদার বা ওয়ারিশগণ এর নাম গুলো তুলে ধরা হলো।
  • পিতা
  • মাতা
  • স্বামী
  • স্ত্রী
  • ছেলে
  • মেয়ে
  • পুত্রের মেয়ে
  • দাদি অথবা নানি
  • আপন বোন
  • সৎ বোন
  • সৎ পিতার ছেলে
  • সৎ পিতার মেয়ে
ওয়ারিশ সম্পদ বন্টনের আইন অনুযায়ী উক্ত ওয়ারিশগণ সম্পদের মালিক হলেও কখনো কখনো তারা বাদ পড়ে যান। তবে উপরোক্ত অংশীদারদের মধ্যে ৬ জন অংশীদার রয়েছেন যাদের উত্তরাধিকার থেকে বাদ দেওয়া সম্ভব নয়।
এই ছয় জন অংশীদার হল-
  • পিতা
  • মাতা
  • স্বামী
  • স্ত্রী
  • ছেলে
  • মেয়ে
ওয়ারিশ সম্পদ বণ্টনের আইন অনুযায়ী উক্ত ওয়ারিশগণ কে সর্বপ্রথম মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদের উত্তরাধিকার হিসেবে ধরা হয়। তারা কখনোই আইন অনুযায়ী বাদ পড়বেন না। তাই আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে আমি যদি মৃত ব্যক্তির এই ছয়জনের অংশীদারের মধ্যে থাকি তাহলে অবশ্যই আমি আমার নির্দিষ্ট সম্পদের মালিক। বাংলাদেশ আইন অনুযায়ী আমাকে সম্পদের ভাগ দিতে বাধ্য। আসুন পাঠকগণ এবার সম্পত্তি কিভাবে বন্টন করা হয় সে বিষয়ে আলোচনা করি।

ওয়ারিশ সম্পদ বন্টনের আইন

ওয়ারিশ সম্পদ বন্টনের আইন বিষয়টি একটু জটিল এবং এর আইন সম্পর্কে ধারণা না থাকলে আপনি অবশ্যই আপনার ন্যায্য প্রাপ্য সম্পদ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। তাই ওয়ারিশ সম্পত্তি বন্টন এ বিষয়টি কিভাবে হয় সে বিষয়টি জানা খুবই জরুরী। আমরা উপরে জেনেছি যে একজন ব্যক্তি যদি মারা যায় তাহলে কারা কারা তার অংশীদার বা ওয়ারিশ হিসেবে গণ্য হন। পাশাপাশি অংশীদার যদি না থাকে তাহলে কারা সম্পদের মালিক হয়ে যান সে বিষয়টি আমরা জেনেছি। 
উদাহরণস্বরূপ একজন ব্যক্তি মারা গেছে তার সম্পদের পরিমাণ ২০ শতাংশ জমি এবং বসতবাড়ি ব্যক্তিটির মারা যাওয়ার পর তার সম্পদের ওয়ারিশগণ হবেন পিতা-মাতা স্ত্রী সন্তানসহ আরো কিছু আত্মীয় আর তা রেখে যাওয়া সম্পত্তি হলো ওয়ারিশ সম্পদ। আর এই ওয়ারিশ সম্পত্তি বন্টন আমরা মুসলিম আইন অনুযায়ী এবং ওয়ারিশ সম্পদ বন্টনের আইন অনুসারে যেভাবে ভাগ বন্টন করা হয় সেভাবেই তুলে ধরব।

মুসলিম আইনে সম্পত্তির বন্টন

ওয়ারিশগণের সম্পত্তির বন্টন বিষয়ে ইসলামে স্পষ্টভাবে সঠিক বন্টন করার জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ইসলামী মতে, উত্তরাধিকার আইন নিজে জানো এবং অপরকে শেখাও। তাই আমাদেরকে মুসলমান হিসেবে হলেও মুসলিম আইনে সম্পত্তির বন্টন বিষয়টি খুব ভালোভাবে জানা উচিত এবং উত্তরাধিকার সূত্রে কোন আইনে কে ওয়ারিশ সে বিষয়টি ভালোভাবে জানা উচিত। মহান আল্লাহ তাআলা এক আয়াতে উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন এবং সেখানে স্পষ্ট ভাবে বলেছেন, কোন ব্যক্তি যদি মারা যায় এবং তার যদি পর্যাপ্ত সম্পত্তি থাকে তাহলে সেখান থেকে তার প্রথমে দাফন কাফনের ব্যবস্থা করতে হবে। 

তিনি যদি জীবদ্দশায় কোনরকম ধার দেনা করে থাকেন তাহলে সেগুলো প্রথমে পরিশোধ করতে হবে। যদি মৃত ব্যক্তি কাউকে উইল করে থাকেন তাহলে উইলকৃত ব্যক্তিকে প্রথমে তার প্রাপ্য অংশটুকু বুঝিয়ে দিতে হবে। এই সবগুলো কাজ শেষ হওয়ার পর বাকি সম্পদের অংশটুকু ওয়ারিশ সম্পদ বন্টনের আইন অনুযায়ী ভাগ করার সুযোগ রয়েছে। আসন পাঠক বৃন্দ এবার আমরা মুসলিম আইনে সম্পত্তির বন্টন এবং ওয়ারি সম্পদ বন্টনের আইন অনুযায়ী কিভাবে সম্পদের বন্টন সম্পন্ন করা হয় পর্যায়ক্রমে সেটি সম্পর্কে আলোচনা করি।

পিতার অংশ

  • যে ব্যক্তি মারা গেছেন তার পিতা ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকার হিসেবে গণ্য হবেন। সাধারণত মৃত ব্যক্তির যদি পিতা বেঁচে থাকে তাহলে সে তিন ভাবে উত্তরাধিকার হিসেবে গণ্য হয় এবং সে তিনভাবে সম্পদের ভাগ পেতে পারে।
  • মৃত ব্যক্তির যদি কোন ছেলে বা ছেলের পুত্র থাকে তাহলে বাবা ৬ ভাগের ১ ভাগ সম্পদ পাবেন।
  • আবার মৃত ব্যক্তির যদি ছেলে অথবা ছেলের পুত্র না থাকে কিন্তু মেয়ে অথবা মেয়ের কন্যা থাকে তাহলে পিতা ৬ ভাগের ১ ভাগ সম্পদ পাবেন এবং বাকি ওয়ারিশদের দেওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকবে সেটাও পাবেন।
  • কিন্তু মৃত ব্যক্তি যদি নিঃসন্তান হয় সে ক্ষেত্রে সকল অংশীদারদের দেওয়ার পর সম্পদের বাকি অংশটুকু পিতা পাবেন।

মাতার অংশ

  • পিতার মতো মাতাও তিনভাবে ওয়ারিস সম্পদ বা উত্তরাধিকার লাভ করতে পারবেন।
  • মৃত ব্যক্তির যদি কোন সন্তান বা ছেলের সন্তানাদি থাকে, যদি না থাকে এবং যদি সৎ ভাই-বোন থাকে তবে মাতা ৬ ভাগের ১ ভাগ সম্পদ পাবেন।
  • যদি মৃতের সন্তান অথবা ছেলের সন্তান না থাকে পাশাপাশি একজনের বেশি ভাই অথবা বোন না থাকে তবে মাতা ৩ ভাগের ১ ভাগ সম্পদ পাবেন।
সর্বশেষ যে বিষয়টি সেটি হল মৃত ব্যক্তির যদি কোন সন্তান বা ছেলের সন্তান না থাকে অথবা কমপক্ষে দুইজন ভাই বোন না থাকলে এবং মৃত ব্যক্তি স্বামী বা স্ত্রী হয়, তবে তার স্বামী বা স্ত্রী, মাতা এবং পিতা উত্তরাধিকার হলে সেই স্বামী বা স্ত্রীর অংশ বাদ দেওয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে তার ৩ ভাগের ১ ভাগ মাতা পাবেন। মৃত ব্যক্তির ১ ভাই থাকলেও মাতা ৩ ভাগের ১ ভাগ অংশ পাবেন।

স্বামীর অংশ

  • একজন স্বামী তার মৃত স্ত্রী রেখে যাওয়া সম্পত্তি দুই ভাবে পেতে পারেন। নিচে সেটা বর্ণনা করা হলো।
  • মৃতের যদি কোন সন্তান থাকে তাহলে মোট সম্পদের ৪ ভাগের ১ ভাগ স্বামী পাবে।
  • আর যদি মৃত স্ত্রীর কোনরকম সন্তান না থাকে তাহলে মোট সম্পদের ২ ভাগের ১ ভাগ স্বামী পাবে।
  • স্ত্রীর অংশ
  • ওয়ারিশ সম্পদ বন্টনের আইন অনুযায়ী স্বামীর অংশ এর মত স্ত্রী ও দুইভাবে স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পদের মালিক হতে পারবে। নিচে বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো।
  • মৃত স্বামীর এবং স্ত্রীর সংসারে যদি কোন সন্তান বা পুত্রের থেকে হওয়া সন্তান থাকে তাহলে স্ত্রী মোট সম্পদের ৮ ভাগের ১ ভাগ পাবেন।
  • যদি মৃত ব্যক্তির এবং তার স্ত্রী সংসারে কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তান না থাকে তাহলে স্ত্রী মোট সম্পদের ৪ ভাগের ১ ভাগ পাবেন।

ছেলের অংশ

ছেলে সাধারণত যে কোন অবস্থায় মৃত বাবার সম্পদের অংশীদার। এছাড়া মৃত ব্যক্তির সকল ওয়ারিশ সম্পদ বন্টনের আইন অনুযায়ী ভাগের পর যে সম্পদ অবশিষ্ট থাকবে সেগুলো সবই ছেলেমেয়েরা পাবে। এক্ষেত্রে অবশিষ্ট সম্পত্তি ছেলে যা পাবে মেয়ে তার ১ ভাগের অর্ধেক পাবে। তবে মৃতের যদি কোন কন্যা সন্তান না থাকে তাহলে বাকি সম্পদের মালিক সম্পূর্ণ ছেলে হবে।

মেয়ের অংশ

  • মেয়েরাও ঠিক একইভাবে তিনভাবে ওয়ারিশ সম্পদের মালিক হয়ে থাকে।
  • মৃত ব্যক্তির মেয়ে যদি একজন হয় সেক্ষেত্রে মোট সম্পদের সে অর্ধেক পাবে।
  • মৃত ব্যক্তির মেয়ে একাধিক থাকলে তারা দুই-তৃতীয়াংশ করে পাবে।
  • মেয়ে এবং ছেলে উভয় থাকলে মেয়ে যা পাবে ছেলে তার দ্বিগুণ পাবে। যদি আমরা ছেলে এবং মেয়ের সম্পদের পরিমাণ অনুপাত আকারে দেখি তাহলে সেটি দাঁড়াবে ছেলের ভাগ অনুপাত মেয়ের ভাগ (২:১)।
মুসলিম আইনে সম্পত্তির বন্টন এবং ওয়ারিশ সম্পদ বন্টনের আইন অনুযায়ী উপরে বর্ণিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাধারণত মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদের ভাগ বন্টন হয়ে থাকে।

বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম

আমরা উপরে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে জানার চেষ্টা করেছি যে মুসলিম আইনে সম্পত্তির বন্টন এর মাধ্যমে কারা কারা ওয়ারিশ এর সম্পত্তির ভাগ গুলো কত পরিমানে কে পাবে। ঠিক তেমনি বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম গুলো ও ঠিক তেমনি থাকবে। যেমন বাবার মৃত্যুর পর ছেলের অংশ হিসেবে ছেলে কতটুকু পাবে সেটি আমরা জানিয়েছি। যদি মৃত ব্যক্তির পর্যাপ্ত সম্পদ থাকে তাহলে সেগুলো তার ছেলে মেয়ে পাবে। যদি তার কোন মেয়ে সন্তান না থাকে তাহলে তার সম্পূর্ণ সম্পদের মালিক তার ছেলে হবে। 
আবার যদি মৃত ব্যক্তির কোন ছেলে না থাকে শুধু মেয়ে সন্তান থাকে সেক্ষেত্রে মেয়ে মোট সম্পদের অর্ধেক পাবে। আর ছেলে মেয়ে উভয়ই যদি থাকে তাহলে মেয়ে সবসময় ছেলের ভাগের অর্ধেক সম্পদ পাবে। আর ছেলেরা সবসময়ই মেয়ের ভাগের দ্বিগুণ সম্পদ পেয়ে থাকবে। যদি ছেলের ভাগ ও মেয়ের ভাগের অনুপাত দেখানো হয় তাহলে সেটা ঠিক এরকম হবে। ছেলের ভাগ অনুপাত মেয়ের ভাগ (২:১) অর্থাৎ এক মেয়ে এক ছেলের অর্ধেক অংশ পাবে।

বাবার সম্পত্তি বন্টন আইন

বাবার সম্পত্তি বন্টন আইন সাধারণত ওয়ারিশ সম্পদ বন্টনের আইনের আওতায় যে পরিমাণ সম্পদ তার ওয়ারিশ হিসেবে পেয়ে থাকবে ঠিক সেভাবেই তাকে তার প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়া হয়। আমরা উপরে বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম সংক্রান্ত বিষয়গুলো এবং কিভাবে এটি ভাগ করা হয় সে বিষয়ে আর্টিকেলের উপরের অংশে বিস্তারিত আলোচনা করে ফেলেছি। আপনারা যদি বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম পাশাপাশি মুসলিম আইনে সম্পত্তির বন্টন অনুচ্ছেদের ছেলের অংশ এবং মেয়ের অংশ বিষয়টি ভালো করে পড়েন তাহলে আপনার কাছে বিষয়টা পরিষ্কার হবে।

ওয়ারিশ সম্পত্তি বন্টন

প্রিয় পাঠক আমরা উপরে বর্ণনা করেছি যে ওয়ারিশ বিষয়টা কি এবং কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর কারা কারা তার ওয়ারিশ হতে পারে এবং কোন ওয়ারিশ কতটুকু সম্পদের অংশীদার সে বিষয়টিও আমরা আলোচনার মাধ্যমে জানার চেষ্টা করেছি। বাংলাদেশ ওয়ারিশ সম্পত্তি বন্টন এবং ওয়ারিশ সম্পদ বন্টনের আইন অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির যদি কোন ওয়ারিশ বা অংশীদার না থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে তার দূরের আত্মীয় পর্যন্ত ওয়ারিশ হিসেবে সম্পদের মালিক হবে। 

আশা করি এই তথ্যগুলো আপনারা বুঝতে পেরেছেন এছাড়াও যদি আপনারা ওয়ারিশ সম্পত্তি বন্টন সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চান বা কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করার আগে অবশ্যই একজন সরকারি উকিলের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।

মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বন্টন

মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বন্টন হিসাবে কারা কারা সম্পদের মালিক হয় সেটা সম্পর্কে আমরা অবগত হয়েছি। মৃত ব্যক্তির যদি পিতা মাতা স্ত্রী সন্তান না থাকে কিন্তু দাদা বেঁচে থাকে তাহলে উক্ত ব্যক্তির সম্পদের মালিক দাদা হবেন। যদি দাদা না থাকে তাহলে সম্পদের মালিক হবেন। দাদি অথবা নানি এবং তারা সম্পদের ৬ ভাগের ১ ভাগ পাবেন। আর মৃত ব্যক্তির যদি কেউ না থাকে তাহলে সম্পদের মালিক হবেন দূরের আত্মীয় তবে তাদের সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক থাকতে হবে।

মৃত ভাইয়ের সম্পত্তি বন্টন

মৃত ব্যক্তির যদি সৎ ভাই বেঁচে থাকে তাহলে সেও সম্পদের মালিক হবে। এক্ষেত্রে তার পরিমাণ দাঁড়াবে ৬ ভাগের ১ ভাগ। তবে সেটির শর্ত হচ্ছে পিতা থেকে উপরে পূর্বপুরুষ কেউ থাকবে না এবং সন্তান থেকে উত্তরসূরী কেউ থাকবে না। আবার মৃত ব্যক্তির যদি সৎ বোন বেঁচে থাকে ঠিক সেও সৎ ভাইয়ের ন্যায় সম্পদের মালিক হবে। তাছাড়া মৃত ব্যক্তির আপন ভাই এবং বোনেরাও ঠিক একই ভাবে সম্পদের মালিক হবে। তবে সেক্ষেত্রেও শর্ত হচ্ছে মৃত ভাইয়ের যদি কোন ছেলে সন্তান স্ত্রী না থাকে সেক্ষেত্রে পিতা-মাতা এবং ভাই-বোন ওয়ারিশ সম্পদ বন্টনের আইন অনুযায়ী সম্পদের মালিক হতে পারবে।

সম্পত্তি বন্টন ক্যালকুলেটর

আমরা আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে একটি জটিল বিষয় আলোচনা করলাম। তবে আপনারা ম্যানুয়ালি হিসাব করার পাশাপাশি খুব সহজেই এটির হিসাব করতে পারবেন। তবে সে ক্ষেত্রে আপনার একটি মোবাইল ডিভাইস অথবা কম্পিউটার থাকতে হবে। তারপর গুগলে গিয়ে সার্চ করতে হবে সম্পত্তি বন্টন ক্যালকুলেটর এই লিখে। তাহলে আপনার কাছে অনেকগুলো অফিসিয়াল ওয়েবসাইট চলে আসবে। 
তারপর যে কোন একটি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে সেখানে একটি “সম্পত্তি বন্টন ক্যালকুলেটর” নামের অপশন দেখতে পাবেন। সেখানে ক্লিক করলে আপনি কোন ওয়ারিশ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন অর্থাৎ কোন ওয়ারিশ কতটুকু সম্পদ এর মালিক সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন সেগুলো সিলেক্ট করে “সাবমিট” বাটনে ক্লিক করলে আপনার কাঙ্ক্ষিত উত্তর পেয়ে যাবেন।

লেখকের শেষ কথা

প্রিয় পাঠক বৃন্দ আমরা আর্টিকেলের একদম শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। ওয়ারিশ সম্পদ বন্টন আইন বিষয়টি একটু জটিল তবে আপনারা যদি এই পোস্টটি ভালোভাবে আরেকবার পড়েন তাহলে আশা করি বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাবেন। আমরা আমাদের এই আর্টিকেলের তথ্যগুলো বিভিন্ন আইন বিষয়ক অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং উইকিপিডিয়া থেকে সংগ্রহ করেছি। আপনি আপনার সম্পদ বিষয়ে যদি কোন রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চান তাহলে অবশ্যই সর্বপ্রথম আপনার একজন সরকারি উকিলের সাথে আলোচনা করা প্রয়োজন। আপনাদেরকে অশেষ অশেষ ধন্যবাদ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য। 

ওয়ারিশ সম্পদ বন্টনের আইন বিষয়ে পাশাপাশি এই পোস্ট সম্পর্কে যদি আপনার কোন রকম প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে আমাদের মন্তব্য বক্সে আপনার প্রশ্ন করতে পারেন। আমরা অতিসত্বর প্রশ্নটির উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। আমরা সবসময়ই এরকম তথ্যবহুল আর্টিকেল আমাদের ওয়েবসাইটে দিয়ে থাকি। তাই গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্যগুলো পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। আর আপনার কোন বন্ধু বা আত্মীয় যেন ওয়ারিস অর্থাৎ অংশীদারিত্ব থেকে বঞ্চিত না হয় তাকে বিষয়টি জানানোর জন্য এই পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন। আশা করি সবাই ভাল থাকবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url