সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩-সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩ সম্পর্কে আপনারা অনেকেই বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে গুঞ্জন শুনে থাকবেন। কিন্তু এই বিষয়টি আসলে কিসের উপর ভিত্তি করে সংসদে বিল পাস করা হয়েছে সেটা আমাদের অনেকেরই অজানা। আবার এই সম্পর্কে জানলেও এটার আসলে মূল কাজ কি সেটাও আমরা সম্পূর্ণ জানি না। তাই আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন সম্পর্কে আপনাদেরকে সম্পূর্ণ বিস্তারিত ভাবে জানানোর চেষ্টা করব। 
সর্বজনীন-পেনশন-ব্যবস্থাপনা-আইন-২০২৩
পাশাপাশি আপনারা আরো যেগুলো বিষয়ে জানতে পারবেন সেগুলো হলো সর্বজনীন স্কিম বিধিমালা এবং এর ব্যবস্থাপনা আইন, সর্বজনীন পেনশন এর সুবিধা সমূহ এবং নীতিমালা সর্বজনীন পেনশন কত ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে এবং কোনটির কি কাজ সে সম্পর্কে আপনারা বিস্তারিত জানতে পারবেন। সেজন্য বন্ধুরা আপনি যদি সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩ সম্পর্কে জানার জন্য আগ্রহী হন তাহলে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্র

ভূমিকা

“সর্বজনীন পেনশন” বাংলাদেশ সরকারের একটি কালজয়ী ব্যবস্থাপনা গুলোর মধ্যে একটি। প্রধানত “সর্বজনীন পেনশন” বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অবসর ভাতা উদ্যোগের একটি ব্যবস্থা বিশেষ। একজন ব্যক্তির বয়স ও অবদানের ভিত্তিতে এই সুবিধার তারতম্য বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। তবে একটি নির্দিষ্ট হিসাব অনুযায়ী অবদানের ন্যূনতম সংখ্যক যোগ্যতা যদি বিদ্যমান থাকে সেক্ষেত্রে কেউ পেনশন দাবি করতে পারবে। ২০০৮ সালে সাধারণ নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগ সরকার ইশতেহারে সকল শ্রেণীর নাগরিকদের জন্য একটি অবসর ভাতা বা পেনশন স্কিম প্রণয়ন করার অঙ্গীকার করেছিল। 

পরবর্তীতে ৩০ জুন ২০১৬ সালে বাজেট পরিকল্পনা পেশ করার সময় সেই সময়ের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কিছু বেসরকারি খাতের কর্মচারীদের জন্য একটি পেনশন স্কিম চালু করেন। যেটা কিনা দেশের পেনশন স্কিমের প্রাথমিক ব্যবস্থা হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ সরকার বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রবীণ নাগরিকদের সুবিধার প্রেক্ষিতে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩ প্রবর্তন করার পুনরায় সিদ্ধান্ত নেয়। তারপর ২০১৯ সালে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাজেট কার্যক্রম পরিচালনা করার সময় সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। 

তৎকালীন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছিলেন যে প্রবীন নাগরিকদের জন্য প্রস্তাবিত সর্বজনীন পেনশন স্কিমটি সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত দেওয়ার লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ সেল বাস্তবায়নের জন্য তৈরি করা হয়েছে। সেই ভিত্তিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার উপর প্রস্তুতকৃত কৌশল পত্র উপস্থাপনের পর সেটি দ্রুত সম্ভব পেনশন ব্যবস্থা চালু করার উদ্দেশ্যে একটি আইন প্রণয়ন জারি করেন। পাশাপাশি অর্থ মন্ত্রণালয়কে কার্যক্রমটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দ্রুত নির্দেশ দিয়েছিলেন। 
সকল জল্পনা কল্পনা শেষে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে এসে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল ৯ জুন ২০২২ সালে ঘোষণা করেছিলেন যে ২০২৩ সালে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু হবে। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩ নামে সংসদে বিল পাস করা হয়।

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন

আমরা আমাদের আলোচ্য বিষয় সর্বজনীন পেনশন সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেয়েছি। বুঝতে পেরেছি যে সর্বজনীন পেনশন কেন বাংলাদেশ সরকার চালু করেছে এবং তার ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পেরেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বয়স্ক মানুষদের কথা চিন্তা করেই সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করেছেন। একজন বৃদ্ধ লোক তার সেই বয়সে যেন কোনো রকম কষ্ট না করে সেজন্য যৌবন বয়সেই তাকে কিছু অর্থ জমা করতে হবে। এবং সেটি এ জমা হবে সরকারি কোষাগারে। এখন প্রশ্ন হল কারা কারা এই পেনশন এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন এবং কারা কারা পারবেন না সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা সম্পর্কে আমরা অবশ্যই জানবো। 

কিন্তু আমরা যদি সর্বজনীন পেনশনের মূল বিষয় আগে না জানতে পারি তাহলে বিষয়টি পরিপূর্ণতা লাভ করবে না। তাহলে চলুন আমরা প্রথমে জেনে নিব যে সর্বজনীন পেনশন কত রকম হয় এবং সবগুলোর কাজ সম্পর্কে নিচে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন এর আওতায় কত ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে সেগুলো পর্যায়ক্রমে জেনে নিই।

সর্বজনীন পেনশন নীতিমালা

সর্বজনীন পেনশন কে কয় ভাগে ভাগ করা হয়েছে সেগুলোকে নীতিমালা বলে আখ্যায়িত করা হয়। সার্বজনীন পেনশনের অধীনে চার রকমের অবসর ভাতা বিদ্যমান আছে সেগুলো হলো প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা এবং প্রবাসী।

প্রগতি

সর্বজনীন পেনশনের প্রথম যে স্কিম অথবা নীতিমালা অনুযায়ী প্রথম যে বিষয়টি আসে সেটি হল “প্রগতি”। এটি মূলত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। প্রগতি এর মাসিক চাঁদার হার ১০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত।

সুরক্ষা

যারা সমাজে বর্তমান সময়ে আত্মনির্ভরশীল অর্থাৎ নিজে ইনকাম করার প্রতিশ্রুতি রাখে তাদের জন্য “সুরক্ষা” স্কিম চালু করা হয়েছে। যদি কোন ব্যক্তি নিজে কোন ব্যবসা করেন বা কোন কিছুর সাথে সম্পৃক্ত আছেন তারা প্রতি মাসে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত সুরক্ষা স্কিমে জমা রাখতে পারবেন।

সমতা

বাংলাদেশ সরকার এর সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩ চালু করার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের অত দরিদ্র অর্থাৎ অতি নিম্ন আয়ের মানুষদেরকে পেনশনের আওতায় নিয়ে আসা। শর্তসাপেক্ষে বাংলাদেশের নির্ণয়ের লোকজনদের যারা দরিদ্রসিমার নিচে অবস্থান করছে তারা সমতা এর আওতায় মাসিক চাঁদা ৫০০ টাকা করে জমা দিবেন। সরকার ওই অ্যাকাউন্টে আরো ৫০০ টাকা প্রতি মাসে জমা দিয়ে মাসিক চাঁদা আর পরিমাণ দাঁড়াবে এক হাজার টাকা।

প্রবাসী

বাংলাদেশের বাইরে যারা প্রবাসে কর্মরত রয়েছেন তাদের কথাও ভুলে যাননি মাননীয় সরকার। তারাও এই পেনশনের আওতাভুক্ত হতে পারবে। মাসিক চাঁদা ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা জমা দিয়ে প্রবাসী ভাইগণ “প্রবাসী” স্কিমের আওতাভুক্ত হতে পারবে।

তাহলে আমরা এখন পর্যন্ত জানতে পারলাম যে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আসলে কি এবং এটি কাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি এটি কত ভাবে জনগণদের জন্য কাজ করবে। যেহেতু সর্বজনীন পেনশন সম্পর্কে আমরা জানতে পারলাম তাহলে এখন কারা কারা কিভাবে এ পেনশনের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে সেই বিষয়টি জানা দরকার। তাহলে আসুন এবার আমরা সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা সম্পর্কে জেনে নিই।

সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩ অনুযায়ী কিছু বিধিমালা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ কারা কারা এ পেনশনের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন এবং কারা কারা পারবেন না আবার টাকা জমা দেওয়ার অর্থাৎ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর কত বছর পর একজন ব্যক্তি অবসর ভাতা পাওয়া শুরু করবে সে বিষয়ে গুলো আমাদের জানা প্রয়োজন। তাই চলুন পেনশন স্কিমের বিধিমালা গুলো পর্যায়ক্রমে জানার চেষ্টা করি। 
সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা ২০২৩ বিলে প্রথম যে বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে সেটি হল জাতীয় পরিচয় পত্র এর ভিত্তিতে সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আঠারো বছর থেকে শুরু করে ৫০ বছর বয়সী যে কোন বাংলাদেশী নাগরিক অংশ নিতে পারবে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে এবং বিবেচনার মাধ্যমে পঞ্চাশের বেশি ব্যক্তিদেরও পেনশনের স্কিমে নিয়ে আসা যাবে। এখন আসি মূল প্রশ্নতে অর্থাৎ কত বছর পর একজন ব্যক্তি অবসর ভাতা পেতে শুরু করবে। প্রথমত যে বিষয়ে সেটি হল একজন ব্যক্তি সর্বজনীন পেনশন এর সুবিধা গুলো ভোগ করার জন্য কমপক্ষে ১০ বছর প্রতিমাসিক যে চাঁদা রয়েছে সেটি জমা 

করতে হবে। ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার পর উক্ত ব্যক্তি পেনশনে উপনীত হবেন। তারপর থেকে আর দেওয়া চাঁদার ভিত্তিতে তিনি মাসিক পেনশন পেয়ে থাকবেন। বলে রাখা ভালো যে এটি শুধু যাদের বয়স ৫০ বছর তারা ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার পর অর্থাৎ ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর থেকে পেনশন পেতে শুরু করবেন। আসুন বিষয়টি আরো ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করি। একজন ব্যক্তির বয়স ৫০ বছর সে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা এর আওতায় মাসিক চাঁদা দেওয়া শুরু করল। তার বয়স যখন ৬০ বছর হবে অর্থাৎ ১০ বছর তার চাঁদা দেওয়া হয়ে গেছে সে ক্ষেত্রে ৬০ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পর থেকে 

উক্ত ব্যক্তি পেনশন পাওয়া শুরু করবেন। কিন্তু সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন অনুসারে কোন ব্যক্তি যদি ১৮ বছর বয়সে সর্বজনীন পেনশনের আওতাভুক্ত হয় এবং প্রতি মাসে নিয়মিত ভাবে দশ বছর চাঁদা প্রদান করে অর্থাৎ ২৮ বছর বয়সে এসে তিনি চাঁদা দেওয়া বন্ধ করে দেন তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই তিনি পেনশন পাওয়া শুরু করবেন না। সে ক্ষেত্রে তার বয়স ও ৬০ বছর পূর্ণ হতে হবে অর্থাৎ ১৮ থেকে ২৮ বছর পর্যন্ত তিনি যে দশ বছর চাঁদা প্রদান করেছেন সেই ভিত্তিতে তাকে ৬০ বছর বয়স পর থেকে জামাকৃত চাদার ভিত্তিতে প্রতি মাসে পেনশন প্রদান করা হবে। আবার কোন ব্যক্তি যদি ১৮ বছর বয়স 

থেকে মাসিক চাঁদা দেওয়া শুরু করে এবং সেটি ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত দেয় তাহলে তার সেই মাসিক চাঁদার পরিমাণ যেহেতু বেশি সেক্ষেত্রে তার মাসিক পেনশনের পরিমাণও বেশি হবে। উক্ত বিলে আরো বলা হয়েছে পেনশনে থাকাকালী কোন ব্যক্তি যদি মারা যায় অর্থাৎ কোন ব্যক্তি ৭৫ বছর বয়সের পূর্বে যদি মারা যায় তাহলে বাকি অবশিষ্ট সময়ের জন্য তার প্রধান কৃত নমিনি মাসিক পেনশন পেয়ে থাকবেন। একটি বিষয় এখানে মনে রাখতে হবে সেটি হল মূল পেনশনের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত অর্থাৎ সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন এটাই বাস্তবায়ন করেছে যে একজন ব্যক্তি ৬০ বছর বয়স পূর্ণ 

হওয়ার পর থেকে পেনশন পাওয়া শুরু করবেন। এবং ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত সেটি পাবেন এর পূর্বে যদি তিনি মারা যান তাহলে সেই মাসিক পেনশন তার নমিনি পেয়ে থাকবেন। সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা তে আরও একটি বিষয় উল্লেখ আছে যে একজন ব্যক্তি যদি প্রতিমাসে নিয়মিত চাঁদা প্রদান করে কিন্তু প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে কোন এক সময় সে যদি ঋণের আবেদন করে তাহলে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ সে তুলতে পারবে। পরবর্তীতে সেটি হিসাব অনুযায়ী ফি সহ পরিশোধ করতে হবে। সর্বজনীন পেনশন কর্তৃ ক প্রাপ্ত ঋণ আয়কর মুক্ত থাকবে পেনশনের জন্য নির্ধারণ করা সাদা বিনিয়োগ 

এর গণ্য করে কর মওকুফের জন্য বিবেচিত হয়। বিলের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং যাদের কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ সরকার সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩ স্কিম চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেই নিম্ন হতদরিদ্র নাগরিক যারা দরিদ্র সীমার নিচে অবস্থান করছে সেই অসচ্ছল চাঁদা দাতা দের ক্ষেত্রে পেনশন তহবিলে সরকার ৫০% চাঁদা অনুদান হিসেবে প্রদান করবে। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে সরকারি আধা সরকারি সাহিত্য শাসিত অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো খুব সহজেই অংশ নিতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের চাঁদার অংকটা উক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বৃন্দ নির্ধারণ করবে। 

সরকার কোনরকম সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত সাহিত্যশাসিত বা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মরত ব্যক্তিবর্গ এই পেনশন অর্থাৎ “সমতা” স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেনা। একমাত্র নিম্ন আয়ের লোকজন সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন এবং সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা মোতাবেক সমতা এর আওতায় প্রতি মাসে মাসিক চাঁদা প্রদান করতে পারবে। তবে সমাজের দরিদ্র সীমায় অবস্থান করছে এ বিষয়টি প্রমাণের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তর অথবা পরিসংখ্যান অফিস থেকে একটি নির্দিষ্ট প্রমাণ লিপি দাখিলের মাধ্যমেই “সমতা” স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হওয়া সম্ভব।

সর্বজনীন পেনশন সুবিধা

বাংলাদেশ সরকার দেশের নাগরিকদের কথা চিন্তা করেই সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে। এখানে প্রধান যে সুবিধা হল একজন ব্যক্তি তার নির্দিষ্ট বয়সসীমা পার হওয়ার পর যেন কোনো রকম সমস্যার সম্মুখীন না হয় এটি এই স্কিমের মূল লক্ষ্য। একটি সময় পর যখন আমরা বৃদ্ধ হয়ে যাই তখন আমাদের আর ভরণ পোষণ করার কোন লোক থাকে না ছেলেমেয়েরাও অনেক সময় দেখাশোনা করে না সে ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি উপরে উল্লেখিত যেকোনো একটি স্কিমের আওতায় যদি প্রতিমাসে চাঁদা প্রদান করে তাহলে ৬০ বছর বয়স পর তার আর কোনরকম চিন্তা থাকে না। 

সে মাসিক ভিত্তিতে পেনশন প্রাপ্ত হয় যা কিনা একজন সরকারি চাকরিজীবী পেয়ে থাকেন। তাই এই সর্বজনীন পেনশনের এটাই একমাত্র বড় সুবিধা যে শেষ বয়সে অবসর ভাতা হিসেবে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে নিশ্চিন্তে জীবন যাপন করা সম্ভব। আবার নিম্নয়ের মানুষদের ৫০% টাকা জমা দেওয়ার পর সরকার আরো ৫০% অনুদান হিসেবে তাদের পেনশন তহবিলে জমা করছে। তাহলে তারা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন অনুসারে বড় একটি সুবিধা পেয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া আমরা প্রতিনিয়ত কত টাকায় কত কাজে নষ্ট করে ফেলছি প্রতি মাসে। 

যদি আমরা উক্ত চাঁদা পরিশোধ করি তাহলে আমরা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য আর কোনরকম চিন্তা করতে হচ্ছে না। এটাও সর্বজনীন পেনশনের একটি বড় সুবিধা। আবার সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা এর আরও একটি বড় সুবিধা হল আপনি চাইলে আপনার জমাকৃত টাকার ৫০% ঋণ সুবিধা পেয়ে যাবেন এবং পরবর্তীতে সেটির কোনরকম আয়কর দিতে হবে না।

সর্বজনীন পেনশনের মতভেদ

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী মন্তব্য করেন যে আপাতদৃষ্টিতে এই স্কিমটি ভালো মনে হলেও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শুধু এটির সুবিধা ভোগ করবে। পরবর্তীতে সরকার আদেও মুনাফা দিবে কিনা সেটি পরিষ্কার নয়। তিনি আরো দাবি করেন যে এ বিল সংবিধানের সঙ্গে মিল রাখে না। বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা আরো একটি বিষয় উল্লেখ করেন যে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা এটি একটি শিয়ালের কাছে মুরগি বর্গা রাখার মত। 
কথাগুলো সত্যি অবাঞ্চনীয় কেননা বাংলাদেশ সরকার নাগরিকদের কথা মাথায় রেখেই এই স্কিমটি বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়কে সবসময় তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন। একজন সরকারি চাকরিজীবী শেষ বয়সে যেভাবে পেনশনভুক্ত হন ঠিক সেভাবে একজন বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক ও যেন পেনশনের আওতাভুক্ত হয়। সে ব্যবস্থা বাংলাদেশ সরকার করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাহলে এ বিষয়ে অন্য কোন বিরোধ মতবাদ নিয়ে আসা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়।

লেখকের শেষ কথা

প্রিয় পাঠক বৃন্দ আমরা আর্টিকেলের একদম শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি বাংলাদেশ সরকার সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩ পাশ করেছে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্যই। তাই আমাদের সকলেরই উচিত এই পেনশনের যেকোনো একটি স্ক্রিমে আওতাভুক্ত হয়ে নিজের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা। ব্যক্তিগতভাবে আমিও “সুরক্ষা” স্কিমে প্রতি মাসে ১০০০ টাকা করে মাসিক চাঁদা প্রদান করে থাকি। আশা করি আপনারা এখন পর্যন্ত সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত সকল বিষয়গুলো বুঝতে পেরেছেন। তাহলে আপনারাও যে কোন একটি স্কিমের আওতায় মাসিক চাঁদা প্রদান করা শুরু করে দিন। 

সর্বজনীন পেনশন বিষয়ে আপনাদের যদি আরও কোন কিছু জানার থাকে তাহলে আমাদের মন্তব্য বক্সে সেটি জানাতে পারেন। আপনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য। পাশাপাশি আপনার বন্ধুদের অথবা আত্মীয়দের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য এবং সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন সংক্রান্ত সকল বিষয়গুলো জানানোর জন্য এই পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url