পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩-মুসলিম পারিবারিক আইন বিধিমালা ১৯৬১

পারিবারিক আদালত আইন বর্তমান সময়ে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যে পরিবারের অভ্যন্তরীণ যে কোন বিষয় এখন উক্ত আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যে বিরোধ গুলো দেখা যায় তার মধ্যে জমি-জমা সংক্রান্ত এবং পারিবারিক বিষয় নিয়ে হয়ে থাকে। পারিবারিক অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোর মধ্যে থাকে দাম্পত্য কলহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, যৌতুকের জন্য বিবাহ বিচ্ছেদ, ভরণ পোষণ ঠিকমতো না দেওয়া ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে যদি আমরা জ্ঞান অর্জন করতে পারি তাহলে আমাদের অভ্যন্তরীণ পারিবারিক বিষয়গুলো আমরা সহজেই মীমাংসা বা নিষ্পত্তি করতে পারি। 
পারিবারিক-আদালত-আইন-২০২৩
বাংলাদেশ সরকারও তার নাগরিকদের কথা চিন্তা করে পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩ নামে একটি বিল সংসদে পাস করে। এবং উক্ত আইন অনুযায়ী কিভাবে সমস্যাগুলো নিরসন করা যায় সেই সম্পর্কে আমরা আজকে এই আর্টিকেলে বিস্তারিত জানব। পাশাপাশি আরো যেগুলো বিষয়ে জানতে পারব সেগুলো হলো মুসলিম পারিবারিক আইন বিধিমালা, পারিবারিক আইন বাংলাদেশ এবং পারিবারিক আদালত আইন ১৯৮৫ এর কার্যক্রম কেমন ছিল সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব। তাই প্রিয় পাঠক আপনি যদি পারিবারিক আদালত আইন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন তাহলে পোস্টটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্র

ভূমিকা

পারিবারিক আদালত গুলো সাধারণত একটি আদালতের সমতা বজায় রক্ষার্থে যা কিনা অভ্যন্তরীণ পারিবারিক বিষয়গুলো নিষ্পত্তির পাশাপাশি শিশুদের হেফাজত সহ আরো অন্যান্য পারিবারিক আইন সংক্রান্ত বিষয়গুলো সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকবে। যতক্ষণ না পর্যন্ত কোন আবেদনকারী বা বাদী নিজে আদালতে না আসেন সেই ক্ষেত্রে কিছু আইনি বিধি নিষেধ প্রয়োগের মাধ্যমে সকল রকম সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়ে থাকে। পারিবারিক আদালত পরিবার এবং গার্হস্থ্য সম্পর্কে সাথে সমস্ত মামলার শুনানি নিষ্পত্তি বা কার্যক্রম পরিচালিত করে। 

বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত এবং পারিবারিক বিষয়ের সবগুলি মামলা পরিচালনা করার জন্য একটি আলাদা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এবং সেটিকে পারিবারিক আদালত নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। পারিবারিক আদালত আইন এবং পারিবারিক আদালত সর্বপ্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৯১০ সালে স্থাপিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ন্যাশনাল প্রবেশন অ্যাসোসিয়েশন (NPA) এর সদস্যরা পারিবারিক আদালত কে একটি উচ্চ মর্যাদাশীল রূপে পরিপূর্ণতা প্রদান করে। 

পারিবারিক আদালতের ধারণাটি ১৯২০ এবং ১৯৩০ এর শেষের দিকে বিভিন্ন ভাবে সংস্কার করা হয়েছিল। যার মাধ্যমে বর্তমান প্রেক্ষাপটে ফৌজদারি অসহায়ত্ব, কিশোর অপরাধ এবং বিবাহ বিচ্ছেদকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ঝামেলার মীমাংসা গুলো খুব সহজেই উক্ত আদালতের আইন অনুযায়ী করা হয়ে থাকে।

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩

মানুষ সামাজিক জীব সমাজে বসবাস করার সময় মানুষ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হবে এটাই স্বাভাবিক। এবং উক্ত সমস্যাগুলো নিরপন এর জন্য মানুষই বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকবে সেটাতে কোনরকম সন্দেহ নেই। পারিবারিক আদালত শিশু এবং পরিবারের সাথে জড়িত সকল বিষয় নিয়ে কাজ করে থাকে। দেশের সকল জনগণের কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ সরকার পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩ নামে একটি সংসদে বিল পাস করেছিল। গত বছর ৪ সেপ্টেম্বর উক্ত আইনটি পাস হয়। আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক আইন টি পাস করার জন্য সংসদে প্রস্তাব করেছিলেন। 
এবং ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর নেতৃত্বে কন্ঠ ভোটে এটি পাস হয়। মূলত ১৯৮৫ এর পারিবারিক আদালত ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিষয়গুলো পারিবারিক আদালত আইন এ প্রতিস্থাপিত হবে। উক্ত আইন অনুযায়ী শুধুমাত্র জেলা জজের আদালত নয় জেলা জজের সমতুল্য যে কোন বিচারকের আদালত কেউ পারিবারিক মামলার আপিল আদালত হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এছাড়া দিলে পারিবারিক আদালতের মামলার করছি পূর্বে ৫০ টাকা থাকলেও সেটি বাড়িয়ে ২০০ টাকা করা হয়েছে। যেহেতু পূর্বে মামলার আপিল বা শুনানি করার জন্য জেলা জজ আদালতের নিকট যাওয়া প্রয়োজন পড়তো যা 

জেলা তাদের জন্য একটি অতিরিক্ত চাপের বিষয় ছিল। পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩ বিল পাস হওয়ার পর উক্ত সংশোধনী অনুযায়ী এখন জেলা জজের দায়িত্ব কিছুটা কম হয়েছে। উক্ত আইন অনুযায়ী পারিবারিক আদালত সাধারণত পাঁচটি বিষয়ে বিচার কার্য সম্পন্ন করে থাকে। সেগুলো হলো বিবাহ বিচ্ছেদ, দাম্পত্য সম্পর্ক পুনরুদ্ধার, মোহরানা, ভরণপোষণ এবং সন্তানের অভিভাবকত্ব। আসুন তাহলে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আমরা এখন পর্যায়ক্রমে বিস্তারিত ভাবে জেনে নিব।

বিবাহ বিচ্ছেদ

বিবাহ বিচ্ছেদ বলতে সাধারণত বোঝায় যে স্বামী এবং স্ত্রীর সকল রকম সম্পর্ক ত্যাগ করে আইনগতভাবে কাগজপত্রের মাধ্যমে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং পরবর্তীতে তারা কখনো একসঙ্গে সংসার জীবনে উপনীত হবে না। এই মর্মে কাগজপত্রে স্বাক্ষর করা মুসলিম আইনের ৩০৭ ধারায় উল্লেখ থাকে। যে বিবাহ বিচ্ছেদের মাধ্যমে বিবাহ চুক্তি ভঙ্গ এবং ৩০৮ ধারা অনুযায়ী তালাক দ্বারা বিবাহ চুক্তি ভঙ্গ করা যাবে। স্বামী এবং স্ত্রী যদি স্বেচ্ছায় আদালতের কোনোরকম হস্তক্ষেপ ব্যতিত অথবা কোন পক্ষ যদি আদালতে আশ্রয় নিয়ে বিবাহ নাকোচ করতে চায় সেক্ষেত্রে অবশ্যই পারিবারিক আদালত আইন 

২০২৩ অনুযায়ী আপিলের ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করা হবে। তবে সেক্ষেত্রে আমাদের জানতে হবে যে আদালতের কোনরকম হস্তক্ষেপ ছাড়া যদি বিবাহ বিচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালিত হয় তাহলে সেটিকে বলা হবে তালাক। লিখিত অথবা মৌখিকভাবে যদি স্বামী নির্দিষ্ট বাক্যটি সুস্পষ্ট ভাবে সজ্ঞানে এবং স্বইচ্ছায় উচ্চারণ করে এবং সেই অনুসারে যদি তালাকের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয় তাহলে স্বামী কর্তৃক স্ত্রী তালাক হয়ে যায়। তালাকের একটি দলিল হচ্ছে তালাকনামা। তালাকের কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার পর উভয় পক্ষকে একটি করে তালাকনামা কপি বন্টন করে দেওয়া হয়। 

তালাক কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার সময় সাক্ষী হিসেবে স্বামী অথবা স্ত্রীর পিতা বা অন্য ব্যক্তিগণ উপস্থিত থাকেন। তবে মুসলিম আইনে কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্ত্রী ও স্বামীকে তালাক দিতে পারবেন এ বিষয়ে আমরা নিচে পরবর্তীতে আলোচনা করব।

দাম্পত্য সম্পর্ক পুনরুদ্ধার

পারিবারিক আদালত আইন অনুযায়ী কোন বৈধ কারণ ব্যতীত স্ত্রী যদি স্বামীর সংসার ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে আশ্রয় নেয় এবং স্বামীর সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় না রাখে তাহলে স্বামী স্ত্রীকে ফেরত পাওয়ার জন্য পারিবারিক আদালতে গিয়ে মামলা করতে পারবেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে উক্ত মামলার স্বামী তখনই অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন যদি তাদের বিবাহ অবস্থাটি বজায় থাকে। অভিযোগ দায়ের করার পূর্বেই যদি স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিয়ে থাকে বা তালাক হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে কোনো রকম মামলা আদালতে গ্রহণযোগ্য হবে না।

মোহরানা

মুসলিম সমাজে বিয়ের সময় স্বামী স্ত্রীকে মোহরানা সহিত বিয়ে কার্য সম্পাদন করবে এটা ইসলামের রীতি এবং মুসলিম আইনে অবশ্যই পালনীয়। বিয়ের সময় কাবিননামায় মোহরানা কত দিবে সেটি উল্লেখ করা হয় সময় কাল পাত্র এবং অবস্থা ভেদে। মোহরানার পরিমাণ কম বেশি হতে পারে। তবে মুসলিম আইনে উল্লেখ নেই সর্বোচ্চ কত টাকা মোহরানা দেওয়া যাবে তবে আরবি হিসেবে উল্লেখ থাকে যে ১০ দিরহামের নিচে মোহনা দেওয়া যাবে না। 

মোহরানা যত বেশি কাবিননামায় উল্লেখ থাকবে সেই পরিমাণ অর্থ বা স্বর্ণ স্বামী স্ত্রীকে দিতে হবে। যদি দেনমোহর পরিষদের পূর্বেই স্বামী মারা যায় তাহলে স্বামীর পুরো সম্পত্তি পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩ এর মতে সম্পূর্ণ ভোগ দখল স্ত্রী করে থাকবে।

ভরণ পোষণ

ইসলামী আইনের দৃষ্টিতে ভরণপোষণ কে সাধারণত “নাফাফা” বলে আখ্যায়িত করা হয়। এই ভরণপোষণের আওতায় যেগুলো পড়ে সেগুলো হল খাদ্য বস্ত্র এবং বাসস্থান। আইন অনুযায়ী যতদিন পর্যন্ত পুত্র অথবা সন্তান সাবালক না হয় ততদিন পর্যন্ত পরিবারের কর্তার উপর ভরণপোষণের দায়িত্ব বর্ধিত থাকে। আবার বিধবা অথবা তালাকপ্রাপ্ত মেয়ের ভরণ পোষণের দায়িত্ব থাকে পিতার। যদি সে ক্ষেত্রে পিতা অক্ষম হয় তাহলে মায়ের উপর দায়িত্ব বর্জিত হয়। পিতা এবং মাতা উভয় যদি ভরণ পোষণের দায়িত্ব নিতে অক্ষম হয় তাহলে সেই দায়িত্ব গিয়ে পড়ে পিতামহের উপর। 
সংসারে ভরণপোষণের প্রথম হকদার হলেন স্ত্রী। সবসময় স্ত্রী স্বামীর নিকট থেকে ভরণ পোষণ পাওয়ার অধিকারী হয়ে থাকেন। যদি স্বামী কোন কারণবশত স্ত্রীর সঙ্গে একসঙ্গে বসবাস না করেন সে ক্ষেত্রেও স্বামী তার স্ত্রীকে ভরণ পোষণ দিতে বাধ্য থাকবে। যদি স্ত্রী স্বামীর থেকে অধিক সম্পদশালী হয়ে থাকেন সে ক্ষেত্রেও স্বামী তার স্ত্রীর ভরণ পোষণের দায়িত্ব পালন করবে। পারিবারিক আদালত আইন এটা বলে থাকে যে যদি স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় সে ক্ষেত্রেও প্রথম তিন মাস স্বামী তার স্ত্রীর ভরণ পোষণ দিতে বাধ্য এবং সেটিকে বলা হয় ইদ্দকালীন” ভরণ পোষণ।

অভিভাবকত্ব

সাধারণত পিতা নাবালক সন্তানের দেহ ও সম্পত্তির আইনগতভাবে অভিভাবক যদি পিতা সংসারের উপস্থিত না থাকে তাহলে সে দায়িত্ব গিয়ে পৌঁছায় মায়ের উপরে। যদি মা অক্ষম হয় তাহলে নিকট আত্মীয় অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করে থাকবে। তবে যদি কোন নাবালকের নিকট আত্মীয়, পিতা- মাতা বা কেউ না থাকে সেক্ষেত্রে সেই দায়িত্ব সরকারের নিকট চলে আসে। পারিবারিক আদালত আইন ১৯৮৫ তে জারি হওয়া একটি বিষয় উল্লেখ ছিল যে জেলা জজ নাবালকের দেহ ও সম্পত্তির অভিভাবক হিসেবে নিযুক্ত হবেন। 

বর্তমানে সেই দায়িত্বটি পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩ অনুযায়ী সহকারী জজ এর উপর বর্ষিত হয়েছে। আমরা এতক্ষণ পর্যন্ত পারিবারিক আদালত কোন কোন পাঁচটি বিষয় নিয়ে বিচার কার্য সম্পন্ন করে সেই সম্পর্কে জানলাম।

পারিবারিক আদালত আইন ১৯৮৫

পারিবারিক আদালত অর্ডিন্যান্স ১৯৮৫ তে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের আইনগত সমস্যার কথা মাথায় রেখে বিচার ব্যবস্থা নিষ্পত্তি সম্পর্কে অনেকগুলো আইন জারি করেছিল। সেগুলো হল ইসলামী আইন, হিন্দু আইন, দেওয়ানী কার্যবিধি সাক্ষ্য আইন অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন, মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন, পারিবারিক আইন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তবে এই আইনগুলো বাংলাদেশের রাঙামাটি খাগড়াছড়ি বান্দরবান এবং পার্বত্য এলাকার জেলা সমূহ ব্যতীত দেশের সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল। 

উক্ত আইনের প্রেক্ষিতে দেশের সকল পারিবারিক বিষয়গুলো আদালতে আপিল হিসেবে গণ্য হতো। এবং মুনসেফ গণ উক্ত আদালতের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। কিন্তু এই আইনগুলো ধর্ম বিষয়ক কিছু জটিলতা সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন বাধা বিভক্তির কারণে সেটি অনেকবার সংস্কার করা হয়। সর্বশেষ পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩ অর্থাৎ গত বছর ৪ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক উপস্থাপন করেন এবং কণ্ঠভোটে সেটির বিল পাস হয়।

মুসলিম পারিবারিক আইন বিধিমালা ১৯৬১

বাংলাদেশ সরকার ২০২৩ সালে পূর্বে বর্ণিত ১৯৮৫ সালের আইন বাতিল করেন এবং সেটি ২০২৩ সালে এসে পুনরুদ্ধার করেন। পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩ এর ধারা-৫ অনুযায়ী ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে উল্লেখিত যে সকল বিষয়গুলো ছিল তার সেভাবে কোন পরিবর্তন করা হয়নি। সেই সময়ে উক্ত বিচার কার্যক্রম এবং নিষ্পত্তি বিষয়ক এক্তিয়ার গুলো বর্তমানে পারিবারিক আদালতে বিদ্যমান রয়েছে। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অনুসারে ধারা ৯ অনুযায়ী যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীকে ভরণ পোষণ প্রদান করতে ব্যর্থ হয় তাহলে স্ত্রী তার ভরণপোষণের অধিকার আদায় লক্ষ্যে 

আইনের আশ্রয় গ্রহণ করতে পারবে। সেক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের নিকট আবেদন দাখিল করতে হবে। অন্যান্য ধর্মালম্বী তেমন হিন্দু বৌদ্ধ ইত্যাদির মতো ব্যক্তিবর্গ উচ্চ আদালতে গিয়ে পারিবারিক মামলা দায়ের করার মাধ্যমে স্বামী নিকট হতে ভরণ পোষণ আদায় করতে পারবে। আবার ১৯৬১ এর ধারা ১০ অনুযায়ী নিকাহনামা অথবা বিবাহ চুক্তির মোহরানা পরিশোধের পদ্ধতি কাবিননামায় উল্লেখ থাকতে হবে। যদি কোন ভাবে ছলচাতুরির মাধ্যমে কাবিননামায় মোহরানার হিসাব উল্লেখ না থাকে সে ক্ষেত্রে স্ত্রী তার মোহরানা চাওয়া মাত্র স্বামী দিতে বাধ্য থাকিবে। 

তবে সেক্ষেত্রে পরিমাণ এর বিষয়টি উল্লেখ করা ছিল না। অর্থাৎ মুসলিম পারিবারিক আদালত আইন অনুযায়ী স্ত্রী তার মোহরানা একটি অধিকার হিসেবে পেয়ে থাকে। যদি মোহরানা পরিশোধের পূর্বে স্বামী মারা যায় তাহলে সে ক্ষেত্রে স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তির হকদার স্ত্রী হবে। আবার যদি স্ত্রী মারা যায় সে ক্ষেত্রে তার উত্তরাধিকার উক্ত সম্পত্তির ভোগ দখল করবে। মুসলিম আইন এবং বিধি মালা অনুযায়ী আরেকটি বিষয় উল্লেখ থাকে যে বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাকের পর ছেলে সন্তান ৭ বছর পর্যন্ত এবং মেয়ে সন্তান বয়সন্ধিকাল পর্যন্ত মায়ের নিকট থাকবে। 
তবে বাবাকে অবশ্যই সবকিছুর ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করতে হবে। যদি স্বামী ভরণপোষণ দিতে রাজি না হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামীর নামে আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবে। এবং পারিবারিক আদালত আইন অনুযায়ী বিচার বিশ্লেষনের মাধ্যমে মীমাংসা সম্পাদন করা হবে।

পারিবারিক আদালত যেভাবে সাহায্য করে

পারিবারিক আদালত আমাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য এবং বিচার ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করে থাকে। যা আমরা এই আর্টিকেলের উপরের অংশে ভালোভাবে জানতে পেরেছি। পারিবারিক বিভিন্ন সহিংসতা থেকে বাঁচার জন্য অবশ্যই পারিবারিক আদালতের নিকট যাওয়া উচিত এবং আদালতে নির্দেশে একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। আমরা কখনো যদি পারিবারিক কোনো সমস্যায় পড়ে যায় তাহলে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী যে সকল সাহায্য গুলো গ্রহন করতে পারি তা নিচে বর্ণনা করা হলো।
  • নিজের স্ত্রীকে নিজের থেকে এমনকি আপনার সন্তানদের নিকট থেকে আবার আপনার কর্মস্থল থেকে দূরে রাখতে হবে। পাশাপাশি আপনার স্ত্রীকে আপনার সন্তানদের কোনরকম ক্ষতি না করার নির্দেশ দিতে হবে।
  • আপনার স্ত্রীকে সরাসরি আপনার সাথে যোগাযোগ করা থেকে বিরত রাখুন দরকার পরলে তৃতীয় ব্যক্তির সাহায্য নিন।
  • যদি আপনার স্ত্রী সুরক্ষার আদেশ অমান্য করে তাহলে আইনের আশ্রয় নিন এবং সে ক্ষেত্রে পুলিশ কর্মকর্তা তাকে গ্রেফতার করবে।
  • সুরক্ষার খাতিরে আপনি পারিবারিক আদালত থেকে কিছু সাহায্য চাইতে পারেন যদি নিচের বিষয়গুলো আপনার সঙ্গে ঘটে বিষয় গুলো হল।
  • আইনত বিবাহিত বা অপব্যবহারকারীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করেছেন।
  • আপনি তার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ করেছেন তার সাথে আপনার রক্তের সম্পর্ক রয়েছে।
  • যদি অপব্যবহার কারীর সাথে আপনার একটি শিশুর মিল থাকে।
  • আবু ব্যবহারকারীর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে বিদ্যমান আছেন অথবা পূর্বে ছিলেন।
  • যদি আপনি এবং অপব্যবহারকারী একই পরিবারের সদস্য হন।
পারিবারিক আদালত আইন সুরক্ষার খাতিরে ফৌজদারী মামলা গুলো বিচারাধীন থাকার পরেও আপনি পারিবারিক আদালতের নিকট উপরে বর্ণিত বিষয়গুলোর প্রেক্ষিতে সাহায্য চাইতে পারেন। পারিবারিক আদালতে সুরক্ষা আদর্শের লক্ষ্যে আপনার কোন অ্যাটর্নির প্রয়োজন নেই সাথে ফাইল করার কোন ফি ও নেই। তবে আপনি আপনার বিষয়বস্তু পরিত্রাণের লক্ষ্যে অবশ্যই একজন অ্যাটর্নি সঙ্গে কথা বলে নিবেন।

লেখকের শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক বৃন্দ আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে এটাই নিরূপণ করা যায় যে আমাদের পরিবারের ভেতরে কতটা ঝামেলা তৈরি হয়। ভারপ্রেক্ষিতে সরকার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আইন বাস্তবায়ন এবং প্রণয়ন করেছেন। আশা করি আপনারা এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩ এবং মুসলিম পারিবারিক আইন বিধিমালা সম্পর্কে ভালোভাবে সুস্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন। আশা করি আপনার পরিবারে কোন ঝামেলা তৈরি না হোক যদি কখনো এরকম পরিস্থিতিতে পড়েন তাহলে অবশ্যই আপনি পারিবারিক আদালতে গিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করতে পারেন। আপনাদেরকে অনেক 

ধন্যবাদ আমরা সবসময় আমাদের ওয়েবসাইটে সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংবলিত আর্টিকেল পাবলিশ করে থাকি। সুতরাং আপনি সকল রকম তথ্য ভান্ডার সম্পর্কে জানতে চাইলে আমাদের ওয়েব সাইটটি ভিজিট করতে পারেন। পারিবারিক আদালত সংক্রান্ত কোনো মন্তব্য যদি থাকে তাহলে আমাদের মন্তব্য বক্সে আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি পেশ করুন। পাশাপাশি আপনার বন্ধু-বান্ধবদের পারিবারিক আদালত আইন সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানানোর উদ্দেশ্যে আমাদের এই আর্টিকেলটি শেয়ার করতে পারেন। পরিশেষে সকলের পরিবার সুরক্ষা সংবলিত থাকুক এটাই আমাদের কামনা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url