নবীর রওজা শরীফ জিয়ারতের নিয়ম জেনে নিন

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় বন্ধুরা এই পোস্টে আপনাদেরকে জানানো হবে,নবীর রওজা শরীফ জিয়ারতের নিয়ম। যারা অনলাইনে,নবীর রওজা শরীফ জিয়ারতের নিয়ম সম্পর্কে খুজাখুজি করছেন এবং চিন্তিত রয়েছেন। তাদের জন্য আজকে এই পোস্ট খুব সহজভাবে তৈরি করা হয়েছে যে,নবীর রওজা শরীফ জিয়ারতের নিয়ম।
নবীর রওজা শরীফ জিয়ারতের নিয়ম
প্রিয় বন্ধুরা অনেকেই অনেক সময় নবীজির রওজা মোবারক এ জিয়ারত করার নিয়ম সম্পর্কে এবং নবীজির রওজা মোবারক সালাম জানানোর নিয়ে অনলাইনে খুজাখুজি করছেন। তো বন্ধুরা এখন চিন্তা বাদ দিয়ে । আমাদের এই পোস্ট পড়া শুরু করে দিন ,আশা করা যায়। এই পোস্টেই আপনি আপনার সব প্রশ্নের সমাধান পেয়ে যাবেন।
পোস্ট সূচীপত্র

ভূমিকা

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় বন্ধুরা, আমরা মুসলিম জাতি হজ পালন করা আমাদের একটি দায়িত্ব এর মধ্যে পড়ে। যারা হজ ও ওমরা পালন করার জন্য মদিনায় গিয়ে থাকেন তারা অবশ্যই মহানবী (সা.) এর কবরে জিয়ারত করে আসেন বা সালাম পেশ করেন। আজকের এই পোস্টটা আপনাদেরকে জানানো হচ্ছে নবী (সা.) রোওজা মোবারক সম্পর্কে। যারা ইসলামিকবিদ রয়েছেন তাদের মতে, হাজীদের নবীজির রওজা শরীফ জিয়ারত করা সুন্নত বলা হয়েছে।

আবার অনেকে বলে থাকেন যে এটা ওয়াজিব। এজন্য যারা যারা হজ করতে চান তারা হজ করার পরে হোক কিংবা আগেই হোক, যখন তারা মক্কা থেকে মদিনায় পৌঁছে যায় আর সেখানে গিয়ে তাদের প্রধান দায়িত্ব হয় নবীজির রওজা শরীফ জিয়ারত করা। এবং মদিনা থাকাকালীন তাদেরকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে আদায় করতে হয়। এবং মদিনাতে অবস্থিত রয়েছে মসজিদে নববী। এই মসজিদে নববীতে যে ব্যক্তি এক রাকাত সালাত আদায় করে।

সে ৫০ হাজার রাকাত সালাতের সওয়াব পেয়ে যায় বলে উল্লেখ করা রয়েছে। সৌদি আরবে মদিনা বলে একটি শহর রয়েছে এবং মদিনার মধ্যে মুনাওয়ারা বলে একটি জায়গা রয়েছে এবং সেখানে অবস্থিত মসজিদে নববী। মসজিদে নবাবির সবুজ গম্বুজের ছায়াতলে নিচেই অবস্থিত রয়েছে নবীজির রওজা মোবারক। কিন্তু এর রওজা মোবারক এর চারিদিকে সুরক্ষিত দেওয়ার তৈরি করা রাখা হয়েছে। কোন হাজী সেখানে জিয়ারত করতে গেলে সরাসরি নবীজির রওজা মোবারক দেখার সুযোগ থাকে না। 

এই মদিনা শহরটি এক সময় ইসলামের রাজধানী ছিল। এই মদিনা শহরে হযরত মুহাম্মদ (সা.) জন্মগ্রহণ করেছেন। এবং তার জীবনের বেশিরভাগ সময় এই জায়গাতেই কাটিয়েছেন। নিচে আরও বিস্তারিতভাবে এসব বিষয় জানানো হবে।

নবীজির রওজা মোবারক কোথায়

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় বন্ধুগণ এবার আপনাদেরকে জানানো হবে,নবীজির রওজা মোবারক কোথায়। প্রিয় , নবীজির রওজা মোবারক কোথায় অবস্থিত এটি মুসলিম জাতির যারা হজ করে এসেছেন তারা এই বিষয়টি অনেক ভালই জানেন। নবীজির রওজা মোবারক সৌদি আরবের মদিনা শহরে মুনাওয়ারা নামে স্থানে অবস্থিত। এই মদিনা শহর ছিল একসময় ইসলামের প্রথম রাজধানী। প্রিয় নবী ( সা.) এই মদিনা শহরের জন্ম গ্রহণ করেন।

এবং তার জীবনের অর্ধেকের বেশি সময় তিনি এই জায়গাতেই কাটিয়ে দিয়েছেন। এটি একটি পবিত্র স্থান এবং যারা হজ করার জন্য সৌদি আরবে আসেন তারা এই স্থানে হজ করে যান। মুনাওয়ারা অঞ্চলে অবস্থিত মসজিদে নবাবী। এই মসজিদের নববীতে এক রাকাত নামাজ পড়লে আল্লাহ তা'আলা ৫০ হাজার রাকাত নামাজের সওয়াব দিয়ে থাকেন। মসজিদের নবাবীর সবুজ গম্বুজটির একদম নিচে, নবীজির রওজা মোবারক রাখা হয়েছে। 

হাজিগণ হজ করার আগে বা পরে যখন মদিনা শহরে অবস্থান করেন তখন তারা নবীজির রওজা মোবারক এ জিয়ারত করে আসেন। নবীজির রওজা মোবারক এর চার পাশে সুরক্ষিত দেওয়ার তৈরি করা হয়েছে। জিয়ারত করার সময় কোনো হাজী সরাসরি নবীজির রওজা মোবারক দেখার সুযোগ থাকে না। নবীজির রওজা মোবারক জিয়ারত সম্পর্কে একটি হাদিসে উল্লেখ করে ।বলেন যে,ব্যাক্তি আমার রওজা জিয়ারত করলো তার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব হয়ে গেল (হাদিস সহিহ মুসলিম)। 

এবং অন্য একটি হাদিসে মহানবী (সা.) বলেছেন যে যে ব্যক্তি হজ করল কিন্তু, আমার রওজা জিয়ারত করল না; সে ,আমার প্রতি জুলুম করল (তিরমিজি)। এবং অনেক ইসলামিকবিদদের মতে নবীজির রওজা জিয়ারত করা সুন্নত এবং অনেকে বলে থাকে এটা ওয়াজিব।

নবীজির রওজা মোবারকে সালাম

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় বন্ধুগণ এবার আপনাদের জানানো হবে,নবীজির রওজা মোবারকে সালাম, আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় বন্ধু হযরত মুহাম্মদ ( সা.) কে এই পৃথিবীতে রহমত হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। এই নবীজিকে সালাম জানানো মুসলিম জাতির প্রতিটা নারী ও পুরুষের দায়িত্ব। এই পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন মুসলমান বসবাস করে থাকে। সবার পক্ষে আর সৌদি আরবে গিয়ে নবীর রওজা মোবারক এ সালাম জানানো সম্ভব হয়ে ওঠেনা।

আমাদের মুসলিম জাতির মধ্যে যখনই কোন ব্যক্তি নবীজির প্রতি সালাম জানাই ।এবং দরুদ পেশ করেন। তখন ফেরেশতারা এই সালাম গুলো মদিনা পৌঁছে দেন। এবং মদিনায় যেসব হাজিরা হজ করতে গিয়ে নবীজির রওজা মোবারক এ সালাম জানায় এবং নিজের জন্য এবং নিজের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন সবার পক্ষ থেকে সালাম জানিয়ে আসেন। নবীজির রওজা মোবারকের সামনে সৌদি আরবে মদিনায়, মসজিদে নবাবিতে নবীজির রওজা মোবারক রাখা হয়েছে। 

ছুটির দিন করে আবার বিশেষ করে শুক্রবারের দিনে সকল বয়সে মানুষ এর ভিড় লেগে যায়। নবীজির রওজা মোবারক এর সামনে। সবাই এই জুম্মা মোবারক এর দিনে নবীজির রওজা মোবারক এ সালাম জানিয়ে আসে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার একটি রচনা রয়েছে কাবাঘর নিয়ে। এ রচনায় তিনি কাবাঘর জিয়ারতকারী এবং মক্কা মদিনার পথের যেসব যাত্রী রয়েছে। তাদের কাছে মিনতি জানিয়ে বলেছেন 'আমার সালাম পৌঁছে দিও নবীজির রওজাই'।

নবীর রওজা শরীফ জিয়ারতের নিয়ম

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় বন্ধুগণ আজ আপনাদের জানাবো,নবীর রওজা শরীফ জিয়ারতের নিয়ম। যারা হজ করার উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে যান, হজ করার জন্য তাদেরকে মক্কা-মদিনা 2 ঘুরতে হয়। হজ করার মধ্যে হজ করার আরেকটি অংশ হলো প্রিয় নবীজির রওজা মোবারক জিয়ারত করা,নবীর রওজা শরীফ জিয়ারতের নিয়ম কিছু রয়েছে যেগুলো হল: নবীজির রওজা মোবারক জিয়ারত করতে হলে প্রথমে একজন ব্যক্তিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় প্রদান করতে হবে।

এবং অজু করে নিয়ে প্রথমে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে নিতে হবে। এরপর নবীজির জন্য দরুদ শরীফ ও সালাম করতে হবে প্রচুর পরিমাণে। এরপর নবীজির রওজা মোবারকের সামনে গিয়ে ভদ্রভাবে, নিচু কন্ঠে ,এই দোয়াটি পড়তে হবে:

উচ্চারণ ঃআসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুলুল্লাহ ,আসসালামু আলাইকা ইয়া হাবীবল্লাহ, আসসালামু আলাইকা ইয়া নবীয়্যাল্লিহ।
অর্থ: হে আল্লাহর রাসূল ,আপনার উপর সালাম ;হে আল্লাহর হাবিব ,আপনার উপর সালাম: হে আল্লাহর নবী ,আপনার উপর সালাম। 

নবীর রওজা মোবারক এ সালাম করার ফজিলত পাওয়া গিয়েছে যে আবু হুরায়রা (রা.)এটি বর্ণিত করেছেন (রা.) এক হাদীসে বলেছেন, যে, কে যখন আমার ওপর সালাম জানিয়ে থাকে। তখন আল্লাহ তায়ালা তার খবর আমাকে দেন এবং আমি তার সালামের জবাব দিয়ে থাকি।

রওজা মোবারক জিয়ারতের ফজিলত

প্রিয় নবীজির রওজা মোবারক জিয়ারত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। প্রিয় নবীজ ির রওজা মোবারক জিয়ারত করা মুস্তাহাব বলে জানিয়েছেন চার মাজহাবের প্রখ্যাত ইমামগণ। আবার অনেকেই এটাকে ওয়াজিব বলে জানিয়েছেন। হযরত ওমর ( রা.) থেকে বর্ণিত প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন যে, আমার ওফাতের পর যে আমার রওজা পাক জিয়ারত করল সে যেন জীবিত অবস্থায় আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলো। (বায়হাকি) 

এবং মহানবী (সা:)আরও জিয়ারত করেছেন যে, যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে আমার রোজা পাক জিয়ারত করলো সে কিয়ামতের দিন আমার প্রতিবেশি হবে। এছাড়াও মহানবী সাঃ আরো বলেছেন যে ,ব্যক্তি পবিত্র মক্কায় অথবা পবিত্র মদিনায় ইন্তেকাল করবে সে কেয়ামতের দিন নিশ্চিন্তে থাকবে। (তাবরানি) মসজিদে নববীর সবুজ গম্বুজ এর ছায়ায় শুয়ে আছেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ ( সা.)। মদিনার সবচেয়ে বড় কাজ এটা মহানবী (সা.) রওজা মোবারক এ সালাম আদায় করা। 

আমাদের উচিত আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা চাওয়া। এবং মহানবী (সা.) এর জীবন আদর্শ অনুসরণ করে জীবন চালানো। এবং নবীজির কাছে বেশি বেশি সালাম পেশ করা এবং তার জন্য দরুদ শরীফ বেশি করে পাঠ করা।

নবীজির রওজা মোবারক জিয়ারতের দোয়া

প্রিয় বন্ধুরা এবার আমরা জানবো,নবীজির রওজা মোবারক জিয়ারতের দোয়া। কবর জিয়ারত করা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কবর জিয়ারতের মাধ্যমে আখিরাতের কথা স্মরণ হয়। এবং কবর জিয়ারতের মাধ্যমে মানুষের খারাপ মন মানসিকতা মুছে যায় এবং পরকালের জন্য সৎকাজের জন্য আগ্রহ সৃষ্টি হয়। কবর জিয়ারতের কারণ হচ্ছে এর মাধ্যমে পরকালের কথা স্মরণ করা হয়। ইসলামের প্রথম দিকে কবর জিয়ারতের বিষয়টি নিষেধ করা হয়েছিল। 

পরে রাসূল (সা.) এক হাদীসে বলেছেন যে, আমি তোমাদের কবর জিয়ারতের কথা নিষেধ করছিলাম, এখন থেকে তোমরা কবর জিয়ারত কর, কারণ, তা দুনিয়ার বিমুখতা এনে দেয় এবং আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস;১৫৭১) রাসূল ( সা.) যখন কবরের পাশ দিয়ে যেতেন ,তখন এই দোয়াটি করতে;

উচ্চারণ: আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর; ইয়াগফিরুল্লাহ লানা ওয়ালাইকুম, আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আ-সার।
অর্থ: হে কবরবাসী ,তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক !আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের ক্ষমা করুন তোমরা আমাদের আগে কবরে গিয়েছো এবং আমরা পড়ে আসছি।(সুনানে তিরজিম, হাদিস:১০৫৩) 

এবং আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত করেছেন যে এক কবর জিয়ারতে গিয়ে বলেন;
উচ্চারণ: আসসালামু আলাইকুম যারা ক্বাওমিম মুমিনিন ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহ বিকুম লা হিকুন।
অর্থ মুমিন এই ঘরবাসীদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক ,ইনশাল্লাহ আমরা আপনাদের সঙ্গে মিলিত হব। (সহিহ মুসলিম:২৪৯)

এবং কবর জিয়ারতের জন্য সর্বপ্রথম কবর জিয়ারতের দোয়া পড়তে হবে। এবং দরুদ শরীফ ও বিভিন্ন সূরা পড়তে হবে। হাদিসের কবর জিয়ারতের জন্য কিছু সূরার কথা উল্লেখ রয়েছে যেগুলো হলো: দরুদ শরীফ, সূরা ফাতিহা ,সূরা ইখলাস ,আয়তুল কুরসি ও অন্য যেসব সূরা সহজ মনে হয় সেগুলো। এসব করে কবরবাসীকে তার সওয়াব উপহার দেয়া যায়।

শেষ কথা

প্রিয় বন্ধুরা আজকের এই পোষ্টের মধ্যে আশা করা যায় অনেক কিছুই অজানা বিষয় রয়েছে যা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। অনেকে জানতেন না কিভাবে কবর জিয়ারত করতে হয় এবং কবর জিয়ারতে কি কি সুরা পাঠ করতে হয়। এছাড়া অনেকে জানতেন না যে, মসজিদে নববীতে গিয়ে নবীর রওজা মোবারক এ সালাম জানানো বাদ দিয়েও নিজের স্থান থেকেও সালাম জানানো যায়। বিষয়টা এমন না যে মসজিদের নববীতে গিয়ে সালাম জানাতে হবে। 

আবার অনেকের এ বিষয়টা জানা ছিল না যে কিভাবে নবীজির রওজা মোবারক এ জিয়ারত করতে হয় এবং সালাম জানাতে হয়। এইসব অজানা তথ্য ছিল অনেকের কাছেই যা আজ অনেক সহজেই আপনাদের কাছে তুলে ধরেছি। তো বন্ধুরা আপনারা যদি এরকম তথ্যমূলক পোস্ট পেতে চান। আমাদের এই ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন, এবং শেয়ারের মাধ্যমে অন্যকে দেখার সুযোগ করে দিন ,ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url