রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ে যেসব খাবারে বিস্তারিত জানুন

হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে বিষয়টির তাৎপর্যতা অপরিসীম। কেননা কোন খাবারে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বেশি সেগুলো জানলে আমাদের কখনো রক্তের ঘাটতি পরবে না। যদি কারো রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায় সে ক্ষেত্রে অন্য ব্যক্তির থেকে রক্ত নিয়ে রক্তের ঘাটতি পূরণ করতে হয়। আর অন্যজনের কাছ থেকে রক্ত নেওয়ার ব্যাপারটা একটু কষ্টকর। আমরা যদি হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে এবং খাবারগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারি তাহলে আমাদের আর ভোগান্তি পোহাতে হয় না। 
হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে
রক্তের ঘাটতি পূরণের জন্য অন্যজনের কাছ থেকে যখন রক্ত নেয়া হয় তখন সেই ব্যক্তির সাথে রক্তের গ্রুপ মিলতে হয়। তাছাড়া রক্তে এলার্জি আছে কিনা অন্যান্য বিষয় পরীক্ষা করার পর রক্ত নিতে হয়। সেক্ষেত্রে বিষয়গুলো সময় সাপেক্ষ এবং কষ্টদায়ক। তাই আসুন রক্ত এর ঘাটতি পরার আগেই আমরা সেটি পূরণ করার দিকে নজর রাখি। আর তাই আমরা আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানবো যে হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে পাশাপাশি আরো যে বিষয়গুলো জানবো সেগুলো হল রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার লক্ষণ, রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে করণীয়, কি কি খাবার খেলে রক্তে 

হিমোগ্লোবিন বাড়ে, রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি খাওয়া উচিত, হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন মাছে, কোন ফল খেলে রক্ত বাড়ে, গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে, হিমোগ্লোবিন কম থাকলে কি কি খাওয়া উচিত, হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিক কত, হিমোগ্লোবিন কত থাকা উচিত ও হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয় এবং রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির ঔষধ এসব বিষয় সম্পর্কে। সেজন্য প্রিয় পাঠক আপনি যদি হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে এ বিষয়টি জানতে চান তাহলে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পোস্ট সূচীপত্র

ভূমিকা

হিমোগ্লোবিন একটি অক্সিজেনবাহী লৌহ সমৃদ্ধ মেটালোপ্রোটিন যা কিনা মেরুদন্ডী প্রাণীদের লোহিত রক্ত কণিকা এবং কিছু অমেরুদন্ডী প্রাণীর কলাতে পাওয়া যায়। ডাক্তারদের মতে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ক্ষেত্রে লোহিত রক্ত কণিকার শুষ্ক ওজনের ৯৬-৯৭% ই হয়। হিমোগ্লোবিনের প্রোটিনের অংশবিশেষ পানি সহ সেটির মোট ওজনের ৩৫%। সাধারণত হিমোগ্লোবিন ফুসফুস থেকে অক্সিজেন দেহের বাকি অংশগুলোতে নিয়ে যায় এবং কোষীয় ব্যবহারের জন্য মুক্ত করে। তাছাড়া আমরা আমাদের শরীর থেকে যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস নির্গত করে থাকি সেটি পরিবহনে ও সাহায্য করে থাকে। পার গ্রাম হিমোগ্লোবিন ১.৩৬-১.৩৭ (ml) অক্সিজেন ধারণ করতে পারে। 

যা কিনা রক্তের অক্সিজেন পরিবহনের ক্ষমতা ৭০ গুণ বাড়িয়ে দেয়। মানুষের শরীরে একাধিক হিমোগ্লোবিন জিন রয়েছে। হিমোগ্লোবিন A প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে উপস্থিত প্রধান হিমোগ্লোবিন জিন। তাছাড়া HBA1, HBA2 এবং HBB দ্বারা হিমোগ্লোবিন জিন কোড করা হয়। মানুষের শরীরের জন্য রক্ত যেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ঠিক তেমনি রক্তের জন্য হিমোগ্লোবিনের উপস্থিতিতার গুরুত্ব অপরিহার্য। তাই আমাদের অবশ্যই জানা উচিত যে হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে কারণ আমরা সাধারণত খাবারের মাধ্যমেই পুষ্টি উপাদানগুলো পেয়ে থাকি। ঠিক তেমনি অনেক খাবার রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ে কিংবা ঘাটতি পূরণ হয়।

রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার লক্ষণ

আমরা ইতিমধ্যে অবগত হয়েছি যে রক্তে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা সঠিক থাকা কতটা জরুরী। আমরা যদি প্রথমেই বুঝতে পারি যে আমাদের শরীরের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাচ্ছে তাহলে সে অনুযায়ী আমরা চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারি। বা কোন খাবারগুলো গ্রহণের মাধ্যমে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ে সেই বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি। কিন্তু হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাচ্ছে এ বিষয়টি জানার জন্য আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার লক্ষণ গুলো সম্পর্কে অবগত হতে হবে। 
যেহেতু হিমোগ্লোবিন রক্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাছাড়া আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো আমরা দেখতে পাই না। তবে আমরা অনুভব করতে পারি অথবা শারীরিক কিছু লক্ষণ দেখে বুঝতে পারি আমাদের কি হতে চলেছে। তাই আসুন এবার রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার লক্ষণ গুলো সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
  • রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে সাধারণত শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়।
  • মুখমণ্ডল ফ্যাকাসে বর্ণ ধারণ করে।
  • যেকোনো কাজ করতে গেলে খুব তাড়াতাড়ি ক্লান্তি চলে আসে।
  • হঠাৎ করে মাথার দু'পাশে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হতে পারে।
  • যেহেতু হিমোগ্লোবিন রক্তে অক্সিজেন পরিবহন করে থাকে কিন্তু যখন হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায় তখন অক্সিজেন সঠিকভাবে পরিবাহিত হয় না যার কারণে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
  • অনেকক্ষণ বসে থেকে হঠাৎ করে উঠে পড়লে মাথা ঘোরা বা ঝিম ধরা শুরু হয়।
  • খাবারে অরুচি এবং বমি বমি ভাব হতে পারে।
  • কোন কারণ ছাড়াই দ্রুত হার্টবিট বেড়ে যায়।
উপরে বর্ণিত কারণগুলো যদি আমাদের শরীরে পরিলক্ষিত হয় তাহলে আমাদের বুঝতে হবে আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেছে। আর সেজন্য আমাদেরকে সঠিক পদক্ষেপটি গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে সেই খাবারগুলো সম্পর্কে ধারণা নিয়ে খাবার গুলো বেশি বেশি করে খেতে হবে।

রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে করণীয়

যদি আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের রক্তে হয়তো হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেছে তাহলে সর্বপ্রথম আমাদের যে করণীয় বিষয় সেটি হল খুব বেশি ঘাবড়ে না যাওয়া। টেনশন না করে সঠিক উপায় কিভাবে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ানো যায় সে বিষয়ে জানতে হবে। ভিটামিন সি এর অভাবে ও রক্তে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা কমে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার গুলো বেশি বেশি করে খেতে হবে। যেহেতু রক্তে আয়রনের উপস্থিতি কম থাকার কারণে হিমোগ্লোবিন কমে যায় তাই আয়রন সমৃদ্ধ খাবারগুলো বেশি বেশি গ্রহণ করতে হবে। 

হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে এই তালিকাতে আয়রন সমৃদ্ধ খাবারগুলো যোগ করতে হবে। আর আয়রন সমৃদ্ধ খাবার কোনগুলো সেগুলো সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব।

হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে

আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন যে হিমোগ্লোবিন জিনিসটি কি এবং এটি কোথায় থাকে আর এটি কমে গেলে মানবদেহে কি কি সমস্যা তৈরি হতে পারে। পাশাপাশি এটাও জানতে পেরেছেন যে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার লক্ষণ গুলো কি কি। যদি আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেছে তাহলে অবশ্যই হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে এবং কোন খাবারগুলোতে বেশি বেশি আয়রন রয়েছে সে খাবারগুলো গ্রহণ করা উচিত। আসুন কোন খাবারগুলো গ্রহণের মাধ্যমে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করা সম্ভব সে সম্পর্কে পর্যায়ক্রমে বিস্তারিত আলোচনা করি।

আয়রন সমৃদ্ধ খাবার

আমরা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি যে রক্তে আয়রনের যখন ঘাটতি হয় তখন হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়। কারণ আয়রন এবং হিমোগ্লোবিনের সাথে একটি ওতপ্রত সম্পর্ক রয়েছে। তাই আমাদের আয়রন সমৃদ্ধ খাবারগুলো সম্পর্কে ধারণা নেয়া উচিত। যদি আমরা খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আয়রনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারি তাহলে হিমোগ্লোবিনের মাত্ররাও বৃদ্ধি পাবে। কেননা আয়রন হিমোগ্লোবিন তৈরি করে থাকে। আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে হাঁস-মুরগির কলিজা, ঝিনুক, ডিম, আপেল, কচুর লতি, কচু শাক, ডুমুর, ডালিমড় বেদানা, তরমুজ, কুমড়ার বিচি, খেজুর, জলপাই, কিসমিস, সজেনা ডাটা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

ভিটামিন সি

আমরা ইতিপূর্বে জানতে পেরেছি যে ভিটামিন সি-এর অভাবে রক্তে হিমোগ্লোবিন মাত্রা কমে যায়। তাই আমাদেরকে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার গুলো গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া ভিটামিন সি এর অভাবে আয়রন সঠিকভাবে শোষণ হয় না। তাই রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে এই তালিকাতে ভিটামিন সি যুক্ত খাবারগুলো অবশ্যই রাখা উচিত। ভিটামিন সি যুক্ত খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে কমলালেবু, বাতাবি লেবু, আঙ্গুর, তেঁতুল, আমলকি, কামরাঙ্গা, জাম, লটকন, টমেটো, স্ট্রবেরি, ব্রকলি, গোলমরিচ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

সামুদ্রিক মাছ

সামুদ্রিক মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং পাশাপাশি রয়েছে অন্যান্য খনিজ উপাদান যা হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। যারা অ্যানিমিয়া, থ্যালাসেমিয়া অথবা রক্তশূন্যতায় ভুগছে তাদেরকে নিয়মিত সামগ্রিক চিংড়ি, কাকড়া, সামুদ্রিক কোরাল মাছ, লইট্টা মাছ সহ আরো যেগুলো সামুদ্রিক মাছ রয়েছে সেগুলো খেতে দিতে হবে। আর এগুলো খাওয়ার মাধ্যমে রক্তে আয়রন এর ঘাটতি পূরণ হবে এবং সে অনুযায়ী হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও আমাদের দেশীয় অনেক মাছ রয়েছে যেগুলো খাওয়ার মাধ্যমে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। যেমন কেসকি মাছ, চান্দা মাছ, টেংরা, পুটি, গুচি, ময়ামাছ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

মাংস

ডাক্তারদের মতে, মাংস থেকে পাওয়া প্রোটিন রক্তে দ্রুত হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। সাধারণত সব ধরনের লাল মাংস প্রোটিনের উৎস। তাই যদি আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেছে তাহলে অবশ্যই সপ্তাহে একদিন গরুর মাংস, খাসির মাংস অথবা গরুর কলিজা খেতে হবে। এছাড়া হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে এই তালিকাতে মুরগির মাংস রাখা উচিত। কারণ মুরগির মাংসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং আয়রন। তাছাড়া মুরগির মাংসে কোনো রকম চর্বি না থাকায় যে কোন মানুষ মুরগির মাংস খাবার হিসেবে গ্রহণের মাধ্যমে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে পারে।

শাকসবজি

শাক-সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা কিনা মানবদেহের হজমে সাহায্য করে। পাশাপাশি এমন কিছু শাকসবজি রয়েছে যেগুলোতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন পাওয়া যায়। আর আমাদের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করা এবং আয়রনের ঘাটতি পূরণ হলেই আমাদের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। আয়রন সমৃদ্ধ শাকসবজির মধ্যে কচু শাক অন্যতম। এমনকি কচুর লতিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। 
তাই আমরা যদি হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার লক্ষণ বুঝতে পারি তাহলে অবশ্যই বেশি বেশি কচু শাকের ভর্তা কিংবা কচুর লতি ছোট মাছ দিয়ে রান্না করে খেতে পারি। এতে করে কচুর লতি এবং ছোট মাছ উভয় থেকেই আমরা আয়রন এর ঘাটতি পূরণ করতে পারি।

কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার

রক্তশূন্যতায় ভুগলে অথবা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে আমাদের কে কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবারগুলো ও খেতে হয়। কেননা কার্বোহাইড্রেট হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই পরিমাণ মতো ভাত, গমের রুটি, বার্লি কিংবা ওটস খাওয়া যেতেই পারে এবং সেটির মাধ্যমে ও আমরা আয়রনের এবং কার্বোহাইড্রেটের ঘাটতি পূরণ করতে পারি।

ফল এবং ফলের রস

রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে এই তালিকাতে ফল অবশ্যই রাখতে হবে। সুস্থ এবং অসুস্থ ব্যক্তি উভয়ের জন্যই ফল খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম। ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যা হজমেও ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তাই আমাদের সকলের নিয়মিত সিজনাল ফলগুলো খাওয়া উচিত। যদি কেউ ফল খেতে না চায় তাহলে ফলের রস করে খেতে পারে। তবে ফল চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতাই বেশি। তাছাড়া ভিটামিন সি যুক্ত ফলগুলো খাওয়ার মাধ্যমে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। 

ভিটামিন সি আয়রন শোষিত করে থাকে এবং যার মাধ্যমে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। আমরা সিজনাল ফল হিসেবে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, বেদানা, আপেল, আঙ্গুর খেতে পারি। তবে বেদানাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন তাই হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধিতে বেশি বেশি বেদনা ফল খাওয়া উচিত।

বিটরুটের জুস

এখন ডাক্তাররা বলছেন যে, হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে এ তালিকা তে অবশ্যই বিটরুট কে রাখতে হবে। কারণ বিট রুট এমন একটি ফল যেটির মাধ্যমে আয়রনের ঘাটতি খুব দ্রুত পূরণ করা সম্ভব। ছোট শিশু থেকে পূর্ণবয়স্ক মানুষ সকলেই বিটরুট অথবা বিটরুটের জুস খেতে পারেন। এটি খাওয়ার মাধ্যমে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা বৃদ্ধি এর পাশাপাশি যদি কারো খাবারে অরুচি কিংবা অনিহা থাকে সেটিও ঠিক হয়ে যায়। তাই আমাদের অবশ্যই বিটরুটের জুস অথবা সরাসরি বিটরুট সালাদ হিসেবে খাওয়া উচিত। 

পাঠকগণ, আশা করি আপনারা এখন বুঝতে পেরেছেন যে কি কি খাবার খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ে। তাই যদি আমরা রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার লক্ষণ এবং আমাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি হয়েছে বুঝতে পারি তাহলে অবশ্যই উপরে বর্ণিত খাবারগুলো নিয়মিত খেতে হবে।

রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি খাওয়া উচিত

আমরা উপরে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি যে রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি খাওয়া উচিত। অবশ্যই আমাদেরকে আয়রন যুক্ত খাবারগুলো খাওয়া উচিত। কেননা আয়রনের মাধ্যমে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় পাশাপাশি ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেতে হবে। কারণ ভিটামিন সি শরীরে আয়রন শোষণ করতে সাহায্য করে। তাই রক্তের হিমোগ্লোবিন কমে গেলে সর্বপ্রথম ই ওষুধ সেবন না করে প্রাকৃতিক খাবারগুলো গ্রহণ করা উচিত। 

নিয়মিত শারীরিক চর্চা করতে হবে এবং উপরে বর্ণিত খাবারগুলো নিয়মিত খেতে হবে। বেশি বেশি বেদানা ফল এবং বিটরুট এর জুস খাওয়া খুব জরুরী। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন যে রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি খাওয়া উচিত।

হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন মাছে

আমরা হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে এই তালিকাতে কোন মাছগুলো খাওয়ার মাধ্যমে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব পাশাপাশি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে সে সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সাধারণত আয়রনের ঘাটতি পূরণের জন্য অবশ্যই সামুদ্রিক মাছ খেতে হবে। পাশাপাশি আমাদের দেশীয় ছোট ছোট যেগুলো মাছ রয়েছে সেগুলো খাওয়ার মাধ্যমেও আয়রনের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। আর আয়রনের ঘাটতি পূরণ হলেই আমাদের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে।

কোন ফল খেলে রক্ত বাড়ে

কোন ফল খেলে রক্ত বাড়ে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদেরকে বেশি বেশি ভিটামিন সি যুক্ত ফল খাওয়া দরকার। আমরা ভিটামিন সি এর উৎস কমলা, আঙ্গুর, কামরাঙ্গা, লেবু, জলপাই, আমলকি ইত্যাদি ফলগুলোতে পেয়ে থাকি। তবে বেদানাতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে আর আয়রন রক্ত বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি বিট রুট এর সালাদ কিংবা বিটরুট এর জুস খেতে হবে। সাধারণত এইসব ফল খেলে রক্ত বাড়ে।

গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে

সাধারণত গর্ভাবস্থায় মহিলাদের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কমে যায়। তাই আমাদের মনে বারবার প্রশ্ন আসতে পারে যে গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে বিষয়টি নিয়ে। তাছাড়া গর্ভে পালিত শিশুর জন্যেও গর্ভবতী মায়েদের সবসময়ই আয়রন যুক্ত খাবার গুলো খেতে হয়। যদিও এই সময়টাতে গর্ভবতী মায়েরা প্রথম অবস্থায় খুব বেশি খেতে পারেন না সব সময় বমি বমি ভাব হয়। ডাক্তারেরা সবসময় গর্ভবতী মায়েদের হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বেশি বেশি কচু শাক এবং কচুর লতি খেতে বলেন। 
তাছাড়া কমলালেবু, আঙ্গুর, জলপাই, আমলকি, বিটরুট, ব্রকলি ইত্যাদি খাওয়ার মাধ্যমে গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের রক্তে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা বাড়ানো সম্ভব। তবে অবশ্যই গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের যদি রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার লক্ষণ পরিলক্ষিত হয় এবং রক্তশূন্যতা দেখা দেয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রক্তের স্যালাইন কিংবা অন্য কারো কাছ থেকে রক্ত নিয়ে রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণ করতে হয়।

হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিক কত

হিমোগ্লোবিন সাধারণত লোহিত রক্ত কণিকায় অবস্থিত একপ্রকার প্রোটিন যার মধ্যে আয়রন এবং অক্সিজেন উপস্থিত থাকে। হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা হল পুরুষদের ক্ষেত্রে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা প্রতি ডেসিলিটারে ১৩.৫ থেকে ১৭.৫ গ্রাম। মহিলাদের ক্ষেত্রে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা প্রতি ডেসি লিটারে ১২ থেকে ১৫.৫ গ্রাম। এটি সাধারণত হিমোগ্লোবিন এর স্বাভাবিক মাত্রা। তবে এর একটু কম থাকলেও সমস্যা নেই। তবে কত কমে গেলে তাকে রক্তশূন্যতা বলা হয় এবং সে অনুযায়ী অন্য ব্যক্তির নিকট হতে রক্ত গ্রহণ করতে হয় তা নিচে দেওয়া হল।

হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়

যদি পুরুষদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ৯ নিচে চলে যায় তাহলে সেটিকে সাধারণভাবে রক্তশূন্যতা হিসেবে ধরা হয় এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীকে রক্ত দেওয়া হয়ে থাকে। আর মহিলাদের ক্ষেত্রে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা যদি ৮ এর নিচে নেমে যায় তাহলে অবশ্যই তাকে অন্য ব্যক্তির নিকট হতে রক্ত দিতে হয়। তবে রক্ত দিতে হবে কিনা এ বিষয়টি নির্ধারণ করবেন অভিজ্ঞ ডাক্তার। রক্ত পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে তারা বুঝতে পারবেন যে আসলেই তাকে রক্ত দেওয়া জরুরি কিনা তাই এই বিষয়টি সম্পর্কে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির ঔষধ

রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির ঔষধ দেওয়া যাবে কিনা সেটি সম্পর্কে একমাত্র ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন ঠিক হবে না। তবে আমাদের মতে, রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার লক্ষণ বোঝার পরে ওষুধ সেবনের পূর্বে সর্বপ্রথম প্রাকৃতিক খাবারগুলো খাওয়া উচিত। আমাদের উপরে বর্ণিত হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে এই তালিকা অনুযায়ী যদি কোন ব্যক্তি সঠিকভাবে খাবারগুলো গ্রহণ করেন তাহলে অবশ্যই তার ওষুধ সেবনের প্রয়োজন নেই। তবে বলে রাখা ভাল যে আপনার অবস্থা যদি বেশি খারাপ হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই আপনার একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

লেখকের শেষ কথা

প্রিয় পাঠক বৃন্দ আমাদের এই পোষ্টের শেষ পর্যায়ে এসে আমরা মোটামুটি আশা ব্যক্ত করতে পারি যে আপনারা এখন হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে এবং হিমোগ্লোবিন কিসের মাধ্যমে বৃদ্ধি করা সম্ভব সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আপনাদেরকে অশেষ অশেষ ধন্যবাদ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য। আমরা সবসময়ই সঠিক তথ্যগুলো আমাদের আর্টিকেলের মাধ্যমে পোস্ট করে থাকি এবং তথ্যগুলো আমরা বিভিন্ন চিকিৎসা বিষয়ক অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং উইকিপিডিয়া থেকে সংগ্রহ করে থাকি। 

তাই আপনার কোন সমস্যা হলে যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন। আর এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার যদি কোন মন্তব্য থেকে থাকে তাহলে আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি পেশ করুন। আর এরকম তথ্যবহুল পোস্ট পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। যেহেতু আর্টিকেলটি অনেকের উপকারে আসবে তাই বন্ধুদের সাথে বিষয়টি শেয়ার করতে পারেন। সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
1 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • Sad-Status-Bangla.com
    Sad-Status-Bangla.com ২ জুন, ২০২৪ এ ১১:৫৬ AM

    অনেক উপকারী একটা পোস্ট, ধন্যবাদ আপনাকে এই পোস্ট করার জন্য। নতুন বাংলা স্ট্যাটাস, ক্যাপশন, এসএমএস দেখতে ঘুরে আসুন এই সাইটে Sad-Status-Bangla.com

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url