ডলারের দাম যেভাবে নির্ধারিত হয় বিস্তারিত জানুন ২০২৪

ডলারের দাম কিভাবে নির্ধারিত হয় বিষয়টি অনেকটাই ভাবনার বিষয়। কেননা আমরা শুনে থাকি যে এই মুহূর্তে ডলারের দাম বেশি আবার একই মুহূর্তেই ডলারের দাম কমে যায়। তাহলে বিশ্ববাজার কিভাবে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আপনাদের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে। সেজন্য আজকের আর্টিকেলে আমরা ডলারের দাম কিভাবে নির্ধারিত হয় বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানবো। এবং পাশাপাশি আরো যেগুলো বিষয় সম্পর্কে জানতে পারব সেগুলো হলো ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য কত, 
ডলারের দাম কিভাবে নির্ধারিত হয়
ডলারের দাম বাড়ে এবং কমে কেন, বিভিন্ন দেশের মুদ্রার মান ভিন্ন হয় কেন এবং ভবিষ্যতে কি ডলারের দাম আরো বাড়বে, বিশ্ববাজার কিভাবে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ করে, কোন ডলারের দাম সবচেয়ে বেশি এ সকল বিষয় সম্পর্কে আমরা বিস্তারিতভাবে জানার চেষ্টা করব। সুতরাং আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে আজকের আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য।
পোস্ট সূচিপত্র

ভূমিকা

ডলার মূলত বিশ্বের ২০টির ও অধিক দেশের বিভিন্ন মুদ্রার নাম। ১৯৭২ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আজ পর্যন্ত একই নামে টিকে রয়েছে। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে লোকমুখে প্রচলিত হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ডলার (USD)। আরো যেগুলো ডলার রয়েছে সেগুলো হল সিঙ্গাপুরিয়ান, ডলার হংকং ডলার, কানাডিয়ান ডলার, জ্যামাই কান ডলার, লাইব্রেরিয়ান ডলার, নিউজিল্যান্ড ডলার, অস্ট্রেলিয়ান ডলার, ব্রুনাই ডলার উল্লেখযোগ্য। এই সকল মুদ্রার বেশিরভাগেরই সাংকেতিক প্রতীক হল $। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ডলার বর্তমানে বিশ্বে বেশি প্রচলিত। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও আরো কিছু দেশ যারা ডলারকে সরকারি মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। ডলারের দাম কিভাবে নির্ধারিত হয় বা পরবর্তীতে হবে সেটি অনেক গুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে থাকে। প্রথমত যে বিষয়টি সেটি হল ডলার আন্তর্জাতিক দেনা পাওনা মেটানোর একটি মাধ্যম। দ্বিতীয়ত এটি বহুল প্রচলিত একটি রিজার্ভ কারেন্সি। কিন্তু পরবর্তীতে ইউরো প্রচলনের ফলে মার্কিন ডলারের ভূমিকা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। ১৯৯৫ সালে বাজারে ৩৮০ বিলিয়ন বা ৩৮ হাজার কোটি টাকা ডলার চালু ছিল। 

যার দুই-তৃতীয়াংশই যুক্তরাষ্ট্র এর বাইরে চালু করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে এসে এর পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যায় অর্থাৎ ৭৬০ বিলিয়ন বা বাংলাদেশি টাকায় ৭৬ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছায়‌।

ডলার কিভাবে বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করে

আমাদের আজকের আর্টিকেলের মূল যে বিষয়টি সেটি হল ডলারের দাম কিভাবে নির্ধারিত হয় কিন্তু দাম নির্ধারণের বিষয়টি জানার পূর্বে আমাদের অবশ্যই জানা উচিত যে ডলার কিভাবে বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করে।‌ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং তার পরবর্তী সময় গুলোতে ডলার অন্যতম শক্তিশালী একটি মুদ্রা হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজার দখল করে রেখেছে। যদিও সেই সময় ইউরোপা ব্রিটিশ ফাউন্ডের তুলনায় ডলারের প্রভাব বৃদ্ধির হার অনেকটাই বেশি ছিল। বিভিন্ন গবেষক এবং চিন্তাবিদরা দাবি করে থাকেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে ইউরোপের অর্থনৈতিক অবস্থা বহু অংশে খারাপ হতে থাকে। 
আবার এশিয়ার অর্থনীতি ধীরে ধীরে দুর্বল হতে শুরু করে দেয়। ১৯৪৪ সালে এই সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেয় “বিশ্ব ব্যাংক”। তৎকালীন সময়ে নির্ধারণ করা হয় এক আউন্স স্বর্ণের দাম হবে ৩৫ ডলার আর ডলারের আধিপত্য বিস্তারের সূচনা এখানেই ডলারের দাম কিভাবে নির্ধারিত হয় বা হওয়া উচিত। সেটি তৎকালীন সময়েই বাজার পরিস্থিতির উপর নির্ভর করত ১৯৪৪ সালের বিষয়টি আমরা এখন যদি ২০২৪ সালে এসে পরিলক্ষন করি তাহলে বুঝতে পারব যে ডলার কিভাবে বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে। 

আরেকটি বিষয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বলেছেন যে ইউরোপে “মার্শাল প্ল্যান” নামক একটি বিখ্যাত পরিকল্পনা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। উক্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী ইউরোপিয়ান দেশগুলোকে “ডলার” সাহায্য হিসেবে দেওয়া হবে। ডলার বিশ্ববাজার দখলের ক্ষেত্রে এটি আরো একধাপ এগিয়ে যাওয়ার পরিক্রমা ছিল। আন্তর্জাতিক রিজার্ভ কারেন্সী এর জন্য ডলারের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে যা এখনকার সময়ে বিশ্ববাজার দখল এবং নিয়ন্ত্রণ করার মাস্টার প্ল্যান ছিল। তাহলে এ সকল ইতিহাস থেকে এটাই প্রমাণ হয় যে ডলার বিশ্ববাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য হঠাৎ করে আবির্ভাব হয়নি অনেক 

আগে থেকেই ডলার বিশ্ববাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সকল দেশের অর্থনৈতিক বিষয়াদির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। বর্তমান সময়ে আমরা যদি তেল বা জ্বালানি তেলের দামের তারতম্য দেখি তাহলে আমরা সহজেই ধরে নেই যে ডলারের দাম উঠানামা করছে। কারণ দ্রব্যমূল্যের সাথে ডলারের সংযোগপূর্ন সম্পর্ক রয়েছে। বিশ্বের মধ্যে তেলের আমদানি কারক হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবার উপরে। তাই মার্কিন ডলারের দাম কিভাবে নির্ধারিত হয় অথবা ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া, কমে যাওয়ার সঙ্গে তেলের দামের মূল্য বৃদ্ধি বা মূল্য হ্রাস একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িত রয়েছে। 

ডলার কিভাবে বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করে সেটি আরেকটি বিষয়ের উপর সম্ভব হয়ে থাকে সেটি হল পৃথিবীতে সবথেকে বেশি ছাপানো মুদ্রা গুলোর মধ্যে “ডলার” অন্যতম। যেকোনো মুদ্রা বা শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে অথবা কমে যাচ্ছে সেটি অনেকটাই নির্ভর করে। ডলারের উপর সুতরাং বলাই যায় ডলার কোন কিছুর বিনিময়ে একটি অন্যতম নির্ভর এবং সুযোগ্য সম্পদ। আন্তর্জাতিক সব রকম লেনদেন ডলারের মাধ্যমে হয়ে থাকে। ডলার কেনাবেচার বাজার তাই সবসময়ই সচল এবং সংঘটিত পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশের মানুষ ডলার কেনাবেচা করতে পারেন এবং তাদের মুনাফা আদায় করতে সক্ষম হন। 

যেহেতু আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ডলারের প্রতিপক্ষ অন্য কেউ নাই সেজন্য বিশ্ববাজারে ডলারের আধিপত্য ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

ডলারের দাম কিভাবে নির্ধারিত হয়

আমরা সর্বপ্রথম যে বিষয়টি জেনেছি সেটি হল ডলারের দাম দ্রব্যমূল্যের চাহিদা এবং যোগানের উপর নির্ভর করে এবং দ্রব্যমূল্যের সাথে ডলারের দামের একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। একটি দেশ থেকে অন্য আরেকটি দেশে মুদ্রা গিয়ে সেটির পরিমাণ কততে গিয়ে দাঁড়াবে সেটি অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে বিষয় সেটি হল “ব্যালান্স অফ পেমেন্ট তত্ত্ব” এই তথ্য অনুযায়ী কোন একটি দেশের মুদ্রার চাহিদা অথবা যোগানের উপর ভিত্তি করে সেই মুদ্রার মান নির্ধারিত করা হয়। 
উদাহরণস্বরূপ একটি দেশ অন্য আরেকটি দেশ থেকে জিনিসপত্র আমদানি করে তখন উক্ত জিনিসের মূল্য রপ্তানিকারক দেশের মুদ্রা তে পরিশোধ করতে হয়। এক্ষেত্রে ডলারের দাম উঠানামা করতে পারে। আবার ডলারের দাম কিভাবে নির্ধারিত হয় বা হবে সেটি নির্ভর করে। একটি দেশ যখন আরেকটি দেশের উপর খুব বেশি আমদানি নির্ভর হয়ে পড়ে অর্থাৎ পর্যাপ্ত মজুদ না থাকা বা উৎপাদনশীল না হওয়ায় কারণে অন্য আরেকটি দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে ডলার বা অর্থের মূল্যে আমদানি করতে হয় সে ক্ষেত্রে ডলারের দাম বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। 

যেমন বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২০০০ ডলার মূল্যের কোন দ্রব্য ক্রয় করল বা আমদানি করল কিন্তু এখন মূল্য পরিশোধ করার সময় অবশ্যই বাংলাদেশকে উক্ত মূল্যটি ডলারে পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু এখানে বিষয়টি হল যে মূল্য পরিশোধ করার জন্য বাংলাদেশ ডলার কোথায় থেকে পাবে কারণ বাংলাদেশে ডলার ছাপানো হয় না সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সর্বপ্রথম আমেরিকা বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোন এজেন্সির মাধ্যম হতে ডলার কিনতে হবে। তারপরে উক্ত দ্রব্য আমদানির জন্য ২০০০ ডলার দিতে হবে। 

এখন আমেরিকা যদি দাবি করে যে ২০০০ মার্কিন ডলার এর সমপরিমাণ টাকা হবে দুই লক্ষ টাকা অতএব বাংলাদেশকে ২ লক্ষ টাকা এর বিনিময়ে 2000 মার্কিন ডলার কিনতে হচ্ছে। তারপর সে দ্রব্যমূল্য আমদানি করতে পারছে এর প্রেক্ষিতে হিসাব অনুযায়ী ১ টাকা এর সমপরিমাণ ডলার এর মূল্য দাঁড়াচ্ছে ১০০ টাকা। আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে পরবর্তীতে আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ডলারের দাম কিভাবে নির্ধারিত হয়। যখন তাদের রপ্তানিকৃত দ্রব্যগুলো এর যোগান বা উৎপাদন কমতে থাকবে যদি 

যোগান কমে যায় সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যদি উক্ত দ্রব্যগুলো আবার আমদানি করতে চায় তাহলে বেশি টাকা দিয়ে ডলার কিনতে হবে। তারপর আমদানি কার্যক্রম সম্পাদন করতে পারবে। যেহেতু ডলার কিনতে বেশি টাকা লেগেছে সেক্ষেত্রে এখন টাকার পরিবর্তে ডলারের দামও বৃদ্ধি পাবে। ঠিক এভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গোটা বিশ্বে ডলারের মাধ্যমে লেনদেন কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং সে অনুযায়ী ডলারের দাম নির্ধারিত হয়।

ডলারের দাম বাড়ে কমে কেন

আমরা আজকে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি জেনেছি এবং উপরে বর্ণনা করেছি সেটি হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ডলার নিয়ন্ত্রণ করে এবং ডলার গোটা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পাশাপাশি ডলারের সঙ্গে দ্রব্য সামগ্রী যোগান এবং উৎপাদনের একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। যোগান যদি বেশি হয় তাহলে ডলারের দাম কমে যায় কিন্তু যোগান অর্থাৎ উৎপাদন যদি কম হয় সে ক্ষেত্রে ডলারের মান বৃদ্ধি পায়। কারণ একটি দেশ রপ্তানি করার সময় যদি তার উৎপাদন কম থাকে তাহলে বেশি টাকা দিয়ে সেটি সে বিক্রি করবে 
এটাই স্বাভাবিক। আবার যোগান এবং উৎপাদন যদি বেশি থাকে পাশাপাশি চাহিদাও থাকে তাহলে ওই দেশ উৎপাদনকৃত দব্যসামগ্রী দ্রুত আমদানি করে শেষ করতে চাইবে আর সেজন্য অবশ্যই ডলারের দাম কম থাকবে। তাই যে কোন দেশ যদি কোন কিছু আমদানি করতে চায় তাহলে তাকে আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্য ডলারের মাধ্যমে লেনদেন সম্পূর্ণ করতে হবে। আর এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ডলারের দাম যেটা নির্ধারণ করে দিবে সেই নির্দিষ্ট মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে ডলার ক্রয় করতে হবে এবং আমদানি কার্য সম্পাদন করতে হবে। 

আবার আরো একটি বিষয়ের প্রেক্ষিতে ডলারের দাম কিভাবে নির্ধারিত হয় সেটি পরিলক্ষন করা সম্ভব ডলারের বিপরীতে টাকার পরিমাণ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে কিন্তু মানের দিক দিয়ে কমে যাচ্ছে আর এটাকে মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়ে থাকে।

ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য

ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের অগ্রাধিকার কমানোর পর থেকে টাকার মান ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে এবং সঙ্গে বাড়ছে ডলারের দাম। যদিও এই ঘটনার জন্য রপ্তানিকারক এবং প্রবাসীরা সাময়িকভাবে লাভবান হচ্ছে কিন্তু বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন আমদানি কারকরা। আবার আমরা যারা সাধারন ভোক্তা রয়েছি তারাও পড়েছি বিপদের মুখে। কেননা দিন দিন দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু সে অনুযায়ী টাকার মান কমে যাচ্ছে। টাকার মান কমে যাওয়ার কারণে ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতা আগের মত থাকছে না। পন্যের দাম বৃদ্ধির জন্য অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে চরম অস্থিরতা। 

আর মধ্যবিত্ত লোকজনদের উপর প্রভাব ফেলছে মারাত্মকভাবে। ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য নির্ধারণ করা হয় টাকার ক্রয় ক্ষমতা দিয়ে। তবে দ্রব্যের দামের সাথে টাকার মানের কোনরকম সম্পর্ক নেই। যদি কোন দেশের দ্রব্যের দাম কমে তাহলে বুঝে নিতে হবে টাকার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার ঠিক একইভাবে দ্রব্যের যদি দাম বৃদ্ধি পায় তাহলে টাকার মান কমে যায়। বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক মূল্য নির্ধারণ হয়ে থাকে তার যোগান এবং চাহিদার উপর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেমন ডলারের দাম কিভাবে নির্ধারিত হয় বা ভবিষ্যতে হবে সেটি নির্ধারণ করে থাকে। 

ঠিক তেমনি একটি দেশ তার রিজার্ভ কত হবে বা কত থাকবে সেটি নির্ধারণ করে থাকে এবং সে অনুযায়ী যদি আমদানি কার্য সম্পাদন করে থাকে তাহলে ডলারের মান স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করে।

বিনিময় হার কিভাবে নির্ধারিত হয়

বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন কারণবশত ডলারের লেনদেন হয়ে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। মার্কিন ডলার অন্যান্য সকল মুদ্রার থেকে বেশি প্রচলিত এবং বিশ্ববাজারে আধিপত্য বিস্তার করে রয়েছে। বিশ্বব্যাপী লেনদেনের ৮৭% মার্কিন ডলারের মাধ্যমে সম্পূর্ণ হয়। বিশ্ববাজারের হারের পরিবর্তন মিনিটে ঘন্টায় পরিবর্তিত হয়। বিশ্বব্যাপী আর্থিক বাজারগুলো সেট করা রয়েছে যেখানে বিনিয়োগ ব্যাংক, হেজ ফান্ড এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান লেনদেন করে থাকে। কারেন্সি এক্সচেঞ্জ রেট হল সেই হার যে হার অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট রেখার মুদ্রা যা কিনা অন্য মুদ্রার জন্য লেনদেন কার্য সম্পাদন করে। 

আর সাধারণত এই বিষয়টিকে বাজারের বিনিময় হার হিসেবে উল্লেখ করা হয়। প্রকৃতপক্ষে অন্যের বিপরীতে একটি সুনির্দিষ্ট অধিক ক্ষেত্রের তাগিদে সাধারণ চলমান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পাশাপাশি বাজারের সুদের হারের পরিবর্তন এবং কর্মসংস্থানের হারের মতো বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভরশীল হয়। অনেকের মতে, ডলারের দাম কিভাবে নির্ধারিত হয় সেটিও বিনিময় হার এর উপর নির্ভরশীল। ১৯৩০ সালে “গোল্ড এক্সচেঞ্জ স্ট্যান্ডার্ড” নামে একটি সিস্টেম খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। যা আন্তর্জাতিক বিনিময় হারগুলো স্বর্ণের মূল্য দ্বারা স্থির এবং নির্দিষ্ট করে রেখেছিল। 

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMG) মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত কাজ করেছিল। আবার বিনিময় হারকে একটি দেশের মুদ্রার বিপরীতে অন্য আরেকটি দেশের মুদ্রার মান হিসেবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। যেমন আন্ত ব্যাংক লেনদেনের সময় ১ মার্কিন ডলার সমান বর্তমানে বাংলাদেশী ১২০ টাকা অর্থাৎ ১২০ টাকার বিপরীতে ১ ডলার বিনিময় করা সম্ভব। আবার ১ ডলারের বিপরীতে ১২০ টাকা বিনিময় করা সম্ভব। প্রত্যেকটি দেশ তাদের নিজস্ব মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণ করে দেয়। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার দেশের ডলারের বিনিময় হার ঠিক করার মাধ্যমে অন্য আরেকটি 

দেশ কত টাকার বিনিময়ে ডলার কিনতে পারবে সেটি নির্ধারণ করে থাকে। আবার অন্যদিকে বিনিময় হার সম্পূর্ণ একটি স্বাধীন এবং উন্মুক্ত পরিক্রমা বাজার উৎপাদন এবং যোগানের উপর ভিত্তি করে। যেমন ডলারের দাম কিভাবে নির্ধারিত হয় সেটি আমরা জেনেছি ঠিক তেমনি যোগান এবং উৎপাদনের উপর অনেকটাই বিনিময় হারও নির্ভরশীল। একটি দেশের বিনিময় হার কিভাবে নির্ধারিত হয় বা হওয়া উচিত সেটি নির্ভর করে তিনটি বিষয়ের উপর। সেগুলো হল মুক্ত চলমান হার, স্থির হার এবং সংকর হার। মুক্ত চলমান হার আর্থিক বাজারে মুদ্রা চাহিদা ও যোগানের উপর ভিত্তি করে বিনিময় হার নির্ধারণ 

করে থাকে। সাধারণত এ ধরনের মুদ্রা বিনিময় হার ক্রমাগত পরিবর্তিত হতে থাকে। আবার স্থির হার মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থায় সাধারণত অপরিচিত অবস্থায় থাকে। তবে নির্দিষ্ট সময় পর এর প্রয়োজন অনুসারে বৃদ্ধি পেতে পারে। শংকর হার কে স্থির হার এবং মুক্ত চলমান হারের সংমিশন কে বোঝায়। এ ব্যবস্থায় মুদ্রা বিনিময় হার নির্ধারণের জন্য কিছু ক্ষেত্রে মুক্ত চলমান ব্যবস্থা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালিত হয় এবং কিছু অংশ স্থির হার ব্যবস্থা অনুযায়ী হয়ে থাকে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশের সরকার সাময়িক বা অসাময়িক সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে শংকর ব্যবস্থায় মুদ্রা বিনিময় হার নির্ধারণ করে থাকে। 

যদিও আলোচ্য বিষয় ডলারের দাম কিভাবে নির্ধারিত হয় এর থেকে বিনিময় হার কিভাবে নির্ধারিত হয় বিষয়টি একটু পেঁচানো এবং জটিল। যদি আপনারা বিষয়টি আরো একবার মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে আশা করি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন।

বিভিন্ন দেশের মুদ্রার মান ভিন্ন হয় কেন

আমরা আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জানতে পারলাম। আপনাদের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে যে বিভিন্ন দেশের মুদ্রার মান ভিন্ন হয় কেন। যদিও আমরা উপরে উল্লেখ করেছি যে একটি দেশের বিনিময় হার ওই দেশের সরকার নির্ধারণ করে থাকে এবং পাশাপাশি যোগান এবং উৎপাদনের উপর নির্ভর করে বিনিময় হার তৈরি হয়। সেই অনুযায়ী বিভিন্ন দেশের মুদ্রার মান ভিন্ন হয়ে থাকে। একটি দেশের মুদ্রার মূল্য হল তার দেশের অর্থনৈতিক শক্তির প্রতিচ্ছবি যা বিশ্বব্যাপী আর্থিকভাবে তার অবস্থানকে সুগঠিত এবং দৃঢ় করে তোলে। 

বিনিময় হার এবং নির্ধারিত বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে সরবরাহ এবং চাহিদার শক্তি দ্বারা নির্ধারিত হওয়ার মাধ্যমে মুদ্রার মান ত্বরান্বিত হতে থাকে। সেক্ষেত্রে মুদ্রা একে অপরের বিরুদ্ধে লেনদেন কার্যক্রম পরিচালনা করে।

ডলারের দাম কি আরো বাড়বে

ডলারের দাম কিভাবে নির্ধারিত হয় এটি জানার পাশাপাশি আমাদের আরও একটি বিষয় খুব বেশি জানার আগ্রহ হয়ে থাকে। সেটি হল ডলারের দাম কি আরো বাড়বে। আমরা যদি লক্ষ্য করি পূর্বে ডলারের দাম কত ছিল এখন বর্তমানে ডলারের দাম কত সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে জনসংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী যোগান বা উৎপাদন সেই হারে বৃদ্ধি পায়নি। তাই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে মুদ্রাস্ফীতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। আর দিন দিন ডলারের দাম বেড়েই চলেছে। খোলা বাজারে ডলারের দাম আরো বাড়তে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ জানান ডলারের 
দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অর্থনীতিবিদ এবং আমদানি কারকরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষে তুলে নেওয়ার পর থেকে ডলারের দাম দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাদের দাবি ব্যবসার খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করতে হবে। না হলে তারা লসের খাতায় পড়ে যাবে। তাহলে তারা যদি মূল্য বৃদ্ধি করে তাহলে ডলারের মান অটোমেটিক বেড়ে চলতেই থাকবে। আমরা পূর্বের হিসাব এখন যদি মিল করতে চাই তাহলে সঠিক উত্তরটি পেয়ে যাব। আবার আপনারা অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে কোন ডলারের দাম সবচেয়ে বেশি বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে দামি মুদ্রা হলো কুয়েতের দিনার। 

প্রতি কুয়েতি দিনারের জন্য বর্তমানে বাংলাদেশি টাকায় দিতে হয় ৩৮৩ টাকা। যা অন্য কোন মুদ্রার বিনিময়ে এত টাকা দিতে হয় না। তাই বলাই যায় কুয়েতি দিনার সবচেয়ে বেশি দামি। তবে যদি ডলারের কথা আসে তাহলে সবচেয়ে বেশি দামি ডলারের তালিকায় রয়েছে মার্কিন ডলার বা (USD) সিঙ্গাপুরিয়ান ডলার বা জামাইকান ডলার থেকে সবচেয়ে বেশি দামি হলো মার্কিন ডলার।

লেখকের শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক বৃন্দ আজকে আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। ডলার সম্পর্কে আমাদের কম বেশি সকলের ধারণা থাকলেও এর বিস্তারিত বিষয়াদি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা প্রকাশ করেছি। আশা করি আপনারা ডলারের দাম কিভাবে নির্ধারিত হয় এবং ডলার কিভাবে বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করে এ সম্পর্কে আপনারা সুস্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন। আমরা উপরে বর্ণিত তথ্যগুলো উইকিপিডিয়া এবং বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জ ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করেছি। আপনাদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য। 

ডলার সম্পর্কিত আপনাদের যদি কোন মন্তব্য থেকে থাকে তাহলে আমাদের মন্তব্য বক্সে আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি পেশ করুন। আরো গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন পাশাপাশি এই পোস্টটি যদি আপনার কাছে যথাযথ মনে হয় তাহলে একটি শেয়ার করতে পারেন আপনার একটি শেয়ার আমাদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url