দলিল যার জমি তার আইন ২০২৪-নতুন ভূমি আইন

দলিল যার জমি তার আইন বিষয়টি সকলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা বর্তমান সময়ে জমি জমা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সবসময় ঝামেলা লেগেই থাকে। সেই প্রেক্ষিতে সরকার একটি নতুন আইন জারি করেছেন যার স্লোগান হচ্ছে “দলিল যার জমি তার”। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে যে মালিকপক্ষের কোন দলিল নেই কিন্তু জোর জবরদস্তি অথবা দখলপূর্বক তিনি জমি ভোগ করে আসতেন। কিন্তু ডিজিটাল যুগে এসে বর্তমান সরকার সেটি আমলে নিয়েছে এবং দলিল যার জমি তার আইন অনুযায়ী প্রকৃতপক্ষে মূল মালিক কে 
দলিল-যার-জমি-তার-আইন
জমি ফিরিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। তাই পাঠকগণ আপনাদের বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা আমাদের আর্টিকেলে আজকে ভূমি আইন সংক্রান্ত সকল বিষয়, বাংলাদেশের নতুন ভূমি আইন কি, নতুন ভূমি আইন, দলিল যার জমি তার গ্যাজেট এবং আসলেই কি দলিল যার জমি তার আইন পাস হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে বিস্তারিত এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানার চেষ্টা করব। আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য।
পোস্ট সূচিপত্র

ভূমিকা

“দলিল” সাধারণ অর্থে কোন চুক্তির জন্য লিখিত ও আইন সম্পৃক্ত বিষয় বোঝায়। যদি সরাসরি বলতে হয় সেটি হল জমি জমা ক্রয় বিক্রয় বন্টন অথবা এক পক্ষ আরেক পক্ষের আছে হস্তান্তরের জন্য “দলিল” বিষয়টি অতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাকে। ২০২৩ সালে দলিল যার জমি তার আইন সরকার কর্তৃক প্রণয়ন হয়েছিল। সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে এ বিষয়ে একটি সুদৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করার। কিন্তু উক্ত আইন কি আসলে পাস হয়েছে বা আইনের বিস্তারিত বিষয়বস্তুটা কি তা আমাদের জানা উচিত। আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা এ বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করব। 

দলিলে বিশেষত পাঁচটি বিষয়ে উল্লেখ থাকে সম্পত্তির বর্ণনা, দাতার পরিচয়, গ্রহীতার পরিচয়, সাক্ষীদের পরিচয় এবং দলিল সম্পাদনের তারিখ। দলিল সম্পাদনের জন্য সরকারকে রাজস্ব ট্যাক্স দিতে হয় এবং দলিল সম্পাদনের পর সরকার মনোনীত কর্মকর্তা সেটি নিবন্ধন করে থাকেন। এবং কোন সম্পদ ক্রয় বিক্রয় অথবা বন্টন করে থাকলে সে বিষয়টি পরিপূর্ণ হয়ে থাকে। শুধুমাত্র সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় বা হস্তান্তরের জন্যই দলিল ব্যবহৃত হয় না যে কোন কিছু চুক্তিনামা আদেশনামা কাবিননামা সকল ক্ষেত্রে দলিলের প্রয়োজন পড়ে।

দলিল যার জমি তার প্রজ্ঞাপন

ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিল এর একটি প্রজ্ঞাপন ব্যাপক ভাবে ভাইরাল হয়েছিল যেটি হল “দলিল যার জমি তার আইন”। আসলে প্রতিটি মানুষ ন্যায় বিচারের পক্ষে পূর্বে এমন হয়েছে যে ১২ বছর সে জমির ভোগ দখল করেছে এবং পরবর্তীতে সে সেটির মালিক বনে গেছে। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার সেটি পরিবর্তনের মাধ্যমে বলেছেন যে দখলে থাকলেই শুধু জমির মালিক হবে না। উপযুক্ত কাগজপত্র অর্থাৎ দলিল সহ দস্তাবেজ দাখিল করার মাধ্যমে সে প্রকৃত জমির মালিক কিনা প্রমাণ হবে বৈধ দলিল বা আদালতের নির্দেশে মালিকানা বা দখলের অধিকার। 

যদি বাধা প্রাপ্ত হয় তাহলে ভুক্তভোগী ব্যক্তি যে কোন ভাবে আইনের আশ্রয় নিয়ে যদি তিনি নিজে বৈধ দলিল এবং কাগজপত্র সহ প্রমাণ করতে পারেন তাহলে উক্ত জমির মালিক অর্থাৎ তারপর থেকে ওই জমির ভোগ দখল তিনি করতে পারবেন। কিন্তু কোন পক্ষের এক পক্ষ যদি মিথ্যা দলিল বা মিথ্যা দস্তাবেজ পেশ করে তাহলে সেই প্রেক্ষিতে তার অথবা তাদের সাত বছরের কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। অনেকেই মনে করে থাকেন যে দলিল যার জমি তার আইন এখনো পাস হয়নি বা চলমান রয়েছে। 
কিন্তু ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বিলটি পাস করার জন্য সংসদে উপস্থাপন করেছিলেন এবং তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। পাশকৃত বিলে আরো বলা হয়েছে যে দলিল সম্পাদিত হওয়ার পর কেউ যদি প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে দলিলের কোন অংশ কেটে বা পরিবর্তনের মাধ্যমে কোনরকম ছলচাতুরি করার চেষ্টা করে এবং সেটি যদি প্রমাণ হয় তাহলে তার সাত বছরের কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। পূর্বে দেখা গিয়েছে অনেক জালসই দিয়ে জমি নিজের নামে হস্তান্তর করে নিয়েছে এবং অপরপক্ষকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। 

এ বিষয়টি বাংলাদেশ সরকার মাথায় রেখে দলিল যার জমি তার আইন জারি করেছেন এবং সংসদে পাস করেছেন। উক্ত আইনের উদ্দেশ্যটি আমাদের অভিমন্তী, ব্যাখ্যা করার সময় বলেছেন যে ভূমির সত্য সংরক্ষণ ও শান্তিপূর্ণ ভোগ দখল বজায় রাখার উদ্দেশ্যে এবং পাশাপাশি ভূমি সংক্রান্ত সকল অপরাধ ও দ্রুত প্রতিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে উক্ত আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। আবার ১৯৮৪ সালে ল্যান্ড রিফর্মস অর্ডিন্যান্স রোহিত করে ” ভূমি সংস্কার বিল” নামে একটি বিধান সংসদে পাশ হয়েছিল। 

তৎকালীন সময়ে ভূমি মন্ত্রী বিল্টির পাশের জন্য সংসদে উপস্থাপন করেন এবং সেটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। উক্ত বিলে উল্লেখ ছিল যে ৬০ বিঘার বেশি কৃষি ভূমির মালিক হিসেবে নিজে বা তার পরিবার হস্তান্তর, উত্তরাধিকার, দান বা অন্য কোন উপায়ে নতুন কোনো কৃষি জমি অর্জন করতে পারবেনা।

দলিল যার জমি তার আইন

নতুন ভূমি আইন ২০২৩ দলিল যার জমি তার এ বিষয়টি আমাদের সকলের মাঝে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং আমরা সবাই সহমত জানিয়েছিলাম যে উক্ত আইন সকলের জন্য স্বস্থির বার্তা ছড়াবে। দলিল যার জমি তার আইন এ বলা হয়েছে কোন জমি রেজিস্ট্রি অফিসে হালনাগাদ কৃত হওয়ার পর সর্বশেষ খতিয়ান মালিক বাতার উত্তরাধিকার অনুযায়ী হস্তান্তর বা দখলের উদ্দেশ্যে আইনগতভাবে সম্পাদিত দলিল বা আদালতে আদেশের মাধ্যমে কোন মালিকানা বা দখলের অধিকারপ্রাপ্ত না হলে উক্ত ব্যক্তি ওই ভূমি কোনভাবেই দখল রাখতে পারবেন না। 

যদি তিনি অবৈধ দখল করে রাখেন তাহলে তার সাজা হবে দুই বছরের কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবে। বিলে আরো বলা হয়েছে কোন ব্যক্তির নামে যদি সর্বশেষ খতিয়ান না থাকে এবং খতিয়ান ও হালনাগাদ কৃত ভূমি উন্নয়ন কর পরিষদের প্রমাণ লিপি দেখাতে ব্যর্থ হয়। পাশাপাশি The State Acquisition And Tenancy Act, ১৯৫০ ( Section ১৪৩, ১৪৪) এর অধীনে হালনাগাদ কৃত খতিয়ান ও ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ এর প্রমাণ লিপি দেখাতে না পারে তাহলে উক্ত জমির বিক্রি ধান অথবা হেবা বা যে কোনোভাবে হস্তান্তর করার জন্য দলিল যার জমি তার আইন অনুযায়ী কোনভাবেই নিবন্ধন করতে পারবে না। 

আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে আরেকটি বহুল সমস্যা দেখা দেয় এবং সেটি নিয়ে বিরোধ পর্যন্ত গড়ায়। মামলা-মোকদ্দমায় গিয়ে সকলে সর্বশান্ত হয়ে পড়ে। বিষয়টি হল একে অন্যের জমির আইল কেটে ছোট করে ফেলে ২০২৩ এ প্রণীত এই বিলে এ বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। যে কোন ব্যক্তি যদি জেলা প্রশাসকের অনুমতি না নিয়ে আবার যোগ্য জমির উপরের স্তর অথবা আইল কেটে ছোট করে ফেলে তাহলে তার সাজা হবে দুই বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।

দলিল যার জমি তার বিল সংসদে পাশ

উপরে বর্ণিত বিষয়গুলোর মাধ্যমে এটা পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে যে যদি কারো নামে রেকর্ড না থাকে তাহলে কখনোই সে ভূমি অথবা জমি দখল করতে পারবে না। অর্থাৎ খতিয়ানের মালিক ও জমির মালিক হিসেবে গণ্য তাহলে কথাটা এরকম হয়ে যায় যে খতিয়ান যার জমি তার। তবে খতিয়ানে ভুল ভ্রান্তি হওয়ার কারণে অনেক সময় প্রকৃত মালিকও খতিয়ান সংশোধনীর পূর্বে ভোগান্তির মধ্যে পড়ে যায়। আমার উত্তরাধিকার সূত্রে বা হস্তান্তরের মাধ্যমে মালিক প্রাপ্ত জমির দখলদার রেকর্ড সংশোধন ঘোষণার দাবিতে মামলা করলে অপরাধ বলে গণ্য হবে না। 
দলিল যার জমি তার আইন এর ৮(৭) ধারাতে বলা হয়েছে যে, পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত কোনো মামলা দেওয়া নয় আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় থাকলে এ বিষয়ে উক্ত ধারার অধীনে কোন রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না। যেহেতু জমিজমা বিষয়ে পূর্বে অনেক রকম জালিয়াতি প্রতারণা সৃষ্টি হয়েছিল সেই বিষয়টি বাংলাদেশ সরকার আমলে নিয়ে অনেকগুলো ধারায় অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে দলিল যার জমি তার বিষয়টিকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়েছেন। এবং সেটি সংসদে পাস করার জন্য দাখিল করেছিলেন। আর সেই লক্ষ্যে ২০২৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সংসদে দলিল যার জমি তার আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। 

ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বিলটি পাশের জন্য প্রস্তাব করেন এবং সেটি কণ্ঠভোটে পাস হয়ে যায়। যদিও এর আগের বিলের উপর জনমত যাচাই-বাছাই করার পর কমিটিতে প্রেরণ করা হয় ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করা হয়। অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে যে দলিল যার জমি তার এই আইনটি আসলেই কি পাশ হয়েছে কিনা। তাহলে আশা করি আপনারা নিশ্চিত হতে পেরেছেন যে বাংলাদেশ সংসদ নতুন ভূমি আইন ২০২৩ দলিল যার জমি তার আইনটি পাস করেছে।

ভূমি আইন ও বিধিমালা

ভূমি আইন সাধারণত জমি থেকে অন্যদের ব্যবহার বিচ্ছিন্ন বা বাদ দেওয়ার অধিকার নিয়ে কাজ করে থাকে। অন্যের বিচার ব্যবস্থায় এ ধরনের সম্পত্তিকে বাস্তব সম্পত্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। যা ব্যক্তিগত শ্যামপুর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ভূমি ব্যবহার চুক্তি ভাড়া সহ সম্পত্তি এবং চুক্তি আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ হওয়ায় এদেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ লোকের জীবনধারণের উৎস হল কৃষি কাজ করা। তাই এদেশের জমি ও পানি সম্পদ পালন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। 

দেশের উন্নতির লক্ষ্যে আর আমাদের গ্রামাঞ্চলে এই কৃষি জমি নিয়ে চলে ব্যাপক বিরোধ এবং সেই বিরোধ হত্যাকাণ্ডে পর্যন্ত গড়িয়ে থাকে। আর এইসব অপরাধ ঠেকানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিল পাস করে থাকে। যার অর্থ হল শুধু দখল থাকলে মালিক নয় তার উপযুক্ত প্রমাণ দেখানোর পর সেই প্রকৃত মালিক বলে গণ্য হবে। সমাজের বিশিষ্ট জনসেবীরা মনে করে থাকেন যে ভূমির সংরক্ষণ ও শান্তিপূর্ণ ভোগ দখল বজায় রাখার উদ্দেশ্যে ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ 

প্রতিরোধ এবং দ্রুত প্রতিকার নিশ্চিতকরণের জন্য ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও দ্রুত প্রতিকার আইন ২০২৩ একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তবে আইনটি খুব দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য অনেকেই আইনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বুঝতে অক্ষম হয়েছেন। আশা করি আমাদের উপরে বর্ণনাকৃত তথ্যগুলো আপনাকে এই আইন সম্পর্কে বোঝাতে সক্ষম হবে। আসুন তাহলে এবার ভূমি আইন ২০২৩ দখল সংক্রান্ত বিষয়টি আলোচনা করি।

ভূমি আইন ২০২৩ দখল সংক্রান্ত বিষয়

ভূমি আইন ২০২৩ অর্থাৎ দলিল যার জমি তার আইন অনুযায়ী সাধারণ মানুষ আসলে কতটা সুবিধা পাবে সেটা সঠিক করে বলা সম্ভব নয়। কারণ প্রতারক চক্র সব সময় তাদের প্রতারণার জন্য বিভিন্ন রকম ফাক ফোকর খুঁজতে থাকে। সেই প্রেক্ষিতে যদি বলা যায় সংজ্ঞা অনুযায়ী মালিকানা জটিলতা একটু থেকেই যাচ্ছে কারণ আইন অনুযায়ী বলা হয়েছে খতিয়ানের মালিক দলিলের মালিকের থেকে বেশি প্রাধান্য পাবে। সে ক্ষেত্রে একটু জটিলতা থেকে যাচ্ছে। যেহেতু আইনের ৭ নং ধারাটি একটু বেশি জটিল হয়ে থাকে। ওই ধারায় বলা হচ্ছে যে যদি কারো নামে রেকর্ড না থাকে তাহলে সে ভূমির দখল রাখতে পারবে না। 

তাহলে বিষয়টি এরকম হলো যে খতিয়ান ও দলিল হিসেবে গণ্য করার কারণে খতিয়ান যার, জমির মালিক অর্থাৎ জমি ও তার। তবে বাংলাদেশের নাগরিকগণ নিজ নিজ মালিকাদিন জমিতে নিরবিচ্ছিন্ন ভোগ দখলসহ প্রাপ্য অধিকার সমূহ নিশ্চিতকরণ, ভূমি প্রতারণা ও জালিয়াতির ক্ষেত্র সমূহ চিহ্নিতকরণ এর প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। পাশাপাশি সরকার জনসাধারণের জন্য বর্তমানে বিভিন্ন আইন পাস করছ এবং ভবিষ্যতেও করবে। তাই আমরা বাংলাদেশ সরকারের বিষয়ে সবসময় এটা আশা ব্যক্ত করতে পারি যে সরকার আমাদের জন্য অর্থাৎ আমাদের মর্মে ভালো সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করবেন।

দলিল যার জমি তার গেজেট ২০২৩

আমরা ইতিমধ্যে দলিল যার জমি তার আইন সম্পর্কে অবগত হয়েছি। আমরা এটাও জেনেছি যে বহুল প্রতীক্ষিত জনগণের দাবি অনুযায়ী পরিশেষে ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ইং তারিখে “ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিল - ২০২৩” নামে বিলটি পাস হয়। জাতীয় সংসদে উক্ত তারিখে বিলটি পাস হলেও সেটি ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ইং তারিখে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। উক্ত গেজেটে অপরাধে বিভিন্ন ধারা ও তার শাস্তির বিধান উল্লেখ রয়েছে। যেহেতু জমি জমা নিয়ে সবসময়ই একে অন্যের সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয়। 

আবার দেখা যায় অনেক ভাড়াটিয়া দীর্ঘদিন ধরে বাসা ভাড়া রয়েছেন কিন্তু একটু ক্ষমতাশালী হওয়ার কারণে এখন তিনি বাসা থেকে নেমে যাওয়ার বদলে তিনি এখন বাসার মালিক বলে দাবি করছেন। সেই ক্ষেত্রে মালিকপক্ষের আর ভোগান্তির শেষ থাকে না। এই বিষয়ের উপর লক্ষ্য রেখে শুধু দখল থাকলেই মালিক হবে না উপযুক্ত দলিল সহ প্রমাণ দাখিল এর মাধ্যমে মালিকানা পেতে হবে। আসলে কোন দস্তা বেজের মূলে এবং দলিল যার জমি তার আইন অনুযায়ী কিসের প্রেক্ষিতে মালিকানা দাবি করা যায় সেগুলো নিচে দেওয়া হল।
  • যদি উক্ত সম্পত্তি ক্রয়েরিত হয় তাহলে সেটির বৈধ দলিল।
  • ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত জমির হয়ে থাকলে সেটির বৈধ দলিল।
  • হেবা দলিল সূত্রে মালিকানা যদি হয়ে থাকে তাহলে সেটির নথি পত্র।
  • যদি আদালতে নির্দেশে মালিকানা হয় তাহলে সেটির নির্দেশ কপি।
  • যদি রেকর্ড করতে মালিক হয়ে থাকে তাহলে উক্ত রেকর্ড কপি।
উপরে বর্ণিত কাগজপত্র দাখিলের মাধ্যমে সম্পত্তির মালিক হিসেবে গণ্য করা হবে। আর যদি এসব কাগজ দাখিল করতে ব্যর্থ হয় অর্থাৎ বৈধ কোন কাগজপত্র না থাকে তাহলে কোনভাবেই সে মালিক বলে গণ্য হবে না। তারপরও সে যদি কোন রকম মালিক দাবি করে এবং প্রকৃত মালিকপক্ষকে হেনস্থা করে তাহলে তার রয়েছে শাস্তির বিধান।

অনুমতি দখল বলতে কি বুঝায়

আমরা অনেকেই প্রশ্ন করে থাকি যে অনুমতি দখল বলতে কি বুঝায়। জমির অনুমতি দখল বাংলায় অর্থ যেটি দাঁড়ায় সেটি হল জমির মালিকানার অনুমতি না নিয়েই অন্য কেউ জমি ব্যবহার করছে বাস করছে। অথবা দখল করে আছে প্রকৃতপক্ষে এটি আইন কে লংঘন করছে। যেহেতু বিনা অনুমতিতেই সে বসবাস করছে প্রকৃত মালিকপক্ষ যদি তার বিরুদ্ধে কোনরকম আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাহলে অবশ্যই সে আইন অনুযায়ী শাস্তি পাবে। দলিল যার জমি তার আইন প্রণয়নের এটাই লক্ষ্য যে কেউ 
যেন জোর জবরদস্তি বা দখল মূলকভাবে অন্যের জমিতে অবস্থান করতে না পারে। এবং সে অনুযায়ী শাস্তির বিধান জারি করা হয়েছে। জমি দখলের জন্য উক্ত ব্যক্তিকে ২ বছর থেকে ৭ বছর কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড হতে পারে।

লেখকের শেষ কথা

প্রিয় পাঠক বৃন্দ আমরা আজকে আমাদের এই আর্টিকেলে আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করলাম। আমরা জীবনের কোন না কোন এক সময় জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে ঝামেলায় পড়ে যাই। আপনাদের কথা মাথায় রেখে আমরা আজকে এই আর্টিকেলে দলিল যার জমি তার আইন সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনারা উক্ত আইন সম্পর্কে এবং আইনের ধারাগুলো ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। সেই সাথে আপনাদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য। 

আমরা উপরে বর্ণিত তথ্যগুলো উপজেলা ভূমি অফিসের একজন কর্মকর্তার নিকট থেকে তথ্যগুলো সংগ্রহ করেছি। আপনারা অবশ্যই আপনাদের কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করার পূর্বে সঠিক সিদ্ধান্তটি নিবেন এবং ভূমি আইন সংক্রান্ত কোনো বিষয় যদি আপনাদের জানার থাকে তাহলে আমাদের মন্তব্য বক্সে সেটি জানাতে পারেন। আমরা অতিসত্বর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। আমরা সব সময় আমাদের ওয়েবসাইটে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো আর্টিকেলের মাধ্যমে পাবলিশ করে থাকি। 

তাই তথ্যগুলো জানার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন। আপনার বন্ধু অথবা আত্মীয়দের দলিল যার জমি তার আইন বিষয়টি সম্পর্কে জানানোর জন্য আমাদের এই আর্টিকেল বা পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন। সর্বশেষে এটাই ব্যক্ত করি সবাই ঝামেলা মুক্ত থাকুন ভালো থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url