সাইবার নিরাপত্তা আইন কি ও ২০২৩ এর ধারা সমূহ

সাইবার নিরাপত্তা আইন কি এ বিষয়ে নানান জল্পনা-কল্পনা। আমরা সোশাল মিডিয়ায় দেখেছি বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তিত করে নতুন আইন হিসেবে সাইবার নিরাপত্তা আইন বা সাইবার নিরাপত্তা বিল ২০২৩ সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছিল। বাংলাদেশ সরকার দেশে নাগরিকদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করেছে। যেহেতু এখন ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগ আর এই যুগে এসে সাইবার ক্রাইম একটি ডাল ভাত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। 
সাইবার-নিরাপত্তা-আইন-কি
সেজন্য আমাদের সকলের সাইবার নিরাপত্তা আইন কি এবং আইনের ধারাগুলো কি কি সে সম্পর্কে জানা উচিত। তাই আজকে আমরা এই আর্টিকেলে সাইবার নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে জানব এবং পাশাপাশি আরো যে বিষয়গুলো জানতে পারবো সেগুলো হলো সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ এর ধারা সমূহ ও সাইবার আইনের গেজেট, সাইবার ক্রাইম কত ধারা এবং সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি কি কি এই সকল বিষয়ে আমরা বিস্তারিত জানব। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য।
পোস্ট সূচিপত্র

ভূমিকা-সাইবার নিরাপত্তা আইন

সাইবার সিকিউরিটি রেগুলেশন এমন একটি সিস্টেম নিয়ে গঠিত যা তথ্যপ্রযুক্তি এবং কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেমগুলোকে রক্ষা করার জন্য কোম্পানি এবং বিভিন্ন সংস্থাগুলিকে তাদের সিস্টেম এবং তথ্যগুলিকে ভাইরাস, ফিশিং হ্যাকিং DOS আক্রমণ এছাড়াও অননুমোদিত এক্সেস অথবা চুরির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নিরাপত্তা প্রদান করা হয়ে থাকে। সাইবার সিকিউরিটি সিস্টেমের প্রধান লক্ষ্য হলো সাইবার ঝুঁকি কমানো এবং তথ্যগুলোকে সুরক্ষা প্রদান করা এবং সাংগঠনিক প্রতিক্রিয়া কৌশলগুলিকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করা। 

যেহেতু বাংলাদেশে এখন তথ্যপ্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে গেছে এবং সেই সঙ্গে সাইবার অ্যাটাক এর হার ও অধিকাংশ ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বাংলাদেশ সরকার সাইবা নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সাইবার নিরাপত্তা আইন বাস্তবায়ন করেছে এবং আমাদের বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে সাইবার নিরাপত্তা আইন কি এবং এটি কিভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে সে সম্পর্কে সকলের জানা উচিত। ২০১১ সালে ইউএস ডিওডি সাইবার স্পেসে অপারেটিং সিস্টেমের জন্য “ডিপার্টমেন্ট অফ ডিফেন্স স্ট্রাটেজি” নামে একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করেছিল যা পাঁচটি লক্ষ্য উল্লেখ করে থাকে। 

সেগুলো হলো সাইবার এক্সপ্রেসকে একটি অপারেশনাল ডোমেন হিসেবে বিবেচনা করা, DoD নেটওয়ার্ক এবং সিস্টেমগুলোকে সুরক্ষিত করা, অন্যান্য সংস্থার সাথে অংশীদারত্ব সৃষ্টি করা, যৌথ সাইবার নিরাপত্তার সমর্থনে আন্তর্জাতিকভাবে সকলের সাথে কাজ করা এবং দ্রুত প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে সক্ষম সাইবার কর্মী বিকাশে সহায়তা করা।

সাইবার নিরাপত্তা আইন কি

বাংলাদেশে বিতর্কিত “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন” (ডিএসএ) পরিবর্তনের মাধ্যমে সেই জায়গায় ভিন্ন আরেকটি আইন নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মন্ত্রিসভা। এবং সেই নতুন আইনের নাম দেওয়া হয়েছে “সাইবার নিরাপত্তা আইন- ২০২৩”। তবে আইনের নাম পরিবর্তন হলেও সাইবার নিরাপত্তা আইনের ধারাগুলো পূর্বের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী সবগুলোই আবহমান রয়েছে। তবে ছয়টি ধারা রয়েছে অজমিনযোগ্য এবং দশটি জামিনযোগ্য। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশ কয়েকটি ধারায় পরিবর্তন এনে এই আইন চালু করা হচ্ছে। 

তিনি আরো বলেছেন যে উদ্বিগ্ন হওয়ার পরিবর্তে আমাদের সকলের সাইবার নিরাপত্তা আইন কি এবং এর ধারাগুলো সম্পর্কে সকলের সচেতন হওয়া খুবই জরুরী। সাধারণত একটি সাইবার সিকিউরিটি আইনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ডিজিটাল সিস্টেমকে এবং তথ্যের নিরাপত্তাকে অনলাইন হুমকি ফিশিং অথবা হ্যাকিং থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং জনগণকে রক্ষা করা। যেহেতু বর্তমান যুগে তথ্য প্রযুক্তি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে সেই সঙ্গে এর নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলি সকলের চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। 
বাংলাদেশে চলমান নিরাপত্তা আইনে নেটওয়ার্ক কম্পিউটার সিস্টেম ডিজিটাল তথ্য ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত অন্যান্য অপরাধ নিরোধের বিধান দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশে সাইবার নিরাপত্তা আইন রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের মতো এতগুলো ধারা তাদের দেশের আইনে নেই। তবে বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তা আইন কি ভাবে দেশে জনগণদের রক্ষা করে সেটাই এখন দেখার বিষয়। নতুন এ আইনে মোট ধারা দেওয়া হয়েছে ৬০ টি। যদিও পূর্বের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এর ধারাগুলো অপরিবর্তিত রয়েছে তবে কিছু ধারা পরিবর্তন করা হয়েছে। 

পরিবর্তনটা এরকম করা হয়েছে যে ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট নাম রোহিত করে তার পরিবর্তে সাইবার সিকিউরিটি এ্যাক্ট করা হয়েছে। ব্যাপারটা এমন হয়েছে যে আইনের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে কিন্তু ধারা গুলো ঠিক রয়েছে। আবার শাস্তির বিধান একটু কমানো হয়েছে। তবে কোনরকম সংশয় যেন তৈরি না হয় সেজন্য রোহিত করন ও হেফাজতকরণের বিধানগুলো সাইবার নিরাপত্তা আইন সঠিকভাবে পাশ করেছে। পূর্বের কোন মামলা যদি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় হয়ে থাকে তাহলে বর্তমানে এসে সেই মামলার কার্যক্রম সাইবার নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী হবে।

সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ এর ধারা সমূহ

আমরা এতক্ষণ ধরে সাইবার নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে বিস্তর আলোচনা করলাম সাইবার নিরাপত্তা আইন কি এবং এটি নিয়ে সরকার কেন এত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা আমরা জেনেছি। পাশাপাশি পূর্বের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নাম পরিবর্তন করে নতুন সাইবার নিরাপত্তা বিল-২০২৩ সংসদে উপস্থাপনের মাধ্যমে পাশ করেছে। যদিও পূর্বের ধারাগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অব্যাহত রয়েছে। শুধুমাত্র নামের ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন দেখানো হয়েছে। তাহলে আসুন এবার আমরা সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ এর ধারা সমূহ পর্যায়ক্রমে বিস্তারিত ভাবে জানার চেষ্টা করি।

ধারা নম্বর ৪২

নতুন আইনের এই ধারায় অর্থাৎ বিলের ৪২ ধারা অনুযায়ী বলা হয়েছে যে যদি কোন পুলিশ কর্মকর্তা ইচ্ছা করে কোন স্থানে উক্ত আইনের আওতায় কোন রকম অপরাধ সংঘটিত হবে বা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে অথবা কোন মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ, হারানো বা নষ্ট হওয়া, মুছে ফেলা, পরিবর্তন হওয়ার বা করার সম্ভাবনা আছে তাহলে কোনরকম অনুমতি ছাড়াই উক্ত পুলিশ কর্মকর্তা তল্লাশি, দেহ তল্লাশি অথবা সরাসরি গ্রেফতার করতে পারবে। আইনের এই ধারাটি পূর্বের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও বিদ্যমান ছিল।

ধারা নম্বর ২১

বিলের ধারা নম্বর ২১ এ বলা হয়েছে যদি কোন ব্যক্তি ডিজিটাল অথবা ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর বিষয়ে কোনো রকম কটুক্তি বা খারাপ মন্তব্য করে থাকে তাহলে সেটি অপরাধ বলে গণ্য হবে। আবার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাতীয় সংগীত কিংবা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনরকম প্রোপাগান্ডা অপপ্রচার চালালে সেটিও চরম অপরাধ বলে গণ্য হবে। পাশাপাশি এই অপরাধের জন্য সাইবার নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ পাঁচ বছরে কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দন্ডে দণ্ডিত হবে। 

তাই আমাদের সকলেরই উচিত সাইবার নিরাপত্তা আইন কি এবং এর ধারাগুলোর শাস্তি সমূহ কত কঠিন। উক্ত ধারাতে এটাও বলা হয়েছে যে এই অপরাধ যদি পুনরায় আবার কেউ করে তাহলে তার শাস্তি হবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা তিন কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দন্ডিত হবে।

ধারা নম্বর ২৫

আইনের এই ধারাতে কোন ব্যক্তি ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে অপর কোন ব্যক্তিকে বিরক্ত অপমান অপদস্ত বা হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এমন কিছু তথ্য প্রেরণ প্রকাশ বা প্রকাশ করার জন্য ব্ল্যাকমেইল করে তাহলে তার এই বিষয়টি একটি অপরাধ বলে গণ্য হবে। আর আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শন এর মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতানোর জন্য তার শাস্তি হবে দুই বছর কারাদণ্ড বা তিন লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

ধারা নম্বর ২৫

সাইবার নিরাপত্তা আইন এর আওতায় 25 নম্বর ধারাতে উল্লেখ আছে যে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুন্ন করা অথবা বিভ্রান্তি ছাড়ানোর উদ্দেশ্যে অপপ্রচার বা মিথ্যা তথ্য সম্পূর্ণ আংশিক বা বিকৃত আকারে প্রকাশ বা প্রচার করে কিংবা প্রচার করতে সহায়তা প্রদান করে তাহলে সেটিও অপরাধের আওতায় অন্তর্ভুক্ত হবে। এবং সেই ব্যক্তির শাস্তি হবে দুই বছর কারাদণ্ড বা তিন লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দন্ডে দণ্ডিত হবে।

ধারা নম্বর (২২-২৪)

উক্ত আইনের এই দুই ধারাতে বলা আছে ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে কোনরকম প্রতারণা করা জালিয়াতি করা বা কোনরকম ছদ্মবেশ ধারণ করার মাধ্যমে কোন ব্যক্তিকে হেও প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে তার কাছ থেকে কোনরকম অর্থ হাতিয়ে নিয়ে থাকে তাহলে সেটিও সাইবার নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী অপরাধের আওতায় পড়বে। এবং তার শাস্তি হবে পাঁচ লক্ষ অর্থদণ্ড অথবা দুই বছর কারাদণ্ড।

ধারা নম্বর ২৬

বিলের এই ২৬ নম্বর ধারাতে উল্লেখ থাকে যে কেউ যদি কারো অনুমতি ছাড়া তার তথ্য সংগ্রহ করে অর্থাৎ তার পরিচয় পত্র সংগ্রহ বিক্রয় দখল সরবরাহ ব্যবহার করে থাকে তাহলে সেটি সাইবার সিকিউরিটি আইন এর আওতায় অপরাধ বলে গণ্য হবে। এবং তার শাস্তি হবে দুই বছর কারাদণ্ড বা পাঁচ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে।

ধারা নম্বর ২৮

বিলের ২৮ ধারায় বলা হয়েছে যদি কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী তারা ইচ্ছাকৃতভাবে বা ধর্মীয় মূল্যবোধ অথবা অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য বা উস্কানি প্রদানের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন রকম সোশ্যাল মিডিয়া, ওয়েবসাইট অথবা যেকোন রকম ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে সেগুলো প্রকাশ বা প্রচার করে যাতে অপরপক্ষের ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে তাহলে সেটিও হবে অনেক বড় অপরাধ। 
তাই সাইবার নিরাপত্তা আইন এর ২৮ ধারায় উক্ত অপরাধের শাস্তি হিসেবে দুই বছরে কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড তবে অপরাধের ভিত্তিতে সেটি পাঁচ বছর এবং অর্থদণ্ড ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

ধারা নম্বর ২৯

সাইবার নিরাপত্তা আইন এর ২৯ নম্বর ধারাতে বলা হয়েছে কোন ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক্স বিন্যাসে ক্যানাল কোডের মাধ্যমে ৪৯৯ ধারা অনুযায়ী বর্ণিত কোনরকম মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করলে ২৫ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে। যদিও এই ধারা নিয়ে সংবাদ কর্মীদের ভিতরে অনেক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। গণমাধ্যম কর্মীদের নেতারা বলেছেন ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এই অপরাধের বিচার সাইবার নিরাপত্তা আইন এর মধ্যে যুক্ত করার কারণে সাংবাদিকদের পেশাগত কাজ করার ক্ষেত্রে হয়রানির সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।

ধারা নম্বর ৩১

আইনের এই ৩১ নম্বর ধারাতে বলা হয়েছে যে যদি কোন ব্যক্তি তার নিজস্ব ওয়েবসাইট অথবা ডিজিটাল কোন প্লাটফর্মের মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন যার জের ধরে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শ্রেণীর অথবা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়, সাম্প্রদায়িক কলহ তৈরি হয় যার কারণে অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় এবং তার কারণে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে তাহলে উক্ত ব্যক্তির এ কাজটি একটি অপরাধের আওতায় পড়বে। 

এই অপরাধের শাস্তি হলো পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা ২৫ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দন্ডে দণ্ডিত হবে। আশা করি আপনারা বুঝতে পারছেন সাইবার নিরাপত্তা আইন কি এবং এর কার্যকারিতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

ধারা নম্বর ৩২

এই পর্যায়ে এসে বিলের ৩২ নম্বর ধারাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে কোন ব্যক্তি যদি অফিসিয়াল গোপনীয় বিষয়ের আওতাভুক্ত কোন অপরাধ যেমন কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য যেকোন ডিজিটাল ইলেকট্রনিকের মাধ্যমে সংগঠন করে থাকে অথবা সংগঠন করার ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করে তাহলে সে অপরাধী বলে গণ্য হবে এবং এটি সাইবার ক্রাইমের আওতায় পড়বে। এই অপরাধের শাস্তি সাইবার নিরাপত্তা আইন এর আওতায় সাত বছরের কারাদণ্ড বা ২৫ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দন্ডে দণ্ডিত হবে।

তাহলে পাঠকগণ আপনারা বুঝতে পেরেছেন যে সাইবার নিরাপত্তা আইন কি এবং কেনই বা আমাদের এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন। আপনাদের জ্ঞাতার্থে আরো জানাই যে সাইবার নিরাপত্তা আইনে অজামিনযোগ্য ১৪টি ধারার মধ্যে রয়েছে ১৮ (১) (খ), ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২ ও ৪৬ এই ধারা গুলো জামিনযোগ্য করা হয়েছে। আবার অজামিনযোগ্য চারটি ধারা রয়েছে সেগুলো হলো ১৭, ১৯, ২৭ ও ৩৩। নতুন করে জামিন যোগ্য করা ২১ নম্বর ধারাতে সাজা কমিয়ে সেটি সাত বছর করা হয়েছে। তবে অর্থদণ্ড ১ কোটি টাকা আগের মতই রাখা হয়েছে। 

এছাড়াও ৩০ নম্বর ধারাতে আইন বহির্ভূতভাবে ই-ট্রানজেকশন (ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে লেনদেন) সংক্রান্ত অপরাধ ও সাজার কথা বলা আছে। আবার ১৭ নম্বর ধারাতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পরিকাঠামোতে বেআইনিভাবে প্রবেশ সংক্রান্ত বিষয়গুলো এবং পাশাপাশি অপরাধ ও দন্ডের কথা বলা হয়েছে। ১৯ নম্বর ধারায় কম্পিউটার বা কম্পিউটারের সিস্টেম এর ক্ষতিসাধন, ২৭ নম্বর ধারায় সাইবার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ৩৩ ধারাতে হ্যাকিং সংক্রান্ত বিষয়গুলোর অপরাধ সমন্ধে বলা হয়েছে। 

আশা করি আমরা এখন সাইবার নিরাপত্তা বলতে কি বুঝায় সেটি জানতে পেরেছি এবং পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তা আইন কি, এর উপকারিতা গুলো কি কি এবং নতুন আইনের ধারা সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছি।

সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি কি কি

বাংলাদেশ এখন প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অনেক উন্নয়নশীল দেশকেও পেছন ফেলে দিয়েছে। আর দেশ ডিজিটাল হওয়ার পাশাপাশি এর ছায়া নিরাপত্তা নিয়েও বেড়েছে অনেক উদ্বেগ। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সাইবার আক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এরকম দেশের তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ দাবী করেছেন যে সাইবার হামলা হওয়ার মূল বিষয় হলো দুর্বল অবকাঠামো অর্থাৎ আমাদের দেশের সাইবার সিকিউরিটি সিস্টেম দুর্বল হওয়ার কারণে দুর্বৃত্তরা বিভিন্নভাবে ফিশিং হ্যাকিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে হয়রানি করে থাকে এবং ব্যাপক অর্থ লুট করে থাকে। 

আর এ সকল বিষয় থেকে সকলকে বাঁচানোর জন্য যে সিকিউরিটি সিস্টেম ব্যবহার করা হয় সেটাকে সাইবার নিরাপত্তা বলে। তাই সাইবার নিরাপত্তা আইন কি পরিসরে কাজ করে যাচ্ছে সেটি যেমন লক্ষণীয় ঠিক তেমনি সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি গুলো কি কি সেগুলো নিয়েও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ দের একটি নির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। “বাংলাদেশ সাইবার থ্রেট ল্যান্ড স্কেপ রিপোর্ট ২০২২”তে বলা হয়েছে যে রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি সবসময়ই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। আবার দেখা যায় দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ সাইবার অ্যাটাকের মাধ্যমে সংগঠিত হয়। 
সার্ট সংগঠনটি জানিয়েছে যে বা নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান, আর্থিক কিছু খাত, সামরিক সংস্থা, শিল্প খাদ ব্যবসা-বাণিজ্যিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এমনকি জ্বালানি খাতকে লক্ষ্য রেখে দুর্বৃত্তরা সাইবার হামলা চালানোর চেষ্টা করে থাকবে। সাইবার হ্যাকাররা সাধারণত ওই সকল দেশের অর্থনৈতিক খাতগুলোকে টার্গেট করে যে সকল দেশের সাইবার সিকিউরিটি সিস্টেম এর অবকাঠামো অনেকটাই দুর্বল। তাই বাংলাদেশ সরকারের উচিত সাইবার নিরাপত্তা আইন কি ভাবে ফলপ্রসু এটা বাস্তবায়ন করা ছাড়াও কিভাবে সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি কমানো যায় সে বিষয়ে জোরদার পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

লেখকের শেষ কথা

প্রিয় পাঠক বৃন্দ আপনারা এই মুহূর্তে যেহেতু আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ছেন এর অর্থ হল আপনার নিকট অবশ্যই একটি ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস রয়েছে। আর আমরা এখন তথ্যপ্রযুক্তির চরম শিখরে পৌঁছে গেছি। যার প্রেক্ষিতে এখন বিভিন্ন রকম সাইবার ক্রাইম দেখা দিচ্ছে। আপনার ব্যবহৃত স্মার্টফোন বা যেকোন রকম ডিভাইসে আপনার একান্তই ব্যক্তিগত কোনো তথ্য যদি থাকে এবং সেটি যদি অন্য কারো কাছে চলে যায় তাহলে অবশ্যই আপনি সাইবার নিরাপত্তা আইন এর আওতায় অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। 

আশা করি আপনারা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে এখন সাইবার নিরাপত্তা আইন কি এবং আইনের ধারাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন। আপনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য। আমরা উপরে বর্ণিত তথ্যগুলো জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি এর কাছ থেকে সংগ্রহ করেছি। আপনি যদি সময় এরকম বিপদে সম্মুখীন হন যে আপনার এখন সাইবার নিরাপত্তা আইন এর আওতায় মামলা করা উচিত তাহলে অবশ্যই থানায় গিয়ে কর্মরত ডিউটি অফিসারের সঙ্গে আলোচনা করে নিবেন। 

এছাড়াও সাইবার সিকিউরিটি সিস্টেম সম্পর্কে আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের মন্তব্য বক্সে সেটি জানাতে পারেন। আর এরকম তথ্যবহুল আর্টিকেল গুলো পড়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন। পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তা আইন কি এবং এর ধারাগুলো আপনার আত্মীয় বা বন্ধুবান্ধবকে জানানোর লক্ষ্যে এই পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন। সবাই সাইবার ক্রাইম সম্বন্ধে সচেতন হই এবং বিপদ মুক্ত থাকি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url