ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার তালিকা ও ক্যালসিয়াম ঘাটতির লক্ষণ

ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার তালিকা সম্পর্কে আমরা অনেক সময় বিভিন্নভাবে গুগল এ সার্চ দিয়ে জানার চেষ্টা করে থাকি। কিন্তু ওয়েবসাইট গুলোতে সেভাবে ক্যালসিয়াম খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত লেখা থাকে না। তাই আজকে আমাদের ওয়েবসাইটে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদেরকে ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার তালিকা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য। আমাদের সুস্থ সবল জীবনযাপন করার জন্য অবশ্যই সুষম খাবার খেতে হয়। আর সুষম খাবার তালিকাতে ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি অপরিসীম। 
ক্যালসিয়াম-যুক্ত-খাবার-তালিকা
আমাদের এই আর্টিকেলে আজকে ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার পাশাপাশি আরো যেগুলো বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন সেগুলো হলো ক্যালসিয়াম ঘাটতির লক্ষণ, ক্যালসিয়ামের অভাবে কি কি সমস্যা হয়, ক্যালসিয়াম বৃদ্ধির উপায়, ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার তালিকা, ক্যালসিয়াম ডি যুক্ত খাবার, ক্যালসিয়াম যুক্ত মাছ, ক্যালসিয়াম যুক্ত ফলের তালিকা, কোন বাদামে ক্যালসিয়াম বেশি, আয়রন ও ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার, ক্যালসিয়াম বৃদ্ধির ঔষধ, সবচেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার কোনটি, কি কি খাবার খেলে ক্যালসিয়ামের অভাব দূর হয়, হাড় ফেটে গেলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত, ক্যালসিয়ামের অভাবে কি কি খেতে হয় এ সকল বিষয় সম্পর্কে।
পোস্ট সূচীপত্র

ভূমিকা

ক্যালসিয়াম মানব দেহে পাওয়া যায় এমন উপাদান গুলোর মধ্যে মৌলের দিক থেকে হিসাব করলে ক্যালসিয়ামের অবস্থান পঞ্চম এবং ধাতুর দিক থেকে প্রথম। সাধারণত ক্যালসিয়াম জীবের আয়ন সমূহ, জীব কোষের শরীরবৃত্তীয় এবং জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া গুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। মানবদেহের হাড় গঠনে ক্যালসিয়ামের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া হার সুস্থ রাখতে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি প্রয়োজন। যদি মানব দেহে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয় তাহলে অভ্যন্তরীণ মানব দেহের হাড় গুলো ক্ষয় হতে থাকে। যার ফলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন রকম সমস্যা তৈরি হয়। 

যখন আমরা বুঝতে পারি আমাদের ক্যালসিয়াম এর ঘাটতি হয়েছে তখন আমরা চিন্তার মধ্যে পড়ে যাই। কিন্তু পূর্বেই যদি আমরা সেই সম্পর্কে সচেতন হই এবং ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার তালিকা অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করি তাহলে আমাদের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হয় না এবং তার সঙ্গে আমরা সুস্থ-সবল জীবন যাপন করতে পারি। ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিলে প্রথমে ওষুধ সেবন না করে আমাদের উচিত বিভিন্ন ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারগুলো খাওয়া। তারপরও যদি আমরা মনে করি যে আমাদের সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তাহলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ক্যালসিয়াম ঘাটতির লক্ষণ

হার গঠন হওয়ার শ্রেষ্ঠ সময় সাধারণত ৯ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত। ডাক্তারগণ এই সময়টাকে “পিক বোন মাস” বলে থাকেন। উক্ত বয়সটাতে অবশ্যই ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করা একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের গড়পড় তাই ১২০০ mg ক্যালসিয়াম প্রয়োজন হয়। তবে বয়স ভেদে সেটির পরিমাণ ভিন্ন রকম হতে পারে। মেয়েদের ক্ষেত্রে পিরিয়ড শুরু হওয়ার দুই বছর আগে ও পরের সময়টার মধ্যে তাদের উচ্চতা বাড়তে থাকে। তাই এই বয়সটাতে অবশ্যই মেয়েদের বেশি বেশি ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার তালিকা অনুযায়ী খাবার খাওয়া। 
এছাড়াও গর্ভবতী মায়েদের কিংবা বাচ্চা প্রসব করার পর বেশি বেশি ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া। আমরা এতক্ষণ ধরে কাদের কাদের ক্যালসিয়াম বেশি প্রয়োজন সে সম্পর্কে জেনে নিলাম। আসুন এবার জেনে নেই ক্যালসিয়াম এর ঘাটতি হয়েছে সেটা কিভাবে বুঝব অর্থাৎ ক্যালসিয়াম ঘাটতির লক্ষণ গুলো।
  • ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং চুলকানি হতে পারে।
  • সোরিয়াসিসের মত সমস্যা হতে পারে।
  • একজিমা দেখা দিতে পারে।
  • কোন কারণ ছাড়াই নখ ভেঙে যায়।
  • সারাদিনে একবার হলেও ত্বকের প্রদাহ হয়।
  • ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে অনেক সময় খিঁচুনি হতে পারে।
  • হাটাহাটি করার সময় হাঁটুতে ব্যথা হয়।
এগুলো সাধারণত ক্যালসিয়াম ঘাটতির লক্ষণ। বিষয়গুলোকে আরো বিস্তারিতভাবে জানার চেষ্টা করব। তাই আসুন নিচে ক্যালসিয়াম ঘাটতি হলে যে সমস্যাগুলো তৈরি হয় সেগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।

ক্যালসিয়ামের অভাবে কি কি সমস্যা হয়

উপরে বর্ণিত ক্যালসিয়াম ঘাটতির লক্ষণগুলো বুঝতে পারলে অবশ্যই আমাদের ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার তালিকা অনুযায়ী খাবার খেতে হবে। পাশাপাশি আরো অন্যান্য যেগুলো নিয়ম কারণ আছে সেগুলো মেনে চলতে হবে। নিচে ক্যালসিয়ামের অভাবে কি কি সমস্যা হয় সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

হাড়ের সমস্যা

ক্যালসিয়াম এর ঘাটতির জন্য প্রধান যে সমস্যা সেটি হল হাড়ের সমস্যা। হার গঠনে কিংবা হারকে সুস্থ রাখার জন্য ক্যালসিয়ামের ভূমিকা অপরিসীম। যদি শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয় তাহলে শরীর হার থেকে ক্যালসিয়াম চুষে নেয়। যার কারণে হার ভঙ্গুর হয়ে ওঠে হাড় ক্ষয় হওয়ার জন্য অস্টিয়োপরেসিস এর মত রোগ শরীরে বাসা বাঁধে।

পেশিতে ব্যথা

ক্যালসিয়ামের ঘাটতির জন্য প্রধান যে সমস্যা হয় সেটি হল মানবদেহের পেশিতে ব্যথা। একটু বেশি কাজ করলে অথবা কাজ না করলেও পেশিতে টান পড়ে এমনকি খিচুনি হয়। হাটাহাটি করার সময় হাঁটুতে ব্যথা হয় মাঝে মাঝে হাত-পা ও মুখের চারপাশ অসারতা অনুভব হয়।

দুর্বলতা ও ক্লান্তি ভাব

ক্যালসিয়ামের অভাবে সবসময়ই দুর্বল ভাব কাজ করে এমনকি একটুতেই ক্লান্তি চলে আসে। ক্লান্তি আসার কারণে কাজে অনীহা সৃষ্টি হয় এমনকি রাতে ঠিকভাবে ঘুম হয় না। সাথে মাথা ব্যথা কিংবা অনেকক্ষণ বসে থেকে উঠে পড়লে মাথা ঘোরাতে শুরু করে।

স্মৃতিশক্তি হ্রাস

ক্যালসিয়ামের অভাবে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায় অর্থাৎ কোন কিছু মনে রাখতে পারে না এমনকি কোন কিছু করার জন্য মনোনিবেশ করতে পারে না।

মাড়ির রোগ

আমাদের মধ্যে অনেকেরই বিষয়টা সম্পর্কে ধারণা আছে যে ক্যালসিয়ামের অভাবে দাঁত ও মাড়ির রোগ হয়ে থাকে। মাটির গোড়া দিয়ে রক্ত পড়া কিংবা দাঁত ব্যথা ক্যালসিয়াম ঘাটতির অন্যতম লক্ষণ। ক্যালসিয়াম সাধারণত দাঁতকে মজবুত করে থাকে। তাই এর ঘাটতির কারণে দাঁত দিয়ে রক্ত পড়ে।

এছাড়া ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতির জন্য নানা রকম সমস্যা তৈরি হতে পারে। তবে উপরোক্ত সমস্যাগুলো প্রধান সমস্যা হয়ে থাকে। তাই সমস্যা থেকে বাঁচতে অবশ্যই ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার তালিকা অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করা এবং অন্যান্য বিষয় মেনে চলার মাধ্যমে আমরা এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি।

ক্যালসিয়াম বৃদ্ধির উপায়

আমাদের মতে ওষুধ সেবনের পূর্বে অবশ্যই প্রাকৃতিক জিনিস থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করাই বুদ্ধিমানের কাজ। তাই আমাদেরকে ক্যালসিয়ামের উৎস খুঁজে বের করতে হবে। আর সেটি খাবার গ্রহণ করার মাধ্যমে সম্ভব। সুষম খাবার তালিকাতে কোন কোন খাবার রাখলে আমাদের ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ হবে সে সম্পর্কে জানতে হবে। পাশাপাশি আমাদের প্রতিদিন শারীরিক ব্যায়াম করা উচিত। বাহিরের খাবারগুলো না খেয়ে ঘরে তৈরিকৃত স্বাস্থ্যকর খাবারগুলো খেতে হবে। 
যদি হঠাৎ করে হাঁটুর গোরাতে ব্যথা শুরু হয় তখন আমাদের চিন্তার শেষ থাকে না। কিন্তু ক্যালসিয়াম বৃদ্ধির উপায় অর্থাৎ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার তালিকা থেকে খাবারগুলো গ্রহণ করার মাধ্যমে আমরা ক্যালসিয়াম বৃদ্ধি করতে পারি। তাহলে চলুন এবার জেনে নিই কোন কোন খাবারগুলোতে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।

ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার তালিকা

আমরা জেনেছি যে ক্যালসিয়াম হাড়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন ৭০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন হয়। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খাওয়ার ব্যাপারটা কে খুব একটা গুরুত্ব দেই না। কিন্তু সুস্থ সবল জীবন যাপনের জন্য অবশ্যই সুষম খাবার খাওয়া উচিত। যদি আমরা প্রথম থেকেই বিভিন্ন রকম ভিটামিন যুক্ত খাবার এবং ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খাই তাহলে কখনোই আমাদের কে ডাক্তারের কাছে যেতে হয় না। কিংবা ওষুধ সেবন করতে হয় না। তাই পাঠকগণ পর্যায়ক্রমে আজকে আমরা জানবো ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার তালিকা অনুযায়ী কোন কোন খাবারগুলো আমাদের খাওয়া উচিত।

দুধ

দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম পাশাপাশি অন্যান্য প্রোটিন উপাদান পাওয়া যায়। যাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস রয়েছে তারাও কিন্তু চিনিমুক্ত দুধ খেয়ে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে পারেন। তাই অবশ্যই আমাদের প্রতিদিনের ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার তালিকা তে দুধ রাখতে হবে। দুধে ক্যালসিয়াম থাকার পাশাপাশি ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, পটাশিয়াম এবং ফসফরাস থাকে। এক কাপ গরুর দুধে আছে ২৭৬ থেকে ৩৫২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। তাই অবশ্যই ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই প্রতিদিন দুধ খেতে হবে।

কাঠবাদাম

আমাদের দেশে অনেক রকম বাদাম পাওয়া যায়। তবে সবগুলো বাদামের থেকে কাঠবাদাম বা আলমন্ডে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া কাঠবাদামে রয়েছে প্রোটিন এবং অন্যান্য ভিটামিন উপাদান। শরীরের ব্লাড প্রেসার ঠিক রেখে মেদ কমাতে ম্যাগনেসিয়াম সাহায্য করে থাকে। আর কাঠ বাদামে ম্যাগনেসিয়াম ও পাওয়া যায়। ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণে সাথে সাথে কাঠবাদাম হার্টের যদি কোন অসুখ থাকে সেটিও সাড়াতে সাহায্য করে। তাই আমাদের রোজ ২৮ গ্রাম করে কাঠবাদাম খাওয়া উচিত।

পালং শাক

যদিও এটি একটি সিজনাল শাক নয় তবে আজকাল সবসময়ই বাজারে পালং শাক পাওয়া যাচ্ছে। পালং শাক কে ক্যালসিয়ামের ভান্ডার বলা হয়ে থাকে। এক কাপ সেদ্ধ পালং শাক মানবদেহের প্রতি শতাংশ পর্যন্ত ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে থাকে। তাই অবশ্যই ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার তালিকা তে পালং শাক রাখাটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া যেহেতু পালং শাক একটি ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার তাই এটা হজমে ও সাহায্য করে। পাশাপাশি ভিটামিন এ এবং আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে তাই সিজনে এবং সিজন ছাড়া অবশ্যই আমাদেরকে পালং শাক খেতে হবে।

শস্য বীজ

আমরা অনেকেই জানি যে সব রকমের শস্য বীজে অধিক পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান গুলো বিদ্যমান আছে। তবে অনেক কিছু শস্যবিধ আছে যেগুলোতে ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে মনে করা হয়। গরুর দুধের চেয়েও এসব বীজে ক্যালসিয়াম বেশি আকারে পাওয়া যায়। শস্য বীজগুলো হল তিলের বীজ, চিয়া বীজ, শিমের বীজ, কালো তিলের বীজ ইত্যাদি। তাই আমরা যদি আমাদের খাবার তালিকাতে শস্য বীজ রাখি তাহলে অনেকাংশেই ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।

ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার

আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার তালিকা অনুযায়ী খাবার সেবনের মাধ্যমে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে পারব। কিন্তু ভিটামিন ডি এর উৎস খাবারে খুব একটা পরিলক্ষিত হয় না অর্থাৎ খাবার গ্রহণের মাধ্যমে ভিটামিন ডি এর চাহিদা আমরা পূরণ করতে পারি না। আর হাড়ের গঠন এবং হাড়কে মজবুত করার জন্য ভিটামিন ডি অবশ্যই আমাদেরকে গ্রহণ করতে হবে। তবে খাবার খেয়ে ভিটামিন ডি এর উৎস পূরণ না বলে ভয়ের কিছু নেই। 

আমরা খুব সহজেই ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ করতে পারি। আমরা খুব সকালে মৃদু সূর্যের আলোতে যদি দাঁড়াই তাহলেই ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। তবে অবশ্যই আমাদেরকে ভোরের হালকা গরম সূর্যের আলোতে হাটাহাটি করতে হবে। সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি উৎপন্ন হয়। তবে আপনি যদি মনে করেন যে আপনার ভিটামিন ডি এর ঘাটতি অধিক পরিমাণে হয়েছে তাহলে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে পারেন।

ক্যালসিয়াম যুক্ত মাছ

সুষম খাবার তালিকায় এবং সুস্থ সবল থাকার জন্য মাছ এর বিষয়টা অবশ্যই আসবে। শুধু ভিটামিন এর চাহিদা পূরণের জন্য নয় ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণের জন্যেও ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার তালিকা তে অবশ্যই ছোট মাছ এবং বড় মাছ রাখা উচিত। বিশেষ করে আমাদের দেশীয় ছোট ছোট মাছের প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। এমনকি এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে যা চোখের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। 
এছাড়া সামুদ্রিক মাছে রয়েছে অন্যান্য পুষ্টি গুণ এবং খনিজ উপাদান যা কিনা ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই আমাদের দেশীয় মাছ মলাঢেলা, পুটি, ট্যাংরা, কই, পাবদা, কেচকি মাছ, ময়া মাছ ইত্যাদি মাছের পাশাপাশি যদি আমরা পারি সামুদ্রিক মাছও খাব। আর এর মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে পারব।

ক্যালসিয়াম যুক্ত ফলের তালিকা

আমরা ক্যালসিয়াম এর ঘাটতি পূরণের জন্য বিভিন্ন ধরনের খাবার সম্পর্কে আলোচনা করলাম। আসুন এবার আমরা ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ কিছু ফল সম্পর্কে জেনে নিই।

কলা

ম্যাগনেসিয়াম মানব দেহের হাড় ও দাঁতের গঠনের জন্য এবং মজবুত করতে অপরিহার্য একটি ভিটামিন। আর কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম তাই হাড় মজবুত করার জন্য ক্যালসিয়াম এর ঘাটতি পূরণ করার পাশাপাশি আমরা কলা খাওয়ার মাধ্যমে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে পারি। যেটার কারণে আমাদের হাড় ও দাঁতের গঠন এবং হাড়ের যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের খাবার তালিকাতে অবশ্যই কলা রাখতে হবে।

কমলা

ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার তালিকা যদি ভালোভাবে অনুসরণ করতে চান তাহলে অবশ্যই প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় একটি করে কমলা রাখুন। কারণ কমলার রস ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সরবরাহ করে থাকে। ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম হাড়কে মজবুত ও শক্তিশালী করে তোলে। ডাক্তারদের মতে, প্রতিদিন যদি কেউ খাবার তালিকায় কমলা রাখে তাহলে সে অস্টিওপরোসিস রোগ হওয়া থেকে দূরে থাকে। এছাড়াও আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আমরা ব্ল্যাকবেরি, স্ট্রবেরি, আপেল, আঙ্গুর, নাশপাতি ইত্যাদি ফল রাখতে পারি।

সবচেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার কোনটি

আপনাদের মনে এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে সবচেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার কোনটি। যদি এক কথায় এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় সেটি হবে ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের মধ্যে সর্বোচ্চ ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় দুধে। আমাদের শরীরে প্রতিদিন ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন রয়েছে। অন্যদিকে ১০০ গ্রাম দুধে রয়েছে ৯৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। তাই এটা বলাই যায় যে সবচেয়ে দুধে বেশি পরিমাণ ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।

হাড় ফেটে গেলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত

যদি আমাদের মানবদেহের অভ্যন্তরীণ হাড় ফেটে যায় তাহলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত। 'দ্যা বোন হেল্থ অ্যান্ড অস্টিওপোরোসিস ফাউন্ডেশন' সব সময় পরামর্শ দিয়ে থাকেন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল ও সবজি খাওয়া। এছাড়া আমাদের গাঢ় পাতাবহুল শাক, মিষ্টি আলু, ক্যাপ্সিকাম, কপি, কমলা, কলা, টমেটো, স্ট্রবেরি ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের ফল ও সবজি ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার তালিকা তে রাখতে হবে। আর এগুলো খাবার গ্রহণের মাধ্যমে হাড়ের ক্ষয় বা ফেটে যাওয়া রোধ করা সম্ভব।

ক্যালসিয়াম বৃদ্ধির ঔষধ

আমরা এই আর্টিকেলের সর্ব প্রথমেই বলেছি যে ঔষধ সেবনের পূর্বে অবশ্যই প্রাকৃতিক জিনিসগুলো দিয়ে রোগ সারানো দরকার। অর্থাৎ আমরা আমাদের দৈনন্দিন খাবারে যে খাবারগুলো গ্রহণ করে থাকি সেটির মাধ্যমেই ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে পারি। আমরা প্রাথমিক অবস্থায় ক্যালসিয়াম ঘাটতি লক্ষণ দেখে যদি বুঝতে পারি যে আমাদের হয়তোবা ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হয়েছে ঠিক তখন কোন ওষুধ সেবন না করেই ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার তালিকা টি অনুসরণের মাধ্যমে আমরা আমাদের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে পারি। 

সুতরাং কোন ঔষধ গ্রহণ না করেই আমরা ভালো ফলাফল পেতে পারি। তবে আপনি যদি মনে করেন যে আপনার সমস্যাটি অনেক বেশি হয়ে গেছে অর্থাৎ ক্যালসিয়ামের ঘাটতি চরম আকারে পৌঁছে গেছে সে ক্ষেত্রে আপনি একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন এবং সেই অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন রকম ঔষধ গ্রহণ করা যাবে না।

লেখকের শেষ কথা

প্রিয় পাঠক বৃন্দ আমাদের এ পোষ্টের শেষ পর্যায়ে এসে এটাই আশা ব্যক্ত করতে পারি যে। আপনারা এখন ক্যালসিয়াম বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত হয়েছেন এবং ক্যালসিয়াম এর ঘাটতি হলে কি রকম সমস্যা তৈরি হয় সেগুলো সম্পর্কেও বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার তালিকা টি আপনাদের মাঝে দিয়েছি। অবশ্যই সে অনুযায়ী আপনারা সুষম খাবার গ্রহণ করবেন আর সেই সঙ্গে আপনাদেরকে অশেষ অশেষ ধন্যবাদ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য। 

যদি এই পোস্ট সংক্রান্ত আপনার কোনরকম মন্তব্য থেকে থাকে তাহলে আমাদের মন্তব্য বক্সে আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি করতে পারেন। আমরা এই আর্টিকেলে বর্ণিত তথ্যগুলো বিভিন্ন রকম চিকিৎসা বিষয়ক অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং উইকিপিডিয়া থেকে সংগ্রহ করেছি। আমরা সবসময় আমাদের আর্টিকেলে এরকম তথ্যবহুল পোস্ট করে থাকি। তাই এরকম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানার জন্য অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। আপনার কাছে যদি আমাদের আর্টিকেলটি উপযুক্ত এবং যথাযথ মনে হয় তাহলে একটি শেয়ার করতে পারেন। আপনার একটি শেয়ার আমাদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা। পরিশেষে সকলের সুস্থতাই আমাদের কাম্য।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url