বীমা কি ও কেন প্রয়োজন-বীমা কত প্রকার ও কি কি

বীমা কত প্রকার ও কি কি এই বিষয়টি জানার গুরুত্ব ঠিক তখনই প্রকাশ পায় যখন কোন ব্যক্তি জীবন বীমা সম্পত্তি বীমা বিষয়গুলোতে কনফিউজ হয়ে যায়। তাহলে একজন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিজের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করার জন্য বীমা কোম্পানির আওতায় পলিসি গ্রহণ করা উচিত। কিন্তু বীমা কি এই সম্পর্কে পাশাপাশি এর প্রকার সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা না থাকে তাহলে কখনোই একজন ব্যক্তির বীমা পলিসি করার বিষয়ে আগ্রহ জন্মাবে না। 
বীমা-কত-প্রকার-ও-কি-কি
তাই আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে বীমা কত প্রকার ও কি কি বিষয়টি বিস্তারিত ভাবে জানানো হবে। পাশাপাশি আপনারা বীমা সম্পর্কে আরও যে বিষয়গুলো জানতে পারবেন সেগুলো হলো বীমা কয়টি কি কি এবং এর প্রকারভেদ, ব্যাংক ও বিমার মধ্যে পার্থক্য, বীমার জনক কে বীমা সম্পর্কিত সকল প্রশ্নের উত্তর আপনারা এখানে পেয়ে যাবেন। সুতরাং বীমা কত প্রকার ও কি কি এ বিষয়টি ভালোভাবে জানার জন্য অবশ্যই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্র

বীমা কি ও কেন প্রয়োজন

“বীমা” এর কার্যক্রম গুলো হল সাধারণত অর্থের বিনিময়ে জীবন, সম্পদ বা মালামালের ভবিষ্যতের ক্ষয়ক্ষতি ন্যায়সংগত ও নির্দিষ্ট ঝুঁকির স্থানান্তর করা। আবার অন্যভাবে যদি সংজ্ঞা দেওয়া যায় সেটি হলো বীমা বা ইন্সুরেন্স (Insurance) হলো একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এর কার্যক্রমবিধি যেখানে একজন ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠান অন্য আরেকটি প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বা প্রিমিয়াম প্রদান করে। এবং প্রধানকৃত সেই অর্থের বিনিময়ে বীমা কারী প্রতিষ্ঠান উক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যতের সম্ভাব্য যে কোন রকম ঝুঁকি গ্রহণ করে থাকে। 

“জন এফ. ডাইড্রেন” (John Fairfield Dryden) ১৮৮১ সাল থেকে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত প্রুডেনশিয়াল এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যখন তার পুত্র “ফরেস্ট এফ. ড্রাইডেন” তার স্থলাভিষিক্ত হন এবং পরবর্তীতে তিনি "শিল্প বীমার জনক" হিসাবে অভিহিত হয়ে থাকেন। একজন ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠান যদি বীমা কি এবং বীমা কত প্রকার ও কি কি সম্বন্ধে সম্পূর্ণ ধারণা রাখে তাহলে বীমা পলিসির মাধ্যমে বীমা কোম্পানি যেকোনো দুর্ঘটনা জনিত বিপদের সময় ওই ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে। আর বীমা প্রতিষ্ঠান অথবা কোম্পানিগুলোর মূল লক্ষ্য এটাই। 

তাই যদি প্রশ্ন করা হয় যে কেন বীমা করবেন তাহলে উত্তরটি খুব সহজেই চলে আসে। যেহেতু বীমা কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানগুলো একজন ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন দূর্ঘটনা চুরি অথবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিমা কোম্পানিগুলো ক্ষতিপূরণ প্রদান করে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে ওই ব্যক্তিবর্গ যে পরিমাণ মাসিক প্রিমিয়াম প্রদান করত সেই অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিয়ে বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠানকে আর্থিকভাবে সচ্ছল করে তোলা হয়। আসুন বিষয়টি একটি ভালোভাবে জানার চেষ্টা করি ধরুন একজন ব্যক্তি একটি বীমা প্রতিষ্ঠানে জীবন বীমা পলিসি করেছে তিনি প্রতি মাসে উত্ত 
প্রতিষ্ঠানকে নিয়মিত প্রিমিয়াম প্রদান করে থাকেন। কয়েক মাস পর যদি ওই ব্যক্তি হঠাৎ কোন দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করে তাহলে ওই বীমা কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশগণদের প্রিমিয়াম অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিতে বাধ্য থাকিবে। আর এভাবে একজন বীমা গ্রহিতা জীবদ্দশায় এমনকি মৃত্যুর পরেও তার পরিবারের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করে থাকে। আশা করি একজন বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক হিসেবে তার নাগরিক জীবন উন্নত এবং নিশ্চিত করার লক্ষ্য যদি থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের বীমা পলিসিতে যোগদান করা উচিত। 

আর পলিসিতে প্রবেশ করার জন্য অবশ্যই বীমা কি এবং বীমা কত প্রকার ও কি কি এ বিষয়টি জানার গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা আপনি কোন কাজে নিয়োজিত হওয়ার পূর্বে তার বিষয়াদি সম্পর্কে যদি সম্পূর্ণ ধারণা না রাখেন তাহলে কখনোই সেখানে যোগদান করার আগ্রহ জন্মাবে না। তাই আসুন বীমা সংক্রান্ত সকল বিষয়গুলো পর্যায়ক্রমে আলোচনা করি।

বীমা প্রধানত কত প্রকার

সামাজিক মূল্যবোধের উপর বিচার করলে বর্তমান সমাজে বীমা প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে। তবে অবস্থা ভেদে বীমার প্রকারভেদ অনেকগুলো রয়েছে অর্থাৎ বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে বীমা পলিসি গ্রহণ করা যায়। একজন ব্যক্তি তার জীবনের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে যেমন বীমা পলিসি গ্রহণ করতে পারে ঠিক তেমনি তার দৈনন্দিন ব্যবহারিক জিনিসপত্রের ও বীমা পলিসি করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে উক্ত মালামালের যদি কোন রকম দুর্ঘটনাবশত ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই বীমা প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়াম অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে বাধ্য থাকে। 

ব্যক্তির জীবন যাপন এবং দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারিক জিনিসপত্রের ভিত্তিতে বীমা কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো জীবন বীমা (Life Insurance) এবং সাধারণ বীমা বা সম্পত্তি বীমা (Property Insurance)। একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জীবন বীমা পলিসি করার মাধ্যমে যেমন তার পরিবারের এবং নিজের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারে ঠিক তেমনি সাধারণ বীমা বা সম্পত্তি বীমা পলিসি গ্রহণ করার মাধ্যমে তার মূল্যবান সম্পদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। আর এ বিষয়ের ভিত্তিতে বাংলাদেশের নাগরিকদের অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল করে গড়ে তোলায় বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল লক্ষ্য। 

বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো টিভিতে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন অথবা বাংলাদেশের বেসরকারি এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে বিভিন্ন চুক্তির মাধ্যমে গ্রাম্য পর্যায়ে বীমা কি এবং বীমা কত প্রকার ও কি কি এ বিষয়গুলো জানিয়ে থাকেন। শহরাঞ্চলের লোকদের চাইতে গ্রামের লোকজন একটু সহজ সরল হয়ে থাকেন এবং প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো গ্রামে না থাকার ফলে তারা বীমা সংক্রান্ত বিষয়গুলো জানার ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে। তাই বাংলাদেশের বীমা কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্নভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। 

যেন তারা শহর অঞ্চলের লোকদের পাশাপাশি গ্রামের লোকজনদের বীমা পলিসিতে অন্তর্ভুক্ত হতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। আমরা এ পর্যন্ত বীমা প্রধানত কত প্রকার এবং সেগুলো কি সে সম্পর্কে জানতে পারলাম। আসুন এবার তাহলে জানব বীমা কত রকম হতে পারে অর্থাৎ বীমা এর টোটাল প্রকারভেদ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব।

বীমা কত প্রকার ও কি কি

আমাদের আর্টিকেলের আজকের আলোচ্য বিষয় বীমা কি এবং এর প্রকারভেদ সম্পর্কে আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন বীমা আসলে বিষয়টা কি। আমাদের নিজের জন্য এবং নিজের পরিবারের জন্য অবশ্যই বীমা পলিসিতে নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। আর আমরা যদি নিজেদের দুর্ঘটনাবশত মৃত্যুর আশঙ্কা করি তাহলে অবশ্যই জীবন বীমা পলিসি গ্রহণ করা দরকার। একটি পরিবারের যখন রুজি রোজগারের প্রধান ব্যক্তি মারা যায় তখন সেই পরিবারে নেমে আসে অন্ধকারের ছায়া। 

আর্থিকভাবে তারা অনেকটাই কষ্ট ভোগ করতে থাকেন আর এই বিষয়টি মাথায় রেখে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। পাশাপাশি বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন সময় তাদের সুবিধা সংবলিত ব্যবস্থাপনা গুলো বাংলাদেশের জনগণদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন। আর বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আপনি যদি বীমা পলিসি গ্রহণ করতে চান তাহলে অবশ্যই বীমা এর প্রকারভেদ অর্থাৎ বীমা কত প্রকার ও কি কি এ বিষয়টি জানা খুবই জরুরী। ইতিমধ্যে আমরা উপরের অংশে বীমার প্রধান দুই প্রকার কি কি সে বিষয়ে জানতে পেরেছি যদিও বীমা অনেক রকম হয়ে থাকে। 
একজন ব্যক্তি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে বীমা পলিসি গ্রহণ করতে পারে। তবে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মূলভাবের উপর বিচার-বিশ্লেষণ করে ৮ রকমের বীমা পলিসির কথা বলব এই ৮ প্রকারের বীমা পলিসি আমাদের জীবনের ক্ষেত্রে অতীব গুরুত্বপূর্ণ নিচে পর্যায়ক্রমে বীমা পলিসি গুলো দেয়া হলো।
  • জীবন বীমা (Life Insurance)
  • স্বাস্থ্য বীমা (Health insurance)
  • দুর্ঘটনা বীমা (Accidental Insurance)
  • অগ্নি বীমা (Fire Insurance)
  • ভ্রমণ বীমা (Travel Insurance)
  • সাধারণ বীমা (General Insurance)
  • ঘরের ইন্সুরেন্স (Building insurance)
  • সম্পত্তি বীমা (Property Insurance)
General Insurance কে অনেক সময় Non-life Insurance বলেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। আমাদের জীবনের সাথে অর্থাৎ শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে যেসব বিষয়ের কোন মিল বা জড়িত থাকার বিষয় উল্লেখ থাকে না সেগুলোকে সাধারণ বীমা বলা হয়ে থাকে। আর এজন্য আমরা উপরের অংশে বিমার প্রধান দুই প্রকারভেদ অর্থাৎ জীবন বীমা এবং সাধারণ বীমা সম্পর্কে জানিয়েছি।

জীবন বীমা (Life Insurance)

বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিকের নিশ্চয়তার চুক্তি হিসেবে একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোন বীমা কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের আওতায় একটি চুক্তি গ্রহণ করে যেখানে উল্লেখ থাকে যে বীমা গ্রহীতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আকস্মিক কোন দুর্ঘটনা ঘটলে উক্ত বীমা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে প্রিমিয়ামের হিসাব অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করবে। তবে ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের ঠিক তখনই ইন্সুরেন্স বা বীমার অর্থ প্রাপ্তি লাভ হবে যখন কোন বীমা গ্রহীতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দুর্ঘটনাবষিত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উল্লেখ থাকে যে কেউ যদি ইচ্ছাকৃত কোন দুর্ঘটনা তৈরি করে তাহলে বীমা প্রতিষ্ঠান কখনোই সেই অর্থ 

প্রদান করবে না। আবার বিভিন্ন জীবন বীমা পলিসির চুক্তিতে উল্লেখ থাকে যে শুধুমাত্র মৃত্যুর ক্ষেত্রে নয় ব্যক্তির শারীরিক অসুস্থতায় ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলো অর্থ দিয়ে ব্যক্তিকে সাহায্য করবে। যেহেতু বাংলাদেশের নাগরিকদের বিষয়টি নিয়ে অনেকটাই সচেতন হওয়া প্রয়োজন সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন বেসরকারি সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে সবসময়ই আহবান করে থাকেন এবং সেখানে বীমা কি পাশাপাশি বীমা কত প্রকার ও কি কি হতে পারে সেই বিষয়াদি সর্বস্তরের জনগণদের জানানো এবং সচেতন করে গড়ে তোলা।

সাধারণ বীমা বা সম্পত্তি বীমা (Property Insurance)

সম্পত্তি বীমা বা সাধারণ বীমা হল একটি আর্থসামাজিক বিষয় যেখানে বীমা গ্রহীতা এবং বীমা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিভিন্ন রকম শর্ত সংবলিত একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। উক্ত চুক্তির মাধ্যমে বীমা কোম্পানিগুলো বিভিন্ন মর্মে নিশ্চয়তা প্রদান করে যেমন বীমা গ্রহীতার যে কোনো রকম সম্পদের যদি ক্ষয়ক্ষতি হয় সেই ক্ষয়ক্ষতি পূরণের দায়ভার থাকবে বীমা কোম্পানির উপরে। ধরুন একজন ব্যক্তি তার কোন একটি সম্পদের ওপর ইন্সুরেন্স করল পরবর্তীতে দুর্ঘটনাবশত তার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি সাধন হলো তাহলে অবশ্যই যেই বীমা কোম্পানির আওতায় পলিসি গ্রহণ করা হয়েছিল সেই প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট 

পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে বাধ্য থাকবে। সাধারণ বীমা বা সম্পত্তি বীমা কয়েক ধরনের করা যেতে পারে অর্থাৎ এই বিমা পলিসি গুলো বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। সেগুলো হল অগ্নি বীমা, ভূমিকম্প বীমা, আবহাওয়া বীমা, চুরি বীমা এবং যানবাহন বীমা দুর্ঘটনাবশত কারো বাড়িতে যদি আগুন লেগে যায় এবং সেই বাড়ির মালিক যদি পূর্বে কোন বীমা প্রতিষ্ঠানের আওতায় পলিসি গ্রহণ করে থাকে তাহলে সেই ক্ষয়ক্ষতি সাধনের জন্য বীমা কোম্পানি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ও দান করে থাকবে। ঠিক একইভাবে যদি ভূমিকম্প বীমা পলিসির আওতায় পলিসি গ্রহণ করা থাকে সেই ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট পরিমাণ 

অর্থ দিয়ে থাকে। আবার আবহাওয়া বীমা, চুরি বীমা, যানবাহন বীমা সকল ক্ষেত্রেই যদি কোনো দুর্ঘটনাবশত ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং সেখানে যদি সম্পত্তি বীমা পলিসির আওতায় পলিসি গ্রহণ করা থাকে তাহলে অবশ্যই ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলো ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকে। বীমা কত প্রকার ও কি কি এ বিষয়টিতে জীবন বীমা এবং সাধারণ বীমা বাদে আরো যেগুলো বীমা পলিসি রয়েছে সবগুলোর মাধ্যমেই একজন ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠান তার ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়। 

যেমন কেউ যদি স্বাস্থ্য বীমা পলিসির আওতায় পলিসি গ্রহণ করে তাহলে তার যদি বড় ধরনের কোন অসুখ হয় সেক্ষেত্রে বীমা কোম্পানিগুলো তার প্রিমিয়াম অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রধান করবে। ঠিক একই ভাবে ভ্রমণ বীমা, দুর্ঘটনা বীমা সবগুলোতেই শর্তসাপেক্ষে বীমা কোম্পানিগুলো তাদের হিসেব অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করে থাকে।

একক বীমা কি

আমরা এপর্যন্ত বীমা কি এবং এর প্রকারভেদ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারলাম। আসুন এবার আমরা একক বীমা কি সে বিষয়টি জানার চেষ্টা করি। “সিঙ্গেল-প্রিমিয়াম লাইফ ইন্সুরেন্স” (Single Premium Life Insurance) মূলত একটি বীমা পলিসি যেখানে একজন পলিসি ধারক সুনিশ্চিত মৃত্যু সুবিধার প্রেক্ষিতে অগ্রিম একগুচ্ছ অর্থ প্রদান করে। 

যা বীমাকারী ব্যক্তি যদি দুর্ঘটনাবশত শারীরিক আঘাতপ্রাপ্ত অথবা সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয় তাহলে যেই বীমা কোম্পানির আওতায় একক বীমা পলিসি গ্রহণ করা হয়েছিল সেই কোম্পানি ক্ষয়ক্ষতির মূল্য পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবে। যেহেতু বিষয়টি এককভাবে পরিচালিত হয়ে থাকে তাই এটিকে “সিঙ্গেল-প্রিমিয়াম লাইফ ইন্সুরেন্স” অথবা “একক বীমা” হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে।

ব্যাংক ও বীমার মধ্যে পার্থক্য

ব্যাংকের কার্যক্রম মূলত ঋণ দেওয়া এবং ঋণ গ্রহীতার দ্বারা ভবিষ্যতে ব্যাংকের অর্থ প্রদানের প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করা। পাশাপাশি বীমা হল ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকির বিষয়টি কমানোর ক্ষেত্রে সাহায্য প্রদান করে থাকে। যার ফলে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক মূল্য বৃদ্ধি পায়। বীমা এর ক্ষেত্রে কোন পলিসিটি একজন ব্যক্তির গ্রহণ করা উচিত সে বিষয়টি নির্ভর করবে। তিনি কোন বিষয়ে পলিসি গ্রহণ করতে চাচ্ছেন অর্থাৎ বীমা কত প্রকার ও কি কি এর আওতায় যতগুলো বীমা পলিসি রয়েছে কোনটি তার জন্য প্রযোজ্য হবে সে বিষয়টি পরিলক্ষণ করা খুবই জরুরী। 

আর ব্যাংকের বিষয়টি বলতে গেলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তার গ্রাহকের কোনরকম জানমালের ঝুঁকি নিয়ে থাকে না এমনকি দুর্ঘটনাবশত কারণে যদি গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেক্ষেত্রে যদি প্রধান কৃত ঋণ পরিশোধে ব্যাহত হয় তাহলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোনো রকম ছাড় দেয় না। কিন্তু বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর লক্ষ্যই হলো নাগরিকের আর্থ সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করা। বিপদের সময় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে অর্থ প্রদানের মাধ্যমে সাহায্য করা। আবার ব্যাংকে যদি কেউ ফিক্সড ডিপোজিট করে থাকে তাহলে নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর শুধু গ্রাহক সেই টাকাই পেয়ে থাকে। 
কিন্তু বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর পলিসি আওতায় বোনাস কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ফলে জীবন বীমা পলিসি বোনাস সহকারে গ্রাহককে অর্থ প্রদান করে। অর্থাৎ মূল অর্থের সঙ্গে আরো কিছু অর্থ যোগ করে প্রতিষ্ঠানগুলো বীমা গ্রহিতাকে দিয়ে থাকে। তাই অনেক সময় আমাদের মনে প্রশ্ন আসে যে বীমা কি অর্থাৎ জীবন বীমা করা কি ভালো নাকি ব্যাংকে সঞ্চয় করা ভালো। একটি সঞ্চয় একাউন্ট যেখানে একজন ব্যক্তি শুধুমাত্র তার টাকা জমাতে পারবে বিপরীতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সেখান থেকে কিছু টাকা ট্যাক্স হিসেবে কর্তন ও করবে। 

তাহলে বোঝা যাচ্ছে এখানে শুধু সঞ্চয় হচ্ছে কিন্তু সঞ্চয়ের পরিপ্রেক্ষিতে কোন ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হচ্ছে না প্রখ্যান্তরে একজন ব্যক্তির কর্মজীবনের অগ্রগতি এবং পরিবারের ভবিষ্যৎ নিশ্চয় করার জন্য জীবন বীমা করার বিকল্প আর কিছু নেই। যেখানে আপনার অকাল মৃত্যুতে পরিবারের ছায়া হিসেবে আপনার করা জীবন বীমা পলিসি আপনার পরিবারকে হেফাজত করবে। তাই আমাদের মতে ব্যাংকে টাকা জমানোর চাইতে জীবন বীমাতে বিনিয়োগ করা অতীব জরুরী। 

তবে আমাদেরকে লক্ষ্য রাখতে হবে আমরা কোন জীবন বীমা প্রতিষ্ঠানে টাকা বিনিয়োগ করছি যেহেতু দেশে এখন প্রতারক চক্রের সংখ্যা কম নয়। তাই জেনে বুঝে সেই প্রতিষ্ঠানেই জীবন বীমা পলিসি করার প্রয়োজন। যেই প্রতিষ্ঠানটি সরকার অনুমোদন রয়েছে এবং সেখানে কোনরকম টাকা খোওয়ানোর ভয় নেই।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক বৃন্দ আমরা আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে বীমা কি এবং বীমা কত প্রকার ও কি কি এ বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছি। আশা করি আপনাদের যদি কোন সময় বীমা পলিশির আওতায় নিজেকে নিয়োজিত করতে আগ্রহ জন্মায় তাহলে আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের তথ্যগুলো অনেকটাই উপকারে আসবে। সেই সঙ্গে আপনাদেরকে অশেষ অশেষ ধন্যবাদ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য। এরপরেও যদি বীমা সংক্রান্ত কোনো রকম প্রশ্ন আপনাদের মনে থাকে তাহলে আমাদের কমেন্ট বক্সে সেটি জানাতে পারেন। 

আমরা অতিসত্বর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব পাশাপাশি আজকের আর্টিকেলের তথ্যগুলো যদি আপনার কাছে উপযুক্ত মনে হয় তাহলে অবশ্যই একটি শেয়ার করতে পারেন। আমরা সব সময় আমাদের আর্টিকেলে তথ্যবহুল বিষয় সম্পর্কে পোস্ট করে থাকি তাই আপনি চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url