বীমা কোম্পানিতে চাকরি করা কি জায়েজ আছে কিনা জানুন

বীমা কোম্পানিতে চাকরি করা কি জায়েজ এই প্রশ্নবিদ্ধ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আজকে আমাদের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে। অনেকেই আমরা বীমা কোম্পানিতে চাকরি করার আগ্রহ প্রকাশ করি। কিন্তু বীমা হালাল নাকি হারাম আবার সেই পরিপ্রেক্ষিতে বীমা কোম্পানিতে চাকরি করা জায়েজ কিনা সে বিষয়ে নিয়ে আমরা চিন্তিত থাকি। আপনাদের সকল কনফিউশন দূর করার জন্য আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে বীমা কোম্পানিতে চাকরি করা কি 
বীমা-কোম্পানিতে-চাকরি-করা-কি-জায়েজ
জায়েজ এ বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানানো হবে। পাশাপাশি আপনারা এখান থেকে আরো যে বিষয় সম্বন্ধে জানতে পারবেন সেগুলো হল ইসলামী জীবন বীমা কি জায়েজ এবং বীমা কেন অথবা কোন কোন জায়গায় হারাম ইন্সুরেন্স কি হালাল এবং সাধারণ বীমা কি জায়েজ এই সকল বিষয়ে আপনারা বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন। তাই আপনাদের কাছে আবারো অনুরোধ থাকবে বীমা কোম্পানিতে চাকরি করা কি জায়েজ এ বিষয়টি জানার জন্য সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচীপত্র

ভূমিকা

আপনারা যদি আমাদের ওয়েবসাইটের পূর্বের বীমা কি এবং জীবন বীমা সংক্রান্ত আর্টিকেল পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই ধারণা পেয়েছেন বীমা বিষয়টি কি। বীমা মূলত একজন ব্যক্তির শারীরিক এবং সম্পদের ভিত্তিতে বীমা পলিসি করা হয়ে থাকে অনেকে বীমাকে “মানসিক প্রশান্তির” চিহ্ন হিসেবে উল্লেখ করে থাকে। সাইকোলজিস্টরা মনে করেন যারা বীমা পলিসিতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো রকম চিন্তা করে না। সেজন্য তারা সুশৃঙ্খল এবং স্বাচ্ছন্দ পূর্ণ জীবন যাপন করতে সক্ষম হয়। পাশাপাশি বীমা কোম্পানিতে চাকরি করার মাধ্যমে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে। 

কেননা বাংলাদেশে এখন অনেকগুলো বীমা কোম্পানি গড়ে উঠেছে। বীমা কোম্পানিতে চাকরি করা কি জায়েজ এবং ইন্সুরেন্স কি হালাল এ বিষয়টি নিয়ে যদিও লোকোমুখে ব্যাপক আলোচনা হয়। কিন্তু বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থসামাজিক কাজে সবসময় মানুষের পাশে দাঁড়ায়। একজন মানুষের মৃত্যুর পর তার পরিবারকে বিভিন্ন রকম অর্থ সহায়তা প্রদান করে এবং সেই অর্থ প্রদান করা হয় বীমা গ্রহীতা এবং উক্ত বীমা প্রতিষ্ঠানের চুক্তির ভিত্তিতে।

বীমা কোম্পানিতে চাকরি করা কি জায়েজ

বাংলাদেশ একটি মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত এখানে যে কোনরকম অবৈধ কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়ে থাকে। যেমন মদ পান করা, জুয়া খেলা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ঠিক তেমনি বীমা কোম্পানি গুলো যদি বৈধ কার্যকলাপের সাথে যুক্ত থাকে তাহলে অবশ্যই সেটি জায়েজ বলে গণ্য হবে। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতেই হয় সেটি হল একজন বীমা গ্রহীতা তার ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য বীমা পলিসি গ্রহণ করে থাকে। কেননা তার আকস্মিক দুর্ঘটনাবশত মৃত্যুর কারণে তার পরিবারে যেন অন্ধকারে ছায়া নেমে না আসে সেই জন্যই পলিসিগুলো তৈরি করা হয়েছে। 

ধরা যাক একজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী ব্যক্তি যে কিনা প্রতিমাসে একটি বীমা প্রতিষ্ঠানে প্রিমিয়াম প্রদান করে আসছে। কিন্তু দুর্ঘটনাবশত সে এক্সিডেন্টে মারা যায় তার মৃত্যুর পর পরিবারের অন্য সদস্য ব্যতীত কেউই পাশে দাঁড়ায় না। ঠিক সেই সময় মৃত ব্যক্তির করা পলিসির প্রেক্ষিতে কোম্পানি হিসেব অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশগণদের নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিতে বাধ্য থাকে। যা সামাজিক কর্মকাণ্ড সহ ইসলামের দৃষ্টিতে একটি অতি সওয়াবের কাজ। এ বিষয়গুলো যদি বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে বীমা কোম্পানিতে চাকরি করা কি জায়েজ এ প্রশ্নের উত্তর খুব সহজেই পাওয়া যায়। 
ইসলামী বিশ্লেষকদের মতে, বীমা কোম্পানি গুলো যদি কোন রকম সুদের সঙ্গে জড়িত না হয় তাহলে অবশ্যই সেখানে পলিসি গ্রহণ করা যাবে। তারা আরো বলে থাকেন যে যেহেতু বীমা কোম্পানিগুলো একজন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার পরিবারকে সাহায্য প্রদান করে। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে অবশ্যই একটি ভালো উদ্যোগ। তবে খেয়াল রাখতে হবে আপনি যেই বীমা কোম্পানিতে পলিসি গ্রহণ করছেন সেই প্রতিষ্ঠানটি কোনরকম অবৈধ কাজে লিপ্ত আছে কিনা তাহলে যেই প্রতিষ্ঠান টি আর্থ ও সামাজিক কাজে সকলকে সাহায্য করছে। 

তাহলে বিষয়টি অবশ্যই হালাল হবে আর সেই কোম্পানিতে চাকরি করলে চাকরি ও হালাল হবে। বিষয়টি স্বাভাবিক তবে ওলামাগণদের মধ্যে অনেক রকম মতভেদ রয়েছে। ইন্সুরেন্স কি হালাল নাকি হারাম এই বিষয় নিয়ে অনেক মুফতি মাওলানা তাদের বয়ানে বলেছেন যে ইন্সুরেন্স বিষয়টি অনেকটা লটারির মত কাজ করে। কেননা একজন ব্যক্তি যদি মারা যায় সেই ক্ষেত্রে অনেকগুলো টাকা পাবে যদি জীবদ্দশায় মেয়াদ পূর্ণ হয় তাহলে সে পরিমাণ টাকা পাবে না। তাই বিষয়টিকে মাওলানা রা হারাম এর সাথে তুলনা করেছেন।

ইসলামী জীবন বীমা কি জায়েজ

ইসলামী জীবন বীমা কি জায়েজ এবং বীমা কোম্পানিতে চাকরি করা কি জায়েজ বিষয়টি দুইটিতে আমাদের প্রথমেই হালাল হিসেবে গণ্য হবে বলে মনে চলে আসে। কেননা আমরা মনে করে থাকি যে ইসলামী ব্যাংক থেকে শুরু করে যতগুলো ইসলামিক ফাউন্ডেশন রয়েছে তারা অবশ্যই ইসলামের রীতিনীতি মেনে তাদের কার্যক্রম হালাল পথে পরিচালনা করে থাকে। তাই আমাদের ইসলামী ফাউন্ডেশনের সকল বিষয়াদি সম্পর্কে জানার আগ্রহটা শীর্ষে অবস্থান করে। এর উল্লেখযোগ্য কারণ হলো কোম্পানি নামের পূর্বে ইসলামী শব্দটি ব্যবহার করা। 

ইসলামী জীবন বীমা একটি বিষয় উল্লেখ করেছে সেটি হল আল্লাহতালা ব্যবসাকে হালাল করেছে এবং সুদকে হারাম করেছে। তাদের দাবি তাদের প্রতিষ্ঠান কোন রকম সুদের কারবারের সঙ্গে জড়িত নয়। ইসলামী জীবন বীমা যদি গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে সেটি দিয়ে ব্যবসা করে এবং সেখান থেকেই গ্রাহকদের পরবর্তী দুরবস্থার সময় অর্থ প্রদানের মাধ্যমে সাহায্য করে তাহলে বিষয়টি অবশ্যই জায়েজ বলে গণ্য হবে। কিন্তু অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন যে জীবন বীমা এর যতগুলো প্রতিষ্ঠান রয়েছে তারা কোথায় তাদের টাকা বিনিয়োগ করছে কোথায় ব্যবসা করছে এমনকি তাদের কাঁচামাল কোথায়। 

কিন্তু বীমা কোম্পানিগুলো তাদের জমাকৃত টাকা বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করে থাকেন এবং সেখান থেকেই লভ্যাংশ এর মাধ্যমে গ্রাহকদের অর্থ প্রদান করে থাকেন। যেহেতু ইসলামী জীবন বীমা যদি তাদের পদক্ষেপ গুলি বৈধ হয় তাহলে সেখানে বীমা পলিসি করা অবশ্যই বৈধ বলে গণ্য হবে। পাশাপাশি ইসলামী জীবন বীমা কোম্পানিতে চাকরি করা কি জায়েজ এই প্রশ্নতেও একই উত্তর আসবে। যেখানে পলিসি গ্রহণ করা জায়েজ হবে সেই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার ক্ষেত্রে বিষয়টি হালাল হিসেবে গণ্য হবে।

বীমা কোম্পানিতে চাকরি করা কি হালাল

ইন্সুরেন্স কি হালাল আবার ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করার বিষয়টি কি হালাল হিসেবে গণ্য এ বিষয়টি আরো ভালোভাবে আমাদেরকে নিশ্চিত হতে হবে। কেননা আমরা মুসলমান হিসেবে অবশ্যই হারাম জিনিসকে গ্রাহ্য করবো না। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে সাময়িক সুবিধার এবং সুখের জন্য কোনোভাবেই হারাম জিনিস আমাদের জীবনে আনা যাবে না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনেক লাইফ ইন্সুরেন্স গড়ে উঠেছে যারা তাদের কোম্পানির নামের প্রথমে ইসলামী নামটি যোগ করছে। আর বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষগুলো ইসলাম নামটি শুনে খুব সহজেই সেখানে পলিসি গ্রহণ করছে। 

আর ধর্মকে পুঁজি করে যদি কোন বীমা প্রতিষ্ঠান তাদের পলিসি করে বা ব্যক্তিদের ইন্সুরেন্স করানোর জন্য বিভিন্ন অবৈধ কৌশল অবলম্বন করে তাহলে সেখানে যেমন বীমা পলিসি গ্রহণ করা হারাম বলে গণ্য হবে ঠিক তেমনি ওই সকল বীমা কোম্পানিতে চাকরি করা হারাম বলে গণ্য হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যদি কোন ব্যক্তি মারা যায় সেই মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশগণদের অর্থ প্রদান করার সময় বিশাল বড় সেমিনার করার মাধ্যমে অর্থ প্রদান করে যাতে লোকজন সেগুলো দেখে তাদের কোম্পানিতে গিয়ে পলিসি করতে আগ্রহ দেখায়। কিন্তু ইসলাম এ বিষয়গুলোকে কখনোই গ্রহণ করে না। 

ইসলাম বলে থাকে যদি কাউকে সাহায্য করতে চাও সেটি গোপনে কর যাতে করে সেই ব্যক্তি কোনরকম লজ্জায় না পড়ে তাহলে একজন ব্যক্তির কোন বীমা প্রতিষ্ঠান থেকে পলিসি গ্রহণ করা উচিত। পাশাপাশি বীমা কোম্পানিতে চাকরি করা কি জায়েজ হিসেবে কোন প্রতিষ্ঠানগুলো নির্বাচন করা উচিত তা আমাদের দেখে জেনে বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আপনাদের সুবিধার ক্ষেত্রে দুটি বিষয় সম্পর্কে বলবো অর্থাৎ একটি বীমা প্রতিষ্ঠানের দুইটি বিষয় লক্ষ্য করার মাধ্যমে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন যে এই কোম্পানিতে বীমা পলিসি যেমন গ্রহণ করা যায় ঠিক তেমনি এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা ও জায়েজ 

হবে। প্রথম যে বিষয়টি সেটি হল উক্ত প্রতিষ্ঠান সুদের সঙ্গে জড়িত আছে কিনা এবং আরেকটি বিষয় সেটি হল প্রতিষ্ঠান তাদের নিয়ম নীতিগুলো সম্পর্কে অটল কিনা এবং তারা তাদের নিয়মনীতি সঠিকভাবে পালন করে কিনা।

সাধারণ বীমা কি হালাল

সাধারণ বীমা বা ইন্সুরেন্স কি হালাল এ বিষয়টি জানার জন্য আমাদেরকে প্রথমে সাধারণ বীমা কি সেটি জানা উচিত। সাধারণ বীমা সাধারণত সম্পদের উপর ভিত্তি করে করা হয়ে থাকে অর্থাৎ কোন ব্যক্তি তার সম্পদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সাধারণ বীমা পলিসি গ্রহণ করে। এ পলিসিতে উল্লেখ থাকে যে ব্যক্তির যদি সম্পদ অথবা মালামালের কোনরকম সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে সেই ঝুঁকিভার বহন করবে ওই উক্ত বীমা কোম্পানি। দুর্ঘটনাবশত যদি জানমালের কোনরকম ক্ষয়ক্ষতি হয় সে ক্ষেত্রে বীমা কোম্পানি ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করতে বাধ্য থাকবে। 
ইসলামের অনেক মাওলানা দাবি করেছেন যে সম্পদের ওপর পলিসি গ্রহণ করা এটা একটা জুয়ার মত কাজ করে। যদি আপনার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয় তাহলে আপনি টাকা পাচ্ছেন আর যদি ক্ষয়ক্ষতি না হয় তাহলে টাকা পাচ্ছেন না কিন্তু বিষয়টি নিয়ে ইসলামিক মুফতিগণ বিভিন্ন রকম মতভেদ তৈরি করেছেন। যদি বিষয়টি জুয়ার মত হয় তাহলে বীমা কোম্পানিতে চাকরি করা কি জায়েজ হবে উত্তরে আসবে অবশ্যই না। কেননা ইসলামের মতে, জুয়ার সাথে কোন কোম্পানি বা বিষয়াদি প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকে তাহলে সেখানে চাকরি করা তো দূরের কথা সেখানে যুক্ত হওয়ার কোনো 

রকম প্রশ্নই আসে না। অনেক মাওলানা এটাও বলেছেন যে জুয়া হলো কোন টাকা বা অর্থ তৎক্ষণাৎ ভাবে তার ভাগ্যের উপর নির্ভর করে লাভ করা অথবা লস করা। কিন্তু বীমা পলিসির ক্ষেত্রে বিষয়টি একটু ভিন্নতা প্রকাশ পায় কারণ একজন ব্যক্তি পলিসি গ্রহণ করার পর প্রতি মাসে প্রিমিয়াম প্রদান করে এবং এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী বিষয়। কিন্তু জুয়ার ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক হারা অথবা জেতার কথা চলে আসে। আর বীমা পলিসি এখানে হারা বা জেতার বিষয়টি কোনভাবেই আসে না। আপনি যেই পলিসিটি গ্রহণ করছেন প্রতি মাসে সেই পলিসির আওতায় মাসিক প্রিমিয়াম প্রদান করছেন এবং একটি মেয়াদ শেষে 

সে টাকা তুলতে পারছেন অথবা আপনার মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ অর্থ প্রদানের মাধ্যমে আপনার পরিবারকে সহায়তা করছে। আবার আপনি যদি কোন সম্পদের ভিত্তিতে পলিসি গ্রহণ করেন সেখানেও তাৎক্ষণিক কোন বিষয় আসছে না একটি দীর্ঘমেয়াদী সময়ের প্রেক্ষাপটে আপনি আপনার জামাকৃত মূলধন ফেরত পাচ্ছেন। তাহলে হেরে যাওয়ার কোন বিষয় এখানে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তাই অবশ্যই সাধারণ বীমা কি হালাল পাশাপাশি বীমা কোম্পানিতে চাকরি করা কি জায়েজ হবে এ প্রশ্নের উত্তরে আমরা একটা কথাই বলবো সেটি হল কোম্পানিগুলো যদি কোন রকম বৈধ কার্যকলাপ এবং সুদের 

সঙ্গে জড়িত না থাকে তাহলে অবশ্যই একজন ব্যক্তি সেই কোম্পানিতে কর্মচারী হিসেবে যোগদান করতে পারবেন। পাশাপাশি কোন ব্যক্তি যদি বীমা পলিসিতে প্রবেশ করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে তাহলে সেই সকল বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পলিসি গ্রহণ করতে পারবেন।

ইন্সুরেন্স কি হালাল

আজকের আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয়টি জানার সময় বারবার একটি কথা সামনে চলে এসেছে সেটি হল ইনস্যুরেন্স কি হালাল এবং উপরের অংশগুলোতে আমরা এই বিষয় সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা সেখানে উল্লেখ করেছিলাম যে যদি কোন বীমা কোম্পানি তাদের কার্যক্রম সুদের সঙ্গে জড়িত না রাখে এবং তাদের নিয়ম নীতি সম্পর্কে অটুট হয় পাশাপাশি অবৈধ যে কোন রকম কাজে লিপ্ত না থাকে তাহলে সে কোম্পানি থেকে ইন্সুরেন্স বা বীমা পলিসি গ্রহণ করা অবশ্যই হালাল হিসেবে গণ্য হবে। 

তবে আপনাদের সুবিধার্থে আরো কিছু বিষয় আমরা নিচে তুলে ধরলাম যার মাধ্যমে ইন্সুরেন্স কি হালাল হবে নাকি হারাম হবে সেই বিষয়টি আরো পরিষ্কারভাবে জানা যাবে।

ইন্সুরেন্স কি হালাল হবে সে বিষয়টির পরিপেক্ষিতে প্রথম যে পদক্ষেপ বীমা কোম্পানির গ্রহন করা উচিত সেটি হলো কোম্পানিগুলো একটি ফান্ডের মত কাজ করবে। সেখানে গ্রাহকরা তাদের টাকা জমা রাখবে এবং সেই টাকা দিয়ে ইন্সুরেন্স কোম্পানি তাদের ব্যবসায় বিনিয়োগ করবে (সেটা যেকোন রকম হালাল ব্যবসা হতে পারে)। ব্যবসার লভ্যাংশ থেকে তারা তাদের গ্রাহকদের চাহিদামত অর্থ প্রদান করবে এমনকি তাদের মৃত্যুর পর যে টাকা প্রদান করার চুক্তি থাকে সেটিও এখান থেকে প্রদান করা হবে।

ইন্সুরেন্স কোম্পানি গুলোতে যদি কোন রকম সুদের বিষয়টি উল্লেখ না থাকে তাহলে ইন্সুরেন্স বা বীমা কোম্পানিতে চাকরি করা কি জায়েজ বা হালাল হবে কিনা সে বিষয়টি নিয়ে আর কোন কনফিউশন থাকে না। কেননা ইন্সুরেন্স কি হালাল নাকি হারাম এ বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমাদের কোম্পানির ব্যবসার পদ্ধতি জানতে হবে। যদি আমরা জানতে পারি যে কোম্পানি তাদের কার্যকলাপ অথবা ব্যবসা গুলো সুদ মুক্ত ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছে তাহলে ইন্সুরেন্স বা পলিসি করা যেমন হালাল হবে ঠিক তেমনি ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করাও হালাল হিসেবে গণ্য হবে।

এবারে আসা যাক নিয়ম-নীতির কথা আমরা যদি কোন বীমা কোম্পানির আওতায় পলিসি গ্রহণ করতে চাই তাহলে অবশ্যই তার পূর্বের ইতিহাস জানা উচিত। আমাদের জানতে হবে পূর্বে কোন মৃত ব্যক্তির সঙ্গে তারা প্রতারণা করেছে কিনা অর্থাৎ মৃত্যুর পর বীমার পলিসি অনুযায়ী কোম্পানিগুলো যে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে থাকে সেই অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশগনদের নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করেছে কিনা। সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া খুবই জরুরী। 

কেননা ইসলামের মতে, আমানতের খেয়ানত করা খুবই নফরমানীর কাজ। আর ওই সকল প্রতিষ্ঠানে ইন্সুরেন্স করা কখনোই হালাল হিসেবে গণ্য হবে না সুতরাং আমাদেরকে সেই সকল বৈধ এবং নিয়ম-নীতি পালন করতে অটুট রয়েছে সে সকল বীমা কোম্পানিতে পলিসি গ্রহণ করতে হবে। আর তাহলেই ইন্সুরেন্স হালাল বলে গণ্য হবে। পাশাপাশি বীমা কোম্পানিতে চাকরি করা কি জায়েজ নাকি জায়েজ নয় অনুযায়ী উক্ত কোম্পানিতে চাকরি করাও হালাল বলে গণ্য হবে।

বীমা কেন হারাম

একজন ব্যক্তি বীমা পলিসি গ্রহণ করার মাধ্যমে তার জীবদ্দশায় যেমন ফল ভোগ করবেন ঠিক তেমনি তার মৃত্যুর পরেও ওয়ারিশরা ফল ভোগ করবে। ব্যাংকের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি কখনোই ঘটে না ধরুন আপনি একটি ব্যাংকে সেভিংস একাউন্ট খুললেন এবং সেখানে নিয়মিত টাকা জমা রাখলেন কয়েক বছর পর গিয়ে যদি দেখেন তাহলে আপনার টাকার অংক তো বাড়বেই না প্রখ্যান্তরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপনার একাউন্ট থেকে ট্যাক্স হিসেবে টাকা কর্তন করবে। টাকা বৃদ্ধি পাওয়ার বদলে সেখানে কমে যাচ্ছে। আর একজন ব্যক্তি যদি কোন ভালো এবং বৈধ মানের বীমা কোম্পানিতে পলিসি গ্রহণ করে 

তাহলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর সেখান থেকে মুনাফা সহিত টাকা তুলতে পারবে। এমনকি তার মৃত্যুর পর তার পরিবারের লোকজন অনুদান হিসেবে আরও টাকা পেয়ে যাবে। তাহলে এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে বীমা পলিসি গ্রহণ করার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি যেখানে উপকৃত হচ্ছে তাহলে বিষয়টি কেন হারাম অর্থাৎ বীমা কেন হারাম। বীমা পলিসি গুলো ঠিক তখনই হারাম বলে গণ্য হবে যদি বীমা কোম্পানি অর্থাৎ যেই বীমা প্রতিষ্ঠান এর আওতায় পলিসি গ্রহণ করা হয়েছে সেই কোম্পানি গুলো যদি কোন জুয়ার স্পন্সর করে এবং তাদের জমাকৃত টাকা সুদের ব্যবসায় বিনিয়োগ করে। 

তাহলে সেখানে বীমা পলিসি গ্রহণ করা হালাল হবে না এমনকি সেই সকল বীমা কোম্পানিতে চাকরি করা কি জায়েজ হবে কি হবে না প্রশ্নের উত্তরে সরাসরি না চলে আসে। আবার অনেক মাওলানা দাবি করেন যে বীমা করা সরাসরি হারাম তবে এ বিষয়টি নিয়ে অনেক রকম মতভেদ রয়েছে। অনেকে বলেছেন লাইফ ইন্সুরেন্স এ শরীয়ত নিষিদ্ধ বিমার ও আলগাড়ার সবই বিদ্যমান আর ঐ সকল বিষয়বস্তু ইসলামে হারাম হিসেবে গণ্য। কিমার ও আলগাড়ার বিষয়টি হল সুদ এবং জুয়া যদি এই বিষয়গুলো কোম্পানির সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে অবশ্যই বীমা হারাম বলে গণ্য হবে।

ইন্সুরেন্স কোম্পানি কি

আমরা এতক্ষণ ধরে ইন্সুরেন্স কি হালাল এবং ইন্সুরেন্স বা বীমা এর বিষয়াদি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারলাম আসুন তাহলে ইন্সুরেন্স কোম্পানি কি অর্থাৎ বীমা কোম্পানি সম্বন্ধে একটু ধারণা নিয়ে নিই। ইন্সুরেন্স কোম্পানি হল সেই প্রতিষ্ঠান যেখানে বীমা পলিসি গ্রহণ করতে আগ্রহী ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত হন এবং নিজের জন্য উপযোগী পলিসি গ্রহণ করেন। বীমা গ্রহীতা এবং ইন্সুরেন্স কোম্পানির ভেতরে যে চুক্তি নির্ধারিত হয় সেটিকে সাধারণত পলিসি হিসেবে গণ্য করা হয়। বীমা বা ইন্সুরেন্স পলিসি বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে তবে জীবন বীমা বা লাইফ ইন্সুরেন্স এবং সাধারণ বীমা বা সম্পদের ইন্সুরেন্স এর দুই 
ধরনের ইন্সুরেন্স বেশি জনপ্রিয়। এবং লোকজন এ দুটি ইন্সুরেন্স পলিসি বেশি গ্রহণ করে থাকে। ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের থেকে যে প্রিমিয়াম পায় সেই প্রিমিয়ামের অর্থগুলো বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করে এবং সেখান থেকে যে মুনাফা আসে মুনাফার অংশ থেকে গ্রাহকদের অর্থ প্রদান করে। পাশাপাশি কোন গ্রাহক যদি মৃত্যুবরণ করে তাহলে পলিসির চুক্তি অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশদের প্রিমিয়াম এর হিসাব অনুযায়ী নগদ অর্থ প্রদান করে। 

তবে ইন্সুরেন্স করার ক্ষেত্রে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে কোম্পানিগুলো তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ বৈধ জায়গায় বিনিয়োগ করছে কিনা এবং তারা তাদের চুক্তি অনুযায়ী নিয়ম-নীতি মানতে অটুট কিনা। তাহলে সেখানে ইন্সুরেন্স পলিসি যেমন গ্রহণ করা যায় ঠিক তেমনি ওই বীমা কোম্পানিতে চাকরি করা কি জায়েজ এই হিসেবে উক্ত কোম্পানিতে চাকরি ও করা হালাল হিসেবে গণ্য হয়।

লেখক এর শেষ কথা

প্রিয় পাঠক বৃন্দ আমরা আজকের আর্টিকেলে একদম শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি পরিশেষে আপনাদের একটি কথাই বলতে চাই আপনারা যদি পলিসি গ্রহণ করতে চান তাহলে অবশ্যই যে প্রতিষ্ঠানটি বৈধভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সেখানে পলিসি গ্রহণ করুন এবং আপনার পরিবার-পরিজনদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করুন। আশা করি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা অনেকটাই নিশ্চিত হতে পেরেছেন যে বীমা কোম্পানিতে চাকরি করা কি জায়েজ হবে নাকি জায়েজ হবে না। ইসলাম সবসময় হালাল পন্থাকে সাপোর্ট করে। 

আপনাদেরকে অশেষ অশেষ ধন্যবাদ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য এবং আজকের আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে আপনার যদি কোন মন্তব্য থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের মন্তব্য বক্সে আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি পেশ করুন। আমরা সবসময়ই আমাদের ওয়েবসাইটে তথ্যবহুল আর্টিকেল পাবলিশ করে থাকি। তাই সকল রকম তথ্যবহুল পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন। ইন্সুরেন্স কি হালাল হবে নাকি হারাম হবে এ বিষয়টি আপনার বন্ধুবান্ধবদের জানানোর উদ্দেশ্যে আজকের এই পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url