বাল্যবিবাহ আইন ও শাস্তি-বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭

বাল্যবিবাহ আইন সম্পর্কে আমাদের সমাজের অনেকের ধারণা থাকলেও গ্রামাঞ্চলের মানুষদের এখনও বাল্যবিবাহ এর আইন সম্পর্কে সেই রকম কোন ধারণা নেই। এছাড়া গ্রামের মানুষ জন স্বল্পশিক্ষিত হওয়ার কারণে তারা বাল্যবিবাহের ক্ষতিকারক দিকগুলো সম্পর্কে অনেকটাই অসচেতন। পাশাপাশি শহরাঞ্চলেরও কিছু মানুষজন এর ভেতর এখনো এরকম চিন্তা ভাবনা থেকে গেছে যে মেয়ে বড় হয়ে গেলেই তাকে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট বয়সের সীমারেখা অতিক্রম না করা পর্যন্ত বিয়ে 
বাল্যবিবাহ-আইন
দেওয়া উচিত নয়। সে সম্পর্কে আমরা অনেকেই এখন পর্যন্ত অবগত নই তাই আপনাদের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা আজকে এই আর্টিকেলে বাল্যবিবাহ আইন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। এই আইন গুলো সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার পাশাপাশি আরও যেগুলো বিষয়ে জানতে পারব সেগুলো হল বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭, বাল্যবিবাহ আইনের ধারা এবং শাস্তি সম্পর্কে, বাল্যবিবাহ কিভাবে বন্ধ করা যায়, নতুন বিয়ের বয়স কত এবং বাল্যবিবাহ দিলে সর্বোচ্চ শাস্তি কি এ সকল বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য।
পোস্ট সূচিপত্র

ভূমিকা

সাধারণত “বাল্যবিবাহ” বলতে অপ্রাপ্তবয়স্ক কোন ব্যক্তির আনুষ্ঠানিকভাবে বা অনানুষ্ঠানিকভাবে বিবাহ কার্য সম্পাদন হয়ে থাকে তাকে বাল্যবিবাহ বলে আখ্যায়িত করা হয়। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ বছর বয়সের নিচে যদি বিবাহ দেওয়া হয় সেটা বাল্যবিবাহ এর অন্তর্ভুক্ত। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের অনুমতি তে ১৮ বছরের নিচে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সেটা আইন বহির্ভূত হিসেবে গণ্য করা হয়। বাল্যবিবাহ এর প্রভাব ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের উপরেই পড়ে তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণটা একটু বেশি। 

দুজনের মধ্যে একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক হয়ে থাকে এবং মেয়েরাই এর শিকার হয়। বিশিষ্টজনরা দাবি করে থাকেন যে যৌতুক, দারিদ্রতা সামাজিক প্রথা, রীতি-নীতি, নিরক্ষরতা আবার মেয়েদের উপার্জনে অক্ষম ভাবা বাল্যবিবাহ এর অন্যতম কারণ। যেহেতু বাল্যবিবাহ একটি মারাত্মক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে সেজন্য বাংলাদেশ সরকার বাল্যবিবাহ আইন এবং বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন গুলো সংসদে পাস করেছেন। পাশাপাশি সেই আইনের ধারা অনুযায়ী শাস্তির বিধানও রয়েছে বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত 

গ্রামাঞ্চলের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী তাদের মেয়েদেরকে বোঝা মনে করে থাকে যার কারণে একটি মেয়ের অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। অপরিণত বয়সে বিয়ে হওয়ার কারণে পরবর্তীতে সন্তান জন্ম দানে মেয়েরা পরিপূর্ণতা লাভ করে না যার ফলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে। তাই আসুন বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন সম্পর্কে আমরা জেনে নিই এবং বাল্যবিবাহ আইন সম্পর্কে আমরা সকলে সচেতন হই।

বাল্যবিবাহ আইন

বাল্যবিবাহ আমাদের সমাজের একটি সামাজিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সামাজিক ব্যাধির দরুন কিশোরীরা যেখানে বিদ্যালয়ে পাঠ্যগ্রহণ করার জন্য যাওয়া উচিত ছিল সেখানে বাল্যবিবাহের ছোবলে তারা সংসার জীবনে পদার্পণ করছে। যেখানে তারা সংসার সম্পর্কে কিছুই জানেনা আবার অপরিপক্ক বয়সেই তারা গর্ভবতী হচ্ছে এবং বাচ্চা প্রসবকালে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। এ সকল সমস্যা নিরসনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার বাল্যবিবাহ আইন চালু করে এবং সেটি সংসদে উপস্থাপনের মাধ্যমে পাস করা হয়। সকল রকম বিতর্ক শেষ করে সংসদে পাশ হয়ে যায় ” বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭” উক্ত 

আইনে বলা হয়েছে যে মেয়েদের একটি নির্দিষ্ট বয়স সীমারেখার নিচে কোনোভাবেই তাদেরকে বিবাহ দেওয়া যাবে না। যদি কেউ বাল্যবিবাহ দেয় বা বাল্যবিবাহ দেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করে তাহলে উভয়ের জন্য থাকছে কঠিন শাস্তির বিধান। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে আদালতে নির্দেশ অনুযায়ী অভিভাবকগণের অনুমতিতে কিছু সংখ্যক অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে এবং মেয়ের বিয়ের জন্য অনুমতি প্রদান করা হয়। অনেকে মনে করেন এটি একটি আইনের ফাঁক থেকে গেছে এই বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে অনেকেই তাদের বাল্যবিবাহ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তাই বেশিরভাগ মানুষ দাবি তুলেছিল যে “বিশেষ 
ক্ষেত্র” বা “সর্বোত্তম সার্থ” বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ থেকে বাদ দিতে হবে। কেননা এরকম একটি মহৎ আইন পাশ হওয়ার পর ছোট্ট একটি বিষয়ের জন্য অপূর্ণ থেকে যাওয়াটা আসলেই লজ্জা কর। উক্ত আইনে বলা হয়নি যে বিশেষ ক্ষেত্রে মেয়েদের বয়স ১৮ এর কত নিচে হলে বিয়ে দেওয়া যাবে না তাহলে ঘটনাটা এরকম হলো যে কারো যদি বাল্যবিবাহ দিতে হয় তাহলে সে বিশেষ ক্ষেত্র অবলম্বনে মাধ্যমে তার মেয়ের বিয়ে ১৩ বা ১৪ তেই দিতে পারবে। আমাদের সমাজে এখনো অনেক জায়গায় ১১ অথবা ১২ বছর বয়সের মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়।

বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭

অধিক জল্পনা কল্পনা শেষে বাল্যবিবাহ আইন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ এই বিলটি জাতীয় সংসদে সেই সময় পাস হয়েছিল। কিন্তু ২০২৪ সালে এসে আমরা কি সেটার ফলাফল ভালো পাচ্ছি না খারাপ পাচ্ছি সেটাই খতিয়ে দেখার বিষয়। এই সময় এসে যদি গ্রামাঞ্চলের দিকে লক্ষ্য করা যায় তাহলে দেখা যায় যে এখনো তারা তাদের মেয়ের বয়স ১২-১৩ হলেই বিয়ে দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠছেন। কেননা তারা নিরক্ষর এবং অজ্ঞতার কারণে তাদের মেয়েদেরকে বোঝা মনে করে থাকেন এবং যত দ্রুত সম্ভব বিয়ে দিতে পারলে তারা বেঁচে যাবেন এরকম তাদের ধারণা থেকে গেছে। 

তাহলে কি বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ এর কার্যক্রমটি পুরোপুরি বানচাল হয়েছে আসলে ঘটনাটি এরকম নয়। সেই সময় এই আইন চালুর পর অনেকটাই বাল্যবিবাহ রোধ হয়েছে কিন্তু আইনের একটি অংশবিশেষ সম্পূর্ণতা না থাকার কারণে এখনো বাল্যবিবাহ কার্যক্রম কিছু কিছু জায়গায় চলমান রয়েছে। তাই “বিশেষ ক্ষেত্র” অংশটি যদি আইন থেকে সেই সময় বাদ পড়ে যেত তাহলে বাল্যবিবাহ পুরোপুরি রোধ করা সম্ভব ছিল। ২০১৭ সালে সংসদে বিলটি পাস হওয়ার সময় তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী “মেহের আফরোজ” বলেছিলেন যে “বিশেষ ক্ষেত্র” বা “বিশেষ বিধান” 

এর সুযোগ কেউই হাতছাড়া করবে না এবং আমরা কখনোই এই বাল্যবিবাহ আইন অনুযায়ী এটির প্রতিকার করতে পারবোনা। তারপর তার এই বক্তব্যটি আমলে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে অপ্রাপ্তবয়স্ক যদি কোন বিয়ে দিতে হয় তাহলে অভিভাবকগণের অনুমতি পত্র লাগবে পাশাপাশি আদালত থেকে অনুমতি পাস করানোর মাধ্যমে বিয়ে কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব।

বাল্যবিবাহ আইন এর কুফল

যদিও বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ তে বলা হয়েছে যে কোন অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ে হওয়ার জন্য অবশ্যই আদালত থেকে অনুমতি পত্র লাগবে এবং সাথে প্রয়োজন হবে অভিভাবকদের অনুমতি। কিন্তু মানবাধিকার কর্মী “সুলতানা কামাল” তার মতবাদ ছিল আরেক রকম তিনি বিশেষ ক্ষেত্র বা আদালত থেকে অনুমতি পত্র দাখিল এর মাধ্যমে বিয়ের বিষয়টি পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করতে বলেছিলেন। তিনি বলেন মন্ত্রিসভায় উক্ত আইন পাশ হয়েছে কিন্তু এ আইন অনুযায়ী ও বাল্যবিবাহ ঠেকানো সম্ভব নয়। 

কারণ অভিভাবকগণ নিজেই তারা চাচ্ছেন যে তারা তাদের ছেলে এবং মেয়েদের বাল্য বিবাহ দিয়ে দিবেন। তাহলে তারা তো অনুমতি দিয়ে দিচ্ছেন এবং আদালতে আবেদনের মাধ্যমে অনুমতি সংগ্রহ করা কোন বড় বিষয় নয়। সে ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ রোধ করার পরিবর্তে বাল্যবিবাহ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কায় বেশি। যেটা ২০২৪ সালে এসে আমরা উপলব্ধি করতে পারছি। যদি আপনারা প্রমাণ চান তাহলে গ্রামে এখনো খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন যে বাল্যবিবাহ বিষয়টি এখন পর্যন্ত কতটা ভয়ংকর অবস্থায় থেকে 

গেছে। কেননা এখন পর্যন্ত প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষজন বাল্যবিবাহ আইন সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন নয়। তারা আইন সম্পর্কে জানেন কিন্তু বাল্যবিবাহ দ্বারা অতি গোপনীয়তার সাথে সম্পন্ন করে থাকেন তাহলে বলাই বাহুল্য যে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ এর অপ্রাপ্তবয়স্কদের সর্বোত্তম স্বার্থ এবং বিশেষ ক্ষেত্র বিষয়টির কারণে আইনটি এখনো ধোঁয়াশা পূর্ণ অবস্থায় রয়ে গেছে।

বাল্যবিবাহের ক্ষতিকারক দিক

বাল্যবিবাহের কুফল হিসেবে বলা যেতে পারে, শুধুমাত্র মেয়েরাই এর বেশি ক্ষেত্রে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে প্রতি ২০ মিনিটে একজন মা মারা যাচ্ছেন যার কারণ হচ্ছে বাল্যবিবাহ অর্থাৎ অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় বিয়ে হওয়ার কারণে অকাল গর্ভপাত এবং সন্তান প্রসবের সময় মৃত্যু এ যেন একটি সহজ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই বাল্যবিবাহ আইন এর কার্যক্রম আরো জোরদার করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের কিছু বেসরকারি সংস্থা নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। যেমন ব্যাক, ইউ এন উইমেন বাংলাদেশ ইত্যাদি সংস্থাগুলো জরিপ করে দেখেছেন যে ৭৭ শতাংশ কনের বয়স ১৮ এর নিচে পাওয়া গেছে যা 

কিনা ২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী বাল্যবিবাহের হারের ২৬ শতাংশ বেশি। তাহলে বলাই যায় যে বাংলাদেশে এখনো বাল্যবিবাহ সম্পূর্ণ নিরশন হয়নি বরং সেটির আকার আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা জরিপে আরো উল্লেখ করেছেন যে শহরে ৭০% বাল্যবিবাহ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে এবং ৮১% গ্রামে বাল্যবিবাহ হয়েছে। তাহলে আমরা উপরে জেনেছি যে গ্রামাঞ্চলের মানুষ নিরক্ষর হওয়ার কারণে এবং দরিদ্র সীমার নিচে অবস্থান করার কারণে বাল্যবিবাহে তারা অনেকটাই বেশি আগ্রহী। বিষয়টি আসলেই সত্য বিশ্বে বাল্যবিবাহ এর মাত্রা দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ যা আমাদেরকে সত্যি ভাবিয়ে 
তোলে। বাল্যবিবাহের ফলে অনেক ক্ষেত্রেই বিয়ে পরবর্তী সময়ে ডিভোর্সের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে কেননা অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার কারণে ছেলে এবং মেয়ে উভয়ই সংসার জীবনে পদার্পণ করার পর বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং তারা ডিভোর্স নেওয়ার সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যা আমাদের সামাজিক দিক দিয়ে একটি অন্যতম ক্ষতিকারক দিক। গবেষকরা বলেছেন এখন পর্যন্ত যদি আমরা এই বাল্য বিবাহ রোধ করতে না পারি এবং বাল্যবিবাহ আইনগুলো সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে না পারি তাহলে ২০২০ থেকে ২০৩০ শেষ হওয়ার আগেই বাল্যবিবাহের ঘটনা দাঁড়াবে ১ কোটিতে।

নতুন বিয়ের বয়স কত

যদিও আমরা আর্টিকেলে আলোচনার মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে একজন ছেলে এবং মেয়ের কত বছর বয়সে বিয়ে করা প্রয়োজন এবং অপ্রাপ্ত বয়স কোনটা হতে পারে সে সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি। তারপরও আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ অনুযায়ী ছেলেদের বিয়ের বয়স ২১ এবং মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। তারপরে নতুন করে সংসদে কোন বাল্যবিবাহ আইন বা বিল পাশ করা হয়নি উক্ত আইনের দ্বিতীয় ধারার তৃতীয় অনুচ্ছেদে বিয়ের জন্য 

নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ২১ এবং ১৮ বছর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যদি কেউ অপ্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় বিবাহ কার্যক্রম পরিচালিত করে অর্থাৎ সন্তানদের বাল্যবিবাহ দিয়ে দেয় সে ক্ষেত্রে রয়েছে চরম শাস্তির বিধান। আসুন আইনের ধারা অনুযায়ী শাস্তির বিধানগুলো পর্যায়ক্রমে আলোচনা করি।

বাল্যবিবাহের সর্বোচ্চ শাস্তি কি

আশা করি আমরা এখন বাল্যবিবাহ এবং বাল্যবিবাহের বিষয়বস্তু সম্পর্কে অনেকটাই জ্ঞান লাভ করেছি এবং সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সকলকে বিষয়টি জানানো প্রয়োজন। তাই আপনি নিজে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি আপনার আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবদের বাল্যবিবাহের ক্ষতিকারক দিকগুলো সম্পর্কে জানাবেন এবং বাল্য বিবাহ রোধ করার জন্য কেমন শাস্তি হতে পারে সেগুলো অবশ্যই জানাবেন। নিচে বাল্যবিবাহের সর্বোচ্চ শাস্তি গুলো কি কি সেগুলো বর্ণনা করা হলো।
  • প্রাপ্তবয়স্ক কোন ছেলে অথবা মেয়ে বাল্যবিবাহ করলে বাল্যবিবাহ আইন এর ভিত্তিতে এটি একটি অপরাধ বলে গণ্য হবে এবং এই অপরাধের প্রেক্ষিতে দুই বছর কারাদণ্ড বা এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দন্ডে দণ্ডিত হবে। যদি অর্থদণ্ড দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে ৩ মাস অধিক কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে।
  • অপ্রাপ্তবয়স্ক কোন নারী বা পুরুষ বাল্য বিবাহ করিলে সেটাও হবে একটি অপরাধ এবং অপরাধের শাস্তি হবে এক মাসে কারাদণ্ড বা ৫০,০০০ টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
  • পিতা-মাতা ও অভিভাবক অথবা অন্য কোন ব্যক্তি আইনগতভাবে অথবা আইন বহির্ভূতভাবে কোন অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির উপর কর্তৃত্ব সম্পাদন করলে এবং সেই অনুযায়ী বাল্যবিবাহ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে কোন রকম কাজ করলে অথবা করার অনুমতি বা নির্দেশ প্রদান করলে অথবা অবহেলার কারণে বিবাহটি বন্ধ করতে যদি ব্যর্থ হয় সেটা হবে চরম অপরাধ। সেজন্য বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন অনুযায়ী শাস্তির বিধান রয়েছে ২ বছর কারাদণ্ড বা ৫০০০০ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
  • বাল্যবিবাহ পরিচালনাকারী অর্থাৎ যে বাল্যবিবাহ দেওয়া সময় নিজে উপস্থিত থাকবে এবং কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকবে সে ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হবে ২ বছর কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
  • বাল্য বিবাহ নিবন্ধনকারী অর্থাৎ যে বাল্যবিবাহ রেজিস্ট্রি করবে তার শাস্তি বিধান রয়েছে ২ বছর কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দন্ডে দণ্ডিত হবে। এমনকি নিবন্ধনকারী ব্যক্তির লাইসেন্স পর্যন্ত বাতিল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 
শুধুই কি শাস্তি দেওয়ার মাধ্যমে বা বাল্যবিবাহ আইন অনুযায়ী শাস্তির বিধানগুলো রেখেই কি বাল্যবিবাহ বন্ধ করা সম্ভব আসলে বিষয়টি সেরকম নয়। আমরা যদি নিজেরা সচেতন না হই তাহলে কখনোই এই ব্যাধি থেকে আমরা মুক্তি পাব না। তাহলে বাল্যবিবাহ নিরোধ করার লক্ষ্যে আমাদের কি করা উচিত আসুন সে সম্পর্কে জেনে নিই।

বাল্যবিবাহ কিভাবে বন্ধ করব

বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ তে যদি সরকার সে সময় “বিশেষ ক্ষেত্র” অংশটি আইনের ধারা থেকে সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে দিত তাহলে বাল্যবিবাহ অনেকটাই নিরসন করা সম্ভব ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সেই আইন আর নতুন করে প্রণয়ন বা বাস্তবায়ন করা হয়নি। যার কারণে এখন পর্যন্ত আইনের ফাঁক ফোকর কে কাজে লাগিয়ে সবাই বাল্যবিবাহ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এখন এই বাল্যবিবাহ রোধ করার জন্য আমাদের যুবসমাজকে সর্বপ্রথম এগিয়ে আসতে হবে। যেহেতু আমাদের বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল 

যুগে পদার্পণ করেছে তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্নভাবে সচেতনতামূলক পোস্ট করে বাল্যবিবাহ এর শাস্তি এবং কুফল সম্পর্কে জানানোর মাধ্যমে বাল্যবিবাহ নিরোধ করা সম্ভব। আবার আমরা এই আর্টিকেলে বাল্যবিবাহের ক্ষতিকারক অনেকগুলো দিক তুলে ধরেছি তাই আপনি যদি এই পোস্টটি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করেন তাহলে বাল্যবিবাহ সম্পর্কে এবং বাল্যবিবাহ আইন সম্পর্কে অনেকেই জানতে পারবে। এবং সেই অনুযায়ী সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে আবার আপনি যদি আপনার 
এলাকায় দেখতে পান বা বুঝতে পারেন যে গোপনীয়তার সাথে কোথাও বাল্যবিবাহ অনুষ্ঠিত হচ্ছে তাহলে আপনি সরাসরি জরুরি সেবা ৯৯৯ তে কল করার মাধ্যমে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে পারেন। আবার ১০৯ তে কল করার মাধ্যমে নারী নির্যাতন এবং বাল্যবিবাহ রোধ করার উদ্দেশ্যে বিষয়টি কল সেন্টারে জানাতে পারেন এবং উক্ত নম্বরগুলোতে কল করলে অবশ্যই সেটির একটি সমাধান পাবেন।

লেখকের শেষ কথা

সুপ্রিয় পাঠক বৃন্দ আমরা আর্টিকেলের শেষ পর্যায়ে এসে একটি বিষয়ে উপলব্ধি করতে পারছি যে আমাদের দেশ ডিজিটাল যুগে পদার্পণ করলেও প্রাচীন যুগের অনেক কথাগুলো এখনও থেকে গেছে। যার মধ্যে বাল্যবিবাহ একটি অন্যতম বিষয়। আশা করি আপনারা এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে এখন সম্পূর্ণভাবে বাল্যবিবাহ এবং বাল্যবিবাহ আইনের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে অবগত হতে পেরেছেন। আপনাদেরকে অশেষ অশেষ ধন্যবাদ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আমরা 

আমাদের এই আর্টিকেলের সম্পূর্ণ তথ্য গুলো “Law Of Bangladesh” এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং জাতীয় মহিলা সংস্থা এর ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করেছি। আপনি বাল্যবিবাহ নিরোধ করার জন্য সবসময়ই আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। তাই বাল্যবিবাহ হচ্ছে এরকম দেখলে সরাসরি থানায় গিয়ে যোগাযোগ করুন। এছাড়াও এই বিষয় সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন যদি থাকে তাহলে আমাদের মন্তব্য বক্সে সেটি জানাতে পারেন। আমরা সবসময় আমাদের ওয়েবসাইটে এরকম তথ্যবহুল পোস্ট করে থাকি। 

তাই আপনি চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন পাশাপাশি বাল্যবিবাহ আইন এবং বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন সম্পর্কে আপনার বন্ধু-বান্ধব অথবা আত্মীয় স্বজনদের সচেতন করার লক্ষ্যে আমাদের এই আর্টিকেলটি শেয়ার করতে পারেন। নিজে সচেতন হই অন্যকে সচেতন হতে সাহায্য করি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url