লো প্রেসার হলে কি খাবার খাওয়া উচিত বিস্তারিত জানুন

লো প্রেসার হলে কি খাবার খাওয়া উচিত এবং কোন খাবার খাওয়া উচিত নয় এটি সম্পর্কে জেনে থাকা এখনকার সময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি বিষয় কারণ আজকাল লো প্রেসার খুব সাধারণ একটি বিষয় হয়ে উঠেছে। লো ব্লাড প্রেসারের কারণে অনেক মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাই লো প্রেসার হলে কি খাবার খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে যদি সঠিক ধারণা না থাকে তাহলে যেকোনো সময় যে কোন কেউ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারে। আমরা অনেকেই লো প্রেসার কে অতটা গুরুত্ব দেই না যতটা না হাই প্রেসার কে গুরুত্ব দেই। আমাদের ধারণা হাই ব্লাড প্রেসার সাধারণত মৃত্যুর কারণ হয়ে থাকে। 
লো-প্রেসার-হলে-কি-খাবার-খাওয়া-উচিত
কিন্তু আজকাল লো প্রেসার এর কারণে এবং লো প্রেসার হলে কি খাবার খাওয়া উচিত নয় সেটি না জানার কারণে ও মৃত্যু ঘটতে পারে সেটি সম্পর্কে আমাদের খুব একটা ধারণা নেই। তাই চলুন পাঠকগণ আজকে লো ব্লাড প্রেসার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে জানার চেষ্টা করি। তাছাড়া বন্ধুরা এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা আরো জানবো যে সকল বিষয় তা হল লো প্রেসার এর লক্ষণ গুলো কি কি, লো প্রেসার হলে করণীয়, লো প্রেসার হলে কি খাওয়া উচিত নয় এবং লো প্রেসার হলে কি খাবার খাওয়া উচিত এ সকল সম্পর্কে। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য চলুন তার আগে জেনে নেই লো ব্লাড প্রেসার জিনিসটা কি।
পোস্ট সূচিপত্র

লো ব্লাড প্রেসার কি

সাধারণত একজন সুস্থ মানুষের রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০ মিমি মার্কারি যদি এই রক্তচাপ ৯০/৬০ মিমি মার্কারি এর নিচে চলে যায় তাহলে সেটাকে লো ব্লাড প্রেসার বলা হয়। লো প্রেসার কে হাইপোটেনশন ও বলা হয়ে থাকে। ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া উভয় ক্ষেত্রেই শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। ডাক্তারের মতে হঠাৎ যদি কারো লো প্রেশার হয়ে যায় তাহলে তার মস্তিষ্ক, কিডনি এবং হৃদপিণ্ড সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহিত হতে পারে না। আর হৃদপিণ্ডে সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহিত না হওয়ার দরুন রোগী নানা রকম শারীরিক জটিলতা অনুভব করেন। 

যদি কোন ব্যক্তির মাঝে মাঝেই লো ব্লাড প্রেশার হয় তাহলে ধীরে ধীরে উক্ত ব্যক্তির অকালে কিডনি বিকল হতে পারে। এমনকি হার্টফেলের কারণে সে মৃত্যুবরণ করতে পারে সুতরাং লো প্রেসার কোন সাধারণ বিষয় নয়। এটিকে সম্পূর্ণভাবে জানা উচিত এবং পাশাপাশি লো প্রেসার হলে কি খাবার খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা থাকা প্রয়োজন। সাধারণত ডাক্তারদের মতে দুশ্চিন্তা ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া শরীরে পানির ঘাটতি পুষ্টির অভাবে লো প্রেসার হয়ে থাকে। আমরা যেহেতু লো প্রেসার কি এবং লো প্রেসার এর কারণ সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেয়েছি আসুন এবার লো প্রেসার হলে কি খাবার খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে ধারণা নিই।

লো প্রেসার হলে কি খাবার খাওয়া উচিত

রক্তচাপ কমে গেলে যেসব খাবার খাওয়া প্রয়োজন

পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি: যদি কারো হঠাৎ করেই লো প্রেসার দেখা দেয় তাহলে বুঝতে হবে তার শরীরে প্রচুর পরিমাণে পানির ঘাটতি রয়েছে এবং পাশাপাশি তার শরীরে তরল খাদ্যের অভাব রয়েছে। শরীর পানি শূন্য হয়ে গেলে রক্তের ঘনত্ব অনেকটাই কমে যায়। এ কারণে রক্তের চাপও কমে যায় তাই নির্দিষ্ট পরিমাণ রক্তের চাপ তৈরি করার জন্য তরল জাতীয় খাবার যেমন ডাবের পানি, লবণ অথবা চিনি দিয়ে লেবুর শরবত ফলের রস ইত্যাদি খাওয়া অতীব ও জরুরী।
লবণ: লো প্রেসার হলে কি খাবার খাওয়া উচিত এ তালিকায় লবণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেননা লবণে সাধারণত লবণ কে সোডিয়াম ক্লোরাইড বলা হয়। যেহেতু লবণে সোডিয়াম থাকে সোডিয়াম শরীরে রক্তচাপ বৃদ্ধি করে থাকে তবে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে শুধু লবণ পানি গুলে খেলে হবে না। তার সঙ্গে দুই চা চামচ চিনি মেশাতে হবে অর্থাৎ এক গ্লাস পানিতে দুই চা চামচ চিনি তার সঙ্গে এক চা চামচ লবণ মিশিয়ে পান করতে হবে।

স্যালাইন: লো প্রেসার এর ক্ষেত্রে স্যালাইন খাওয়াটা অতি জরুরী এবং হঠাৎ করে কারো যদি শরীরে লো ব্লাড প্রেসার দেখা দেয় তাহলে দ্রুততার সঙ্গে তার স্যালাইন খাওয়া উচিত। কেননা স্যালাইন লবণ পানি পানের চাইতেও দ্রুততার সঙ্গে ফল দাও কাজ করে। তাই রক্তচাপ কমে গেলে লো প্রেসার হলে কি খাবার খাওয়া উচিত এই তালিকায় স্যালাইন কে রাখা দরকার। এগুলো সাধারণত কারো যদি হঠাৎ করে লো ব্লাড প্রেশার দেখা দেয় তাহলে উক্ত ব্যবস্থাগুলো গ্রহন করা উচিত। তবে আপনাকে সুস্থ থাকার জন্য অবশ্যই সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে। তাই আপনার জানা উচিত কোন খাবারগুলো খেলে আপনার রক্তস্বল্পতা দূর হয় এবং কি কি খাবার খেলে প্রেসার বাড়ে সে সম্পর্কে জানা উচিত।

রক্তস্বল্পতা দূর করে এমন খাবার সমূহ: আপনি যদি রক্তস্বল্পতা দূর করে এমন খাবারগুলো গ্রহণ করেন তাহলে অবশ্যই আপনার রক্তচাপ একটু বৃদ্ধি পাবে এবং আপনার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তাছাড়া আয়রন ভিটামিন সি ও ফলেট রক্তস্বল্পতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। তাছাড়া লেবু জাতীয় ফল, মেটে আলু, মসুর ডাল, সিদ্ধ ডিমে প্রচুর পরিমাণে ফলের থাকে। আবার টক জাতীয় ফল যেমন টক আঙ্গুর, তেতুল, কাঁচা আম, কামরাঙ্গা, জলপাই এবং আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। 
আয়রন এর ঘাটতি মেটানোর জন্য লো প্রেসার হলে কি খাবার খাওয়া উচিত সেই তালিকায় গরু ও মুরগির মাংস, লাল শাক, কচু শাক, সিমের বিচি, মিষ্টি কুমড়ার বিচি, পালংশাক, ডাল ইত্যাদি শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। আবার এসব খাবারে সোডিয়ামের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় সোডিয়াম রক্ত চাপ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে। তাই রক্তচাপ বৃদ্ধি করার জন্য এবং লো ব্লাড পেশার ঠেকাতে উপরে বর্ণিত খাবারের তুলনা নেই। তাই অবশ্যই লো প্রেসার এর রোগীর উক্ত খাবার গুলো তালিকাতে রাখা উচিত।

বিটরুট এর জুস: বিটরুটে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম থাকে এবং আমরা পূর্বে জেনেছি সোডিয়াম রক্তস্বল্পতা এবং রক্তচাপ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই খাওয়াটা লো প্রেসার রোগীর জন্য অবশ্যই বাঞ্ছনীয় বিটরুট সালাদ হিসেবে অথবা জুস হিসেবে খাওয়া যায়।

টক ফল: যদিও আমরা লো প্রেসার হলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত এ তালিকাতে টক ফল সম্পর্কে মোটামুটি জেনেছি। তবে আরেকবার টকফল সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। টক ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকার পাশাপাশি মিনারেলে ভরপুর। উপরে বর্ণিত টক ফলগুলোর পাশাপাশি কমলা, মালটা লেবু ইত্যাদি জাতীয় সবগুলো টক ফল লো প্রেসার রোগীর খাবার তালিকা তে রাখা উচিত।

মাখন: আমাদের অনেকেরই প্রিয় খাবার হচ্ছে মাখন। মাখনে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম পাওয়া যায়। মাখন আমরা বিভিন্ন ভাবে খেতে পারি। মাখন দিয়ে আপনার পছন্দের কোন জিনিস ভেজে খেতে পারেন। আবার নোনতা বিস্কুটেও মাখনের উপস্থিতি পাওয়া যায়। তাই নোনতা বিস্কুট খেতে পারেন এছাড়া পনির আচার ও নোনতা বিস্কুট সোডিয়ামের ভালো উৎসব। আপনাদের রক্তচাপ কমে গেলে এই খাবারগুলো লো প্রেসার হলে কি খাবার খাওয়া উচিত সেই খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।

ক্যাফেইন: লো প্রেসার হলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত এ তালিকার সর্বশেষ যে খাবার সম্পর্কে আলোচনা করব সেটি হচ্ছে ক্যাফেইন চা এবং কফিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেইন পাওয়া যায়। ক্যাফেইন সমৃদ্ধ খাবারগুলো সাধারণত রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে তাই আপনার খাবারের তালিকাতে চা অথবা কফি রাখতে পারেন।

লো প্রেসারের লক্ষণ

লো প্রেসার হলে শরীরে তাৎক্ষণিক কিছু শারীরিক জটিলতা দেখাতে পারে যেমন মাথা ঘোরানো, ক্লান্তি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব, বুক ধরফর করা, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা, স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাস নিতে কষ্ট, এমন নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে।

লো প্রেসার হওয়ার কারণ

লো ব্লাড প্রেসার হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে বয়স অনুযায়ী ওজন কম হওয়া। পরিমাণ মতো খাবার গ্রহণ না করা দেহের তুলনায় অধিক পরিশ্রম করা। দুশ্চিন্তা ও অবসাদ অনিদ্রা অপুষ্টি রক্তশূন্যতা এবং পানি শূন্যতা তাছাড়া হরমোনের ভাষা না থাকার কারণে লো প্রেসার হয়ে থাকে।

লো প্রেসার হলে করণীয়

যদি কোন ব্যক্তির হঠাৎ লো প্রেসার সংগঠিত হয় তাহলে উপস্থিত উপরে বর্ণিত খাবারগুলো যেমন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি লবণ ও চিনি মেশানো পানি পান করা স্যালাইন পান করার মাধ্যমে তাৎক্ষণিক লো প্রেসার থেকে বাঁচা যায়। কারণ উক্ত খাবার গুলো রক্তস্বল্পতা রোধ করে এবং দ্রুত রক্তের চাপ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাছাড়া লো প্রেসার হলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত নিচে তা পয়েন্ট আকারে বর্ণনা করা হলো।
  • রাতে এক গ্লাস পানিতে কিসমিস ভিজিয়ে রেখে সকালে উঠে সেই ভিজিয়ে রাখা কিসমিস সহকারে পানি পান করা।
  • হাঁসের ডিম সিদ্ধ করে হালকা লবণ ছিটিয়ে খাওয়া।
  • লবণ মিশিয়ে একটু বাদাম খাওয়া যেতে পারে।
  • যদি ডিম না থাকে তাহলে এক গ্লাস কুসুম কুসুম গরম দুধ খাওয়া যেতেই পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে দুধ যেন প্রক্রিয়াজাতকরণ দুধ না হয়।
  • যেহেতু খাবার স্যালাইন রক্ত চাপ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে তাই তৎক্ষণাৎ আধার লিডার পানিতে এক প্যাকেট স্যালাইন গুলো খাওয়া যায়।
  • চিকেন সুপ বা ভেজিটেবল স্যুপ খাওয়া যেতে পারে।
লো প্রেসার রোধে এবং লো প্রেসার হলে কি খাবার খাওয়া উচিত সে তালিকায় ডাবের গুরুত্ব অপরিসীম। ডাবের পানি তৎক্ষণাৎ উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই অবশ্যই লো প্রেসার রোগীকে ডাবের পানি খাওয়ানো উচিত।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক বৃন্দ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে লো প্রেসার হলে কি খাবার খাওয়া উচিত, লো প্রেসার এর লক্ষণ এবং লো প্রেসার হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি। এই আর্টিকেলে দেওয়া সম্পূর্ণ তথ্যগুলো চিকিৎসা বিষয়ক বিভিন্ন অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা। আমরা এখানে লো ব্লাড প্রেসার হলে প্রাথমিকভাবে কিভাবে প্রতিকার করা সম্ভব সে সম্পর্কে তথ্য প্রদান করেছি। তবে তৎক্ষণাৎ লো প্রেসারের রোগী যদি সুস্থ না হয় বা রোগীর অবস্থা যদি বেশি খারাপ হয় তাহলে দেরি না করে অবশ্যই নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। 

তবে আমরা লো প্রেসার রোগীর জন্য যেসব খাবার খাওয়ার পরামর্শ প্রদান করেছি সেটি মেনে চললে অবশ্যই লো প্রেসার প্রতিকার করা সম্ভব। প্রিয় পাঠক আপনাদেরকে অশেষ অশেষ ধন্যবাদ আমাদের এই পোস্ট টি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য। যদি লো প্রেসার সম্পর্কে আপনার মনে কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে আমাদের জানাতে পারেন। আমরা অতিসত্বর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব পোস্টটি যথাযথ মনে হলে অবশ্যই একটি শেয়ার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url