কুমড়ার বীজ খাওয়ার নিয়ম ও কুমড়ার বীজের উপকারিতা

কুমড়ার বীজ খাওয়ার নিয়ম ও কুমড়ার বীজের উপকারিতা সম্পর্কে জানার জন্য অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করে। আমাদের সকলের পরিচিত পছন্দের সবজিগুলোর মধ্যে মিষ্টি কুমড়া একটি। মিষ্টি স্বাদের এই সবজিটির যেমন জনপ্রিয়তা রয়েছে ঠিক তেমন এর বীজের অনেক উপকারিতাও রয়েছে যা আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা মিষ্টি কুমড়ার বীজের উপকারিতা সম্পর্কে এবং কুমড়ার বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। অসাধারণ স্বাস্থ্য উপাদানের জন্য এটি একটি সুপার ফুড গুলোর মধ্যে পড়ে এবং কুমড়ার বীজ মূলত দেখতে কিছুটা চ্যাপ্টা ও হলদেটে রঙের বাইরের আবরণ হয়ে থাকে। 
কুমড়ার-বীজ-খাওয়ার-নিয়ম
প্রিয় পাঠক, আপনি যদি কুমড়ার বীজ খাওয়ার নিয়ম, কুমড়ার বীজের উপকারিতা, কুমড়ার বীজ কখন খেতে হয় বা কুমরার বীজ কতটুকু খাওয়া যায় এবং কুমড়ার বীজ খেলে কি ঘুম ভালো হয় এ সকল কিছু জানার জন্য যদি প্রশ্ন করে থাকেন তাহলে আজকের এই পোস্টটি পড়ুন। এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনার কুমড়ার বীজ খাওয়ার নিয়ম ও কুমড়ার বীজের উপকারিতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পেয়ে যাবেন।
পোস্ট সূচীপত্র

মিষ্টি কুমড়ার বীজের উপকারিতা

মিষ্টি কুমড়ার বীজের বিশেষ কিছু উপকারিতা রয়েছে যা আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা। কুমড়ার বীজে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু উপাদান পাওয়া যায় যেমন-প্রোটিন, আয়রন, জিংক, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ও কপার। সুতরাং বলাই বাহুল্য এটি ছোট বীজটি শরীরকে রোগমুক্ত করতে কতটা উপকারী। তাই মিষ্টি কুমড়া বীজের যে সকল উপকারিতা রয়েছে তা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

হাড়ের গঠন সুরক্ষায় কুমড়ার বীজ: মানব দেহের হাড়ের গঠন সুরক্ষা দিতে প্রয়োজন ক্যালসিয়াম যা কেবল খাদ্য থেকেই গ্রহন করতে হয়। কারন এটি শরীরে উৎপাদিত হয় না। এক্ষেত্রে ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরন করতে পারবে কুমড়া বীজ। এতে আরো আছে জিংক ও ম্যাগনেসিয়াম। তাই হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা বা অস্টিওপরোসিস নিরাময় করতে পারে কুমড়ার বীজ।

সুন্দর ঘুম নিশ্চিত করে কুমড়ার বীজ: কুমড়ার বীজ প্রাকৃতিক ঘুমের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এতে আছে ট্রিপটোফ্যান যা সেরোটোনিন নামক নিউরোকেমিক্যাল এ রূপান্তরিত হয়ে গভীর ঘুম নিশ্চিত করে। তাই যাদের অনিয়মিত ঘুমের সমস্যা রয়েছে তারা রোজ এই বীজ খেলে এই সমস্যা থেকে কাটিয়ে উঠতে পারে।

ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী কুমড়ার বীজ: অনেক ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে শর্করার পরিমাণ ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা। কুমড়ার বীজ সুগারের মাত্রাকে কমিয়ে আনে। তাই বিশেষ করে টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর জন্য এটি কার্যকর। এই বীজ প্রচুর পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। এই উপাদানটিই মূলত সুগারের লেভেল নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়ী। একটি গবেষণায়ও এই কথার সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। সেজন্য সুগার নিয়ে চিন্তিত না হয়ে নিয়মিত পরিমানমত কুমড়ার বীজ খাওয়া শুরু করুন।
ওজন কমাতে সহায়তা করে: ছোট এই মিষ্টি কুমড়ার বীজটি আপনাকে অধিক খাদ্য গ্রহন করা থেকে দূরে রাখবে। মূলত কুমড়ার বীজ দীর্ঘক্ষণ পেটে থাকে ফলে ক্ষধার প্রবণতা কমে যায়। ফলে ওজন হ্রাসের প্রক্রিয়াও সহজ হয়।

কুমড়োর বীজ হৃদপিণ্ড রক্ষা করে: আমার দেশে হৃদরোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। লক্ষ লক্ষ মানুষ হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের মতো বিভিন্ন হার্টের সমস্যায় ভোগেন। এই বীজে থাকা ওমেগা-৩, ওমেগা-৬, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার হার্টের জন্য খুবই ভালো। এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণও কমাতে পারে। এটি রক্তচাপও কমাতে পারে। এই সমস্ত আচারের মাধ্যমে, কুমড়ার বীজ হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে রক্ষা করা যেতে পারে।

গর্ভাবস্থায় কুমড়ার বীজ খান: এই বীজ গর্ভাবস্থায় মায়ের জন্য পুষ্টিকর এবং শিশুর জন্যও ভালো। কুমড়ার বীজে থাকা বিটা-ক্যারোটিন ভ্রূণের হার্ট, হাড়, চোখ, কিডনি, ফুসফুস এবং স্নায়ুর বিকাশে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় কুমড়োর বীজকে খুবই উপকারী খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর আয়রন ভ্রূণের শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে। জিঙ্ক এবং ওমেগা-3 মস্তিষ্কের বিকাশ এবং স্নায়ুতন্ত্রকে সহায়তা করে। অতএব, উত্পাদনের পুরো সময় জুড়ে প্রতিদিনের নাস্তার অংশ হিসাবে কুমড়ার বীজ যোগ করা উচিত।

এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে: কুমড়ার বীজ শরীরের প্রদাহের পরিমান কমাতে পারে। এর ক্যারোটিনয়েড ও ভিটামিন ই ভালো এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এটি শরীরের ক্ষতিকারী কোষ গুলোকে জন্মাতে দেয় না। ফলে দেহ রোগমুক্ত থাকে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়: হাজারো মানুষ মারা যাচ্ছে মরণঘাতী ক্যান্সার রোগে। এই রোগের কোন প্রতিষেধক না থাকায় এটি প্রতিরেধ করাই যুক্তিযুক্ত। একটি গবেষনায় জানা যায় কুমড়ার বীজে বিদ্যমান লিগন্যান স্তনের ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এছাড়াও এটি মুত্রথলির ক্যান্সার রোধেও সহায়ক বলে জানা যায়।

ত্বকের যত্নে কুমড়ার বীজ: কুমড়ার বীজের মূল্যবান উপাদানগুলো ত্বকের স্বাস্থ্যে বেশ কার্যকর। এর ভিটামিন এ ও সি ত্বকে কোলাজেনের পরিমান বাড়িয়ে তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের বলিরেখা দূর করে ফলে একে এন্টি এজিং হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। এর বিটা-ক্যারোটিন ও ওমেগা-৩ ত্বকের প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে। তাই স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করে ব্রনের মত সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

চুলের পুষ্টিতে কুমড়ার বীজ: এই অসাধারণ বীজটি আপনার চুলের স্বাভাবিক সৌন্দর্য কে আরো বাড়িয়ে তুলতে এবং চুলের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। চুলের ড্রাইনেস দূর করে চুলকে কোমল ও প্রানবন্ত করে তোলে। চুলের গোড়াকে মজবুত করে চুল পরা কমায়।
উপরে উল্লেখিত, আলোচনায় কুমরার এই ক্ষুদ্র বীজে হাজারো স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। তাই খাদ্য তালিকায় একে সংযুক্ত করা বেশ কঠিন নয়। এই পুষ্টিকর খাদ্যটিকে নিয়মিত খেয়ে এর উপকারিতা গুলো উপভোগ করুন। প্রিয় পাঠক, মিষ্টি কুমড়ার বীজের উপকারিতা সম্পর্কে ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন এখন আরো জানবেন, কুমড়ার বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে এবং কুমড়ার বীজ কখন খেতে হয় বা কুমড়ার বীজ কতটুকু খাওয়া যায় সে সম্পর্কে চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।

কুমড়ার বীজ খাওয়ার নিয়ম

যখন কুমড়ার বীজ খাওয়ার নিয়ম আসে, একজন সুস্থ ব্যক্তি প্রতিদিন 15-20টি কুমড়ার বীজ খেতে পারেন। মিষ্টি কুমড়ার বীজ রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। সালাদে বা তরকারিতে বীজ যোগ করলে খাবারের পুষ্টিগুণ বাড়তে পারে। এ ছাড়া বীজ শুকনো খাবার হিসেবে বা সামান্য তেলে হালকা ভাজা করে সকাল-বিকালের নাস্তা হিসেবে খাওয়া যেতে পারে। আশা করি কুমড়ার বীজ খাওয়ার নিয়ম ও কুমড়ার বীজের উপকারিতা গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন উপরে দেওয়া তথ্যগুলো আপনার উপকারে আসবে।

শেষ কথা-কুমড়ার বীজ খাওয়ার নিয়ম

প্রিয় পাঠক, আমাদের সকলের পরিচিত মিষ্টি কুমড়া এই বীজের অনেক রকমের উপকারিতা রয়েছে যা আমরা খেলে আমাদের শরীরের জন্য অনেক পুষ্টি কর খাদ্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আপনি প্রতিদিন মিষ্টি কুমড়ো বীজ খাওয়ার অভ্যাস করুন তাহলে শরীরের জন্য অনেক উপকারিতা নিয়ে আসবে। আপনি ইতিমধ্যে কুমড়ার বীজ খাওয়ার নিয়ম ও কুমড়ার বীজের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। 

প্রিয় পাঠক, এই পোস্টটি পড়ে আপনার যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অনুরোধ রইলো পোস্টটি বন্ধু-বান্ধবের সাথে ফেসবুকে শেয়ার করবেন। কুমড়ার বীজ খাওয়ার নিয়ম এই পোস্টে কোন মন্তব্য থাকলে নিচে দেওয়া মন্তব্য বক্সে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। আর এমন মজার মজার পোস্ট করতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url