জন্ডিস রোগের লক্ষণ ও জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা জানুন

জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই সঠিক ধারণা নেই। যদি কারো জন্ডিস রোগ হয়ে থাকে তাহলে সেটি প্রতিকারের মূল উপায় হচ্ছে জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা অনুসরণ করা। যদি জন্ডিস রোগী তার খাদ্যাভ্যাস সঠিক নিয়ম অনুযায়ী পালন করে তাহলে জন্ডিস রোগ খুব তাড়াতাড়ি ভালো করা সম্ভব। আজকাল অনেকেরই জন্ডিস মারাত্মক আকারে দেখা দিচ্ছে। তাই সচেতনতার সাথে আমাদের জন্ডিস রোগ থেকে মুক্তি লাভ করতে হবে। আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে জানব। 
জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা
তাছাড়া আপনি এই আর্টিকেলে আরো জানতে পারবেন যে সকল বিষয় তা হল, জন্ডিস হলে কি কি সমস্যা দেখা দেয়, জন্ডিস হলে কি কি খাবার খেতে হবে, জন্ডিস হলে কি কি খাওয়া যাবে না, লিভার জন্ডিস হলে কি খাবে, জন্ডিস হলে কি ঔষধ খাব, জন্ডিস হলে কি স্যালাইন খাওয়া যাবে, বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়, জন্ডিস হলে লেবু খাওয়া যাবে, জন্ডিস হলে কি কি সমস্যা হয়, জন্ডিস হলে কি মানুষ মারা যায় ও জন্ডিস হলে কি কলা খাওয়া যাবে এবং জন্ডিস হলে কি ডাব খাওয়া যায় কিনা এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনি যদি জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্র

ভূমিকা

বিলিরুবিনের মাত্রা যখন বেশি হয়ে যায় তখন মানবদেহের ত্বকের এবং সেকলার এর রং হলুদ বর্ণ লাভ করে। তখন তাকে জন্ডিস বা (icterus) বলা হয়। প্রতিবছর গোটা বিশ্বে ১ লাখেরও বেশি মানুষ লিভার রোগে মারা যায়। সাধারণত লিভারের রোগগুলো হল লিভার সিরোসিস, লিভারের ফোড়া, পিত্ত নালীর রোগ, ফ্যাটি লিভার, লিভার ক্যান্সার উল্লেখযোগ্য। তবে এগুলোর রোগ বাদেও লিভারের আরেকটি রোগ রয়েছে সেটি হলো ভাইরাল হেপাটাইটিস বা জন্ডিস রোগ। জন্ডিস আসলে নিজে কোন রোগ নয়, সাধারণত এটি লিভারের রোগের লক্ষণ। তবে জন্ডিস বলতে লিভারের প্রদাহের কথায় বলা হয়ে থাকে। 

জন্ডিস রোগ পানি ও খাদ্য এর মাধ্যমে ছড়ায় তাছাড়া রক্তের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। শিশুদের হেপাটাইটিস এ ভাইরাসজনিত জন্ডিস হয়ে থাকে। তবে যে কোন বয়সের মানুষের হেপাটাইটিস ই ও বি ভাইরাসের কারণে জন্ডিস হতে পারে। আর জন্ডিস মোকাবেলার জন্য তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করার আগে অবশ্যই জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে এবং সে অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করলে জন্ডিস রোগ ভালো করা সম্ভব।

জন্ডিস হলে কি কি সমস্যা দেখা দেয়

আমরা কোন রোগের চিকিৎসার জন্য প্রথমে রোগ নির্ণয় করে থাকি সেজন্য আমাদের প্রথমে জন্ডিস হলে কি কি সমস্যা দেখা দেয় এ বিষয়টি জানা জরুরী। কারণ আমরা যদি সমস্যা চিহ্নিত করার মাধ্যমে বুঝতে পারি যে আমাদের জন্ডিস হয়েছে তাহলে সে অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ অথবা কোন কোন খাবার গুলো খেলে জন্ডিস রোগ বাড়বে না সে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি। জন্ডিস রোগের কারণে লিভারের কর্ম ক্ষমতা হ্রাস পায়।
আরো পড়ুনঃ  আমাদের বমি হলে কি খাবার খাওয়া উচিত জানা জরুরি
আবার পিত্তথলি ট্রাকের বাধা জড়িত কারণে অন্তর্নিহিত রোগের উপস্থিতি নির্দেশ করে। আমরা শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেখতে পাই না। সে কারণে আমাদের বাহিরের কিছু উপসর্গ অর্থাৎ শারীরিক সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার মাধ্যমে যেকোনো রোগ নির্ণয় করতে পারি। ঠিক তেমনি জন্ডিস রোগের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে ধারণা থাকলে জন্ডিস রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। নিচে জন্ডিস রোগের লক্ষণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

জন্ডিস রোগের লক্ষণ

আমরা যদি জন্ডিস রোগের লক্ষণ গুলো ভালোভাবে বুঝতে পারি। তাহলে জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে এবং সঠিক চিকিৎসা নেওয়ার মাধ্যমে জন্ডিস রোগ ভালো করতে পারি। আমরা উপরে জেনেছি যে জন্ডিস রোগ দুই ভাবে হয়ে থাকে। পানি ও খাদ্যের মাধ্যমে এবং রক্তের মাধ্যমে তাছাড়া হেপাটাইটিস এ, বি এবং ই এই তিন ধরনের ভাইরাস দ্বারা জন্ডিস হয়ে থাকে। তবে তিন ধরনের ভাইরাসের আক্রান্ত রোগীর লক্ষণগুলো অর্থাৎ সব ধরনের জন্ডিস রোগের লক্ষণ গুলো একই রকম হয়। 

তবে ধারণা করা হয় প্রাথমিক অবস্থায় এবং কারো কারো ক্ষেত্রে জন্ডিস রোগের লক্ষণ গুলো সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ পায় না। তবে কোন লক্ষণ গুলো প্রকাশের মাধ্যমে জন্ডিস পরিলক্ষিত হয় সেগুলো নিচে পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হলো।
  • প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে সাধারণ লক্ষণ হল চোখের সাদা অংশ হলুদ ভাব ধারণ করা।
  • প্রস্রাব এর রং হলুদ হয়ে যায়।
  • অনেকের ত্বকে জ্বালাপোড়া অথবা চুলকানি দেখা দিতে পারে এবং পাশাপাশি ত্বকের রং হলুদ বর্ণ ধারণ করে।
  • শৈশবকালে জন্ডিসের একটি সাধারণ লক্ষণ হল দাঁত সবুজ অথবা হলুদ হয়ে যাওয়া।
  • তবে প্রাপ্ত বয়স্কদের লিভার জন্ডিস হলে দাঁতের রংয়ের কোনো পরিবর্তন হয় না। শুধুমাত্র চোখের অংশ এবং ত্বক হলুদ বর্ণ ধারণ করে।
  • খাবারে অরুচি আসে এবং বমি বমি ভাব হতে পারে।
  • শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং কাজে মনোযোগ হারিয়ে ফেলে।
  • কারো কারো পেট খারাপ হয় এবং পেটের নিচের অংশে ব্যাথা হতে পারে।
  • মাঝে মাঝে জ্বর হয় এবং মাথা ব্যথা করে।
  • আবার কারো কারো ক্ষেত্রে মলের রং মেটে কালার ধারণ করে।
উপরোক্ত লক্ষণ গুলো যদি আপনার মধ্যে প্রকাশ পায় তাহলে বুঝতে হবে আপনি জন্ডিস রোগে আক্রান্ত। লক্ষণগুলো বুঝার পর অবশ্যই জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ অর্থাৎ জন্ডিস হলে কি কি খাবার খেতে হবে এ বিষয়টি সম্পর্কে জানাটা খুবই জরুরী। জন্ডিস রোগীর খাবার সম্পর্কে জানার পর উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করলে জন্ডিস রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। জন্ডিস রোগ কোন সাধারণ রোগ নয়, জন্ডিসের কারণে মানুষের লিভার এর কার্যকমতা নষ্ট হয় এমনকি লিভার নষ্ট পর্যন্ত হতে পারে যার কারণে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

জন্ডিস হলে কি কি খাবার খেতে হবে?

পাঠকগণ আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি জন্ডিস রোগটি আসলে কি এবং কি কারনে হয়ে থাকে। জন্ডিস যকৃত বা লিভারের প্রদাহ সৃষ্টির জন্য দায়ী। তবে জন্ডিস কোন রোগ নয় বরং আপনার লিভার জাতীয় রোগের লক্ষণ। জন্ডিস হলে কি কি খাবার খেতে হবে এ বিষয়টি আমাদেরকে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করে। কারণ জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা এর সঠিক অনুসরণের মাধ্যমেই জন্ডিস রোগ থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। 
আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেসব খাবার খেলে লিভার অথবা পিত্তথলিতে খুব বেশি চাপ না পরে এবং পাশাপাশি সঠিক পুষ্টি এবং প্রোটিন পাওয়া যায়। আসুন নিচে পর্দায়ক্রমে জন্ডিস রোগীর খাবারগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার

জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা তে অবশ্যই কার্বোহাইড সমৃদ্ধ খাবার রাখা উচিত। কার্বোহাইড্রেট শরীরের শক্তি বৃদ্ধিতে কাজ করে। জন্ডিস রোগীরা সাধারণত দুর্বল হয়ে পড়েন আর এ কারণে সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জন্ডিস রোগীর জন্য অতীবও জরুরী। কার্বোহাইড্রেট খাবারের গুলো মধ্যে রয়েছে রুটি, নরম ভাত, ওটস ইত্যাদি এই খাবারগুলো গ্রহনের মাধ্যমে শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন গুলো বের করে দেয়। পাশাপাশি আঁশযুক্ত খাবার হওয়ার কারণে জন্ডিস রোগীর হজম ভালোভাবে হয় এবং পেট সম্পূর্ণ পরিষ্কার থাকে।

পানি পান করা

আমরা সকলে জানি পানির অপর নাম জীবন। আর জন্ডিস রোগীর ক্ষেত্রে পানির গুরুত্ব অপরিহার্য। যেহেতু জন্ডিস রোগ লিভারের বড় ধরনের রোগের লক্ষণ তাই লিভারকে বাঁচানোর জন্য অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। পাশাপাশি বেশি বেশি পানি পান করলে খাবার খুব তাড়াতাড়ি হজম হবে এবং লিভারের মাধ্যমে দূষিত বর্জ্য পদার্থগুলো অপসারণের জন্য সাহায্য করবে। তাছাড়া বেশি বেশি পানি পান করা কিডনির জন্য খুবই ভালো। তাই জন্ডিস রোগীর ক্ষেত্রে অবশ্যই দিনে কমপক্ষে দুই লিটার পানি পান করা উচিত।

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার

জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা তে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারগুলো অবশ্যই রাখা উচিত। কার্বোহাইড্রেট যেমন শরীরের শক্তি যোগায় পাশাপাশি প্রোটিন ও শরীরের জন্য শক্তি বৃদ্ধি করে। জন্ডিস রোগীরা শারীরিকভাবে অনেক দুর্বল হয়ে পড়েন। তাই তাদের প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে। অনেকের ধারণা জন্ডিস রোগীদের মাছ অথবা মাংস জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত নয় কিন্তু ডাক্তারদের মতে, এ সময় মাছ-মাংস জন্ডিস রোগীদের জন্য খাওয়া বাধ্যতামূলক। তবে জন্ডিস হলে দুধ, দই কিংবা পনির জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত নয়। এতে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড থাকার কারণে লিভারের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।

শাকসবজি এবং ফল

শাকসবজি তে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকার কারণে খুব সহজেই সেগুলো হজম হয়ে যায়। আর জন্ডিস রোগীর ক্ষেত্রে হজম প্রক্রিয়াটা ভালোভাবে হওয়াটা খুবই জরুরী। কেননা দ্রুত হজম হলে যকৃতে এবং পিত্তথলিতে কোনরকম চাপ পড়ে না। তাই সিজনাল শাকসবজি গুলো অবশ্যই জন্ডিস রোগীকে খেতে দিতে হবে। পাশাপাশি জন্ডিস হলে তাজা ফল যেমন পেঁপে, তরমুজ, আনারস, পাকা পেয়ারা, কলা, কমলা, আঙ্গুর, জলপাই ইত্যাদি ফলগুলো হাতের নাগালে সব সময় পাওয়া যাবে তাই প্রতিদিন জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা তে ফল রাখা উচিত।

অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার গুলো শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শরীরের পানির যে ঘাটতি সেটি পূরণ করে। লেবু কিংবা বাতাবি লেবুর শরবত জন্ডিস রোগের জন্য খুবই উপকারী। আবার জন্ডিস রোগীকে আখের রস খাওয়ানো যেতে পারে। আখের রস খেলে জন্ডিস রোগ দ্রুত সেরে যায়। এছাড়াও আদার রস দৈনিক খাওয়া যেতে পারে এগুলো যকৃতের জন্য খুবই ভালো।

জন্ডিস হলে কি কি খাওয়া যাবে না

আমরা এতক্ষন ধরে জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা অর্থাৎ জন্ডিস হলে কি কি খাবার খেতে হবে সে বিষয়গুলো সম্পর্কে জানলাম। সঠিক খাদ্য গ্রহণের পাশাপাশি আমাদের এটাও জানতে হবে যে জন্ডিস হলে কি কি খাওয়া যাবেনা। এমন কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলো খাওয়ার মাধ্যমে জন্ডিস রোগী আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে। এমনকি তার জন্ডিস রোগটি ভালো হতে চায় না। যে কোন রোগের ক্ষেত্রে নিজেদের সচেতনতাই রোগ মুক্তির মূল বিষয়বস্তু। আসুন তাহলে আমাদের জন্ডিস হলে কোন কোন খাবার গুলো পরিহার করতে হবে সেগুলো জেনে নিই। নিচে পয়েন্ট আকারে জন্ডিস হলে কি কি খাওয়া যাবে না সেটি উল্লেখ করা হলো।
  • চিনি বা অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার জন্ডিস রোগীর জন্য খাওয়া বারণ।
  • অতিরিক্ত তেল মশলা দিয়ে রান্না করা খাবার এবং কাঁচা লবন খাওয়া যাবে না।
  • বাজারের এনার্জি ডিমগুলো পান করা যাবে না।
  • প্যাকেট জাতীয় মাংস বা টিন জাতীয় খাবার গুলো পরিহার করতে হবে। কারণ প্যাকেট জাম খাবারগুলোতে প্রিজারভেটিভ দেওয়া থাকে যা জন্ডিস রোগীর জন্য খুবই ক্ষতিকর।
  • রেড মিট যদিও ডাক্তারের মতে প্রোটিন জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা তে রাখতে হবে। আমরা প্রোটিনের উৎস খোঁজার জন্য সর্বপ্রথম যেটি ভেবে থাকি সেটি হল মাংস। তবে রেড মিট অর্থাৎ লাল মাংস যেমন গরু অথবা ছাগলের মাংস খাওয়া যাবেনা। শুধুমাত্র মুরগি মাংস খাওয়া যাবে এবং মুরগির মাংসের প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়।
  • এছাড়াও মদ্যপান, ধূমপান বা অন্যান্য নেশা জাতীয় দ্রব্য পরিহার করে চলতে হবে। কারণ এইসব নেশা জাতীয় জিনিসগুলো লিভার নষ্ট করে দেয়। তাই জন্ডিস রোগীদের ক্ষেত্রে এগুলো অবশ্যই পরিহার করা বাধ্যতামূলক।

জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা

পাঠকগণ আমরা উপরে জন্ডিস রোগে কি কি খাবার খেতে হবে জন্ডিস রোগের লক্ষণ বিষয়গুলো আলোচনা করে ফেলেছি। তবে আপনাদের সুবিধার্থে আমরা জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা এর একটি সুষম চার্ট এখানে উপস্থাপন করছি। যার মাধ্যমে আশা করি আপনারা সঠিক ধারণাটি পাবেন এবং সে অনুযায়ী অনুসরণের মাধ্যমে জন্ডিস রোগকে মোকাবেলা করতে পারবেন। আমরা এখানে জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা তে একদিনে একজন জন্ডিস রোগী কোন কোন ধরনের খাবার খাবেন তা স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরেছি।

সকালের খাবার

দুপুরের খাবার

বিকালের হালকা নাস্তা

রাতের খাবার 

এক কাপ পাতলা দুধ অথবা সুজি 

মাছ অথবা মুরগির মাংস তবে তেল মসলা কম

ফল অথবা ফলের রস

মাছ অথবা মুরগি (মসলা কম দিয়ে রান্না করা) একপিস

একটি পাকা কলা 

সামান্য পরিমাণে নরম ভাত 

বিস্কুট অথবা মুড়ি

রুটি অথবা অল্প পরিমাণে নরম ভাত 

২ পিস পাউরুটি ও এক কাপ চা 

পরিমান মত সবজি এবং সঙ্গে ডাল


পরিমাণ মত সবজি, ঘুমানোর আগে কোন পানীয় অথবা শরবত 

আশা করি পাঠক বৃন্দ উপরে বর্ণিত জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা যদি কেউ বরাবর অনুসরণ করে তাহলে জন্ডিস রোগ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।

লিভার জন্ডিস হলে কি খাবে

উপরে বর্ণিত খাবারগুলোই সাধারণত জন্ডিস রোগীর খাবার। আবার অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে যে লিভার জন্ডিস হলে কি খাবে। আসলে আমরা জেনেছি জন্ডিস সাধারণত লিভারের একটি রোগের লক্ষণ মাত্র অর্থাৎ উপরে বর্ণনা করা খাবারগুলো লিভার জন্ডিস এর জন্য উপযুক্ত। লিভার জন্যে সংক্রান্ত রোগী প্রতিদিন দুই লিটার পানি পান করবে। তাছাড়া লিভারের কার্যক্রম নষ্ট হওয়ার ফলে খাবার ঠিকমতো হজম হয় না। 

তাই ফাইবারযুক্ত খাবার এবং পাকা ফল যেমন কমলা, লেবু, আনারস, পেঁপে, আম জাম এগুলো খেতে পারেন। কোনরকম মদ্যপান, ধূমপান বা নেশা জাতীয় জিনিস থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে পর্যাপ্ত পরিমান বিশ্রাম নিতে হবে।

জন্ডিস হলে কি ঔষধ খাব

খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের পাশাপাশি জন্ডিস হলে কি ওষুধ খাব এ বিষয়টিও জানা উচিত। আসলে জন্ডিসের জন্য সেরকম কোন ওষুধের কথা উল্লেখ নেই। জন্ডিসের প্রধান ওষুধ হল বিশ্রাম। পাশাপাশি সুষম খাবার গ্রহণ করা। তবে কেউ যদি চায় তাহলে অবশ্যই সে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারে। তবে প্রাথমিক অবস্থায় জন্ডিসের লক্ষণ যদি বুঝা যায় তাহলে জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা ফলোআপের মাধ্যমে জন্ডিস রোগ অনেকটাই সারানো সম্ভব। আবার অনেকে জন্ডিস হলে কি স্যালাইন খাওয়া যাবে এটি নিয়ে কনফিউশনের মধ্যে পড়েন। 
আসলে শরীরের পানি শূন্যতার জন্য খাবার স্যালাইনের গুরুত্ব অপরিসীম। আর যেহেতু জন্ডিস রোগীদেরও পানি শূন্যতা দেখা দেয় তাই স্যালাইন খাওয়া যেতেই পারে। স্যালাইন খেলে কোনরকম ক্ষতি নেই। ঠিক তেমনি ভুল ধারণা বসত অনেকে মনে করেন জন্ডিস হলে কি কলা খাওয়া যাবে, জন্ডিস হলে কি ডাব খাওয়া যায়? আমরা এই আর্টিকেলের সর্বপ্রথম যে বিষয়টি আপনাদেরকে জানিয়েছি সেটি হল যে কোন রোগের ক্ষেত্রে ডাবের পানির উপকারিতা অপরিসীম। তাছাড়া জন্ডিস রোগীর পানি শূন্যতা দূর করার জন্য অবশ্যই ডাবের পানি পান করা যাবে। 

এমনকি প্রতিদিন একটি করে ডাবের পানি এবং আখের রস জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা তে রাখতে হবে। তাছাড়া পাকা কলাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে যা লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই জন্ডিস রোগীকে কলা খেতে দিতে হবে।

বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়

আমাদের সুস্থ সবল একজন মানুষের রক্তে বিলিরুবিনের ঘনত্ব 1.2 mg/dl এর নিচে থাকে। ( 25 µmol/L এর নিচে) কিন্তু যখন বিলিরুবিনের ঘনত্ব 3 mg/dl এর বেশি হয়ে যায় (50 µmol/L এর বেশি হয়ে যায়) তখন তাকে জন্ডিস হিসেবে ধরা হয়।

লেখকের শেষ কথা

প্রিয় পাঠক বৃন্দ আজকে আমরা একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ রোগ সম্পর্কে আলোচনা সম্পূর্ণ করেছি। আশা করি এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা জেনেছি যে জন্ডিস রোগ আসলে কি, জন্ডিস রোগের লক্ষণ এবং কিভাবে এর প্রতিকার করা যায় সেটি সম্পর্কে। পাঠকগণ আমরা এখানে যে তথ্যগুলো প্রদান করেছি অর্থাৎ আমাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা কেউ যদি ভালোভাবে অনুসরণ করে তাহলে আমরা আশা ব্যক্ত করি যে জন্ডিস রোগ ভালো হয়ে যাবে। কেননা জন্ডিস রোগের সেভাবে সরাসরি কোন ঔষধ নেই। 

তারপরও আমরা তথ্যগুলো উইকিপিডিয়া এবং বিভিন্ন অফিসিয়াল চিকিৎসা বিষয়ক ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করেছি। যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য। আমরা সবসময়ই আমাদের আর্টিকেলে বিভিন্ন রকম গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো দিয়ে থাকি। তাই আপনার প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো জানার জন্য অবশ্যই আমাদের এই ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। আপনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য। 

আর জন্ডিস বিষয়ে আপনার যদি কোন মন্তব্য থেকে থাকে তাহলে আমাদের মন্তব্য বক্সে আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি পেশ করুন। পোস্টটি যদি আপনার কাছে যথাযথ মনে হয় তাহলে পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন আপনার একটি শেয়ার আমাদের কাছে একটি অনুপ্রেরণা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url