ডেঙ্গু রোগীর খাবার চার্ট ও ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ
ডেঙ্গু রোগীর খাবার চাট সম্পর্কে ধারণা থাকাটা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশেষ জরুরি। কারণ প্রতিবছর সারা দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ডেঙ্গু রোগ মাঝে মাঝে করোনা চাইতেও মারাত্মকভাবে প্রাদুরভাব ছড়ায়। তাই একজন ডেঙ্গু রোগীর প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে তার খাবার তালিকা ঠিক করা। তাই ডেঙ্গু রোগীর খাবার চার্ট সম্পর্কে অবশ্যই সম্পূর্ণ ধারণা থাকতে হবে। আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা ডেঙ্গু রোগীর খাবার চার্ট এবং কিভাবে একজন ডেঙ্গু রোগীর সেবা যত্ন করতে হয় সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
তাছাড়া এই পোস্টে আরো আলোচনা করব যে সকল বিষয় তা হল ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা, ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, ডেঙ্গু রোগীর ফল, ডেঙ্গু রোগীর সেবা তালিকা এবং ডেঙ্গু রোগীর খাবার চাট সম্পর্কে বিস্তারিত। প্রিয় পাঠক বৃন্দ আপনার কাছে অনুরোধ থাকবে আর্টিকেলটি অবশ্যই মনে সহকারে পড়বেন আজকের এই তথ্যগুলো আপনার জানা থাকলে যদি কোনদিন আপনি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হন তাহলে অবশ্যই কাজে দিবে।
পোস্ট সূচিপত্র
ভূমিকা
ডেঙ্গু সাধারণত একটি ভাইরাসজনিত রোগ। ডেঙ্গু রোগের ভাইরাস চার ধরনের সেরোটাইপ (serotype) থাকে। ডেঙ্গু রোগের বাহক সাধারণত এডিস মশা ডেঙ্গু ভাইরাস মানব দেহে এডিস মশার মাধ্যমে সংক্রমিত হয়ে থাকে। ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ করার জন্য শরীরে রোগ প্রতিরোধ তৈরি করতে হয়। আর রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন সুষম খাবার তালিকা। ডেঙ্গু রোগীর খাবার চার্ট এ অবশ্যই প্রোটিন ও আয়রন সমৃদ্ধ খাবার থাকতে হবে। কেননা কঠিন এবং আয়রন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
ডেঙ্গু রোগীর জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয়টি হলো শরীরের প্লাটিলেট কমে যাওয়া। একজন সুস্থ মানুষের শরীরে প্লাটিলেটের সংখ্যা থাকে দেড় লক্ষ্য থেকে চার লক্ষ। কিন্তু ডেঙ্গু ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর দেহে প্লাটিলেটের এর সংখ্যা অনেক কমে যায় যার কারণে রোগীর শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্ষীন হয়ে যায়।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ বিভিন্নভাবে উপলব্ধি করা যায়। মশা কামড়ানোর চার থেকে দশ দিনের মধ্যে রোগীর জ্বর চলে আসে এবং তার সাথে ডেঙ্গু ভাইরাস দেহে বংশবিস্তার লাভ করে রোগের সৃষ্টি করে। বছরের সাধারণত জুন জুলাই মাস থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু ব্যাপক হারে দেখা যায়। চলুন ডেঙ্গু রোগীর খাবার চার্ট জানার আগে ডেঙ্গু রোগীর কি ধরনের লক্ষণ প্রতিফলিত হয় তা জেনে নিই। ডেঙ্গু রোগের লক্ষণগুলো নিচে পয়েন্ট আকারে দেয়া হলো।
- হঠাৎ শরীরে জ্বর চলে আসা।
- মাথা ব্যথা ও চোখ ব্যথা।
- সূর্যের আলো বা বৈদ্যুতিক আলোতে অস্বস্তি।
- দেহের প্রত্যেকটি জয়েন্টে ব্যথা।
- খাবারে অরুচি।
- শরীর অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়া।
- মাঝে মাঝে বমি হওয়া।
- অনেক সময় ত্বকে ছোট ছোট ফোসকা উঠতে পারে
তবে অনেক সময় রোগীর বমির সঙ্গে ডায়রিয়া অথবা পেট ব্যথা দেখা দেয়। আবার হেমো রেজিক ধরনের ডেঙ্গু রোগীর নাক দিয়ে বমির সাথে এমন কি পায়ুপথে রক্তক্ষরণ হতে পারে। আর এ ধরনের রক্তক্ষরণজনিত কারণে শরীরে প্লাটিলেটের মাত্রা দ্রুত কমে যায়। আর এর ফলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই উপরে বর্ণিত লক্ষণগুলো যদি পরিলক্ষিত হয় তাহলে দেরি না করে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে এবং রক্ত পরীক্ষা করতে হবে।
ডেঙ্গুর রোগীর লক্ষণ একেকজনের ক্ষেত্রে এক এক রকম হয়। তাই শরীরে হালকা জ্বর থাকে এবং পেটব্যথা হয়। অন্যান্য উপসর্গ দেখা যায় না তবুও ডেঙ্গু টেস্ট করলে ফলাফল পজেটিভ আসে। রক্ত টেস্ট করার জন্য স্যাম্পল দেওয়ার পর ডেঙ্গু টেস্ট রিপোর্ট আসতে একদিন থেকে দুই দিন সময় লাগে।
ডেঙ্গু রোগীর খাদ্য তালিকা
ডেঙ্গু রোগীর খাদ্য চার্ট অথবা খাদ্য তালিকা এমনভাবে সাজানো উচিত যেন ডেঙ্গু ভাইরাস আক্রান্ত রোগীটি প্রোটিন এবং আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গুলো পায়। যার মাধ্যমে তার প্লাল্টিলেটের নেমে যাওয়া স্তরকে পূর্ণ করা যায়। আসুন নিম্নে ডেঙ্গু রোগীর খাদ্য চার্ট টি পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হলো।
পানি ও তরল জাতীয় খাদ্য
ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার কারণে রোগীর শরীর সাধারণ তাপমাত্রা থেকে অনেক বেশি হয়ে যায়। তাই এ সময় রোগীর শরীরে প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবারের প্রয়োজন হয়। ডাক্তারদের মতে, একজন ডেঙ্গু রোগীর দৈনিক তিন লিটার অথবা কমপক্ষে ১২ ক্লাস পানি পান করতে হয়। পানি খাওয়ার পাশাপাশি একজন ডেঙ্গু রোগীর বিভিন্ন রকমের ফল খেতে হবে। ফল যদি খেতে না চায় তাহলে ফলের রস খেতে হবে। যেমন আম, মালটা, লেবু, বেদানা, আপেল অথবা আনারস।
প্রোটিন ও শর্করা জাতীয় খাবার
ডেঙ্গু রোগীর খাবার চার্ট অনুযায়ী রোগীর জন্য প্রোটিন ও শর্করা জাতীয় খাবারের ভূমিকা অপরিসীম। যদিও এই সময়টাতে রোগীর খুব একটা খাবার রুচি থাকে না তার পরেও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য অবশ্যই প্রোটিন ও সরকার জাতীয় খাবার খেতে হবে। প্রোটিন ও সকালে তো খাবারের তালিকা রয়েছে ভাত, মাছ, ডাল, ডিম এবং মাংস হবে। কারো যদি বদহজম বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে ডিমের কুসুম না খাওয়াই ভালো।
পাতলা ঝোল জাতীয় খাবার
এই সময়টাতে কোনভাবেই তেল অথবা বেশি মসলা জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। তরকারিতে পাতলা ঝোল রাখতে হবে মাছ অথবা মাংস রান্না করলে খেয়াল রাখতে হবে যেন সেখানে পাতলা ঝোল থাকে। মাংসের ভুনা অথবা মাছের ভুনা খাওয়া যাবে না। বাহিরের কোনরকম খাবার অথবা জাঙ্ক ফুড খাওয়া যাবেনা।
স্যুপ জাতীয় খাবার
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে সুপ খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই একজন ডেঙ্গু রোগীর খাবার চার্ট এ স্যুপ রাখতে হবে। ডেঙ্গু রোগী টমেটোর স্যুপ, ভেজিটেবল স্যুপ, চিকেন স্যুপ, কর্ন স্যুপ খেতে পারবে। তাছাড়া নিয়মিত খাবারগুলো খাওয়ার পাশাপাশি অবশ্যই রোগীকে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম গ্রহণ করতে হবে। জ্বর থাকাকালীন অবস্থায় শরীর অত্যন্ত দুর্বল থাকে। তাই এ সময় ভারী কোন কাজ বা মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম করা যাবে না তবে স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজকর্ম বা হাঁটাচলা করতে পারবে।
ডেঙ্গু রোগীর ফল
ডেঙ্গু রোগীর খাবার চার্ট অথবা খাবার তালিকা তে অবশ্যই রক্তে প্লাটিলেট বৃদ্ধি করে এরকম খাবারগুলো অবশ্যই রাখতে হবে। কেননা আমরা পূর্বেই জেনেছি ডেঙ্গু ভাইরাস শরীরের প্লাটিলেট এর সংখ্যা কমিয়ে ফেলে। তাই পাঠকগণ আসুন এবার আমরা জেনে নিই কোন খাবারগুলো বা ডেঙ্গু রোগীর ফল খেলে রক্তে প্লাটিলেট এর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। নিচে পর্যায়ক্রমে খাবারগুলো আলোচনা করা হলো।
পেঁপে
ডেঙ্গু রোগীর জন্য কাঁচা পেঁপে সবজি হিসেবে খাওয়া অতীব জরুরি। তাছাড়া পেপে পাতার রস খেলে দ্রুত রক্তে প্লাটিলেট এর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তবে যদি কোন গর্ভবতী মায়ের অথবা কোন শিশুর ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে তাহলে পেপে পাতা রস কিংবা পেঁপে খেতে নিষেধ।
বেদানা
যেহেতু এই সময়টাতে রোগী প্রচুর দুর্বলতা অনুভব করেন তাই দেহকে সবল করতে বেদনার রস খাওয়া খুব জরুরী। তাছাড়া বেদনায় আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেলস যা রোগীর দেহকে সবল করতে বেদানা খুব উপকারী একটা ফল। তাই ডেঙ্গু রোগীর খাবার চার্ট এ বেদানাকে অবশ্যই রাখা উচিত।
ব্রকলি
ব্রকলি ডেঙ্গু রোগের জন্য একটি আশীর্বাদ স্বরূপ। সবজি কেননা ব্রকলি রক্তে খুব দ্রুততার সঙ্গে প্ল্যাটিলেট এর সংখ্যা বাড়ায়। তবে মনে রাখা উচিত ব্রকলির সবজি রান্না করার সময় কোনভাবেই অতিরিক্ত মসলা ব্যবহার করা যাবে না। সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ব্রকলিকে হালকা সিদ্ধ করে রোগীকে খাওয়ানো।
ডেঙ্গু রোগীর সেবা তালিকা
প্রিয় পাঠক বৃন্দ এ পর্যন্ত আপনাদেরকে ডেঙ্গু রোগের সম্পর্কে বিস্তারিত বলার চেষ্টা করেছি এবং তার সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীর কোন কোন ধরনের খাবার খাওয়া প্রয়োজন সেটাও বলেছি। আপনাদের সুবিধার্থে নিচে ডেঙ্গু রোগীর খাবার চার্ট এবং কোন কোন ফল খাওয়া উচিত (সকাল থেকে রাত পর্যন্ত) সেই সম্পর্কে তালিকা আকারে দেওয়া হল।
সকালের খাবার
- সকাল (৮-৯) এর মধ্যে
- পাউরুটির নরম অংশ দুই টুকরা সঙ্গে দুধ
- ফুল ডিম সিদ্ধ একটি
- একটি পাকা কলা
সকাল (১১-১১.৩০) এর মধ্যে
- বেদানার রস এক গ্লাস
- একটি ছোট আপেল
দুপুরের খাবার
- অল্প পরিমাণে নরম ভাত ও সাথে ডাল
- ভালোভাবে সিদ্ধ করা সবজি এবং সেটা তেল মশলা ছাড়া হতে হবে
- বাস অথবা মাংসের পাতলা ঝোল
বিকেলের খাবার
- সামান্য তেল মসলা দিয়ে রান্না করা চিকেন স্যুপ অথবা ভেজিটেবল স্যুপ
রাতের খাবার
- অল্প পরিমাণে নরম ভাত ও সাথে ডাল
- অল্প পরিমাণে সবজি
- মাছ অথবা মাংসের পাতলা ঝোল
উপরে বর্ণিত খাবারগুলো অবশ্যই ডেঙ্গু রোগীর খাবার চার্ট এ রাখতে হবে এবং নিয়ম অনুসারে খাওয়াতে হবে। তাছাড়া ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে করণীয় বিষয় হচ্ছে আমাদের সবার সচেতন হওয়া। আমাদের নিজেদের বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং অবশ্যই খেয়াল রাখা জরুরি যেন কোথাও কোন ভাবে পানি জমে না থাকে। কারণ বদ্ধ পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে তাই আমরা যদি সব কিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ভাবে রাখি তাহলে এডিস মশা বংশবিস্তার করতে পারবে না।
প্রিয় পাঠকগণ উপরে দাখিল করা তথ্যগুলো আমরা বিভিন্ন অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং উইকিপিডিয়া থেকে সংগ্রহ করেছি। আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে উপরে বর্ণিত যেকোন রকম লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই খুব দ্রুততার সঙ্গে ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন এবং আমাদের দেওয়া খাবারের তালিকা অনুযায়ী ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে পরিচালনা করবেন। আশা করি অতি দ্রুত ডেঙ্গু রোগী সুস্থ হয়ে যাবে।
শেষ কথা
আমরা আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে একটি ভয়ঙ্কর মহামারি রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আশা করি আমাদের দেওয়া ডেঙ্গু রোগীর খাবার চার্ট অনুযায়ী কোন রোগীকে যদি পরিচালনা করা হয় তাহলে অবশ্যই ভালো ফল পাওয়া যাবে। পরিশেষে আপনাদের সকলের সুস্থতাই আমাদের কাম্য। আপনাদেরকে অশেষ ধন্যবাদ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য। ডেঙ্গু রোগ সম্পর্কে আপনাদের যদি কোন কিছু আরও জানার থাকে তাহলে আমাদের মন্তব্য বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব ডেঙ্গু রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই পোষ্টটি শেয়ার করতে পারেন। আপনার একটি শেয়ারের মাধ্যমে একটি জীবন বাঁচতে পারে সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url