ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা ও ক্রেডিট কার্ড খরচ

ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা জানতে হলে আপনি এই পোস্টটি পড়ুন। আমাদের দৈনিক লেনদেনের ক্ষেত্রে আমরা সকলেই ব্যাংক একাউন্ট ব্যবহার করে থাকি এবং নানা প্রয়োজনে ব্যাংকে জমানোকৃত টাকা উত্তোলন করার জন্য চেক এর মাধ্যমে ব্যাংকে প্রবেশ করে টাকা উত্তোলন করতে হয়। অনেক সময় দেখা যায় যে ব্যাংকে কোন কারনে টাকা থাকে না। সে ক্ষেত্রে আপনার কাছে যদি একটি ক্রেডিট কার্ড থেকে থাকে তাহলে আপনি খুব সহজেই অনলাইন থেকে বা শপিং কমপ্লেক্স থেকে কেনাকাটা করে ফেলতে পারেন।
ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা
সেজন্য আজকের এই পোস্টটিতে আপনি জানতে পারবেন ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা বা ক্রেডিট কার্ড তৈরি করতে কি কি লাগে। তাছাড়া আপনি এই পোস্টটিতে আরো জানতে পারবেন ক্রেডিট কার্ড কি, ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা, ক্রেডিট কার্ড করতে কত টাকা লাগে, ক্রেডিট কার্ড কত প্রকার কি কি ও ক্রেডিট কার্ড খরচ এবং ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাই বন্ধুরা ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা জানতে হলে পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্র

ক্রেডিট কার্ড কি ও ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা

ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা জানার আগে আমাদের জানা জরুরী ক্রেডিট কার্ড কি এ সম্পর্কে। ক্রেডিট কার্ড হলো ব্যাংক কর্তৃক বা কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দেওয়া একটি কার্ড। প্লাস্টিক বা মেটালের তৈরি এই কার্ডটি দিয়ে আপনি যেকোনো সময় অনলাইনে বিভিন্ন কেনাকাটা করার জন্য এই কার্ডটি ব্যবহার করে সহজে পেমেন্ট করতে পারবেন। বর্তমানে সকল ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা করে দিয়েছে। তবে যে কেউ ব্যাংক থেকে বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রেডিট কার্ড নিতে পারবেন না। 
এর জন্য কিছু বিশেষ যোগ্যতা রয়েছে সে যোগ্যতা গুলো পূরণ থাকলে কেবলমাত্র আপনি সে ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। আপনি যদি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে আর্থিক সচ্ছলতা দেখাতে পারেন তাহলে ব্যাংক কর্তৃক আপনাকে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা দিবেন। তাছাড়া আপনি এই পোষ্টে জানতে পারবেন ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে তার আগে আমরা জানবো ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা গুলো কি কি।

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের অনেক সুবিধা রয়েছে এবং অসুবিধাও রয়েছে যা বলে শেষ করা যাবে না। তবে এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা সমূহ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো।

দ্রুত লেনদেন: আপনি যদি অনলাইন থেকে দামি কোন প্রোডাক্ট কিনতে চান এক্ষেত্রে আপনার কাছে যদি টাকা না থাকে তাহলে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে অনলাইন থেকে পণ্যটি কিনে ফেলতে পারবেন। আপনি এর মাধ্যমে পণ্যটি ক্রয় করে কয়েক মাস ধরে ক্রেডিট কার্ডের ঋণ পরিশোধ করতে পারেন। এতে করে ক্রেডিট কার্ডের ঋণ খুব বেশি মনে হয় না। তবে মনে রাখবেন ক্রেডিট কার্ডের মেয়াদ অনুযায়ী সে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। তাছাড়া সঠিক টাইমে ঋণ পরিশোধ না করলে আপনাকে জরিপানা দিতে হতে পারে।

ঋণের সুবিধা: কিছু ক্রেডিট কার্ড রয়েছে বিশেষ করে দেশের বাইরে শূন্য শতাংশ সুদের ঋণ দেয়। তাই এসবের কারণে নির্দিষ্ট পরিমাণ মূল্য পরিশোধ করতে হয়। যা বেশ সুবিধাজনক তাছাড়া ক্রেডিট কার্ড থেকে যে ঋণ পাওয়া যায় তা পরিশোধ করতে দীর্ঘ সময় পাওয়া যায় এক্ষেত্রে এটা একটা সুবিধাজনক।

সুরক্ষা: ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের অনেক সুরক্ষা রয়েছে। মনে করুন আপনার কার্ডটি চুরি হয়ে গেল এক্ষেত্রে চোর আপনার কার্ডের টাকা তুলে ফেলল এক্ষেত্রে কার্ড প্রদানকারী ব্যাংক যথাযথ প্রমাণ স্বরূপে আপনার কার্ডের টাকা ফেরত দিতে বাধ্য থাকে।

ক্রেডিট কার্ড রিওয়ার্ড পয়েন্ট: বর্তমানে নগদ বা অনলাইন ব্যাংকিং এর পরিবর্তে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে অর্থপ্রদান করলে প্রায়ই আপনি ভিন্ন হারে বোনাস পয়েন্ট অর্জন করেন। এই বোনাস পয়েন্টের হার কার্ড বা লেনদেনের প্রকারের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। যখন অনেকগুলি পয়েন্ট জমা হয়, তখন সেগুলি বিভিন্ন উপহার কার্ড কেনা, সিনেমা বা টিকিট কেনা, মোবাইল রিচার্জ, এবং এমনকি কার্ডের বিল পরিশোধ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

ভ্রমণ করার সময় সুবিধা: নগদবিহীন ভ্রমণ এবং উপরে উল্লিখিত ভ্রমণ বীমা সুবিধাগুলি ছাড়াও, বেশ কয়েকটি কার্ড বিনামূল্যে রেল এবং বিমানবন্দর লাউঞ্জ অ্যাক্সেস, অগ্রাধিকার চেক-ইন, অতিরিক্ত ব্যাগেজ ভাতা, বিমান এবং হোটেল ছাড়, কার্ড ভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে আরও উপভোগ্য এবং সাশ্রয়ী করে তোলে। বারবার ভ্রমণের জন্য বিশেষ ট্রাভেল ক্রেডিট কার্ড ভ্রমণ কেনাকাটায় অতিরিক্ত পুরষ্কার পয়েন্ট অর্জন করে যা বিনামূল্যে ফ্লাইট, হোটেল বুকিং বা অন্যান্য ভ্রমণ-সম্পর্কিত সুবিধার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
উপরে উল্লেখিত আলোচনায় আপনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। তাছাড়া ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের অনেক ধরনের সুবিধা রয়েছে যা বলে শেষ করা যাবেনা। তাই প্রিয় পাঠক এখন আমরা জানব ক্রেডিট কার্ড খরচ বা ক্রেডিট কার্ড করতে কত টাকা লাগে সে সম্পর্কে।

ক্রেডিট কার্ড খরচ বা কত টাকা লাগে

আমরা অনেকেই ক্রেডিট কার্ড তৈরি করার জন্য আগে জানতে চাই ক্রেডিট কার্ড খরচ কত সম্পর্কে। তাই প্রিয় পাঠক সাধারণত ক্রেডিট কার্ড এর খরচ বহন করে কার্ডের ধরনের উপর। যদি ক্রেডিট কার্ড গোল্ড কার্ড হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে প্রাইমারি ক্রেডিট কার্ড এর বাৎসরিক ফি ১০০০ টাকা হয়ে থাকে। আর ক্লাসিক কার্ড এর প্রাইমারি বাৎসরিক ফি 500 টাকা হয়ে থাকে। তাছাড়া আরো অনেক প্রাইমারি ও সাপ্লিমেন্টারি ক্রেডিট কার্ড রয়েছে যেগুলো ইস্যু করতে কোন বাৎসরিক ফি লাগে না। 

আশা করি বন্ধুরা ক্রেডিট কার্ড করতে কত টাকা লাগে বা ক্রেডিট কার্ড এর খরচ কত সে সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। এখন আমরা জানবো ক্রেডিট কার্ড কত প্রকার কি কি এবং ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে।

ক্রেডিট কার্ড কত প্রকার কি কি

আমাদের দেশের ব্যাংকগুলো প্রধানত চার ধরনের ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের সরবরাহ করে থাকে। সেগুলো হলো ভিসা কার্ড, মাস্টার কার্ড, জেসিবি কার্ড এবং আমেরিকান এক্সপ্রেস। মূলত এই চার ধরনের কার্ড বাংলাদেশে ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের দিয়ে থাকে। এছাড়াও আরো কিছু বিশেষ ধরনের ক্রেডিট কার্ড রয়েছে যেমন স্টোর কার্ড, সিকিউরিটি কার্ড এবং বিজনেস কার্ড। আপনার জন্য কোন ধরনের ক্রেডিট কার্ডটি সবচেয়ে ভালো তার নির্ধারণ করার সময় আপনার আয় ব্যয়ের নির্ভর করে এবং আপনি কি ধরনের সুবিধা চান তা বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে প্রিয় পাঠক আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা গুলো কি কি

ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা

কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার জন্য কিছু স্থায়ী যোগ্যতা পূরণ করতে হবে তবেই আপনি সে প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রেডিট কার্ড এর সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। আর এ সকল ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা নিয়মাবলী অনুসরণ করলে আপনি যেকোনো ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড পাওয়া যোগ্য হয়ে উঠবেন। নিচে ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হলো।
  • ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার জন্য উক্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই 18 বছরের উপরে হতে হবে।
  • ক্রেডিট কার্ড সেবা নেওয়ার জন্য উক্ত ব্যক্তিকে ব্যাংক এর সাথে কমপক্ষে এক বছরের লেনদেন থাকতে হবে।
  • উক্ত ব্যক্তির বাৎসরিক আয়ের পরিমাণ তিন লক্ষ টাকা অধিক হতে হবে।
  • ক্রেডিট কার্ড সেবা নেওয়ার জন্য অবশ্যই ব্যাংক একাউন্ট হোল্ডারকে চাকরি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকা অবশ্যক। যা থেকে মাসিক আয় ৩০ হাজার টাকা হতে হবে তবে আয়ের সর্বনিম্নসীমা ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত হয়ে থাকে।
  • ক্রেডিট কার্ড সেবা নেওয়ার জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র ট্রেড লাইসেন্স ও টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে এবং দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে।
  • ক্রেডিট কার্ড সেবা নেওয়ার জন্য একজন জামানতকারী থাকতে হবে।
  • ব্যাংক একাউন্টে লেনদেন থাকতে হবে এবং একাউন্টে টাকা থাকতে হবে।
প্রিয় বন্ধুরা উপরে দেওয়া প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকলে আপনি খুব সহজে ক্রেডিট কার্ড এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে ক্রেডিট কার্ড আবেদনের জন্য নমিনীর প্রয়োজন হতে পারে এবং নমিনের ছবি ভোটার আইডি কার্ড ও অন্যান্য তথ্য প্রয়োজন হতে পারে। তাই ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা এ বিষয়ে উপরোক্ত আলোচনায় জানতে পেরেছেন তাছাড়া আরও অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো আপনি সরাসরি ব্যাংকে গিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে ক্রেডিট কার্ড এর জন্য আবেদন করতে পারেন।

ক্রেডিট কার্ড তৈরি করতে কি কি লাগে

আপনি অনলাইনে আবেদন করতে পারেন বা সরাসরি একটি ব্যাংক শাখায় গিয়ে যোগাযোগ করতে পারেন, যা বিষয়টাকে আরও সহজ এবং আরও সুবিধাজনক করে তোলে৷ ক্রেডিট কার্ড তৈরি করতে প্রয়োজনীয় যে সকল ডকুমেন্টে প্রয়োজন হয় তা নিচে তুলে ধরা হলো।
  • পাসপোর্ট সাইজ ছবি
  • জাতীয় পরিচয় পত্র
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট
  • আপনার মাসিক বেতনের স্টেটমেন্ট
  • ক্রেডিট কার্ড আবেদনের ফরম

শেষ কথা

প্রিয় বন্ধুরা আমি আজকে আপনাদেরকে ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি উপরে দেওয়া তথ্য গুলো আপনার উপকারে আসবে। সেজন্য বন্ধুরা পোস্টটি পড়ে আপনার যদি কোন উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই অনুরোধ রইল একটি শেয়ার করবেন। উপরে দেওয়া তথ্যগুলো বিভিন্ন ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া। ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা এই পোস্টে আপনার যদি কোন মন্তব্য থেকে থাকে তাহলে নিচে দেওয়া মন্তব্য বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন আমাদেরকে। আর এমন গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়মিত পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url