আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা যা জানা জরুরি ২০২৪

আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারণা নেই। আর এ ধারণা না থাকার কারণে আমরা অনেক সময় আমাশয় রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর বিভিন্ন ভোগান্তিতে পরি। আমাশয় রোগ হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ত্বরান্বিত হয়। যার কারণবশত রোগী ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তার জীবন যাত্রার মান ক্ষুন্ন হয়। আমাশয় রোগটি আসলে আমাদের অজ্ঞতার কারণে হয়ে থাকে। যদি আমরা আমাদের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে সজাগ হই এবং আমাশয় রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করি তাহলে আমাশয় রোগ থেকে আমরা চির মুক্তি লাভ করতে পারি। 
আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা
প্রিয় পাঠক চলুন, আজকে আমরা আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক ও কিভাবে আমাশয় রোগ প্রতিরোধ করা যায়। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আরো যে সকল বিষয় জানতে পারব সেগুলো হল আমাশয় রোগের লক্ষণ, রক্তআমাশয় রোগীর খাবার তালিকা, আমাশয় রোগের ঔষধের নাম, পুরাতন আমাশয় রোগের ঔষধ, পুরাতন আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা, আমাশয় হলে কি খাবার খাওয়া যাবে না, শিশুদের আমাশয় হলে কি খাবার খাওয়া যাবে, আমাশয়ের সবচেয়ে ভালো ঔষধ কোনটি, আমাশয় রোগের এন্টিবায়োটিক এবং আমাশয় হলে কলা খেলে কি ক্ষতি হয় এ সকল সম্পর্কে। তাই পাঠকগণ আপনার কাছে অনুরোধ থাকবে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য।
পোস্ট সূচীপত্র

ভূমিকা

আমাশয় সাধারণত রোগ জীবাণুর সংক্রমণ জনিত রোগ হিস্টোলাইটিকা (Entamoeba histolytica) অথবা সিগেলা (Shigella) ব্যাকটেরিয়া যদি মানবদেহে প্রবেশ করে এবং সংক্রমণ সৃষ্টি করে তাহলে আমাশয় রোগ হয়। অংগের সংশ্লিষ্ট অংশে ব্যাথার উপদ্রব হয় যেমন পেটব্যথা, শ্লেষ্মা ও রক্তসহ পাতলা পায়খানা হতে পারে। আবার সংক্রমিত ব্যক্তির মলের মাধ্যমে খাদ্য অথবা পানি যদি দূষিত হয় তাহলেও আমাশয় রোগ ছড়াতে পারে‌। আমাশয় রোগের কারণে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে তরল পদার্থ বের হয়ে যায়। যার কারণে রোগী পানি শূন্যতায় ভোগে। এমনকি পরবর্তীতে রোগীর আলসার পর্যন্ত হতে পারে। 

সাধারণত ব্যাকটেরিয়া নিরোধক ঔষধ সেবনের মাধ্যমে অথবা তরল প্রতিস্থাপন ও রক্ত পরিবহন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। পাঠকগণ চলুন আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে জানার পূর্বে আমরা আমাশয় রোগের প্রকারভেদ ও এই রোগ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিই।

আমাশয় রোগের প্রকারভেদ

আমাশয় রোগ সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে যথা- অ্যামিবা ঘটিত আমাশয় এবং দন্ড ব্যাকটেরিয়া ঘটিত (ব্যাসিলারি) আমাশয়। এদের সংক্রমনের ধরন রোগের লক্ষণ যেমন ভিন্ন তেমনি এদের চিকিৎসা পদ্ধতি ও ভিন্ন।

অ্যামিবাঘটিত আমাশয়

অ্যামিবাঘটিত আমাশয় সাধারণত বড় ছেলে মেয়েদের হয়ে থাকে। ৫ বছরের নিচে যাদের বয়স তাদের অ্যামিবা ঘটিত আমাশয় হওয়ার প্রবণতা একটু কম। মানুষের শরীরের পরিপাকতন্ত্রে এন্টামিবা হিসটোলাইটিকা নামক পরজীবীর সংক্রমণের ফলে এ রোগ হয়। পরজীবীটি মানুষের শরীরে ঢুকে অন্ত্রে প্রবেশ করে এবং দেহ থেকে এক প্রকার ক্ষতিকারক রস নিঃসরণ করে যা অন্ত্রের গাত্রের শ্লেষ্মা ঝিল্লিকে ভেঙে দেয়। আর ভেঙে যাওয়া শ্লেষ্মা ঝিল্লি মলের সঙ্গে ঝরে পড়ে। 
যেটাকে “আম” বলে আখ্যায়িত করা হয়। এই আমাশয় সৃষ্টি হওয়ার পর রোগীর সাধারণত ডান পাশে ব্যথা হয় এবং তলপেটে ডানপাশে সিকাম থাকে যা পরজীবী টির আক্রমণের মূল লক্ষ্য।

দন্ড ব্যাকটেরিয়া ঘটিত বা (ব্যাসিলারি) আমাশয়

দন্ড ব্যাকটেরিয়া ঘঠিত আমাশয় (Bacillary dysentery) সিগেলা (Shigella) নামক ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রে প্রবেশ করে সংক্রমণের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। এই রোগটি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক হারে দেখা যায়। এই রোগের কারণে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। একমাত্র খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা থাকলেই কেবলমাত্র এই রোগের মোকাবেলা করা সম্ভব। সাধারণত এই রোগ গ্রীষ্ম মন্ডলী অঞ্চলে ছড়ায়। গরমের সময় মাছির উপদ্রব বেশি হয়। 

আর এই মাছির মাধ্যমেও দন্ড ব্যাকটেরিয়াঘটিত আমাশয় ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগ হওয়ার পর রোগীর মলের সাথে অনেক রক্তক্ষরণ হয়। যার কারণে একে “রক্ত আমাশয়” বলা হয়।

আমাশয় রোগের লক্ষণ

আমাশয় রোগের চিকিৎসা নেওয়ার পূর্বে আগে আমাদের জানতে হবে আমাদের আসলেই আমাশয় হয়েছে কিনা। আর এটা জানার জন্য অবশ্যই আমাদের আমাশয় রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জানতে হবে। যদি আমরা বুঝতে পারি যে রোগীর আমাশয় হয়েছে তাহলে সে অনুযায়ী আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা অনুসরণ করে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারি। আমরা ইতিপূর্বে জেনেছি যে আমাশয় দুই ধরনের হয়ে থাকে। যেহেতু আমাশয় রোগের ধরন দুই রকম তাই এদের লক্ষণ ও দুই রকম হবে। আসুন পর্যায়ক্রমে আমাশয় রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জেনে নিই।

অ্যামিবা ঘটিত আমাশয় রোগের লক্ষণ

আমরা জেনেছি যে অ্যামিবা ঘটিত আমাশয় রোগীর অন্ত্রে ঢুকে পড়ে এবং বৃহদান্তের গায়ে আঁকড়ে ধরে বাসা বাঁধে যার কারণে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় পদার্থ বা শ্লেষ্মা ঝিল্লি বের হয়ে যায়। নিচে অ্যামিবাঘটিত আমাশয় রোগের লক্ষণ গুলো পয়েন্ট আকারে দেওয়া হলো।
  • রোগীর ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হতে থাকে।
  • মলের সঙ্গে মিউকাস বা শ্লেষ্মা ঝিল্লি বের হয়ে যায়।
  • মলের সঙ্গে খুব বেশি পরিমাণে রক্ত ক্ষরণ হয় না।
  • তাছাড়া ৎতলপটে ডানদিকে প্রচুর পরিমাণে ব্যথা হয় এবং তলপেটে ডান পাশে যেখানে শিকাম থাকে সেটি পরজীবী দ্বারা আক্রমিত হয়।

দন্ড ব্যাকটেরিয়া ঘটিত বা (ব্যাসিলারি) আমাশয় রোগের লক্ষণ

বেশিরভাগ সময় দুই থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের দন্ড ব্যাকটেরিয়াঘটিত আমাশয় হয়ে থাকে। যার কারণে এই আমাশয় সম্পর্কে আমাদের ভালোভাবে ধারণা রাখা উচিত। কারণ এই আমাশয় রোগের লক্ষণ শিশুরা ভালোভাবে বুঝতে পারবেনা বা বলতে পারবেনা। তাই আমাদের নিজেদের সচেতনতার সাথে রোগের মোকাবেলা করতে হবে। নিচে দন্ড ব্যাকটেরিয়া ঘটিত আমাশয় রোগের লক্ষণ পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হলো।
  • রোগী দিনে দশবারের বেশি পাতলা পায়খানা করে।
  • রোগীর শরীরে প্রচুর পরিমাণে জ্বর আসে। রোগীর গায়ের তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে সাধারণত ১০২-১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা থাকে।
  • রোগীর শরীরে খিচুনি দিতে পারে।
  • শরীরে পানি-শূন্যতা দেখা দেয়।
  • রোগীর বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে।
উপরে বর্ণিত লক্ষণগুলো দেখলে বুঝতে হবে যে অবশ্যই রোগীর আমাশয় হয়েছে। আর আপনি যদি বুঝতে পারেন যে রোগীর আমাশয় হয়েছে তাহলে সর্বপ্রথম আপনার আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা পরিবর্তন করতে হবে। কারণ খাবারের মাধ্যমেই উক্ত পরজীবী গুলো মানবদেহের অন্তরে প্রবেশ করে। যার কারণে কোন খাবারগুলো আমাশয় সঙ্গে রোগীর খাওয়া উচিত সে বিষয়টি জানা অতীব জরুরী। তাই চলুন নিচে আমাশয় রোগীর খাবার সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিই।

আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা

পাঠকগণ আমরা উপরে আমাশয় রোগ কি এই রোগ কিভাবে ছড়ায় এবং এই রোগের লক্ষণ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনেছি। যেহেতু আমরা আমাশয় রোগ নির্ণয় কিভাবে করতে হয় সেটি সম্পর্কে ধারণা নিয়েছি তাহলে এবার আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যাক। যেহেতু আমাদের খাদ্যাভ্যাস এর কারণে আমাশয় রোগ হয়ে থাকে। তাই আমরা কি খাবার খাচ্ছি এবং খাবার আগে হাত ধুয়ে নিচ্ছে কিনা সেটির দিকে নজর দেওয়া উচিত। 
পাশাপাশি আমাশয় হওয়ার পর কোন খাবারগুলো খেলে আমাদের রোগ উপশম হবে এবং রোগীর শরীর দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে সে সম্পর্কে জানা উচিত। নিচে পর্যায়ক্রমে আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

খাবার স্যালাইন

আমরা জেনেছি আমাশয় দুই ধরনের হয়ে থাকে। কিন্তু দুই ধরনের আমাশয় রোগীর ক্ষেত্রেই প্রচুর পরিমাণে শরীর থেকে তরল পদার্থ নিঃসরণ হয়। যার কারণে রোগী অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। এমনকি পানি শূন্যতাও হতে পারে। তাই শরীরে পানির ঘাটতি পূরণের জন্য অবশ্যই খাবার স্যালাইন এর গুরুত্ব অপরিসীম। যখনই আপনি আমাশয় রোগের লক্ষণ দেখে বুঝতে পারবেন যে আমাশয় হয়েছে ঠিক তখন প্রথম যে কাজ সেটি হল খাওয়ার স্যালাইন গ্রহণ করা। ডিহাইড্রেশন হওয়ার পূর্বেই আমাদের তরল ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। ডাক্তারের মতে, প্রতিবার মলত্যাগের পরে এক গ্লাস খাবার স্যালাইন খেতে হবে।

চিনির শরবত

যেহেতু আমরা পূর্বেই জেনেছি যে শরীরে তরল পদার্থ নিঃসরণ হওয়ার প্রেক্ষিতে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। তাই এ সময় রোগীর চিনির শরবত খাওয়া যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখা উচিত রোগীর ডায়াবেটিস আছে কিনা। যদি রোগীর ডায়াবেটিস না থাকে তাহলে এক গ্লাস পানিতে পরিমাণ মতো চিনি এবং সাথে এক চিমটি লবণ নিয়ে খেতে পারে। এটি খেলে স্যালাইনের মতোই কাজ করবে।

ডাবের পানি

আমরা সকলেই জানি যে যে কোন রোগের ক্ষেত্রে ডাবের পানির গুরুত্ব অপরিসীম। ডাক্তাররা সবসময় রোগীকে ডাবের পানি খেতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এর কারণ হচ্ছে আমাশয় হওয়ার পর শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে শ্লেষ্মা ঝিল্লি অর্থাৎ আম বের হয়ে যায়। যার কারনে শরীরে পানি স্বল্পতা ও ইলেক্ট্রোলাইট এর ঘাটতি দেখা দিতে পারে। আর এই ইলেক্ট্রোলাইট এর ঘাটতি পূরণের জন্য ডাবের পানির কার্যকারিতা অপরিসীম। তাই আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা তে অবশ্যই ডাবের পানি রাখতে হবে।

কলা

অনেকের মনে প্রশ্ন থেকে যায় যে আমাশয় হলে কলা খেলে কি ক্ষতি হয়? আসলে ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। কলা খেলে আমাদের শরীর রোগের জন্য ক্ষতির বদলে লাভের অংকটাই বেশি। কারণ কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম যা মানুষের রোগীর অনেক উপকারে আসে। সবুজ কলাতে প্রচুর পরিমাণে এমাইলেজ প্রতিরোধী স্টার্ট থাকে যা রোগীর হজমে সাহায্য করে। তবে পাকা কলার চাইতে কাঁচা কলা আমাশয় রোগীর জন্য খুবই ভালো। 

বিশেষ করে কাচা কলার ভর্তা যদি আমাশার রোগীকে নরম ভাতের সঙ্গে খাওয়ানো যায় তাহলে একদিনেই আমাশয় রোগীর পাতলা পায়খানা বন্ধ হয়ে যায়। তাই হজম শক্তি বাড়ানোর জন্য আমাশয় রোগীর খাবার তালিকায় অবশ্যই কলা রাখা উচিত।

কর্নফ্লেক্স

ভুট্টা তে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার আর আমার সঙ্গে রোগীর জন্য ভাইবা সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার গুরুত্ব অত্যধিক। তাই কর্নফ্লেক্স হালকা গরম দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এতে আমাশয় রোগীর অনেক উপকার হবে।

এছাড়াও আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা তে নরম ভাত, বিভিন্ন ফলের রস, ওটমিল, দই, রুটি রাখা যেতে পারে। তবে শক্ত খাবার খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই বুঝে নিতে হবে যে রোগী হজম করতে পারবে কিনা। এ সময় রোগী ডিহাইড্রেশনে যেন না যায় সেজন্য প্রচুর পরিমাণে ঠান্ডা পানি পান করতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিতে হবে।

রক্ত আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা

আমরা আমাশয় দু ধরনের হয় সেটা জেনেছি। তবে দণ্ডানু ঘটিত আমাশয় বা বিসলারি ডিসেন্ট্রি আমাশয় কে “রক্ত আমাশয়” বলা হয়। রক্ত আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা উপরে বর্ণিত খাবার তালিকা গুলো সাথে সম্পূর্ণ মিল রেখে খেতে হবে। তবে রক্ত আমাশয় রোগীর একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। সেটি হল এ রোগীর শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায়। কারণ এই রোগী দিনে 10 থেকে 12 বার পাতলা পায়খানা করে থাকে। আর অবশ্যই সে কারণে রোগী ডিহাইড্রেশনে ভুগতে পারে। 

তাই বেশি বেশি ডাবের পানি এবং সাধারণ ঠান্ডা পানি পান করতে হবে এবং অবশ্যই খাবার স্যালাইন খাওয়ার কথা ভুললে চলবে না। যদি রক্তমাশায় রোগীর পায়ু পথ দিয়ে প্রচুর পরিমাণে রক্ত বের হয় তাহলে দেরি না করে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।

শিশুদের আমাশয় হলে কি খাবার খাওয়া যাবে

আমাশয় রোগটি শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে। কারণ বাচ্চারা কোন কিছু না বুঝেই সবকিছু মুখে পুরে দেয়। তাছাড়া তারা বুড়ো আঙ্গুল চুষতে থাকে যার কারণে ব্যাকটেরিয়া বাচ্চা শরীরে প্রবেশ করে সংক্রমণ তৈরি করে। যদি শিশুর আমাশয় রোগ হয় তাহলে বাবা-মার চিন্তার শেষ থাকে না। কারণ ছোট শিশুরা কোন কিছু বলতে পারেনা শুধু কান্নাকাটি করতে থাকে। মা-বাবা বাচ্চাদের কান্নাকাটি দেখে বিভিন্ন রকম ওষুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু সেগুলো ঠিক নয়। সর্বপ্রথম শিশুদের আমাশয় হলে কি খাবার খাওয়া যাবে এ বিষয়টি ভালোভাবে জানতে হবে। 

কারণ খাবারের মাধ্যমেই ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করে। অবশ্যই মনে রাখা উচিত বড় মানুষের পাশাপাশি শিশুদেরও অধিক পরিমাণে পাতলা পায়খানা হওয়ার কারণে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায়। তাই শিশু যেন ডিহাইড্রেশনে না ভোগে সেজন্য অবশ্যই পায়খানার পরবর্তী সময়ে অল্প অল্প করে খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। মারি ভাত বা জাউ ভাত কাঁচা কলার ভর্তার সাথে খাওয়ানো যেতে পারে। তবে কাচা কলার ভর্তায় শুধুমাত্র একটু লবণ আর একটু সরিষার তেল মিশিয়ে ভর্তা করতে হবে। এছাড়া শিশু যদি ফল চিবিয়ে খেতে পারে তাহলে একটু একটু করে ফল খেতে পারে। 
অথবা ফলের রস খাওয়াতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে অবশ্যই বাবা মার সচেতন থাকা খুবই জরুরী। কারণ শিশুদের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন রকম ট্রিটমেন্ট করা সম্ভব নয়। তাই আপনার শিশুর যদি কোন রকম সমস্যা শুরু হয় তাহলে দেরি না করে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করবেন।

আমাশয় হলে কি খাবার খাওয়া যাবে না

আমরা এতক্ষণ ধরে আমাশয় রোগীর লক্ষণ, আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা এবং আরো অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক আমাশয় হলে কি খাবার খাওয়া যাবেনা। আমরা ইতিপূর্বেই এই আর্টিকেলে জানিয়েছি যে আমাশয় রোগীর সর্বপ্রথম যে চিকিৎসা সেটি হল তার খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন। আমরা দৈনন্দিন জীবনে অনেক খাবার খাই। যেগুলো আমাদের স্বাস্থ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। তাই আসুন জেনে নেই আমাশয় রোগ হলে কোন কোন খাবার খাওয়া নিষেধ।
  • আমাশয় রোগীর চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া যাবেনা।
  • তেলে ভাজা মুরগির মাংস এবং ক্রিম খাওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ।
  • দুধের তৈরি কোন জিনিস খাওয়া যাবে না যেমন মাখন খাওয়া যাবে না। কারণ মাখন অনেকটা চর্বির মতোই কাজ করে। তবে দই খাওয়া যেতে পারে কারণ দই পরিপাকতন্ত্রের জন্য খুবই ভালো।
  • যদি রোগীর এলার্জি থাকে তাহলে যে খাবার খেলে রোগীর অ্যালার্জি হয় সেগুলো পরিহার করতে হবে।
  • কারো এ সময় মনে হতে পারে যে আমাশয় হলে চকলেট খাওয়া যাবে কি। আসলে চকলেটে থাকে প্রচুর পরিমাণে চিনি এবং আরো অনেক রকম কেমিক্যাল দিয়ে চকলেট তৈরি হয় তাই চকলেট না খাওয়াই ভালো।
  • আবার কারো কারো সবুজ শাকসবজি খাওয়ার কারণে গ্যাসের সমস্যা তৈরি হয়। তাই ফুলকপি, মটরশুঁটি, পাটশাক, লাল শাক, সবুজ শাক আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা তে রাখা যাবে না।

আমাশয় রোগের ঔষধের নাম

আমরা সর্বপ্রথমেই বলেছি যে আমাশয় রোগের ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা খুবই জরুরী। পাশাপাশি আমাশয় রোগীর জন্য প্রধান ওষুধ হচ্ছে খাবার স্যালাইন। কারণ শরীরের পানির ঘাটতি পূরণের জন্য খাবার স্যালাইনের গুরুত্ব অপরিসীম। স্যালাইনের পাশাপাশি রোগীকে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খাওয়াতে হবে। তরল খাবার কোনগুলো আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা তে আছে সেগুলো উপরে বর্ণনা করা হয়েছে। পাশাপাশি আমাশয় সাথে মাত্রা বেশি হলে তাকে কিছু ওষুধ দেওয়া যেতেই পারে। 

বিশেষ করে আমাশয় রোগের জন্য এলোপ্যাথিক ওষুধ এর মধ্যে এন্টি বায়োটিক ওষুধটি ডাক্তারগণ বেশি সাজেস্ট করে থাকেন। নিচে আমাশয় রোগীর কিছু এন্টিবায়োটিক ওষুধ এ গ্রুপ নাম লেখা হলো।
আমাশয় রোগের এন্টিবায়োটিক
  • Azithromycin
  • Ciprofloxacin
  • Ceftriaxone
  • Pivmecillinam
এছাড়াও রয়েছে কিছু ট্যাবলেটের নাম সেগুলো হল বেসিলাক্স ট্যাবলেট (Bacilac Tab), পিভিসিল ট্যাবলেট (Pivicil 200 mg), ফ্লাজিল ট্যাবলেট (Flagyl 400 mg), জকস ট্যাবলেট (Zox 200 mg/500 mg), পিনাম ট্যাবলেট (Penom 250 mg) উল্লেখযোগ্য। তবে ওষুধগুলো সেবনের পূর্বে অবশ্যই একজন ভাল ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

পুরাতন আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

আমরা উপরে আমাশয় রোগী সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পেয়েছি। আমাশয় রোগ হলে রোগীর কি ধরনের সমস্যা হয় সেগুলো সম্পর্কেও ধারণা নিয়েছি। যাদের অনেকদিন ধরে আমাশয় রোগ হয়েছে কিন্তু কোনভাবে ভালো হচ্ছে না তাদের কে পুরাতন আমাশয় রোগী বলা হয়। পুরাতন আমাশয় রোগীরা সাধারণত অপুষ্টিতে ভোগেন। তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে এবং তারা শারীরিকভাবে দুর্বলতা অনুভব করেন। পাশাপাশি তাদের ওজন দিন দিন হ্রাস পায়। তাদের দেহ থেকে প্রচুর পরিমাণে তরল পদার্থ মলের সঙ্গে বের হয়ে যায়। 

মলের সঙ্গে মিউকাস বের হওয়ার কারণে শরীর সবসময় ডিহাইড্রেশনে ভোগে। তাই পুরাতন আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা এর মধ্যে সর্বপ্রথম যে চিকিৎসাটি রয়েছে সেটি হল প্রতিবার পাতলা পায়খানা হওয়ার পর খাবার স্যালাইন খেতে হবে। কাঁচা কলা সিদ্ধ করে ভর্তা মারি ভাতের সাথে খেতে হবে। কাঁচা কলা খেতে সমস্যা হলে কাঁচা পেঁপে সিদ্ধ করে ভর্তা করে খেতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত ডাবের পানি পান করতে হবে। দুধ এবং দুধ জাতীয় খাবার গুলো পরিহার করা উচিত। সবুজ শাক-সবজিতে অনেকের অ্যাসিটি তৈরি হয় তাই পুরাতন আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা তে এগুলো রাখা যাবে না। 

তাছাড়া পুরাতন আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা এর মধ্যে রয়েছে বেল পাতা কুচি কুচি করে কেটে রোদে শুকিয়ে সেটি গুড়ো করতে হবে। তারপর প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস পানির সাথে এক চা চামচ গুঁড়ো করা পাউডার মিশিয়ে পানিটি পান করতে হবে। এছাড়া ইসবগুলের ভুষি প্রতিদিন খাওয়া যেতে পারে। অনেক সময় পুরাতন আমাশয় রোগের জন্য থানকুনি পাতার রস খুব ভালো ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন 2 থেকে 4 চা-চামচ সকাল সন্ধ্যায় খালি পেটে থানকুনি পাতার রস সেবন করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে আমাশয় রোগটি শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে থাকে। তাই অবশ্যই একজন ভালো ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

পুরাতন আমাশয় রোগের ঔষধ

আমরা আমাশয় রোগের ওষুধ সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। যেহেতু রোগীর অনেকদিন যাবত আমাশয় হয়েছে কিন্তু ভালো হচ্ছে না তাই তাকে নিয়ম মেনে আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা অনুসরণ করতে হবে। পাশাপাশি উপরে বর্ণিত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধগুলো সেবন করতে পারে। তবে আমরা সবসময় রোগীকে ওষুধ সেবনের পূর্বে একজন ভালো ডাক্তারের পরামর্শ নিতে বলি। আবার আমরা উপরে পুরাতন আমাশয় রোগীর ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কেও ধারণা দিয়েছি। তাই কোন পুরাতন আমাশয় রোগী সেগুলো ও অনুসরণের মাধ্যমে সে আমাশয় রোগ থেকে মুক্তি লাভ করতে পারে।

আমাশয়ের সবচেয়ে ভালো ঔষধ কোনটি

আমাশয় এর সবচেয়ে ভালো ওষুধ কোনটি এ বিষয়টি সম্পর্কে আমরা সর্বপ্রথমে যা বলেছি। সেটি হল আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা অনুযায়ী খাবার খাওয়া এবং অবশ্যই ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হলে খাবার স্যালাইন গ্রহণ করা। পাশাপাশি আমাশয় রোগীকে প্রচুর পরিমাণে বিশ্রাম গ্রহণ করতে হবে। কারণ মলের সঙ্গে মিউকাস যাওয়ার কারণে শরীর অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই আমাশয় রোগীর বিশ্রাম অতীব জরুরী। ডিহাইড্রেশন বা পানি শূন্যতার জন্য প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খেতে হবে পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। 

আমরা উপরে আমাশয় রোগীর এন্টিবায়োটিক ঔষধ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা দিয়েছি। উপরে বর্ণিত সবগুলো এন্টিবায়োটিকই রোগীর জন্য কার্যকরী।

লেখক এর শেষ কথা

প্রিয় পাঠকবৃন্দ আমরা আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আমরা এখানে আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা, আমাশয় রোগের লক্ষণ এবং আমাশয় রোগ সংক্রান্ত সকল বিষয়গুলো আলোচনার মাধ্যমে জানার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনারা যদি আমাদের এই আর্টিকেলে উল্লেখিত তথ্যগুলো অনুসরণ করেন তাহলে অবশ্যই উপকৃত হবেন। তবে আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানাই যে আমরা তথ্যগুলো বিভিন্ন চিকিৎসা বিষয়ক অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং উইকিপিডিয়া থেকে সংগ্রহ করেছি। 

তাই যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে আপনাদের সর্তকতা আমাদের কাম্য। কারণ শিশুদের আমাশয় হওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি তাই আপনার শিশুর দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। আপনার বাড়ির চারপাশ সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি খাবার গুলো সব সময় ঢেকে রাখবেন। আমাশয় রোগ সম্পর্কে যদি আপনাদের আরো কিছু জানার থাকে তাহলে আমাদের মন্তব্য বক্সে জানাতে পারেন। আমরা দ্রুত সেটির উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। আমরা আমাদের এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন রকম তথ্যবহুল পোস্ট করে থাকি। 

তাই বিভিন্ন রকম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। এই পোস্টের মাধ্যমে আপনার যদি কোন রকম উপকার হয়ে থাকে পাশাপাশি আপনার কাছে পোস্টটি যদি যথাযথ এবং উপযুক্ত মনে হয় তাহলে পোস্টটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। পরিশেষে আপনাদের সুস্থতাই আমাদের কাম্য আশা করি সবাই ভাল থাকবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url