টাইগার মুরগি - টাইগার মুরগির খাবার তালিকা

আমরা অনেকেই টাইগার মুরগি সম্পর্কে জানিনা কিন্তু টাইগার মুরগি পালন করতে চাই। টাইগার মুরগির সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে জানাবো।
টাইগার মুরগি
সাধারণত বিভিন্ন জাতের মুরগি বাংলাদেশে দেখতে পাওয়া যায়। বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে একেক ধরনের মুরগি একেক ধরনের হয়ে থাকে। টাইগার মুরগি ও একটি মুরগির জাত। আজকে আমরা আপনাদেরকে টাইগার মুরগি এবং এ সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। তাই টাইগার মুরগি সম্পর্কে জানতে আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।

ভূমিকাঃ টাইগার মুরগি

মুরগি একটি গৃহপালিত পশু হিসাবে সারা বিশ্ব জুড়ে পালন করা হয়ে থাকে। আমাদের বাংলাদেশসহ বিশ্বে সাধারণত কয়েকশত ধরনের মুরগির জাত আছে। আমাদের মানুষদের মতোই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভৌগোলিক অবস্থান এবং সীমারেখার উপর ভিত্তি করে মুরগির ভিতরেও বৈচিত্র্যতা লক্ষ্য করা যায় এবং আলাদা আলাদা জাত হিসাবে চিহ্নিত করা যায়। টাইগার মুরগির আঁকার আকৃতি,শারীরিক গঠন, ঝুটির ধরন, চামড়ার রঙ, আঙুলের সংখ্যা, পাখার গঠন ইত্যাদির বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে এদেরকে আলাদা জাত হিসেবে গণ্য করা হয়। 
টাইগার মুরগিগুলো সাধারণত দের থেকে দুই বর্গফুট জায়গার ভিতরে বসবাসের উপযোগী হয়ে থাকে। আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদেরকে জানানো হবে টাইগার মুরগি, টাইগার মুরগির খাবার তালিকা, টাইগার মুরগি পালন পদ্ধতি, টাইগার মুরগির বাচ্চার দাম, টাইগার মুরগির ভ্যাকসিন তালিকা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত। আপনারা আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার মাধ্যমে টাইগার মুরগী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন এবং এরপরে খুব ভালোভাবে টাইগার মুরগী পালন করতে পারবেন।

টাইগার মুরগি

এই মুরগির সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় যার মাধ্যমে খুব সহজেই এই মুরগিগুলোকে চেনা যায়। যেমন অন্যান্য মুরগির তুলনায় টাইগার মুরগি দেখতে একটু আলাদা ধরনের হয়ে থাকে এবং এই মুরগির শরীরে অনেক মাংস থাকে এবং এ মুরগিগুলো অনেক মোটা তাজা হয়ে থাকে। টাইগার মুরগির গায়ের রং কখনো কখনো লাল হলেও এটি দেখতে অনেকটাই কালচে রঙের হয়ে থাকে। এছাড়াও কালো, সাদা, লাল এবং সংমিশ্রণের একটি রং হয়ে থাকে এই মুরগির। সাধারণত টাইগার মুরগি অনেক দ্রুত বড় হয়। টাইগার মুরগি একমাস অথবা দেড় মাসের মধ্যে এক থেকে দেড় কেজি ওজনের হয়ে থাকে। টাইগার মুরগি পালন পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ এবং ঝামেলা বিহীন। 
এই মুরগিগুলো সাধারণত ৬ থেকে ৭ মাস বয়স থেকেই ডিম দিতে শুরু করে এবং এই মুরগিগুলোর ডিম অন্যান্য মুরগির তুলনায় সাইজ এবং আকার আকৃতিতে অনেকটাই বড় হয়ে থাকে। আমাদের দেশে দেখা যায় টাইগার মোরগ গুলোর সর্বোচ্চ ওজন ৭ থেকে ৮ কেজি পরিমাণ হয়ে থাকে এবং মুরগিগুলোর ওজন তিন থেকে পাঁচ কেজি পরিমাণে হয়ে থাকে। টাইগার মুরগি প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৫০ গ্রাম পর্যন্ত খাবার গ্রহণ করে থাকে এবং এই মুরগিগুলো ১৬০ থেকে ১৮০ টি ডিম দেয় বছরে। এ মুরগির ডিম দেওয়ার বয়স হয় ৫ থেকে ৭ মাসের মধ্যেই। আপনারা চাইলে খুব সহজেই বাণিজ্যিকভাবে টাইগার মুরগী এবং টাইগার মুরগির ডিম উৎপাদন করতে পারেন। টাইগার মুরগি বাজারে ভালো দামে বিক্রি হয়ে থাকে।

টাইগার মুরগির খাবার তালিকা

সারা বিশ্বের বিভিন্ন ধরনের জাতের মুরগি বিভিন্ন ধরনের খাবার খায়। টাইগার মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যান্য মুরগির তুলনায় অনেক বেশি হয়ে থাকে এবং অন্যান্য মুরগির তুলনায় এর ওজন বেশি হয়ে থাকে। তাই টাইগার মুরগির স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও স্বাভাবিক গঠনের জন্য পরিমাণ মতো প্রত্যেকদিন পুষ্টিকর খাবার দেওয়া অত্যন্ত জরুরী। টাইগার মুরগিকে সাধারণত এদের বয়স অনুযায়ী এবং ওজন অনুযায়ী পরিমাণমতো পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। আপনারা যারা বাণিজ্যিকভাবে টাইগার মুরগি পালন করতে চান অথবা বাড়িতেই টাইগার মুরগী পালন করতে চান তাদের টাইগার মুরগির খাবার তালিকা সম্পর্কে জানতে হবে। টাইগার মুরগি সাধারণত দিনে ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম পরিমাণ খাবার খেয়ে থাকে। চলুন আমরা জেনে নেই টাইগার মুরগির খাবার তালিকা সম্পর্কে:
  • সাধারণত টাইগার মুরগির বাচ্চা জন্ম হওয়ার সাথে সাথে তাদের শারীরিক ওজন ৪০ থেকে ৫০ গ্রাম এর মত হয়ে থাকে এবং এই সময়ে তাদের দৈহিক বৃদ্ধির শূন্য হয়ে থাকে। তাই তাদের খাবারের পরিমাণও এই সময়ে শূন্য হবে।
  • টাইগার মুরগির বাচ্চার বয়স যখন একদিন হবে সে সময়ে এদেরকে এদের ওজন অনুযায়ী পেরু গ্রাম পরিমাণ খাবার দিতে হবে।
  • দ্বিতীয় দিনে টাইগার মুরগির ওজন ৭২ গ্রাম হয়ে থাকে এবং এই সময়ে ১৭ গ্রাম থেকে ৩০ গ্রাম পরিমাণ খাবার দিতে হবে।
  • তৃতীয় দিনে টাইগার মুরগির ওজন ৯০ গ্রাম হয়ে থাকে এবং এ সময়ে তাদেরকে ৫১ গ্রাম পরিমাণ খাবার দিতে হবে।
  • চতুর্থ দিনে যখন বাঁচার ওজন ১১০ গ্রাম হবে এবং তাদের দৈহিক বৃদ্ধির বিশ গ্রাম পরিমাণ হবে তখন তাদেরকে ৭৫ গ্রাম পরিমাণ খাবার খাওয়াতে হবে।
  • পঞ্চম দিনের যখন তাদের মোট ওজন হবে ১৩২ গ্রাম তখন তাদেরকে খাবার দিতে হবে।
  • এরপর বয়স অনুযায়ী ষষ্ঠ দিনের।যখন তাদের ওজন ১৫৭ গ্রাম পরিমাণে হবে, তখন তাদেরকে ১০৫ গ্রাম পরিমাণ খাবার দিতে হবে।
  • সপ্তম দিনে টাইগার মুরগির বাচ্চাগুলোর বয়স অনুযায়ী যখন তাদের ওজন ১৮৫ গ্রাম হবে তখন এদেরকে ১৬৮ গ্রাম পরিমাণে খাবার খাওয়াতে হবে।

টাইগার মুরগি পালন পদ্ধতি

সাধারণত টাইগার মুরগি পালন পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ। এই মুরগিগুলো সাধারণত বছরে ১৬৫ থেকে ১৮৫ টি ডিম দিয়ে থাকে এবং দুই থেকে আড়াই বছর এই মুরগি গুলোর ডিম পাড়ে। সাধারণত এ মুরগিগুলো পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যেই ডিম দিতে শুরু করে। আপনারা চাইলে বাণিজ্যিকভাবে টাইগার মুরগির উৎপাদন করতে পারেন অথবা বাড়িতে এ মুরগি পালন করতে পারেন। এর মধ্যে আপনারা যেভাবে উৎপাদন করেন না কেন এই মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে আপনাদের সকলের জানা উচিত। আসুন জেনে নেই টাইগার মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে:
  • যেকোনো মুরগি পালন করতে হলেই প্রথমেই সেই মুরগি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখতে হবে। অর্থাৎ টাইগার মুরগি পালন করতে হলে প্রথমে টাইগার মুরগি সম্পর্কে আপনার সঠিক ধারনা থাকতে হবে।
  • আপনারা টাইগার মুরগির সাধারণত যে কোন খোলা জায়গাতেই পালন করতে পারবেন। তবে এ বিষয়ে খেলাতে হবে যেন সে জায়গাটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে, এবং পর্যাপ্ত আলো বাতাস পূর্ণ হয়।
  • টাইগার মুরগি যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘোরাফেরা করতে পারে সেজন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • টাইগার মুরগির বয়স অনুযায়ী এবং শারীরিক ওজন অনুযায়ী সময়মতো সকাল এবং সন্ধ্যা খাবার দিতে হবে।
  • এছাড়াও টাইগার মুরগী গুলো যাতে অসুস্থ হয়ে না পড়ে সেজন্য সময়মতো ভ্যাকসিন সিডিউল অনুযায়ী মুরগিগুলোকে ভ্যাকসিন দিতে হবে না হলে মুরগি গুলো খুব সহজেই রোগ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে একটি মুরগি যদি কোন রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য নদী গুলো দেখা যাবে রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই সঠিক সময় জরুরি একটি বিষয়।

টাইগার মুরগির বাচ্চার দাম

আপনারা যারা টাইগার মুরগির ব্যবসা করতে চান এবং বাণিজ্যিকভাবে টাইগার মুরগি উৎপাদন করতে চান তাদের মুরগির বাচ্চার দাম সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। সাধারণত বাজারে ৫০ গ্রাম ওজনের এক পিস টাইগার মুরগির বাচ্চার দাম হয়ে থাকে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা পর্যন্ত এবং 10 দিনের টাইগার মুরগির বাচ্চার দাম ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। 
মুরগির বাচ্চার টাইগার মুরগির বাচ্চার দাম অন্যান্য মুরগির বাচ্চার দামের তুলনায় তুলনামূলকভাবে একটু বেশি হয়ে থাকে। সাধারণত বাজারের ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত টাকার মুরগির বাচ্চার দাম হয়ে থাকে। তবে টাইগার মুরগির বয়স, ওজন এবং এর মাংসের তারতম্যের উপর ভিত্তি করে এক এক জায়গায় এই মুরগির দাম এক এক ধরনের হতে পারে।

টাইগার মুরগির ভ্যাকসিন তালিকা

  • বয়স+রোগের নাম+ভ্যাকসিনের নাম+প্রয়োগ পদ্ধতি
  • এক থেকে তিন দিন+রানীক্ষেত+ব্রংকাইটিস আইবিডি+এনডি লাইভ চোখে ফোটা দিতে হবে।
  • সাত থেকে নয় দিন+গামবোরো+আইবিডি+সরাসরি মুখে খাওয়াতে হবে।
  • ষোল থেকে সতেরো দিন+রানীক্ষেত+লেসটা+সরাসরি চোখে ড্রপ দিতে হবে।
  • আঠের থেকে বিশ দিন+গামবোরো+আইবিডি+সরাসরি খাবার পানিতে গুলে খাওয়াতে হবে।
  • চব্বিশ থেকে আঠাশ দিন+এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা+এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা+কিল্ড+চামড়ার নিচে ইনজেকশন দিতে হবে।
  • ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ দিন +ফাউল পক্স+ফাউল পক্স+ডিএনএ লাইভ+ডানায় সুচ ফোটাতে হবে+
  • ছয় থেকে সাত সপ্তাহ+রানীক্ষেত+এনডি+কিল্ড+ঘাড়ের চামড়া নিচে ইনজেকশন দিতে হবে
  • আট সপ্তাহ+ফাউল কলেরা+ফাউল কলেরা+কিল্ড+ নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
  • নয় সপ্তাহ+ইনফেকশন করাইযা সালামলেনা+কিল্ড লাইভ+সরাসরি নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
  • বার সপ্তাহ+ফাউল কলেরা+ফাউল কলেরা+কিল্ড+নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
  • পনের থেকে ষোল সপ্তাহ+এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা+ এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা+ কিল্ড+ চামড়ার নিচে ইনজেকশন দিতে হবে।
  • ষোল সপ্তাহ+করায়যা, সালমলিনা, ব্রংকাইটিস রানীক্ষেত+জি + এম বি + আইভি+কিল্ল্ড নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সাধারণত বিভিন্ন ধরনের কোম্পানি অনেক ধরনের ভ্যাকসিন বাজারে বাজারজাত করে। তাই মুরগির রোগের নাম অনুসারে ভ্যাকসিন সিলেক্ট করতে হবে এবং যাতে কোনভাবে ভুল ভ্যাকসিন দেওয়া না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

শেষ কথাঃ টাইগার মুরগি

আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি আপনারা বিস্তারিত উপকৃত হয়েছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url