রাগের মাথায় তালাক দিলে কি তালাক হয় - না জেনে তালাক দিলে কি হয়

প্রিয় গ্রাহক আপনার স্ত্রী সাথে রাগারাগি হয়েছে এবং রাগের মাথায় তালাক দিয়ে ফেলেছেন? রাগের মাথায় তালাক দিলে কি তালাক হয় এটা নিয়ে ভাবছেন? আজকের এই বিষয় থেকে আপনি জানতে পারবেন না যেন তালাক দিলে কি হয় এবং বিশেষ করে হানাফী মাযহাবে তিন তালাকের বিধান সম্পর্কে কি বলা হয়েছে।
রাগের মাথায় তালাক দিলে কি তালাক হয় - না জেনে তালাক দিলে কি হয়
পারিবারিক সংসারে চলার পথে স্বামী স্ত্রীর সাথে তো সমস্যা হয়ে থাকে। এই সমস্যা হতে পারে বিভিন্ন কারণে। ছোটখাটো সমস্যা থেকে রাগের মাথায় স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিয়ে থাকে। তালাক শব্দটা যে কতটা ভয়ংকর আমরা কেউ বুঝিনা। আল্লাহর কাছে দুইটা হালাল এর মধ্যে জঘন্যতম একটি হলো তালাক।

ভূমিকা

না জেনে তালাক দিলে কি হয়? তালাক আল্লাহতালার কাছে একদম পছন্দ নয়, কারণ তালাক মানে হলো- একে অন্যের সাথে বিচ্ছিন্ন করা। একে অন্যকে অকারণে তালাক দেওয়া ইসলামিক ভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। ইসলামে অন্য সমস্ত কাজ নিয়ত না থাকলে হয় না কিন্তু তালাক এমন একটি কাজ যা আপনি যদি মজা করতে করতে বা দুষ্টুমি করতে করতে বলে ফেলেন তালাক, তাহলে তালাক হয়ে যায়।

রাগের মাথায় তালাক দিলে কি তালাক হয়

রাগের মাথায় তালাক দিলে কি তালাক হয়? নবী করীম (সাঃ) বলেন, তিনটি কাজ মানুষ সিরিয়াসলি করলে যা হয়, দুষ্টুমি করে বললেও তা হয়। তার মধ্য একটি হলো তালাক। তালাকের এই বিষয়টি স্পষ্ট কাতর। অর্থাৎ কেউ যদি রাগের মাথায় তালাক দিয়ে থাকে তাহলে তালাক হয়ে যাবে। যদি এমন হয় যে রাগের মাথায় কি বলেছে সে নিজেও জানেনা তাহলে সেটি তালাক হবে না।

তবে যদি স্ত্রী এভাবে বলে যে আমি তোমাকে তালাক দিলাম এভাবে বললে কিন্তু তালাক হবে না। তালাক দেওয়ার জন্য ইসলামের নিয়ম রয়েছে। একজন স্বামী স্ত্রী বিচ্ছেদ হওয়া আল্লাহ তাআলা নিজে চাই না। তবে যদি রাগের মাথায় তালাক দিয়ে ফেলেন অবশ্যই তালাক হয়ে যাবে। পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারা ২৩০ নম্বর আয়াতে বলেন-

فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِنْ بَعْدُ حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَةً فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَنْ يَتَرَاجَعَا إِنْ ظَنَّا أَنْ يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُوْنَ

ফাইং তাল্লাকাহা-ফালা-তাহি'ল্লু লাহু মিম্ বা'দু হাত্তা- তাংকিহা ঝাওজান গাইরাহু ফাইং তাল্লাকাহা- ফালা-জুনা-হা 'আলাইহিমা-আই ইয়াতারা-জা'আ ইং জান্না-আইঁ ইউকসীমা-হু দূদাল্লা-হি ওয়া তিল্কা হু'দুদুল্লা-হি ইউবাইয়িনুহা-লিকাওমিই ইয়া'লামুন।

অর্থঃ জন্য হালাল হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ভিন্ন একজন স্বামী সে গ্রহণ না করে। অতঃপর সে (স্বামী) যদি তাকে তালাক দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের অপরাধ হবে না যে, তারা একে অপরের নিকট ফিরে আসবে, যদি দৃঢ় ধারণা রাখে যে, তারা আল্লাহর সীমারেখা কায়েম রাখতে পারবে। আর এটা আল্লাহর সীমারেখা, তিনি তা এমন সম্প্রদায়ের জন্য স্পষ্ট করে দেন, যারা জানে।

রাগের মাথায় তালাক দিলে করনীয় কি

আপনি রাগের মাথায় যদি তালাক দিয়ে ফেলেন তাহলে তালাক হয়ে যাবে। চার ইমামের মতে অবশ্যই যদি তিন তালাক দিয়ে ফেলেন তাহলে তালাক হবে। যদি ভুলে তালাক দিয়ে থাকেন তাহলে এখন আপনি কি করবেন চলুন জেনে নেওয়া যাক-
যদি ভুলে রাগ বসত আপনি আপনার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে ফেলেন, তাহলে অবশ্যই আপনাকে নতুন ভাবে বিয়ে করতে হবে। আর নতুন বিয়ে অর্থ হলো নতুন মাহার, সাক্ষী নির্ধারণ করতে হবে।

কি কি শব্দ বললে তালাক হয়

কি কি শব্দ বললে তালাক হয়? তালাক এমন একটি মারাত্মক শব্দ, যেটা মজা করে বললেও হয়ে যাবে অথবা এমনি এমনি বললেও হয়ে যাবে। এছাড়া মনে রাখবেন রাগের কারণে যদি তালাক দিয়ে থাকেন তাও তালাক হয়ে যাবে। এছাড়াও তালাক শব্দ ব্যতীত কিছু শব্দ রয়েছে যেগুলো তালাকের অন্তর্ভুক্ত। যেমন- তোমাকে তালাক দিলাম, তোমাকে তালাক দিছি, তোমাকে তালাক দিয়েছি, তোমাকে আমার জীবন থেকে মুক্ত করে দিলাম, তোমাকে ছেড়ে দিলাম যদি এ সকল কথা বললেও তালাক হয়ে যাবে। কারণ এগুলো তালাকের ইঙ্গিত বাহক শব্দ।
তালাকে সুন্নত পদ্ধতি হল-যদি মনে করেন আপনার স্ত্রীর সাথে আর সংসার করা যাবে না সংসার করার মতো না। এক্ষেত্রে প্রথমত আপনার স্ত্রীকে সুযোগ দিবেন শুধরানোর জন্য। বিভিন্ন ধরনের ধাপ অতিক্রম করবেন আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন-

যদি স্ত্রী এবং স্বামীর বলিবনা না হয় তাহলে প্রথমে বিছানা আলাগ করো(রাগ কর বা অভিমান কর) এতে যদি সংশোধন হয় তাহলে আলহামদুলিল্লাহ। আর যদি এদের সংশোধন না হয় তাহলে ছেলের পক্ষ থেকে একজন এবং মেয়ের পক্ষ থেকে একজন তারা বসে আলোচনা করবে এবং কার দোষ দেখে মিলানোর চেষ্টা করবে, সংশোধন করানোর চেষ্টা করবে। এতেও যদি কাজ না হয় তাহলে একটু অপেক্ষা করতে হবে মাসিক হওয়া পর্যন্ত। মাসিক হওয়ার পরে পবিত্র হয়ে সম্পর্ক বা শারীরিক মিলন হওয়ার আগে তালাক দিতে হবে।

একসাথে তিন তালাক দিলে কি তালাক হবে

কুরআন এবং সুন্নাহ বক্তব্য হলো, তালাক দুইবার দিতে হবে, তৃতীয় তালাকের আগে অপশন হল দুটো হয়তাকে দ্বিতীয় তালাক দিয়ে বিদায় করে দেবে, আবার হয় তাকে ঘরে আনবে। রাসূল (সাঃ) এর যুগে তিন তালাক দিলে এক তালাক অনুষ্ঠিত হত। পরবর্তীতে ওমর (রাঃ) একটি রাষ্ট্রীয় আইন যারি করলেন, যখন ওমর (রাঃ) দেখলেন তালাকের ব্যাপ্তি বেড়ে যাচ্ছে তখন যে রাষ্ট্রের আইন জারি করলেন যে তিন তালাক দিলে তিন তালাক অনুষ্ঠিত হবে।

না জেনে তালাক দিলে কি হয়

মহানবী (সাঃ) বলেছেন, যে তিনটি বিষয়ে আপনি জেনে বা না জেনে, বুঝে বা না বুঝে, অথবা সিরিয়াসলি বললেও হয়ে যাবে তার মধ্যে একটি হলো তালাক। অর্থাৎ এখানে যদি আপনি না জেনে তালাক দিয়ে থাকেন বা রাগের মাথাতে দিয়ে থাকেন তাহলেও তালাক হয়ে যাবে। আপনি না জেনে থাকলেও তালাক হয়ে যাবে। এছাড়া আপনি যদি কথার কথা বলেন এই আর কি করে বলেন যে তালাক তাও আপনার তালাক হয়ে যাবে।

মোবাইলে তালাক দিলে কি তালাক হবে

মোবাইলে যদি তালাক দেন আপনার স্ত্রীকে সঙ্গে সঙ্গে তালাক হয়ে যাবে। তালাক হবার জন্য সাক্ষীর কোনো প্রয়োজন হয়না। নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, যেগুলো মানুষ দুষ্টামি করে বললেও হয়ে যাবে এবং সিরিয়াসলি বললেও হয়ে যাবে। রাগা রাগি করে যদি মোবাইলে আপনি তালাক দেন এবং পরে যদি ভাবেন যে কি করলেন, এছাড়াও যদি মনে করেন যে মোবাইলে তালাক দিয়েছেন সরাসরি নয়, এমন মনে করলেও আপনার তালাক হয়ে যাবে।

কারণ তালাক হতে কোনো সাক্ষী লাগে না। এমনকি আপনি যদি তালাক দিতে দিতে আপনার স্ত্রী ফোন কেটে দিছে বা শুনে নাই তারপরও তালাক হয়ে যাবে। এজন্য তালাক মুখ থেকে বের হওয়ার আগে ১০০ বার ভেবে নিবেন। কারন একবার বলার পরে আর আপনার বৈবাহিক সম্পর্ক থাকবে না।

ভয় দেখানোর জন্য তালাক বললে কি তালাক হবে

ভয় দেখানোর জন্য তালাক বললে কি তালাক হবে? তালাক মারে তালাক আপনি যদি ভয় দেখানোর জন্য তালাক বলে থাকেন তাহলেও তালাক হয়ে যাবে। তবে একটি পদ্ধতি অবলম্বন করলে আপনার তালাক হবে না তা হলোন-ইনশাল্লাহ এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক। এটার মানে হল-আল্লাহ তাআলা যদি চান তাহলে তোকে আমি এক তালাক দুই তালাক তিন তালাক দিলাম।

আপনি যদি ইনশাল্লাহ বলে তালাক দিয়ে থাকে তাহলে আপনার তালাক হবে না। যখন আপনি ভয় দেখানোর জন্য তালাক বলবেন ইনশাল্লাহ বলেই বলবেন। কারণ আল্লাহ তায়ালা কখনো চাইবে না স্বামী স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘোটুক। ইনশাল্লাহ না বলে তালাক দিলে অবশ্যই তালাক হয়ে যাবে। এজন্য রাগের মাথায় কোন কিছু বলার আগে ভেবে নিবেন।

হানাফী মাযহাবে তিন তালাকের বিধান

হানাফী মাযহাবে তিন তালাকের বিধান হল- হানাফী মাযহাব অনুযায়ী যদি স্ত্রী সাথে স্বামীর চার মাস সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন থাকে তাহলে অটোমেটিক তালাক হয়ে যায়। তালাকের অধিকার শুধু পুরুষ কেই দেওয়া হয়নাই নারিদের দেওয়া হয়েছে। এখানে পুরুষ যদি উন্মাদ হয় বা জালিম হয় তাহলে স্ত্রীর প্রমাণ করে স্বামিকে ত্যাগ করে ইচ্ছামত স্বামী গ্রহণ করতে পারবে। মহানবী (সাঃ) এর কাছে একজন সাহাবী গিয়ে বললেন, একজন তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছে। তখন নবীজি একথা শুনে দাঁড়িয়ে পড়লেন এবং তিনি বললেন, এই লোকটি আল্লাহ পাকের কোরআনের সাথে তামাশা করেছে।

আল্লাহর কাছে দুইটা হালাল সবচেয়ে বেশি জঘন্য। একটা হল ভিক্ষা এবং আরেকটা হল তালাক। যখন তালাক দেয়া হয় অন্যভাবে তখন আল্লাহর আরশ কাঁপে(নাউজুবিল্লাহ)। তালাক দেওয়ার নিয়ম হল, যখন আপনার স্ত্রীর সাথে বনি বনা হচ্ছে না, স্ত্রীরি চরিত্র খারাপ, স্ত্রী দাজ্জাল প্রকৃতির। এক্ষেত্রে আল্লাহপাক বলেছেন, উভয়পক্ষের আত্মীয়-স্বজন নিয়ে আলাপ করানোর চেষ্টা করো।

যদি মীমাংসা না হয় তাহলে এক মাসে এক তালাক দাও, বিছানা আলাদা করে দাও এবং অপেক্ষা করো এই অবস্থা থেকে সে ফিরে আসে কিনা। যদি ফিরে আসে তাহলে গ্রহণ করো আর যদি ফিরে না এলো তাহলে দ্বিতীয় মাসে দ্বিতীয় তালাব দাও। এরপরেও যদি ফিরে না আসে তাহলে তিন মাসে গিয়ে তৃতীয় তালাক দাও। একেবারে বিদায় করে দেওয়ার কোন ফেরত হবে না। এই স্ত্রীকে আর গ্রহণ করা যাবে না।

অনেকে রাগের মাথায় বা কথায় কথায় তালাক দিয়ে থাকে। অনেকে বলে থাকে যে তিন তালাকের পরে ওই স্ত্রীকে নেওয়ার একটি উপায় আছে সেটি হল-স্ত্রীকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে এবং তাকে তালাক দিয়ে তারপরে সেই স্ত্রীকে গ্রহণ করতে পারবে। আসলে সঠিক বিধান এটা নয়।

সঠিক বিধান হল-যদি স্ত্রীকে তিন তালাক দেওয়ার পরে সে স্ত্রী যদি নিজের ইচ্ছায় অন্য জায়গায় বিয়ে করে এবং ওখানে কোন কারনে বিচ্ছেদ হয় বা স্বামী মারা গেলে তারপরে সে স্ত্রী প্রথম স্বামীর কাছে ফিরতে পারবে। এছাড়া কিয়ামত পর্যন্ত ফিরতে পারবে না। যদি মনে মনে নিয়ত এমন থাকে যে স্ত্রীকে বিয়ে করায় দিয়ে এবং তালাক দিয়ে তারপরে নিজে বিয়ে করবো তাহলে কখনো সম্ভব না এটি হারাম।

লেখকের মন্তব্য

তালাক এমন একটি বিপদজনক শব্দ যেটা একবার বললেই তালাক হয়ে যাবে, সেটা হতে পারে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত। এজন্য রাগের মাথায় কখনো হুশ হারাবেন না কারণ, ভুলের তিন তালাক দিয়ে ফেললে তাহলে আর ফেরাতে পারবেন না। ইসলামের বিধি বিধান রয়েছে তালাক সম্পর্কে। এমন কোন সিচুয়েশন আসে যে আপনি আপনার স্ত্রীকে তালাক দিবেন, অবশ্যই একজন জ্ঞানী আলেমের থেকে পরামর্শ নিবেন।

প্রিয় গ্রাহক আশা করি এই আর্টিকেল থেকে আপনি তালাক সম্পর্কিত সকল তথ্য জানতে পেরেছেন। এমন আরো তথ্য থেকে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন। আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url