৫০টি পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান

বাংলাদেশের পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত পদ্মা সেতু ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয়। পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান রাখা অত্যন্ত জরুরি। পদ্মা সেতু আমাদের দেশের একটি সম্পদ। তাই আজকে আমরা পদ্মা সেতুর সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান এবং এ সম্পর্কিত আরো বিভিন্ন ধরনের তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান
পদ্মা সেতু বাংলাদেশে নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি একটি সেতু। এসে তো সম্পর্কে অনেক কিছু জানার রয়েছে। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান এবং এ সম্পর্কিত আরো তথ্য সম্পর্কে জানাবো। চলুন আমরা জেনে নেই পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান।
পোস্ট সূচিপত্র

ভূমিকা : পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান

পদ্মা সেতু বাংলাদেশের নিজস্ব তহবিলে তৈরি বড় একটি প্রকল্প। পদ্মা সেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সেতু যার মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন হয়েছে। পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান রাখা অত্যন্ত জরুরী কারণ পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান পরবর্তীতে আমাদের বিভিন্ন ধরনের কাজে লাগবে। 
আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ করার মাধ্যমে আপনারা পদ্মা সেতুর ইতিহাস, পদ্মা সেতুর নকশা ও কর্মপরিকল্পনা, পদ্মা সেতু কত কিলোমিটার এছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই আজকের আর্টিকেলটি আপনারা সম্পূর্ণ পড়ুন।

পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান

পদ্মা সেতুর সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান এবং আরো তথ্য নিচে আলোচনা করা হলো:
  • পদ্মা সেতুর প্রকল্পের নাম হল পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প যা বাংলাদেশের পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু।
  • মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে শরীয়তপুর ও মাদারিপুর সংযুক্ত হয়েছে।
  • বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ২০২২ সালের ২৫ জুন নিজ হাতে টোল প্রদান করার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতু উদ্ভোধন করেন।
  • পদ্মা সেতু উৎপাদন করার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৬৪০০ টাকা টোল প্রদান করেছেন যার মধ্যে তিনি নিজের গাড়ির জন্য জল দিয়েছেন ৭৫০ টাকা।
  • বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সেতু হলো পদ্মা সেতু।
  • পদ্মা সেতুর নকশা হংকংয়ে করা হয়।
  • পদ্মা সেতু বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি একটি সেতু।
  • সাধারণত পদ্মা সেতু দ্বিতল বিশিষ্ট কংক্রিট ও স্টিল দ্বারা নির্মিত একটি সেতু।
  • পদ্মা সেতু চার লাইনের সড়ক পথ বিশিষ্ট এবং নিচের স্তরে একক রেলপথ বিশিষ্ট একটি সেতু।
  • পদ্মা সেতু ৪১টি স্প্যান দ্বারা নির্মিত এবং প্রত্যেকটি স্প্যান ১৫০.১২ মিটার লম্বায় ও ২২.৫মিটার চওড়ায়।
  • পদ্মা সেতু ৬.১৫ কিলোমিটার।
  • পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করা হয় ২০২২ সালের ২৫ জুন।
  • পদ্মা সেতু প্রকল্পে ব্যয় করা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
  • পদ্মা সেতুর পিলার সংখ্যা যথাক্রমে ৪২ টি।
  • পদ্মা সেতু ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট একটি সেতু।
  • পদ্মা সেতুর প্রস্থ সাধারণত ১৮.১০ মিটার।
  • পদ্মা সেতুর দুই প্রান্ত মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুর এই দুটি জেলায় অবস্থিত।
  • পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে আমেরিকার মাল্টিন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম AECOM এর মাধ্যমে।
  • পদ্মা সেতু বিশ্বের গভীরতম পাইলের একটি সেতু।
  • পদ্মা সেতুর উচ্চতা ৬০ ফুট পানির স্তর থেকে।
  • পদ্মা সেতুর কাজ ২৬ নম্বর ২০১৪ সালে শুরু করা হয় এবং শেষ করা হয় ২৩ জন ২০২২ সালে।
  • পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ২০২২ সালে বাংলাদেশের প্রায় ২৩ টি জেলার ২১ হাজার ৩০০টি যানবাহন চলাচল করবে বলে ধারণা করা হয় যা পরবর্তীতে ২০২৫ সালে এসে বেড়ে দাঁড়াবে ৪১৬০০০ তে।
  • পদ্মা সেতুর খরচ উঠতে প্রায় নয় বছর সময় লাগবে টোল আদায়ের মাধ্যমে।
  • পদ্মা সেতু নির্মাণকালে যে সকল উৎসে অর্থ ব্যয় হয়েছে তা হল: অবকাঠামো তৈরিতে, সংযোগ সড়ক তৈরিতে, বেতন ভাতা প্রদানে, পুনর্বাসন ও পরিবেশ,ভূমি অধিগ্রহণ কার্যে, নদী শাসন কার্যে ইত্যাদিতে।
  • পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশের অর্থ বিভাগের সাথে সেতু বিভাগের চুক্তি সম্পাদিত হয়। যেখানে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য বাংলাদেশের অর্থ বিভাগ সেতু বিভাগকে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করে থাকে।
  • এক্ষেত্রে সেতু কর্তৃপক্ষ ৩৫ বছরের মধ্যে এক শতাংশ হারে ঋণ পরিশোধ করবে বলে চুক্তিবদ্ধ হয়।
  • ২০১৭ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতুর পিলারের ওপর প্রথম স্প্যান বসানো হয়।
  • পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসানো হয় শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর।
  • পদ্মা সেতুর দ্বিতীয় স্প্যান বসানো হয় ২৮ জানুয়ারি যা ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারের ওপর ৭, সুপার স্ট্রাকচার বসানোর মাধ্যমে স্থাপন করানো হয়। কিন্তু পদ্মা সেতুর পিলারের ওপর তৃতীয় স্প্যান বসানো হয় ১১ মার্চ, চতুর্থ স্প্যান বসানো হয় ১৩ মে এবং পঞ্চম স্প্যান বসানো হয়েছে ২৯ জুন।
  • পদ্মা সেতুর সপ্তম স্প্যান বসানো হয় মামা প্রান্তে।
  • পদ্মা সেতুর, ২০ ফেব্রুয়ারি অষ্টম স্প্যান বসানো হয় ৩৫ ও ৩৬ নম্বর পিলারের উপর।
  • পদ্মা সেতুতে মোট ৪১ টি স্প্যান বসানো হয়েছে।
  • পদ্মা সেতুর পিলার সংখ্যা ৪২ টি।
  • পদ্মা সেতুর ৪১ তম স্পেন বসানো হয় ১০ ডিসেম্বর ১২,১৩ নম্বর পিলারের ওপর এবং এর মাধ্যমে পুরো পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হয়।
  • পদ্মা সেতুতে ৪১৫ টি বাতি বা লাইট রয়েছে।
  • ২৪ জুন ২০২২ পদ্মা সেতুর সবগুলো বাতিল একসাথে জালানো হয়। এবং চারজন হতে ১০ জন পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে ধাপে সেতুর বাতি বা লাইট গুলোর পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন করা হয়েছে।
  • পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ২০১৪ সালের ১৭ জন বাংলাদেশ সরকার ও চায়না ব্রিজ কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়।
  • পদ্মা সেতু দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ষষ্ঠ সেতু।
  • পদ্মা সেতুর দৃশ্যমান হয় ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সালে।
  • পদ্মা সেতুতে প্রথম বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার ইসরাত জাহান এসে কাজ করেছেন।
  • চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড হলো পদ্মা সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান।
  • পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের প্রায় চার হাজার শ্রমিক কাজ করেছেন।
  • পদ্মা সেতু ৩৮৩ ফুট গভীরতা পাইলিং সম্পন্ন একটি সেতু।
  • পদ্মা সেতু নির্মান কালে প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকা নদী শাসনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
  • বাংলাদেশের সব থেকে দীর্ঘতম সেতু হলো পদ্মা সেতু।
  • পদ্মা সেতু নির্মাণকালে ১১ স্বদেশের বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠিত হয়েছিল।
  • পদ্মা সেতু নির্মাণকালে সাতটি দেশের কোন না কোন কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়েছিল।
  • পদ্মা সেতুতে ২০ টি দেশের মানুষের মেধা ও শ্রম কাজে লাগানো হয়েছে।
  • পদ্মা সেতু নির্মাণ কালে এর প্যানেল সভাপতি ছিলেন প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী।

পদ্মা সেতুর ইতিহাস

পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে বাংলাদেশ অন্য কোন দেশের কাছ থেকে ঋণ আদায় করেনি বরং বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে না অর্থাৎ সম্পূর্ণ দেশের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকা ও দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ঢাকা-মাওয়া খুলনা মহাসড়কে সেতু নির্মাণের জন্য প্রথম প্রস্তাব করা হয় ১৯৯৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। যেখানে ৩৬৪৩.৫০ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়। 
এবং পরবর্তীতে ২০০৬ এবং ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ আরম্ভ করা হয়। পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানির মধ্যে চুক্তি সম্পাদন করা হয়। এবং পদ্মা সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও চল আদায়ের জন্য করিয়া এক্সপ্রেস ওয়ে কর্পোরেশন ও চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি নিয়োগপ্রাপ্ত হয়।

এক্ষেত্রে পদ্মা সেতু নির্মাণকালে বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশ জুড়ে। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় অপহরণকারীর ধারণা এবং মানসিক ভারসাম্যহীনদের মারধর ও গণ পিটুনির ঘটনাও ছড়িয়ে পড়ে। তবে এ সকল তথ্য ভিত্তিহীন বলে ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই তারিখে পদ্মা সেতু নির্মাণ কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করে।

পদ্মা সেতুর নকশা ও কর্মপরিকল্পনা

পদ্মা সেতুর পরিচালক মোঃ শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন যে, পদ্মা সেতু একক ভাবে না বরং যৌথভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। যেখানে তাদের বহু কনসালটেন্ট ছিলেন। পদ্মা সেতুর নকশাল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল নিউজিল্যান্ড ভিত্তিক পরামর্শ প্রতিষ্ঠান এইসিওএম প্রতিষ্ঠানকে যারা ১৯৯০ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করেছেন। 
সাধারণত পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নের কার্যক্রম ১৯০৯ সালে হংকংয়ের একটি কোম্পানির নেতৃত্বের মাধ্যমে আরম্ভ করা হয়। এছাড়াও এই কোম্পানির সাথে আরো অনেক কোম্পানি জড়িত ছিল যেমন: অস্ট্রেলিয়ার এসমেক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড কোম্পানি, কানাডার নদ ওয়েস্ট হাইড্রোলিক কনসালটেন্ট এছাড়াও বাংলাদেশের এসিই লিমিটেড কোম্পানি।

শেষ কথা: পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান

পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প গুলোর মধ্যে একটি, যা বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি হয়েছে। আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার মাধ্যমে আশা করছি আপনারা পদ্মা সেতু সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের সাধারণ জ্ঞান এবং এসব সম্পর্কিত আরো বিভিন্ন ধরনের তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url