মাসিকের কত দিন পর সহবাস করা যায় জানুন

মাসিকের কত দিন পর সহবাস করা যায় এ প্রশ্ন যারা নববিবাহিত নতুন দাম্পত্য জীবন শুরু করছেন তাদের অনেকেরই মনে বাসা বাঁধে। মাসিক হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা প্রতিটি মেয়ের জীবনে নির্দিষ্ট সময়ে শুরু হয়। কিন্তু যারা দাম্পত্য জীবন শুরু করেছেন তারা সকলেই জানে মাসিক চলাকালীন সহবাস করা যায় না। 
মাসিকের-কত-দিন-পর-সহবাস-করা-যায়
তবে এ ব্যাপারে অনেকেই দ্বিধায় থাকে যে, মাসিকের কত দিন পর সহবাস করা যায় এবং ইসলামে মাসিকের কত দিন পর সহবাস করা যায় বা ইসলাম কি বলে এটা জানার জন্য অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করে। সহবাস হলো স্বামী-স্ত্রীর যৌন মিলনের একটি বৈধ প্রক্রিয়া। স্বামী-স্ত্রী উভয়ের যৌন মিলন চাহিদা পূরণের জন্য সহবাস করা হয়ে থাকে এতে স্বামী স্ত্রী উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক খুব ভালো থাকে। তাছাড়া স্বামী স্ত্রী মিলনের ফলে বাচ্চা নেওয়া হয়। 
পোস্ট সূচিপত্র

ভূমিকা-মাসিকের কত দিন পর সহবাস করা যায়

যারা নতুন দাম্পত্য জীবন শুরু করেছেন বা যাদের নতুন বিয়ে হয়েছে তাদের মনে যে সকল প্রশ্ন বাদে যেমন, মাসিকের কতদিন পর সহবাস করা যায়, ইসলামে মাসিকের কতদিন পর সহবাস করা যায়, পিরিয়ডের কতদিন পর সহবাস করলে সন্তান হবে, মাসিকের কত দিন পর কনডম ছাড়া সহবাস করা যায়, পিরিয়ডের আগে সহবাস করলে কি বাচ্চা হয় ইত্যাদি মনে প্রশ্ন বাদে। তাই বন্ধুরা এ সকল প্রশ্ন অনেকেই জানার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে। তাদের কথা ভেবে আজকের এই আর্টিকেলে এ সকল প্রশ্নের সম্পূর্ণ উত্তর পেয়ে যাবেন। আশা করি মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়লে আপনার মনে থাকা সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

মাসিকের কত দিন পর সহবাস করা যায়

প্রতিটি মেয়ের জীবনে মাসিক প্রতিমাসে একবার করে আসে। আর মাসিক হলে মিনিমাম তিন থেকে সাত দিন পর্যন্ত হয়ে থাকে কিন্তু এটি কারো কারো ক্ষেত্রে ২-৩ দিনের মধ্যে ভালো হতে পারে। তবে মাসিক অবস্থায় সহবাস করা যাই না। তবে কিছু কিছু মানুষ আছে যারা পিরিয়ডের চলাকালীন সহবাস করে থাকে। এক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রী দুজনের মতামত থাকতে হবে কিন্তু ব্যাপারটা অনেক নোংরা হয়ে যায়। তাই ইসলাম কি বলে সেটা জানার জন্য অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করে থাকে এবং অনেকেই প্রশ্ন করে মাসিকের কত দিন পর সহবাস করা যায় এ প্রশ্নের উত্তরে ইসলাম থেকে জানা যায়- 

যে ব্যক্তি মাসিক চলাকালীন স্ত্রীর সাথে বা স্ত্রীর পায়ুপথে সহবাস করল বা গণকের কাছে তার কথা বিশ্বাস করে নিল সে প্রকৃতপক্ষে ইসলামকে অস্বীকার করল। তাই মাসিক চলাকালীন বা পিরিয়ড চলাকালীন সহবাস করা থেকে বিরত থাকুন। পিরিয়ড শেষ হবার পরের দিন থেকে সহবাস করা যায় তবে এক্ষেত্রে মেয়েদের পিরিয়ড শেষ হবার পরে ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে ফরজ গোসল করার পরে সহবাস করার কথা উল্লেখ রয়েছে। সেজন্য মাসিকের কত দিন পর সহবাস করা যায় ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে পড়তে থাকুন।

ইসলামে মাসিকের কতদিন পর সহবাস করা যায়

ইসলামে মাসিকের কত দিন পর সহবাস করা যায় এ বিষয়ে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “যে ব্যক্তি পিরিয়ড অবস্থায় সহবাস করে বা পিছনের রাস্তা দিয়ে স্ত্রীর সাথে মিলন করে অথবা কোন গণকের কাছে গমন করে তবে সে আমার নিকট যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অস্বীকার করল” (তিরমিযী)। এছাড়াও বর্তমান চিকিৎসক বা বিজ্ঞান বলেছে, যে মাসিক চলাকালীন অবস্থায় মেয়েদের জরায়ু থেকে যে স্রাব বের হয় তাতে রয়েছে বিষাক্ত যৌগ। 
সেজন্য পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে সহবাস করলে পুরুষদের সে সিফিলিস, গনোরিয়া, ও পুরুষ লিঙ্গ ছোট হয়ে যাওয়া, এবং লিঙ্গে বিকৃতি সহ নানান রোগের কারণ হতে পারে। ইসলামে মাসিকের কতদিন পর সহবাস করা যায় এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেন: “তোমাদের জন্য মাসিক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কর। তিনি বললেন, অপবিত্র। তাই মহিলাদের মাসিকের সময় পর্যন্ত অ্যালকোহল পান করা এড়িয়ে চলতে হবে তাদের কাছে যেও না, যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়। 

সবচেয়ে ভালো সময় কখন আকারে পবিত্র হয়ে আল্লাহর মতে, তাদের কাছে যাও আল্লাহ আদেশ করেছেন যে প্রকৃতপক্ষে অনুতপ্ত, এবং যারা পবিত্র তিনি যারা বেঁচে আছেন তাদের ভালোবাসেন। (বাক্কারা/আয়াত-২২২) অতএব, পিরিয়ড চলাকালীন একজন স্বামী তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করার অনুমতি নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত ফরজ গোসল করলে স্ত্রী ঋতুস্রাব থেকে মুক্তি পায় এবং পবিত্র হয়। মাসিকের সময় একজন মহিলার সাথে সহবাস করা নবীর জন্য হারাম ও নাজায়েজ ছিল এটি নবী কারিম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীস থেকেও এসেছে। 

পিরিয়ড চলাকালীন এ অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সহবাস করা তার উপর অমানবিক জুলুম ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই নিচে ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে আরো বলা হয়েছে বিস্তারিত পয়েন্ট আকারে দেওয়া হল।
  • ঋতুস্রাবের সময় মহিলাদের সাথে সহবাস ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে হারাম।
  • মাসিকের সময় আপনার স্ত্রীর পেটের বোতাম থেকে হাঁটু পর্যন্ত তাকান বা স্পর্শ করা নিষিদ্ধ জিনিস।
  • ঋতুস্রাবের সময় নামাজ পড়া যাবে না এবং এর পরে কাজা নামাজ অব্যাহতি রয়েছে।
  • ঋতুস্রাবের সময় রোজা রাখা নিষেধ, তবে পিরিয়ড শেষ হলে রোজা রাখা আবশ্যক করতে হবে।
  • মাসিকের সময় কুরআন স্পর্শ করা বা তেলাওয়াত করা যাবে না।
  • ঋতুস্রাবের সময় স্ত্রীর সাথে ঘুমানো, তাকে চুমু খাওয়া বা আলিঙ্গন করা জায়েজ আছে।
  • ঋতুস্রাব শেষ হয়েছে কিন্তু আপনি এখনও গোসল করেননি এই ক্ষেত্রে, আপনি সেক্স করতে পারেন না।
  • ঋতুস্রাব তিন দিনের কম বা দশ দিনের বেশি হলে ইস্তিহাজা। ইস্তিহাজায় নামায পড়তে হবে।
  • হজ, মাসিকের সময় কাবাঘর প্রদক্ষিণ ব্যতীত অন্যান্য কাজ কাজ করতে পারে।
আশা করি ইসলামে মাসিকের কত দিন পর সহবাস করা যায় এ প্রশ্নের উত্তর উপরে দেওয়া তথ্য গুলোতে পেয়ে গেছেন। তবে মনে রাখবেন, মাসিক চলাকালীন স্ত্রী সহবাস করা স্বামীর জন্য যেমন হারাম ঠিক তেমনি ওই অবস্থায় স্বামীকে মিলনের সুযোগ দেওয়াও স্ত্রীর জন্য হারাম। এই কথাটি সরাসরি পবিত্র কোরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত।

পিরিয়ডের কত দিন পর সহবাস করলে সন্তান হবে

পিরিয়ড চলাকালীন সময় মেয়েদের ডিম্বাণু থাকে না। অনেকেই মনে করে মাসিকের সময় সহবাস না করলে সন্তান হয় না এটা তাদের চরম মূর্খতা। তবে কিছু কিছু পিরিয়ডের সময় ডিম্বাণু গঠিত হয় যদিও এটা বিরল। পিরিয়ডের সময় মেয়েরা খুবই অসুস্থ থাকে আর সাথে থাকে অসহ্যকর ব্যথা বেদনা এবং মেয়েদের বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা ইত্যাদি। পিরিয়ড চলাকালীন সময় একটি নির্দিষ্ট সময়ে ডিম্বশাই থেকে ডিম্বাণু নির্গত হয়। এই সময়টিকে ডিম্বস্ফোটন বলা হয়। ডিম্বস্ফোটনের আগে ও পরে দশ দিন সময়কে উর্বর সময়কাল বলা হয়। এ সময় সহবাস করলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেশি থাকে। 
তাছাড়া পিরিয়ডের ৯ থেকে ১৯তম দিনের মধ্যে সহবাস করলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর পিরিয়ড শুরুর ৭ দিন আগে থেকে পিরিয়ডের ছয় দিন পর্যন্ত সহবাস করলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা কম থাকে। একটি শুক্রাণু নারীর শরীরে ৩-৫ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। তবে, এটি একটি কেবলমাত্র সাধারণ ধারণা। আপনার ব্যক্তিগত মাসিক বা পিরিয়ড ডিম্বস্ফোটনেরসময় নির্ণয়ের জন্য আরো নির্ভুল উপায় ব্যবহার করা উচিত। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনে রাখবেন, প্রতি মাসে আপনার পিরিয়ড শুরু ও শেষ তারিখ লিখে রাখুন। এতে করে আপনার পিরিয়ড চক্রের সময়কাল নির্ণয় করতে পারবেন। 

তাছাড়াও বাজারে বিভিন্ন ধরনের বেবি টেস্ট চেক করার কিট পাওয়া যায় এ কিট টেস্টগুলো আপনার মূত্র বা নালা ব্যবহার করে ডিম্বস্ফোটনের সময় দেখে নিতে পারেন। আশা করি পিরিয়ডের কতদিন পর সহবাস করলে সন্তান হবে এ প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন।

সহবাসের কত দিন পর বাচ্চা পেটে আসে

সহবাসের কত দিন পর বাচ্চা পেটে আসে তা নির্ভর করে গর্ভধারণের প্রক্রিয়া এর বিষয়ের উপর। সাধারণত সহবাসের পর শুক্রাণু জড়ায়েতে প্রবেশ করে এবং ডিম্বানুর সাথে মিশে নিষিক্ত হয়। নিষিক্ত শুক্রাণু জরায়ুতে ৫ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। সাধারণত ডিম্বাণু নিঃসৃত হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে ঘটে। সুতরাং সহবাসের পর বাচ্চা পেটে আসতে সাধারণত ১৮ থেকে ২৮ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তবে মনে রাখবেন, সহবাসের কতদিন পর বাচ্চা পেটে আসে এর প্রশ্নের তথ্যগুলো গুগল থেকে নেওয়া। আপনার চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শের জন্য একজন যোগ্যতা সম্পন্ন নিকটস্থ স্বাস্থ্যসেবা ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।

বাচ্চা নেওয়ার জন্য সহবাসের উপযুক্ত সময়

মাসিকের কতদিন পর সহবাস করা যায় এ তথ্যের উপরে বিস্তারিত আলোচনা করেছি বাচ্চা নেওয়ার জন্য সহবাসের উপযুক্ত সময় প্রশ্ন অনেকেই পড়ে থাকে। সেজন্য এ প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে, বাচ্চা নেওয়ার জন্য সহবাসের উপযুক্ত সময় হল মাসিক চক্রের সবচেয়ে উর্বর সময় কে। এ সময় ডিম্বস্ফোটন ঘটে যখন ডিম্বাণু নিঃসৃত হয় এবং নিষিদ্ধ হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে। সাধারণত ২৮ দিনে মাসিকের মধ্যে ডিম্বস্ফোটন ১৪ তম দিনে ঘটে। তবে প্রতিটি মেয়ের ক্ষেত্রে মাসিক চক্র আলাদা হতে পারে। 
তাই বাচ্চা নেওয়ার জন্য সহবাসের উপযুক্ত সময় পিরিয়ডের ৯ থেকে ১৯তম দিনের মধ্যে সহবাস করলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেশি থাকে। আশা করি, মাসিকের কত দিন পর সহবাস করা যায় এবং বাচ্চা নেওয়ার জন্য উপযুক্ত সময় কি সে সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন।

শেষ কথা-মাসিকের কত দিন পর সহবাস করা যায়

প্রিয় পাঠক দাম্পত্য জীবনের নতুন নববিবাহিত সুখের জীবন শুরু করার জন্য অনেকের প্রশ্ন মাসিকের কত দিন পর সহবাস করা যায়। এ প্রশ্নের উত্তর এই আর্টিকেল এর মধ্যে পেয়ে গেছেন। আশা করি উপরে দেওয়া তথ্য গুলো আপনার দৈনন্দিন জীবনে অনেক উপকারে আসবে। আরো এমন মজার মজার পোস্ট করতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন আর এ বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে আমাদেরকে জানাতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url