ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন - কর না দিলে কি হবে?

ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন বা আইকর ট্যাক্স রিটার্ন সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই। আপনারা অনেকেই ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন সম্পর্কে জানতে চান। তাই আজকে আমরা আপনাদেরকে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন এবং এ সম্পর্কিত আরো বিভিন্ন ধরনের তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। চলুন তাহলে জেনে আসা যাক ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন সম্পর্কে।

কোন ব্যক্তির উপর তার আয়-বালোভ্যাংশের ওপর প্রদেয় করে হচ্ছে আয়কর বা ইনকাম ট্যাক্স। এবং এই আইকন নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বাৎসরিকভাবে আয়ের সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপস্থাপন করার উপায় হচ্ছে আয়কর রিটার্ন বা ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন। আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার মাধ্যমে আপনারা ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন এবং এ সম্পর্কিত আরো বিভিন্ন ধরনের তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

সরকার কর্তৃক কোন ব্যক্তি বা সত্তার ওপর আরোপিত করই হল আয়কর বা ইনকাম ট্যাক্স। এটি সাধারণত ব্যক্তির লভ্যাংশের ওপর প্রদেয় হয়ে থাকে। আর এই কর সকল জনসাধারণের সাথে লক্ষে এবং দেশের খরচ নির্বাহের জন্য সরকারকে বাধ্যতামূলকভাবে প্রদান করতে হয়। আর এই আইকন নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বাৎসরিকভাবে সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপস্থাপন করার জন্য যে উপস্থাপনা পত্র প্রদান করা হয় তাকে সাধারণত আয়কর রিটার্ন বা ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন বলা হয়ে থাকে। 

আজকে আমরা ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন, ট্যাক্স টোকেন জরিমানা, ইনকাম ট্যাক্স দেওয়ার নিয়ম এছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের তথ্য সম্পর্কে আপনাদেরকে বিস্তারিত জানাবো। তাই আজকের আর্টিকেলটি আপনারা সম্পূর্ণ পড়ুন।

প্রত্যেকটি ব্যক্তিসত্তার উপর তাদের আয়ের ভিত্তিতে ইনকাম ট্যাক্স বা আইকর আরোপিত হয়। এটি দেওয়া বাধ্যতামূলক। ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন বা আয়কর রিটার্ন নির্দিষ্ট সময়ে দাখিল করা বাধ্যতামূলক এতে যদি সময়মতো রিটার্ন করা না হয় তাহলে জরিমানা করার বিধান এখানে প্রযোজ্য হয়। সাধারণত কোন ব্যক্তি বাকরদাতা এক বছরে বা সারাবছরে যে পরিমাণ আয় করেন তার ওপরে এই আয়কর আরোপিত হয়। বিভিন্ন ধরনের কোম্পানির কর্মচারীদের ওপর আলাদা আলাদা পর আরোপিত হয় তাদের লভ্যাংশের ওপর ভিত্তি করে। 

এক্ষেত্রে কোম্পানির করদাতা তাদের রিটার্ন জমা দিতে হয়। ২০২০- ২১ অর্থবছরে ৩ লাখ টাকা করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে করা হলেও ২০২৩ সালের প্রস্তাবিত বাজেটে উল্লেখ রয়েছে যে, লভ্যাংশের প্রথম সাড়ে তিন লাখ টাকায় কোন প্রকার কর দেওয়ার প্রয়োজন নেই এবং তার পরবর্তী এক লাখ টাকার ওপরে সাধারণত পাঁচ শতাংশ হারে এবং এর পরবর্তী প্রতি তিন লাখ টাকায় দশ শতাংশ হারে কর আরোপিত হবে। এরপরে চার লাখ টাকায় পনেরো শতাংশ এবং পাঁচ লাখ টাকার উপরে বিশ শতাংশ ও অন্যান্য আয়ের ওপর বাবা কি আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ হারে আয়কর প্রদান করতে হবে।

সাধারণত কর কমিয়ে দেওয়া বা কম দেওয়াকে কর রেয়াত বলা হয়ে থাকে। একজন করদাতা ব্যক্তি এক বছর ধরে যে পরিমাণ আয় করে থাকেন সে পরিমাণ আয় থেকে অব্যাহতি বাদ দিলে আমরা যেই কর পাই তারপর তিনি কর দিয়ে থাকেন এবং এই প্রদেয় কর কমানোর অন্যতম উপায় হিসেবে কর রেয়াত ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেহেতু করদাতা ব্যক্তিদের তাদের আয়বা মুনাফার একটি বড় অংশ সরকারকে দিয়ে দিতে হয় তাই তারা কর রেয়াত এর মাধ্যমে তাদের প্রদেয় করের পরিমাণ কমাতে চান।

যদি কোন ব্যক্তির ওপর কর আরোপিত হয় বা কোন কর্জ যোগ্য ব্যক্তি যদি কর প্রদান না দিয়ে থাকেন তাহলে এক্ষেত্রে সাধারণত তিন ধরনের জরিমানা করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে প্রথমটি হল সাধারণত তার যে পরিমাণ কর বকেয়া রয়েছে সেটি এবং তার ওপর আরো ২৫ শতাংশ বাড়তে জরিমানা প্রদান করা হয়ে থাকে। 

দ্বিতীয়টি হল যে পরিমাণ কর বাকি রয়েছে সে পরিমাণ টাকার ওপর মাসিক সরল সুদের হারে দুই শতাংশ পরিমাণ বাড়তি জরিমানা করার বিধান রয়েছে। তৃতীয় টি হল বকেয়া করের ওপর সমপরিমাণ জরিমানা প্রদান করা। তাই আপনি যদি একজন কর যোগ্য ব্যক্তি হয়ে থাকেন বা আপনার ওপরে যদি কর আরোপিত হয়ে থাকে তাহলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপনার কর প্রদান করুন। এটি আপনার দায়িত্ব যে সময় মত আপনার আয়ের উপরে নির্দিষ্ট পরিমাণে কর সরকারকে প্রদান করা।

নির্ধারিত তারিখের পর কিভাবে ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করতে হয়

আরো পড়ুনঃ বয়স্ক ভাতার আবেদন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন

সাধারণত অনেক সময় দেখা যায় কর রিটার্ন বা আয়কর রিটার্ন জমা প্রদানের তারিখের মূল সময়সীমার মধ্যে রিটার্ন দাখিল করা হয় না। আপনারা অনেকে জানেন না এবং অনেকের মনের প্রশ্ন থাকে যে নির্ধারিত তারিখের পর কিভাবে ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করতে হয়। সাধারণত আপনার ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করার মূল সময়সীমার মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে মিস হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে সেই অর্থবছরের প্রাসঙ্গিক ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে একটি বিলম্বিত রিটার্ন দাখিল করতে হয়। 

আপনি যদি কোন ভ্যালিড কারণে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দাখিল করতে মিস করে থাকেন তাহলে আপনাকে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে ট্যাক্সিটন দাখিল করতে না পারার জন্য সমবেদনা দাখিল করতে হবে এবং আয়কর কর্তৃপক্ষকে দেরিতে রিটার্ন দাখিল করার জন্য আপনি ক্ষমাপ্রার্থনা করতে পারেন। আশা করছি এর মাধ্যমে আপনারা জানতে পারলেন যে নির্ধারিত তারিখের পর কিভাবে আপনারা ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করতে পারেন।

সাধারণত আমাদের মধ্যে যারা মোটরযান চালনা করে থাকেন তাদেরকে টেক্স টোকেন সংগ্রহ করতে হয় নির্দিষ্ট মেয়াদের। এক্ষেত্রে ট্যাক্স টোকেন এর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে বা এর ডেট ফেল হয়ে গেলে নির্দিষ্ট পরিমাণ জরিমানা গুনতে হয়। আমরা অনেকেই ট্যাক্স টোকেন এর ডেট ফেল করলেও সেটা বুঝতে পারে না বা আমাদের অনেকের মনে থাকে না যে ট্যাক্স টোকেন এর ডেট পার হয়ে গিয়েছে। এক্ষেত্রে ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী একাদশ অধ্যায়ের ট্যাক্স টোকেন ছাড়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ টেক্সটোকেন ব্যবহার করে মোটরযান চালনা করার জন্য উক্ত ব্যক্তিকে দশ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। 

আরো পড়ুনঃ

এখান থেকে একটি বিষয় সুস্পষ্ট যে ট্যাক্স টোকেন নির্দিষ্ট মেয়াদের পরে আপডেট করা অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। এবং আপনি যদি ট্যাক্স টোকেন ছাড়া বাইক চালনা করেন তাহলে এটি আপনার অর্থদণ্ডের কারণ হতে পারে। তাই আপনাদের উচিত আপনার টেক্সট টোকেন এর মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার সাথে সাথে সেটিকে আপডেট করে নেওয়া নতুবা আপনাকে ১০ হাজার টাকার জরিমানা গুনতে হতে পারে। 

এছাড়াও আপনার যদি ট্যাক্স টোকেন বকেয়া থেকে থাকে তাহলে জরিমানার পরিমাণ প্রথমবারে ৫০০ টাকা দ্বিতীয়বারে ১০০০ টাকা তৃতীয়বারে ২৫০০ টাকা এবং এরপর থেকে ৫০০০ টাকা। ট্যাক্স টোকেন ছাড়া আপনি যদি গাড়ি চালিয়ে থাকেন তাহলে এক্ষেত্রে আপনার জরিমানা পরিমাণ যথাক্রমে প্রথমবারে এক হাজার টাকা আর দ্বিতীয়বারে ২৫০০ টাকা তৃতীয়বারে ৫০০০ টাকা এবং এরপর থেকে ১০ হাজার টাকা হয়ে থাকে।

আরো পড়ুনঃ

তাই এ সকল ক্ষেত্রে ট্যাক্স টোকেন এর জরিমানা এড়ানোর জন্য নিয়মিত ট্যাক্স টোকেন পরিশোধ করতে হবে এবং আপনার গাড়ির ট্যাক্স টোকেন মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে।

আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার মাধ্যমে আপনারা ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন, কর রেয়াত কি, কর না দিলে কি হবে, টেক্স টোকেন জরিমানা কত এবং এ সম্পর্কিত আরো বিভিন্ন ধরনের তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।