গর্ভবতী ভাতার আবেদন এর বিস্তারিত সব তথ্য জানুন

গর্ভবতী ভাতার আবেদন এবং গর্ভবতী ভাতার বিস্তারিত বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে আজকের আমাদের আলোচনা। এই আলোচনায় আরো থাকছে গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার নিয়ম নিয়ে কিছু কথা। তাই গর্ভবতী ভাতা বিষয়ক এই পোস্টটির সাথে থাকুন এবং পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন যেন এ বিষয়ে বিষদ তথ্য জানতে পারেন।
গর্ভবতী ভাতার আবেদন এর বিস্তারিত সব তথ্য জানুন
দারিদ্রতার কবলে থাকা গর্ভবতী মায়েদের জন্য গর্ভবতী ভাতার আইন প্রবর্তন করা হয়। বর্তমানে এর মধ্যে বেশ নতুনত্ব যোগ হওয়ায় গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার নিয়ম এর ক্ষেত্রে অনেক নতুনত্ব চালু হয়েছে। চলুন আজকের এই পোস্টটার মাধ্যমে আমরা গর্ভবতী ভাতা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা অর্জন করে নিই।
পোস্ট সূচিপত্র

ভূমিকা

দেশের গর্ভধারণ করা দরিদ্র নারীদের উদ্দেশ্যে সরকার পক্ষ থেকে দেয়া গর্ভকালীন অনুদান হল গর্ভবতী ভাতা। প্রতিবছর গর্ভকালীন সময়ে নানান সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কর্তৃক এই ব্যবস্থা গ্রহীত হয়। গর্ভবতীর ভাতা সম্পর্কিত আজকের এই আলোচনায় আমরা জানব গর্ভবতী ভাতা কি, গর্ভবতী ভাতার আবেদন করতে কি কি লাগে, গর্ভবতী ভাতা আবেদন করার নিয়ম, গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন ২০২৪ এবং গর্ভবতী ভাতা কত টাকা ২০২৪ এর নীতি অনুযায়ী তা সম্পর্কে।

গর্ভবতী ভাতা কি

সরকার কর্তৃক গর্ভধারণকারী সুবিধা বঞ্চিত ও দরিদ্র মা দের জন্য অনুমোদন হওয়া কর্মসূচি হলো গর্ভবতী ভাতা। সুবিধা বঞ্চিত নারীরা যেনো মাতৃত্বকালীন সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয় সেই উদ্দেশ্যে এই কর্মসূচি গঠন করা হয়। ২০১১ সালে এদেশের সরকার গর্ভবতী ভাতার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছেন।

গবেষণায় জানা যায়, মাতৃত্বকালীন এই ভাতা চালু হবার পূর্বে প্রতিবছর অনেক দরিদ্র নারীরা গর্ভধারণ কালীন সময়ে মাতৃত্বকালীন সেবা ও চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত ছিলেন এবং পুষ্টিহীনতার ভুগতে দেখা গেছে। হলে চিকিৎসার অভাবে অসংখ্য মা ও শিশুদের মৃত্যু বরণ করতে হয়েছে। তাই দরিদ্র অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের উদ্দেশ্যেই গর্ভবতী ভাতা চালু করা হয়। বর্তমানে গর্ভবতী ভাতার আবেদন সহজ করার জন্য এই কার্যক্রমের জন্য অনলাইন ব্যবস্থা করা হয়েছে।

গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার নিয়ম

গর্ভবতী ভাতা দরিদ্র আন্তঃসত্ত্বা মা দের সহায়তার জন্য সরকার কর্তৃক বিবেচিত এক অনুদান এর কর্মসূচি। প্রতি মাসে প্রথম ২০ কর্ম দিবসের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক এই কর্মসূচির আবেদন গ্রহীত হয়। গর্ভবতী ভাতার আবেদন এর জন্য কিছু নিয়ম বা শর্তাবলী রয়েছে।
  • গর্ভধারিনী নারীর বয়স ২০ ঊর্ধ্ব হতে হবে।
  • গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার জন্য অবশ্যই অন্তঃসত্ত্বা মায়ের মাসিক আয় অনূর্ধ্ব ১৫০০ টাকা হতে হবে।
  • সর্বোচ্চ দ্বিতীয় পর্যায়ে গর্ভধারণের ক্ষেত্রে গর্ভবতী ভাতা পাওয়া সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে জন্মের দুই বছরের মাথায় কিংবা গর্ভে সন্তানের মৃত্যু হলে তৃতীয় সময় গর্ভধারণের জন্য গর্ভকালীন ভাতা পাওয়া যায়।
  • আবেদনকারী মায়ের নিজস্ব কোন জমি কিংবা চাষের পুকুর থাকতে নেই অর্থাৎ সুবিধা বঞ্চিত ও দরিদ্র গর্ভবতী মা দের এই গর্ভবতী ভাতার জন্য নির্বাচন করা হয়।
  • এছাড়াও যাবতীয় বাকি সকল সরকারি নিয়ম, কাগজপত্র জমা দেয় এবং সঠিক তথ্য প্রদানের মাধ্যমে গর্ভবতী ভাতার আবেদন করে গর্ভবতী ভাতা পাওয়া যায়।

গর্ভবতী ভাতার আবেদন করতে কি কি লাগে

গর্ভবতী ভাতা আবেদন করার জন্য সর্বপ্রথম সরকার কর্তৃক প্রদত্ত শর্তাবলীর সাথে গর্ভবতী নারীর বর্তমান পরিস্থিতির সাথে মিল রেখে আবেদনের জন্য আগাতে হবে। গর্ভবতী নারী গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার যোগ্য কিনা সেক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ করে এর আবেদন এর প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে। গর্ভবতী ভাতা ধাপে ধাপে আবেদন করা যেতে পারে যা বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমেও করা সম্ভব। গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার জন্য যা প্রয়োজন তা নিম্নরুপ।
  • গর্ভবতী নারীর জাতীয় পরিচয় পত্র বা এনয়াইডি কার্ড এবং জন্ম নিবন্ধন সনদ থাকতে হবে।
  • গর্ভবতী নারীর অর্থাৎ আবেদনকারী দু কপি পাসপোর্ট ছবি জমা দিতে হবে।
  • আবেদনকারীর একটি গর্ভকালীন নাগরিক সনদ পত্র জমা দিতে হবে যা এটি পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
  • ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা থেকে নেয়া একটি সনদপত্র জমা দিতে হবে।
  • অর্থ লেনদেনের জন্য একটি ব্যবস্থা অর্থাৎ বিকাশ/নগদ কিংবা কোন ডিজিটাল বা অফলাইন ব্যাংক একাউন্ট জমা দিতে হবে যেখান থেকে গর্ভবতী ভাতা থেকে প্রাপ্ত টাকা উত্তোলন করা হবে।

গর্ভবতী ভাতার আবেদন

গর্ভবতী ভাতা ইউনিয়ন পরিষদ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক বাস্তবায়ন করা এক এমন কর্মসূচি যার মাধ্যমে দরিদ্র মা তাদের মাতৃত্বকালীন চাহিদা পূরণের জন্য সরকার কর্তৃক অনুদান পেয়ে থাকেন। গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার জন্য সরাসরি কিংবা অনলাইনে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে এই ভাতার অনুদান পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হয়।
এ আবেদনের মধ্যে আবেদনকারী ব্যক্তি অর্থাৎ গর্ভবতী নারী ভাতা প্রাপ্তির জন্য সমস্ত যোগ্যতা এবং প্রয়োজনীয় দিক কিংবা প্রয়োজনীয় শর্তাবলীর বিবেচনায় ভাতার অনুদান পাওয়ার জন্য নির্বাচিত হন। প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র এবং সঠিক তথ্য প্রদানের মাধ্যমে গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হয়।

এবং আবেদনের পরবর্তী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গর্ভবতী মা তার নিজস্ব অনুদান পেয়ে থাকেন। এর জন্য উপজেলা কমিটি বরাবর ভাতা মঞ্জুরির আবেদন করতে হবে এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, এবং সংশ্লিষ্ট সচিব ও সভাপতি আবেদন যাচাই করে গর্ভবতী মাকে ভাতা প্রাপ্তির জন্য নির্বাচন করেন কিংবা গর্ভবতী ভাতা মঞ্জুরীর নির্দেশ প্রদান করেন।

গর্ভবতী ভাতার আবেদন করার নিয়ম

গর্ভবতী ভাতার আবেদন করার জন্য সঠিক নিয়ম এবং সঠিক তথ্য প্রদান করা অবশ্যক। বর্তমানে গর্ভবতী ভাতা আবেদন করা আরো সহজতর হয়ে উঠেছে। বাহিরে লাইন ধরে আবেদন করার পরিবর্তে বর্তমানে অনলাইনে এই অনুদানের জন্য আবেদনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে গর্ভবতী ভাতা আবেদন করার জন্য নিয়মগুলো খুবই সীমিত।

অনলাইনে গর্ভবতী ভাতা আবেদন করার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রদান করা গর্ভবতী ভাতার রেজিস্ট্রেশন কিংবা আবেদনের জন্য প্রদত্ত ওয়েবসাইটিতে প্রবেশ করতে হবে। এই আবেদন অবশ্যই মাসের প্রথম ২০ দিনের মধ্যেই করতে হবে। প্রথমেই ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইন আবেদনের লিংকে যেতে হবে এবং আবেদনকারী ব্যক্তিগত সকল তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করতে হবে।

এভাবেই সকল তথ্য প্রদানের সাথেই বর্তমান অর্থবছর সিলেক্ট করে, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলি দিয়ে আবেদন ফরমটি পূরণ করতে হবে। আবেদন ফরম পূরণ শেষে টাকা উত্তোলনের জন্য একটি মাধ্যম নির্বাচন করতে হবে। সর্বশেষ ছবি এবং স্বাক্ষর দিয়ে গর্ভবতী ভাতা অনলাইনে আবেদন সম্পন্ন করতে হবে।

অনলাইনে গর্ভবতী কার্ড করার নিয়ম

  • গর্ভবতী কার্ড করার জন্য সর্বপ্রথম গর্ভবতী ভাতা অনলাইনে আবেদন করে রাখতে হবে।
  • অবশ্যই আবেদনের সময় প্রয়োজনীয় অর্থ সামাজিক সকল তথ্য প্রদান করে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গ্রহণ করা কাগজপত্র গুলো জমা দিতে হবে।
  • গর্ভবতী ভাতার অনলাইনে আবেদনের পর আবেদনটি যাচাই-বাছাই হবে এবং পরবর্তীতে আবেদনকারী তার আবেদন মঞ্জুরির নোটিশ প্রাপ্ত হবেন।
  • পরবর্তী ধাপে গর্ভবতী কার্ড করার জন্য কিছু ডকুমেন্ট প্রদান করা প্রয়োজন।
  • সরকারি অনুমোদন প্রাপ্ত হাসপাতাল থেকে গর্ভধারিনী মায়ের মেডিকেল রিপোর্টের ফটোকপি।
  • ব্যক্তিগত তথ্য (বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়িত্ব ঠিকানা সংযোগে)
  • গর্ভধারিনী মায়ের জাতীয় পরিচয় পত্রের একটি ফটোকপি।
  • আবেদনকারীর দুটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং
  • টাকা উত্তোলনের জন্য মোবাইল ব্যাংকিং এর একটি সচল নম্বর।
  • সচরাচর এই কয়েকটি ডকুমেন্টের মাধ্যমে খুব সহজেই কোন বাধা ছাড়া অনলাইনে গর্ভবতী কার্ড করা যায়।

গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন ২০২৪

অনলাইনে গর্ভবতী ভাতা আবেদন করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু শর্তাবলী মেনে চলতে হবে। বর্তমান অর্থবছরে গর্ভবতী ভাতার অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে গর্ভবতী নারীর যাবতীয় চিকিৎসার কপি এবং ব্যক্তিগত ও আর্থসামাজিক তথ্য অনলাইনে প্রদান করতে হয়। এর জন্য অনলাইনে গর্ভবতী ভাতার রেজিস্ট্রেশনের ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রদত্ত ফর্মে যে সকল তথ্য চেয়ে থাকে তা পূরণের মাধ্যমে আবেদন সম্পন্ন করা হয়।

পুরান কালে মাতৃতকালীন ভাতার আবেদনের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের কাছে কিংবা পৌরসভার নিকট প্রমাণ দিয়ে আবেদন করতে হতো যা বর্তমানে অনেক সহজ হয়ে অনলাইনেই করা সম্ভব হয়েছে। তবে বর্তমানে ভাতা আবেদনের জন্য অনলাইন সিস্টেম চালু হওয়ায় কিছু দিকে সচেতনতার সাথে চলতে হবে যেমন প্রতারক চক্র থেকে সাবধানে থাকতে হবে। অনলাইন থেকে প্রাপ্ত আবেদনকারীর কার্ডটি থেকে নগদ অর্থ প্রাপ্ত হওয়ার কারণে এক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা থেকেই গর্ভবতী ভাতার অনলাইনে আবেদনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

গর্ভবতী ভাতা কত টাকা ২০২৪

২০২৪ সালের গর্ভবতী ভাতার সঠিক তথ্য আজ আমাদের পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানাতে চলেছি। সাধারণত অনেকেই জানে না যে গর্ভবতী ভাতার আবেদনের পরে সেখান থেকে কত টাকা পাওয়া যায়। সরকারের নেয়া উদ্যোগে ২০১১ সাল থেকে গর্ভবতী ভাতার নিয়ম চালু করা হয়। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদান করা গর্ভবতী ভাতার অনুদানের হিসাবে আবেদনকারী প্রতিটি ব্যক্তি প্রতি ৬ মাস পর পর প্রতি মাসে ৮০০/- টাকা করে পাবেন যা ৪ বার করে ২ বছরের হিসাবে প্রদান করা হয়ে থাকে। গর্ভবতীর ভাতার এই অনুদান বর্তমানে অনলাইন মাধ্যমে চলছে।

লেখকের মন্তব্য

গর্ভবতী ভাতা সরকার কর্তৃক দেয়া দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত গর্ভবতী নারীদের জন্য এক অনুদান। গর্ভবতী ভাতা সম্পর্কে আলোচনায় ছিল আজকের পোষ্টের মূল উদ্দেশ্য। আশা করি আজকের এই আলোচনার মাধ্যমে গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনারা বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। আজকের এই আলোচনার প্রেক্ষিতে আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে কিংবা কোন মতামত জানাতে চাইলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন এবং পোস্টটি শেয়ার করার মাধ্যমে আপনার পরিবার, পরিজন এবং আশেপাশের মানুষকে গর্ভবতী ভাতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ করে দিন।
ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url