ফাউমি মুরগির খাবার তালিকা ও পালন পদ্ধতি বিস্তারিত

আমরা অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে অথবা বাড়িতেই ফাউমি মুরগি পালন করে থাকি। আপনারা অনেকেই জানতে চান ফাউমি মুরগির খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত। আজকে আমরা ফাউমি মুরগির খাবার তালিকা এবং এছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই আমাদের সাথেই থাকুন।
ফাউমি মুরগির খাবার তালিকাবিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে একেক মুরগি একেক ধরনের হয়ে থাকে এবং তারা একেক ধরনের খাবার খেয়ে থাকে। শাওমি মুরগি তাদের মধ্যে অন্যতম। তারা সাধারণত বিশেষ সময়ের ডিম দেয় এবং বিশেষ ধরনের খাবার খেয়ে থাকে। আজকে আমরা ফাউমি মুরগি সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করব। যাতে করে আপনারা এ মুরগিগুলোকে খুব ভালোভাবে প্রতিপালন করতে পারেন।

ভূমিকা: ফাউমি মুরগির খাবার তালিকা

আমাদের দেশে বিভিন্ন জাতের মুরগি দেখা যায় যার মধ্যে ফাউমি মুরগি অন্যতম একটি জাত। এই মুরগির সাধারণত মিশরীয় মুরগির জাত। শাওমি মুরগি মিশরের থেকে এসেছে। এবং এই ফাইনাল প্রদেশ থেকেই এই ফাউমি মুরগির নামকরণ করা হয়েছে। আমরা অনেকেই ফাউমি মুরগির খামার করার কথা চিন্তা করে থাকি। তাই আমাদের এই মুরগির খাবার তালিকা এবং অন্যান্য বিষয়ে জানা অত্যন্ত জরুরী, যাতে করে আমরা লাভবান হতে পারি। 

আমরা যারা ফাউমি মুরগি প্রতিপালন করে থাকি তারা ফাউমি মুরগির সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের তথ্য সম্পর্কে জানতে চাই। তাই আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার মাধ্যমে আপনারা ফাউমি মুরগির খাবার তালিকা, ফাউমি মুরগি কত দিনে ডিম দেয়, ফাউমি মুরগি প্রতিপালন পদ্ধতি সহ বিভিন্ন ধরনের তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই এ সকল তথ্য সম্পর্কে জানতে আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।

ফাউমি মুরগির খাবার তালিকা

বিভিন্ন ধরনের জাতের মুরগি বিভিন্ন ধরনের খাবার খেয়ে থাকে। ফাউমি মুরগি মুরগির জাত গুলোর মধ্যে একটি বিশেষ জাত, যারা কিনা মুরগির রানী হিসেবে খ্যাত। কারণ এই মুরগিগুলো অনেক বেশি পরিমাণে ডিম দিয়ে থাকে। এই মুরগি সাধারণত ৫-৬ মাস বয়স থেকে ডিম দিতে শুরু করে। এছাড়াও এই মুরগির ডিম গুলো অন্যান্য মুরগির ডিমের তুলনায় সাইজে এবং আকার আকৃতিতে বড় হয়ে থাকে। এই মুরগির ডিম গুলোর ওজন ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম হয় এবং ধবধবে সাদা রঙের হয়ে থাকে।
সাধারণত খাবারের ওপর মুরগির সুস্থ থাকা অনেকভাবে নির্ভর করে। 
মুরগি গুলো যাতে যথাসময়ে সময়মতো ডিম দিতে পারে তার জন্য তাদেরকে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার পানি ব্যবস্থা করতে হবে। মুরগিকে সুস্থ স্বাভাবিক রাখতে হলে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি সমৃদ্ধ এবং প্রোটিন জাতীয়, খনিজ লবণযুক্ত খাবার মুরগিকে খাওয়াতে হবে। এতে করে মুরগি স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারবে এবং ডিম উৎপাদন করতে সক্ষম হবে। চলুন আর দেরি না করে আমরা ফাউমি মুরগির খাবার তালিকা সম্পর্কে জেনে নেই:
  • ফাউমি মুরগির বয়স যখন শূন্য থেকে ছয় সপ্তাহ এর মধ্যে হয়ে থাকে তখন তাকে স্টার্টার খাবার দিতে হবে। স্টার্টার খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে: ভুট্টা,গম ইত্যাদি। এই বয়সের মুরগিগুলোর জন্য স্টার্টার জাতীয় খাবার অত্যন্ত জরুরী হয়ে থাকে।
  • যখন ফাউমি মুরগির বয়স একদিন থেকে পনের দিন হবে তখন এই মুরগির বাচ্চাগুলোকে লেয়ার স্ট্যাটাস বা গ্রোয়ার জাতীয় খাবার দিতে হবে। এই লেয়ার স্ট্যাটাস বাগ্রো আর খাবারের মধ্যে রয়েছেন ভুট্টা, রাইস পলিশ, কুলিন ক্লোরাইড এছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের উপাদান যা এই বয়সের মুরগিদের জন্য উপযুক্ত।
  • এরপর মুরগির বয়স পনের থেকে পঁয়তাল্লিশ সপ্তাহ হয়ে গেলে তাদেরকে লেয়ার এক জাতের খাবার খাওয়াতে হবে। লেয়ার এক জাতীয় খাবারের উপাদান গুলো হল: ভুট্টা, টক্সিন, বাইন্ডার, কোলেন, ডিএল, ডিসিপি, লবণ, প্রোটিন ইত্যাদি।
  • যখন মুরগির বয়স পঁয়তাল্লিশ থেকে পচানব্বই সপ্তাহ হবে তখন মুরগি গুলোকে লেয়ার ২ ধরনের খাবার খাওয়াতে হবে।
  • এবং মুরগির বয়স যখন চার মাসের বেশি হয়ে যাবে তখন তাদেরকে লেয়ার খাবার গুলো সোনালী গ্রোয়ারের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
সাধারণত মুরগিগুলোকে নিয়ম অনুযায়ী উপরিউক্ত খাবার গুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়াতে থাকলে মুরগি সঠিকভাবে বেড়ে উঠবে। মুরগির সঠিকভাবে বেড়ে ওঠা এবং প্রয়োজনীয় ডিম উৎপাদনের জন্য এ সকল পজিস সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার পেলে মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং তারা সুস্থ স্বাভাবিক থাকে।

ফাউমি মুরগি পালন পদ্ধতি-ফাউমি মুরগির খাবার তালিকা

ফাউমি মুরগি বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতের মুরগির মধ্যে বিশেষ একটি জাত। সাধারণত এ জাতের মুরগিগুলো চেনার উপায় হল এদের মাথায় বড় একটি ঝুঁটি থাকে, এবং এদের কানের লতি গলার ফুল লাল বর্ণের হয়ে থাকেন। এদের চোখ বাদামি এবং পায়ের নখ ধূসর বর্ণের হয় এবং এরা রূপালী সাদা বর্ণের ও সারা শরীর কালো কালো ছোপের পলকে ঢাকা থাকে। এ জাতের মুরগি পালন পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ। কারণ এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং ডিম পাড়ার ক্ষমতা অন্যান্য মুরগির তুলনায় অধিক হয়ে থাকে। 
বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুযায়ী ফাউমি মুরগির পালনের জন্য একটি উপযুক্ত জায়গা কারণ ফাউমি মুরগির অত্যন্ত গরম আবহাওয়াতেও নিজেকে মানিয়ে নিতে সক্ষম এবং এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যান্য মুরগির তুলনায় ভালো হয়ে থাকে। তাই মুরগির খামারিরা ফাউমি মুরগি পালনে অধিক আগ্রহী হয়ে থাকে। আজকের আর্টিকেলের এই অংশে আমরা ফাউমি মুরগি পালন পদ্ধতি সহ আরো তথ্য সম্পর্কে জানব। আসুন তাহলে জেনে আসা যাক ফাউমি মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত:
  • ফাউমি মুরগি পালনের জন্য প্রথমে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো বাতাস সম্পূর্ণ একটি খামারের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • আপনি যদি ৫০ টি মুরগি পালন করতে চান তাহলে আপনাকে ৪০ মুরগি রাখতে হবে এবং ১০ টি মুরগ রাখতে হবে।
  • সময়মতো মুরগির ঠোঁট কেটে ছোট করা
  • ফাউমি মুরগি যাতে ঘোরাফেরা করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে জায়গা পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • এছাড়াও মুরগিগুলোকে তাদের বয়স অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণে এবং সময়মতো সকাল সন্ধ্যা খাবার দিতে হবে।
  • সময়মতো সঠিক মাত্রায় মুরগির ঠোঁট কেটে ছোট করা। কারণ সময় মত সঠিক মাত্রায় মুরগির ঠোঁট কেটে ছোট করা একটি অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয় কারণ তারা বড় ঠোঁটের কারণে ঠিকমতো খাবার খেতে পারে না এতে করে খাবারের অপচয় হয়। এছাড়াও তারা বড় ঠোঁটের কারণে অন্যান্য মুরগীদেরকে আক্রমণ করে থাকে যা অন্যান্য মুরগির জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে।
  • এছাড়া ও মুরগিকে যদি কিছুটা সময় বাইরে বের করা হয় তাহলে তারা শাকসবজি অথবা ঘাস জাতীয় খাবার খেতে পারে যা তাদের জন্য ভালো।
  • মুরগিগুলো যাতে অসুস্থ হয়ে না পড়ে সেজন্য ভ্যাকসিন সিডিউল অনুযায়ী মুরগি গুলোকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। কারণ মুরগির সহজেই রোগ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। আর একটি মুরগি রোগে আক্রান্ত হলে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য মুরগিগুলো একই রোগে আক্রান্ত হতে থাকে। তাই সঠিক সময়ে ভ্যাকসিন দেওয়া অত্যন্ত জরুরী বিষয়।
এভাবেই সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে মুরগি উৎপাদন করতে চাইলে সময়মতো তাদেরকে খাবার এবং ভ্যাকসিন ও পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো বাতাসের ব্যবস্থা করতে থাকলেই তারা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠবে।

কোন খাবার গুলো খেলে মুরগি দ্রুত বেড়ে ওঠে

বর্তমানে এটি একটি লাভজনক পেশা হিসেবে মানুষের মাঝে খেতে অর্জন করছে। অনেকের মাঝেই মুরগি পালন বা মুরগির খামার গঠন করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাই মুরগিকে সুস্থ স্বাভাবিক রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। মুরগি লালন পালন করার ক্ষেত্রে বা মুরগির খাবার গঠন করার ক্ষেত্রে খাবার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আপনি তাদেরকে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার না দেন তাহলে তারা সঠিকভাবে বেড়ে উঠবে না এবং ডিম দিতে পারবে না। 
সাধারণত যে খাবারগুলো খেলে মুরগি দ্রুততম সময় বেড়ে ওঠে সেগুলো হল: পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার, খনিজ রাবণযুক্ত খাবার, পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার, ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার। গম, ভুট্টা, কালো মরিচ, আদা, টক্সিন, বাইন্ডার, কোলেন ইত্যাদি খাবারগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, খনিজ, লবণ এবং পুষ্টি রয়েছে। আপনি যদি এই খাবারগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে সময়মতো নিয়ম অনুযায়ী মুরগীকে দিতে পারেন বা খাওয়াতে পারেন তাহলে আপনার মুরগি সুস্থ স্বাভাবিক থাকবে এবং সঠিক সময়ে ডিম দিবে।

শেষ কথা: ফাউমি মুরগির খাবার তালিকা

খুব সহজেই চাইলে ফাউমি মুরগি পালন করা সম্ভব কারণ এই মুরগিগুলো পালনে খুব একটা ঝামেলা পোহাতে হয় না। এদেরকে সময় মত খাবার এবং ভ্যাকসিন দিলেই এরা দ্রুততম সময়ে ডিম দিতে সক্ষম হয়। এছাড়াও এদেরকে সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলোর বাতাস সম্পূর্ণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জায়গায় রাখতে হবে। এ সকল বিষয়গুলো যদি আপনারা খেয়াল রাখতে পারেন তাহলে দেখবেন আপনার মুরগিগুলো সুস্থ স্বাভাবিক থাকছে এবং সঠিক সময়ে ডিম দিতে সক্ষম হচ্ছে। 

আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনারা সম্পূর্ণ পড়ে থাকেন তাহলে ফাউমি মুরগির খাবার তালিকা, কোন খাবারগুলো খেলে মুরগির দ্রুত সময় বেড়ে ওঠে, এছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার মাধ্যমে আপনারা উপকৃত হয়েছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url